হাফিযুর রাহমান - বংশাল, ঢাকা

৫২৭৪. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি অনেক অসুস্থ ছিল। সে সময় তার গোসল করা নিষেধ ছিল। তখন তাকে তায়াম্মুম করে নামায পড়তে হয়। এই অবস্থায় একদিন তার গোসল ফরয হয়। তার যেহেতু গোসল করা নিষেধ তাই সে তখন তায়াম্মুম করেই নামায পড়ে। এর পরের দিন বিকালে সে সুস্থ হয়ে যায়। সে এখন গোসল করলে কোনো সমস্যা নেই। এ অবস্থায় সে কী করবে? আগের দিন গোসল ফরয হওয়ার পর থেকে এত দিন তো সে তায়াম্মুম করে নামায পড়ে আসছিল। এখন শুধু অযু করেই নামায পড়তে পারবে? নাকি এখন তাকে ঐ ফরয গোসল করতে হবে? সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ঐ ব্যক্তি যতদিন গোসল করতে সক্ষম ছিল না, ঐ পর্যন্ত ফরয গোসলের পরিবর্তে তার জন্য তায়াম্মুম যথেষ্ট ছিল। কিন্তু গোসল করার মত সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তার তায়াম্মুম দ্বারা অর্জিত পবিত্রতা বাতিল হয়ে গেছে। এরপর শুধু অযু করলে হবে না; বরং প্রথমে তাকে ফরয গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। অবশ্য তায়াম্মুম দ্বারা পূর্বে আদায়কৃত সকল ইবাদত যথাযথভাবেই আদায় হয়েছে। সেগুলো পুনরায় পড়তে হবে না।

আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

إِذَا أَجْنَبَ فَلَمْ يَجِدِ الْمَاءَ تَيَمّمَ وَصَلّى حَتّى يُدْرِكَ الْمَاءَ، فَإِذَا أَدْرَكَ الْمَاءَ اغْتَسَلَ.

কারো গোসল ফরয হওয়ার পর সে যদি পানি না পায় (অথবা পানি ব্যবহার করতে সক্ষম না হয়) তবে সে তায়াম্মুম করে নামায পড়বে। কিন্তু যখন পানি পেয়ে যাবে (অথবা পানি ব্যবহার করতে সক্ষম হবে) তখন তাকে গোসল করতে হবে। (আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী, বর্ণনা ১০৩৭; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৯১৯, ৯২৪)

-কিতাবুল আছল ১/৮৮, ৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৬৯; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আফজাল হোসাইন - দক্ষিণগাঁও, ঢাকা

৫২৭৫. প্রশ্ন

ইমামের জন্য মেহরাবের ভিতরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার হুকুম কী?

উত্তর

বর্তমানে মসজিদগুলোর মেহরাব মসজিদের মেঝের বরাবর থাকে এবং তা মসজিদেরই অংশ। তাই এ সময়ের মসজিদগুলোতে ইমাম মেহরাবের ভিতর দাঁড়িয়ে নামায পড়াতে পারবেন। এতে নামায মাকরূহ হবে না। তবে মুসল্লীদের জায়গার সমস্যা না থাকলে অহেতুক বিতর্ক এড়াবার জন্য একেবারে মেহরাবের ভেতরে ঢুকে দাঁড়ানোর চেয়ে অন্তত এক কদম পিছনে সরে দাঁড়ানো ভাল। আর জায়গা সংকুলান না হলে ভেতরে ঢুকেও দাঁড়াতে পারবেন। এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।

-আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৫২০; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩০০

শেয়ার লিংক

আশহাজ - চাটখিল, নোয়াখালী

৫২৭৬. প্রশ্ন

আমি হাফেজে কুরআন। রমযানে তারাবীহ্র নামাযে কখনো সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে ভুলে যাই। কখনো বা মুসল্লীদের পূর্বে এলান না করার কারণে সিজদা করলে তারা নামাযে হতবিহŸল হয়ে পড়ে, তাই সেজদা করি না।

প্রশ্ন হল, এ (উভয়) অবস্থায় আমার করণীয় কি? এতে নামাযের কোনো সমস্যা হবে কি?

উত্তর

নামাযে সিজদার আয়াত পড়ার পর অনূর্ধ্ব দুই আয়াতের ভেতর সিজদা করে নেওয়া উত্তম। তবে তিন আয়াতের পর আদায় করলে কাযা করার গোনাহ হবে না। এর চেয়ে বিলম্ব করলে তা কাযা হিসেবে আদায় হবে। তথাপি নামাযের ভেতর যখনই স্মরণ হবে আদায় করে নিতে হবে। কেননা নামাযের ভেতর ওয়াজিব হওয়া সিজদায়ে তিলাওয়াত নামাযের বাইরে আদায় করা যায় না।

আর নামাযের পূর্বে এলান না করার কারণে মুসল্লিদের ভুল বোঝাবুঝির অজুহাতেও সিজদায়ে তিলাওয়াত বিলম্ব করা বা ত্যাগ করা যাবে না। প্রয়োজনে নামায শেষে তাদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে হবে। আর নামাযের পূর্বে স্মরণ করানোর ব্যাপারেও যতœবান হতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৭৪-২৭৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৭০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩০; শরহুর মুনয়া, পৃ. ৫০৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯২; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩২৪; রদ্দুল মুহতার ২/১১১

শেয়ার লিংক

ইমরান খান - রাজশাহী

৫২৭৭. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির পেশাবের সমস্যা। বেশি নড়াচড়া করলে পেশাব বের হয়। তাই সে এতদিন বসে বসে নামায আদায় করত। কিন্তু বর্তমানে তার সমস্যা এতো বেশি বেড়ে গেছে যে, সে যদি জমিনে মাথা লাগিয়ে সিজদা করে তাহলেও তার পেশাব বের হয়ে যায়এ অবস্থায় সে কীভাবে নামায আদায় করবে? বসে ইশারায় সিজদা করে নামায আদায় করবে, নাকি নিজেকে মাযূর গণ্য করে পুরো নামায যথানিয়মে দাঁড়িয়ে ও রুকু-সিজদা করে পড়বে? এক্ষেত্রে তার নামাযের সহীহ পদ্ধতিটি জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি বসে ইশারা করে নামায পড়লে যদি শরীর থেকে নাপাক বের না হয় তাহলে তাকে বসে ইশারাতেই নামায পড়তে হবে। সুস্থ হওয়া পর্যন্ত এটাই তার নামায আদায়ের সহীহ পদ্ধতি।

-শরহুয যিয়াদাত ১/২৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৩৭১; শরহুল মুনয়া, পৃ. ২৬৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ - ফুলবাড়িয়া, সাভার

৫২৭৮. প্রশ্ন

কয়েক বছর আগে অন্যায়ভাবে পুলিশ আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ছাড়ানো যাচ্ছিল না। তখন আমি মান্নত করেছিলাম, আমার ছেলে যদি জেলখানা থেকে ছাড়া পায় তাহলে আমি যতদিন বেঁচে থাকব প্রত্যেক সোমবার রোযা রাখব। এর কিছুদিন পর প্রায় আলৌকিকভাবে আমার ছেলে মুক্তি পেয়ে যায়। এরপর থেকে আমি নিয়মিত সোমবারে রোযা রেখে যাচ্ছি। কিন্তু এ বছর থেকে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার কারণে আমার জন্য প্রত্যেক সোমবারে রোযা রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমি মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে রোযা না রেখে আমার জন্য কিছু করার সুযোগ রয়েছে কি?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনি যদি বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার কারণেই রোযা রাখতে সক্ষম না হন তাহলে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে ফিদয়া দিতে পারবেন।

ফিদয়া হল, প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে দুই বেলা খাবার খাওয়ানো কিংবা এর মূল্য প্রদান করা।

উল্লেখ্য, নিজের সাধ্যের বাইরে কিংবা অধিক কষ্টসাধ্য হয়ে যায় এমন মান্নত করা অনুচিত।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬২; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২৩১; ফাতহুল কাদীর ২/৩০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৯

শেয়ার লিংক

নাইমুল হাসান - বাংলাবাজার, ঢাকা

৫২৭৯. প্রশ্ন

আমার নানা-নানী ও মামারা মোট ছয়জন ইহরাম করে উমরার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। এয়ারপোর্টে গিয়ে গাড়ি থেকে নামার পরপরই একটি বাইকের চাকা আমার বড় মামার পায়ের পাতার উপর উঠে যায়। এতে তাঁর পায়ের পাতার হাড় ভেঙ্গে যায়। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই আর বাকি পাঁচজন নির্ধারিত ফ্লাইটে চলে যান। ডাক্তার আমার মামাকে এক মাস বেডরেস্টে থাকতে বলেন। এখন মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাচ্ছি, উমরায় ইহরাম বাঁধার পর অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওজরের কারণে উমরায় না যেতে পারলে ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার উপায় কী? এব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

উমরার ইহরাম বাঁধার পর অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওজরের কারণে উমরায় যেতে না পারলে হালাল হওয়ার জন্য কারো মাধ্যমে হারামের এলাকায় একটি দম দিতে হবে। অর্থাৎ একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করতে হবে। এভাবে পশু জবাই করলেই আপনার মামা হালাল হয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে মাথা মুণ্ডন করা বা চুল কাটা জরুরি নয়। তবে হালাল হওয়ার নিয়তে হলক বা চুল খাটো করা মুস্তাহাব।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-

إذَا ذُبِحَ هَدْيُهُ حَلّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ.

অর্থাৎ হেরেমের এলাকায় তার পক্ষ থেকে পশু জবাই করলেই সে হালাল হয়ে যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪০৫৪)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আলাকামা রাহ., হাসান বসরী রাহ., মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ., যুহরী রাহ., সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. প্রমূখ সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪০৪৮-৫৮)

প্রকাশ থাকে যে, আপনার মামাকে উক্ত উমরা পরবর্তীতে কাযা করে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ৪৯৭; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/৪৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৬৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৯২

শেয়ার লিংক

তুহিন খান - পালং, শরীয়তপুর

৫২৮০. প্রশ্ন

আমাদের কলেজে একটি ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি হচ্ছে, আমার এক বন্ধু আমাদের কয়েকজন বন্ধুদের সামনে তার এক বান্ধবীকে মজা করে বলল, আমি তোকে বিবাহ করলাম। তার বান্ধবীও বলল, আমি কবুল করলাম। এরপর আর তাদের মধ্যে কোনোকিছু হয়নি; বরং দু’জনই স্বাভাবিকভাবে আলাদা আলাদা থাকে। পড়াশোনা শেষ করে আমার বন্ধু অন্য জায়গায় বিয়ে করে। এখন ঐ মেয়েটির বিবাহ ঠিক হয়েছে। মেয়ের বাবা উক্ত ঘটনা জানতে পেরে আমার বন্ধুকে তালাক দিতে বলছে। আর আমার বন্ধু বলছে আমি তো ঠাট্টা করে বলেছিলাম। তালাক দেয়ার কী প্রয়োজন? এখন মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হচ্ছে, ঠাট্টাচ্ছলে ইজাব কবুলের দ্বারা তাদের ঐ বিবাহ কী হয়েছিল? এই মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জন্য কী তালাক নেয়া জরুরি?

উল্লেখ্য, আমার বন্ধু তখন একটি জব করত এবং ১১ হাজার টাকা বেতন পেত। তাদের উভয়ের ফ্যামিলিগত স্ট্যাটাসও কাছাকাছি।

উত্তর

হাসি-ঠাট্টা করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিবাহের প্রস্তাব করা এবং কবুল বলার দ্বারাও বিবাহ হয়ে যায়। তিরমিযী শরীফের এক বর্ণনায় এসেছে হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন-

ثَلَاثٌ جِدّهُنّ جِدّ وَهَزْلُهُنّ جِدّ: النِّكَاحُ وَالطّلَاقُ وَالرّجْعَةُ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বিষয় এমন, যা স্বাভাবিকভাবে করলেও কার্যকর হয় এবং ঠাট্টাচ্ছলে করলেও কার্যকর হয়। ১. নিকাহ। ২. তালাক  এবং ৩. তালাক (রাজয়ী) দেওয়ার পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১১৮৪)

তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বাক্ষীদের সামনে ঐভাবে ইজাব কবুলের কথা বলার দ্বারা তাদের বিবাহ হয়ে গেছে। অতএব ঐ মেয়েকে অন্যত্র বিবাহ দিতে হলে প্রথমে আপনার বন্ধুর থেকে তালাক নিতে হবে। অন্যথায় অন্যত্র বিবাহ দেওয়া জায়েয হবে না। আর বিবাহের পর তাদের যেহেতু নির্জনবাস হয়নি তাই ইদ্দতের প্রয়োজন হবে না। তালাকের পরপরই মেয়েটি অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

উল্লেখ্য, বিবাহ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। এ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা বা এটাকে রসিকতার মাধ্যম বানানো অন্যায়। এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এছাড়া বেগানা ছেলেমেয়েদের দেখা-সাক্ষাৎ আড্ডা ইত্যাদি মারাত্মক গুনাহ। এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

-ফাতহুল কাদীর ৩/১১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩২৭; রদ্দুল মুহতার ৩/১১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/১৩; মাজমাউল আনহুর ১/৪৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলমগীর - মণিরামপুর, যশোর

৫২৮১. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের বাড়ির পাশে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়। মসজিদের ইমাম সাহেবকে এ ঘটনা জানানো হলে, তিনি বললেন, তার স্ত্রী তার জন্য চিরতরে হারাম হয়ে গেছে। এখন কোনোভাবে তাদের পরস্পরে বসবাস করার সুয়োগ নেই। স্ত্রী এ কথা শুনে বাপের বাড়িতে চলে যায়। এবং এক মাস পরে ইদ্দতের মধ্যে তার অন্য জায়গায় বিবাহ হয়। দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরণও হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় স্বামী যখন জানতে পারে যে, তার স্ত্রী তিন তালাকপ্রাপ্তা, তখন সে তাকে তালাক দিয়ে দেয়। জানার বিষয় হল-

(ক) দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার বিবাহ বৈধ হয়েছে কি না? এবং তার উপর ধার্যকৃত মহর পরিশোধ করা জরুরি কি না? এই মহিলা এখন কয় মাস ইদ্দত পালন করবে?

(খ) জনৈক ব্যক্তি বলেছেন, এই মেয়েকে এখন প্রথম স্বামী বিবাহ করতে পারবে। তার কথা কি ঠিক? ইদ্দত শেষ করার পর প্রথম স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করা জায়েয হবে কি না? দয়া করে উক্ত বিষয়গুলোর শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ইদ্দত অবস্থায় অন্যত্র বিবাহ করা জায়েয নয়। বিবাহ করলেও তা সহীহ হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে উক্ত মহিলার বিবাহ সহীহ হয়নি। অতএব তালাকও সহীহ হয়নি। তাদের একত্রে বসবাস করা হারাম হয়েছে। আর যেহেতু তার সাথে বিবাহ সহীহ হয়নি, তাই ধার্যকৃত মহর যদি ‘মহরে মিছিল’ (অর্থাৎ মহিলার সমপর্যায়ের পিতৃবংশীয় নারীদের মহর)-এর তুলনায় কম হয়, তাহলে ধার্যকৃত মহরই পরিশোধ করতে হবে। আর যদি ‘মহরে মিছিল’ ধার্যকৃত মহরের কম হয় তাহলে মহরে মিছিল পরিমাণ আদায় করতে হবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যক্তির থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার পর উক্ত মহিলা পূর্ণ ইদ্দত পালন করবেন। এক্ষেত্রে মহিলা অন্তঃসত্ত¡া হলে সন্তান ভমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত। আর অন্তঃসত্ত¡া না হলে তিনটি ঋতুস্রাব অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবেন। -কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ., বর্ণনা ৪০৬; কিতাবুল আছল ৪/৪১৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৪১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৭৭, ৫/২৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৩১, ৫১৮

(খ) না, ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। কারণ, দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে যেহেতু তার বিবাহ সহীহ হয়নি, তাই তার থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার পর ইদ্দত শেষ করেও প্রথম স্বামীর সাথে পুনরায় বিবাহ করা জায়েয হবে না। তবে (ইদ্দত শেষ করার পর প্রথম স্বামী ছাড়া) অন্যত্র বিবাহ করতে পারবে। 

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৪৯; ফাতহুল কাদীর ৪/৩১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৫৯; মাজমাউল আনহুর ২/৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবরাহীম - খুলনা, বাঘেরহাট

৫২৮২. প্রশ্ন

আজ থেকে দুই-তিন মাস আগে এক ছেলে ও এক মেয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বিবাহের জন্য কাবিননামায় স্বাক্ষর করে। তখন তাদের চার পাঁচজন বন্ধু-বান্ধব উপস্থিত ছিল। কিন্তু মৌখিক কোনো ইজাব কবুল করেনি। এভাবে বিবাহ হওয়ার পর তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন জনৈক ব্যক্তি বলছেন, তাদের উক্ত বিবাহ সহীহ হয়নি। কাজী ডেকে নতুন করে আবার বিবাহ করতে হবে। আগে কয়েক মাস মেয়েকে পৃথক থাকতে হবে। তারপর তারা বিবাহ করবে। জানার বিষয় হল, তাদের পূর্ব বিবাহ কি আসলেই সহীহ হয়নি? না হলে এখন কী করণীয়? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

কাবিননামা হচ্ছে নিবন্ধন সনদ। কোনো বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পর কাবিননামার মাধ্যমে তা সরকারিভাবে নিবন্ধন করা হয়। এতে দস্তখত করার দ্বারা বিবাহ সংঘটিত হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত বিবাহটি সহীহ হয়নি। বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য দুইজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার উপস্থিতিতে পাত্র-পাত্রীর কিংবা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে মৌখিক ইজাব কবুল করা শর্ত। অতএব তাদের পরস্পরের এতদিন বসবাস অবৈধ হয়েছে। এজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা ইস্তেগফার করতে হবে।

এখন তারা পরস্পর সংসার করতে চাইলে দুইজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে মহর ধার্য করত মৌখিক ইজাব-কবুলের মাধ্যমে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এর জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে না।

-ফাতহুল কাদীর ৩/১০২; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮৩; মাজমাউল আনহুর ১/৪৬৮; রদ্দুল মুহতার ৩/১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭০

শেয়ার লিংক

আফসানা মীম - খুলনা

৫২৮৩. প্রশ্ন

আমার স্বামী খুবই রাগী। কাজ কামে একটু উলট-পালট হয়ে গেলেই তিনি আমাকে গালি-গালাজ করতেন। মাঝেমাঝে মারধরও করতেন। বিষয়টি নিয়ে একজন আলেমের সাথে কথা বললে তিনি আমার স্বামীকে চিল্লায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। আমি অনেক বুঝিয়ে তাকে চিল্লায় পাঠাই। চিল্লা থেকে এসে আমাকে গালি-গালাজ করা, মারধর করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। একদিন তার আগের আচরণ নিয়ে কথা উঠলে তিনি বলেন-আমি তওবা করেছি যে, তোমাকে কখনো মারব না, যদি মারি তাহলে তুমি তালাক। তালাকের কথাটি দৃঢ়ভাবে বেঁচে থাকার জন্যই বলেছিলেন। কিছুদিন আগে বিশেষ মুহূর্তে রসিকতা করে তিনি আমার পিঠে আঘাত করেছিলেন। আমি এখন খুবই চিন্তিত যে, আমাদের বিবাহ ভেঙে গেছে কি না? ভেঙে গিয়ে থাকলে এখন আমাদের একসাথে সংসার করার জন্য কী করতে হবে? দয়া করে উক্ত সমস্যার সমাধান জানিয়ে আমাদের উপকৃত করবেন।

উত্তর

রসিকতা করে কাউকে থাপ্পড় দেওয়া মারার আওতায় পড়ে না। তাই ঐ কারণে আপনার স্বামীর শপথ ভাঙেনি এবং আপনার উপর কোনো তালাকও পতিত হয়নি। সুতরাং আপনি স্বামীর সাথে আগের মতই ঘর-সংসার চালিয়ে যেতে পারবেন।

উল্লেখ্য, দাম্পত্যজীবনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের হকের ব্যাপারে খুব সচেতন থাকা উচিত। এ ব্যাপারে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি জরুরি। কুরআন মাজীদে স্ত্রীর প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তার বৈধ কথা মান্য করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বামীর পূর্বের আচরণ জুলুম ছিল তা স্পষ্ট আর তালাকের শর্ত জুড়ে দেওয়া বাড়াবাড়ি ও অন্যায়। এ থেকে তাকে তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ২/১১১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/২০৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২১৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৫২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৩৮২

শেয়ার লিংক

সুমাইয়া আক্তার - ভালুকা

৫২৮৪. প্রশ্ন

এক বছর হল আমার বিবাহ হয়েছে। আমার স্বামী আমাকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমি যখনই চাই তখনই তালাক গ্রহণ করার অধিকার দিয়েছিলেন। বিয়ের পর আমি নিজেকে শ্বশুর বাড়ির সাথে কোনভাবেই মানিয়ে নিতে পারছি না। আর অন্যদিকে আমার স্বামীর আচার-আচরণও ভালো নয়। তাই আমি তালাক গ্রহণের প্রাপ্ত অধিকার বলে তালাক গ্রহণ করতে চাইলে তিনি বলেন-আমি তোমাকে যে অধিকার দিয়েছিলাম তা ফিরিয়ে নিলাম। এখন তোমার তালাক গ্রহণের অধিকার নেই, আর আমিও তোমাকে তালাক দেব না। জানার বিষয় হল, আমার তালাক গ্রহণের অধিকার কি শেষ হয়ে গেছে? এখন বিবাহ বিচ্ছেদের উপায় কী? সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের অধিকার দিলে তা ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। অতএব আপনি চাইলে স্বামী কর্তৃক প্রাপ্ত অধিকার বলে নিজ নফসের উপর ‘তালাকে তাফয়ীয’ গ্রহণ করতে পারবেন।

তবে উল্লেখ্য যে, তালাক হল বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে উভয়ের জন্য তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই খুব ভেবেচিন্তে এবং গুণীজনদের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আবেগের বশবর্তী হয়ে তাড়াহুড়া করে তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। এছাড়া পারিবারিক জীবনে কখনো শুরুতে কিছু সমস্যা আসে। যা অভিজ্ঞজনদের সাথে পরামর্শ করলে কিছুটা সহজ হয়ে আসে এবং ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। এসব মুহূর্তে তালাকই সুন্দর সমাধান নয়; বরং তালাকের পর উভয়কে বা নারীকে অনেক ক্ষেত্রে আরো নানাবিধ জটিলতার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। তাই তালাকের সিদ্ধান্ত দ্রæত নিবেন না। বিশেষত স্বামী যখন সংসার করতে চায়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/২২১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৪০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮৭; আলবাহরুর রায়েক ৩/৩১১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হানিফ সরকার - পারইখুপি, যশোর

৫২৮৫. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি প্রায়ই মদ খায়। এক রাতে সে মাতাল হয়ে বাড়ি আসে এবং তার স্ত্রীকে খুব মারধর করে তাকে বলে, ‘যা আজ থেকে তুই তালাক?’ পরের দিন সে ঘুম থেকে উঠে লজ্জিত হয়। তার স্ত্রী এখন তার থেকে আলাদা থাকছে। এখন তারা পুনরায় ঘর-সংসার করতে চায়। হুযুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় তার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে কি না? পতিত হলে তাদের ঘর-সংসার করার কোনো সুযোগ আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক পতিত হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির স্ত্রীর উপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। এখন লোকটি পুনরায় সুষ্ঠুরূপে ঘর-সংসার করতে চাইলে ইদ্দতের মধ্যে ‘রজআত’ অর্থাৎ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন।

রজআতের পদ্ধতি হচ্ছে, ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করা। যেমন একথা বলা যে, তোমাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করলাম। একথা বলার দ্বারাই তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনঃবহাল হয়ে যাবে। আর যদি তিনি ইদ্দতের ভেতরে (ঋতুমতী মহিলার জন্য তিনটি ঋতুস্রাব অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। আর অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত) রজআত না করেন, তবে ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নতুন করে বিবাহ করতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, এই স্ত্রীকে ইদ্দতের ভেতরে রজআত করা হোক বা ইদ্দত শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণ করা হোক-উভয় ক্ষেত্রে লোকটি দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে কখনো তাকে দুই তালাক দিলে পূর্বের এক তালাকের সাথে মিলে তিন তালাক হয়ে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে খুবই সর্তক থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, শরীয়তে মদ্যপান সম্পূর্ণ হারাম। মদের বিষয়ে কুরআনে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং হাদীসে কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

وَلاَ يَشْرَبُ الخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ.

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যখন মদ পান করে, তখন সে মুমিন অবস্থায় থাকে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৭৭২)

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৮২৫৮; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৫/১৩; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৫৮; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৪৫; আলইখতিয়ার ৩/১৪৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৪৭

শেয়ার লিংক

আব্দুস সালাম - বছিলা, মুহাম্মাদপুর

৫২৮৬. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আমার বোনের ননদের সাথে আমার বিবাহ হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে মহর ও গয়নাগাটি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরিশেষে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেনমহরে কাবিন হয়। তার মধ্যে এক লক্ষ ষাট হাজার টাকার স্বর্ণ আর বাকিটা নগদ অর্থ পরিশোধ করার কথা হয়। বিবাহ শেষে বাসায় ফিরে গাড়ি থেকে নামার সাথেসাথে শুনতে পাই, আমার ভগ্নিপতি ও তার বাবা আমাদের বিবাহকে কেন্দ্র করে আমার বোনকে ছোটলোক ইত্যাদি বলে অনেক বকা-ঝকা করেন। একপর্যায়ে আমার বোন উত্তরে দিলে আমার ভগ্নিপতি উত্তেজিত হয়ে আমার বোনকে তালাক দিয়ে দেয়। আমার বাবা-মার চাপে আমিও তখনই আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিই। এক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর কোনো দোষ ছিল না। এখন মুহতারামের নিকট জানতে চাচ্ছি, শরয়ীভাবে সে আমার থেকে কতটুকু মহর পাবে? মহর ছাড়া অন্য কোনো কিছু তাকে দেয়া আমার জন্য জরুরি কি না?

উল্লেখ্য, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার স্বর্ণ বিবাহের অনুষ্ঠানের সময় দিয়ে দিয়েছিলাম।

আরো উল্লেখ্য, আমার সাথে তার স্ত্রী-সুলভ কোনো আচরণ হয়নি। শুধু একই গাড়িতে সেন্টার থেকে বাসায় এসেছি। গাড়িতে ড্রাইভার ও আমার বড় ভাগ্নি ছিল।

উত্তর

বিবাহের পর স্ত্রীর সাথে আপনার নির্জনবাস হওয়ার পূর্বেই যেহেতু তাকে তালাক দিয়েছেন তাই সে নির্ধারিত মহরের অর্ধেকের হক্বদার হবে। এই অর্ধেক মহর আপনার আদায় করা জরুরি। আর আপনি যেহেতু এক লক্ষ ষাট হাজার টাকার স্বর্ণ মহর হিসেবে দিয়েছেন এখন অর্ধেক মহরের বাকি অংশ অর্থাৎ পঁয়ষট্টি হাজার টাকা দিয়ে দিলে যথেষ্ট হবে।

উল্লেখ্য, তালাক হল বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে উভয়ের জন্য তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই অত্যন্ত ভেবেচিন্তে এবং পরামর্শ সাপেক্ষে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কোনো কথা বা সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায়। বর্তমান সময়ে অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী-সন্তানের প্রতি জুলুমও বটে। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যথাযথ কারণ ছাড়াই আপনার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এটা তার উপর অত্যন্ত জুলুম ও অন্যায় হয়েছে।

-সূরা বাকারা (২) : ২৩৭; কিতাবুল আছল ৪/৪৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৯২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৫৩৯; মাজমাউল আনহুর ১/৫১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৪

শেয়ার লিংক

নাজিয়া আমীন - নড়িয়া, শরীয়তপুর

৫২৮৭. প্রশ্ন

গত কুরবানী ঈদের পরে আমার ছোট ভাই নারিকেল গাছ থেকে পড়ে যায় এবং গুরুতর আহত হয়। তখন আমি মান্নত করেছিলাম সোয়া লক্ষবার দুআয়ে ইউনুস পড়ব। তবে আমি একা পড়ব, নাকি পরিবারের সকলে মিলে পড়ব-এ ব্যাপারে কোনো নিয়ত করিনি। এখন আমার জন্য একাকী পড়াটা কষ্টকর। তাই মুহতারামের নিকট জানতে চাচ্ছি, আমার জন্য একাকী পড়া জরুরি কি না? নাকি পরিবারের সকলে মিলে পড়লেও মান্নত পুরা হয়ে যাবে?

উত্তর

দুআয়ে ইউনুস পড়ার মান্নত করলে তা আবশ্যক হয়ে যায় না। তাই সোয়া লক্ষবার পড়াও আপনার জন্য জরুরি নয়।

প্রকাশ থাকে যে, উচিত ছিল, দুআয়ে ইউনুস বিপদের সময় পড়া। কিন্তু তা না করে বিপদ দূর হলে পড়ার নিয়ত করা হয়েছে। মুমিন বান্দার উচিত বিপদে আপদে সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র দারস্থ হওয়া এবং তৎক্ষণাৎ তওবা, দুআ ও দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহ্র সাহায্য চাওয়া।

-আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৩৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৭৩৮

শেয়ার লিংক

আব্দুর রহীম - নরসিংদী

৫২৮৮. প্রশ্ন

একদিন মোবাইলে টিভি দেখার ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি আলোচনা শুনি। সেদিন থেকেই টিভি দেখা ছেড়ে দিই এবং কসম করি যে, ভবিষ্যতে কখনো টিভি দেখব না, দেখলে তিন হাজার টাকা সদকা করব। কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে তার সাথে টিভি দেখা হয়ে যায়। এখন আমি আর্থিক সংকটে আছি; তিন হাজার টাকা দেওয়া আমার জন্য কষ্টকর। এলাকার মাহফিলের একজন আলেমকে বিষয়টি বললে তিনি বলেন-আপনার জন্য ১০জন গরিবকে দুই বেলা তৃপ্তিসহকারে খাওয়ানোই যথেষ্ট। সময় কম থাকায় বিষয়টি ভালো করে জানতে পারিনি। জানার বিষয় হল, এখন আমাকে তিন হাজার টাকাই সদকা করতে হবে, নাকি ১০ জন গরিবকে খাওয়ালেও চলবে? সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি তিন হাজার টাকাও সদকা করতে পারেন। আবার চাইলে দশজন গরিবকে দুই বেলা তৃপ্তিসহকারে খাওয়াতেও পারেন। যে কোনোটির দ্বারা আপনার কাফফরা আদায় হয়ে যাবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৩৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৪২৭; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ২/২৪৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৮২

শেয়ার লিংক

সাকিব - কালকিনি, মাদারীপুর

৫২৮৯. প্রশ্ন

আমাদের কলেজের এক বড় ভাইয়ের সাথে একটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া হলে আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলেছিলাম যে, আমি আর তার সাথে কথা বলব না। কিন্তু পরবর্তীতে তার সাথে আমার কথা বলতে হয়। রমযানের ছুটিতে দেশে এসে আম্মাকে বললে আম্মা আমাদের গ্রামের আশপাশের ২০জন দরিদ্র লোকদের দাওয়াত দেন এবং তাদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেন। আমি আম্মাকে বললাম, কাফফারার জন্য তো দশ জনকে দুই বেলা খাওয়াতে হয়। আম্মা বললেন, ভোর রাতে আয়োজন করা কষ্টকর; ২০জনকে একসাথে খাওয়ালেও চলবে। এখন মুহতারামের নিকট জানতে চাচ্ছি, ২০ জনকে একসাথে খাওয়ানোর মাধ্যমে আমার কাফফারা কি আদায় হয়েছে? যদি না হয়, তাহলে এখন আমার করণীয় কী?

উত্তর

বিশজন দরিদ্রকে এক বেলা খাবার খাওয়ানোর দ্বারা কাফফারা আদায় হয়নি। কারণ কসমের কাফফারার ক্ষেত্রে দশ জন দরিদ্রের প্রত্যেককে তৃপ্তিসহকারে দুই বেলা খাবার খাওয়ানো শর্ত। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কাফফারা আদায়ের জন্য আপনার করণীয় হচ্ছে, তাদের মধ্যে যে কোনো দশ জনকে আরো এক বেলা খাবার খাওয়ানো। আর সেটি সন্ধ্যা বেলাও হতে পারে। এছাড়া আপনি চাইলে তাদের মধ্যে হতে দশ জনকে এক বেলা করে খাবারের টাকাও দিয়ে দিতে পারেন। এতেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৬১; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/১০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৬৩

শেয়ার লিংক

আব্দুল হামিদ - আড়াই হাজার, না.গঞ্জ

৫২৯০. প্রশ্ন

নিম্নোক্ত বিষয়ে শরয়ী ফায়সালা  জানতে চাই।

আমাদের গ্রামের ছোট একটি সমাজ। বহুপূর্বে আমাদের মসজিদের ওয়াকফজনিত অস্পষ্টতার কারণে বিভক্ত হয়ে নতুন আরেকটি মসজিদ হয়। বর্তমানে আমরা পূর্বের মসজিদের অন্তর্গত। আমাদের সমাজের কিছু মুরব্বি মসজিদের ওয়াকফজনিত অস্পষ্টতার কারণে তারা মসজিদে আসছেন না। অস্পষ্টতা হল, মসজিদের জায়গা সিএস বা আরএস রেকর্ড অনুসারে এখনও তাদের বাড়ির জমি হিসেবে দেখাচ্ছে। কিন্তু তারা ওয়াকফ দলীল করে দিয়েছে। ওয়াকফ দলীলের ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা হল, দলীল করেছে ৩.৫ শতাংশ জায়গার; কিন্তু তারা মৌখিকভাবে ৫ শতাংশ দিয়েছে। তাদের এই মৌখিক ঘোষণা অনুযায়ী মসজিদ করা হয়েছে ৫ শতাংশ জায়গার উপর। মসজিদের মেহরাব ও ১ম কাতার দালীলিক ওয়াকফ ৩.৫ শতাংশ জায়গার বাইরে। তাই এই বিষয়টি সংশোধনের উদ্দেশ্যে উক্ত মুরব্বিরা মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এতে তাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায অন্য মসজিদে গিয়ে পড়া সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে অন্য পক্ষও এই বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে আসছে না।

অতএব, জিজ্ঞাসা হল, উক্ত মুরব্বিদের মসজিদে না আসার সিদ্ধান্ত কি ঠিক আছে? অথবা এই পরিস্থিতিতে শরয়ী হুকুম কী? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

কোনো জমি মৌখিকভাবে ওয়াকফ করলেই শরীয়তের দৃষ্টিতে তার ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মসজিদের নামে ৫ শতাংশ জমি মৌখিক ওয়াকফের দ্বারা পুরো ৫ শতাংশই মসজিদের জন্য ওয়াকফ হয়ে গিয়েছে। এবং ঐ ৫ শতাংশের উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদও পুরোটাই শরয়ী মসজিদ হয়েছে। এক্ষেত্রে লিখিত দলীলের অসম্পূর্ণতা বা আরএস রেকর্ডে মসজিদ হিসাবে চিহ্নিত না হলেও তা মসজিদ হিসাবে ধর্তব্য হবে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে কোনো মুসল্লির মসজিদে না আসা এবং এখানে নামায পড়া বন্ধ করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। এমনটি করা সম্পূর্ণরূপে ভুল সিন্ধান্ত হবে।

অবশ্য ওয়াকফকারী বা তার ওয়ারিসদের কর্তব্য হল, অবশিষ্ট ১.৫ শতাংশও মসজিদের নামে লিখিত দলীল করে দেওয়া; যাতে কোনো ভুল বুঝাবুঝি বা ঐ জমির কোনো অংশ বে-দখল হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকে।

আর ভবিষ্যতে যে মাঠ জরিপ হবে, তাতে পুরো ৫ শতাংশ মসজিদের নামে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিয়ে নেবে।

-আলইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ, পৃ. ৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯০; দুরারুল হুক্কাম ২/১৩৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫১

শেয়ার লিংক

সাদ্দাম হোসেন - নড়িয়া, শরীয়তপুর

৫২৯১. প্রশ্ন

আমার এক বন্ধুর নানা আটরশির ভক্ত ছিলেন। তিনি এলাকার মসজিদের সভাপতিও ছিলেন। সভাপতি থাকাকালীন  তিনি তার একটি দোকান মসজিদের কল্যাণে ওয়াকফ করেন। দোকানের ভাড়ার অর্থ দিয়ে মসজিদের স্টাফদের বেতন দিতেন এবং প্রসিদ্ধ রাতগুলোতে (শবে বরাত, শবে কদর, ঈদে মিলাদুন্নবী) পুরো মসজিদে লাইটিং করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর এখন আমার বন্ধুর মামা ঐ মসজিদের সভাপতি। নির্ধারিত রাতগুলোতে ঐ দোকানের ভাড়ার অর্থ দিয়ে লাইটিং করতে চাইলে আমার বন্ধু ওর মামাকে নিষেধ করে। তখন ওর মামা বলেন, আমারও এগুলো পছন্দ না। কিন্তু আমার বাবা তো ওয়াকফের সময় এগুলোর শর্ত করেছেন। এখন আমি না করি কীভাবে? এখন মুহাতারামের নিকট জানতে চাচ্ছি, ঐ দোকানগুলোর ভাড়ার অর্থ দিয়ে কি নির্ধারিত রাতগুলোতে লাইটিং করা জরুরি?

উত্তর

ওয়াকফকারী যদি শরীয়ত পরিপন্থী কোনো শর্ত করে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। আর মসজিদ লাইটিং করার রেওয়াজটি এমনিতে অপচয় ও অন্যায়। উপরন্তু বিশেষ রাতকে উপলক্ষ করে করা বিদআত। তাই ওয়াকফকারী এমন কথা বললেও তা করা যাবে না। এ বাবদ সকল টাকা মসজিদ ফান্ডে দিয়ে দিতে হবে। যা মসজিদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।

-ফাতহুল কাদীর ৫/৪১৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯১; আলবাহরুর রায়েক ৫/২১৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৪৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আহমাদ - খালিশপুর, খুলনা

৫২৯২. প্রশ্ন

(ক) আমাদের এলাকার ঈদগাহ ময়দানটি বেশ বড়। চারদিকে দেয়ালে ঘেরা। গ্রামের লোকেরা সেখানে ধান, চাল, ডাল, সরিষা ইত্যাদি শুকাতে দেয়। জানার বিষয় হল, ঈদগাহে ধান, চাল শুকানো যাবে কি?

(খ) একবার ধানের মওসুমে বৃষ্টি হয়। লোকজন ধান শুকানোর কোনো জায়গা না পেয়ে মসজিদের ছাদে ধান শুকায়। এতে খতীব সাহেব খুবই নারায হয়। এবং তিনি মসজিদের ছাদে ধান শুকানো থেকে কঠিনভাবে বারণ করেন। এলাকার লোকজন বলে, জরুরতের সময় মসজিদের ছাদে ধান শুকাতে কী সমস্যা? এ নিয়ে খতীব সাহেবের সাথে মনোমালিন্য হয় এবং খতীব সাহেব খেতাবাত ছেড়ে দেন। এখন আমার জানার বিষয় হল, প্রয়োজনের মুহূর্তে মসজিদের ছাদে ধান শুকানো জায়েয আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

(ক) ঈদগাহের জায়গা নামাযের মত মর্যাদাপূর্ণ কাজের জন্য নির্ধারিত। তা ধান, চাল ইত্যাদি শুকানোর কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯১; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৮; আলইসআফ পৃ. ৭২; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৫৬

(খ) আর মসজিদের ছাদে ধান শুকানো যাবে না-খতীব সাহেবের এ কথা সঠিক। কেননা মসজিদের ছাদও মসজিদের হুকুমে। আর মসজিদ ইবাদত-বন্দেগীর জন্য বানানো হয়েছে, দুনিয়াবী কাজের জন্য নয়। সুতরাং যারা মসজিদের ছাদে ধান শুকিয়েছে, তাদের উচিত আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তেগফার করা এবং ভবিষ্যতে এ থেকে বিরত থাকা।

প্রকাশ থাকে যে, মুসল্লিদের জন্য এ বিষয় না জেনে খতীব সাহেবের সাথে বির্তকে জড়ানো খুব অন্যায় হয়েছে। -তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪১৮; ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৭; মাজমাউল আনহুর ১/১৯০; আননাহরুল ফায়েক ১/২৮৮; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬

শেয়ার লিংক

রাহাত খান - চকবাজার, ঢাকা

৫২৯৩. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের তৃতীয় তলার কাজ কয়েকদিন আগে শেষ হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছিল, যা ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি মুর্দা বহনের খাটিয়াও ছিল। সেটি বেশ পুরোনো হওয়াতে এখন আর ব্যবহার করা হয় না। মসজিদের অন্য একটি স্টিলের খাটিয়া আছে, যা নিয়মিত ব্যবহার করা হয়।

আমি জানতে চাচ্ছি, মসজিদ কমিটি যদি চায়, তাহলে ঐ পুরোনো খাটিয়া কোনো কাঠের দোকানে বিক্রি করা জায়েয হবে কি?

মুসল্লিদের কেউ কেউ বলছে, মসজিদের জিনিস বিক্রি করা যায় না। সঠিক উত্তরটি জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

পুরানো খাটিয়া যদি আপনাদের মসজিদের প্রয়োজনে না আসে তাহলে মসজিদ কমিটি তা বিক্রি করে দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে বিক্রিত মূল্য মসজিদ ফান্ডে জমা হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৯

শেয়ার লিংক

সাদেক আলী - রায়পুর, সিরাজগঞ্জ

৫২৯৪. প্রশ্ন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিজেএমসি নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল লোকসানের কারণে বন্ধ ঘোষণা করেছে। এতে চাকরিরত সকলকে চাকরিশেষে প্রাপ্য গ্রাচুইটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে সরকার সবার প্রাপ্য অর্থের অর্ধেক নগদ চেক/ক্যাশ টাকা প্রদান করবে। বাকি অর্ধেক বাধ্যতামূলকভাবে সঞ্চয়পত্র প্রদান করবে। অন্যান্য সঞ্চয়পত্র সাধারণত যখন ইচ্ছা বিক্রয় করা যায়। কিন্তু এই সঞ্চয়পত্র একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিক্রয় করা যাবে না। তবে যেহেতু পাটকল শ্রমিকগণ বহুদিন বেতন-বোনাস না থাকার কারণে আর্থিক দুরবস্থায় নিপতিত। চাকরি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চাকরিহারা হয়ে আরো বিপদে নিপতিত হচ্ছে। তাই সরকার সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ প্রতি মাসে উত্তোলন করার সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। আগে থেকেই বেতন-বোনাস বঞ্চিত আর্থিক সংকটে নিপতিত পাটকল কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিকরা সবগুলো টাকা একসাথে হাতে পেলে কাজে লাগাতে পারত। কিন্তু অর্ধেক বাধ্যতামূলক সঞ্চয়পত্র প্রদানের কারণে মহা আর্থিক বিপদে নিপতিত হতে হচ্ছে। আমরা জানি সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ সুদ যা হারাম। কিন্তু এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বিক্রয় অযোগ্য বাধ্যতামূলকভাবে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশের কী হুকুম হবে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে উত্তর জানিয়ে  বাধিত করবেন।

উত্তর

সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ গ্রহণ করা জায়েয নেই। কারণ তা সুস্পষ্ট সুদ। যেমনটি আপনিও জানেন। আর কুরআন মাজীদ এবং হাদীস শরীফে সুদ গ্রহণের ভয়াবহতার কথা উল্লেখিত হয়েছে।

কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللهِ وَرَسُولِهِ.

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও; যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। যদি তা না কর (সুদের বকেয়া না ছাড়, সুদের কারবার অব্যাহত রাখ) তাহলে আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। [সূরা বাকারা (২) : ২৭৮-২৭৯]

অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَس.

যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে।                              [সূরা বাকারা (২) : ২৭৫]

নিম্নোক্ত কয়েকটি হাদীস পেশ করা হল-

(এক) হাদীস শরীফে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

اجْتَنِبُوا السّبْعَ المُوبِقَاتِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنّ؟ قَالَ: الشّرْكُ بِاللهِ، وَالسّحْرُ، وَقَتْلُ النّفْسِ الّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلّا بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا.

তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা। জাদু করা। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। সুদ খাওয়া...। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৬৬, ৬৮৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৯)

(দুই) হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ أَتَيَانِي، فَأَخْرَجَانِي إِلَى أَرْضٍ مُقَدَّسَةٍ، فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ مِنْ دَمٍ فِيهِ رَجُلٌ قَائِمٌ وَعَلَى وَسَطِ النَّهَرِ رَجُلٌ بَيْنَ يَدَيْهِ حِجَارَةٌ، فَأَقْبَلَ الرَّجُلُ الَّذِي فِي النَّهَرِ، فَإِذَا أَرَادَ الرَّجُلُ أَنْ يَخْرُجَ رَمَى الرَّجُلُ بِحَجَرٍ فِي فِيهِ، فَرَدَّهُ حَيْثُ كَانَ، فَجَعَلَ كُلَّمَا جَاءَ لِيَخْرُجَ رَمَى فِي فِيهِ بِحَجَرٍ، فَيَرْجِعُ كَمَا كَانَ، فَقُلْتُ مَا هَذَا؟ فَقَالَ: الَّذِي رَأَيْتَهُ فِي النَّهَرِ آكِلُ الرِّبَا.

আমি (স্বপ্নে) দেখলাম, আজ রাতে আমার কাছে দু’জন মানুষ এল এবং তারা আমাকে একটি পবিত্র ভূখণ্ডে  নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে একটি রক্তের নদীর কিনারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। দেখলাম, নদীতে একব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। আর নদীর কিনারে অপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে রয়েছে পাথর। যখন নদীর লোকটি কিনারে উঠতে চায় তখন কিনারে থাকা লোকটি তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করে। পাথরের আঘাতে লোকটি যেখানে ছিল পুনরায় সেখানে ফিরে যায়। এরপর সে আবারও নদীর কিনারে উঠতে চায়, এভাবে সে যখনই কিনারে উঠতে চায় তখনই তাকে পাথর মেরে যেখানে ছিল সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, একে? বললেন, রক্তের নদীতে অবস্থিত  যে লোকটিকে দেখেছেন সে হল সুদ ভক্ষণকারী।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০৮৫)

(তিন)  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ.

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহণকারী এবং সুদ প্রদানকারীর উপর লানত করেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৭)

অতএব, আপনাদের জন্য জরুরী হল, সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ সর্বাবস্থায়ই সুদ ও হারাম। ‘নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বাধ্যতামূলক বিক্রয় অযোগ্য’ এমন শর্ত থাকার কারণে সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ গ্রহণ করা জায়েয হয়ে যাবে না। কেননা যে সময়টায় তা বিক্রি করা যাবে না ঐ সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশই তো দিচ্ছে। লভ্যাংশ ব্যতীত পৃথক কোন উপঢৌকন তো সরকার দিচ্ছে না। আর এ লভ্যাংশটাই সুদ। তাহলে তা কীভাবে গ্রহণ করা জায়েয হতে পারে! আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সুদ এবং সকল প্রকার হারাম থেকে বিরত থাকার তৌফিক নসীব করুন-আমীন।

শেয়ার লিংক

আহসান হাবীব - উত্তরা, ঢাকা

৫২৯৫. প্রশ্ন

একদিন বাসা থেকে মসজিদে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে এক চাচা ডেকে বললেন, এই টাকাটা মসজিদে দিয়ে দিবে। আমি বললাম, চাচা! কীসের টাকা? তিনি বললেন, রাস্তায় পড়েছিল। তারপর আমি সেই টাকা মসজিদে দিয়ে দেই। এই কথা শুনে জনৈক ব্যক্তি বললেন, পড়ে পাওয়া টাকা মসজিদে দিতে নেই। মুফতি সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল, আসলেই কি পড়ে পাওয়া টাকা মসজিদে দিতে নেই? আমরা তো অনেক সময় পথে ঘাটে টাকা পেলে তা মসজিদে দিয়ে দেই। এ ব্যাপারে শরীয়তের সমাধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছেন। পড়ে পাওয়া টাকা মসজিদে দেওয়া বৈধ নয়। যথাযথ পন্থায় প্রচারের পর মালিকের সন্ধান না পেলে, তখন তা কোন গরিবকে সদকা করে দিবে। কিন্তু মসজিদে দেওয়া যাবে না। মসজিদে একমাত্র ব্যক্তির নিজ মালিকানাধীন হালাল টাকা প্রদান করা যায়।

-ফাতহুল কাদীর ৫/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৭৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আরিফ বিল্লাহ - সাতক্ষীরা

৫২৯৬. প্রশ্ন

একদিন বাজার থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথের মাঝে দেখলাম একটি দামী ঘড়ি পড়ে আছে। আমার ধারণা, এই ঘড়িটি যদি আমি উঠিয়ে না নিই, তাহলে তা নষ্ট হয়ে যাবে বা কোন ব্যক্তি তা নিয়ে নেবে। আসল মালিক তা পাবে না। আর আমি এক আলেমের কাছে শুনেছি কোন জিনিস যদি রাস্তা-ঘাটে পড়ে থাকে, আর ধারণা হয় যে, তা উঠিয়ে না নিলে কেউ তা নিয়ে নেবে বা নষ্ট হয়ে যাবে। আসল মালিক পাবে না। তাহলে ঐ জিনিস উঠিয়ে নেওয়া ওয়াজিব।

এখন মুফতি সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল,

(ক) তাহলে আমার উপর কি এমন মুহূর্তে ঘড়িটা উঠিয়ে নেওয়া ওয়াজিব? যদি ওয়াজিব হয়, তাহলে এলান (ঘোষণা) করার পদ্ধতি কী হবে? রাস্তায় তো একের পর এক মানুষ আসা-যাওয়া করতেই থাকে।

(খ) আবার অনেক সময় দেখা যায়, পথে-ঘাটে টাকা পড়ে থাকে, কিন্তু ব্যস্ততার মুহূর্তে তা উঠিয়ে নিয়ে মালিকের সন্ধান করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না এমন সময়েও বা কী করণীয়? অনেক সময় এমন হয়েছে যে টাকা পড়ে আছে কিন্তু এই ভয়ে তা উঠিয়ে নেইনি যে, উঠালে তো মালিকের সন্ধান করতে হবে। এলান করতে হবে। এমনটি করা কি ঠিক? এর কারণে কোন গুনাহ হবে কি না? দয়া করে উক্ত বিষয়গুলোর শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে উভয় জগতে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি যদি পড়ে থাকা ঘড়ি বা টাকা উঠিয়ে নিয়ে যথাযথভাবে মালিকের সন্ধান করতে পারবেন বলে নিজের উপর আস্থাশীল হন। এবং তা আপনার জন্য সম্ভব, আর না নিলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা খোয়া যেতে পারে এমন আশংকা হয়, তাহলে এ অবস্থায় তা উঠিয়ে নেওয়া আপনার উপর ওয়াজিব হবে। আর যদি মালিকের সন্ধানের ব্যাপারে আপনি নিজের উপর আস্থাশীল না হন, তাহলে তা উঠানো জরুরি নয়; বরং এক্ষেত্রে আপনার না উঠানোই উত্তম।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৬৬; আলইখতিয়ার ২/৪৮৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৭৬

শেয়ার লিংক

সাখাওয়াত - বোরহানুদ্দীন, ভোলা

৫২৯৭. প্রশ্ন

আমার বিবাহের পর আমার দাদী শাশুড়ি নানি শাশুড়ি ও খালা শাশুড়িরা আমাকে দেখার জন্য আমার রুমে চলে আসেন। তারা আমার মাহরাম কিনা-এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে এক খালা শাশুড়ি বলেন, তারা কামেলের বইতে পড়েছেন যে, তারা নাকি জামাইয়ের (আমার) মাহরাম। মুফতি সাহবের নিকট সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই।

উত্তর

দাদী শাশুড়ি ও নানী শাশুড়ী মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েয। তবে খালা শাশুড়ি মাহরাম নয়। তার সাথে দেখা দেয়া জায়েয হবে না।

উল্লেখ্য যে, আপনার খালা শাশুড়ি হয়ত নিজ মেয়ের জামাতার সাথে দেখা দেয়া জায়েয হওয়ার কথা পড়েছেন। বোনের মেয়ের জামাতার সাথে নয়।

-কিতাবুল আছল ৪/৩৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৭

শেয়ার লিংক

নোমানুর রহমান - লালখান বাজার, চট্টগ্রাম

৫২৯৮. প্রশ্ন

আমার চাচা তাবলীগ করেন। তিনি পর্দাপুশিদার ব্যাপারে বেশ যত্নবান। তিনি আমার চাচাতো বোনকে চাচাতো বোনের মায়ের মামার সামনে যেতে নিষেধ করেছেন এবং তার সাথে পর্দা করার কথা বলেছেন। আমার এক পরিচিত আলেমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, মায়ের মামার সাথে পর্দা করতে হয় না। আমি জানতে চাচ্ছি, তার কথা কি ঠিক? আর কাদের কাদের সাথে একজন পুরুষকে পর্দা করতে হয় না অর্থাৎ কাদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা বৈধ? এর একটি তালিকা দিলে আমার মত আরো অনেকে উপকৃত হত।

উত্তর

উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। মায়ের মামা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাই তার সাথে পর্দা নেই। আর একজন পুরুষের জন্য যে সব নারীদের সাথে পর্দা নেই, অর্থাৎ মাহরাম নারীদের তালিকা নিম্নরূপ :

* মা, দাদী, নানী, দাদী ও নানীর মা এবং তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলাগণ।

* মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে এবং তাদের অধস্তন কন্যা সন্তানরা।

* বোন। (সহোদরা, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়-সকল বোন এর অন্তর্ভুক্ত)

* ভাইয়ের মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ের মেয়ে ও তাদের অধস্তÍনরা। এবং বোনের মেয়ে, বোনের মেয়ের মেয়ে ও তাদের অধস্তÍনরা। (বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় ভাই ও বোনের মেয়েও এর অন্তর্ভুক্ত)

* ফুফু। (বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় ফুফুও এর অন্তর্ভুক্ত)

* খালা। (বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় খালাও এর অন্তর্ভুক্ত)

* সৎ মা এবং দুধ পিতার স্ত্রী।

* আপন ছেলে ও দুধ সম্পর্কের ছেলের স্ত্রী, নাতির স্ত্রী এবং অধস্তন সন্তানের স্ত্রীরা।

* দুধ মা, দুধ নানী, দুধ দাদী এবং তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলাগণ।

* দুধ বোন, দুধ ভাইয়ের মেয়ে, দুধ বোনের মেয়ে।

* দুধ সম্পর্কের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে এবং তাদের অধস্তন কন্যা সন্তানেরা।

* দুধ পিতার বোন।

* শাশুড়ি (স্ত্রীর আপন মা), দাদী শাশুড়ি, নানী শাশুড়ি এবং তাদের ঊর্ধ্বতন মহিলাগণ এবং স্ত্রীর দুধ মা, দুধ দাদী এবং দুধ নানী।

* স্ত্রীর অন্য ঘরের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে এবং তাদের অধস্তনরা।

-সূরা নিসা : ২৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৪৫; মুসতাদরাক, হাকিম, হাদীস ৩২৪৩কিতাবুল আছল ৪/৩৫৭-৩৬০; ফাতওয়া খানিয়া ১/৩৬০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/১০৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩

শেয়ার লিংক