সিদ্দিকুর রহমান - শ্যামলি, ঢাকা

৪২৪৪. প্রশ্ন

আমি চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করি। অনেক সময় এমন হয় যে, অযু থাকতেই মাসেহের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। এখন জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার জন্য পুনরায় অযু করা আবশ্যক নাকি শুধু মোজা খুলে পা ধুয়ে নিলেই চলবে?

 

উত্তর

অযু থাকা অবস্থায় যদি মাসেহের সময়সীমা শেষ হয়ে যায় তাহলে মোজা খুলে উভয় পা ধুয়ে নিলেই চলবে। পুনরায় অযু করা আবশ্যক নয়। তবে নতুন করে অযু করে নেওয়া উত্তম।

-কিতাবুল আসার, বর্ণনা ১৫; কিতাবুল আছল ১/৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪১৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭৬

শেয়ার লিংক

নাফীসা তাসনীম - মগবাজার, সিলেট

৪২৪৫. প্রশ্ন

আমি একজন গৃহিণী। বাসায় বড় মাছ কাঁটতে গেলে অনেক সময় কাপড়ে মাছের রক্ত লাগে। সাধারণত এমন হলে আমি সে কাপড় পরিবর্তন করে নামায পড়ি। কিন্তু একদিন ভুলবশত মাছের রক্তযুক্ত কাপড় পরেই সেদিনের আসরের নামায পড়ে ফেলি। পরে মাগরিবের সময় স্মরণ হলে সে কাপড় পরিবর্তন করি। এখন জানার বিষয় হল, আমার সেদিনের আসর নামায কি আদায় হয়নি? এখন কি তা কাযা করতে হবে?

 

উত্তর

মাছের রক্ত অপবিত্র নয়। কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। সুতরাং মাছের রক্ত মাখা কাপড় নিয়ে যে নামায পড়েছেন তা সহীহ হয়েছে। তা কাযা করতে হবে না। তবে কাপড় যে পরিষ্কার থাকা উচিত তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস ২০৩৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/১৯৫; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৪

শেয়ার লিংক

আবদুল মুয়ীদ - মধুখালী, ফরিদপুর

৪২৪৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে বাজার থেকে গোশত কিনে ফেরার পথে গোশতের ব্যাগ চুয়ে আমার কাপড়ে কিছু রক্ত লাগে। যোহরের নামাযের সময় মসজিদে গেলে একজন বললেন, রক্ত যেহেতু নাপাক তাই এই কাপড়ে আপনার নামায হবে না। তখন আমি সেই কাপড় পরিবর্তন করে নামায পড়ি। এখন আমি জানতে চাই, তার কথা কি ঠিক? গোশতের মধ্যে থাকা রক্ত কি নাপাক?

 

উত্তর

জবাইয়ের সময় যে রক্ত বের হয় কেবল সে প্রবাহিত রক্তই নাপাক। গোশতের ভেতর থেকে যে রক্ত বের হয় তা নাপাক নয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কাপড়ে প্রবাহিত রক্ত লেগে না থাকলে গোশত থেকে বের হওয়া রক্ত লাগার কারণে কাপড় নাপাক হয়নি।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/১২৩; আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ২/১৪৯; বাদায়েউস সনায়ে ১/১৯৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৬৭; রদ্দুল মুহতার ১/৩১৯

শেয়ার লিংক

আহমাদ জারীফ - মিরপুর, ঢাকা

৪২৪৭. প্রশ্ন

বেশ কিছুদিন যাবৎ একটি বিষয়ে সংশয়ে ভুগছি। অযুতে চেহারা ও হাত ধোয়ার সময় কিছু পানি কাপড়ে পড়ে ভিজে যায়। আবার কখনো কখনো অযুর পরপরই নামাযে দাঁড়িয়ে যাই। টাওয়াল ব্যবহার না করার কারণে তখন হাতের অবশিষ্ট পানিতে জামার আস্তিন ভিজে যায়। দাড়ি থেকেও পানি পড়তে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, অযুর পানিতে কাপড় ভেজা অবস্থায় নামায পড়লে নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি? আশা করি দ্রুত জানিয়ে সংশয় দূর করবেন।

 

উত্তর

অযুর পানি অপবিত্র নয়। তা কাপড়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয় না। তাই অযুর পানি কাপড়ে লাগলে সে কাপড় পরে নামায পড়া যাবে। তবে যেহেতু তা ব্যবহৃত পানি তাই কাপড়ে যেন অধিক পরিমাণে না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখা ভাল।

-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/২৩৭; বাদায়েউস সনায়ে ১/২১২; ফাতহুল কাদীর ১/৭৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৭৮

শেয়ার লিংক

ইয়াসিন - টেকনাফ

৪২৪৮. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তির উপর গোসল ফরয হয়। তবে তিনি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে সক্ষম নন। কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিও আছে। জানার বিষয় হল, উক্ত লোকটি গোসলের জন্য যে তায়াম্মুম করবে সেটাই কি অযুর জন্য যথেষ্ট হবে। নাকি ভিন্নভাবে অযু করতে হবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গোসলের জন্য তায়াম্মুম করলে তা গোসল এবং অযু উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে। ভিন্নভাবে অযু করতে হবে না। তবে পরবর্তীতে অযু ভঙ্গের কোনো কারণ দেখা দিলে তখন অযু করতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮৮; কিতাবুল আছল ১/৮৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/২৩২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইবরাহীম - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৪২৪৯. প্রশ্ন

মুফতী সাহেব! কিছুদিন পূর্বে এক মাহফিলে ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছিলেন। সূরা ফাতেহার اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ পর্যন্ত পড়ার পর তার কাশি আসে। এরপর ভুলে বাকী দুই আয়াত না পড়েই অন্য সূরা পড়েন। নামায শেষে এটা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলে অন্য একজন বলে দেন, নামায হয়ে গছে, কোনো সমস্যা হয়নি। এর পরও বিষয়টি নিয়ে অনেকে সন্দেহে আছে। মুফতী সাহেবের কাছে আবেদন মাসআলাটির সঠিক সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

 

উত্তর

সূরা ফাতেহার কিছু অংশ ভুলে ছুটে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু দুই আয়াত ছুটে গেছে তাই সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। অতএব সাহু সিজদা না করে থাকলে ঐ নামাযটি পুনরায় আদায় করে নেওয়া ওয়াজিব।

-রদ্দুল মুহতার ১/৪৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪

শেয়ার লিংক

রাকিবুদ্দীন - সদর, কুমিল্লা

৪২৫০. প্রশ্ন

আমরা কয়েকজন মিলে একদিন বাসায় জামাতের সাথে এশার নামায আদায় করি। ইমাম ভুলবশত দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে সূরা ফাতিহার তিন আয়াত নিম্ন আওয়াযে পড়ে ফেলে। স্মরণ হওয়ার পর পুনরায় সূরা ফাতিহা উচ্চস্বরে পড়া শুরু করে। নামায শেষে সাহু সিজদা না করেই সালাম ফিরিয়ে দিয়েছে। আমার জানার বিষয় হল, আমাদের সেই নামাযটি কি সহীহ হয়েছিল? না হলে করণীয় কি?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এশার নামাযে ভুলবশত তিন আয়াত নিম্নস্বরে পড়ে ফেলার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল। যেহেতু সাহু সিজদা করা হয়নি তাই ঐ নামাযটি পুনরায় পড়ে নেওয়া ওয়াজিব।

উল্লেখ্য যে, নামাযে কোনো ধরনের সমস্যা হলে ওয়াক্ত বাকি থাকতেই কোনো নির্ভরযোগ্য আলেম থেকে মাসআলা জেনে নেওয়া কর্তব্য। যেন নামায দোহরানোর প্রয়োজন হলে ওয়াক্তের মধ্যেই তা দোহরানো যায়।

-কিতাবুল আছল ১/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/৮১

শেয়ার লিংক

মাহমুদ হাসান - সদর, কুমিল্লা

৪২৫১. প্রশ্ন

যোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত দুই রাকাত আদায় করে যদি নামাযে শরীক হয়ে যাই তাহলে নামাযের পর বাকি দুই রাকাত আদায় করে নিলেই হবে, না পুনরায় চার রাকাত আদায় করতে হবে?

 

 

উত্তর

যোহরের পূর্বের চার রাকাত নামায এক সালামে একত্রে পড়াই সুন্নত। তাই দুই রাকাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে দিলে ফরয নামাযের পর পূর্ণ চার রাকাত পড়তে হবে। তবে এ চার রাকাত যোহরের পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নতের পর পড়া উত্তম।

-মারাকিল ফালাহ পৃ. ২৪৫; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৯৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৪

শেয়ার লিংক

উম্মে আইমান - ফরিদপুর

৪২৫২. প্রশ্ন

আমি অন্তঃসত্ত্বা। বর্তমানে আমার শরীর অস্বাভাবিক ভারি হয়ে যাওয়ার কারণে নামাযে মাটিতে সেজদা করতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়। তাই কিছুদিন ধরে সেজদার জায়গায় বালিশ রেখে তার উপর সেজদা করছি। আগে আম্মুকেও এভাবে নামায পড়তে দেখেছি। জানতে চাই, আমার এভাবে নামায পড়া ঠিক হচ্ছে কি না? না হলে এ অবস্থায় আমি কীভাবে নামায পড়ব?

 

উত্তর

মাটিতে সেজদা করতে না পারলে বিধান হল, ইশারায় সেজদা করা। আপনিও ইশারায় সেজদা করবেন। ইশারায় সেজদা আদায়ের জন্য রুকুর চেয়ে একটু বেশি ঝুঁকবেন। অবশ্য এ অবস্থায় বালিশ বা নীচু কিছুর উপর সেজদা করা অনুত্তম হলেও নামায হয়ে যায়। তাই আপনার উক্ত নামাযগুলোও আদায় হয়ে গেছে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস ২৮৩২; কিতাবুল আছল ১/১৯০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৯৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২২; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৩

শেয়ার লিংক

হাসান আহমাদ - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৪২৫৩. প্রশ্ন

একদিন আমি যোহরের নামাযে ইমামতি করছিলাম। তৃতীয় রাকাতের পর চতুর্থ রাকাতের জন্য না দাঁড়িয়ে ভুলে বসে পড়ি। কিন্তু তখনি পেছন থেকে লোকমা শুনে সাথে সাথে উঠে পড়ি। বসা অবস্থায় কিছুই পড়ার সুযোগ হয়নি। এরপর সেজদায়ে সাহু ছাড়াই নামায শেষ করি। জানতে চাই, আমার নামায কি শুদ্ধ হয়েছে? আর আমার উপর কি সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছিল?

 

উত্তর

উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী ঐ বৈঠকে যতটুকু সময় বিলম্ব হয়েছে তার জন্য সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। কেননা এক্ষেত্রে তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হলেই সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। -

রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৯, ৫০৬; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৬৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৫৮

শেয়ার লিংক

হাসান আহমাদ - উত্তরা, ঢাকা

৪২৫৪. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির কপালে ফোঁড়া হয়েছে। তাই সে কপালের উপর সেজদা করতে সক্ষম না হওয়ায় নাকের উপর সেজদা করে। জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির নাকের উপর সেজদা করার কারণে তার নামায হয়েছে কি না?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি যেহেতু জমিনে কপাল রাখতে সক্ষম নয় তাই তার জন্য শুধু নাকের উপর সেজদা করা জায়েয। এতে তার নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে সাধারণ অবস্থায় সেজদাতে কপাল ও নাক উভয়টিই জমিনে রাখা জরুরি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭০

শেয়ার লিংক

উম্মে আবদুল্লাহ - ময়মনসিংহ

৪২৫৫. প্রশ্ন

মহিলাদের মাসিক চলাকালীন অবস্থায় সেজদার আয়াত শুনলে সেজদা ওয়াজিব হবে কি এবং তা কি কাযা করতে হবে?

 

 

উত্তর

মাসিক চলাকালে সেজদার আয়াত শুনলে সেজদা ওয়াজিব হয় না। তাই পরবর্তী সময়ে তা কাযাও করতে হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫; বাদায়েউস সনায়ে ১/৪৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৮

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম - নোয়াখালী

৪২৫৬. প্রশ্ন

আমি লঞ্চে ঢাকা যাতায়াত করি। যাত্রীদের মধ্যে অনেককে দেখেছি, তারা জামাতের সাথে নামায আদায়ের জন্য আযান দেওয়াকে আবশ্যক মনে করে। এখন আমি জানতে চাচ্ছি, মহল্লার মসজিদে জামাতের সাথে নামায আদায়ের জন্য যেভাবে আযান দিতে হয়, সেভাবে লঞ্চের মধ্যে জামাতের সাথে নামায আদায়ের জন্যও কি আযান দিতে হবে?

 

উত্তর

হাদীস শরীফে এসেছে, মালিক বিন হুয়াইরিছ রা. বলেন, এমন দু’জন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল, যারা সফরে বের হওয়ার ইচ্ছা করেছে। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

إِذَا أَنتُمَا خَرَجْتُمَا فَأَذِّنَا ثُمّ أَقِيمَا، ثُمّ لِيَؤُمّكُمَا أَكْبَرُكُمَا.

তোমরা যখন সফর করবে তখন (নামাযের সময়) আযান ও ইকামত দিবে। এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩০)

এ সকল বর্ণনার ভিত্তিতে ফকীহগণ বলেন, সফর অবস্থায় আযান-ইকামতের সাথে জামাতে নামায পড়াই সুন্নাহসম্মত ও উত্তম পন্থা। তবে সফর অবস্থায় জামাতে

নামাযের জন্য শুধু ইকামত দেওয়াও যথেষ্ট। প্রখ্যাত তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন- تُجْزِيهِ إِقَامَةٌ فِي السّفَرِ.

সফরের মধ্যে ইকামত দেয়াই যথেষ্ট। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৮৯৮)

-কিতাবুল আছল ১/১১১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৩২; বাদায়েউস সনায়ে ১/২৬৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৫০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ওয়াফী - উত্তরা, ঢাকা

৪২৫৭. প্রশ্ন

ভুলবশত বিতরের নামাযে দুআয়ে কুনূত জোরে পড়ার দ্বারা সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না?

 

উত্তর

দুআয়ে কুনূত জোরে পড়লে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। তবে দুআয়ে কুনূত আস্তে পড়া উত্তম।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/৬

শেয়ার লিংক

তাহমীদ - ভোলা

৪২৫৮. প্রশ্ন

আমি একদিন যোহরের প্রথম রাকাতে ভুলে শুধু একটি সিজদা করি। আরেক সিজদা ভুলে ছুটে যায়। এবং নামাযেই ভুল স্মরণ হওয়ায় ছুটে যাওয়া সিজদা আদায় না করেই সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করি। আমার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে নাকি আবার পড়ে নিতে হবে?

 

উত্তর

নামাযের প্রতি রাকাতে দুটি সিজদা আদায় করা ফরয। কোনো একটি সিজদা বাদ গেলে নামায আদায় হয় না। তাই আপনার ঐ নামায সহীহ হয়নি। তা পুনরায় আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু সাহু সিজদা করা যথেষ্ট নয়।

উল্লেখ্য যে, এধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সিজদা আদায় করে নেওয়া। অতপর অবশিষ্ট নামায পূর্ণ করে নামায শেষে সাহু সিজদা করা।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা,  হাদীস ৪৪৩২; কিতাবুল আছল ১/২০৬, ২০৭; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৭, ২৯; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৩; বাদায়েউস সনায়ে ১/৫৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/৯১

শেয়ার লিংক

নাঈম - ভোলা

৪২৫৯. প্রশ্ন

আমি ঈদের দিন প্রথম খুৎবার  শুরুতে ৯ তাকবীর এবং দ্বিতীয় খুৎবার শুরুতে ৭ তাকবীর বলে খুৎবা শুরু করি। খুৎবা শেষে একজন মুসল্লি আমাকে বলল, শরীয়তে এই তাকবীরের কোনো ভিত্তি নেই। এখন আমি জানতে চাচ্ছি যে, উক্ত তাকবীর বলাটা শরীয়তের দৃৃষ্টিতে কেমন হয়েছে?


 

উত্তর

ঈদের প্রথম খুৎবার শুরুতে ৯ তাকবীর এবং দ্বিতীয় খুৎবার শুরুতে ৭ তাকবীর বলার কথা কোনো কোনো আসারে বর্ণিত হয়েছে। উবায়দুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ বিন উতবা রা. বলেন,

السّنّةُ التّكْبِيرُ عَلَى الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْعِيدِ، يَبْدَأُ خُطْبَتَهُ الْأُولَى بِتِسْعِ تَكْبِيرَاتٍ قَبْلَ أَنْ يَخْطُبَ، وَيَبْدَأُ الْآخِرَةَ بِسَبْعٍ.

ঈদের দিন মিম্বরে উঠে প্রথম খুৎবার শুরুতে ৯ বার এবং দ্বিতীয় খুৎবার শুরুতে ৭ বার তাকবীর বলা সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৫৬৭৩)

তবে নির্দিষ্ট সংখ্যক তাকবীর না বললেও খুৎবার হক আদায় হয়ে যাবে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়।

-কিতাবুল উম্ম ১/২৭৩; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৫

শেয়ার লিংক

আলাউদ্দিন - নবীনগর

৪২৬০. প্রশ্ন

আমি একদিন ফজরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পাই। তখন আমি সুন্নত না পড়েই জামাতে শরীক হয়ে যাই। নামায শেষে এক ব্যক্তি বললেন সূর্যোদয়ের পর নামায পড়ে নিও। আমি জানতে চাই ঐ ব্যক্তির কথাটি কি ঠিক?
 

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তির কথা সঠিক। ফজরের সুন্নত সময়মত পড়তে না পারলে সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নেওয়া উত্তম। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيِ الفَجْرِ فَلْيُصَلِّهِمَا بَعْدَ مَا تَطْلُعُ الشّمْسُ.

যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত (সময়মত) পড়েনি সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নেয়। (জামে তিরমিযী হাদীস ৪২৩)

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস ৪০১৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ ৪/৩৯৫; কিতাবুল আছল ১/১৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৩৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০২; মাআরিফুস সুনান ৪/৮৮

শেয়ার লিংক

রুম্মান - ভোলা

৪২৬১. প্রশ্ন

ইমাম সাহেব রুকু থেকে ওঠার সময় শুধু سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলবে নাকি তার পর رَبّنَا لَكَ الحَمْدُ -ও বলবে?

 

উত্তর

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ইমামের জন্য রুকু থেকে উঠার সময় سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলার পর رَبّنَا لَكَ الحَمْدُ বলা উত্তম।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৯৫; শরহু মাআনিল আসার ১/১৭২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩১৯; আসসিআয়া ২/১৮৭; রদ্দুল মুহতার ১/৪৭৭; ই‘লাউস সুনান ৩/১৬

শেয়ার লিংক

ইমরান - ঢাকা

৪২৬২. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের সাথেই একটি মাদরাসা আছে। অনেক সময় মুয়াযযিন সাহেব উপস্থিত থাকেন না। তখন মাদরাসার কোনো বুঝমান নাবালেগ ছাত্র আযান দিয়ে দেয়। আমি জানতে চাচ্ছি তার আযান কি নামাযের জন্য যথেষ্ট হবে?

 

উত্তর

আযান যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং নামাযের আহ্বান তাই বালেগ পুরুষদেরই আযান দেওয়া উচিত। তবে বুঝমান নাবালেগ ছেলে আযান দিলে তাও আদায় হয়ে যাবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, হাদীস ১৮১৪; কিতাবুল আছল ১/১১৫; বাদায়েউস সনায়ে ১/৩৭২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯১

শেয়ার লিংক

হাবীবুর রহমান - নোয়াখালী

৪২৬৩. প্রশ্ন

অনেক মানুষকে দেখি ফজরের জামাত দাঁড়ানোর পর কাতারে এসে সুন্নত নামায পড়ে। তাদের এ কাজটি কি ঠিক?
 

উত্তর

ফযরের সুন্নত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। তাই জামাত শুরু হয়ে গেলেও তা পড়া যায়। তবে জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পর কাতারে দাঁড়িয়ে তা পড়া যাবে না। কেননা কাতারের সাথে দাঁড়িয়ে সুন্নাত পড়া মাকরূহ তাহরীমী। তাই এ সময়ে সুন্নত পড়তে হলে বারান্দায় বা ভিন্ন জায়গায় গিয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য যে, ফজরের সুন্নত আদায় করে যদি ইমামের সাথে দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সুন্নত পড়ে জামাতে শরীক হবে। আর যদি দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে সুন্নত না পড়েই জামাতে শরীক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সূর্যোদয়ের পর সুন্নত পড়ে নিবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস ৬৪৮১; শরহু মাআনিল আসার ১/২৫৬; আলজামেউস সগীর, ইমাম মুহাম্মাদ পৃ. ৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫৬

শেয়ার লিংক

নাফিছা জুয়াইরিয়া - সেগুনবাগিচা, তোপখানা রোড, ঢাকা

৪২৬৪. প্রশ্ন

যে দেশে সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই সূর্যোদয় হয়ে যায় বা সূর্য অনেকদিন পর্যন্ত অস্ত যায় না বা উদয় হয় না। সেখানে নামাজের সময় কীভাবে নির্ধারণ করা হবে? বিশেষ করে সেখানে রোযা কীভাবে রাখা হবে? জানানোর অনুরোধ রইল।

 

উত্তর

যেসব এলাকায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় পাওয়া যায় না যেমন : সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই সূর্য উদয় হয়ে যায় বা অনেক দিন সূর্য উদয় হয় না বা অস্ত যায় না সেসব এলাকার মুসলমানদের উপরও প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা এবং রমযান মাসে রোযা রাখা ফরয। এসব এলাকায় নামায-রোযার সময় নির্ধারণের জন্য করণীয় হল, তাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী যে এলাকায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় পাওয়া যায় সে এলাকার সময়ের সাথে মিলিয়ে তারা নামায-রোযা আদায় করবে।

-আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৩/৪৩; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/১৫৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নোমান হালীম - নোয়াপুর, পশুরাম, ফেনী

৪২৬৫. প্রশ্ন

আমাদের কবরস্থানের মাটি বেশ নরম। পাশে বিরাট পুকুর। বেশি বৃষ্টি হলে কবরের উপরের মাটি পানির সাথে গড়িয়ে পুকুরে পড়ে যায়। এতে কবরগুলো গর্ত হয়ে যায়। এবার রমযানে অনেক বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমার বাবা ও ভাতিজার কবর দুটো এমন হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি অন্য জায়গা থেকে কিছু মাটি এনে কবর দুটো ভরাট ও উচুঁ করে দিচ্ছিলাম। একজন মুরুব্বী এটা দেখে বললেন, পুরনো কবরে নতুন করে মাটি ভরাট করা জায়েয নেই। জানতে চাচ্ছি এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা কী? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

ঐ ব্যক্তির কথাটি ঠিক নয়। বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে কবরের মাটি সরে গেলে নতুন করে মাটি দিয়ে তা ভরে দেয়া জায়েয আছে।৬

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৭২; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/২৭৬; মাজমাউল আনহুর ১/২৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬

শেয়ার লিংক

হাসান মাহদুদ - বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী

৪২৬৬. প্রশ্ন

এক অন্তঃসত্ত্বা নারী রমযানের প্রথম দিকে চার-পাঁচটি রোযা রেখেছে। রোযা রাখার কারণে অস্বাভাবিক পানিশূন্যতাসহ তার বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এবং বর্তমানের গর্ভকালীন মেয়াদ অনুযায়ী দিনে গর্ভস্থ সন্তানের যে পরিমাণে মুভিং ও নড়া-চড়া হওয়ার কথা তাও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় ঐ নারীর জন্য কি রোযা না রাখার অনুমতি আছে?

 

উত্তর

হ্যাঁ, ঐ নারীর জন্য এ অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। মহিলাটি এখন রোযা না রাখলে পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে তা কাযা করে নিবে।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ৭১৫; কিতাবুল আছল ২/১৭২; মুখতাসারুত তহাবী পৃ. ৫৪; আহকামুল কুরআন জাস্সাস ১/১৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯

শেয়ার লিংক

উম্মে যাকওয়ান - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২৬৭. প্রশ্ন

আমার কাছে ডায়মন্ডের কিছু অলংকার আছে। যেগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ব্যবহার করি। সাধারণত আলমারিতেই পড়ে থাকে। এ অলংকারগুলোর যাকাত দিতে হবে কি? আমি কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছি। একেকজন একেক রকম কথা বলে। বিষয়টি নিয়ে আমি পেরেশানিতে আছি।

আরেকটি বিষয় হল, যদি এগুলোর যাকাত দিতে হয় তাহলে কোন্ মূল্য হিসেবে যাকাত দিব? ক্রয়মূল্য, না বিক্রয়মূল্য? ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মাঝে ব্যবধান তো অনেক বেশি।

 

উত্তর

আপনার উক্ত ডায়মন্ডের অলংকারের যাকাত দিতে হবে না। কারণ ডায়মন্ডের অলংকার ব্যবসার জন্য না হলে তার উপর যাকাত ফরজ হয় না। তবে যদি এর সাথে স্বর্ণ বা রুপা মিশ্রিত থাকে এবং তা নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে ঐ স্বর্ণ-রুপার যাকাত দিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২২৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৩

শেয়ার লিংক

হাবীবুল্লাহ (নরসিংদী) - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২৬৮. প্রশ্ন

মুহতারাম! নিজের সৎ মাকে কি যাকাত দেওয়া যাবে? আমার পিতা ও চাচারা তাদের সৎ ভাই-বোন ও সৎ মাকে যাকাত দেন। ভাই-বোনকে যাকাত দেওয়া যায়, এটা আমরা জানি। কিন্তু সৎ মাকে যাকাত দেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না- এ বিষয়ে সন্দেহে আছি। দয়া করে জানাবেন।

 

উত্তর

সৎ মা অর্থাৎ বাবার স্ত্রী যদি গরীব হয় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয। তবে পিতা যদি স্বচ্ছল হন এবং তিনি তার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ পরিপূর্ণভাবে আদায় করেন তাহলে উক্ত সৎ মাকে যাকাত দিবে না। কেননা যাকাতটা মূলত এমন গরীবের হক, যার চলার তেমনি কোনো ব্যবস্থা নেই।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২১১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬

শেয়ার লিংক

মোস্তফা কামাল - উত্তরা, ঢাকা

৪২৬৯. প্রশ্ন

মুহতারাম, আমার বড় ভাই একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। তার এক ছেলে মাদরাসায় পড়াশুনা করে এবং সে বালেগ। কিন্তু ছেলে বাবার অমতে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় মাদরাসায় পড়াশুনা করার কারণে তিনি ছেলের পড়াশুনার খরচ বহন করেন না। আর এ ব্যাপারে তিনি খুবই কঠোর। এহেন পরিস্থিতিতে আমি কি ভাতিজার পড়াশুনার খরচের জন্য তাকে যাকাত দিতে পারব?

 

উত্তর

আপনার বড় ভাই যদি তার উক্ত ছেলের খরচাদী না দেয় এবং ছেলের নিকটও নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে তাহলে আপনি তাকে যাকাত দিতে পারবেন। কেননা ভাতিজাকে যাকাত দেওয়া জায়েয। বরং হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী আপনি এক্ষেত্রে দ্বিগুণ ছাওয়াব পাবেন। সাদকার ছাওয়াব এবং আত্মীয়তার হক আদায়ের ছাওয়াব।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৬৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; বাদায়েউস সনায়ে ২/১৫৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪২

শেয়ার লিংক

উম্মে আফীফ - ফরিদপুর

৪২৭০. প্রশ্ন

গত রমযানে আমি আমার বাবার বাড়ীর এলাকায় এক দরিদ্র মহিলাকে যাকাতের কাপড় দেই। তার স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও শয্যাশায়ী। খুবই অভাব অনটনে তাদের সংসার চলে। কিন্তু পরে তার সাথে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি, কিছুদিন আগে তার স্বামী পঞ্চাশ হাজার টাকার সরকারী অনুদান পেয়েছে, যার পুরোটাই সে সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে জমা রেখেছে।

আমার প্রশ্ন, এ অবস্থায় কি আমার যাকাত আদায় হয়েছে? না হয়ে থাকলে এখন আমার কী করণীয়? উল্লেখ্য, তার স্বামীর আর্থিক অনুদান প্রাপ্তির বিষয়টি যাকাত প্রদানের সময় আমার জানা ছিল না।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার যাকাত আদায় হয়ে গেছে। কেননা আপনি তাকে দরিদ্র মনে করেই যাকাত দিয়েছেন। এছাড়া উক্ত মহিলার স্বামী যাকাতের নেসাব সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও মহিলা তো দরিদ্র। তাই মহিলাকে যাকাত দেওয়া ঠিক হয়েছে।

প্রকাশ থাকে যে, স্বামী যদি স্ত্রীর যথাযথ ভরণ-পোষণ করে তবে তার জন্য বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যাকাত গ্রহণ করা উচিত নয়।

-কিতাবুল আছল ২/১২৪; বাদায়েউস সনায়ে ২/১৬৩, ১৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯

শেয়ার লিংক

আলমগীর হুসাইন - বাকৃবি, ময়মনসিংহ

৪২৭১. প্রশ্ন

১. আমি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট বিভাগে কর্মরত। এ বছর ব্যাংকের কিছু জটিলতার কারণে সকল কর্মকর্তার জুন মাসের সেলারি রমযানের পূর্বেই (মে মাসের শেষে)  একসাথে ব্যাংক থেকে উঠিয়ে আমার কাছে রাখা হয়। এর মধ্যে আমার সেলারিও ছিল। এমডি স্যারের নির্দেশ ছিল, নির্ধারিত সময়ে (জুনের ২০ তারিখে) সকল কর্মকর্তার সেলারি পরিশোধ করা হবে। এর পূর্বে কারো সেলারি দেওয়া যাবে না। সে হিসেবে ২০ তারিখেই সকলের সেলারি দেয়া হয়। আমার সেলারিও ২০ তারিখেই নিয়েছি। এর পূর্বে প্রায় একমাস টাকাটা আমার কাছেই ছিল। তবে এমডি স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী আমি তা ২০ তারিখের পূর্বে ব্যবহার করিনি।

আমি যাকাতের হিসাব করি রমযানের ১ তারিখে। রমযানের ১ তারিখে (২৮শে মে) জুন মাসের সেলারি আমার কাছেই ছিল। তবে ২০শে জুনের পূর্বে তা ব্যবহারের অনুমতি ছিল না।

এখন আমার প্রশ্ন হল, গত বছরের যাকাতের হিসাবে জুন মাসের সেলারি হিসাব হবে কি না?

২. কয়েকজনর কাছে আমার বেশকিছু টাকা পাওনা আছে। এর মধ্যে কিছু টাকা ফেরৎ পাওয়া নিশ্চিত। আর কিছু টাকা ফেরৎ পাওয়া না পাওয়া উভয় সম্ভবনা আছে। কিছু টাকা ফেরৎ না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

যাকাতের হিসাব করার সময় পাওনা টাকাগুলোর হিসাব করতে হবে কি না? যে টাকাগুলো ফেরত না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি সেগুলোরও কি হিসাব করতে হবে? বিস্তারিত জানানোর সবিনয় অনুরোধ করছি।

উত্তর

না, গত বছরের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে জুন মাসের বেতন হিসাব করতে হবে না। কেননা রমযানের ১ম তারিখ (২৮শে মে) আপনারসহ সকল কর্মকর্তার জুন মাসের বেতনের টাকা আপনার কাছে আমানত হিসেবে ছিল। কর্তৃপক্ষ যেহেতু ২০ই জুনের পূর্বে তা ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি তাই ঐ টাকাগুলো কর্তৃপক্ষের মালিকানাতেই ছিল। ঐ টাকার যাকাত তাদেরকেই আদায় করতে হবে, আপনাকে নয়।

২. যাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে মানুষের কাছে পাওনা টাকা-পয়সারও হিসাব করতে হয়। তবে কোনো পাওনা টাকা যদি এমন হয়, যা ফেরৎ না পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে যায় তাহলে সে টাকার যাকাত আদায় করতে হবে না। এই ঋণ পরে কখনো যদি হস্তগত হয় তাহলে সে সময় থেকে এর যাকাত দিবে। বিগত বছরের যাকাত আদায় করতে হবে না। -বাদায়েউস সনায়ে ২/৮৮; ফাতাওয়া কাযীখান ১/২৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৬

শেয়ার লিংক

ইব্রাহীম খলীল - তিস্তা

৪২৭২. প্রশ্ন

আমাদের গ্রাম তিস্তা নদীর পারে অবস্থিত। গ্রামের জামে মসজিদটি আনুমানিক ১২ বছর পূর্বে নদী ভাংগনে হারিয়ে যায়। এরপর থেকে গ্রামের লোকেরা পাশের এলাকার মসজিদে নামায পড়তে থাকে। পাশের এলাকার মসজিদটি বড় এবং নিকটে হওয়ার কারণে নতুন করে আর মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি।

গত বৎসর আমাদের গ্রাম থেকে সামান্য দূরে তিস্তা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা হয় এবং সে লক্ষ্যে আমাদের গ্রামের উপর দিয়ে বড় করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এতে করে নদীর হারিয়ে যাওয়া অনেক জমির সাথে মসজিদের জমিটিও উদ্ধার হয়।

ইতিমধ্যেই ব্রিজকে কেন্দ্র করে ঐ রাস্তার উপর বেশ কিছু দোকানপাট হয়ে গেছে এবং ব্রিজটি শহরের পাশে হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে সেখানে বড় আকারের মার্কেট হতে পারে।

যেহেতু মসজিদের জমিটি রাস্তার পাশেই অবস্থিত, তাই এলাকাবাসী মসজিদটির পুনঃনিমার্ণের সময় নিচতলাকে মার্কেটের জন্য রেখে দ্বিতীয় তলা থেকে মসজিদ নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। হুজুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, এভাবে মসজিদের নিচতলাকে মার্কেটের জন্য রেখে দেওয়া যাবে কি?

 

উত্তর

পুরাতন মসজিদের ঐ জায়গা উদ্ধারের পর তাতে নিচতলা থেকেই মসজিদ করতে হবে। পুনঃনির্মাণের সময় নিচতলায় মার্কেট বানানো জায়েয হবে না। কেননা কোনো স্থানে মসজিদ হয়ে গেলে তা উপর-নিচ পুরোটাই মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। কোনো কারণে মসজিদটি অনাবাদ হয়ে গেলেও স্থানটি মসজিদ হিসেবেই বহাল থাকে।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৫৮; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/২৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ওয়াজ উদ্দীন - শাহজাহানপুর, ঢাকা

৪২৭৩. প্রশ্ন

আমি একজনের কাছে একটি গরু বর্গা দিলাম। এই শর্তে যে, গরুটি যে দামে ক্রয় করলাম তা আমার থাকবে। আর পালনকারী পালার পর যে দামে বিক্রয় করা হবে তা থেকে আমার ক্রয়ের টাকা রেখে যা থাকবে তা থেকে এক ভাগ আমার আর এক ভাগ পালনকারীর। এইভাবে বর্গা দেওয়া জায়েয কি না? অনেকে বলে জায়েয। আবার অনেকে বলে জায়েয নয়। যদি জায়েয না হয় কী কী কারণে জায়েয হবে না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

গরু বর্গার প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি শরীয়তসম্মত নয়। কারণ লালন-পালনের পর গরুটি কত দামে বিক্রি হবে এবং তাতে কত লাভ হবে তা জানা নেই। ফলে যে পালবে তার খরচাদি বাদ দিয়ে সে কিছু পাবে কি না, এবং পেলেও কম-বেশি কত পাবে এর কিছুই নিশ্চিত নয়। তাই কখনো দেখা যায়, যে পালবে সে তার ন্যায্য পরিশ্রমিক ও খরচাদি থেকেও বঞ্চিত হয়ে যায়। যা শরীয়তনিষিদ্ধ আলগারারের অন্তর্ভুক্ত।

উল্লেখ্য যে, কাউকে গরু পালতে দিলে তা নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়েই দিতে হবে। সুতরাং লালনকারী তার নির্ধারিত পারিশ্রমিকের হকদার হবে। আর পুরো গরু মালিকের বলে ধর্তব্য হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৭; আলমুগনী, ইবনে কুদামাহ হাম্বালী ৮/১৫

শেয়ার লিংক