মুহাররম ১৪৪৪ || আগস্ট ২০২২

শামসুল আলম - ঢাকা

৫৭৮৬. প্রশ্ন

আমরা একটি ইসলামিক মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছি। যেখানে বিভিন্ন বক্তাদের বয়ান, কিতাব, মালফূয পাওয়া যায়। এসব বক্তা, অনুবাদক বা লেখকের অনেকেই এখন দুনিয়াতে নেই। প্রকাশক যারা, তারা বা তাদের উত্তরসূরিরা বেঁচে আছেন। অ্যাপ তৈরি করতে আমরা যেসকল কাজ করে থাকি এবং যে ধরনের খরচ হয় তা হল-

১. কিতাব পিডিএফ করি। যাকে দিয়ে কাজ করানো হয় তাকে টাকা দিতে হয়।

২. কখনো কিতাব কম্পোজ করে প্রুফ দেখে তারপর অ্যাপে দেই। এখানে অনেক টাকা খরচ হয়।

৩. আমরা মূল কিতাবের পিডিএফ ফরমেট (ধরণ) বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে নিজেদের অ্যাপে যোগ করি।

৪. ঠিক একইভাবে বিভিন্ন বক্তার বয়ান নিজেরা রেকর্ড করে অ্যাপে দেই। (এখানেও বেশ মেহনত করতে হয়)

৫. আবার অনেক সময় অন্য ওয়েবসাইট থেকে বয়ান সংগ্রহ করেও নিজেদের অ্যাপে দিয়ে থাকি।

৬. সবচেয়ে বেশি যে খরচ অ্যাপ প্রস্তুত করতে। বেশ বড় অংকের টাকার প্রয়োজন হয় এবং এই খরচ চলমান। কেননা নতুন নতুন আপডেট আসার কারণে অনেক কিছু নতুন করে সংজোযন করতে হয়।

৭. এছাড়া অ্যাপ চালাতে মাসিক এবং বার্ষিক খরচ আছে। (হোস্টিং এবং ডোমেইন বাবদ)। এজাতীয় খরচ আমাদের নিজেদের বহন করতে হয় আর ২/৪ জন মুহিব্বীন থেকে সংগ্রহ করা যায়। ঢালাওভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব না। চাইলেও পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন হল-

১. উপরোল্লিখিত পদ্ধতিতে এই অ্যাপের মাধ্যমে কোনো প্রকার টাকা আয় করা ছাড়া বিভিন্ন লেখক, বক্তা বা প্রকাশকের কিতাব, বয়ান তাদের অনুমতি ছাড়া প্রচার করা জায়েয হবে কী?

২. ইসলামিক অ্যাপ হোক বা অন্য কোনো অ্যাপ- ছবি, ভিডিও, বাজনা ইত্যাদি সম্বলিত বিজ্ঞাপন দিয়ে যে টাকা আয় করা হয় তা কি হালাল হবে? যদি হালাল না হয় তাহলে কোন্ ধরনের বিজ্ঞাপন হালাল? এবং যদি হালাল না হয় তাহলে এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা কি জায়েয আছে? বা এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার দ্বারা গুনাহের সাহায্যকারী হিসাবে গণ্য হব কি না?

৩. ওয়েবসাইট, অ্যাপ দিয়ে লাখো লোক দ্বীনী ফায়দা পাচ্ছে। এই ওয়েবসাইট চালানোর জন্য যে খরচ তা কী, কী সুরতে সংগ্রহ করা সম্ভব?

উত্তর

১. যেসকল বইয়ের স্বত্ব লেখক/প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত কিংবা বইগুলো এখনো লেখক/প্রকাশক কর্তৃক ছাপা হচ্ছে সেগুলোর পিডিএফ তৈরি করে প্রচার করতে হলে লেখক/প্রকাশকের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। কেননা এমন কাজ করা হলে বইয়ের বিক্রির উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই লেখক/প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া দ্বীনী স্বার্থেও এজাতীয় বইপত্র পিডিএফ করে অ্যাপে দেওয়া বৈধ হবে না। তবে যেসকল বইয়ের স্বত্ব লেখক/প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত নয়, বরং ব্যাপকভাবে অনুমতি দেওয়া আছে বা বিশেষভাবে অনুমতি নেওয়া হয়েছে সেগুলোর পিডিএফ তৈরি করে নিজেদের অ্যাপে দেওয়া যাবে। অন্য ওয়েবসাইট থেকে নিতে চাইলেও তাদের অনুমতি নিতে হবে। তবে যেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপক অনুমতি আছে বলে বোঝা যায় সেগুলো অনুমতি না নিয়েও নিজেদের অ্যাপে প্রচার করা যাবে। কোনো বক্তার বয়ান নিজেরা রেকর্ড করে নিজেদের অ্যাপে দিতে পারবেন। তবে যদি কারো ব্যাপারে জানা থাকে যে, তিনি এমনটি করতে বা দেখাতে চান না। এক্ষেত্রে তার অনুমতি ছাড়া প্রচার করা যাবে না।

২. কোনো অ্যাপের মধ্যে নিষিদ্ধ ছবি-ভিডিও বা বাজনা সম্বলিত বিজ্ঞাপন দেওয়া বা এর ব্যবস্থা রাখা গুনাহের কাজ। আর নাজায়েয বা শরীয়ত বিরোধী বিজ্ঞাপন দ্বারা টাকা উপার্জন করা বৈধ নয়। তবে যদি বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং শরীয়তবিরোধী কোনো বিজ্ঞাপন না দেয়া হয় তাহলে এ থেকে যা আয় হবে তা নেওয়া জায়েয হবে।

৩. দ্বীনী ওয়েবসাইট ও অ্যাপের পরিচালনা সংক্রান্ত খরচের জন্য দান-সদকার টাকা নিতে চাইলে সাধারণ নফল দান নেওয়া যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে টাকা কী খাতে ব্যয় করা হবে তা দাতাকে জানিয়ে নিতে হবে। যাকাত, ফেতরা ও মান্নতের টাকা এক্ষেত্রে ব্যয় করা যাবে না।

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন