‘ক্ষমতায় গেলে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করব না– কেবল একথা নয়, বরং বলুন– কুরআন-সুন্নাহর বিধান মেনে চলব এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করব’
বায়তুল মোকাররমের মিম্বর থেকে
[১৩ সফর ১৪৪৭ হি./ ৮-৮-২০২৫ ঈ.]
হামদ ও সালাতের পর...
কুরআন কারীমের ছয় নম্বর সূরা সূরাতুল আনআম। এই সূরা থেকে কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ তাআলা নবীজীকে নির্দেশ দিয়ে বলেন–
قُلْ تَعَالَوْا اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَیْكُمْ اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَلَا تَقْتُلُوْۤا اَوْلَادَكُمْ مِّنْ اِمْلَاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَاِیَّاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِیْ حَرَّمَ اللهُ اِلَّا بِالْحَقِّ ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ. وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْیَتِیْمِ اِلَّا بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ حَتّٰی یَبْلُغَ اَشُدَّهٗ وَاَوْفُوا الْكَیْلَ وَالْمِیْزَانَ بِالْقِسْطِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا وَاِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوْا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰی وَبِعَهْدِ اللهِ اَوْفُوْا ذٰلِكُمْ وَصّٰىكُمْ بِهٖ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ.
আপনি বলুন, এসো, আমি (তোমাদেরকে) তা পড়ে শোনাই, যা তোমাদের রব তোমাদের জন্য হারাম করেছেন; তা এই যে, তোমরা তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরীক করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা নিজ সন্তানদের হত্যা করো না, আমি তোমাদের রিযিক দেই এবং তাদেরও। আর তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন কোনো রকম অশ্লীল কাজের নিকটেও যেয়ো না। আর আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন, তাকে যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা করো না। এসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন, যাতে তোমরা উপলব্ধি কর।
এতীম পরিপক্ব বয়সে না পৌঁছা পর্যন্ত তার সম্পদের নিকটেও যেয়ো না, তবে এমন পন্থায় (যাবে, তার পক্ষে) যা উত্তম হয় এবং পরিমাপ ও ওজন ন্যায়ানুগভাবে পরিপূর্ণ করবে। আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত কষ্ট দেই না। আর যখন (কোনো কথা) বলবে, ন্যায্য বলবে, যদিও নিকটাত্মীয়ের বিষয়ে হয়। অল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবে। আল্লাহ এসব বিষয়ে তোমাদেরকে গুরুত্বের সাথে আদেশ করেছেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। –সূরা আনআম (০৬) : ১৫১-১৫২
এই আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের প্রতি যা যা হারাম করেছেন সেসব থেকে দশটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবীজীকে বলেন, হে নবী! আপনি সবাইকে বলুন!
تَعَالَوْا .
আসো তোমরা!
اَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَیْكُمْ.
তোমাদের রব তোমাদের ওপর কী কী হারাম করেছেন, আমি তোমাদেরকে তিলাওয়াত করে শোনাব।
اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا.
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং কঠিন হারাম বিষয় হল আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। এখানে আল্লাহ বলছেন, আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার বানিয়ো না। অর্থাৎ তাওহীদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
لاَ إِلهَ إِلا اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ.
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إَلهَ إِلا اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيْكَ لَه.
মাবুদ একমাত্র আল্লাহ তাআলা। অন্য কাউকে অথবা অন্য কিছুকে যদি মাবুদ মনে করা হয়, তাহলে ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা হল। এজন্য ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা যাবে না।
শিরক কাকে বলে?
শিরক কাকে বলা হয়? শিরক হল, যা কিছু আল্লাহর বৈশিষ্ট্য, সে বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে কোনো কিছু অন্যের জন্য সাব্যস্ত করা; যা একমাত্র আল্লাহর হক তা অন্য কারো জন্য অথবা অন্য কিছুর জন্য প্রয়োগ করাই হল শিরক। যেমন ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য, সুতরাং অন্য কারো ইবাদত করলেই শিরক। এটি শিরকে আকবর, শিরকে জালী বা সবচেয়ে বড় শিরক। এই ধরনের শিরককারীর ঠিকানা জাহান্নাম।
এজন্য আমরা সূরা ফাতেহাতে বলি–
اِیَّاكَ نَعْبُدُ.
আমরা একমাত্র আপনার ইবাদত করি।
তদ্রূপ প্রার্থনা ও দুআ একমাত্র আল্লাহর দরবারে।
উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ের সমাধান একমাত্র আল্লাহ তাআলাই দিতে পারেন
আমরা কোনো মুরব্বি অথবা আল্লাহর কোনো নেক বান্দাকে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য দ্আু করতে বলি। তাদের কাছে দুআ চাই। ‘আপনি যখন আল্লাহর দরবারে হাত ওঠান, তখন আমার জন্যও আল্লাহর কাছে কিছু বলবেন’– এভাবে বলি। নিজের জন্য আল্লাহর কোনো বান্দা বা মাখলুককে আল্লাহর কাছে দুআ করার জন্য বলা যেতে পারে। কিন্তু প্রার্থনা বা দুআটা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। প্রার্থনার হাত উঠবে একমাত্র আল্লাহর দরবারে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা যাবে না, প্রার্থনার হাত উঠবে না। উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের যত বিষয় রয়েছে, সবকিছুর সমাধান একমাত্র আল্লাহ তাআলাই করতে পারেন। হাঁ, উপায়-উপকরণও সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তাআলাই। উপকরণ তখনই কাজ করবে, যখন আল্লাহর হুকুম হবে। আল্লাহর হুকুম না হলে উপায়-উপকরণও কাজ করবে না। প্রার্থনা যে একমাত্র আল্লাহর দরবারে– সেটি সূরা ফাতেহার উল্লিখিত আয়াতের দ্বিতীয় অংশে বলা হচ্ছে–
وَاِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.
আমরা একমাত্র আপনারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি।
যিনি সৃষ্টি করেছেন শরীয়তও চলবে একমাত্র তাঁর
শরীয়ত দান করার হক একমাত্র আল্লাহ তাআলার। কোন্টি হালাল আর কোন্টি হারাম– তা ঠিক করে দেওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার। আল্লাহ যেভাবে ওহী পাঠিয়েছেন, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেভাবেই হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন–
وَیُحِلُّ لَهُمُ الطَّیِّبٰتِ وَیُحَرِّمُ عَلَیْهِمُ الْخَبٰٓىِٕثَ.
আর যে রাসূল তাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করবে এবং নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করব। –সূরা আ‘রাফ (০৭) : ১৫৭
অর্থাৎ যা কিছু ভালো ও পাক-পবিত্র, সেগুলোকে হালাল ঘোষণা করেছেন এবং যা কিছু নিকৃষ্ট ও মন্দ সেগুলো হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহর দেওয়া বিধান ও আল্লাহর পাঠানো ওহী অনুযায়ী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালাল-হারাম ঘোষণা করেছেন।
কিন্তু যদি হালাল-হারামের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে শরীক করা হয়, যেমন অমুক ইজম, তমুক তন্ত্র, অমুক সংস্থা, তমুক ব্যক্তি– এরা যা হালাল ও বৈধ বলবে, তা হালাল আর যা হারাম বা অবৈধ বলবে তা হারাম– তাহলে বলুন, এটি শিরক হবে কি না? অবশ্যই শিরক হবে। কারণ হালাল-হারামের বিধান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
আল্লাহ তাআলা বলেন–
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلٰلٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَی اللهِ الْكَذِبَ اِنَّ الَّذِیْنَ یَفْتَرُوْنَ عَلَی اللهِ الْكَذِبَ لَا یُفْلِحُوْنَ.
যেসব বস্তু সম্পর্কে তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা রচনা করে, সে সম্পর্কে বলো না–এটা হালাল এবং এটা হারাম। কেননা তার অর্থ হবে, তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ। জেনে রেখ, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়, তারা সফলকাম হয় না। –সূরা নাহল (১৬) : ১১৬
অর্থাৎ নিজের ইচ্ছা ও খেয়ালখুশি মাফিক একটাকে হালাল বলবে আরেকটাকে হারাম বলবে– এই অধিকার তোমাদের দেওয়া হয়নি। বরং কোন্টি হালাল আর কোন্টি হারাম– তা একমাত্র আল্লাহ্ই নির্ধারণ করবেন। শরীয়তদাতা একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
ইরশাদ হয়েছে–
ثُمَّ جَعَلْنٰكَ عَلٰی شَرِیْعَةٍ مِّنَ الْاَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَ الَّذِیْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ.
(হে রাসূল!) আমি আপনাকে দ্বীনের এক বিশেষ শরীয়তের ওপর রেখেছি। সুতরাং আপনি তারই অনুসরণ করুন এবং যারা প্রকৃত জ্ঞান রাখে না, তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না। –সূরা জাছিয়া (৪৫) : ১৮
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যে শরীয়ত দান করেছেন এবং এই শরীয়তের ওপর মজবুত ও অবিচল থাকার জন্য সর্বপ্রথম তাঁর নবীকে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেটি হল এই ইসলামী শরীয়ত। যিনি আখেরী নবী, শ্রেষ্ঠ নবী, বিশ্বনবী ও রাহমাতুল লিল আলামীন, সায়্যিদুল মুরসালীন। তাঁকে আল্লাহ তাআলা বলছেন– আপনি এই শরীয়ত মেনে চলুন! এই শরীয়ত ছেড়ে অন্যদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না! নবীজীর যুগেও এমন অনেক ইজম ও মতবাদ ছিল। নবীজীকে আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমি আপনাকে যে শরীয়ত দান করেছি এবং যে শরীয়তের ওপর আপনাকে রেখেছি এবং যে শরীয়তের বিষয়ে আপনাকে আমি ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছি, আপনি কেবল সেই শরীয়তেরই অনুসরণ করুন। এটি বাদ দিয়ে অন্যদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না।
এখন যদি কেউ আল্লাহর দেওয়া শরীয়ত বাদ দিয়ে অন্য কোনো ইজম অথবা অন্য কোনো মতবাদকে শরীয়ত হিসেবে গ্রহণ করে, সেটি তো শিরক হবে। কারণ এর অর্থ হল সে আল্লাহ ছাড়া অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ করল! রবের অর্থ হল, সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং সারা বিশ্ব ও সৃষ্টিজগতের পরিচালনাকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী; যিনি খালিক, মালিক, রাযযাক, হায়াত-মওতের মালিক, নফা-নুকসানের মালিক; তাই তিনিই একমাত্র মাবুদ এবং তিনিই একমাত্র শরীয়তদাতা।
যেহেতু তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং আমাদের জীবন-মরণ তাঁর হাতে, আমাদের লাভ ও ক্ষতি তাঁর হাতে, কাজেই তাঁরই শরীয়ত গ্রহণ করতে হবে। ইবাদত একমাত্র তাঁরই করতে হবে। সৃষ্টি করেছেন তিনি, পরিচালনাও করেন তিনি।
কুরআন কারীমে বলা হয়েছে–
اَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْاَمْرُ.
স্মরণ রেখ, সৃষ্টি তাঁর এবং নির্দেশ ও বিধানও তাঁর। কাজেই ইবাদতও তাঁর হবে, শরীয়তও তাঁর হবে। [দ্র. সূরা আরাফ (০৬) : ৫৪]
এসব কথাই বলা হয়েছে আয়াতের প্রথম নির্দেশনায়–
اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا.
আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাবুদ হিসেবে গ্রহণ করো না, আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব হিসেবেও গ্রহণ করো না। কারণ আল্লাহ ছাড়া কাউকে মাবুদ ও উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করলেও শিরক, আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করলেও শিরক।
ক্ষমতায় গেলে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করব না– এটা অর্ধেক কথা
কেবল এটুকু বললেই হবে না যে, আমরা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করব না, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন মানব না। বরং কুরআন-সুন্নাহ্য় আল্লাহ তাআলা যত হেদায়েত ও বিধান দিয়েছেন সব মানতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা না মানলে তো আর দায়িত্ব পালন হবে না। ঈমান পূর্ণ হবে না। ইসলাম পূর্ণ হবে না। কিছুই হবে না।
কিন্তু আপনি শুনবেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের ইশতেহার দেবে যে, আমরা ক্ষমতায় গেলে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করব না! এটুকুতে তো কথা শেষ হয় না, এটা তো অর্ধেক কথা। স্পষ্ট করে বলুন। এটি কি পুরো কথা হল, নাকি অর্ধেক হল? কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে কোনো আইন করব না, এটুকু বললে দায়িত্ব শেষ হয় না; বরং বলুন– ক্ষমতায় গেলে আমরা কুরআন সুন্নাহর বিধান মেনে চলব এবং কুরআন-সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়ন করব! আমাদের আইন-আদালত ও সংবিধান কুরআন-সুন্নাহর অধীন হবে। যেখানে কুরআন-সুন্নাহ বিধান দিয়েছে, সেখানে কুরআন-সুন্নাহর বিধানই শিরোধার্য, আমরা সেটিই বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ। আর যেখানে কুরআন-সুন্নাহ অপশন রেখেছে, ইসলামী শরীয়তে যাকে বলে মোবাহ, সেক্ষেত্রে বিষয়টি উন্মুক্ত থাকবে, এখানে আমরা যুগোপযোগী ও অবস্থা উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি, সেখানে আমরা পরামর্শ করে যুগ ও এলাকা অনুযায়ী নিজেদের উপযোগী করে আইন প্রণয়ন করতে পারি।
ইসলামী শরীয়তে অপশনস ও মোবাহের পরিধি অনেক বিস্তৃত
ইসলামী শরীয়তে এরকম অপশনসের গণ্ডি অনেক বড়। শরীয়তের পরিভাষায় যেগুলোকে বলা হয় مُبَاح ও عَفْو। কারণ কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য এই শরীয়ত। কত কালের মানুষ, কত অঞ্চলের মানুষ, কত রুচির মানুষ, কত ভাষার মানুষ, কত রঙের মানুষ, কত প্রকৃতির মানুষ, সকলের জন্যই তো এই শরীয়ত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে সাড়ে ১৪০০ বছর পার হয়ে গেল। আরও কত বছর বাকি, সে তো আল্লাহ্ই জানেন! সবার জন্য একই শরীয়ত আল্লাহ তাআলা দান করেছেন। তাই শরীয়তকে অনেক সহজ করেছেন। অবস্থার যতই পরিবর্তন হোক, মানুষের জন্য শরীয়ত কখনোই কঠিন হবে না। বলুন, আলহামদু লিল্লাহ!
এজন্য এই শরীয়তের মধ্যে মোবাহ ও অপশন অনেক। যেসব ফরয বিধান আছে, সেগুলো পরিপূর্ণ পালন কর, আর যেগুলো হারাম করা হয়েছে, সেগুলো থেকে শতভাগ দূরে থাক! আল্লাহ তাআলা ফরযের যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেই সীমা লঙ্ঘন কর না; বরং সেই সীমার ভেতরেই থাক! এর বাইরে তোমাদের জন্য অনেক ছাড় আছে। তাকেই বলা হয়েছে মোবাহ। তাকে বলা হয়েছে ‘আফউন’।
العفو এর অর্থই হল ছাড়। শরীয়তের বিধানের মধ্যে শত শত ছাড়। যেখানে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাড় দিয়েছেন, সেখানে নিজেদের মতো করে যখন যে এলাকার জন্য যা কল্যাণকর ও উপযুক্ত, পরামর্শ করে তা বাস্তবায়ন কর। এর জন্যই সংসদ ও পার্লামেন্ট। যেখানে আল্লাহ তাআলা অপশন রেখে দিয়েছেন, সেখানে আমাদের এই যুগে, এই সময়ে, এই পরিবেশে কোন্টি হলে ভালো হবে– নিজেরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিব। এটি হল সংসদের কাজ। কিন্তু যেখানে আল্লাহ তাআলা হালাল-হারামের বিধান দিয়ে রেখেছেন, কোনো বিষয়কে ফরয করে দিয়েছেন, কোনোটিকে হারাম ঘোষণা করেছেন, সেখানে সংসদের কাজ হল, সেগুলো প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা। কিন্তু তা না করে যদি এমন চিন্তা করা হয় যে, এর বিপরীতে আমরা কী করতে পারি দেখি, শরীয়ত শরীয়তেরটা বলেছে, আমরা আমাদের মতো করে দেখি– এমন লোকদের কি ঈমান থাকবে?
মুরব্বিদের অনেকে এখনো জীবিত থাকতে পারেন, যারা ১৯৭০ সালের নির্বাচন দেখেছেন। আপনাদের মনে থাকার কথা, সেই ৭০-এর নির্বাচনের ইশতেহারেও লেখা ছিল, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না। দেখবেন, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করব না– এ কথা রক্ষা করা হয়নি। অর্থাৎ সেই ৭০ থেকেই মানুষ দেখে আসছে, বলা হয় একটি আর করা হয় আরেকটি! আর কতকাল একথা মানুষ বিশ্বাস করবে অথবা তাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে না। এজন্য এখন আর এমন অস্পষ্ট কথা বললে হবে না; বরং স্পষ্ট ভাষায় বলতে হবে যে, কুরআন-সুন্নাহ্য় যা রয়েছে আমরা সেগুলো মেনে চলব আর কুরআন-সুন্নাহর বিপরীতে কোনো আইন হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আরে, কুরআন-সুন্নাহর বিপরীতে আইন করলে কি কারো ঈমান থাকবে? থাকবে না। সুতরাং বলতে হবে, কুরআন-সুন্নাহর বিধানগুলো আমরা মেনে চলব এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করব। আল্লাহ তাআলা সেই সৎসাহস দান করুন! এই আয়াতের প্রথম নির্দেশনায় বলা হয়েছে–
اَلَّا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْـًٔا.
(তোমরা তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরীক করো না।)
শিরকের আরও অনেক প্রকার রয়েছে। দুয়েকটি আজকে বলা হল। আল্লাহ তাআলা হায়াত রাখলে সামনে কখনো বলা হবে, ইনশাআল্লাহ। এই আয়াতগুলোতে দশটি বিষয়ে বলা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা ধারাবাহিক আলোচনা করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন!
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
[শ্রুতলিখন : মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম]