মুহাম্মাদ কলীমুল্লাহ খান - বরিশাল

১৪৩৯. প্রশ্ন

আমি চাকুরি করি চট্টগ্রামে। আমার দেশের বাড়ি বরিশালে। আমি নিজের অঞ্চলের পরিচয় দিতে সংকোচ বোধ করি বিধায় নিজেকে সিলেটবাসী হিসেবে পরিচয় দেই। প্রকাশ থাকে যে, সিলেটে আমার স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পত্তি নেই। তবে মাঝে মাঝে যাওয়া হয়। এখন প্রশ্ন এই যে, নিজ অঞ্চলের পরিচয় গোপন করে সিলেট অঞ্চলের পরিচয় দেওয়ায় শরীয়তে কোনো বাধা আছে কি না?

উত্তর

এতে শুধু নিজের অঞ্চলের পরিচয় গোপন করা হয় না; বরং মিথ্যা বলা হচ্ছে। আর তা যে গুনাহ তা আপনিও জানেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আহসান হাবীব - বরিশাল

১৪৪০. প্রশ্ন

আমি ঢাকার এক মাদরাসা থেকে পড়াশুনা শেষ করেছি। রমযানের আগেই ঢাকার একটি মাদরাসায় চাকুরি ঠিক হয়েছে। মাদরাসা থেকে আসবাবপত্র এনে ঢাকার বাসায় রেখেছি। রমযান শেষে মাদরাসায় নিয়ে যাব। আমার বাড়ি বরিশাল। জানতে চাই, মাদরাসা থেকে মালপত্র আনার দ্বারা কি আমার ওয়াতনে একামত বাতিল হয়ে গেছে? আমি যদি এখন ঢাকা থেকে বাইরে যাই সফরের দূরত্বে কিংবা তার চেয়ে কম। এরপর আবার ঢাকায় ১/২ দিনের জন্য আসি তখন আমি মুসাফির না মুকীম?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ঢাকা শহরে আপনি এখনও মুকীম। ঢাকা শহর আপনার ওয়াতনে ইকামত হিসাবে বহাল রয়েছে। মালপত্র মাদরাসা থেকে বাসায় স্থানান্তরের কারণে হুকুমের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সুতরাং ঢাকা থেকে বাইরে গিয়ে আবার অল্প সময়ের জন্য ঢাকায় আসলেও আপনি মুকীম গণ্য হবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৬; মাজমাউল আনহুর ১/২৪৩

শেয়ার লিংক

রকীব হাসান - পল্লবী, ঢাকা-১২১৬

১৪৪১. প্রশ্ন

আমি এক ঔষধ কোম্পানির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দোকানে ঔষধ সেল করি। একদিন এক জায়গায় ঔষধ দেওয়ার সময় ২,৫০০/- টাকার পরিবর্তে ভুলে ৩,০০০/- টাকা লিখে ফেলি। আর ঐ ৩,০০০/- টাকা কোম্পানিকে জমা করে দেই। পরে যখন বুঝতে পারি যে, ৫০০/-টাকা বেশি বিল করেছি তখন আমার উপরের কর্মকর্তাকে গিয়ে ঘটনাটি বলি, কিন্তু তিনি ৫০০/- টাকা দিতে অস্বীকার করেন।

জানতে চাই, ঐ ৫০০/- টাকা কি আমার পক্ষ থেকে দিতে হবে? শরয়ী বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

দোকানদারকে ঐ ৫০০/- টাকা ফেরত দেওয়া আপনার কর্তব্য। আর আপনি যেহেতু কোম্পানিতে ঐ টাকা জমা করেছেন তাই তা আপনি ফেরত পাবেন। কোম্পানী কর্তৃপক্ষের জন্য তা ফেরত দিতে গড়িমসি করা জায়েয নয়।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ তাজুল ইসলাম - বগুড়া

১৪৪২. প্রশ্ন

আমি এক বেসরকারী কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের ম্যানেজার। আমার এই বিভাগে কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। আমার পরিচিত কয়েকজন লোক আমাকে বলেছে যে, তাদের জন্য আমি যেন চাকুরির ব্যবস্থা করি। জানিয়ে বাধিত করবেন যে, আমি যদি তাদের সাথে এই শর্ত করি যে, চাকুরি হয়ে গেলে মাসিক বেতনের শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগ ১০ বছর যাবত আমাকে দিতে হবে তবে কি আমার জন্য তা জায়েয হবে?

উত্তর

না, এ ধরনের চুক্তি করা এবং এ টাকা নেওয়া আপনার জন্য বৈধ হবে না। এটা ঘুষ তথা উৎকোচের শামিল।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইয়াসির - কাকরাইল মাদরাসা ঢাকা

১৪৪৩. প্রশ্ন

একজন লোক আমাকে দুশ টাকা দিয়ে বলল, তোমার নানাকে কিছু কিনে খাওয়াবে। কিন্তু আমি তা করতে পারিনি। কারণ কিছুদিন পর নানাজান বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তিকাল করেছেন। এখন টাকাগুলো কী করব?

উত্তর

টাকাগুলো দাতাকে ফেরত দিতে হবে। -আলমাজাল্লা মাদ্দা নং ১৪৫৯, ১৪৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৮; শরহুল মুহাযযাব ১৪/২৯৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - বাবর রোড, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

১৪৪৪. প্রশ্ন

সৎ মায়ের বোন অর্থাৎ খালা এবং সৎ মায়ের ভাই মামার সাথে দেখা দেওয়া জায়েয কি না?

উত্তর

সৎ মায়ের বোন এবং ভাই মাহরাম নয়। সুতরাং তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাত জায়েয নয়।

-সূরা নিসা ৩৪; আহকামুল কুরআন জাসসাস ২/১৩৯ ; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৬৪; ইমদাদুল আহকাম ২/২৪৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - বাবর রোড, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

১৪৪৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একজন ভন্ডফকীর আছে যে বিবস্ত্র থাকে। জানতে চাই বিবস্ত্র ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া যাবে কি না?

উত্তর

বিবস্ত্র ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া জায়েয নয়। তার দিকে তাকানোও জায়েয নয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬১৭

শেয়ার লিংক

মুসাম্মাৎ হাবীবা মাসরুরা - মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা <br> গলগন্ডা, সদর, মোমেনশাহী

১৪৪৬. প্রশ্ন

একই সাথে যদি বালেগ পুরুষ-মহিলা ও নাবালেগ ছেলে-মেয়ের জানাযার নামায পড়া হয় তাহলে কোন দুআ পড়বে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

একাধিক লাশ একত্র হয়ে গেলে প্রত্যেকের জন্য পৃথকভাবে জানাযা পড়া ভালো। আর যদি একত্রে পড়া হয় এবং লাশ বালেগ ও নাবালেগ উভয় ধরনের হয়ে থাকে তাহলে উভয় দুআই পড়া উচিত। অবশ্য সময় স্বল্পতার দরুণ শুধু বড়দের দুআ পড়ে নিলেও চলবে। আর বালেগ নারী-পুরুষের লাশ একত্র হলে পুরুষদের দুআ পড়লেই সকলের জন্য তা কার্যকরী হবে। এক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দুআ পড়তে হবে না।

-আলমাবসূত সারাখসী ২/৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৬; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৭৫

শেয়ার লিংক

মুসাম্মাৎ হাবীবা মাসরুরা - মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা <br> গলগন্ডা, সদর, মোমেনশাহী

১৪৪৭. প্রশ্ন

চলন্ত জাহাজ, উড়ন্ত বিমান এবং চলন্ত বাস ও ট্রেনে নামায আদায় করার বিধান কী? বিস্তারিতভাবে জানাবেন।

উত্তর

চলন্ত জাহাজ, বিমান ও ট্রেনে দাঁড়িয়ে রুকু সিজদার সাথে নামায আদায় করা সম্ভব হলে কিবলার দিক ঠিক করে দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদাসহ দ্রুত ফরয নামায আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে নামাযের মধ্যে বাহন ঘুরে গেলে নামাযীও কিবলার দিকে ঘুরে যাবে। এভাবে নামায পড়তে পারলে পরবর্তীতে এ নামায আর কাযা পড়তে হবে না। কিন্তু এসকল অবস্থায় কারো দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা কষ্টসাধ্য হলে সে বসে বা যেভাবে সম্ভব সেভাবেই নামায আদায় করে নিবে এবং পরবর্তীতে এ নামায কাযা করে নিবে।

আর বাসে যেহেতু দাঁড়িয়ে যথাযথভাবে নামায আদায় করা যায় না তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাস থেকে নেমে নামায আদায় করতে হবে। যেমন-ঢাকার ভিতরেই মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি, সাভার থেকে ঢাকা ইত্যাদি যাতায়াতের সময় গন্তব্যস্থলে পৌঁছে নামাযের সময় থাকবে না মনে হলে স্বাভাবিক অবস্থায় পথিমধ্যে নেমে নামায আদায় করে নিতে হবে। কিন্তু দূরদূরান্তের সফর যেখানে পথিমধ্যে বাস ছেড়ে নামাযের জন্য নেমে গেলে অসুবিধায় পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে এবং বাস তার জন্য অপেক্ষা করতেও প্রস্ত্তত নয় সেক্ষেত্রে এ ক্ষেত্রে সম্ভব হলে দুদিকের সিটের মাঝে কেবলামুখী হয়ে রুকু সেজদাসহ পূর্ণাঙ্গরূপেই নামায আদায় করতে হবে। অবশ্য এতে যদি দাঁড়ানো থেকে পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে কিছুতে হেলান দিয়ে বা হাতে ধরেও অবস্থান করা যাবে এবং প্রয়োজনে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাঁধা বা রুকু অবস্থায় হাটুতে হাত রাখা না গেলেও অসুবিধা নেই। আর যদি কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পূর্ণরূপে রুকু সেজদা করা না যায়, যেমন গাড়ী দক্ষিণমুখী বা উত্তরমুখী হয় তাহলেও কেবলামুখী দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে এবং যথারীতি রুকু করে সিজদার সময় পেছনের সিটে বসে সামনের সিটে সিজদা করবে। এক্ষেত্রে সামনের সিটে সিজদার সুযোগ না থাকলে বসে ইশারায় সিজদা করবে। আর যদি পেছনের সিটে বসার সুযোগ না থাকে তাহলে শুরু থেকেই পুরো নামায নিজের সিটে কেবলামুখী বসে ইশারায় রুকু সিজদা করে আদায় করবে। এ ছাড়া কেবলামুখী হওয়া বা দাঁড়ানো যদি সম্ভব না হয় তাহলে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই আদায় করে নিবে।

উল্লেখ্য, যে অবস্থায় দাঁড়ানো বা কেবলামুখী হওয়া সম্ভব হয় না সে অবস্থার নামায পুনরায় কাযা করে নিতে হবে এবং পরবর্তীতে এ নামায কাযা করে নিবে।

উল্লেখ্য  যে, বাসের মালিক/চালকগণ যেন নামাযের সময়গুলোতে কোনো মসজিদে অন্তত ফরয পড়ার জন্য নিয়মিত বিরতি দেয় সে ব্যাপারে যাত্রীদের সচেতন হওয়া আবশ্যক।

-মাআরিফুস সুনান ৩/৩৯৪-৯৬;আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৮৮

শেয়ার লিংক

মুসাম্মাৎ হাবীবা মাসরুরা - মিফতাহুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা <br> গলগন্ডা, সদর, মোমেনশাহী

১৪৪৮. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির (যায়েদ) ছয় ছেলে। তাদের প্রথম দুই ছেলে ইন্তেকাল করেছেন। তাদের সন্তানাদিও রয়েছে। উক্ত ব্যক্তি তার ছয় ছেলের মাঝে জীবদ্দশায় সমস্ত সম্পত্তি বন্টন করে দিয়েছেন। তবে বাড়ির কিছু জমি রয়েছে, যা এখনও বন্টন করা হয়নি। এমতাবস্থায় উক্ত ব্যক্তি অর্থাৎ দাদা মারা গিয়েছে। কিন্তু মৃত ছেলের যে সম্পত্তি নাতীদের নিকট রয়েছে তা হতে দাদা (যায়েদ) তার প্রাপ্য অংশ নেয়নি। এখন উক্ত নাতীর চাচা যারা রয়েছেন তারা তাদের পিতা অর্থাৎ যায়েদের যে অংশটুকু নাতীদের নিকট বা চাচাদের ভাতিজাদের নিকট রয়েছে তাদের থেকে নিতে চাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল, পিতা দাদার আগে মারা গেলে নাতীরা দাদার অংশ পাবে কি না? আর চাচাদের জন্য ভাতিজাদের থেকে তাদের পিতা যায়েদের সম্পত্তি চাওয়াটা কতটুকু শরীয়তসম্মত?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মৃত ছেলের অংশ থেকে পিতা ষষ্ঠাংশের হকদার। যদি পিতার জীবদ্দশায় তার এ প্রাপ্য নাতীদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন, তিনি আর নিবেন না এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে দাদার এ অংশ ওয়ারিশসূত্রে কেউ দাবি করতে পারবে না। কিন্তু যদি এমন কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায় তাহলে জীবদ্দশায় তা বুঝে না নিলেও এ পরিমাণ অংশের মালিক তিনি ছিলেন বলে ধর্তব্য হবে। এবং এ পরিমাণ সম্পদের উপর মিরাসও জারি হবে। সুতরাং এ ষষ্ঠাংশ যদি এখনও নাতীদের কাছেই থাকে তবে মৃতের ওয়ারিছদের জন্য মৃতের নাতীদের কাছ থেকে ঐ ষষ্ঠাংশ দাবি করা শরীয়তসম্মত। ঐ সম্পত্তি চাচাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া নাতীদের কর্তব্য।

আর দাদার মৃত্যুর সময় যেহেতু তার চার ছেলে জীবিত ছিল তাই দাদার মৃত্যুর পূর্বে যে দুই ছেলে মারা গেছে তাদের সন্তানাদি দাদার রেখে যাওয়া সম্পত্তির হকদার হবে না।

-সূরা নিসা ১২; সহীহ বুখারী ২/৯৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৪৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/২১২; সহীহ বুখারী ২/৯৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩০৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/২৩৮; তাকমিলাতুল বাহর ৮/৪৯৮; আদদুররুল মুখতার ৬/৭৭৪

শেয়ার লিংক

হাবীবা বিনতে আবদুস সামাদ - ৯৭/৮ পাটগুদাম, ব্রীজ মোড় , ময়মনসিংহ

১৪৪৯. প্রশ্ন

আমি যাকাতের জিনিসগুলো বর্তমান বাজারদর হিসেবে হিসাব করে পুরোটাকে ৪০ ভাগ করি। ৪০ ভাগের ১ ভাগ মূল্য যাকাত দেই। আমার যাকাতের হিসাবটি কি ঠিক হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, ঐ হিসাবে যাকাত দেওয়া ঠিক হয়েছে। যাকাতযোগ্য সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্য হিসাব করাটাও সহীহ হয়েছে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১১০; আলমাবসূত সারাখসী ২/১৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৯/১০৯

শেয়ার লিংক

হাবীবা বিনতে আবদুস সামাদ - ৯৭/৮ পাটগুদাম, ব্রীজ মোড়, ময়মনসিংহ

১৪৫০. প্রশ্ন

যাকাতের জিনিস নিজের কাছে থাকা অবস্থায় সময়ের পূর্বেই যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে কি?

উত্তর

হাঁ, যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে বছর পূর্ণ হওয়ার আগেও যাকাত আদায় করে দেওয়া জায়েয।

-ফাতহুল কাদীর ২/১৫৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৯৩

শেয়ার লিংক

মাওলানা হাবীবুর রহমান - বংশাল

১৪৫১. প্রশ্ন

কোনো ইমাম যদি নামাযান্তে সম্মিলিতভাবে সুর দিয়ে দরুদ পড়তে গিয়ে আল্লাহুম্মা এর জায়গায় টান দিয়ে বলে তাহলে আলিফে তাছনিয়া (দ্বিবচন) হয়ে দুই আল্লাহ (নাউযুবিল্লাহ) অর্থ হয়ে যায় কি না? আল্লাহুম্মা-এর তাহকীক জানাবেন।

উত্তর

আল্লাহুম্মা শব্দের শেষে যে, তাশদীদযুক্ত মীম রয়েছে তা সম্বোধনসূচক শব্দ। সুতরাং আল্লাহুম্মা এর অর্থ হে আল্লাহ। আল্লাহুম্মা এর শেষে টেনে পড়া ভুল। তবে শেষে টেনে পড়লেও সেটি তাছনিয়া (দ্বিবচন) হয়ে যায় না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, প্রচলিত পদ্ধতির মিলাদ শরীয়তসম্মত নয়। নামাযের পরপর সমস্বরে দরূদ পড়লে মাসবুক এবং অন্যান্য মুসল্লীদের নামাযে অসুবিধা হওয়াই স্বাভাবিক। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল হা্ই - ফেনী

১৪৫২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, শীতকালে গাছিরা খেজুর গাছ ভাড়া নেয়। পুরো শীতে খেজুরের রস বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা থেকে তারা মালিকদের ভাড়া পরিশোধ করে। প্রশ্ন হল, এ কারবারটি শরীয়তের দৃষ্টিতে সহীহ আছে কি না?

উত্তর

এভাবে গাছের ভাড়া দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। আপনাদের এলাকার ঐ কারবারটি শরীয়তসম্মত নয়।

উল্লেখ্য যে, কারবারটি বৈধ উপায়ে করতে চাইলে এভাবে করতে হবে যে, রসের জন্য গাছ কাটা, প্রত্যহ রস লাগানো নামানো ইত্যাদি শ্রমের কারণে গাছিকে একটা পারিশ্রমিক দিতে হবে। আর রস যা হবে সবই গাছের মালিকের। গাছি তা নিতে চাইলে মালিক থেকে কিনে নিবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৩১৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৫৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহমুদ আশরাফ - খুলনা

১৪৫৩. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি খুব বৃদ্ধ হয়ে গেছে। রোযা রাখার শক্তি নেই বলে রোযা রাখতে পারে না, ফিদইয়া আদায় করে। তিনি প্রতি বছর সদকায়ে ফিতর আদায় করেন। এ বছর এক ব্যক্তি বললেন, যেহেতু রোযা রাখতে পারে না তাই সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে না। এখানে কি ঐ ব্যক্তির কথা সঠিক? নাকি সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

রোযা রাখতে না পারলে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে না’’ এ কথা ঠিক নয়। রোযা রাখতে না পারলেও নেসাব পরিমাণ মাল থাকলে সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হবে। অতএব উক্ত ব্যক্তি নেসাবের মালিক হয়ে থাকলে তাকে সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯২; আদ্দুররুল মুলতাকা ১/২৩৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইলিয়াছ - ঢাকা

১৪৫৪. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি কোনো ওজর ছাড়া ইচ্ছা করে রমযানের একটি রোযা ভেঙ্গে ফেলে। এরপর সে উক্ত রোযার কাফফারা হিসাবে ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়ায়। অথচ তার ষাট দিন রোযা রাখার সামর্থ্যও আছে। এমতাবস্থায় কি তার কাফফারা আদায় হবে?

উত্তর

রমযানের রোযার কাফফারার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ষাট দিন রোযা রাখার শক্তি থাকা অবস্থায় এর পরিবর্তে ষাট জন মিসকীনকে খানা খাওয়ালে কাফফারা আদায় হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কাফফারা আদায় হয়নি। তাকে ধারাবাহিক ষাট দিন রোযা রেখে কাফফারা আদায় করতে হবে। অবশ্য মিসকীনদের খানা খাওয়ানোও যেহেতু একটি ছওয়াবের কাজ তাই তিনি সে ছওয়াব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

-সহীহ মুসলিম ১/৩৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৫; মারাকিল ফালাহ ৩৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ লোকমান - কুমিল্লা

১৪৫৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় মৃত ব্যক্তিকে বড়ই পাতার পানি দিয়ে গোসল দেওয়ার নিয়ম আছে। এটা কি জরুরি? যদি বড়ই পাতা না পাওয়া যায় তাহলে কোন ধরনের পানি দিয়ে গোসল দিতে হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

মৃত ব্যক্তিকে বড়ই পাতা মিশ্রিত সিদ্ধ পানি দিয়ে গোসল দেওয়ার বিয়য়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মৃতের গোসলের পানিতে বড়ই পাতা দেওয়া মুস্তাহাব, জরুরি নয়। বড়ই পাতা পাওয়া না গেলে সাধারণ পানি দিয়েই গোসল দিবে। অবশ্য ময়লা কেটে যাওয়ার জন্য সাবান বা এ জাতীয় অন্য কিছু ব্যবহার করা ভালো।

-সহীহ মুসলিম ১/৩০৪; শরহে মুসলিম নববী ১/৩০৪;  উমদাতুল কারী ৮/৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০৮; ফাতহুল কাদীর ২/১১১; শরহুল মুনিয়্যাহ ৫৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শাহাদাত হুসাইন - ফেনী

১৪৫৬. প্রশ্ন

ক) ইহরাম অবস্থায় টুথপেস্ট, ক্রিম ও এধরনের সুগন্ধিযুক্ত কোনো কিছু ব্যববহার করার হুকুম কী?

খ) কেউ যদি ইহরাম অবস্থায় পুরো মুখে সুগন্ধি ক্রিম লাগায় এতে তার উপর কোনো কিছু ওয়াজিব হবে কি না

উত্তর

ক) ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি জাতীয় কোনো কিছু ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তাই এ সময়ে সুগন্ধিযুক্ত টুথপেস্ট, ক্রিম, সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

খ) ইহরাম অবস্থায় পুরো মুখে সুগন্ধি ক্রিম লাগালে দম ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ একটি ছাগল অথবা এ ধরনের কোনো প্রাণী কোরবানী দিতে হবে।

-সহীহ মুসলিম ১/৩৭৩; গুনয়াতুন নাসেক ৮৯, ২৪২; ফাতহুল কাদীর ২/৪৩৮;  আলবাহরুর রায়েক ২/৫৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আমানুল্লাহ - ঢাকা

১৪৫৭. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় নিয়ম আছে যে, স্বামী-স্ত্রীর পক্ষ থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করে দেয়। স্ত্রী নিজে তার ফিতরা আদায় করে না। এতে কি স্ত্রীর সদকায়ে ফিতর আদায় হবে? অথচ তার আর্থিক অবস্থা এমন যে, তার উপর ছদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়।

উত্তর

হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রীর ফিতরা আদায় করে দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য ফিতরা আদায়ের পূর্বে স্ত্রীকে বলে নেওয়া ভালো।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪২৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মামুন - ঢাকা

১৪৫৮. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের একটি হাত এক্সিডেন্টে ভেঙ্গে গেছে। তিনি ঐ প্লাস্টার করা হাতের উপর মাসেহ করে নামায পড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় তার পিছনে আমাদের নামায সহীহ হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ইমাম সাহেবের পিছনে আপনাদের নামায সহীহ হয়েছে। কারণ এ ধরনের ওজরের সময় মাসেহ করার অনুমতি আছে এবং এতে অজুরও কোন ক্ষতি হয় না।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৫৫; আননাহরুল ফায়েক ১/২৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৮৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মামুন -

১৪৫৯. প্রশ্ন

কুরআন শরীফে সূরা সোয়াদের ২৪ নং আয়াতের শেষে আনাব শব্দটির পাশে ছোট অক্ষরে সিজদা লেখা আছে। রমযানে অনেক হাফেযকে দেখা যায় যে, তারা ২৪ নং আয়াতের শেষে আনাব পড়ে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করেন। আবার অনেক হাফেয ২৫ নং আয়াতের শেষে মাআব পড়ে সিজদা করেন। এখন জানার বিষয় হল, কোনটি ঠিক? যদি ২৫ নং আয়াতের শেষেই সেজদা করতে হয় তাহলে যারা ২৪ নং আয়াতের শেষে সিজদা করেছে তাদের নামাযের কোনোররূপ ক্ষতি হয়েছে কি না?

উত্তর

সূরা সোয়াদ-এর ২৫ নং আয়াতের মাআব শব্দটি পড়ে সিজদা করাই উত্তম। তবে ২৪ নং আয়াত শেষ করে তিলাওয়াতে সিজদা দিলেও সিজদার হক আদায় হয়ে যাবে। সুতরাং উক্ত যেকোনো আয়াতের পর সিজদা আদায় করুক না কেন নামায ও সিজদা উভয়টি আদায় হয়ে যাবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫২; মারকীল ফালাহ পৃ. ২৬২; তাহতাবী আলাল মারাকী ২৬২; রদ্দুল মুহতার ২/১০৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফারুক - ঢাকা

১৪৬০. প্রশ্ন

আমি দুটি গরু কুরবানী করে থাকি। এবছর কুরবানীর জন্য একটি গাভি ক্রয় করেছি। এখন চাচ্ছি যে, ওই গাভিটি কুরবানী না করে তার পরিবর্তে অপর একটি গাভি কুরবানী করব এবং গাভিটি দুধের জন্য রেখে দিব।

এখন আমার প্রশ্ন হল, একাজটি জায়েয হবে কি? নাকি পূর্বের গাভিটিই কুরবানী করতে হবে? উল্লেখ্য, আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য এ গাভিটিই কুরবানী করা উত্তম। অবশ্য এটি রেখে দিয়ে পরিবর্তে অন্য গাভিও কুরবানী করা জায়েয। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, পরের গরুটিও যেন এ গাভির মতো বা তার চেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয় এবং দামেও যেন তার বরাবর বা  বেশি হয়। আর যদি দ্বিতীয়টির মূল্য প্রথমটার থেকে কম হয় তাহলে অতিরিক্ত টাকা সদকা করে  দেওয়া ভালো।

-মাবসূত সারাখসী ১১/১৩; তাকমিলাতুল বাহর ৮/১৭৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৯

শেয়ার লিংক

খালেদ আহমদ - চাঁদপুর

১৪৬১. প্রশ্ন

আমি একটি কাপড় পরে কয়েকদিন ধরে নামায পড়ছি। একদিন নামাযের দুই ঘন্টা পরে দেখি যে, কাপড়ের একাংশে দুই বর্গ ইঞ্চি পরিমাণ রক্ত লেগে আছে। এ রক্ত কখন লেগেছে তা আমার জানা নেই। নামাযের সময় এ রক্ত ছিল কি না তাও জানা নেই। এখনকি এই কাপড় পরে যত নামায পড়েছি তার কাযা পড়তে হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন যে, রক্ত কখন লেগেছে তা জানা নেই, আদায়কৃত কোন নামাযের সময় রক্ত ছিল বলে যদি প্রবল ধারণাও না হয় তাহলে যখন থেকে দেখতে পেয়েছেন তখন থেকেই এর হুকুম প্রযোজ্য হবে। সুতরাং আগের আদায়কৃত কোন নামায দোহরাতে হবে না। কিন্তু বিগত কোন নামায অবস্থায় কাপড়ে এ রক্ত লাগার প্রবল ধারণা হলে সেই ওয়াক্ত ও তার পরবর্তী ওয়াক্তের নামাসমূহ দোহরিয়ে নিতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২১৮; মাবসূত সারাখসী ১/৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০; রদ্দুল মুহতার ১/২২০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফারুক - মানিক নগর, ঢাকা

১৪৬২. প্রশ্ন

আমি একটি ক্লিনিকে চাকুরি করি। আমাদের ক্লিনিকে প্রায় সময় দেখা যায় যে, অনেক মহিলার বাচ্চা হওয়ার পর ঐ বাচ্চা মারা যায়। আবার অনেক মহিলা মৃত বাচ্চা প্রসব করে এবং মাঝে মধ্যে দেখা যায় যে, কোনো মহিলা অসম্পূর্ণ বাচ্চা প্রসব করে্ এখন আমার জানার বিষয় এই যে, এসব ক্ষেত্রে বাচ্চার নাম রাখা না রাখা এবং কাফন, দাফন, জানাযা ও গোসলের ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের কী হুকুম? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

জীবিত বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মারা গেলে সাধারণ মৃতের মতোই তার গোসল ও কাফন দিতে হবে এবং জানাযার নামায পড়ে দাফন করতে হবে। এ ধরনের বাচ্চার (বয়স সাত দিনের কম হলেও) নাম রাখার কথা হাদীস শরীফে বলা হয়েছে। আর যদি বাচ্চা মৃত ভূমিষ্ঠ হয় তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে না। তবে তাকে গোসল দিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে দাফন করে দিবে।

অবশ্য এধরনের বাচ্চাকে চাইলে তিন কাপড়েও কাফন দিতে পারবে। আর এ শিশুরও একটি নাম রেখে দিবে। একই পন্থা অবলম্বন করবে ঐসব অসম্পূর্ণভাবে জন্ম নেয়া মৃত শিশুদের ক্ষেত্রে, যাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টি  হয়েছে। আর যদি নষ্ট হয়ে যাওয়া গর্ভের কোন অঙ্গ না হয়ে থাকে; বরং শুধু গোশতের টুকরা বের হয় তাহলে তা একটি কাপড়ে পেঁচিয়ে কোথাও দাফন করে দিবে। এক্ষেত্রে যেমন জানাযা নেই, তেমনিভাবে গোসল, নামরাখা কোন কিছুরই বিধান নেই।

-জামে তিরমিযী ১/২০০; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৩/৫৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫৯; জামিউ আহকামিস সিগার ১/৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২০৪, ২২,২২৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শোয়াইব - ঢাকা

১৪৬৩. প্রশ্ন

আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। আমার উপর কোনো বছর যাকাত ফরয হয় আবার কোনো বছর ফরয হয় না। কিন্তু আমি প্রতি বছর কুরবানী করি। সেদিন আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, যে বছর আপনার উপর যাকাত ফরয হয় না সে বছর আপনার কুরবানী করা লাগবে না। এখানে আমার প্রশ্ন হল, ইমাম সাহেবের কথা ঠিক কি না? আর বাস্তবে কতটুকু সম্পদ থাকলে কুরবানী ওয়াজিব হয়? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

ইমাম সাহেবের ঐ কথা ঠিক নয়। কারণ যাকাত ও কুরবানী দুটো পৃথক পৃথক ইবাদত এবং উভয়ের ওয়াজিব হওয়ার কারণও ভিন্ন। একটি ফরয না হয়ে থাকলে অপরটিও হয় না এমন ধারণা ঠিক নয়; বরং যার কাছে কুরবানীর দিনগুলোতে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।উল্লেখ্য, কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা, সোনা-রুপার অলংকার ও ব্যবসায়িক পণ্যের সাথে সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র এমনকি ব্যবহার্য আসবাবপত্রও প্রয়োজন অতিরিক্ত হলে তা ধর্তব্য হবে। অথচ যাকাতের ক্ষেত্রে এগুলো হিসাবযোগ্য নয়।

-বাদায়েউস সানায়ে (কায়রো) ৬/২৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফয়সাল - ঢাকা

১৪৬৪. প্রশ্ন

কুরবানীর পশু জবাই করার পর তার পেটে জীবিত বাচ্চা পাওয়া গেলে তা কী করতে হবে? এমনিভাবে পশু ক্রয় করার পর কুরবানীর আগে বাচ্চা হলে বাচ্চার কী হুকুম? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

কুরবানীর পশু জবাই করার পর তার পেটে জীবিত বাচ্চা পাওয়া গেলে তাকেও যবেহ করে দিবে এবং মায়ের মতো তার গোশতও খেতে পারবে। আবার সদকাও করতে পারবে।  আর কুরবানীর পশু খরিদ করার পর জবাইয়ের আগে তার বাচ্চা হলে সে বাচ্চা সদকা করে দেওয়া জরুরি। অবশ্য যবেহ না করে জীবিত সদকা করা ভালো।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২; খানিয়া ৩/৩৪৯; হিন্দিয়া ৫/৩০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ লোকমান - ফেনী

১৪৬৫. প্রশ্ন

আমি আমার বন্ধুর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এ বিষয়ে বাজি ধরি যে, অমুক কাজটি হলে আমি তোমাকে ১০০ টাকা দেব। আর না হলে আমাকে ১০০ টাকা দিতে হবে। পরে ঘটনাক্রমে কাজটি হয়ে যায়। এখন সে আমার কাছে ১০০ টাকা চাচ্ছে এবং বলছে, তুমি ওয়াদা করেছ। আর ওয়াদা পূর্ণ করা জরুরি। সুতরাং তুমি আমাকে ১০০ টাকা দিয়ে দাও। প্রশ্ন  হল, ওয়াদা মতো কি তাকে উক্ত টাকা দেওয়া জরুরি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ থেকে টাকা দেওয়ার শর্তে যে বাজি ধরা হয়েছে তা জায়েয হয়নি। কারণ বাজিতে উভয় পক্ষ থেকে দেওয়ার শর্ত করা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের বাজি ধরা নাজায়েয। যেহেতু এভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া নাজায়েয তাই কৃত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করাও নাজায়েয। এ বাবদ আপনার টাকা দেওয়া এবং আপনার কাছ থেকে তার টাকা নেওয়া কোনটাই জায়েয নয়।

-আহকামুল কুরআন কুরতুবী ৩/৫২; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২/১১৩; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ২/২৩০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪০৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ গোলাম মুস্তাফা - রংপুর

১৪৬৬. প্রশ্ন

মাসবুক ব্যক্তি নিজের ছুটে যাওয়া নামাযের জন্য কখন দাঁড়াবে? আমাদের মসজিদে অনেককে দেখা যায় যে, তারা ইমামের প্রথম সালামের সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়। আবার অনেকে দ্বিতীয় সালামের শুরুতে দাঁড়ায়। আর কিছু লোক দ্বিতীয় সালামের পরে দাঁড়ায়। এই তিন পদ্ধতির মধ্যে কোনটি উত্তম? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মাসবুক ব্যক্তি নিজের ছুটে যাওয়া নামাযের জন্য ইমামের উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর দাঁড়াবে। এটিই উত্তম। অবশ্য প্রথম সালামের সময় কেউ দাঁড়িয়ে গেলে তার নামাযও আদায় হবে যাবে।

-মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১/১৪১; তাতারখানিয়া ২/১৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৬৮; ফাতহুল কাদীর (মাকতাবায়ে যাকারিয়া) ১/৪০০; আল বাহরুর রায়েক ১/৬৬২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলী আহমেদ - ফেনী

১৪৬৭. প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন রোযা অবস্থায় আমার মুখে মশা বা অন্য কোনো পোকা প্রবেশ করে গলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আমি অনেক কাশাকাশি করেও তা বের করতে পারিনি। বর্তমানে আমি খুবই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত। উক্ত ঘটনার কারণে আমার রোযার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

রোযা অবস্থায় মশা-মাছি অনিচ্ছাকৃত গলার ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। তাই আপনার ঐ দিনের রোযা সহীহ হয়েছে। মশা ভিতরে চলে যাওয়ার কারণে রোযার ক্ষতি হয়নি।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৬১৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৬৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫

শেয়ার লিংক

আলী আহমদ - কুমিল্লা

১৪৬৮. প্রশ্ন

আমরা যে মসজিদে নামায পড়ি তার দোতলায় একটি হেফয খানা আছে। হেফয খানার ছাত্ররা নামাযের পর সুন্নত পড়ে দোতলায় গিয়ে কোরআন শরীফ পড়া শুরু করে। একদিন আমি মাগরিবের নামাযের পর আউয়াবীন পড়া অবস্থায় হেফয খানার এক ছাত্র দোতলায় জোরে আয়াতে সিজদা তেলাওয়াত করে যা আমি নামাযে শুনতে পাই। উক্ত আয়াতে সিজদা শ্রবণ  করার কারণে আমার উপর সিজদা ওয়াজিব হয়েছে কি না? ওয়াজিব হলে কখন আদায় করতে হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

নামাযরত অবস্থায় বাইরের কারো থেকে আয়াতে সিজদা শুনলে নামাযের পর ঐ সিজদা আদায় করে নেওয়া জরুরি। নামাযের মধ্যে ঐ সিজদা আদায় করা যাবে না। কেউ করলেও তা আদায় হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায শেষে ঐ সিজদা আদায় করে নিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২১৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৭৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৬; শরহুল মুনিয়্যা ৫০০; আদ্দুররুল মুখতার মাকতাবা যাকারিয়া ২/৫৮৮

শেয়ার লিংক