‘নিয়ম হল, যিনি কবরে শুয়ে আছেন আল্লাহর কাছে তার জন্য দুআ করা; কিন্তু এখন সরাসরি কবরওয়ালার কাছেই দুআ ও প্রার্থনা করা হচ্ছে’
বায়তুল মোকাররমের মিম্বর থেকে
[২০ সফর ১৪৪৭ হি.=১৫ আগস্ট ২০২৫ ঈ.]
গত জুমায় সূরা আনআমের ১৫১-১৫৩ নম্বর আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা হয়েছিল। আয়াতগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদেরকে দশটি বিশেষ বিধান দান করেছেন। অর্থাৎ দশটি বিষয়কে আল্লাহ তাআলা হারাম ঘোষণা করেছেন এবং সেগুলোকে আল্লাহ তাআলা ‘ওসিয়ত’ অর্থাৎ ‘বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ বিধান’ নাম দিয়েছেন। যে দশটি বিষয় আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হারাম বিষয় হল শিরক। এই আয়াতে বলা হয়েছে–
اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا.
আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না।
দ্বিতীয় বিধান–
وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا.
মা-বাবার অবাধ্য হবে না। কারণ এটা হারাম। বরং তাঁদের সাথে ভালো ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ করবে।
তৃতীয় বিধান–
وَلَا تَقْتُلُوْۤا اَوْلَادَكُمْ مِّنْ اِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَاِیَّاهُمْ...
(দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা নিজ সন্তানদেরকে হত্যা কর না, আমি তোমাদেরকেও রিযিক দেই এবং তাদেরকেও।)
অর্থাৎ অভাব-অনটনের কারণে অথবা দারিদ্র্যের ভয়ে নিজের সন্তানদের হত্যা করবে না। রিযিক তো আল্লাহ্ই দান করেন। তোমাদেরও আল্লাহ রিযিক দেন, তাদেরও আল্লাহ রিযিক দেন। কাজেই অভাবের কারণে অথবা দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তানদের হত্যা করবে না।
চতুর্থ বিধান
কোনো ধরনের অশ্লীল কাজের কাছেও যাবে না।
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ.
(তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন কোনো প্রকার অশ্লীল কাজের কাছেও যেয়ো না)
অর্থাৎ প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে দূরে থাকবে। বরং অশ্লীলতার কাছেও যাবে না। কারণ সকল অশ্লীলতাকে আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন।
পঞ্চম বিধান
আল্লাহ মানুষকে তার প্রাণের নিরাপত্তা দিয়েছেন, তুমি তা ক্ষুণ্ন করবে না। হাঁ, সে নিজেই যদি নিজের নিরাপত্তা নষ্ট করে দেয়; কোনো অবৈধ কাজ করে, সেখানে আল্লাহর যে বিধান সেই বিধানই প্রয়োগ হবে এবং আইনানুগভাবেই প্রয়োগ হবে।
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ.
(আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা ও নিরাপত্তা দান করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া সেই প্রাণকে তোমরা হত্যা কর না।)
প্রত্যেক মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা আল্লাহ তাআলা দান করেছেন। কাজেই যতক্ষণ সে এই মর্যাদা ধরে রাখবে, ততক্ষণ সে নিরাপত্তা পাবে। তাকে তুমি হত্যা করতে পার না। কিন্তু (اِلَّا بِالْحَقِّ) আল্লাহর দেওয়া নিরাপত্তা যদি সে নিজেই নষ্ট ও ক্ষুণ্ন করে ফেলে এবং তার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ওপর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করার বিধান এসে যায়, সেটা ভিন্ন কথা। তখন শরীয়তের বিধান অনুযায়ীই তার ওপর দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে।
অন্যান্য আয়াত ও হাদীসে বলা আছে, কী কী কারণে মানুষের জীবনের ওপর আল্লাহর দেওয়া নিরাপত্তা ভঙ্গ হয়ে যায়। যদি এমন হয় যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার জানের যে নিরাপত্তা দান করেছেন, বান্দা নিজেই আল্লাহর দেওয়া সেই নিরাপত্তা নষ্ট করে দিয়েছে, তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে শাস্তির যে বিধান– তা-ই প্রয়োগ হবে। এ বিষয়টিকেই ব্যক্ত করা হয়েছে এ ভাষায়–
اِلَّا بِالْحَقِّ
(তবে কোনো কারণে)
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেছেন–
ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ.
এগুলো তোমাদের জন্য ‘ওসিয়ত’ ও বিশেষ বিধান, যদি তোমরা বুঝতে।
ষষ্ঠ বিধান
এতীমের সম্পদ নষ্ট করো না। আল্লাহ তাআলা বলেন–
وَ لَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّهٗ.
[এতীম পরিপক্ব বয়সে না পৌঁছা পর্যন্ত তার সম্পদের কাছেও যেয়ো না, তবে এমন পন্থায় (যাবে, তার পক্ষে) যা উত্তম হয়।]
অর্থাৎ এতীমের সম্পদ তোমার হাতে আমানত। এটা যত্ন করে রাখবে এবং তার কাজে তার জন্য খরচ করবে। কোনো অপচয় ও অপব্যয় যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখবে। আর অন্য কেউ এখান থেকে নিয়ে যাবে, খেয়ে ফেলবে বা খরচ করে ফেলবে– সেটি একেবারেই হারাম। এতীমের মালে হাত দেওয়া মানেই স্পষ্ট আগুন ভক্ষণ করা। এতীমের এক পয়সা সম্পদ নিজের পেটে যাওয়া মানে পেটে আগুন গেল। সেটা হয়তো এখন নাও বুঝে আসতে পারে, কিন্তু কবরে গেলে ঠিকই বুঝে আসবে।
কুরআন কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন–
اِنَّ الَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْیَتٰمٰی ظُلْمًا اِنَّمَا یَاْكُلُوْنَ فِیْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَسَیَصْلَوْنَ سَعِیْرًا.
নিশ্চয়ই যারা এতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভরতি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। –সূরা নিসা (৪) : ১০
এতীমের মাল খাচ্ছ মানে পেটে তুমি আগুন ঢুকাচ্ছ! কাজেই এতীমের সম্পদ যার কাছে রয়েছে, সেটি তার হাতে আমানত। সে আমানতের হেফাযত করবে, অন্যরা তার সহযোগিতা করবে। কোনো ধরনের ছুতা-বাহানা ধরে এতীমের কোনো সম্পদ বা সম্পদের অংশবিশেষও যাতে নষ্ট ও আত্মসাৎ না হয়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে হাঁ–
اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّهٗ.
অর্থাৎ তার সম্পদ কীভাবে আরেকটু বাড়ানো যায়, সেই ফিকির করা যেতে পারে।
সারকথা, এটা তোমার হাতে আমানত, আমানতের হেফাযত তোমার ওপর ফরয। যখন তার বয়স ও বুঝ হবে, নিজের অর্থ-সম্পদ নিজে হেফাযত করতে পারবে, তখন তার হাতে তার সম্পদ সোপর্দ করবে। এর আগ পর্যন্ত এতীমের অভিভাবকের হাতে এটি আমানত।
সপ্তম বিধান
وَ اَوْفُوا الْكَیْلَ وَ الْمِیْزَانَ بِالْقِسْطِ.
(এবং পরিমাপ ও ওজন ন্যায়ানুগভাবে পরিপূর্ণ করবে।)
মাপে কম দেওয়া হারাম। এবার দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মেপে দেই বা ডিজিটাল কোনো মাপযন্ত্র দিয়ে মেপে দেই অথবা অন্য কোনো পাত্র দিয়ে মেপে দেই– সর্বাবস্থায় যথাযথ হক ও পাওনা আদায় করতে হবে। কোনো কম করা যাবে না। পাত্র দিয়ে মাপার ক্ষেত্রে যেন এমন না হয় যে পাত্রটা পরিপূর্ণ ভর্তি হয়নি, বরং একটু ঘাটতি থেকে গিয়েছে। এটা হারাম। আধুনিক যুগে মাপ ও পরিমাপের যত ব্যবস্থাপনা, আপনি যেটা দিয়েই যখন যা মাপবেন, নির্ধারিত পরিমাণ থেকে একটুও কম দেওয়া যাবে না।
অনেকে পরিমাপে যা দেখা যায়, তাই দেয়। অথচ আগে থেকে মূল যন্ত্র ও মিটারের মধ্যেই গড়বড় করে রাখে। যেমন গাড়িতে তেল নেওয়ার সময় মেপে দেওয়া হয়, এত লিটার এত টাকা, সবই মিটারে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সেখানে যদি এমন কারবার করা থাকে যে, তিন লিটার দেখাচ্ছে, অথচ বাস্তবে তিন লিটারের চেয়ে কম আছে। মাপে ঠিকভাবে দেখাচ্ছে, অথচ ঠিকভাবে দিচ্ছে না, তাহলে কি জায়েয হবে? কখনো না। বরং এটা স্পষ্ট হারাম। একে তো মাপে কম দেওয়া হল, দ্বিতীয়ত প্রতারণা করা হল।
এক শ কেজির বস্তা, বস্তা ভর্তি করতেই কিছু কম দিয়ে রেখেছে। অনেক সময় সরকারিভাবে চাল বিক্রি হয়। এক শ কেজির বস্তা থেকে মেপে মেপে দেওয়া হচ্ছে। যে মেপে দিচ্ছে, সে যদি যথাযথ মেপে থাকে, পরে দেখা যায়, তাকে এক-দু কেজি জরিমানা গুনতে হয়। এমন ঘটনাও ঘটে। গোড়াতে পাপ করেছে হয়তো এক-দুজন বা একটি চক্র। যতজন এই পাপের সঙ্গে জড়িত, এদের কী হাশর হবে আল্লাহর কাছে? এরা মাপে কম দেওয়ার মতো ভয়ংকর একটি কবীরা গুনাহের সাথে জড়িত হয়ে গেল।
মোটকথা, যে যুগে যে এলাকায় যে দাঁড়িপাল্লা ও মাপযন্ত্র রয়েছে, সেটি নিখুঁত ও যথাযথ হতে হবে। দাঁড়িপাল্লা ও মাপযন্ত্র পরিচালনাকারীকেও যথাযথভাবে মেপে দিতে হবে। যন্ত্রের মধ্যে গরমিল রেখে ওপরে ওপরে আপনি ঠিকঠাক এবং একেবারে কাঁটায় কাঁটায় দিচ্ছেন, অথচ এখানে এক কেজির কম হওয়া সত্ত্বেও এক কেজি দেখাচ্ছে, তাহলে আপনি ভয়াবহ কবীরা গুনাহে জড়িয়ে গেলেন। আল্লাহ বলেছেন–
وَاَوْفُوا الْكَیْلَ وَالْمِیْزَانَ بِالْقِسْطِ.
(এবং পরিমাপ ও ওজন ন্যায়ানুগভাবে পরিপূর্ণ করবে।)
ইনসাফের সাথে যথাযথভাবে মাপ দাও! মাপে কম দেওয়া কবীরা গুনাহ, যা আল্লাহর গোস্বা ও ক্রোধকে তরান্বিত করে।
তবে হাঁ, সবদিক থেকে সতর্ক থাকা সত্ত্বেও এবং যথাযথভাবে মাপার পরও নিজের ইচ্ছার বাইরে একটু সামান্য বেশকম হয়ে গেলে সেটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করে দেবেন। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন–
لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا.
অর্থাৎ সাধ্যের বাইরে তিনি কাউকে চাপিয়ে দেন না। সাধ্যের বাইরে কমবেশি হওয়া তো এতই সূক্ষ্ম যে, সেখানে মানুষের আসলে কিছুই করার থাকে না। সেজন্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমাকে সেটার চিন্তা করতে হবে না। ক্যালকুলেটর দিয়ে ভাগ করতে থাকলে শেষে গিয়ে কিছু ভগ্নাংশ থাকে। এমন ভগ্নাংশ, যা কোনোভাবেই হিসাবে আনা যায় না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, সেটার জন্য তোমাকে জবাবদিহি করা হবে না। কিন্তু যতটুকু তোমার সাধ্যের আওতায় আছে, তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এখানে কোনো ধরনের কোনো অবহেলা চলবে না, চলতে পারে না। ‘সামান্য পরিমাণও না!’– এই ধরনের কথা আপনি নিজের হকের ব্যাপারে বলতে পারেন যে, আচ্ছা, একটু বেশি গেলে কী আর সমস্যা? আমি একটু বেশি দিয়ে দিই! কিন্তু আরেকজনের ব্যাপারে এটা বলতে পারেন না যে, একটু কম হলে সমস্যা কী? আপনি যদি বিক্রেতা হন, তাহলে বলতে পারেন– আচ্ছা, একটু বেশি গেলে সমস্যা কী, থাক! কিন্তু এটা বলতে পারেন না যে, একটু কম হলে অসুবিধা কী? নাউযু বিল্লাহ!
তদ্রূপ ক্রেতাও বলতে পারে, আচ্ছা, দুই টাকা বেশি থাক না, অসুবিধা কী? আমি খুশি হয়ে দিলাম। কিন্তু দরদাম ঠিক হওয়ার পর একথা বলতে পারে না যে, এক টাকায় কী আসে যায়, দুই টাকায় কী আসে যায়, কম রাখেন না দুই টাকা! এই যে ‘কম রাখেন না’– এটা যদি জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এটা হারাম। হাঁ, আপনি আবদার করতে পারেন। দরদাম করা নাজায়েয নয়, বৈধ। তবে দরদামেরও একটা সীমা আছে। অসুন্দর পদ্ধতিতে সময় ক্ষেপণ করা, পেরেশান করা, এভাবে দরদাম করা ঠিক নয়। হাঁ, দরদামের সাধারণ যে রেওয়াজ ও নিয়ম আছে; শরীয়ত একে নাজায়েয বলেনি। কিন্তু দরদাম করতে করতে আপনি দোকানদারকে বিরক্ত করে ফেলবেন, বিরক্ত হয়ে, একরকমের বাধ্য হয়ে সে বলে দিল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে!’– এমন করা উচিত নয়। যেমন দোকানদারের জন্যও খেয়াল রাখা জরুরি, সে যেন আকাশচুম্বী দাম চেয়ে না বসে।
অষ্টম বিধান
وَ اِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَ لَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰی.
(যখনই কিছু বলবে ইনসাফের সাথে বলবে; যদিও তোমার নিকটাত্মীয়ের বিষয়ে হয়।)
অর্থাৎ অন্যায় কথা বলবে না। অন্যায় কথা বলা হারাম। আল্লাহ তাআলা অন্যায় বলা হারাম করেছেন। কাজেই যা বলবে, সঠিক বলবে এবং ইনসাফের সাথে বলবে।
এমনকি তোমার একেবারে নিকটাত্মীয়ের ব্যাপারে বলছ, নিজের কোনো স্বজনের ব্যাপারে বলছ, তখনো যা বলবে, সত্যটাই বলবে। ন্যায় ও ইনসাফের কথা বলবে। নিজের ব্যক্তি হওয়ার কারণে, আত্মীয়-স্বজন হওয়ার কারণে না-ইনসাফি করলে হারাম হবে।
নবম বিধান
وَ بِعَهْدِ اللهِ اَوْفُوْا.
(আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবে।)
অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে যত ওয়াদা ও অঙ্গীকার করেছ, সেগুলো পূর্ণ কর। আল্লাহর অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হারাম।
ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.
এসব বিশেষ নির্দেশ আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি; যদি তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
দশম বিধান
তোমরা সিরাতে মুস্তাকীমের অনুসরণ কর। আল্লাহ তাআলা বলেন–
وَ اَنَّ هٰذَا صِرَاطِیْ مُسْتَقِیْمًا فَاتَّبِعُوْهُ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِیْلِهٖ ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ.
[(হে নবী! তাদেরকে) আরও বল, এটা আমার সরল-সঠিক পথ। সুতরাং এর অনুসরণ কর, অন্য কোনো পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।]
অর্থাৎ এই প্রসঙ্গে শেষকথা এবং এককথা– এই দ্বীন ও শরীয়ত তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। এটা সিরাতে মুস্তাকীম। ইসলাম এবং ইসলামী শরীয়ত হল সিরাতে মুস্তাকীম। এই সিরাতে মুস্তাকীমের তোমরা অনুসরণ কর।
وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ.
অর্থাৎ সিরাতে ম্স্তুাকীম ছেড়ে এদিকে সেদিকে বিভিন্ন রাস্তায় যাওয়ার চেষ্টা কর না। সিরাতে মুস্তাকীম আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত রাস্তা, মুক্তি ও সফলতার রাস্তা। কাজেই ইসলাম ও ইসলামী শরীয়তের পথে চল। আখেরী নবী খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সুন্নত তোমাদের জন্য নির্ভুল ও উত্তম আদর্শ। তাঁর সীরাত ও সুন্নতকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে মুসলিম হিসেবে নিজের জীবনযাপন কর। আল্লাহর দেওয়া শরীয়ত, আল্লাহর দেওয়া হালাল-হারামের যে সীমারেখা, বিধিবিধানের সীমারেখা, সেটা যথাযথ মেনে চল। এটা আল্লাহর শেষ ওসিয়ত এবং এমন এক ওসিয়ত, যার মধ্যে সকল বিধিবিধান চলে আসে।
وَ اَنَّ هٰذَا صِرَاطِیْ مُسْتَقِیْمًا فَاتَّبِعُوْهُ وَ لَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِیْلِهٖ.
অর্থাৎ এই দ্বীন ও শরীয়ত এবং নবীর সুন্নত ও সীরাত হল সিরাতে মুস্তাকীম। তোমরা এর অনুসরণ কর। এই সিরাতে মুস্তাকীম (কুরআন-হাদীসের রাস্তা, নবীজীর সুন্নত ও সীরাতের রাস্তা, ইসলামী শরীয়তের রাস্তা) ছেড়ে তোমরা অন্য কোনো পথে যাবে না। শয়তান–ইবলীস আর জাহান্নামের পথের তো অভাব নেই। কিন্তু সিরাতে মুস্তাকীম ছেড়ে অন্য কোনো পথে যাবে না। অন্য পথে হাঁটলে সিরাতে মুস্তাকীমের ওপর থাকতে পারবে না। হেদায়েতের পথ থেকে সরে পড়বে। ছিটকে পড়বে। কাজেই আল্লাহর দেওয়া সিরাতে মুস্তাকীমের বিপরীতে কোনো রাস্তায় যাবে না। বরং তাঁর দেওয়া সিরাতে মুস্তাকীমেরই তুমি অনুরসণ কর। যে সিরাতে মুস্তাকীমের কথা আমরা প্রতি নামাযে বলতে থাকি–
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ.
আমাদের সরল ও সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন–
ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ.
এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি ওসিয়ত ও বিশেষ বিধান, যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দেওয়া সকল বিধান পালন করার তাওফীক দান করুন। দশ বিধানের শেষ নম্বরের মধ্যে তো পুরো শরীয়তই এসে গিয়েছে। আল্লাহর সিরাতে মুস্তাকীম-এর অনুসরণ কর, এই এক কথার মধ্যেই সব কথা।
প্রসঙ্গ : শিরক
সূরা আনআমের এই ১৫১, ১৫২ ও ১৫৩ নম্বর আয়াত আমরা নিজেরা বাসায় গিয়ে পড়ব। তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন, তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন থেকে পড়ে নিতে পারি!
তিন আয়াতে দশ নির্দেশের প্রথম কথাই হল কোনো ধরনের শিরক করবে না। সব ধরনের শিরক থেকে বেঁচে থাকবে।
শিরক মহাপাপ। জঘন্য ও ভয়াবহ অপরাধ। হাদীসে শিরককে বলা হয়েছে–
أكبر الكبائر
সকল কবীরা গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ।
শিরকের একটি দিক
কাকে বলা হয় শিরক, শিরকের একটা দিক হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলোর কোনোটি কোনো মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করা। কারণ আল্লাহর কোনো বৈশিষ্ট্য মাখলুকের জন্য সাব্যস্ত করা যায় না। এমনিভাবে যা একমাত্র আল্লাহর হক, তা কোনো মাখলুককে দেওয়া যায় না। হায়াত-মউতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। রিযিকদাতা একমাত্র আল্লাহ! উপকার-ক্ষতি, কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক একমাত্র আল্লাহ। সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেমন একমাত্র খালেক, তেমনি তিনিই একমাত্র রব ও প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাবুদ মানা যেমন শিরক, আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব মানাও শিরক। কিছু মানুষের অভ্যাস বিভিন্ন মাযারে যাওয়ার। হাঁ, কবর যিয়ারত করার বিধান শরীয়তে রয়েছে, কিন্তু শিরকী কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না। মাযার শব্দের অর্থও হল, যে জায়গার যিয়ারত করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কিছু কবরকে মানুষ মাযার নাম দেয়। কেন? যে কোনো মুমিন-মুসলমানের কবর যিয়ারতের বৈধতা ইসলামী শরীয়ত দিয়েছে, কিন্তু যিয়ারত করতে হবে শরীয়ত ও সুন্নত তরিকায়।
ইসলামের শুরুর দিকে যখন মানুষ নতুন নতুন শিরক থেকে বের হয়ে মাত্র তাওহীদের পথে আসা শুরু করেছিল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ কবর যিয়ারতের আড়ালে কেউ শিরকে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। তারপর একসময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
إِنِّي كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا؛ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْآخِرَةَ.
আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পারো। কারণ তা আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩০০৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৮০৬
কবর যিয়ারত করলে আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। হায়, এরা কবরে শুয়ে আছে; এমন একদিন আসবে, যেদিন আমাকেও ওই কবরে থাকতে হবে! কাজেই কবরের যিন্দেগীর জন্য আমাকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আখেরাতের কথা যেন স্মরণ হয়, পরকালের প্রস্তুতির মানসিকতা যেন জাগ্রত হয়, সেজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন।
কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের অবস্থা আবার পরিবর্তন হয়ে গেল। সেই কবরকে বানানো হল মাযার। কবর পাকা করে আরও কতভাবে কবরের মধ্যে নতুন নতুন বেদআত আবিষ্কার করা হচ্ছে! অবস্থা ও পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেক জায়গায় আল্লাহর মসজিদের চেয়েও মাযারের গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে। বলুন, নাউযুবিল্লাহ! সম্মান এত বেশি যে, সেখানে জুতা পায়ে প্রবেশ করা যায় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সুবিধার জন্য জুতা দূরে রাখা হল– সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু জুতা ছাড়া মাযারে ঢুকতে হয় এজন্য যে, জুতাসহ মাযারে প্রবেশ করলে মাযারের সম্মান নষ্ট হবে!
অনেক মাযারের ব্যাপারে এমনও শুনি যে, মাযার থেকে ফেরার সময় উল্টো হাঁটতে হবে, মাযারের দিকে পিঠ দিয়ে আসা যাবে না! এত এত সম্মান করতে হয় মাযারকে! বলুন নাউযুবিল্লাহ!
এগুলো তো মাযার সংক্রান্ত ছোটখাটো নাজায়েয কাজ। মাযারে সবচেয়ে ভয়ংকর যে কাজ হয় সেটি হল, অনেকেই মাযারে গিয়ে সিজদা করে। কবরের তাওয়াফ করে, নাউযুবিল্লাহ! তাওয়াফ হল ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহর হক। আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করা হয়। এটি একমাত্র আল্লাহর ইবাদত। কোনো কবর বা মাযারে তাওয়াফ করার সুযোগ নেই। কোনো মসজিদের তাওয়াফও কি জায়েয আছে? না। কোনো মাদরাসারও তাওয়াফ নেই, কোনো অফিস-আদালতেরও তাওয়াফ নেই। কোনো কবরেরও তাওয়াফ নেই। কোনো দরবারেরও তাওয়াফ নেই। তাওয়াফ হবে একমাত্র বাইতুল্লাহ শরীফের এবং তা আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর ইবাদত হিসেবে। কিন্তু এখন হচ্ছে কবরের তাওয়াফ। দরবারের তাওয়াফ। বলুন, নাউযুবিল্লাহ! এরপর হাত উঠিয়ে দুআ করা হচ্ছে। আমরা দেখে মনে করব, আল্লাহর কাছে দুআ করছে, ঘটনা কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বরং অনেকেই মাযারে গিয়ে হাত তোলে যিনি কবরে শুয়ে আছে, তার কাছে চায়। বাবার কাছে চায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতের পদ্ধতি শিখিয়েছেন–
يغفر الله لنا ولكم.
يرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين، نسأل الله لنا ولكم العافية.
السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، يَرْحَمُ اللهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ.
বিধান হল, যিনি কবরে শুয়ে আছেন আল্লাহর কাছে তার জন্য দুআ করা; কিন্তু এখন সরাসরি কবরওয়ালার কাছেই দুআ ও প্রার্থনা করা হচ্ছে, নাউযুবিল্লাহ! ১
আর যদি মাযারই ভুয়া হয়, তাহলে তো সেখানে কেউ শোয়াও নেই। অনেক ভুয়া মাযারও আছে, যা রাতারাতি তৈরি হয়ে গেছে, কিন্তু বাস্তবে সেখানে কেউ শোয়া নেই। এমন অনেক মাযার আছে, যেখানে কোনো পীরের নাম লেখা থাকে, কিন্তু ইতিহাস বলে, তিনি এখানে নয়, বরং তার ইন্তেকাল হয়েছে অন্য কোথাও এবং সেখানেই তার কবর।
মসজিদের হেফাযত জরুরি, মাযারের হেফাযত জরুরি নয়– তবে মাযার ভাঙাও জনগণের কাজ নয়
খুব লক্ষ করে শুনুন! মাযার ইসলামী সংস্কৃতি ও ইসলামী সভ্যতার অংশ নয়! বরং এটা হল বিদআতপন্থি ও শিরকপন্থিদের আবিষ্কার। তার মানে একথা নয় যে, আমি বলেছি মাযার ভাঙতে! আমার নামে গিয়ে বলবেন যে, হুজুর মাযার ভাঙতে বলেছেন! একথা কিন্তু বলিনি আমি। মাযার বানানো হারাম, কিন্তু মাযার হয়ে গেলে সেখানে কী করতে হবে, এটা কি ভাঙবে, না অন্য কিছু করবে– সেটা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এই বিষয়ে সঠিক মাসআলা জেনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সাধারণ মানুষের জন্য আইন হাতে নেওয়া ঠিক নয়। কেউ নিজে গিয়ে কোনো মাযারে আগুন লাগিয়ে দেবে অথবা মাযার ভেঙে ফেলবে, একথা আমি বলিনি! খবরদার, এমন কাজ করবেন না!
হাঁ, মাযারের স্থাপনা শরীয়তসম্মত কোনো স্থাপনা নয়। যারা করেছে নাজায়েয কাজ করেছে। এখন এখানে করণীয় কী, তার জন্য আপনাকে আলেমদের কাছে গিয়ে মাসআলা জানতে হবে। তারপর যথাযথ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। এটা অবৈধ স্থাপনা। শরীয়তের দৃষ্টিতে এই স্থাপনার কোনো ভিত্তি নেই। তার মানে এই নয়, যে কেউ গিয়ে সেখানে হামলা বা ভাঙচুর চালাবে অথবা মাযারে যারা বসে আছে, তাদের ওপর হামলা করে দেবে! না, এটা সঠিক নয়! বরং প্রত্যেক জিনিসের নিয়ম আছে। প্রত্যেক বিষয়ে শরীয়তের হেদায়েত ও বিধান আছে। সেভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ কি জানতে আসে? রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ও শাসকদের দায়িত্বে পড়ে, আলেমদের কাছে জানতে আসা। এক্ষেত্রে কী বিধান, জানতে আসতে হবে আলেমদের কাছে!
এই যে বায়তুল মোকারমের পাশেই। এরশাদ সাহেবের আমলে যখন রাস্তা প্রশস্ত করার প্রয়োজন হল, কী করল? মসজিদকে উঠিয়ে পার্কের মধ্যে নিয়ে গেল। অথচ রাস্তা প্রশস্ত করা একটি কাজ, কিন্তু কীভাবে করতে হবে? সেখানে একটা মসজিদ আর একটা মাযার ছিল। মসজিদ উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে পার্কে। এটা জায়েয হয়েছে, নাকি নাজায়েয হয়েছে– এখন আমি কিছুই বললাম না! আমি দেখাতে চাচ্ছি, মসজিদ উঠিয়ে নিয়ে গেছে পার্কে, কিন্তু মাযার ঠিকই তার জায়গা মতো রেখে দিয়েছে। মাযার এখনো রাস্তার ওপরেই আছে। তাহলে মসজিদ কেন সরালে? মাযার কেন সরালে না? অথচ যদি একটু জ্ঞান থাকত, তাহলে বুঝত যে, কবর সরিয়ে ফেলার বিষয় নয়। বরং রাস্তার প্রয়োজন হলে রাস্তা করে ফেলা উচিত। ব্যস! কবরের জায়গায় কবর থাকল, তার ওপর রাস্তা হয়ে গেল। অর্থাৎ কবর যদি ওয়াক্ফিয়া জায়গায় না হয় এবং কবর অনেক পুরোনো হয়ে যায়, তখন কবরকে আর কবরের রূপে রাখা জরুরি নয়। বরং কবরের ওপরে রাস্তা হলে এতে কোনো পাপ ও গুনাহ কিছুই হবে না। এমনকি কবরের অসম্মানও হবে না। কিন্তু হাঁ, ওয়াক্ফিয়া কবরস্থান হলে তার হেফাযত জরুরি। আর যদি ওয়াকফিয়া কবর না হয়ে কারও ব্যক্তিগত জায়গায় কবর হয়, এবং এই মুহূর্তে জায়গাওয়ালার ঘর করার প্রয়োজন, আর কবরটাও পুরোনো, তাহলে এই কবরকে আর আগের মতো রাখার প্রয়োজন নেই বরং কবরটি সমান করে দেওয়া যেতে পারে। তারপর আপনার ব্যক্তিগত জায়গায় আপনি ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করতে পারেন! এতে কোনো গুনাহ ও পাপ কিছুই হবে না। এতে ভয়েরও কোনো কারণ নেই।
তো যে প্রয়োজনে কবরের ওপর দিয়ে রাস্তা যেতে পারে, (প্রয়োজন কেমন সেটা আলেমদের কাছে গিয়ে জানতে হবে, আন্দাজে আপনার মন চাইলেই কবরস্থানের ওপর দিয়ে রাস্তা নিয়ে যেতে পারবেন না। কিছুদিন আগেও মাসআলা জানতে চাওয়া হয়েছিল, মসজিদ ভেঙে মসজিদের জায়গার ওপর দিয়ে রাস্তা করা হবে। বলা হয়েছে, আমরা পাশে মসজিদ করে দেব। আরে, মসজিদ ভাঙার তাহলে প্রয়োজন কী? আপনি পাশ দিয়ে একটু ঘুরিয়েই রাস্তা করুন! একটা মুসলমান কীভাবে চিন্তা করে যে, মসজিদের ওপর দিয়ে রাস্তা নেবে?! নকশা করার সময় হুঁশ থাকে না কেন? কিন্তু এখন সান্ত্বনা দিয়ে দিচ্ছে যে, অন্য জায়গায় মসজিদ বানিয়ে দেবে! তোমাকে আরেক জায়গায় মসজিদ বানিয়ে দিতে বলেছে কে? যখন এখানে মসজিদের দরকার ছিল তখন কোথায় ছিলে?
যাইহোক, মসজিদের হেফাযত জরুরি, কিন্তু মাযারের হেফাযত জরুরি নয়। তবে মাযার ভাঙ্গাও জনগণের কাজ নয়। কিন্তু মাযার এমন জিনিস নয় যে, হেফাযত করতে হবে। মাযার বানানোই একটি হারাম কাজ।
আল্লাহ হায়াতে রাখলে সামনে শিরক সম্পর্কে আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে, ইনশাআল্লাহ।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
[শ্রুতলিখন : মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম]
টীকা
এ বিষয়ে পড়ুন, মাসিক আলকাউসার, মুহাররম ১৪২৭ হি.=ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সংখ্যা, শিরোনাম : ‘প্রার্থনা মাযারওয়ালার কাছে নয়, আল্লাহ্র কাছে করুন এবং মাযারওয়ালার জন্য করুন’।