আবদুল আলীম - ডেমরা, ঢাকা

৪৮৬২. প্রশ্ন

আমাদের বাসা থেকে মসজিদে যেতে একটা ঝোপঝাড়ের পথ পাড়ি দিতে হয়। কিছুদিন আগে সেই পথ ধরে মসজিদে যাই। মসজিদের কাছাকাছি গিয়ে হঠাৎ পায়ে একটি জোঁক দেখতে পাই, যা রক্তে পূর্ণ ছিল। জামাত দাঁড়িয়ে যাওয়ায় জোঁকটি ফেলে জামাতে শরীক হই। যেহেতু অযু অবস্থায় ছিলাম, তাই নতুন করে অযু করিনি।

এখন হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামাযটি কি শুদ্ধ হয়েছে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী জোঁকটি লাগার পর তার পেট যেহেতু রক্তে পরিপূর্ণ পেয়েছেন তাই আপনার অযু নষ্ট হয়ে গেছে বলেই ধর্তব্য হবে। তাই আপনার উক্ত নামায শুদ্ধ হয়নি। তা কাযা করতে হবে। কারণ, উক্ত জোঁকটি বড় হওয়ায় এবং রক্তে পূর্ণ থাকায় তা স্বাভাবিকভাবেই গড়িয়ে পড়ার চেয়েও বেশি রক্ত শরীর থেকে টেনেছে বলে বোঝা যায়। আর শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হলে অযু ভেঙ্গে যায়। তাই আপনার অযু ভেঙ্গে গেছে। অবশ্য কোনো জোঁক যদি এ পরিমাণ রক্ত খেয়ে থাকে, যা গড়িয়ে পড়ার মত না হয় তাহলে অযু নষ্ট হবে না এবং নামাযও হয়ে যাবে।

-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/১৩৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/৪৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৩৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়াহ ১/১২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নাজাতুল হক - পোলপার, মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

৪৮৬৩. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের বাহিরের সিঁড়িতে প্রায়সময় কুকুর শুয়ে থাকে। মুআযযিন সাহেব খুব কষ্ট করে পানি ঢেলে সিঁড়ি পবিত্র করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কুকুর শোয়ার দ্বারা কি সিঁিড় নাপাক হয়ে যায়?

উত্তর

কুকুরের শরীর মূলত নাপাক নয়। তবে তার লালা নাপাক। তাই সিঁড়িতে কুকুর শুয়ে থাকলে যদি তার লালা বা অন্য কোনো নাপাকির চিহ্ন মেঝেতে না পাওয়া যায় তাহলে সিঁড়ি নাপাক হবে না এবং তা ধোয়া লাগবে না। বিশেষত কুকুরের শরীর যদি শুকনা থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নেই।

-ফাতাওয়া কাযীখান ১/২১; বাদায়েউস সানায়ে ১/২০১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যাহ ১/৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮

শেয়ার লিংক

আবদুল গনী - পিরোজপুর

৪৮৬৪. প্রশ্ন

শেষ রাতে উঠে কয়েক রাকাত নফল আদায় করছিলাম। আমার ধারণা, তখনো ভোর হবার কিছু সময় বাকি। কিন্তু নামাযে দাঁড়ানোর পরপরই ফজরের আযান শুনতে পেলাম। এখন কি আমার এ দুই রাকাত নামায ফজরের দুই রাকাত সুন্নত হিসেবে আদায় হয়েছে বলা যাবে?

উত্তর

যদি তাকবীরে তাহরীমা থেকে পুরো নামায সুবহে সাদিকের পরেই হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়ে থাকেন তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী আপনার এ দুইরাকাত নামায ফজরের সুন্নত হিসেবে আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে। কিন্তু নামাযের কিছু অংশও যদি সুবহে সাদিকের আগে হয়ে থাকে তাহলে তা দ্বারা ফজরের সুন্নত নামায আদায় হবে না। এক্ষেত্রে ফজরের সুন্নত আবার আদায় করতে হবে।

অতএব আপনি নামায শুরু করার পরে যদি সুবহে সাদিক হয়ে থাকে তাহলে এ দুই রাকাত নফল হবে। এক্ষেত্রে ফজরের সুন্নত পৃথকভাবে আদায় করে নিতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/১০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৬; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৬৬

শেয়ার লিংক

আবদুুল হালীম - জামালপুর

৪৮৬৫. প্রশ্ন

জুমার নামাযের খুতবা জুমার নামাযের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বলে আলেমদের মুখে শুনেছি। আমাদের মসজিদের যিনি খতীব, সাধারণত তিনিই খুতবা দেন এবং নামায পড়ান। কিছুদিন আগে এক জুমায় খুতবা দেওয়ার পর তিনি হাম্মামের জরুরতে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেন। আর উপস্থিত একজনকে ইমামতির দায়িত্ব অর্পণ করলেন। আমার জানার বিষয়, পরে যিনি নামায পড়ালেন তার ইমামতিতে কি আমাদের জুমা পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় হয়েছে? যেহেতু খুতবা তিনি দেননি, তিনি ছিলেন কেবল শ্রোতা। জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, ঐ ব্যক্তির পেছনে আপনাদের জুমা সহীহ হয়েছে। কেননা, জুমার ইমামতি সহীহ হওয়ার জন্য ইমামের খুতবা দেওয়া শর্ত নয়; বরং খুতবা চলাকালীন উপস্থিত থেকেছেন এমন যে কোনো উপযুক্ত ব্যক্তি জুমার ইমামতি করতে পারে। অবশ্য খুতবা প্রদানকারী এবং ইমাম একই ব্যক্তি হওয়া উত্তম। বিনা ওজরে অন্যকে ইমাম বানানো অনুত্তম।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৫; রদ্দুল মুহতার ২/১৪১

শেয়ার লিংক

মকবুল হোসেন - ধরাইল, নাটোর

৪৮৬৬. প্রশ্ন

আমার বড় চাচা বার্ধক্যে কাবু হওয়ার পর থেকে নফল নামাযের বেলায় প্রায়ই এমন করেন যে, কখনো দাঁড়িয়ে নামায শুরু করার পর বাকিটা বসে আদায় করেন। আবার কখনো এর উল্টো। অর্থাৎ প্রথমে বসে আরম্ভ করার পর বাকিটা দাঁড়িয়ে। তাঁর এভাবে নফল পড়া কি ঠিক আছে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

এভাবে নফল পড়তে অসুবিধা নেই।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে-

أَنّهَا لَمْ تَرَ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي صَلاَةَ اللّيْلِ قَاعِدًا قَطّ حَتّى أَسَنّ، فَكَانَ يَقْرَأُ قَاعِدًا، حَتّى إِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ قَامَ، فَقَرَأَ نَحْوًا مِنْ ثَلاَثِينَ آيَةً -أَوْ أَرْبَعِينَ آيَةً- ثُمّ رَكَعَ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া পর্যন্ত তিনি কখনো তাঁকে ‘সালাতুল লাইল’ (রাতের নফল নামায) বসে আদায় করতে দেখেননি। বার্ধক্যে পৌঁছার পর তিনি (নফল নামাযে) বসে কেরাত পাঠ করতেন, আর রুকুতে যাওয়ার সময় হলে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াত তিলাওয়াত করে রুকুতে যেতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১১১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৩১)

প্রকাশ থাকে যে, বিনা ওজরে বসে নফল নামায পড়লে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার অর্ধেক সওয়াব পাওয়া যায়। অবশ্য বার্ধক্যের কারণে অথবা দুর্বলতা বা অসুস্থতার কারণে হলে পূর্ণ সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/২০৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯১; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬

শেয়ার লিংক

আবদুল বাসেত - কুড়িল, ঢাকা

৪৮৬৭. প্রশ্ন

মসজিদে আমরা সাধারণত দেখি, আসর ও ফজরের নামাযে সালাম ফেরানোর পর ইমাম সাহেব মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসেন। আমার এক সহপাঠী, ধর্মীয় বিষয়ে বেশ পড়াশোনা আছে তার। সে আমাকে একদিন বলল, এই যে মসজিদগুলোতে ইমাম সাহেবরা ফজর ও আসরের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসেন এটা সুন্নতের খেলাফ।

মুসল্লিদের বরাবর না বসে মেহরাবের ডান দিকে বা বাম দিকে সামান্য বাঁকা হয়ে বসা উচিত ইমামের। সহপাঠীর কথায় আমি একটু অবাকই হলাম। ব্যাপকভাবে মসজিদগুলোতে ইমাম সাহেবরা কি তাহলে সুন্নতের খেলাফ আমল করে আসছেন? আপনার কাছে তাই জিজ্ঞাসা, এক্ষেত্রে শরীয়তস্বীকৃত পদ্ধতি কী- জানাটা খুবই জরুরি।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়; বরং ফজর ও আসরের নামাযের পর ইমাম সাহেবের মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসা সুন্নত। এটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

صَلّى لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلاَةَ الصّبْحِ بِالحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللّيْلَةِ، فَلَمّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النّاسِ، فَقَالَ: هَلْ تَدْرُونَ مَاذَا قَالَ رَبّكُمْ؟ قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ، فَأَمّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ وَرَحْمَتِهِ، فَذَلِكَ مُؤْمِنٌ بِي وَكَافِرٌ بِالكَوْكَبِ، وَأَمّا مَنْ قَالَ: بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ كَافِرٌ بِي وَمُؤْمِنٌ بِالكَوْكَبِ.

হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে আমরা ফজরের নামায পড়লাম। সে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। তো নামায শেষ হবার পর তিনি সমবেত সকলের দিকে ফিরলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?’... -সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৪৬

ছামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا صَلّى الصّبْحَ أَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ فَقَالَ: هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمُ الْبَارِحَةَ رُؤْيَا.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের নামায শেষ করতেন তখন  সকলের দিকে মুখ করে বসতেন। এরপর বলতেন, ‘তোমাদের কেউ কি গত রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছে?’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৭৫

সুতরাং মসজিদগুলোতে ইমামগণ সাধারণত যেভাবে মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসেন সেটা হাদীস ও সুন্নাহসম্মত। আর ডানে বা বামে সামান্য বাঁকা হয়ে বসার প্রসঙ্গ তখন, যখন ইমামের সোজাসুজি কোনো মাসবুক ব্যক্তি নামায আদায় করতে থাকে এবং ইমাম ও ঐ নামাযরত ব্যক্তির মাঝে কোনো আড়াল না থাকে। কেননা নামাযীর চেহারা তখন ইমামের চেহারা বরাবর হয়ে যায়। আর এভাবে নামাযীর মুখোমুখি হয়ে বসা অনুচিত।

আর যদি এমন হয় যে, ইমামের সোজাসুজি কোনো কাতারে কোনো মাসবুক নামায আদায় করছে ঠিক, কিন্তু তার ও ইমামের মাঝখানে অন্য মুসল্লীদের আড়াল রয়েছে, তাহলে সেক্ষেত্রে মুসল্লীর দিকে ইমামের ফিরে বসা দূষণীয় নয়। অতএব, এক্ষেত্রে ইমাম সাহেবেরও মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসতে অসুবিধা নেই।

উল্লেখ্য যে, কোনো কোনো হাদীসে যে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাযের সালাম ফেরানোর পর বামে বা ডানে انصراف তথা ফেরার কথা রয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, জায়গা ছেড়ে উঠে যাওয়া। মুসল্লীদের দিকে ফিরে বসা নয়। আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ. ফয়যুল বারীতে বিষয়টি এভাবেই উল্লেখ করেছেন। প্রশ্নে যে ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে তিনি হয়ত ঐ হাদীস থেকে ভুল বুঝে থাকতে পারেন।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩১২৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৫৩; মুআত্তা মুহাম্মাদ, পৃ. ১৫৪; কিতাবুল উম্ম ১/১৫১; শরহে মুসলিম, নববী ৫/২২০; উমদাতুল কারী ৬/১৪৩; ফয়যুল বারী ২/৩১৬; খুলাছাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৪; ফাতহুল কাদীর ১/৪২৬; হালবাতুল মুজাল্লি ২/২২২; আদদুররুল মুখতার ১/৫৩১-৫৩২

শেয়ার লিংক

রুহুল আমীন - শার্শা, যশোর

৪৮৬৮. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের বাজার মসজিদে নামাযের জামাত দাঁড়াতে প্রায়ই পাঁচ-দশ মিনিট দেরি হয়। জামাত নির্ধারিত সময়ে দাঁড়াবার নিশ্চয়তা না থাকায় অনেক মুসল্লীই জামাতের অপেক্ষা না করে একাকী নামায পড়তে দাঁড়িয়ে যায়। যেহেতু দোকানদারি ফেলে আসতে হয় তাই দ্রুত ফেরার তাগাদা থাকে। কিন্তু দেখা যায়, অনেক সময়ই নামাযের বেশ কিছু অংশ; যেমন, এক রাকাত, দুই রাকাত, কখনো বা তিন রাকাত পড়ে ফেলার পর জামাত আরম্ভ হয়ে গেছে। আমার কথাই বলি, কয়েক দিন নিয়ত বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলাম। এশার নামায ছিল সেটা। এক রাকাত শেষ করে দ্বিতীয় রাকাতে যখন কেরাত আরম্ভ করেছি তখন জামাত আরম্ভ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমি বুঝতে পারছিলাম না- আমার কী করণীয়। আমি কি নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে অংশগ্রহণ করব, নাকি পুরো নামায একাকী শেষ করে ফেলব- যেমনটা সাধারণত করে থাকে এখানকার অন্য মুসল্লীরা- নাকি দুই রাকাত পূর্ণ করে জামাতে অংশ নেব। অবশেষে চিন্তা করে দ্বিতীয় রাকাত সমাপ্ত করে জামাতে শরীক হয়ে গেলাম। প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের ক্ষেত্রে আসলে কী করা উচিত? তাছাড়া আমি যা করেছি তা কি ঠিক হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন। বিস্তারিত বললে ভালো হয়।

উত্তর

এশার নামায একাকী শুরু করার পর জামাত আরম্ভ হয়ে গেলে যদি পরিপূর্ণ এক রাকাত পড়া হয়ে যায় তাহলে সাথে আরেক রাকাত পড়ে নিয়ে সালাম ফিরাবে। তারপর জামাতে শরীক হবে। এক্ষেত্রে তার এ দু‘রাকাত নফল বলে গণ্য হবে। আর যদি একাকী দুই রাকাত পড়ার পর জামাত শুরু হয়ে যায় তাহলে তৃতীয় রাকাতে না দাঁড়িয়ে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে এবং জামাতে শরীক হয়ে যাবে। কিন্তু যদি এক রাকাতও পূর্ণ করা না হয়ে থাকে তাহলে ঐ অবস্থাতেই নামায ভেঙ্গে দিয়ে জামাতে শরীক হবে।

উল্লেখ্য যে, মসজিদ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হল, একটা নির্ধারিত সময়ে জামাত শুরু করা এবং বিশেষ কোনো ওজর না থাকলে ইমাম সাহেব ঐ সময়ের মধ্যেই নামায শুরু করবেন, যেন মুসল্লীদের অন্যান্য কাজে ব্যাঘাত না ঘটে।

-আলজামেউস সাগীর পৃ. ৮৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ২/৭০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫০

শেয়ার লিংক

আমীমুল ইহসান - ঝিনাইদহ

৪৮৬৯. প্রশ্ন

আমি একটি পাঞ্জেগানা মসজিদে নামাযের ইমামতি করি। কিছুদিন আগে একটি ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত সাময়িকীতে দেখলাম ‘সুন্নাহসম্মত নামায’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন এক নিবন্ধকার। সেখানে বলা হয়েছে, নামাযের শেষে যে সালাম ফেরানো হয় তার একটি সুন্নত হল, সালামের শব্দগুলো ‘মদ’ না করে (দীর্ঘক্ষণ না টেনে) সংক্ষেপে স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ করা। সালাম বিষয়ে এ কথাটি এর আগে কোথাও পড়িনি বা শুনিনি। তাই আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি, এ নিবন্ধে যা লেখা হয়েছে তা কি ঠিক? নামাযের শেষে সালামের শব্দ উচ্চারণের সুন্নাহসম্মত তরীকা কি এটাই? জানালে অনেক উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, নামাযের সালামের ক্ষেত্রে সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হল, সালামের শব্দগুলো অতিরিক্ত মদ না করে স্বাভাবিকভাবে উচ্চারণ করা।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: حَذْفُ السّلَامِ سُنّةٌ. قَالَ عَلِيّ بْنُ حُجْرٍ: وَقَالَ ابْنُ المُبَارَكِ: يَعْنِي: أَنْ لَا تَمُدّهُ مَدّا.

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, সালাম ‘হাযফ’ করা সুন্নত। ইবনুল মুবারক রাহ. বলেন, ‘হাযফ’ অর্থ, সালামকে বেশি ‘মদ’ না করা (অর্থাৎ বেশি না টানা)। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৭)

-আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/৩৫৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২২০; মাআরিফুস সুনান ৩/১১৫; ইলাউস সুনান ৩/১৭৯

শেয়ার লিংক

যায়েদ - ফেনী

৪৮৭০. প্রশ্ন

মুসলিম হিজড়া মারা গেলে তাদের গোসল দেয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাযার নামায পড়া বিষয়ে শরীয়তের বিধান জানতে চাই।

বিষয়টি একটু খোলাসা করে জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

যে হিজড়ার বাহ্যিক অবয়ব পুরুষের মত মৃত্যুর পর তার লাশের ক্ষেত্রে পুরুষ মাইয়েতের বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ গোসল দেয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাযার নামাযসহ সবই পুরুষের মত করা হবে।

আর যে হিজড়ার অবয়ব নারী সদৃশ এবং তার মধ্যে মেয়েলি নিদর্শনই প্রবল তার মৃত্যুর পর  উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রে মহিলা মায়্যেতের বিধান প্রযোজ্য হবে।

-কিতাবুল আছল ৯/৩২২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/১৪৯; আলইখতিয়ার লিতা‘লীলিল মুখতার ২/৫০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৭২৭

শেয়ার লিংক

সাঈদুযযামান - কুষ্টিয়া

৪৮৭১. প্রশ্ন

আমার জিন্নাতের সমস্যা আছে। প্রতি রাতে আমি এদের আক্রমণের শিকার হই এবং দিনভর এর প্রভাব থাকে। আমাদের পরিচিত বহু হক্কানী আলেমের ইজাযতপ্রাপ্ত জনৈক আলেমের কাছে বিষয়টি আমি তুলে ধরলে তিনি আমাকে যয়তুন তেল দম করে তা প্রতিদিন পুরো শরীরে মালিশ করতে বলেন। আল্লাহর রহমতে আমি তা ব্যবহার করে এখন নিরাপদে আছি। তবে কোনো দিন যদি তেল মালিশ করতে ভুলে যাই তাহলে পূর্বের মন্দ অবস্থা প্রত্যক্ষ করি। ইতিমধ্যে আমি হজে¦ যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। মুহতারামের নিকট আমার জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় আমি কি এই তেল ব্যবহার করতে পারব? যদি করি তাহলে কি কোনো কিছু আবশ্যক হবে?

উত্তর

আপনি যেহেতু যয়তুন তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন, তাই তা ব্যবহার করা জায়েয হবে। এ কারণে কোনো দম বা সদকা আবশ্যক হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১৭; ফাতহুল কাদীর ২/৪৪১; আলবাহরুল আমীক ২/৮৪৪; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩২৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নাবিল - বরিশাল

৪৮৭২. প্রশ্ন

মুহতারাম, আমার পরিচিত এক মহিলা হাজ্বীর ৯ যিলহজ¦ হায়েয শুরু হয়। তার ফিরতি ফ্লাইট প্রথম দিকে হওয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে এই অবস্থায় ১২ তারিখ তাওয়াফে যিয়ারত ও ১৩ তারিখ তাওয়াফে বিদা করে দেশে চলে আসেন। এখন তার করণীয় কী? তার কি তাওয়াফে যিয়ারত আদায় হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, তার তাওয়াফে যিয়ারত আদায় হয়েছে। তবে হায়েয অবস্থায় তা আদায় করার কারণে তার উপর একটি বাদানা তথা পূর্ণ একটি উট বা গরু জরিমানা হিসেবে জবাই করা আবশ্যক হয়েছে। আর সে যেহেতু হায়েয অবস্থায় ছিল তাই তার করণীয় ছিল, তাওয়াফে বিদা না করেই দেশে চলে আসা। এ কারণে তার উপর কোনো দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু সে যেহেতু হায়েয অবস্থায় তাওয়াফে বিদা আদায় করেছে, তাই তার উপর একটি দম ওয়াজিব হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, বাদানা ও দম উভয়টি হেরেমের এলাকায় জবাই করা জরুরি। হেরেমের বাইরে দিলে আদায় হবে না। নিজে যেতে না পারলে অন্য কারো মাধ্যমেও তা করালে আদায় হয়ে যায়।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৬০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০৯, ৩৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩৪৫৩; আলবাহরুল আমীক ২/১১১৭, ১১২১, ১১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪৫, ২৪৬; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৯০, ২৭৫

শেয়ার লিংক

আনোয়ার হোসেন - গাজীপুর

৪৮৭৩. প্রশ্ন

আমি গত বছর স্বপরিবারে হজে¦ যাই। আমাদের সাথে আমার দশ বছর বয়সী ছোট ছেলেটিও ছিল। সে হজে¦র কাজগুলো করতে সক্ষম ছিল। সে আমাদের সাথে হজে¦র প্রথম দুই দিনের কাজগুলো যথাযথভাবে করার পর আরাফায় অসুস্থ হয়ে যায়। এরপরও আমরা তাকে নিয়ে দশই যিলহজে¦র  কাজগুলো করেছি। এদিন তার অসুস্থতা এত বেড়ে যায় যে, তার পক্ষে বা তাকে নিয়ে তাওয়াফ করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। আমরা দেশের প্রথম ফিরতি ফ্লাইটে চলে আসি। আসার আগেও সে তাওয়াফ করতে পারেনি। জানার বিষয় হল, তাওয়াফ না করে চলে আসার কারণে তার উপর কিংবা আমাদের উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে কি না? সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নাবালেগ ছেলের তাওয়াফ ছুটে যাওয়ার কারণে আপনাদের কারো উপরই কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। কেননা নাবালেগের উপর হজ¦ ফরয নয় এবং ইহরাম বাঁধার পরও নাবালেগের উপর হজে¦র সকল কাজ আদায় করা আবশ্যক হয়ে যায় না। তাই হজে¦র কোনো ওয়াজিব বা রুকন ছুটে গেলেও তার উপর কিংবা তার অভিভাবকের উপর কোনো জরিমানা আসে না। 

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৫৪

শেয়ার লিংক

হাবীবুল্লাহ - দোহার, ঢাকা

৪৮৭৪. প্রশ্ন

আমি সাধারণ চাকরিজীবী। সাংসারিক ব্যয়ের পর যে অতিরিক্ত টাকা হাতে থাকে তা আমি হজ্বের উদ্দেশ্যে একটু একটু করে জমাতে থাকি। এভাবে হজ্ব কাফেলায় জমা দেওয়ার মতো অর্থ জোগাড় হয়ে যায়। এদিকে আমার একটি লটারি ড্র হওয়ায় আরো কিছু টাকা হাতে আসে। আগের জমানো অর্থগুলো হজ্ব কাফেলায় দিয়ে লটারি থেকে পাওয়া অর্থ নিজের সঙ্গে রাখি এবং গোটা সফরে ব্যক্তিগত বেশ কিছু খরচ তা দিয়ে নির্বাহ করি। হজ্ব শেষে মক্কায় আমার এক প্রবাসী বন্ধুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপকালে তিনি আমাকে জানালেন, লটারির টাকা হারাম! আর হারাম টাকা দিয়ে হজ্ব করলে হজ্ব হয় না। এতে আমি ভীষণ চিন্তিত হলাম।

লটারির ঐ টাকা যে কেন সঙ্গে নিয়েছিলাম সেজন্য অনুতপ্ত হলাম। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার হজ¦ কি একেবারেই হয়নি? নাকি হলেও অসম্পূর্ণ হয়েছে? সেক্ষেত্রে আমার করণীয় কী? আমার খটকার মূল কারণ, আমার হজ¦ সফরের মৌলিক খরচ, যা কিনা আমি হজ¦ কাফেলায় জমা দিয়েছি তা তো নিঃসন্দেহে হালাল। প্রাসঙ্গিক খরচ সন্দেহযুক্ত হওয়াতে কি হজে¦র উপরে তার প্রভাব পড়বে? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার হজে¦র টিকিট, মুআল্লিম ফি ও বাড়ীভাড়ার টাকা, যেগুলো মৌলিক খরচ হিসেবে ধর্তব্য, সে খরচ যেহেতু আপনার হালাল সম্পদ দ্বারাই প্রদান করেছেন তাই আপনার হজ¦¦ আদায় হয়ে গেছে। আর আপনি যে লটারির টাকা পেয়েছেন তা যদি হারাম হয়ে থাকে (যেমন ১০ টাকার লটারি টিকিটে হাজার হাজার/লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়া, প্রাইজ বন্ডের ড্র থেকে পুরস্কার পাওয়া, অথবা এজাতীয় অন্য কোনো হারাম লটারি) তাহলে সে টাকা খরচ করা জায়েয হয়নি। এ ধরনের টাকা গ্রহণ করা এমনিতেই হারাম। আর হজে¦র সফরে ব্যবহার করা আরো মারাত্মক গুনাহ। অতএব এখন আপনার কর্তব্য হল, লটারি থেকে পাওয়া সকল টাকা সদকা করে দেয়া এবং আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করা।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৯, রদ্দুল মুহতার ২/৪৫৬; আলমাজমু শারহুল মুহাযযাব ৭/৫১; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৯৫, ১৯৬

শেয়ার লিংক

মুফাযযল হুসাইন - কুমিল্লা

৪৮৭৫. প্রশ্ন

মুহতারামের কাছে আমার নিবেদন এই যে, আল্লাহর অশেষ দয়ায় আমি একাধিকবার বাইতুল্লাহর হজ¦ করতে পেরেছি এবং সবসময় চেষ্টা করি, প্রতি বছর না হলেও অন্তত তিন বছরে যেন একবার যাওয়া হয়। সে হিসাবে এ বছর আমি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করি। কিন্তু ঠিক সে সময়েই আরাকানে মানবিক বিপর্যয় দেখা যায়। রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল আসতে শুরু করে বাংলাদেশে। এ অবস্থায় আমাদের ইমাম সাহেব আমাকে পরামর্শ দেন এবারের হজে¦র জন্য জমা করা অর্থগুলো আর্ত মানবতার সেবায় দান করে দিতে। তিনি বলেন, নফল হজে¦র চেয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোই বেশি ফযীলতের। তার কথামতো সে অর্থ আমি ঐ খাতে দান করে দেই। এখন চিন্তা হচ্ছে, আসলে কোনটা উত্তম ছিল, দান করে দেয়া, নাকি হজে¦ যাওয়া। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নফল হজে¦র জন্য সংগৃহীত অর্থ রোহিঙ্গাদের সেবায় দান করে দেওয়া সওয়াবের কাজই হয়েছে। এটা দূষণীয় কিছু হয়নি। কারণ সেটি ছিল বিশেষ সঙ্কটময় মুহূর্ত। আর স্বাভাবিক অবস্থায় একজন ব্যক্তি নফল হজ¦ করবে, নাকি সে টাকা দান খায়রাতে ব্যয় করা তার জন্য উত্তম হবে- এটি আপেক্ষিক বিষয়। যাদেরকে আল্লাহ তাআলা অনেক ধন-সম্পদের নিআমত দান করেছেন তারা দুটি কাজ সমন্বয় করেই করতে পারেন। তিনি ফরয-ওয়াজিব সদকা আদায়ের পাশাপাশি নফল দান-খায়রাতও করবেন এবং মাঝে মাঝে নফল হজ¦-উমরায়ও যাবেন। দুটি নেক কাজের মাঝে সাংঘর্ষিক ভাব তৈরি করার দরকার নেই। কারণ এ কাজগুলো একটি করলে আরেকটি করা যাবে না এমন তো নয়। মনে রাখা দরকার, নফল হজ¦ও অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। কেননা হজ্বের মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় অর্থ ব্যয় এবং সফরের কষ্ট স্বীকার করে আল্লাহর হুকুম পালনের মধ্য দিয়ে নিজের ঈমানী শক্তিবৃদ্ধি- দুটোই রয়েছে। তাছাড়া হজ্বে রয়েছে আত্মিক ও নৈতিক বহুবিধ উপকার। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ اَذِّنْ فِی النَّاسِ بِالْحَجِّ یَاْتُوْكَ رِجَالًا وَّ عَلٰی كُلِّ ضَامِرٍ یَّاْتِیْنَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِیْقٍ، لِّیَشْهَدُوْا مَنَافِعَ لَهُمْ َ...

এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের ঘোষণা করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং প্রতিটি শীর্ণকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে। যেগুলো আসবে বহু দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। যেন তারা পরিদর্শন করে এমন সব বিষয় ও স্থান, যাতে রয়েছে তাদের প্রভূত কল্যাণ...। -সূরা হজ্ব (২২) :  ২৭, ২৮

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

سُئِلَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَيّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ. قِيلَ: ثُمّ مَاذَا؟ قَالَ: جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ. قِيلَ: ثُمّ مَاذَا؟ قَالَ: حَجّ مَبْرُورٌ.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, কোন্ আমল সবচে’ উত্তম? বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। বলা হল, তারপর কোন্টি? বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। বলা হল, তারপর? বললেন, হজ্জে মাবরূর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫১৯

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالحَجّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلّا الجَنّةُ.

এক উমরা থেকে আরেক উমরা মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহসমূহ মোচন করে দেয়। আর মাবরূর হজ্বের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩

سُئِلَ طَاوُسٌ الْحَجّ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ أَفْضَلُ أَمِ الصّدَقَةُ؟ فَقَالَ: أَيْنَ الْحِلّ وَالرّحِيلُ،  وَالسّهَر وَالنّصَبُ، وَالطّوَافُ بِالْبَيْتِ وَالصّلَاةُ عِنْدَهُ، وَالْوُقُوفُ بِعَرَفَةَ  وَجَمْعِ وَرَمْيِ الْجِمَارِ؟ كَأَنّهُ يَقُولُ: الْحَجّ .

তাবেয়ী তাউস রাহ.-কে জিজ্ঞেস করা হল, নফল হজ¦ উত্তম, নাকি দান-সদকা? তিনি উত্তর দিলেন, সফরের কষ্ট, নির্ঘুম রাত্রি যাপনের কষ্ট, দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট। বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, বাইতুল্লাহর সামনে নামায, আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থান এবং কংকর নিক্ষেপ (এসব তো সদাকায় আর পাওয়া যায় না)। অর্থাৎ তিনি যেন  বলতে চাচ্ছেন, হজ¦ই উত্তম। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস  ৮৮২২

মুহাম্মাদ ইবনে আব্বাদ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

النّفَقَةُ فِي الْحَجِّ كَالنّفَقَةِ فِي سَبِيلِ اللهِ، الدِّرْهَمُ بِسَبْعِ مِئَةٍ.

হজ্বের জন্য অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর রাস্তায় খরচের সমতুল্য। এতে এক দিরহামের বিনিময়ে সাতশ দিরহামের সওয়াব অর্জিত হয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২৮০৩

এসব হাদীস-আসার থেকে নফল হজ্বের অধিক গুরুত্বের দিকটিই প্রমাণিত হয়। অবশ্য কখনো কখনো নফল হজ্বের চেয়ে দান-সদকার বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে আছে-

عَنِ الثّوْرِيِّ، وَسَأَلَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: الْحَجّ أَفْضَلُ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ أَمِ الصَّدَقَةُ؟ فَقَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو مِسْكِينٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ أَنّهُ قَالَ: إِذَا حَجّ حِجَجًا، فَالصّدَقَةُ. وَكَانَ الْحَسَنُ يَقُولُ: إِذَا حَجّ حَجّةً.

অর্থাৎ সুফয়ান ছাওরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তাকে এক লোক জিজ্ঞেস করল, নফল হজ্ব উত্তম নাকি দান-সদকা? তিনি তখন ইবরাহীম নাখায়ীর সূত্রে বললেন, যদি একাধিক হজ্ব করে থাকে তাহলে সদাকা। আর হাসান রাহ. বলতেন, যদি একবার হজ্ব করে থাকে (তাহলেও সদাকাই উত্তম)। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৮৮২৩

এর ব্যাখ্যায় ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, এটা সাধারণ দান-সদকার বেলায় নয়; বরং বিশেষ ক্ষেত্রে। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনার এমন কোনো দুস্থ অভাবী আত্মীয় থাকে, যাকে দেখার কেউ নেই, বা দেশে যদি কোনো জাতীয় দুর্যোগ অথবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়, কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কোনো চাহিদা সামনে এসে দাঁড়ায়, যেখানে একার চেষ্টায় বা মুষ্টিমেয় লোকের অর্থায়ন যথেষ্ট নয়; বরং বহু মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়ে, তাহলে এসব ক্ষেত্রে সংগৃহীত অর্থ দান করে দেয়াকে তারা নফল হজ্বের চেয়ে  উত্তম গণ্য করেছেন।

কিন্তু যে ব্যক্তি নফল হজ্বে গিয়েও অতিরিক্ত দান-খয়রাত করার সামর্থ্য রাখে সে উভয়টিই করবে।

-মুখতাছারু ইখতিলাফিল উলামা ২/২৪২; রদ্দুল মুহতার ২/২৬১; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৪০৩; গুনয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৯৬

শেয়ার লিংক

রাহেলা খাতুন - আজিমপুর

৪৮৭৬. প্রশ্ন

মহিলারা মাহরাম ব্যতিরেকে আটচল্লিশ মাইল বা এর চেয়ে বেশি দূরত্বের সফর একাকী করতে পারে না- এ কথা আমি জনৈক আলেমের কাছ থেকে জেনেছি। যে পরিমাণ অর্থ থাকলে হজ্ব ফরয হয় তা আমার আছে। কিন্তু মাহরামকে সঙ্গে নেয়ার মতো পথ খরচ ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের মতো সামর্থ্য আমার নেই। এদিকে আমার পড়শী এক দম্পতি এ বছরই হজ্বে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রতিবেশী মহিলার সাথে আমি কি হজ্বের সফরে যেতে পারি? কারণ আমার না হলেও তার তো মাহরাম আছে এবং এতে করে মাহরামের যে প্রয়োজনীয়তা, তথা নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত হওয়া- তা তো হয়েই যাচ্ছে। আর যদি এভাবেও আমার যাওয়ার অনুমতি না থাকে শরীয়তে তাহলে ফরয হজ্ব আদায়ে আমার করণীয় কী?

উত্তর

মাহরাম ছাড়া মহিলাদের হজে¦ যাওয়া কোনো অবস্থাতেই জায়েয নয়। হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ সফর এবং হজ্বের সফর সকল ক্ষেত্রেই মাহরাম ছাড়া মহিলাদের একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।

عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ، عَنِ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ: لاَ يَخْلُوَنّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ. فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، امْرَأَتِي خَرَجَتْ حَاجّةً، وَاكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، قَالَ: ارْجِعْ فَحُجّ مَعَ امْرَأَتِكَ.

হযরত ইবনে আব্বাস রা. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, নবীজী বলেছেন, কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে তার মাহরাম ব্যতিরেকে একাকী অবস্থান না করে। তখন এক ব্যক্তি উঠে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়েছি। ওদিকে আমার স্ত্রী হজ্বের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। নবীজী বললেন, ফিরে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ¦ কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৩৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪১

لَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ ثَلَاثًا، إِلّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ.

হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে কোনো নারী তিন দিন দূরত্বের পথে সফর করবে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১০৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৩৮

لَا يَحِلّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُسَافِرَ سَفَرًا يَكُونُ ثَلَاثَةَ أَيّامٍ فَصَاعِدًا، إِلّا وَمَعَهَا أَبُوهَا، أَوِ ابْنُهَا، أَوْ زَوْجُهَا، أَوْ أَخُوهَا، أَوْ ذُو مَحْرَمٍ مِنْهَا.

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য নিজের বাবা, ছেলে, স্বামী, ভাই বা অন্য কোনো মাহরামকে সঙ্গে না নিয়ে তিন দিন বা ততোধিক দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪০; সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৩/১৩৮

এসব হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মাহরাম ছাড়া হজ্বের সফরে বের হওয়া যাবে না। আর এত সুস্পষ্ট হাদীস থাকার পর এখানে ভিন্ন কোনো যুক্তি দাঁড় করানো বাঞ্ছনীয় নয়। সুতরাং আপনার করণীয় হচ্ছে, মাহরামদের কেউ নিজ ব্যবস্থাপনায় হজ্বের সফরে বের হয় কি না সেদিকে নজর রাখা অথবা কোনো এক মাহরামকে নিজ খরচে হজ্বে নিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ আপনার হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও দুটোর কোনোটাই না হয়, কিংবা ততোদিনে সফরে বের হওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা লোপ পেয়ে যায় তাহলে এমন ক্ষেত্রে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ্ব করাবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৪-৩১৫; আদদুররুল মুখতার ২/৪৬৪-৪৬৫; মানাসিক,  মোল্লা আলী কারী পৃ. ৭৬ ও ৭৮; গুনয়াতুন নাসিক পৃষ্ঠা ২৬-২৭ ও ২৯; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৫৬

শেয়ার লিংক

মুবাশশির আহমেদ - হবিগঞ্জ, সিলেট

৪৮৭৭. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আমার প্রবাসী পিতা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার আম্মাকে তিন তালাক দিয়ে দেন। বিষয়টি একজনকে জানালে তিনি দ্রুত আম্মাকে নানাবাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বলেন। একথা শুনে তিনি বিমূর্ষ হয়ে পড়েছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে নানাবাড়িতে কীভাবে যাবেন? এ করুণ পরিস্থিতিতে জনাবের কাছে জানার বিষয় হল,

১. এখন কি বাস্তবেই আম্মাকে নানাবাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে?  আমরা চাচ্ছি, তিনি আব্বুর স্ত্রী হিসাবে না থাকলেও আমাদের দেখাশুনা ও পরিবারের নিয়ন্ত্রণের জন্য আব্বুর সংসারে থাকুন। এতে শরয়ী কোনো সমস্যা আছে কি না? এক্ষেত্রে আব্বুর টাকা দিয়ে তিনি নিজের ব্যয় নির্বাহ করতে পারবেন কি না?

২. আম্মার তালাকের ইদ্দতেও মৃত্যু পরবর্তী ইদ্দতের ন্যায় সাজসজ্জা ত্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন বিধান কার্যকর হবে কি না?

উত্তর

আপনার আম্মা ইদ্দত চলাকালীন আপনাদের বাড়িতেই অবস্থান করবেন এবং এ সময় আপনার বাবাকেই তার ভরণ-পোষণের ব্যয় নির্বাহ করতে হবে। কেননা ইদ্দতকালীন ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান তালাকদাতা স্বামীর জিম্মায়। ইদ্দত শেষে তিনি অন্যত্র বসবাস করতে পারবেন। অবশ্য আপনার মা যেহেতু বৃদ্ধ হয়ে গেছেন আর বাবাও বাইরে থাকেন, পারিবারিক প্রয়োজনে মা যদি সন্তানদের সাথে থাকেন তবে তিনি আপনার বাবার অনুমতিতে এ বাড়িতেও অবস্থান করতে পারবেন এবং আপনার বাবা বা আপনারা তার ভরণ-পোষণের ব্যয়ও নির্বাহ করতে পারবেন। তবে আপনার বাবার সাথে সবসময় তাকে শরয়ী পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। ‘দ্রুত তাকে নানাবাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে’ প্রশ্নের কথাটি ঠিক নয়। বিশেষত ইদ্দত চলাকালীন অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলা ভুল। কেননা স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা জরুরি।

২. তিন তালাক পরবর্তী ইদ্দতেও মৃত্যু পরবর্তী ইদ্দতের ন্যায় সাজসজ্জা ত্যাগ করার বিধান রয়েছে এবং এক্ষেত্রেও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া স্বামীর বাসস্থান থেকে বের হওয়া যাবে না। সফর করা যাবে না এবং অন্যত্র রাত্রি যাপন করা যাবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৯২৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৫৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৬৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২৫০

শেয়ার লিংক

শিবলী হাসান - মহাখালী, ঢাকা

৪৮৭৮. প্রশ্ন

আমার বন্ধু রাশেদের সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া হচ্ছিল। এক পর্যায়ে সে তার স্ত্রীকে থামানোর জন্য বলে, ‘তুই আমার মার মত’ একথা বলার সময় তার চিন্তায় তালাক বা ভিন্ন কিছুর নিয়ত ছিল না। কেবল ঝগড়া থামানোর জন্যই সে এটা বলেছিল। এখন সে একথা বলার জন্য অনুতপ্ত। সে জানতে চেয়েছে, এতে কি তাদের বিবাহে কোনো সমস্যা হয়েছে? হয়ে থাকলে তাদের করণীয় কী? তাদের কি দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে হবে?

উল্লেখ্য, তাদের ছোট ছোট দুটি সন্তান আছে। তাই তাদের কেউই চায় না পরস্পরের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটুক।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ বাক্যটি বলার সময় যেহেতু স্বামীর তালাকের নিয়ত ছিল না তাই এ কারণে তার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। তাই এখনও তারা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করতে পারবে। দ্বিতীয়বার বিবাহ করার প্রয়োজন নেই। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন কথা বলা অন্যায় ও গুনাহ।

-কিতাবুল আছল ৫/১০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৬৬; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ আলা মুখতাসারিল কুদূরী পৃ. ৩৯০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/১৬৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২০২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭০

শেয়ার লিংক

রতন চৌধুরী - উত্তরা, ঢাকা

৪৮৭৯. প্রশ্ন

আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর হয়েছে। প্রথম দেড় বছর মোটমুটি ভালো কাটলেও এরপরই সমস্যা শুরু হয়। সমস্যার সূচনা আমার স্ত্রীর ফেইসবুক চালানো নিয়ে। সে বিভিন্ন মানুষের সাথে মেসেজ আদান-প্রদান করত। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটিও হয়। সে বারবার বলত, আমি ফেইসবুক চালালে তোমার সমস্যা কোথায়? এক মাস আগে এ নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে বলে ফেলি, ফেইসবুক চালালে আমার ঘরে আর থাকতে পারবে না। পরের দিন আমি অফিসে যাওয়ার পর সে তার বাবার বাসায় চলে যায়। আমার ও আমার পরিবারের লোকদের কয়েকবার চেষ্টার পরও সে আসেনি। পরে আমি মুরব্বীদের সাথে পরামর্শ করে তাকে তালাক দিয়ে দিই।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যেহেতু তার দোষেই আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে তাই মহর, তালাক পরবর্তী ইদ্দতের ভরণ-পোষণ এগুলো দিতে কি আমি বাধ্য? তাছাড়া আমার স্ত্রী পারিবারিকভাবে বেশ সচ্ছল।

উত্তর

মহর স্ত্রীর হক। বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের দ্বারাই পুরো মহর স্ত্রীর পাওনা হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রীর মহর অনাদায়ী থাকলে তা আদায় করে দিতে হবে। তালাক কার কারণে হয়েছে, মহিলা সচ্ছল কি না, ইত্যাদি বিষয় এখানে বিবেচ্য নয়।

আর তালাকের ইদ্দতকালীন স্ত্রীর ভরণ-পোষণও তালাকদাতা স্বামীকে বহন করতে হয়। কিন্তু যদি মহিলা স্বামীর অবাধ্য হয়ে তার বাড়ী ত্যাগ করে সেক্ষেত্রে সে আর ভরণ-পোষণ দাবি করতে পারে না। তাই আপনার স্ত্রী আপনার অনুমতি বা সম্মতি ছাড়া যদি আপনার বাসার বাইরে ইদ্দত পালন করে তাহলে সে ভরণ-পোষণ পাবে না। কিন্তু যদি ইদ্দত পালনের জন্য সে আপনার বাসায় ফেরত আসে তাহলে সেক্ষেত্রে যথানিয়মে ভরণ-পোষণ পাবে।

-মুআত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৫৩১; কিতাবুল আছল ৪/৪৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১৫১, ৩২৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৯৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৬০৯, ১০২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ বাদল - নোয়াখালী

৪৮৮০. প্রশ্ন

আমি এক ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগের পর লস হওয়ার আশংকা দেখলে মান্নত করি যে, ‘যদি লাভ হয় তাহলে লাভের ১০% গরীবদের সদকা করব’। আল্লাহর রহমতে উক্ত ব্যবসায় ভালো লাভ হয়। এখন আমাদের মসজিদে নির্মাণ কাজ চলছে। আমি কি উক্ত টাকা এখানে দান করতে পারব?

 

উত্তর

না, মসজিদের নির্মাণকাজে মান্নতের টাকা দেওয়া যাবে না। মান্নতের টাকা গরীব-মিসকীনের হক। তাদেরকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। আর মসজিদের নির্মাণকাজে শরীক হতে চাইলে তা সাধারণ দান থেকে করবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; আননাহরুল ফায়েক ১/৫৬৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪২৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯

শেয়ার লিংক

শামসুল আলম - নেত্রকোণা

৪৮৮১. প্রশ্ন

আমার চাচা এক মাস আগে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পূর্বে সুস্থ অবস্থায় তিনি আমাদের গ্রামের মাদরাসার জন্য আট শতাংশের একটি জমি ওয়াকফ করেন। তিনি মৌখিকভাবে বলেছিলেন, ‘আমি আমার এই আট শতাংশ জমি আমাদের গ্রামের মাদরাসার জন্য ওয়াকফ করলাম। তবে যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন আমি এই জমির ফল-ফসল ভোগ করব। আমার মৃত্যুর পরে মাদরাসা এটি নিয়ে নিবে।’

চাচার ইন্তেকালের পর চাচাত ভাইয়েরা এক হুযুরকে মাসআলা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যে, আট শতাংশ জমি যদি মৃতের রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে কম হয় তাহলে সেটা পুরোটাই মাদরাসার হবে। আর যদি এক তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি হয় তাহলে এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ মাদরাসার জন্য ওয়াকফ হবে। বকিটা ওয়ারিশদের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে।

এখন চাচাত ভাইয়েরা জানতে চায় যে, ঐ কথা কি ঠিক? অনুগ্রহপূর্বক সঠিক মাসআলা জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার চাচা যেহেতু সুস্থ অবস্থায় আট শতাংশ জমি মাদরাসার জন্য ওয়াকফ করেছেন (ওয়াকফের অসিয়ত করেননি) তাই আট শতাংশ জমি পুরোটাই মাদরাসার জন্য ওয়াকফ হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তিনি এ জমির ফল-ফসল ভোগ করবেন- এই শর্ত করার কারণে ওয়াকফ কার্যকর হতে কোনো সমস্যা হয়নি। এই জাতীয় শর্ত করা হলেও ওয়াকফ সহীহ হয়ে যায়।

সুতরাং তার মৃত্যুর পর ঐ জমি পুরোটাই (আট শতাংশ) মাদরাসার ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।

এক্ষেত্রে ‘এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ’ সম্পত্তিতে ওয়াকফ কার্যকর হওয়ার কথা সহীহ নয়। কারণ মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের মধ্যে কার্যকর হওয়ার বিষয়টি অসিয়তের সাথে সম্পৃক্ত, ওয়াকফের সাথে নয়। কেউ যদি সরাসরি ওয়াকফ না করে ওয়াকফের অসিয়ত করে তখন সেটি অসিয়ত হিসাবে গণ্য হয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচা সরাসরি ওয়াকফ করেছেন, অসিয়ত করেননি। তাই এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।

-মুখতাসারুত তহাবী পৃ. ১৩৭; আলইখতিয়ার ৩/৫০; ফাতহুল কাদীর ৬/২২৭; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪১১

শেয়ার লিংক

সাইদ আহমদ - নকলা, শেরপুর

৪৮৮২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। কয়েক বছর আগে মসজিদটিকে তাবলীগের মারকায বানানো হয়। শবগুযারিতে জায়গা হয় না। তাই মসজিদটি বড় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মসজিদে অনেক আগের ইসলামী ফাউন্ডেশনের দেওয়া দুটি আলমারি আছে, এগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও কিছু পুরাতন পাখাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র আছে। মসজিদ বানানোর পর এসকল জিনিসপত্র নতুন করে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তখন বর্তমান জিনিসপত্রের কোনো প্রয়োজন থাকবে না। রেখে দিয়ে কোনো লাভও হবে না। উক্ত জিনিসগুলো ওয়াকফকৃত হওয়ায় তা কী করা হবে- এ নিয়ে দ্বিমত হচ্ছে। কেউ বলছে, এগুলো বিক্রি করা যাবে না। অনেকে এগুলো বিক্রি করে তার অর্থ মসজিদের কাজে ব্যবহার করতে বলছেন। জানার বিষয় হল, এই জিনিসগুলো রেখে দেওয়ার মাঝে কোনো লাভ নেই, তাই এগুলো বিক্রি করে মসজিদের কাজে ব্যয় করার শরয়ী বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত বস্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত হয়ে গেলে বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেলে তা বিক্রি করে সে টাকা মসজিদের কাজে ব্যয় করা জায়েয। এতে কোনো সমস্যা নেই। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জিনিসগুলো যখন প্রয়োজন হবে না তখন তা বিক্রি করে দেওয়া বৈধ হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৪২; হাশিয়াতুশ শুরুমবুলালী আলা দুরারিল হুক্কাম ২/১৩৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫২

শেয়ার লিংক

ডা. আবুল খায়ের - মনিরামপুর, যশোর

৪৮৮৩. প্রশ্ন

হযরত মুফতী সাহেব (আল্লাহ আপনাকে দ্বীনের খেদমতের সাথে দীর্ঘজীবী করুন) আমার একটি বিষয় জানার খুবই প্রয়োজন। যেহেতু আমি একজন ডাক্তার। তাই প্রতিনিয়ত এর মুখোমুখি হই। মেহেরবানি করে সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ হব।

সেটি হল, ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদেরকে কিছু ঔষধ শুভেচ্ছাস্বরূপ দিয়ে থাকে। প্রশ্ন হল, উক্ত ঔষধগুলো গ্রহণ করা যাবে কি না এবং তা বিক্রি করে টাকা ভোগ করা যাবে কি না?

অনুগ্রহ করে মাসআলার সমাধান দিলে খুবই দয়া হয়। দ্বীনের উপর চলা আমার জন্য সহজ হয়। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

উত্তর

ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে চিকিৎসকদেরকে যেসকল ওষুধ দেওয়া হয় তা যদি এমন হয় যে, ওষুধটি সম্প্রতি বাজারে এসেছে এবং চিকিৎসককে এটি দেওয়ার উদ্দেশ্য হল, এই ওষুধের সাথে পরিচিতি এবং এর গুণগত মান ও কার্যকরিতা যাচাই করা তাহলে চিকিৎসকের জন্য ওষুধটি নেওয়া জায়েয হবে। এমন ওষুধ চিকিৎসক নিজেও ব্যবহার করতে পারবেন এবং নিজের পরিবারের লোকদেরকেও দিতে পারবেন। তেমনি অন্য যে কোনো রোগীকেও বিনামূল্যে দিতে পারবেন। কিন্তু এসব ওষুধ বিক্রি করে নিজে এর মূল্য ভোগ করা বৈধ হবে না।

আর উপরোক্ত প্রকারের ওষুধ ছাড়া আরো যেসব ওষুধ প্রস্তুতকারীগণ চিকিৎসকদেরকে দিয়ে থাকে, যেগুলো আগে থেকেই বাজারে চালু আছে এবং যেগুলোর ব্যাপারে নতুন করে অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়োজন নেই- চিকিৎসকের জন্য এ ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা জায়েয নয়। কেননা চিকিৎসকদেরকে তারা ওষুধগুলো আর্থিক সুবিধাস্বরূপ দিয়ে থাকে। যাতে করে চিকিৎসক রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে তাদের ওষুধের নাম লেখেন। এজন্যই অনেক চিকিৎসকের চেম্বারের সামনেই দেখা যায়, রোগী চেম্বার থেকে বের হওয়ার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিগণ ব্যবস্থাপত্র চেক করে দেখে যে, চিকিৎসক তাদের ওষুধের নাম লিখেছেন কি না। এ থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি শরীয়তে নিষিদ্ধ ‘রিশওয়াত’ তথা উৎকোচের শামিল।

অবশ্য কোনো চিকিৎসক যদি তাদেরকে স্পষ্ট বলে নেন যে, আমি তোমাদের ওষুধ গ্রহণ করব না। তবে তোমরা চাইলে গরীব রোগীদেরকে দেওয়ার জন্য আমার নিকট দিতে পার, আর কোম্পানির প্রতিনিধি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে বিলি করার জন্য তাকে ওষুধ প্রদান করে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চিকিৎসককে তাদের ওষুধ লেখার জন্য চাপ না দেওয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি ওষুধগুলো গ্রহণ করে মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারবেন।

-মাআলিমুস সুনান ৪/১৬১; আলমাবসূত, সারাখসী ১৬/৮২; রদ্দুল মুহতার ৫/৩২৬

শেয়ার লিংক

হাসান আহমাদ - উত্তরা, ঢাকা

৪৮৮৪. প্রশ্ন

মোশাররফ ও হাসান সাহেব একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। শ্রম তাদের উভয়ের। কিন্তু বিনিয়োগের সকল টাকা আবদুল মাজীদ সাহেবের। তাদের মাঝে এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, মোশাররফ ও হাসান সাহেব চার ভাগের এক ভাগ করে মোট অর্ধেক লাভ পাবেন। আর বাকি অর্ধেক লাভ আবদুল মাজীদ সাহেবের। আর মোশাররফ ও হাসান সাহেব নিজ খরচের জন্য প্রতি মাসে ২০ হাজার করে মোট ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। জানার বিষয় হল, তাদের এই চুক্তি বৈধ কি না? কারবারের ভেতর কোনো সমস্যা থাকলে তা এখন সমাধানের উপায় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মোশাররফ ও হাসান সাহেবের জন্য বেতন নির্ধারণ করা সহীহ হয়নি। কেননা এক পক্ষের পুঁজি ও অপর পক্ষের শ্রম অর্থাৎ মুযারাবা কারবারে শ্রমদাতার জন্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা জায়েয নয়। এক্ষেত্রে তার শ্রমের বিনিময়ে শুধু লভ্যাংশই প্রাপ্ত হবে। তবে এর ফলে চুক্তিটি ফাসেদ হয়ে যায়নি। এখন চুক্তি থেকে ঐ ধারাটি বাদ দিতে হবে। ভবিষ্যতে তারা যদি বেশি নিতে চান তাহলে তাদের লভ্যাংশের হার বাড়িয়ে নিতে পারেন। যেমন প্রত্যেকে ৩০% বা ৩৫% করে নিবেন আর অবশিষ্টাংশ বিনিয়োগকারীর হবে।

প্রকাশ থাকে যে, মাসিক খরচের জন্য যদি প্রতি মাসে কিছু নিতে চান তাহলে পরবর্তীতে লাভ থেকে সমন্বয় করে নিবেন- এ শর্তে নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যা নেওয়া হয়েছে এর চেয়ে লাভ যদি কম হয় তাহলে অবশিষ্ট টাকা ফেরত দিতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭

শেয়ার লিংক

শফিকুল ইসলাম - নওগাঁ

৪৮৮৫. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমি এক মাছ বিক্রেতার কাছে একটি মাছের দাম জিজ্ঞাসা করলে সে তিন শত টাকা মূল্যের মাছের দাম এক হাজার টাকা বলে। বিষয়টি টের না পেয়ে আমি সাতশত টাকা বলে ফেলি। সে এতেও রাজি হয়নি। তাই আমি সেখান থেকে চলে আসি। কিছু দূর চলে আসার পর ঐ দামেই মাছটি নেয়ার জন্য সে আমাকে ডাকতে থাকে। এতক্ষণে চড়া দামের বিষয়টি আমার বুঝে আসে। তাই আমি আর তার ডাকে সাড়া দেইনি। সে আমার পিছু নেয় এবং আমাকে ধরে বলে- দরদাম করে এখন নিবেন না কেন? তার চিল্লাচিল্লিতে আশপাশের কিছু লোক জমা হলে তারাও একই কথা বলে। অবশেষে চড়া দামে মাছটি নিতে আমি বাধ্য হই। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আমার জন্য মাছটি নেয়া কি আবশ্যক ছিল? এক্ষেত্রে মাছ কিনতে আমাকে বাধ্য করা কি ঠিক হয়েছে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মূল্য বলার পর মাছ বিক্রেতা যেহেতু আপনার প্রস্তাবে রাজি হয়নি এবং আপনি সেখান থেকে চলেও এসেছিলেন তাই ঐ প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং পরে সে ঐ দামে মাছ দিতে চাইলেও তা আপনার জন্য নেওয়া আবশ্যক ছিল না। এক্ষেত্রে মাছ বিক্রেতা আপনাকে তা নিতে বাধ্য করা অন্যায় হয়েছে। এক্ষেত্রে বিক্রেতা যেহেতু চাপ সৃষ্টি করে কিছুটা প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত চড়া দামে মাছটি বিক্রি করেছে তাই মাছটির ন্যায্য দামই শুধু সে রাখতে পারবে। এর অতিরিক্ত যে মূল্য সে নিয়েছে তা ফেরত দেওয়া আবশ্যক। তা তার জন্য ভোগ করা জায়েয হবে না।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দা ১৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৭

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম শান্ত - মাইজদী, নোয়াখালী

৪৮৮৬. প্রশ্ন

হযরত আমার নাম শান্ত, আমার ভাইয়ের নাম সজিব, এগুলো আমাদের ডাক নাম। এভাবে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ডাকনাম হিসেবে সংক্ষিপ্ত বাংলা-ইংরেজি শব্দে নাম রাখার প্রচলন রয়েছে। যেমন ইমন, নীরব ইত্যাদি।

এখন মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এরকম নাম রাখার বিধান কী? এক্ষেত্রে শরীয়তের নীতিমালা কী? আমাদের নামগুলো কি ঠিক আছে? বিষয়টি একটু বিস্তারিত বুঝিয়ে বললে উপকৃত হতাম।

উত্তর

ইসলামে সুন্দর  ও ভালো নাম রাখার গুরুত্ব অনেক। তাই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই অনেক বাচ্চার নাম রেখে দিয়েছেন এবং কারো অসুন্দর নাম শুনলে তা পরিবর্তন করে দিতেন। তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ রাখা উত্তম :

১. আল্লাহ তাআলার কোনো নামের সাথে ‘আব্দ’ যোগ করে নাম রাখা যেমন, আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ أَحَبّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللهِ عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرّحْمنِ.

আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় নাম আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৩১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯১০)

২. কোনো নবীর নামে নাম রাখা, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

تَسَمّوْا بِأَسْمَاءِ الْأَنْبِيَاءِ.

তোমরা নবীদের নামে নাম রাখ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৯০৩২, আরো দ্রষ্টব্য আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৮৩৬-৮৪০)

 ৩. সাহাবী-তাবেয়ী কিংবা কোনো নেককার বুযুর্গের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখা। এক হাদীসে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তাদের (হাসান, হুসাইন ও মুহাসসিনের) নাম রেখেছি হযরত হারূন আলাইহিস সালামের সন্তানদের নামের সাথে মিলিয়ে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৫৩)

আর নামের প্রভাব ব্যক্তির মাঝে প্রতিফলিত হওয়ার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯১৭)

আর হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে-

إِنّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ، وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ.

কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার নিজের নাম ও পিতার নামসহ ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৯)

এগুলো হচ্ছে উত্তম নাম রাখার কিছু মূলনীতি। এছাড়াও যে কোনো ভালো অর্থের নামও রাখা জায়েয এবং তা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় (যেমন বাংলা)ও হতে পারে। আর প্রশ্নে উল্লেখিত শান্ত, সজিব ও নীরব নামগুলো রাখার সুযোগ আছে। তবে ইমন সাধারণ অর্থ হিসেবে খুব বেশি সুন্দর নয়।

-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩/৩৭০; তুহফাতুল মাওদূদ পৃ. ৯৯, ১০৬; আসসেআয়া ২/১৬৪

শেয়ার লিংক