উম্মে হাবীবা - লক্ষীপুর

৫৭৬৪. প্রশ্ন

আমি উম্মে হাবীবা। প্রতি মাসে আমার ১০ দিন ঋতুস্রাব হত। আর ২০ দিন আমি পবিত্র থাকতাম। কিন্তু এইবার ১০ দিন পার হওয়ার পর স্রাব বন্ধ হয়নি। তাই ১১ তম দিনে আমি গোসল করে নামায পড়া শুরু করি। এভাবে আরো ১৫ দিন অতিবাহিত হয়ে আজ ২৫ তম দিন। এখনো স্রাব বন্ধ হয়নি। আমি জানতাম, পবিত্রতার সর্বনিম্ন সময় ১৫ দিন। আজ যেহেতু ১৫ দিন পূর্ণ হচ্ছে তাই আমি কি আগামীকাল থেকে ঋতুস্রাবের দিন গণনা শুরু করব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

না, এক্ষেত্রে আপনার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী পবিত্রতার সময় বিশ দিনই ধরতে হবে। অতএব ঋতুস্রাবের দশ দিন পার হওয়ার পর বিশ দিন পর্যন্ত স্রাব দেখা দিলে তা ইস্তেহাযা গণ্য হবে। কেননা আপনার পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী যেমনিভাবে আপনার হায়েযের দিন নির্ধারিত তেমনি আপনার তুহুর তথা পবিত্রতার সময়ও নির্ধারিত। সুতরাং পবিত্রতার সর্বনিম্ন সময় ১৫ দিনের বিষয়টি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৬১, ১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪১৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯; রদ্দুল মুহতার ১/২৮৬

শেয়ার লিংক

সফওয়ান - ফরিদপুর

৫৭৬৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি মাহফিল হয়। তাতে অনেক লোকসমাগম হয়। তাই কর্তৃপক্ষ এশার জামাত মাহফিলের মাঠেই করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেদিন এখানে বৃষ্টি ছিল। তাই নামাযের কাতার সোজা করার সময় দেখা গেল যে, মাঠের মধ্যখানে তিনটি কাতারের মাঝামাঝি অংশে উপরে শামিয়ানা না থাকায় বৃষ্টির পানি পড়ছে। তাই লোকেরা এ কাতারগুলোর ডান পাশে ও বাম পাশে দাঁড়াতে পারলেও মাঝের অংশ খালি রেখে পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল যে, যাদের সামনে কাতারগুলোর মাঝখানের অংশ ফাঁকা ছিল তাদের নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ তিন কাতারের মাঝখানের অংশ খালি থাকলেও যেহেতু পাশে কাতার মিলিত ছিল তাই খালি স্থানের পেছনে দাঁড়ানো মুসল্লীদের নামায সহীহ হয়েছে। যদিও ওজর ছাড়া এমনটি করা ঠিক নয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৮৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৬

শেয়ার লিংক

জামীল হাসান - নোয়াখালী

৫৭৬৬. প্রশ্ন

আমি এক মসজিদের ইমাম। গতকাল এশার নামাযের সময় আমার ওযু আছে মনে করে নামায পড়িয়ে দেই। নামাযের পর মুসল্লীরা সবাই যখন যার যার বাড়িতে চলে যায় তখন আমার মনে পড়ে, আমি তো ওযু ছাড়াই নামায পড়িয়ে দিয়েছি। মুহতারাম মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এ অবস্থায় আমাদের জন্য করণীয় কী?

উত্তর

নামাযে ইমামের ওযু না থাকলে ইমাম-মুক্তাদী কারো নামায সহীহ হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামাযে আপনার ওযু না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলে  আপনি ও মুক্তাদী কারো নামাযই সহীহ হয়নি। তাই উক্ত এশার নামায আবার পড়ে নিতে হবে। আর মুসল্লীদের মাঝে এলান দিতে হবে, ঐ দিনের এশার নামায সহীহ হয়নি। তা আবার পড়ে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ১৩৩; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৩৬৬২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/১৫২; খিযানাতুল আকমাল ১/২৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯২; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬৬

শেয়ার লিংক

সালমান - ফেনী

৫৭৬৭. প্রশ্ন

আগে আমি তারাবীর নামায পড়ানোর সময় রুকু-সিজদায় তাসবীহ না পড়ে দ্বিতীয় রাকাতের পড়া তিলাওয়াত করতাম। মুহতারামের কাছে আমি জানতে চাই, এভাবে রুকু-সিজদায় তাসবীহ না পড়ে কুরআন তিলাওয়াত করলে নামাযের কি কোনো ক্ষতি হয়? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

রুকু অথবা সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহে তাহরীমী। হাদীস শরীফে রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

نَهَانِي رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنّ أَقْرَأَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু ও সিজদা অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০)

সুতরাং রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা নাজায়েয হয়েছে। ভবিষ্যতে এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৮৮, ৪৪৪; আলইখতিয়ার ১/২৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭

শেয়ার লিংক

ওমর - শরীয়তপুর

৫৭৬৮. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমরা কয়েকজন মুসল্লী আসরের নামাযের সময় মসজিদের দ্বিতীয় তলায় জামাতে দাঁড়াই। চতুর্থ রাকাতে ইমাম সাহেব সিজদা থেকে ওঠার পর হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন আমরা তাশাহহুদ, দরুদ শরীফ, দুআ মাসূরা পড়ে নিজে নিজেই সালাম ফিরিয়ে ফেলি। আমরা সালাম ফিরানোর পরপরই বিদ্যুৎ চলে আসে এবং আমরা তখন ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানোর আওয়াজ শুনতে পাই। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় ইমামের আগে সালাম ফিরানোর কারণে কি আমাদের নামায নষ্ট হয়ে গেছে? এখন আমাদের করণীয় কী?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনারা যদিও ইমামের আগে সালাম ফিরিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু যেহেতু ইমামের তাশাহহুদ পরিমাণ বসার পরই সালাম ফিরিয়েছেন তাই আপনাদের ঐ দিনের আসরের নামায সহীহ হয়ে গিয়েছে। ওযর বশত এমনটি হওয়ার কারণে নামায মাকরূহও হয়নি।

-কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৬৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১০২; আলজাওহারাতুন নাইয়িরাহ ১/৬৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৫১

শেয়ার লিংক

মাহবুব - চাঁদপুর

৫৭৬৯. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের তারাবীর ইমাম সাহেব হুজুর একটু দ্রুত তারাবী পড়ান। ফলে কখনো কখনো আমি তাশাহহুদ পড়ে শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। তেমনিভাবে অন্যান্য নামাযের প্রথম বৈঠকে কখনো কখনো আমরা মুক্তাদীরা তাশাহহুদ পড়ে শেষ করার আগেই তিনি তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমরা মুক্তাদীরা কি তাশাহহুদ পূর্ণ করব, নাকি তাশাহহুদ পূর্ণ না করেই ইমামের অনুসরণ করে দাঁড়িয়ে যাব বা সালাম ফিরিয়ে ফেলব?

উত্তর

মুক্তাদীর তাশাহহুদ পূর্ণ করা ওয়াজিব। তাই মুক্তাদী তাশাহহুদ পড়া শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে গেলে বা শেষ বৈঠকে সালাম ফিরিয়ে ফেললে মুক্তাদী তাশাহহুদ পূর্ণ করবে। এরপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে কিংবা শেষ বৈঠক হলে সালাম ফিরাবে। অবশ্য এক্ষেত্রে শেষ বৈঠকে শুধু তাশাহহুদই সম্পন্ন করবে। দরুদ শরীফ, দুআয়ে মাসূরা পড়বে না।

-আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৫২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১০৮; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬

শেয়ার লিংক

জালিস মাহমুদ - বরিশাল

৫৭৭০. প্রশ্ন

এবার ঈদের নামায পড়ানোর সময় সাউন্ডসিস্টেমে ত্রুটি হওয়ায় মুকাব্বির ঠিক করে দেই। জামাত যেহেতু বেশ বড় ছিল, সেজন্য অতিরিক্ত তাকবীর বলার সময় দুই তাকবীরের মাঝে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যাতে সকলেই তাকবীর বলে শেষ করতে পারে।

মুহতারামের নিকট জানতে চাই, দুই তাকবীরের মাঝে কিছু সময় চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ঐ নামাযের কি কোনো সমস্যা হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনার জন্য দুটি তাকবীরের মাঝে কিছুটা বিলম্ব করা ভুল কিছু হয়নি; বরং পরিস্থিতির বিবেচনায় তা যথাযথ হয়েছে। তাছাড়া দুই তাকবীরের মাঝে তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করারও সুযোগ আছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৮২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৮; মাজমাউল আনহুর ১/২৫৭

শেয়ার লিংক

সালমান - বরিশাল

৫৭৭১. প্রশ্ন

মসজিদের সামনের দেয়ালে সময় দেখার জন্য একটি ডিজিটাল ঘড়ি লাগানো হয়েছে। অনেক সময় যোহরের নামায পড়ার জন্য মসজিদে এসে টাইম না দেখেই সুন্নত পড়তে শুরু করি। জামাত দাঁড়িয়ে যাওয়ার আশংকা হলে সুন্নত শেষ করতে পারব কি না নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঘড়ি দেখি।

প্রশ্ন হল, নামাযের মধ্যে সময় দেখার উদ্দেশ্যে ঘড়ি দেখলে নামাযের কি কোনো ক্ষতি হয়? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

নামাযের ভেতর ইচ্ছাকৃতভাবে ঘড়ি দেখা খুশুখুযু পরিপন্থী কাজ, যা মাকরূহ। তাই এ থেকে বিরত থাকা উচিত।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযের আগে সুন্নত পড়ার জন্য এতটুকু সময় হাতে নিয়ে নামায শুরু করা উচিত, যেন জামাত দাঁড়ানোর আগেই সুন্নত শেষ হয়ে যায়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৯; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৪৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪

শেয়ার লিংক

মাওলানা আকসাদ আলী - কুড়িগ্রাম

৫৭৭২. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লায় কয়েকদিন পূর্বে একজন ব্যবসায়ী ইন্তেকাল করেন। তার দাফন সম্পন্ন হলে মুসুল্লীগণ সকলে নিজ বাড়িতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ইমাম সাহেব মাইয়েতের ভাইকে জানায় যে, জানাযার ইমামতির সময় তার পরিধেয় কাপড় নাপাক ছিল। তারপর ইমাম সাহেব মাইয়েতের কবরের সামনে পুনরায় জানাযা আদায় করেন। ঘটনা প্রচার হলে একজন মাওলানা সাহেব বলেন, তিন দিনের বেশি অতিবাহিত হয়ে থাকলে দ্বিতীয়বার জানাযা পড়া যাবে না। অন্যথায় লাশ উত্তোলন করে জানাযার নামায পড়ে নিতে হবে। আমাদের প্রশ্ন হল, আমাদের ইমাম সঠিক কাজ করেছেন কি? উক্ত মাওলানা সাহেবের বক্তব্য কি ঠিক?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবের কাপড় নাপাক থাকার কারণে প্রথমবার আদায়কৃত জানাযার নামায সহীহ হয়নি। সুতরাং দাফনের পরপরই বিলম্ব না করে কবরকে সামনে রেখে পুনরায় জানাযার নামায আদায় করা শরীয়তসম্মত হয়েছে। কেননা কোনো কারণবশত কারো জানাযা না হলে কিংবা আদায়কৃত জানাযা ফাসেদ হলে লাশ নরম হওয়ার আগ পর্যন্ত কবর সামনে রেখে জানাযা আদায় করা সহীহ আছে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত-

أَنّ أَسْوَدَ رَجُلًا أَوِ امْرَأَةً كَانَ يَكُونُ فِي المَسْجِدِ يَقُمّ المَسْجِدَ، فَمَاتَ وَلَمْ يَعْلَمُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِمَوْتِهِ، فَذَكَرَهُ ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ: مَا فَعَلَ ذَلِكَ الإِنْسَانُ؟ قَالُوا: مَاتَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ أَفَلاَ آذَنْتُمُونِي؟ فَقَالُوا: إِنَّهُ كَانَ كَذَا وَكَذَا قِصّتُهُ  قَالَ: فَحَقَرُوا شَأْنَهُ، قَالَ: فَدُلّونِي عَلَى قَبْرِهِ فَأَتَى قَبْرَهُ فَصَلّى عَلَيْهِ.

একজন কালো পুরুষ অথবা একজন কালো নারী মসজিদ ঝাড় দিত। সে মারা যায়। তার মৃত্যুর বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবগত ছিলেন না। নবীজীর একদিন তার কথা মনে পড়ল। বললেন, লোকটির কী হল?

তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে মারা গেছে।

তখন নবীজী বললেন, তোমরা আমাকে জানাওনি কেন?

তারা বলল, সে এমন এমন ছিল বলে তার ঘটনা উল্লেখ করল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা তার বিষয়টিকে তুচ্ছ মনে করেছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও।

তিনি তার কবরের সামনে এলেন এবং জানাযার নামায আদায় করলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৩৭)

কিন্তু এক্ষেত্রে তিন দিন হয়ে গেলে লাশ উত্তোলন করে জানাযা পড়ার কথা সম্পূর্ণই ভুল। কেননা মাইয়েতের দাফন হয়ে গেলে জানাযার কারণেও লাশ উত্তোলন করা যাবে না। উপরন্তু দাফনের পর তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে লাশ নরম হয়ে যায়। তখন কবরে রেখেও জানাযা পড়ার সুযোগ থাকে না।

-কিতাবুল আছল ১/৩৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৫; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪০৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২০

শেয়ার লিংক

কাওসার আহমাদ - বরিশাল

৫৭৭৩. প্রশ্ন

কয়েক মাস আগে আমার ফুফুর একটি সন্তান জন্মের কিছুক্ষণ পরই মারা যায়। তখন মৃত নবজাতককে গোসল দিয়েই দাফন করে দিই। পরবর্তীতে একজন আলেম বললেন যে, আপনাদের এ কাজটি ঠিক হয়নি। আপনাদের জন্য নবজাতকের নাম রাখা ও জানাযা পড়া উচিত ছিল।

মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এই আলেমের কথা কি ঠিক?

উত্তর

হাঁ, ওই আলেম সঠিক বলেছেন। কোনো সন্তান জীবিত ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মারা গেলে তার নাম রাখা ও গোসল দিয়ে জানাযা পড়া আবশ্যক। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জানাযা না পড়া অন্যায় হয়েছে। সাহাবী হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا اسْتَهَلّ الصّبِيّ صلي عليه وورث.

জন্মের পর শিশু ক্রন্দন করলে (অর্থাৎ জীবিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করার পর মারা গেলে) তার জানাযা পড়া হবে এবং তার সাথে মিরাসের বিধানও জারি হবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৬০৩২)

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৯; উয়ূনুল মাসাইল, পৃ. ৩২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২২৭

শেয়ার লিংক

সিদ্দীকুর রহমান - রাজশাহী

৫৭৭৪. প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন সাহরীতে আমাদের ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। জাগ্রত হয়ে দেখি সময় আর বেশি বাকি নেই। তখন আমাদের একটু তাড়াহুড়া হয় এবং খাওয়া শেষ হতেও দেরি হয়ে যায়। আমাদের খাওয়ার রুমের দেয়াল ঘড়িতে যখন দেখি সাহরীর সময় শেষ হতে আর এক মিনিট আছে তখন আমরা খাওয়া শেষ করি। কিছুক্ষণ পর দেখি যে, আমাদের ঐ দেয়াল ঘড়ি দশ মিনিট পেছানো। এর মানে আমরা সাহরীর সময় শেষ হওয়ার পর প্রায় দশ মিনিট খেয়েছি। মুহতারামের কাছে জানতে চাই যে, সেদিন ওই রোযা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে কি আমাদেরকে তার কাযা ও কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে নাকি শুধু কাযা করলেই হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনারা যেহেতু সাহরীর সময় আছে মনে করে খেয়েছেন তাই আপনাদের ওপর ঐ দিনের শুধু কাযা আবশ্যক। কাফফারা দিতে হবে না।

-কিতাবুল আছল ২/১৪৫; খিযানাতুল ফিকহ, পৃ. ৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৭; আলমুহীতুর রাযাবী ২/১৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪০৫

শেয়ার লিংক

মুহা. শামীম - বনানী, ঢাকা

৫৭৭৫. প্রশ্ন

গত রমযানের শুরুর দিকে আমি ওমরায় যাই। যেদিন আমার বিমানের ফ্লাইট ছিল সেদিন আমি রোযা রেখেই বাসা থেকে বের হই। বিমানে আরোহণের পর মনে হল, যেহেতু সফর অবস্থায় রোযা ভাঙার সুযোগ আছে আর দীর্ঘ ভ্রমণের কারণে ক্লান্তিও বোধ হবে তাই আমি বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর রোযা ভেঙে ফেলি। তখন আমাদের কাফেলার একজন আলেম বললেন যে, আপনার জন্য আজকের রোযা ভাঙা উচিত হয়নি। কেননা আপনি মুকীম অবস্থায় রোযা রেখেছিলেন।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল যে, ওই আলেমের কথা কি ঠিক? তাহলে সফরে রোযা ভাঙার সুযোগ থাকার কী ব্যাখ্যা?

উত্তর

ওই আলেম ঠিকই বলেছেন। আপনার জন্য ঐদিন রোযা ভাঙা ঠিক হয়নি। কেননা মুকীম অবস্থায় রোযা রেখে সুবহে সাদিকের পর সফর করলে শরয়ী কোনো ওযর ছাড়া রোযা ভেঙে ফেলা জায়েয নেই। তাই শুধু সফরের অযুহাতে ওই দিনের রোযা ভাঙা ঠিক হয়নি।

আর সফরে রোযা ভাঙার সুযোগ থাকার অর্থ হল, সুবহে সাদিকের আগে মুসাফির হলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। কিন্তু সফর অবস্থায় রোযা রাখলে বিনা কারণে রোযা ভেঙে ফেলা জায়েয নয়। তবে সফরের রোযা পূর্ণ করতে অনেক বেশি কষ্ট হলে তখন ভাঙার অনুমতি আছে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৮; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৩১; ফাতহুল কাদীর ২/২৮৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯০

শেয়ার লিংক

শাহবাজ আহমদ - উত্তরা

৫৭৭৬. প্রশ্ন

আমি রমযানে সুন্নত ইতিকাফরত ছিলাম। আমি সর্বদাই ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করি। একদিন ওযু নষ্ট হয়ে গেলে ওযু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে ওযুখানায় যাই। অথচ তৎক্ষণাৎ আমি উক্ত ওযু দ্বারা কোনো আমল করিনি। এখন আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ওযুর জন্য বের হওয়াতে আমার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়েছে কি?

উত্তর

ইতিকাফকারীগণ সর্বাবস্থায় যথাসাধ্য মসজিদে ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করবে। তাই ইতিকাফ অবস্থায় ওযু ভেঙ্গে গেলেই ওযু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার অবকাশ রয়েছে। যদিও উক্ত ওযু দ্বারা তৎক্ষণাৎ কোনো ইবাদত করা উদ্দেশ্য না হয়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওযুর জন্য বের হওয়ার কারণে আপনার ইতিকাফের কোনো ক্ষতি হয়নি।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪৯; আলমুগনী ৪/৪৮৪; আহকামুল কুরআন, থানভী ১/২৭০

শেয়ার লিংক

আসাদুল্লাহ - ফেনী

৫৭৭৭. প্রশ্ন

আমার ভাড়ায় চালিত দশটি সিএনজি রয়েছে। সেখান থেকে ভাড়া বাবদ মাসিক যে আয় আসে তা সংসারের খরচ নির্বাহে ব্যয় করার পর কখনো কিছু টাকা হাতে থেকে যায়। আবার কখনো সব খরচ হয়ে যায়। তবে দশটি সিএনজির মূল্য হিসাব করলে দেখা যাবে, আমি প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকার মালিক। এখন আমি জানতে চাই, উক্ত সিএনজিগুলোর উপর কি প্রতি বছর আমাকে মূল্য ধরে যাকাত আদায় করতে হবে?

উল্লেখ্য, সিএনজিগুলো একটু পুরোনো হলে বিক্রি করারও ইচ্ছে আছে।

উত্তর

না, উক্ত সিএনজিগুলোর মূল্যের উপর যাকাত ফরয নয়। কেননা সেগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়নি; বরং ভাড়ার জন্য ক্রয় করা হয়েছে। যেসব জিনিস ভাড়ায় ব্যবহার হয় তাতে যাকাত আসে না। অবশ্য এর আয় থেকে উদ্বৃত্ত টাকা নেসাব পরিমাণ হলে এবং বছর অতিক্রম হলে তার উপর যাকাত দিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, সিএনজিগুলো পুরোনো হলে বিক্রি করে দেওয়ার নিয়ত থাকলেও বিক্রি করার আগ পর্যন্ত তা যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

-কিতাবুল আছল ২/৯৭; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৫০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৮

শেয়ার লিংক

মাহবুব আলম - ঢাকা

৫৭৭৮. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি মসজিদের নির্মাণ কাজ প্রায় তিন বছর যাবৎ চলছে। এলাকার এক বিত্তবান লোক প্রতি বছর প্রায় সত্তর হাজার টাকা যাকাত দিয়ে থাকে। এ বছর সে তার যাকাতের অর্ধেক টাকা মসজিদের নির্মাণ কাজে দিতে চায়। এখন আমি জানতে চাচ্ছি, তার উক্ত টাকা মসজিদের নির্মাণ কাজে লাগানো যাবে কি?

উত্তর

না, যাকাতের টাকা মসজিদের নির্মাণ কাজে দেওয়া যাবে না। এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। কেননা মসজিদ নির্মাণ যাকাতের নির্ধারিত খাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। এছাড়া যাকাত আদায় হওয়ার জন্য কোনো গরীব ব্যক্তিকে উক্ত মালের মালিক বানানো জরুরি।

হযরত সুফিয়ান সাওরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

الرّجُلُ لَا يُعْطِي زَكَاةَ مَالِهْ مَنْ يُحْبَسُ عَلَى النّفَقَةِ مِنْ ذَوِي أَرْحَامِهِ، وَلَا يُعْطِيهَا فِي كَفَنِ مَيِّتٍ، وَلَا دَيْنِ مَيِّتٍ، وَلَا بِنَاءِ مَسْجِدٍ.

কোনো ব্যক্তি নিজের যাকাত ঐ ব্যক্তিকে দেবে না, যার খরচাদির জিম্মা তার উপর এবং মৃত ব্যক্তির কাফন ও তার ঋণ আদায়ে এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য দেবে না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৭১৭০)

-খিযানাতুল ফিকহ, পৃ. ৭২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩০০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪২৫

শেয়ার লিংক

সুহাইল - কুষ্টিয়া

৫৭৭৯. প্রশ্ন

আমার নানি অনেক টাকার মালিক। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকার যাকাত প্রদান করেন। আমার একজন খালাত বোন অনেক গরীব। ছেলে-মেয়ে নিয়ে একটু কষ্টেই জীবন অতিবাহিত করছে। করোনাকালে অনেক ঋণী হয়ে যায়। আমার নানি চাচ্ছেন তাকে যাকাত ফান্ড থেকে মোটা অংকের কিছু টাকা দিতে, যাতে সে তার ঋণ আদায় করতে পারে। জানার বিষয় হল, আমার নানি যদি আমার খালাত বোনকে যাকাতের টাকা দেন তাহলে কি আমার নানির যাকাত আদায় হবে?

উত্তর

উক্ত খালাত বোন যদি আপনার নানির আপন মেয়ের সন্তান হয় তাহলে তাকে নানির যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েয হবে না। কেননা নিজ সন্তান ও তার অধস্তনকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।

-কিতাবুল আছল ২/১২৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩

শেয়ার লিংক

মাহবুব - বরিশাল

৫৭৮০. প্রশ্ন

আমি গরুর ব্যবসায়ী। গত কয়েকদিন আগে ব্যবসার উদ্দেশ্যে চারটি গরু তিন লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করি এবং এগুলোর খাবারের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকার খাবার ক্রয় করি। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমাকে গরুর যাকাত দেওয়ার সাথে খাবারের যাকাতও আদায় করতে হবে?

উত্তর

না, গরুর জন্য যে খাবার ক্রয় করেছেন এর যাকাত দিতে হবে না। কেননা গরুর উক্ত খাবার আপনার ব্যবসার বিক্রিযোগ্য মালের অন্তর্ভুক্ত নয়। এক্ষেত্রে কেবল গরুর মূল্যের উপর যাকাত ফরয হবে। তদ্রƒপ গরুর দুধ বিক্রির টাকা থাকলে তারও যাকাত দিতে হবে।

-আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৫০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০; খিযানাতুল আকমাল ১/১৮০; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৮২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০

শেয়ার লিংক

রাকিবুল ইসলাম - হযরতপুর

৫৭৮১. প্রশ্ন

আমার মেজ খালা পরিবারসহ রিয়াদে থাকতেন। গত কয়েকদিন আগে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। খালা যখন রিয়াদে হাসপাতালে ছিলেন তখন বলেছিলেন, আমার উপর তো হজ¦ ফরয। এ বছর হজ¦ করার নিয়ত করেছিলাম, কিন্তু এখন তো জীবনের তেমন কোনো আশা নেই। তো যদি আমি সুস্থ হয়ে যাই তাহলে আমি নিজেই হজ¦ করব। আর যদি মারা যাই তাহলে তোমরা কেউ আমার পক্ষ থেকে হজ¦ আদায় করে দিয়ো। পরবর্তীতে আমার খালা যখন মারা যান তখন তার লাশ বাংলাদেশে এনে দাফন করা হয়। এখন জানার বিষয় হল, আমার খালার পক্ষ থেকে হজ¦ আদায় করতে হলে রিয়াদের কেউ হজ¦ আদায় করলেই চলবে, নাকি বাংলাদেশ থেকে কেউ গিয়ে আদায় করতে হবে? বিষয়টা নিয়ে আমাদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে তাই এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

আপনার খালা যেহেতু পরিবারসহ রিয়াদে থাকতেন তাই রিয়াদ থেকে কেউ তার পক্ষ থেকে হজ¦ আদায় করলেই চলবে। বাংলাদেশ থেকে আদায় করা জরুরি নয়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২৭/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৭০; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ২/৯০৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৪

শেয়ার লিংক

আহসান হাবীব - গুলশান

৫৭৮২. প্রশ্ন

এ বছর আমার মেয়ে ও জামাই হজে¦র নিয়ত করেছিল। তাদের টিকেট, ভিসা, ফ্লাইটের তারিখসহ অন্যান্য সকল কিছু ট্রাভেল এজেন্সির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ হল আমার মেয়ের স্বামী ইন্তেকাল করেছে। তাদের ফ্লাইটের আর অল্প কিছুদিন বাকি ছিল। এমতাবস্থায় আমি যেহেতু আমার মেয়ের মাহরাম তাই তার স্বামীর স্থানে আমি যদি তার সাথে হজে¦ যাই তাহলে সে আমার সাথে হজে¦র সফরে যেতে পারবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মেয়ের উপর স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। ইদ্দত সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে সে আপনার সাথেও হজে¦র সফরে যেতে পারবেন না। প্রয়োজনে তিনি পরবর্তী বছর হজে¦ যাবেন।

 -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৯১৮৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৬

শেয়ার লিংক

আবু হানীফা - খুলনা

৫৭৮৩. প্রশ্ন

আমার স্ত্রী ২ বছর আগে আমাদের ৭ মাস বয়সের দুধের ছেলেকে রেখে মারা যায়। তখন আমার ছেলে তার নানির দুধ পান করে। পরবর্তীতে এক বছর পর উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমার শশুর আমার বাচ্চার খালা তথা আমার শালিকাকে আমার সাথে বিবাহ দিতে চাচ্ছেন। আমার প্রশ্ন হল, আমার এই শালিকা তো আমার ছেলের দুধবোন হয়ে গিয়েছে। এখন আমি কি তাকে বিবাহ করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি আপনার উক্ত শালিকাকে বিবাহ করতে পারবেন। কেননা আপনার ছেলে তার নানির দুধ পান করার কারণে সে ও তার খালা পরস্পর দুধ ভাই-বোন হয়েছে। কিন্তু এর কারণে তার খালা তথা আপনার শালিকার সাথে আপনার কোনো দুধ সম্পর্র্ক হয়নি। সুতরাং তাকে বিবাহ করতে কোনো সমস্যা নেই।

-কিতাবুল আছল ১০/২৮২; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৪০; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩; রদ্দুল মুহতার ৩/২১৫

শেয়ার লিংক

তানজিল আহমেদ - বারিধারা, ঢাকা

৫৭৮৪. প্রশ্ন

আমার ছোট ভাই জন্মগতভাবে কথা বলতে পারে না এবং শুনতেও পারে না। সে এখন প্রাপ্তবয়স্ক। আমরা তাকে বিবাহ দিতে চাচ্ছি এবং উপযুক্ত পাত্রির সন্ধানও পেয়েছি। সম্মানিত মুফতী সাহেবের নিকট আমরা জানতে চাচ্ছি, আমাদের ভাইয়ের বিবাহের পদ্ধতি কী হবে? অর্থাৎ বোবা ব্যক্তির বিবাহের পদ্ধতি কী?

উত্তর

আপনার ভাই যেহেতু বাকশক্তিহীন, কথা বলতে পারেন না। তাই তিনি যদি লিখতে-পড়তে পারেন তাহলে তাকে বিবাহের প্রস্তাব ও কবুল লিখিতভাবে করতে হবে। আর যদি তিনি লিখতে না পারেন তাহলে তিনি ইশারা করে সম্মতি প্রকাশ করলেও বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আছল ৪/৫১৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/১১৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/১৪৩; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭০; রদ্দুল মুহতার ৩/২৪১

শেয়ার লিংক

সাদেকুর রহমান - বসিলা, ঢাকা

৫৭৮৫. প্রশ্ন

বেশ কিছুদিন আগে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ হারিয়ে যায়। তখন অনেক খোঁজার পর না পেয়ে আমি মান্নত করি, যদি আমি ঐ কাগজগুলো পেয়ে যাই তাহলে আমাদের এলাকার এতীমখানায় ৫০০০/- সদকা করব। কিন্তু এর পরও আমি কাগজগুলো পাইনি। তাই নিজের থেকেই কৃত মান্নত অনুযায়ী ৫০০০/- টাকা ঐ এতীম খানায় সদকা করি এই মনে করে যে, যদি এর বদলে আমি ঐ কাগজগুলো পেয়ে যাই। আলহামদু লিল্লাহ, অল্প কিছুদিন হল কাগজগুলো পেয়েছি।

মুফতী সাহেবের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমি যে ৫০০০/- টাকা আগে সদকা করেছি এর দ্বারা আমার কৃত মান্নত আদায় হয়েছে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ঐ কাগজগুলো পাওয়ার আগেই ৫০০০/- টাকা সদকা করেছেন তাই তা দ্বারা আপনার কৃত মান্নত আদায় হয়নি। সুতরাং কাগজগুলো পাওয়ার পর আপনার উক্ত মান্নত পূরণের জন্য ৫০০০/- টাকা সদকা করতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৬/৩৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২১০

শেয়ার লিংক

শামসুল আলম - ঢাকা

৫৭৮৬. প্রশ্ন

আমরা একটি ইসলামিক মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছি। যেখানে বিভিন্ন বক্তাদের বয়ান, কিতাব, মালফূয পাওয়া যায়। এসব বক্তা, অনুবাদক বা লেখকের অনেকেই এখন দুনিয়াতে নেই। প্রকাশক যারা, তারা বা তাদের উত্তরসূরিরা বেঁচে আছেন। অ্যাপ তৈরি করতে আমরা যেসকল কাজ করে থাকি এবং যে ধরনের খরচ হয় তা হল-

১. কিতাব পিডিএফ করি। যাকে দিয়ে কাজ করানো হয় তাকে টাকা দিতে হয়।

২. কখনো কিতাব কম্পোজ করে প্রুফ দেখে তারপর অ্যাপে দেই। এখানে অনেক টাকা খরচ হয়।

৩. আমরা মূল কিতাবের পিডিএফ ফরমেট (ধরণ) বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে নিজেদের অ্যাপে যোগ করি।

৪. ঠিক একইভাবে বিভিন্ন বক্তার বয়ান নিজেরা রেকর্ড করে অ্যাপে দেই। (এখানেও বেশ মেহনত করতে হয়)

৫. আবার অনেক সময় অন্য ওয়েবসাইট থেকে বয়ান সংগ্রহ করেও নিজেদের অ্যাপে দিয়ে থাকি।

৬. সবচেয়ে বেশি যে খরচ অ্যাপ প্রস্তুত করতে। বেশ বড় অংকের টাকার প্রয়োজন হয় এবং এই খরচ চলমান। কেননা নতুন নতুন আপডেট আসার কারণে অনেক কিছু নতুন করে সংজোযন করতে হয়।

৭. এছাড়া অ্যাপ চালাতে মাসিক এবং বার্ষিক খরচ আছে। (হোস্টিং এবং ডোমেইন বাবদ)। এজাতীয় খরচ আমাদের নিজেদের বহন করতে হয় আর ২/৪ জন মুহিব্বীন থেকে সংগ্রহ করা যায়। ঢালাওভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব না। চাইলেও পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন হল-

১. উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে এই অ্যাপের মাধ্যমে কোনো প্রকার টাকা আয় করা ছাড়া বিভিন্ন লেখক, বক্তা বা প্রকাশকের কিতাব, বয়ান তাদের অনুমতি ছাড়া প্রচার করা জায়েয হবে কী?

২. ইসলামিক অ্যাপ হোক বা অন্য কোনো অ্যাপ- ছবি, ভিডিও, বাজনা ইত্যাদি সম্বলিত বিজ্ঞাপন দিয়ে যে টাকা আয় করা হয় তা কি হালাল হবে? যদি হালাল না হয় তাহলে কোন্ ধরনের বিজ্ঞাপন হালাল? এবং যদি হালাল না হয় তাহলে এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা কি জায়েয আছে? বা এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার দ্বারা গুনাহের সাহায্যকারী হিসাবে গণ্য হব কি না?

৩. ওয়েবসাইট, অ্যাপ দিয়ে লাখো লোক দ্বীনী ফায়দা পাচ্ছে। এই ওয়েবসাইট চালানোর জন্য যে খরচ তা কী, কী সুরতে সংগ্রহ করা সম্ভব?

উত্তর

১. যেসকল বইয়ের স্বত্ব লেখক/প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত কিংবা বইগুলো এখনো লেখক/প্রকাশক কর্তৃক ছাপা হচ্ছে সেগুলোর পিডিএফ তৈরি করে প্রচার করতে হলে লেখক/প্রকাশকের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। কেননা এমন কাজ করা হলে বইয়ের বিক্রির উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই লেখক/প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া দ্বীনী স্বার্থেও এজাতীয় বইপত্র পিডিএফ করে অ্যাপে দেওয়া বৈধ হবে না। তবে যেসকল বইয়ের স্বত্ব লেখক/প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত নয়, বরং ব্যাপকভাবে অনুমতি দেওয়া আছে বা বিশেষভাবে অনুমতি নেওয়া হয়েছে সেগুলোর পিডিএফ তৈরি করে নিজেদের অ্যাপে দেওয়া যাবে। অন্য ওয়েবসাইট থেকে নিতে চাইলেও তাদের অনুমতি নিতে হবে। তবে যেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপক অনুমতি আছে বলে বোঝা যায় সেগুলো অনুমতি না নিয়েও নিজেদের অ্যাপে প্রচার করা যাবে। কোনো বক্তার বয়ান নিজেরা রেকর্ড করে নিজেদের অ্যাপে দিতে পারবেন। তবে যদি কারো ব্যাপারে জানা থাকে যে, তিনি এমনটি করতে বা দেখাতে চান না। এক্ষেত্রে তার অনুমতি ছাড়া প্রচার করা যাবে না।

২. কোনো অ্যাপের মধ্যে নিষিদ্ধ ছবি-ভিডিও বা বাজনা সম্বলিত বিজ্ঞাপন দেওয়া বা এর ব্যবস্থা রাখা গুনাহের কাজ। আর নাজায়েয বা শরীয়ত বিরোধী বিজ্ঞাপন দ্বারা টাকা উপার্জন করা বৈধ নয়। তবে যদি বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং শরীয়তবিরোধী কোনো বিজ্ঞাপন না দেয়া হয় তাহলে এ থেকে যা আয় হবে তা নেওয়া জায়েয হবে।

৩. দ্বীনী ওয়েবসাইট ও অ্যাপের পরিচালনা সংক্রান্ত খরচের জন্য দান-সদকার টাকা নিতে চাইলে সাধারণ নফল দান নেওয়া যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে টাকা কী খাতে ব্যয় করা হবে তা দাতাকে জানিয়ে নিতে হবে। যাকাত, ফেতরা ও মান্নতের টাকা এক্ষেত্রে ব্যয় করা যাবে না।

শেয়ার লিংক

হাসান ফাহাদ - বরিশাল

৫৭৮৭. প্রশ্ন

১. আমি ঢাকা থেকে টি-শার্টের বিভিন্ন ডিজাইনের স্যাম্পল নিয়ে আসি। এরপর সেটা দোকানদারদের দেখাই। তারা স্যাম্পল দেখে অর্ডার দিলে আমি গার্মেন্টস থেকে সেগুলো বানিয়ে নিয়ে এসে তাদের সরবরাহ করি। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী স্যাম্পল দেখিয়ে এভাবে ব্যবসা কি বৈধ।

২. স্যাম্পল দেখিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে টি শার্ট তৈরি করে সরবরাহ করা যাবে কি?

উত্তর

হাঁ, স্যাম্পল দেখিয়ে অর্ডার অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে সরবরাহ করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে উভয়ের সম্মতিতে কিছু টাকা অগ্রিমও নিতে পারেন। এটা শরীয়তের استصناع তথা অর্ডারকৃত পণ্য তৈরি করার পর তা বিক্রি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। তবে এ ধরনের বেচা কেনার ক্ষেত্রে প্রদর্শিত নমুনা ও সরবরাহকৃত পণ্যের মাঝে যেন কোনো অমিল না হয় তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। অন্যথায় অমিল থাকলে অর্ডারদাতার জন্য অর্ডার বাতিল করার পূর্ণ এখতিয়ার থাকবে।

-কিতাবুল আছল ৩/৪৩৮; মাজমাউল আনহুর ৩/১৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৪০৬

শেয়ার লিংক

উবাইদুল কাদের - জামালপুর

৫৭৮৮. প্রশ্ন

আমি একটি মোবাইলের অ্যাপ বানিয়েছি। অ্যাপটিতে বিভিন্ন ইসলামিক কিতাব, বয়ানসহ কুরআন তিলাওয়াতের ব্যবস্থা আছে। অ্যাপটিতে আমি বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা রেখেছি। কেউ যদি আমার অ্যাপ ব্যবহার করে তাহলে ব্যবহার করা অবস্থায় বিভিন্ন বিজ্ঞাপন তার মোবাইলে ভেসে উঠবে। এই বিজ্ঞাপনের ধরন কয়েক রকমের :

১. মিউজিকসহ ভিডিও (যেখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ই আছে)।

২. মিউজিক ছাড়া ভিডিও (যেখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ই আছে)।

৩. মিউজিকসহ ভিডিও (যেখানে পণ্যের বা প্রাণীর ছবি আছে)।

৪. মিউজিক ছাড়া ভিডিও (যেখানে পণ্যের বা প্রাণীর ছবি আছে)।

৫. শুধু ছবি (যেখানে ছেলে-মেয়ে উভয়ই আছে)।

৬. শুধু ছবি (যেখানে পণ্যের ছবি আছে)।

আমার অ্যাপে কখন কোন্ বিজ্ঞাপনটি দেখাবে এতে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যেকোনো সময় যেকোনো বিজ্ঞাপন আসতে পারে। চাই অ্যাপের মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় হোক বা কোনো কিতাব পড়া অবস্থায় হোক। অথবা এমনও হতে পারে, অ্যাপ থেকে বের হয়ে আসার আগ মুহূর্তে আসতে পারে এবং একের অধিকবারও আসতে পারে। এখন আমার জানার বিষয় হল :

১. এভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা কামাই করলে ঐ কামাই আমার জন্য হালাল হবে কি না?

২. যদি বিজ্ঞাপন আমার নিয়ন্ত্রণে থাকেও যেমন : আমি যদি বলে দিই, এমন বিজ্ঞাপন দেয়া হোক, যেখানে প্রাণীর ছবি নাই এবং বাদ্যযন্ত্রের শব্দও নাই। সেক্ষেত্রে কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় এই বিজ্ঞাপন মাঝে মাঝে দেখানোর কারণে আমি গুনাহগার হব কি না?

উত্তর

১. দ্বীনী অ্যাপে উন্মুক্ত বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা রাখা অন্যায় হয়েছে। কেননা এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং যে কোনো সময় যে কোনো বিজ্ঞাপন আসতে পারে। যার মধ্যে মিউজিক ও বেপর্দা নারীর ছবিযুক্ত ও অবৈধ বিষয় সম্বলিত বিভিন্ন নাজায়েয বিজ্ঞাপনও থাকে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা ও তা দেখা তো এমনিতেই নাজায়েয ও গুনাহের কাজ। উপরন্তু কুরআনের অ্যাপে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা রাখা কুরআনের আদব পরিপন্থী ও অন্যায়। কেননা এ ধরনের বিজ্ঞাপন তিলাওয়াতকারীর সামনে কুরআনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা খুব জঘন্য কাজ। সুতরাং উক্ত অ্যাপটি অনলাইনে চালু রাখতে হলে অবশ্যই আপনাকে আপনার অ্যাপের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে হবে। আর আপনার অ্যাপে যেহেতু মিউজিক ও নারীর ছবিযুক্ত এবং নাজায়েয বিষয় সম্বলিত বিভিন্ন নাজায়েয বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয় তাই এ ধরনের বিজ্ঞাপনের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা জায়েয হবে না। তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

২. যদি বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে অর্থাৎ আপনি ব্যক্তিগতভাবে আপনার অ্যাপে মিউজিক ও নারীর ছবিমুক্ত এবং শরীয়ত পরিপন্থী অন্যান্য বিষয়মুক্ত শুধু বৈধ বিজ্ঞাপনই যুক্ত করে থাকেন সেক্ষেত্রেও কুরআনের অ্যাপে তা দেওয়া উচিত হবে না। কেননা বৈধ বিজ্ঞাপন হলেও কুরআন তিলাওয়াত অবস্থায় মাঝে মাঝে তা চলে আসা কুরআনের আদব ও সম্মান পরিপন্থী। তাই এ ধরনের বিজ্ঞাপন যুক্ত করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। আর একই অ্যাপে কুরআন মাজীদ ও অন্যান্য বিষয় রাখতে চাইলে সেক্ষেত্রে পুরো অ্যাপটিই বিজ্ঞাপনমুক্ত রাখা উচিত। তবে বয়ান ও ইসলামী কিতাবের মাঝে সীমিত আকারে এ ধরনের বৈধ বিজ্ঞাপন রাখতে পারবেন এবং এর বিনিময় নেওয়াও জায়েয হবে।

শেয়ার লিংক

শাহিনুর রহমান - খুলনা

৫৭৮৯. প্রশ্ন

এক ডেভলপার কোম্পানি বিল্ডিং তৈরির পূর্বেই এমনকি পাইলিংও করার আগেই কিস্তিতে ফ্ল্যাট বিক্রির এ্যাড দিয়েছে। তাতে বিল্ডিং এবং ফ্লাটের যাবতীয় বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। আমার বড় চাচা তাদের থেকে কিস্তিতে ফ্ল্যাট ক্রয় করতে চাচ্ছেন। কিন্তু এক আলেম তাকে বলেছেন, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা অবৈধ। কারণ হাদীসে অস্তিত্বহীন বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তাই তিনি জানতে চাচ্ছেন, এমতাবস্থায় তাদের থেকে কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনা যাবে কি না?

উত্তর

বিল্ডিং বা ফ্ল্যাট নির্মাণের আগে ডেভলপার থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের চুক্তিটি শরীয়তের (استصناع) ইস্তিসনা-এর আওতাভুক্ত। ইস্তিসনা-এর শর্তাদি পূরণ করলে তা জায়েয। এটি হাদীসে নিষিদ্ধ অস্তিত্বহীন বস্তুর বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না। তবে এই চুক্তি সহীহ তখনি হবে যখন তা যথাযথ শরয়ী নীতিমালা মেনে করা হবে। তাই ফ্ল্যাটের ব্যবসা করতে হলে অথবা এখনো নির্মিত হয়নি এমন ফ্ল্যাট কিনতে হলে কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে এসংক্রান্ত করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াদি জেনে নিয়ে তা করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৪৪; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দাহ, সংখ্যা ৭, ২/৫১৫

শেয়ার লিংক

কাজী মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম - বুসন্ধরা আবাসিক এলাকা

৫৭৯০. প্রশ্ন

ঢাকা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন কাওলা এলাকায় একটি মার্কেটে আমার দোকানের পজিশন আছে। বর্তমানে আমি তাতে ব্যবসা করছি। কিন্তু ব্যবসায় তেমন লাভ হচ্ছে না। বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংক ও জেনারেল ব্যাংক ভাড়া নেওয়ার জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করছে। আমি বিভিন্ন সময়ে সুদের বিরুদ্ধে আলেমদের বয়ান শুনেছি। তাই একজন মাওলানা সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সুদি ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া তাকওয়ার খেলাফ আর ইসলামী ব্যাংকের কাছে ভাড়া দিলে কোনো সমস্যা নেই। আমার ভাই আলেম। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ইসলামী ব্যাংকের কাছে ভাড়া না দিয়ে সাধারণ দোকান ভাড়া দিতে। এখন আমি বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। সাধারণ ব্যাংক অথবা ইসলামী ব্যাংকের কাছে ভাড়া দেওয়া যাবে কি? মুফতী সাহেবের কাছে শরীয়তের আলোকে সমাধান চাচ্ছি।

উত্তর

সুদী ব্যাংকের কাছে দোকান ভাড়া দেওয়া না জায়েয। কেননা, এর দ্বারা সুদী কারবারে সহযোগিতা করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ .

আর তোমরা নেকী ও তাকওয়ায় পরস্পর সহযোগিত কর।  গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরকে সহযোগিতা করো না। -সূরা মায়েদা (৫) : ২

দ্বিতীয়ত, সুদী ব্যাংকগুলোর আয়ের প্রধান উৎস সুদের টাকা। সুতরাং জেনেবুঝে এই হারাম টাকা গ্রহণ করা বৈধ হবে না। আর আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো শরীয়া ভিত্তিক বলে দাবি করলেও বাস্তব পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এদের বিনিয়োগ কার্যক্রমগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে শরয়ী নীতিমালা পালিত হয় না। যার দরুন তাদের ঐসমস্ত আয়ের টাকাগুলোও হালাল হয় না। তাই যতদিন পর্যন্ত এসব ব্যাংকে শারীয়াহ পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত না হবে ততদিন পর্যন্ত এসব ব্যাংকের কাছে দোকান ভাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকা নিরাপদ হবে।

-গামযু উয়ূনিল বাসাইর ১/৩৪৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ২/৪৫৩

শেয়ার লিংক

মাকবুল আহমাদ - ডেমরা, ঢাকা

৫৭৯১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় মাদরাসার জন্য একটি জায়গা মৌখিক ওয়াকফ করা হয়। তারপর এখানে জনগণের দানে একটি দোতলা ভবন করা হয়। দোতলার একটি অংশকে মসজিদ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়, যার নাম দেয়া হয় বাইতুল মাহমুদ। এখন ওয়াকফকারী তা বিক্রি করে অন্য জায়গায় মাদরাসা করতে চায় অথবা তা ভাড়া দিয়ে অর্জিত অর্থ দ্বীনের অন্য কোনো কাজে ব্যয় করতে চায় বা অন্য কোনো মাদরাসায় দান করতে চায়। অতএব, উক্ত বিষয়ে সঠিক সমাধানের নিবেদন করছি।

উত্তর

কোনো জমি মৌখিকভাবে ওয়াকফ করলেও তার ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওয়াকফকারী মৌখিকভাবে জায়গাটি উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়াকফ করার দ্বারাই তা তার মালিকানা থেকে বের হয়ে মাদরাসার মালিকানায় চলে গেছে। এটি ওয়াকফের জায়গা দেখেই মানুষ তাতে ভবন ওঠানোর জন্য দান করেছে, সে দানও ওয়াকফের অন্তর্ভুক্ত। তাই সেখানে ভবন ওঠার পর ওয়াকফটি আরো সুদৃঢ় হয়েছে। সুতরাং ওয়াকফদলীল না হলেও ওয়াকফকারীর জন্য ঐ জায়গাতে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ (বিক্রি করা, ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি) জায়েয হবে না; বরং জায়গাটি উক্ত মাদরাসার কাজেই ব্যবহার করতে হবে। ওয়াকফকারীর কর্তব্য, মাদরাসার নামে উক্ত জমির দলীল করে দেওয়া।

-বাদায়েউস সানায়ে ৬/২১৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৪১৯; মাজমাউল আনহুর ১/৭৩৩; আলজাওহারাতুন নাইয়িরাহ ১/৩৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ খায়রুল বাশার - ঝালকাঠি

৫৭৯২. প্রশ্ন

আমরা পথে-ঘাটে বিভিন্ন সময় টাকা বা কোনো বস্তু পড়ে থাকতে দেখি। কিন্তু ব্যস্ততার করণে কিংবা তা উঠিয়ে নিলে মালিকের সন্ধান করতে হবে, এলান করতে হবে ইত্যাদি ঝমেলার কারণে  উঠিয়ে নেই না। আবার এটাও মনে আসে যে, উঠিয়ে না নিলে পড়ে থেকে তা নষ্ট হবে বা অবিশ্বস্ত কারো হাতে চলে যাবে। এমন অবস্থায় আমার করণীয় কী? তা উঠিয়ে নেওয়া কি আমার দায়িত্ব?

উত্তর

পড়ে থাকা টাকা বা বস্তু নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি যদি মালিকের সন্ধান করতে পারবেন বলে নিজের উপর আস্থাশীল হন আর এক্ষেত্রে পড়ে থাকা বস্তুটি যদি এমন হয় যে, তা উঠিয়ে না নিলে নষ্ট হয়ে যাবে বা অবিশ^স্ত কারো হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তা উঠিয়ে নেওয়া আপনার উপর ওয়াজিব। কিন্তু যদি তা নিজে উঠিয়ে নিলে তসরুফ করার আশঙ্কা হয় তাহলে তা না ওঠানোই উচিত।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৬৬; আলইখতিয়ার ২/৪৮৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৮৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫০

শেয়ার লিংক

খালেদ - ডেমরা, ঢাকা

৫৭৯৩. প্রশ্ন

আমার চাচা এক ব্যক্তির কাছে তিন লক্ষ টাকা পান। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ঐ টাকা উসূল করে তা থেকে আমাকে এক লক্ষ টাকা মুদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করার জন্য দেবেন। কিন্তু ঐ টাকা ঋণগ্রহীতা থেকে উসূল করার আগেই আমার চাচা বিদেশ চলে যান। এখন তিনি আমাকে বলছেন, আমি যেন ঐ ব্যক্তি থেকে চাচার তিন লক্ষ টাকা উসূল করে তা থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে অর্ধেক লাভের শর্তে মুদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা শুরু করি। আমি জানতে চাচ্ছি, এভাবে মুদারাবার মূলধন সংগ্রহ করে তা দ্বারা মুদারাবা ব্যবসা করা বৈধ হবে  কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে টাকা উসূল করা স্বতন্ত্র একটি কাজ; মুদারাবার চুক্তির সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং আপনি উক্ত ঋণ উসূল করতে পারলে প্রশ্নোক্ত চুক্তি অনুযায়ী আপনার চাচার সাথে মুদারাবা ব্যবসা করা বৈধ হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/১৩০; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৩/৩৬৩

শেয়ার লিংক