জুমাদাল উলা ১৪৪৭   ||   নভেম্বর ২০২৫

মাওলানা সা‘দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে আকাবির উলামায়ে বাংলাদেশের ফতোয়া
‖ বিস্তারিত আলোচনা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

(পূর্ব প্রকাশের পর)

দাওয়াত এবং দাওয়াতের প্রকার, পন্থা মাধ্যম সংশ্লিষ্ট সা সাহেব কর্তৃক নবসৃষ্ট কিছু মাসআলা

দাওয়াত তাবলীগ সংক্রান্ত মাওলানা সা সাহেবের নতুন নতুন বানানো মাসআলা উপরোক্ত বিষয়গুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তিনি আরও আগে বেড়ে সরাসরি দাওয়াত তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন মাসআলা তৈরি করেছেন শরীয়তে দাওয়াত তার বিভিন্ন প্রকারের সর্বজন স্বীকৃত যুগ পরম্পরায় প্রতিষ্ঠিত যে হাকীকত, সেটাকে তিনি পরিবর্তন করে ফেলেছেন

দাওয়াত তাবলীগ  হল হেফাযতে ইসলাম (ইসলামের সংরক্ষণ) এবং ইশাআতে ইসলাম (ইসলামের প্রচার-প্রসার)-এর বুনিয়াদি মেহনত তবে দাওয়াত তাবলীগের অনেক প্রকার অনেক কাজ রয়েছে তার মধ্যে একটা প্রকার এই যে, বে-তলব মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনের তলব পয়দা করা এবং সে তলবকে কাজে লাগানো এর অনেক পদ্ধতি হতে পারে

একটি সুন্দর অত্যন্ত পরিচিত পদ্ধতি, যা হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ. শুরু করেছেন এতে ছয় সিফাত (কালিমা, নামায, ইলম যিকির, ইকরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত এবং দাওয়াত তাবলীগ)-কে তাবলীগের বুনিয়াদ বানানো হয়েছে এবং সহজতার জন্য প্রত্যেক এলাকার মসজিদকে কাজের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সাথিরা ভালবাসা মহব্বতের সঙ্গে মুসলমান ভাইদেরকে কাজের সঙ্গে জুড়ে দেন এক বিশেষ নিয়মে তাদেরকে ইলম আমলের প্রাথমিক মেহনতের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেন এবং এক বিশেষ পদ্ধতিতে দাওয়াতী গাশত খুরূজের আমলে তাদের সক্রিয় রাখেন

কোনো সন্দেহ নেই, বে-তলব মানুষরে মাঝে তলব পয়দা করার জন্য দাওয়াত তাবলীগের পন্থা একটি সুন্নতে হাসানা

এই সুন্নতে হাসানাতে যদি শরীয়তের উসূল আহকাম রক্ষা করা হয়, তাহলে তা অনেক উপকারী অনেক প্রভাব বিস্তারকারী এর বিভিন্ন উপকারিতা প্রভাব সারা দুনিয়ার মানুষ বছরের পর বছর প্রত্যক্ষ করে আসছে

উলামায়ে কেরাম ভালোভাবেই জানেন, দাওয়াত তাবলীগ আল্লাহ তাআলার দ্বীন প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল তবে এর অনেক প্রকার আছে এবং প্রত্যেক প্রকারের বহু পন্থা পদ্ধতি হতে পারে তাই নতুন-পুরোনো অনেক পদ্ধতি ছিল এবং আছে

উদাহরণস্বরূপ তালীম-তাআল্লুম নুসরতে দ্বীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শাখা তবে তার সূরত পন্থা অনেক এক সূরত হল কওমী মাদরাসার নেযাম

ইসলামী শরীয়তে নেক আমলের প্রকার দুইটি

এক. মূল আমল এবং তা সম্পাদনের পদ্ধতি উভয়টিই মানসূস অর্থাৎ শরীয়ত মূল আমলের পাশাপাশি তা সম্পাদনের পদ্ধতিটাও এমনভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে যে, সে পদ্ধতিটা পালন করাও শরীয়তের দৃষ্টিতে জরুরি এবং অপরবর্তনীয় যেমন ইসলামের মৌলিক ইবাদতসমূহ নামায, যাকাত, রোযা, হজ্ব ইত্যাদি

দুই. মূল আমল এবং তৎসংশ্লিষ্ট মৌলিক নীতিমালা বিধিবিধান শরীয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে তবে তা সম্পাদনের পদ্ধতি সূরত সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি অভিজ্ঞতার ওপর ছেড়ে দিয়েছে যাতে সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী, পরিস্থিতি বিবেচনা করে মশওয়ারা মোতাবেক কোনো জায়েয মুনাসিব পন্থা আবলম্বন করতে পারে

দাওয়াত, তাবলীগ, তাযকীর, আমর বিল মারূফ, নাহি আনিল মুনকার, তালীম, তাআল্লুম, তরবিয়ত, তাযকিয়া, ইলমের সংরক্ষণ প্রচার-প্রসার, খেলাফত সিয়াসতকে জীবিতকরণ, জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ এবং কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ এই সব আমল দ্বিতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত এগুলোর মূল বিষয় এবং মৌলিক বিধিবিধান নীতিমালা মানসূস তবে সংশ্লিষ্ট শাখাগত বিভিন্ন বিষয়, ব্যবস্থাপনাগত বিভিন্ন বিষয় এবং সম্পাদনের বিভিন্ন পদ্ধতি এগুলো নির্ধারণ হয় সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান নীতিমালার আলোকে, মশওয়ারার মাধ্যমে

এই হল সে হাকীকত, যেটা আজ অবধি উলামায়ে কেরাম জানেন কিন্তু মাওলানা সা সাহেব তাবলীগের প্রচলিত পদ্ধতির বিষয়ে আশ্চর্যজনক নানা কথাবার্তা আবিষ্কার শুরু করেছেন, যেগুলোর সারকথা এই যে, তিনি দাওয়াতের এই বিশেষ পদ্ধতিকে মানসূস আমরে তাআব্বুদীর মতো মনে করেন এদিকে তিনি নবীযুগ, খোলাফায়ে রাশিদীনের যুগ সাহাবাযুগে বিদ্যমান কোনো একটা মুবাহ পদ্ধতিকে সুন্নত নাম দেন, অথচ ওই সময়েরই অন্যান্য পদ্ধতিকেরেওয়াজনাম দিয়ে দেন তেমনিভাবে পরবর্তী সময়ের কোনো মুবাহ পদ্ধতি গ্রহণ করে আরেক মুবাহ পদ্ধতিকেরেওয়াজী তরিকাখেলাফে সুন্নতনাম দিয়ে দেন কোনো সন্দেহ নেই তার এই কাজ ইহদাস ফিদ দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত, যা মারাত্মক অপরাধ

ইহদাস ফিদ দ্বীন সম্পর্কে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ.

অর্থাৎ যে আমাদের দ্বীন শরীয়তে এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭

আরও ইরশাদ হয়েছে

وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.

অর্থাৎ তোমরা (শরয়ী দলীল ছাড়া দ্বীন শরীয়তে নবআবিষ্কৃত) সব নতুন জিনিস থেকে দূরে থাকবে কারণ ( ধরনের) সব নতুন জিনিস বেদআত আর সব বেদআত গোমরাহী মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১৪৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৯৭; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৫৭৮

দাওয়াত তাবলীগ সংক্রান্ত মাওলানা সা সাহেবের ধরনের বিভিন্ন আবিষ্কার, তার বাড়াবাড়ি সম্বলিত বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য, গোমরাহীপূর্ণ বিভিন্ন চিন্তাধারার তালিকা আমরা শুরুতে ৮২-৮৭ পৃষ্ঠায় পেশ করেছি সেগুলোর মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে এবার আমরা কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ

১৩. কুরআনে বর্ণিতনফর’-এর বিধান, ফযীলত বৈশিষ্ট্যসমূহকে হুবহু বরং আরও বাড়িয়ে তাবলীগী খুরূজের জন্য সাব্যস্ত করা, ‘নফর’-এর আয়াত হাদীসসমূহকে সরাসরি এই তাবলীগী খুরূজের ওপর প্রয়োগ করা এবং উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আয়াত-হাদীসসহ সূরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতের মর্মকে মারাত্মকভাবে বিকৃত করা

কোনো সন্দেহ নেই, যে কোনো দ্বীনী কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সফর করা (যদি তা ইখলাসের সঙ্গে হয় এবং শরীয়ত সুন্নত মোতাবেক হয়) বড় নেক আমল এমনকি হালাল উপার্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়িক সফরকেও ইসলামী শরীয়তে নেক আমল হিসেবে গণ্য করা হয় আর দাওয়াতের সফর তো সর্বাবস্থায় এর চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অতএব এটা কেউই অস্বীকার করে না যে, দাওয়াতের জন্য বের হওয়া দাওয়াতের উদ্দেশ্যে সফর করা একটি নেক আমল এবং সওয়াবের কাজ; এটি অত্যন্ত উপকারী, গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে জরুরি অনেক বড় সদকায়ে জারিয়া

পর্যন্ত কথা একদম ঠিক ছিল এমনকি খুরূজকে আল্লাহর রাস্তার খুরূজ বলা, আল্লাহর রাস্তার মুজাহাদা বলা এতেও কোনো আপত্তি নেই বরং এর উৎসাহ দেওয়া বা এর তাকীদ করাও ভালো কাজ নেক আমল এই সব বিষয় দাওয়াত তাবলীগের এবং আমর বিল মারূফ নাহি আনিল মুনকারের আম সাধারণ দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত

দাওয়াত তাবলীগের বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতি রয়েছে তাবলীগ জামাতের প্রচলিত কাজটিও একটা পদ্ধতি এই উদ্দেশ্যে এবং এই শিরোনামে খুরূজ সফর হলে সেটাও যদি ইখলাসের সঙ্গে শরীয়ত সুন্নত মোতাবেক হয়, তবে তা গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল অনেক প্রয়োজনীয় উপকারী অনেক বড় সদকায়ে জারিয়া এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনী কাজ

সেজন্য প্রচলিত তাবলীগ জামাতের খুরূজের জন্য মানুষকে উৎসাহ দেওয়া, তাকীদ করা এবং নিজে আমলীভাবে বিষয়ে যত্নবান থাকার মধ্যে কোনো আপত্তি নেই বিষয়ে তাবলীগের সাধারণ লোকদের প্রতি উলামায়ে কেরামের পুরোনো আপত্তি এই যে, তাদের অধিকাংশ শুধু এই খুরূজকেই সাবীলুল্লাহ মনে করে, এই খুরূজকেই দাওয়াত তাবলীগের একমাত্র রূপ মনে করে এবং শুধু এটাকেই একমাত্র নবীওয়ালা কাজ মনে করে কিন্তু তাদের ভুল যেহেতু অজ্ঞতাবশত সেহেতু উলামায়ে কেরাম ইসলাহের জন্য কখনো কখনো সতর্ক করেন তবে সাধারণত উলামায়ে কেরাম তাদের ভুল এড়িয়ে যান এবং তাদের মধ্যে যা কিছু কল্যাণ আছে, সে বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করেন

মাওলানা সা সাহেবের ভুল তাবলীগের সাধারণ সাথিদের এই ভুলের তুলনায় আরও অনেক মারাত্মক বরং তার চিন্তা-ফিকির অত্যন্ত ভয়ংকর এবং মারাত্মক গোমরাহী তিনি বলেন, কুরআন-হাদীসে নফরের যেসব বিধান এবং যেসব ফযীলত আছে, সেগুলো হুবহু তাবলীগ জামাতের প্রচলিত খুরূজের জন্যও প্রযোজ্য সেজন্য তিনি বলেন, তাবলীগের প্রচলিত সফরে বের হতে বিলম্ব করা কবীরা গুনাহ এবং আযাবের কারণ

চিন্তাধারা প্রমাণের জন্য তিনি নফরের ওই সমস্ত আয়াত-হাদীস বেধড়ক প্রয়োগ করেন, যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর জন্য ইরশাদ হয়েছে এই আয়াত হাদীসগুলোর তাফসীর তিনি করেন সরাসরি তাবলীগী খুরূজ দ্বারা এবং এই তাবলীগী খুরূজকেই তিনি এসব আয়াত হাদীসের প্রথম মিসদাক (তথা প্রথম উদ্দিষ্ট বিষয়) মনে করেন আর কিতাল ফী সাবীলিল্লাহকে এসবের আরেযী মিসদাক (তথা সাময়িক উদ্দিষ্ট বিষয়) মনে করেন!! তার এই চিন্তাধারা স্পষ্ট তাহরীফ (বিকৃতি) এবং নিঃসন্দেহে ইহ্দাস ফিদদ্বীন (দ্বীনের মধ্যে বেদআত সৃষ্টি)-এর ওপর ভিত্তি করে

দেখার বিষয় হল, কুরআন কারীমে নফরের আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা যে নফরের আদেশ করেছেন এবং যে নফর ছেড়ে দিলে ইস্তিবদাল তথা দ্বীনের নুসরতের জন্য তাদের পরিবর্তে অন্যদের নির্বাচন করার ধমকি দিয়েছেন, ইমামগণের ইজমা অনুযায়ী সেই নফরের শরয়ী বিধান তো এই যে, এটা কেবল বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে ফরযে আইন হয় নতুবা সাধারণ অবস্থায় সেটা ফরযে কেফায়া অর্থাৎ কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর সামর্থ্য থাকাবস্থায়ও সবার জন্য সব হালতে তা ফরযে আইন নয় সকল ইমাম স্পষ্টভাবে একথা বলেছেন আর কোন্ কোন্ অবস্থায় ফরযে আইন হবে সেটাও স্পষ্ট বলেছেন যেসব হালতে তা ফরযে আইন হয় সে সময়গুলোতে যদি কোনো মুমিন উদাসীনতা বা অলসতার কারণে এই ফরয তরক করে, তাহলে আমীরুল মুমিনীন মুনাসিব মনে করলে তার ব্যাপারে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন ফরযে কেফায়ার অবস্থায় তো ধরনের শাস্তিমূলক কোনো কিছু জায়েযই নেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় কত জিহাদী সফর এমন হয়েছে, যাতে বহু মুমিন অংশগ্রহণ করেননি তবু তাদেরকে কোনো দোষারোপ করা হয়নি ফরযে আইন হালতের ক্ষেত্রেও কুরআন কারীম হাদীস শরীফে এমন কোনো ঢালাও হুকুম দেওয়া হয়নি যে, নফরে অনুপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি কা বিন মালিক রা. তার সাথিদ্বয়ের বিষয়টি তো খাস নস দ্বারা প্রমাণিত তার অর্থ ফুকাহায়ে কেরাম এটা বোঝেননি যে, শরয়ী ওযর ছাড়া কেউ যদি ফরযে আইন জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকে তবে তার সঙ্গে এমন আচরণ করা বাধ্যতামূলক

এই হলমানসূস আলাইহিনফরের শরয়ী বিধান মাওলানা সা সাহেব এই নফরের আয়াত হাদীসগুলোকেই প্রচলিত তাবলীগী খুরূজের ওপর প্রয়োগ করে এমন হুকুম বলছেন যে, খোদ কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ, যেটা এই আয়াত হাদীসগুলোর মিসদাক উদ্দেশ্য, তার জন্যও এই হুকুম ফুকাহায়ে কেরাম এসব আয়াত হাদীস থেকে বোঝেননি

এই আয়াতসমূহ থেকে এটা কেউই বোঝেননি যে, কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ সর্বাবস্থায় ফরযে আইন এটাও কেউ বোঝেননি যে, যখন তা ফরযে কেফায়ার হালতে থাকবে তখন তার জন্য নফর না করা অথবা নফর করতে বিলম্ব করা গুনাহ, কিংবা এর দ্বারা অনুপস্থিত ব্যক্তি আযাব ইস্তিবদালের ধমকির উপযুক্ত হয়ে যায় আর এটাকে নেফাক বা নেফাকের আলামত আখ্যা দেওয়া তো অনেক দূরের বিষয়

কিন্তু মাওলানা সা সাহেব কিতালের এসব আয়াতের উদ্দেশ্যের মধ্যে তাবলীগী খুরূজকে দাখিল করে সেটাকে এত জরুরি আখ্যা দিচ্ছেন যে, এখন এই তাবলীগী খুরূজে বিলম্ব করাটাই গুনাহ, এর দ্বারা আযাব অনিবার্য হয়ে যায়!!

মাওলানা সা সাহেব তাবলীগী খুরূজকে কুরআনে বর্ণিত নফর এবং আল্লাহর আদেশ প্রমাণ করার জন্য এই কথাও বলেছেন যে, সাহাবায়ে কেরাম কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর জন্য যে বের হতেন, সেটা মূলত দাওয়াতের নিয়তে বের হতেন তারা কিতালের আগেও দাওয়াত দিতেন এবং কিতালের মধ্যেও দাওয়াত দিতেন যুদ্ধের অনেক সফর এমন ছিল, যাতে কোনো কিতালই হয়নি; তাহলে এই খুরূজকে কী বলা হবে?

তিনি বলছেন, এর দ্বারা বোঝা গেল, কিতালের সফর মূলত দাওয়াতের সফরই ছিল সেজন্য নফরের সমস্ত ফযীলত কিতালের জন্য সাব্যস্ত করে কথা বলা যে, কিতাল নেই, তো নফরও নেই এটা একটা মৌলিক ইজতিমায়ী ভুল বরং নফরের বিধান সর্বাবস্থায় বাকি থাকবে অর্থাৎ এখন নফর দাওয়াতের মাধ্যমে ইকামতে দ্বীনের জন্য হবে এবং উম্মতের জাহালত দূর করার জন্য এবং ইরতিদাদ ঠেকানোর জন্য হবে!!

এটা সা সাহেবের নিছক অজুহাত মাত্র একটা ভুলকে (যা মূলত গোমরাহী) প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরেকটা গোমরাহীপূর্ণ ভুলে পতিত হওয়ার নামান্তর কেননা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর মাঝে দাওয়াতের নিয়ত দাওয়াতের আমল শামিল হওয়ার কারণে কিতালের সফর নিছক দাওয়াতের সফর হয়ে যায় না সেজন্য কুরআন হাদীসের যেসব বাণীতে কিতাল এবং কিতালের জন্য নফরের হুকুম করা হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে তাবলীগ জামাতের খুরূজকে ফরয বলা এবং এই খুরূজকে বিলম্ব করাকে গুনাহ বলা কোনোভাবেই জায়েয হবে না

বোঝা গেল, কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ শরীয়তের একটি স্বতন্ত্র ফরয বিধান এবং দাওয়াত আরেকটি ফরয বিধান উভয়ের পার্থক্য বোঝার জন্য কেবল এটুকু চিন্তাই যথেষ্ট যে, মক্কী যিন্দেগীতে দাওয়াতের দায়িত্ব পরিপূর্ণরূপে আদায় করা হয়েছিল কিন্তু এই দাওয়াতকে কাফেরদের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হলেও কিতাল একেবারেই হয়নি, বরং তা নিষেধ ছিল মাদানী যিন্দেগীতে আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর দায়িত্ব আদায় করা হয় আর দাওয়াত যেহেতু কিতালের ভূমিকা সেজন্য এর সঙ্গে দাওয়াত দেওয়াটা জরুরি ছিল কিন্তু সে দাওয়াত কবুল না করা হলে কিতাল করাটা জরুরি ছিল সেজন্য কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর সময়ের দাওয়াত আর নিছক তাবলীগ, তালীম ওয়াজ-নসীহতের দাওয়াত এই দুই দাওয়াতের মাঝে আসমান-জমিনের পার্থক্য

এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে যদি সামান্য চিন্তা করা হয়, তাহলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর সফরকে দাওয়াতের সফর নাম দিয়ে তাবলীগী খুরূজকে হবহু কুরআনের নফর বানিয়ে দেওয়া কত ভয়াবহ বিকৃতি এবং শরীয়তের আহকামের মধ্যে কত বড় পরিবর্তন!! কারণ এই তাবলীগী খুরূজটা তো সাধারণত শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং এটা একদম মক্কী যিন্দেগীর মতো নিছক দাওয়াত কিতাল তো দূরের কথা, হাতের দ্বারা অন্যায় দূর করার কাজও এর মধ্যে শামিল নয় আর বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষত এই শিরোনামের কাজের মধ্যে তা শামিল হওয়া উচিতও নয়

অতএব ধরনের খুরূজকে কুরআনে বর্ণিতনফর’-এর হুবহু মিসদাক বরং প্রথম আসল মিসদাক (উদ্দিষ্ট বিষয়) আখ্যা দেওয়া যে কত ভয়ংকর বিকৃতি এবং শরীয়তের বিধিবিধানে কত বড় পরিবর্তন সাধন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না

আর সা সাহেব যে বললেন, যেই যুদ্ধে কিতাল হয়নি সেই খুরূজের কী হবে? এর উত্তর হল, যখন ওই খুরূজটাও কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর উদ্দেশ্যে হয়েছে, আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার নিয়তে কিতালের প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া হয়েছে, তখন পরবর্তীতে যদি কিতাল নাও হয় চাই তা ইসলামের শত্রুরা ইসলাম গ্রহণ করে ফেলার কারণে হোক অথবা তাদের জিযইয়া দিতে রাজি হয়ে যাওয়ার কারণে হোক কিংবা তারা ভয়ে আগেই পিছপা হয়ে যাওয়ার কারণে হোক সর্বাবস্থায় এই সফর কিতালের সফর হবে; নিছক দাওয়াতের সফর কিছুতেই নয় গাযওয়া যুদ্ধের বিভিন্ন সফরে তো দাওয়াতেরও সুযোগ হয়নি অতএব এসব যুদ্ধের সফরকে দাওয়াতের সফর কীসের ভিত্তিতে বলা হবে?

মোটকথা কোনো বিষয় আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয হওয়া বা আবশ্যকীয় হওয়া, তেমনিভাবে কোনো বিষয় আল্লাহর পক্ষ থেকে হারাম হওয়া এর জন্য শরীয়তের স্পষ্ট দলীল জরুরি তারগীবের জন্য সাধারণ মুনাসাবাতের ভিত্তিতে জিহাদ কিতালের নসকে তাবলীগ জামাতের খুরূজের জন্য ব্যবহার করতে গিয়ে যদি এটাকে ফরযই বলে দেওয়া হয় এবং এতে বিলম্ব করাকে গুনাহ্ই বলে দেওয়া হয়, তাহলে এটা তো তারগীব হল না, বরং নতুন বিধান প্রবর্তন করা হল যা শরীয়তের নুসূসে বিকৃতি বৈ কিছু নয়

মাওলানা সা সাহেব কর্তৃক সূরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতের মর্ম তার শানে নুযূলে বিকৃতি সাধন

প্রচলিত তাবলীগী খুরূজকে কুরআনে বর্ণিত নফর প্রমাণের জন্য মাওলানা সা সাহেব আরও বিকৃতি ঘটিয়েছেন সেটা কুরআনে কারীমের একটি আয়াত ( : ১৯৫) তার শানে নুযূল সংক্রান্ত আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর একটি রেওয়ায়েতকে তিনি তার অনেক বয়ানে নিজের দাবি প্রমাণের জন্য ব্যবহার করেছেন কিন্তু এখানেও তিনি বিভিন্ন তাহরীফ বিকৃতির সাহায্য নিয়েছেন কুরআন কারীমের আয়াতটি এই

وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ.

আর আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না এবং সৎকর্ম অবলম্বন কর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন সূরা বাকারা (০২) : ১৯৫

প্রথমে তরজমা তাফসীরের বিভিন্ন কিতাব থেকে এই আয়াতের তরজমা তাফসীর দেখুন

. শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম

তরজমা :

اور اللہ کے راستے ميں مال خرچ کرو، اور اپنے کو خود اپنے ہاتھوں ہلاکت ميں نہ ڈالو، اور نيکي اختيار کرو، بيشک اللہ نيکي کرنے والوں سے محبت کرتا ہے۔

আর আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না এবং সৎকর্ম অবলম্বন কর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (সূরা বাকারা : ১৯৫, আসান তরজমায়ে কুরআন /১২৬)

টীকা :

اشارہ يہ ہے کہ اگر تم نے جہاد ميں خرچ کرنے سے بخل سے کام ليا اور اس کي وجہ سے جہاد کے مقاصد حاصل نہ ہوسکے تو يہ اپنے پاؤں پر خود کلہاڑي مارنے کے مرادف ہوگا، کيوں کہ اس کے نتيجے ميں دشمن مضبوط ہوکر تمہاري ہلاکت کا سبب بنے گا۔

ইশারা করা হচ্ছে যে, তোমরা যদি জিহাদে অর্থ ব্যয় করতে কার্পণ্য কর এবং সে কারণে জিহাদের লক্ষ্য অর্জিত না হয়, তবে সেটা হবে নিজ পায়ে কুঠারাঘাত করার নামান্তর কেননা তার পরিণামে শত্রু শক্তি সঞ্চয় করে তোমাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে’ (তাওযীহুল কুরআন /১২৬)

. হযরত মাওলানা মুফতী সাঈদ আহমাদ পালনপুরী রাহ.

তরজমা :

اور اللہ کے راستے ميں -يعني جہاد کے ليے - خرچ کرو، اپنے ہاتھوں ہلاکت ميں مت پڑوں۔

এবং আল্লাহর রাস্তায় অর্থাৎ জিহাদের জন্য ব্যয় কর নিজেদের হাত দিয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না

তাফসীর :

مسلمانوں کي سرخ روئي جہاد جاري رہنے ميں ہے، اور ذلت و نکبت جہاد رُک جانے ميں ہے، اور جب فنڈ نہيں ہوگا تو جہاد رک جائے گا، يہي خود کو ہلاکت ميں ڈالنا ہے، اور نيک کام کرو، يعني دل کھول کر خرچ کرو، اور دوسرے نيک کام بھي کرو، چندہ ديا اور نماز نہيں پڑھتا تو کيا فائدہ؟

মুসলমানদের সম্মান সাফল্য জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আর অপমান দুর্দশা জিহাদ থেমে যাওয়ার মধ্যে যখন অর্থের অভাব হবে তখন জিহাদ বন্ধ হয়ে যাবে আর এটাই নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে ফেলে দেওয়া আর সৎকর্ম সম্পাদন কর অর্থাৎ উদারভাবে দান কর এবং অন্যান্য নেক কাজ কর যদি কেউ দান করে, কিন্তু নামায আদায় না করে, তাহলে কী লাভ?’ (তাফসীরে হেদায়াতুল কুরআন /২৩২)

. হযরত মাওলানা বেলাল আবদুল হাই হাসানী নদভী দামাত বারাকাতুহুম

তরজমা :

اور اللہ کے راستے ميں خرچ کرو اور اپنے ہاتھوں ہلاکت ميں مت پڑو، اور کام بہتر طريقہ پر کرو، بے شک اللہ اچھا کام کرنے والوں کو محبوب رکھتا ہے۔

এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর এবং নিজেদের হাত দিয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না আর কর্ম উত্তমভাবে সম্পাদন কর নিঃসন্দেহে আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন

টীকা :

جہاد ميں شريک نہ ہونا اور اس راستہ ميں خرچ نہ کرنا اپنے آپ کو ہلاکت ميں ڈالنا ہے۔

জিহাদে শরীক না হওয়া এবং এই পথে খরচ না করার মানে হল, নিজেকে নিজে ধ্বংসের মধ্যে ফেলে দেওয়া (আসান মাআনিল কুরআন, পৃ. ৩১. টীকা )

. হযরত মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী দামাত বারাকাতুহুম

তরজমা :

اور اللہ کے راستے ميں خرچ کرو، اپنے آپ کو ہلاکت ميں نہ ڈالو، اور اچھے کام کرتے رہو، بے شک اللہ نيک کام کرنے والوں کو پسند فرماتے ہيں۔

এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে ফেলে দিয়ো না এবং সৎকর্ম করতে থাক নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের পছন্দ করেন

টীকা :

جہاد ميں جہاں جان کي قرباني مطلوب ہوتي ہيں، وہيں مال کي بھي ضرورت پڑتي ہے، ہتھياروں کي فراہمي، سواري اور ذرائع نقل وحمل کا انتظام، دشمنوں ميں جاسوسوں کو بھيجنا اور ان کے راز سے آگاہ ہونا وغيرہ، اس ليے جہاد کے ساتھ ہي اللہ کے راستہ ميں مال خرچ کرنے کي تلقين فرمائي گئ، اور فرمايا گيا کہ ايسا نہ کروگے اور جہاد رُک جائے گا تو تم کمزور ہو جاؤ گے، دشمن کے حوصلے بڑھ جائيں گے اور بالآخر اس کا انجام دنيا وآخرت دونوں جگہ تمہاري ہلاکت ہوگي۔

জিহাদে জীবন উৎসর্গ করে দিতে হয় জিহাদে সম্পদেরও প্রয়োজন হয় যেমন অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ, চলাচলের বাহন এবং মালপত্র বহন স্থানান্তরের সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা, শত্রুদের মাঝে গোয়েন্দা দল প্রেরণ এবং তাদের গোপন তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি সেজন্য জিহাদের পাশাপাশি আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়ের আদেশ করা হয়েছে আর বলা হয়েছে, যদি তোমরা এমনটা না কর আর জিহাদ থেমে যায়, তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে, শত্রুদের সাহস বেড়ে যাবে আর সবশেষে দুনিয়া আখেরাতে এর পরিণাম হবে ধ্বংস (আসান তাফসীরে কুরআন মাজীদ / ১৮০-১৮১)

. হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.

তাফসীর :

দশম বিধান : জিহাদের জন্য সম্পদ ব্যয় করা

وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللهِ (এবং তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর) এই আয়াতে মুসলমানদের ওপর ফরয করা হয়েছে, তারা যেন প্রয়োজনমতো নিজেদের সম্পদ থেকেও আল্লাহর পথে খরচ করে আয়াত থেকে ফকীহগণ এই বিধান আহরণ করেছেন যে, মুসলমানদের ওপর ফরয যাকাত ব্যতীত আরও এমন কিছু ফরয দায়িত্ব খরচের খাত রয়েছে, যেগুলো ফরয কিন্তু সেগুলো স্থায়ী কোনো খাত নয় বা সেগুলোর জন্য কোনো নির্ধারিত নেসাব বা পরিমাণ নেই; বরং যখন যতটুকু প্রয়োজন তখন ততটুকুই খরচ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরয আর যদি প্রয়োজন না হয় তবে কিছুই খরচ করা ফরয নয় জিহাদের খরচ এই প্রকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত

وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى التَّهۡلُكَةِ (এবং নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ো না) আয়াতাংশের শাব্দিক অর্থ তো স্পষ্টই এতে স্বেচ্ছায় নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করতে বারণ করা হয়েছে এখন কথা হল, ‘ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করাবলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে? প্রসঙ্গে মুফাসসিরগণের অভিমত বিভিন্ন প্রকার

ইমাম জাসসাস রাযী রাহ. বলেছেন, আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত এসব বক্তব্যের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই সবগুলোই উদ্দেশ্য হতে পারে

আবু আইয়ুব আনসারী রা. বলেন, এই আয়াত আমাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে আমরা এর ব্যাখ্যা জানি

কথা হল এই যে, আল্লাহ তাআলা ইসলামকে যখন বিজয়ী সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, তখন আমাদের মধ্যে আলোচনা হল যে, এখন আর জিহাদের কী প্রয়োজন? এখন আমরা আপন আপন গৃহে অবস্থান করে বিষয়-সম্পত্তির দেখাশোনা করি প্রসঙ্গেই এই আয়াতটি নাযিল হল, যাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, জিহাদ পরিত্যাগ করা মুসলমানদের জন্য ধ্বংসেরই কারণ সেজন্যই আবু আইয়ুব আনসারী রা. সারা জীবনই জিহাদ করে গেছেন এমনকি সবশেষে কুসতুনতুনিয়ায় তাঁর ওফাত হয় এবং সেখানেই তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., হুযায়ফা রা. এবং কাতাদাহ রাহ. মুজাহিদ রাহ. যাহ্হাক রাহ. প্রমুখ তাফসীর শাস্ত্রের ইমামগণ থেকেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে

বারা ইবনে আযেব রা. বলেছেন, পাপের কারণে আল্লাহর রহমত মাগফিরাত থেকে নিরাশ হওয়াও নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর এজন্যই মাগফিরাত সম্পর্কে নিরাশ হওয়া হারাম

কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় সীমাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে বিবি-বাচ্চার হক নষ্ট করা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর ধরনের সীমাতিরিক্ত খরচ জায়েয নয়

কেউ কেউ বলেছেন, এমন সময় যুদ্ধাভিযানে যাওয়াকে নিজ হাতে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা বলা যেতে পারে, যখন স্পষ্ট বোঝা যায় যে, শত্রুর কোনো ক্ষতি সাধন করা সম্ভব হবে না, বরং নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে এরূপ ক্ষেত্রে এই আয়াতের মর্ম অনুযায়ী যুদ্ধাভিযান নাজায়েয

ইমাম জাসসাস রাহ.-এর ভাষ্য অনুযায়ী উপরিউক্ত সমস্ত বিষয়ই এই আয়াত থেকে গ্রহণ করা যেতে পারে (মাআরিফুল কুরআন, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. / ৫৪৩-৫৪৪

. ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. (৩৭০ হি.)

মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ইমাম আবু বকর জাসসাস রাযী রাহ.-এর উদ্ধৃতিতে যে কথা উল্লেখ করেছেন তা জাসসাস রাহ.-এর কিতাব আহকামুল কুরআনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত আছে তার সেই বিস্তারিত আলোচনার একটি অংশ এখানে আমরা তার ভাষাতেই উদ্ধৃত করছি

فأخبر أبو أيوب أن الإلقاء بالأيدي إلى التهلكة هو ترك الجهاد في سبيل الله، وأن الآية في ذلك نزلت.

وروي مثله عن ابن عباس وحذيفة والحسن،وقتادة ومجاهد والضحاك، وروي عن البراء بن عازب وعبيدة السلماني الإلقاء بالأيدي إلى التهلكة، هو اليأس من المغفرة بارتكاب المعاصي. وقيل: هو الإسراف في الإنفاق، حتى لا يجد ما يأكل ويشرب فيتلف.

وقيل هو أن يقتحم الحرب من غير نكاية في العدو، وهو الذي تأوله القوم الذي أنكر عليهم أبو أيوب وأخبر فيه بالسبب، وليس يمتنع أن يكون جميع هذه المعاني مرادة بالآية لاحتمال اللفظ لها وجواز اجتماعها من غير تضاد ولا تناف.

(আহকামুল কুরআন, জাসসাস রাযী /৩১৮-৩১৯)

ইমাম জাসসাস রাহ. যা কিছু বলেছেন, হুবহু একই কথা ইমাম তবারী রাহ. তাঁর তাফসীরগ্রন্থ জামিউল বয়ানে বলেছেন এবং আরও বিস্তারিত বলেছেন একই কথা আবু হাইয়ান আন্দালুসী রাহ. আলবাহরুল মুহীত গ্রন্থে এবং আল্লামা শাওকানী রাহ. ফাতহুল কাদীরে বলেছেন

ইমাম তবারী রাহ.-এর বক্তব্যের সারকথা হল,

وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى التَّهۡلُكَةِ এই আয়াতাংশে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ওইসমস্ত কাজ থেকে বারণ করেছেন, যেগুলোর কারণে আমাদের ওপর আল্লাহর আযাব শাস্তি অবধারিত হয়ে যায় সেজন্য আল্লাহ তাআলার কোনো ফরয তরক করে এবং আল্লাহর হারামকৃত কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাওয়া আমাদের জন্য জায়েয নয়

আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার ক্ষেত্রে যখন সম্পদ ব্যয় করা ফরয হয়ে যায়, তখন ব্যয় না করাটা ধ্বংসের কারণ যখন মুশরিকদের সঙ্গে লড়াই করা ফরয হয়ে যায়, তখন লড়াই না করা ধ্বংসের কারণ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া ধ্বংসের কারণ অতএব ধ্বংস অনিবার্য করে তোলে এমন যে কোনো কাজে লিপ্ত হওয়াকে এই আয়াতে হারাম করা হয়েছে তবে আয়াতের সবচেয়ে নিকটবর্তী মর্ম হল, আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে শক্তিশালী করার জন্য তোমরা আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে জিহাদে খরচ কর এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা বন্ধ করে দিয়ে আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত হয়ো না (জামিউল বয়ান, ইমাম তবারী / ৩১২-৩১৬)

মাওলানা সা সাহেবের বক্তব্য এবং তার পর্যালোচনা

আয়াতের সর্বসম্মত যুগ পরম্পরায় অনুসৃত তাফসীর মাথায় রেখে এবার মাওলানা সা সাহেব কী বলেন তা শুনুন

মাওলানা সা সাহেব এই আয়াত এবং এর শানে নুযূল সম্পর্কে অনেক বয়ানে আলোচনা করেছেন যেখানেই তিনি এই আয়াতের তাফসীর শানে নুযূল সম্পর্কে আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর ঘটনা আলোচনা করেছেন, সব সময় তিনি নিজের থেকে বিভিন্ন কথা বানিয়ে তাতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন সকল মুফাসসির, ফকীহ এবং অন্যান্য উলামায়ে কেরামের খেলাফ একনতুনতাফসীর আবিষ্কার করেছেন এবং এর ভিত্তিতে শরীয়তের মধ্যে একনতুনবিধান সৃষ্টি করেছেন আর সেটাকে কুরআন হাদীসের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন কোনো সন্দেহ নেই, এটা افتراء على الله তথা আল্লাহর নামে মিথ্যা রটানোর শামিল কিন্তু উল্টো সা সাহেবের দাবি হল, উম্মত এই হুকুম ভুলিয়ে দিয়েছে! বাস্তবতা হল, যে ব্যক্তি উম্মতকে ভুল আখ্যা দেয়, সে- ভুলের ওপর থাকে এবং উম্মতকে যে পথভ্রষ্ট বলে সে- ভ্রষ্টতার মধ্যে থাকে

প্রসঙ্গে মাওলানা সা সাহেবের বক্তব্যের খোলাসা হল, এই আয়াতে আল্লাহর রাস্তার খুরূজে সম্পদ ব্যয় করার হুকুম করা হয়েছে এবং ব্যয় না করা হলে ধ্বংসের ধমকি দেওয়া হয়েছে আর আল্লাহর রাস্তার এই খুরূজ কিতালের জন্য ছিল না (তিনি বলতে চান, এই খুরূজ নিছক দাওয়াতের জন্য ছিল এবং দাওয়াতের খুরূজেই মাল খরচ করার হুকুম করা হয়েছে) বোঝা গেল, যদি কিতালের সুযোগ বা হালত না থাকে তবুও কুরআনের নির্দেশনা হল, যদি আপনি দাওয়াত ইলাল্লাহর জন্য না বের হন এবং এর জন্য সম্পদ ব্যয় না করেন, তাহলে আপনি নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবেন

সা সাহেবের দাবি হল, এই বিষয়টাই এই আয়াতের শানে নুযূল দ্বারা প্রমাণিত হয় কারণ এই আয়াতের শানে নুযূলে আছে, আবু আইয়ুব আনসারী রা. এবং তার কতিপয় সাথি গোপনে পরামর্শ করেছিলেন যে, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুসরত করেছি এখন তো ইসলাম কায়েম হয়ে গেছে খোদ আবু আইয়ুব আনসারী রা. বলেন, এখন কোনো কিতাল বা লড়াই নেই তরবারি, হাতিয়ার ইত্যাদি সব রেখে দেওয়া হয়েছে অতএব কিছুদিন আমরা মদীনায় অবস্থান করি, কায়-কারবারে কিছু দেখভাল করি...

মাওলানা সা সাহেবের বর্ণনা অনুযায়ী আবু আইয়ুব আনসারী রা. বলেছেন, আমরা এমনটা ভাবছিলাম বিষয়ে এই আয়াতটি নাযিল হল আমাদের অভিপ্রায়কে নাকচ করার জন্য অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর রাস্তার খুরূজে মাল খরচে কমি করো না; নতুবা তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে

মাওলানা সা সাহেবের বক্তব্য হল, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের ডাকলেন আনসার! আল্লাহ নারায হচ্ছেন, আল্লাহ ধ্বংসের ধমকি দিচ্ছেন, তোমরা কী মশওয়ারা করেছ? তারা বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমরা মশওয়ারা করেছি, ইসলাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কাজের মানুষ তৈরি হয়ে গেছে এখন কোনো লড়াইও হচ্ছে না যে, বের হতে হবে

এরপরই মাওলানা সা সাহেব বলেন, থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল, সাহাবীদের বের হওয়াটা কেবল লড়াইয়ের জন্য ছিল না আজকালের মানুষ বলে, তাবলীগ জামাতের লোকেরা নাকি জিহাদের আয়াতসমূহকে তাবলীগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে বিষয়টা তো এই যে, জিহাদ হল মূল জিহাদ হল মূল ভাই! জিহাদ হল মূল লড়াই তো হল জিহাদের চূড়ান্ত পর্যায় লড়াই তো জিহাদের চূড়ান্ত পর্যায় আপনারা তো এই চিন্তা করে বসে গেছেন যে, যখন লড়াই নেই, তো জিহাদও নেই কত ভুল সিদ্ধান্ত আপনাদের

মাওলানা সা সাহেবের এসব কথা এবং এর চেয়ে মারাত্মক কথাবার্তা তার অনেক বয়ানে রয়েছে এখন আমরা তার কেবল চারটি বয়ানের উদ্ধৃতি দিচ্ছি

. ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ .-এর বয়ান

. মে ২০১৯ ., ফজরবাদ বয়ান

. ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ .-এর ফজরবাদ বয়ান, ত্রৈমাসিক জোড়, জানুয়ারি ২০২৪ . (ইরশাদাতে আকাবির, পৃ. ১৬২)

. ১৫ জুলাই ২০২৪ . (১৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ)

)وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللهِ سے مراد صرف تبليغ ہے، يہ ميرا دعويٰ ہے، علما بھي سن ليں(

বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে কেবল শানে নুযূল সংক্রান্ত যে রেওয়ায়েতটির উদ্ধৃতি মাওলানা সা সাহেব দিয়েছেন, সেটি হাদীসের কিতাবসমূহে দেখার দ্বারাই বিষয়ে সা সাহেবের বক্তব্যের সবচেয়ে বড় বিকৃতিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ

তাফসীরে ইবনে কাসীরে হাদীসের কিতাবসমূহের উদ্ধৃতিতে শানে নুযুলের রেওয়ায়েতটি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে

عَنْ أَسْلَمَ أَبِي عِمْرَانَ قَالَ: حَمَلَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ عَلَى صَفِّ الْعَدُوِّ حَتَّى خَرَقه، وَمَعَنَا أَبُو أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيُّ، فَقَالَ نَاسٌ: أَلْقَى بِيَدِه إِلَى التَّهْلُكَةِ. فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ: نَحْنُ أَعْلَمُ بِهذِهِ الْآيَةِ إِنَّمَا نَزَلَتْ فِينَا، صَحِبْنَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وشَهِدنا مَعَهُ الْمَشَاهِدَ وَنَصَرْنَاهُ، فَلَمَّا فَشَا الْإِسْلَامُ وَظَهَرَ، اجْتَمَعْنَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ نَجِيًّا، فَقُلْنَا: قَدْ أَكْرَمَنَا اللهُ بِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ونَصْرِه، حَتَّى فَشَا الْإِسْلَامُ وَكَثُرَ أهلُه، وَكُنَّا قَدْ آثَرْنَاهُ عَلَى الْأَهْلِينَ وَالْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ، وَقَدْ وَضَعَتِ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا، فَنَرْجِعُ إِلَى أَهْلِينَا وَأَوْلَادِنَا فَنُقِيمُ فِيهِمَا. فَنَزَلَ فِينَا: وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى التَّهۡلُكَةِ فَكَانَتِ التَّهْلُكَةُ فِي الْإِقَامَةِ فِي الْأَهْلِ وَالْمَالِ وَتَرْكِ الْجِهَادِ.

আসলাম আবু ইমরান থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কুস্তনতিনিয়ার যুদ্ধে এক মুহাজির শত্রুর সারির ওপর হামলা করে তা ভেদ করে ফেললেন আমাদের সঙ্গে ছিলেন আবু আইয়ুব আনসারী রা. তখন কিছু লোক বলল, সে নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করল

তখন আবু আইয়ুব রা. বললেন, এই আয়াত সম্পর্কে আমরা বেশি অবগত এটা তো নাযিল হয়েছে আমাদের ক্ষেত্রে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সোহবতে ছিলাম তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন জিহাদে শরীক হয়েছি তাঁর নুসরত করেছি এরপর যখন ইসলাম ছড়িয়ে পড়ল এবং ইসলাম (এর প্রতিপত্তি) প্রকাশ হয়ে গেল তখন আমরা আনসাররা গোপনে সমবেত হলাম আমরা বললাম, আল্লাহ তো আমাদেরকে তাঁর নবীর সোহবত নুসরতের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এমনকি ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার অনুসারী বৃদ্ধি পেয়েছে আমরা তো তাঁকে আমাদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ সন্তান-সন্ততির ওপর প্রাধান্য দিয়েছিলাম এদিকে যুদ্ধ তার অস্ত্রশস্ত্র ছেড়ে দিয়েছে অতএব এখন আমরা আমাদের পরিবার-পরিজন সন্তান-সন্ততির কাছে ফিরে যাই এবং তাদের মধ্যে থেকে যাই তখন আমাদের সম্পর্কে নাযিল হল

وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى التَّهۡلُكَةِ .

সুতরাং ধ্বংস হল পরিবার সম্পদের মধ্যে অবস্থান করা এবং জিহাদ পরিত্যাগ করা তাফসীরে ইবনে কাসীর /৪৯৬, সূরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতের অধীনে

জামে তিরমিযীতে আছে

فَكَانَتِ التَّهْلُكَةُ الإِقَامَةَ عَلَى الأَمْوَالِ وَإِصْلاَحِهَا، وَتَرْكَنَا الغَزْوَ، فَمَا زَالَ أَبُو أَيُّوبَ شَاخِصًا فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى دُفِنَ بِأَرْضِ الرُّومِ.

অর্থাৎ ধ্বংস দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আমরা নিজেদের ধন-সম্পদ ঠিক করার জন্য থেকে যাওয়া এবং গাযওয়াহ অর্থাৎ যুদ্ধের জন্য সফর করা ছেড়ে দেওয়া সেজন্য আবু আইয়ুব আনসারী রা. সর্বদা আল্লাহর রাস্তায়ই থাকতেন, এমনকি রোমে তাঁর দাফন হয় জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৭২

মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসীতে আছে

فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ هَذِهِ الآيَةَ يَرُدُّ عَلَيْنَا مَا هَمَمْنَا بِه فِي أَنْفُسِنَا أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا فَنُصْلِحَ مَا قَدْ ضَاعَ مِنْهَا، فَكَانَتِ التَّهْلُكَةُ الَّتِي أَرَدْنَا أَنْ نَفْعَلَ، وَأُمِرْنَا بِالْغَزْوِ، فَمَا زَالَ أَبُو أَيُّوبَ يَغْزُو حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ.

অর্থাৎ আমরা মনে মনে যা ভাবছিলাম তার রদে আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাযিল করেছেন অর্থাৎ আমরা আমাদের ধন-সম্পদ ঠিকঠাক করার জন্য থেকে যাব অতএব ধ্বংস দ্বারা উদ্দেশ্য সেটাই, যেটা করার কথা আমরা ভাবছিলাম আর আয়াতে আমাদেরকে গাযওয়াহর (অর্থাৎ কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ জারি রাখার ) হুকুম করা হয়েছে তাই আবু আইয়ুব রা. মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধের সফরেই ছিলেন মুসনাদে তয়ালিসী /৪৯২, হাদীস ৬০০

মুসতাদরাকে হাকেমে আছে

فَكَانَتِ التَّهْلُكَةُ فِي الْإِقَامَةِ عَلَى أَمْوَالِنَا الَّتِي أَرَدْنَا، فَأُمِرْنَا بِالْغَزْوِ، فَمَا زَالَ أَبُو أَيُّوبَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللهِ حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ.

অর্থাৎ ধ্বংস তো সেটা, যেটা আমরা ভাবছিলাম অর্থাৎ নিজেদের ধন-সম্পদ ঠিকঠাক করার জন্য থেকে যাব সেজন্য আমাদেরকে ( আয়াতে) গাযওয়ার হুকুম করা হয়েছে তাই আবু আইয়ুব রা. ওফাত পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় কিতালের জন্য সফর করতে থাকেন আলমুসতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাকেম আবু আবদুল্লাহ /৭৫

আরও দেখুন সহীহ ইবনে হিব্বান ১১/-১০, হাদীস ৪৭১১; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ১০৯৬১, ১০৯৬২, ১১০২৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৫১২; সুনানে কুবরা, বাইহাকী /৯৯; ফুতূহু মিসর, ইবনে আবদুল হাকাম, পৃ. ২৬৯-২৭০; তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম /৩৩০; হায়াতুস সাহাবা /৪৯৪-৪৯৬

সব কিতাবে ঘটনার শেষ অংশ, যেটা মূল মহল্লে ইসতিশহাদ (অর্থাৎ যে অংশ দিয়ে সা সাহেব নিজের মতের পক্ষে দলীল দিয়েছেন) সেটা এমনই অর্থাৎ এই আয়াতে মূলত তাদের চিন্তার সংশোধন করা হয়েছে যে, তারা যে ইসলামের বিজয় প্রসার দেখে ভেবেছিলেন, এখন সামনে আর কোনো গাযওয়া নেই তখন তাদেরই বর্ণনা অনুযায়ী তাদের বলা হয়েছে, গাযওয়া ছেড়ে বাড়ি-ঘরে থেকে যাওয়া সঠিক নয় বরং তোমাদেরকে গাযওয়া জারি রাখতে হবে সেজন্য আবু আইয়ুব আনসারী রা. কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর জন্য বের হতেই থাকতেন; এমনকি কুস্তনতিনিয়ার গাযওয়ার সফরে তাঁর ওফাত হয়

মাওলানা সা সাহেবের বক্তব্যগুলোকে যদি শানে নুযূল সংক্রান্ত রেওয়ায়েতসমূহের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় তাহলে বোঝা যাবে, তিনি বিষয়টাকে কোত্থেকে কোথায় নিয়ে গেছেন

উদাহরণস্বরূপ

. রেওয়ায়েতসমূহে স্পষ্টভাবে আছে, আবু আইয়ুব আনসারী রা. পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, জিহাদ কিতাল এবং যুদ্ধ ছেড়ে যে আমরা নিজেদের ঘরবাড়িতে থিতু হয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম, আয়াতে সেটাকেই ধ্বংস বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং আমাদের আদেশ করা হয়েছে যে, কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ য্দ্ধু জারি রাখতে হবে

অর্থাৎ তারা যেমনটা ভেবেছিলেন যে, এখন লড়াইয়ের প্রয়োজন প্রেক্ষাপট নেই, এখন যুদ্ধ হবে না, আয়াতে তাদের এই চিন্তাকে সংশোধন করা হয়েছে অর্থাৎ এখনো কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর বিধান আছে এবং যুদ্ধ জারি আছে কিতাল যুদ্ধ ছেড়ে বসে গেলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে

এটা তো হল আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর পক্ষ থেকে শানে নুযূলে উল্লেখিত হালাকাত তথা ধ্বংসের তাফসীর কিন্তু মাওলানা সা সাহেব আবু আইয়ুব আনসারী রা. কর্তৃক উল্লেখিত শানে নুযূলের উদ্ধৃতি দিয়ে তার সমস্ত বয়ানে একথা বলেন যে, লড়াই না হওয়ার কারণে তারা যে নিজ নিজ বাড়িঘরে থিতু হয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন, সেটাকে এই আয়াতে সংশোধন করা হয়েছে অর্থাৎ লড়াই না হলেও তবু তোমাদেরকে কেবল দাওয়াতের জন্য বের হতে হবে এবং বের হওয়ার পেছনে অর্থ ব্যয় করতে হবে নতুবা তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে

অথচ বাস্তবতা হল, ধরনের কোনো কথা কোনো রেওয়ায়েতে নেই বরং সম্পূর্ণ এর বিপরীত কথা আছে অর্থাৎ আয়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে যুদ্ধের আদেশ করা হয়েছে এবং আমরা যা ভেবেছিলাম যে, এখন আর যুদ্ধ হবে না সেটাকে রদ করা হয়েছে

স্মর্তব্য, ইসলামের প্রচার-প্রসার বিজয় দেখে আরও কেউ কেউ ভেবেছিলেন যে, এখন আর কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর হুকুম নেই তখনই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারণা সংশোধন করে দিয়েছিলেন

সেজন্য গাযওয়ায়ে তাবুক-পরবর্তী একটি ঘটনা হাদীসের অনেক কিতাবে বর্ণিত হয়েছে সালামা ইবনে নুফাইল কিন্দী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বসা ছিলাম তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল

يا رسول الله أذال الناس الخيل ووضعوا السلاح وقالوا: لا جهاد قد وضعت الحرب أوزارها.

আল্লাহর রাসূল! মানুষ তো ঘোড়া ছেড়ে দিয়েছে, অস্ত্র রেখে দিয়েছে এবং বলতে শুরু করেছে যে, (এখন আর) কোনো জিহাদ নেই যুদ্ধ তার সমস্ত হাতিয়ার ছেড়ে দিয়েছে

বর্ণনাকারী বলেন

فأقبل رسول الله صلى الله عليه وسلم بوجهه فقال: >كذبوا الآن جاء القتال، ولا يزال من أمتي أمة يقاتلون على الحق،.. حتى تقوم الساعة..

‘( কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার দিকে) পুরোপুরি ফিরলেন এবং বললেন, তারা ভুল বলেছে লড়াই তো এখন শুরু হয়েছে আমার উম্মতের এক দল কিয়ামত পর্যন্ত হকের জন্য লড়াই করতে থাকবে

দীর্ঘ হাদীস এখানে কেবল সংশ্লিষ্ট অংশটুকু উল্লেখ করা হল সম্পূর্ণ হাদীসটি পড়ার জন্য দেখা যেতে পারে সুনানে নাসাঈ কুবরা, হাদীস ৪৩৮৬; সুনানে নাসাঈ মুজতাবা, হাদীস ৩৫৬১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৬৯৬৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৩০৭; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৬৩৫৮; ৬৩৬০

 মোটকথা আবু আইয়ুব আনসারী রা. এর উল্লেখকৃত শানে নুযূল তাফসীর দ্বারা وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى التَّهۡلُكَةِ   সংক্রান্ত যে ভুল চিন্তাটি সংশোধন করা হয়েছে, মাওলানা সা সাহেব ওই শানে নুযূল তাফসীরের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই ভুল চিন্তাটাকেই আয়াতের মর্ম আখ্যা দিয়েছেন! তিনি বয়ানে যখনই এই আয়াতের আলোচনা করেন তখনই তিনি এই কাজটা করেন এবং শ্রোতাদেরকে এটা বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করেন

. আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর বিবৃতিতেআল্লাহর রাস্তায় খরচ না করলে বা খরচে কমি করলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে ধরনের ধমকি বিষয়ক কোনো আলোচনাই নেই তিনি আয়াতের প্রথমাংশ وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللهِ সম্পর্কে কোনো আলোচনাই করেননি তিনি কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ যুদ্ধ ছেড়ে দেওয়াকে ধ্বংস আখ্যায়িত করেছেন বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে যুদ্ধ জারি রাখার হুকুম দিয়েছেন

সেজন্য তিনি সারা জীবন যুদ্ধের সফর করে গেছেন এমনকি যুদ্ধের সফরেই তার ওফাত হয়েছে এবং আয়াতের শানে নুযূল তিনি যুদ্ধের সফরেই শুনিয়েছেন এই সবকিছু সত্ত্বেও তাবলীগ জামাতের পরিভাষা অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় খরচ না করার বিষয়টিকে মাওলানা সা সাহেব আবু আইয়ুব আনসারী রা. এর বর্ণনাকৃত শানে নুযূলের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন অথচ তাবলীগী খুরূজের মধ্যে গাযওয়া-কিতাল কিছুই নেই!

. আবু আইয়ুব আনসারী রা. তার সমস্ত কথা বলছিলেন কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ যুদ্ধ সম্পর্কে এবং সেগুলো যুদ্ধের সফরেই বলছিলেন কিন্তু সা সাহেব এটাকে বানাচ্ছেন এভাবে

صحابہ نکلتے تھے قتال ہے ہي نہيں۔

সাহাবীগণ বের হতেন, অথচ কোনো লড়াই- ছিল না!! (বয়ান মে ২০১৯ ., বাদ ফজর)

কত ভয়ংকর বিকৃতি! তিনি কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর ঘটনাসমূহ সংক্রান্ত আয়াত দিয়ে কিতাল না করা এবং কিতালবিহীন খুরূজ আবশ্যক হওয়া প্রমাণ করছেন!!

. সমস্ত কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর এই বিবৃতিটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য অর্থাৎ এটি তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেননি এটাও বলেননি যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ডেকে তাদের বক্তব্য শুনেছেন, তাদেরকে উক্ত আয়াত নাযিল হওয়ার সংবাদ শুনিয়ে তাদের ইসলাহ করেছেন রেওয়ায়েতে ধরনের কিছুই নেই কিন্তু মাওলানা সা সাহেব নিজের পক্ষ থেকে এসব কথা বানিয়ে রেওয়ায়েতের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন আবু আইয়ুব আনসারী রা.-কে মাধ্যম বানিয়ে সেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন

১০//২০২০ . তারিখের বয়ানে বলেছেন

آپ نے ہم کو بلا کر فرمايا کہ کيا سوچ رہے ہو تم؟ ديکھو اللہ نے فرمايا! وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى التَّهۡلُكَةِ.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ডেকে বললেন, তোমরা কী চিন্তা করছ? দেখ আল্লাহ বলেছেন

وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى التَّهۡلُكَةِ.

১৫ জুলাই ২০২৪ . তারিখের বয়ানে বলেছেন

آپ نے بلايا انصار کو، انصار! اللہ ناراض ہو رہے ہيں، اللہ ہلاکت کي دھمکي دے رہے ہيں، تم نے کيا مشورے کيے؟ عرض کيا يا رسول اللہ ہم نے مشورہ کيا ہے کہ اسلام پھيل چکا ہے، مسلمانوں کي تعداد زيادہ ہو رہي ہے، کام کرنے والا عملہ بن گيا ہے، اب کوئي قتال بھي ہونے والا نہيں ہے کہ نکلنا ضروري ہو۔

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডাকলেন আনসারদের আনসারগণ! আল্লাহ নারায হচ্ছেন আল্লাহ ধ্বংসের ধমকি দিচ্ছেন তোমরা কী পরামর্শ করেছ? বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমরা মশওয়ারা করেছি যে, ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে, মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কাজের যোগ্য মানুষ তৈরি হয়ে গেছে এখন কোনো যুদ্ধও হবে না যে, বের হওয়া জরুরি

৩০ জানুয়ারি ২০২৪ . তারিখে বয়ানে বলেছেন

بلا بھيجا آپ نے انصار کو کہ تم نے کيا مشورہ کيا ہے؟ کہ جي ہم نے تو يہ مشورہ کيا! اللہ ڈانٹ پلا رہے ہيں تمھيں اور اللہ فرمارہے ہيں کہ اگر تم نے نکلنے ميں تاخير کي اور اس راستے ميں مال خرچ نہيں کيا تو اپنے ہاتھوں اپنے آپ کو ہلاکت ميں ڈالو گے۔

ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি আনসারদেরকে যে, তোমরা কী মশওয়ারা করেছ? (বললেন,) জী আমরা তো মশওয়ারা করেছি! (নবীজী বললেন,) আল্লাহ ধমক দিচ্ছেন তোমাদের আল্লাহ বলছেন, যদি তোমরা বের হতে বিলম্ব কর এবং এই রাস্তায় মাল খরচ না কর, তাহলে তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে ফেলে দেবে

এই তিন বয়ানে যা কিছু বলা হয়েছে, এগুলো মাওলানা সা সাহেবের বানানো উক্ত আয়াত নাযিলের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের ডেকে পাঠিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন ধরনের কোনো কিছু কোনো রেওয়ায়েতে নেই হায়াতুস সাহাবাতেও নেই, অন্য কোনো কিতাবেও নেই কিন্তু মাওলানা সা সাহেব এগুলো আবু আইয়ুব আনসারী রা.-এর বর্ণনাকৃত শানে নুযূলে ঢুকিয়ে বয়ান করে যাচ্ছেন এবং এই সবকিছু সরাসরি মারফু হাদীস বানিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে সম্বন্ধ করে বলে যাচ্ছেন

. আয়াত নাযিলের পর আনসারদের সঙ্গে নবীজীর কথোপকথনের যে ঘটনাটি সা সাহেব তৈরি করেছেন, এর দ্বারা তিনি এটিকে নবীজীর বাণীমূলক হাদীস বানিয়ে ফেলেছেন এবং অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে এর মাধ্যমে মানুষকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করেছেন যে, বাস্তবেই এখন কিতাল নেই; তা সত্ত্বেও বের হওয়া ফরয এতে যদি বিলম্ব কর কিংবা বের না হও, তাহলে ধ্বংস অনিবার্য!!

. মাওলানা সা সাহেব শানে নুযূলের রেওয়ায়েতটিতে বিকৃতি ঘটিয়েছেন এবং নিজে বিভিন্ন কথা বানিয়ে তাতে যুক্ত করেছেন এর দ্বারা তিনি সূরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতের তাফসীর বির রায় করেছেন অর্থাৎ তাহরীফ বিকৃতি ঘটিয়ে তিনি তার মর্ম পরিবর্তন করে দিয়েছেন

যেই শানে নুযূলকে সা সাহেব দলীল হিসেবে ব্যবহার করছেন তাতে ছিল, তোমরা যুদ্ধ ছেড়ে ঘরে বসে যেয়ো না; এভাবে তোমরা ধ্বংসের মধ্যে পড়বে

কিন্তু সা সাহেবের বিকৃতির পর উক্ত আয়াতের মর্ম দাঁড়াল এই এখন কোনো লড়াই নেই; তা সত্ত্বেও দাওয়াতের জন্য তোমাদের বের হওয়া ফরয এতে যদি বিলম্ব কর এবং এতে খরচ করতে কমি কর, তাহলে ধ্বংসের মধ্যে পড়বে

চিন্তা করুন, সা সাহেব বিষয়টিকে বিকৃত করে কোত্থেকে কোথায় নিয়ে গেলেন!!

. শানে নুযূলের রেওয়ায়েত বিকৃত করা, আয়াত নাযিলের পর আনসারদের সঙ্গে নবীজীর কথোপকথনের ঘটনা বানানো এবং আয়াতের মর্মে বিকৃতি ঘটানো এসবের পর অনিবার্যভাবে শরীয়তের মধ্যে কিছুনতুনবিধান যুক্ত করা হয়ে গেল উপরন্তু সা সাহেব আলাদাভাবে স্পষ্ট ভাষায় তার বানানো সেসব নতুন বিধানের ঘোষণাও দিয়ে থাকেন শরীয়ত বিকৃতি, শরীয়তে নতুন বিধান বানানো দ্বীনের মধ্যে বেদআত সৃষ্টি তো এগুলোরই নাম তার বানানো ঘোষিত সেই নতুন বিধানগুলো এই

.প্রচলিত দাওয়াতের জন্য বের হওয়া ফরয বের না হওয়া ধ্বংসের কারণ

.এই খুরূজে বিলম্ব করা গুনাহ এবং তা ধ্বংসের কারণ

. এই খুরূজে সম্পদ ব্যয় করা ফরয সম্পদ ব্যয় না করা ধ্বংসের কারণ

. (প্রচলিত) তাবলীগে মাল খরচ করাই হল সাবীলুল্লাহ তথা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা

. আয়াতে ( : ১৯৫) খুরূজ তথা আল্লাহর রাস্তায় চলতে থাকাকেইসাবীলুল্লাহবলা হয়েছে আল্লাহর রাস্তার নকল হরকত এবং খুরূজই সাবীলুল্লাহর নির্ধারিত অর্থ সমস্ত নেককাজ আল্লাহর রাস্তা নয়সমস্ত নেককাজই আল্লাহর রাস্তা এটা এই যমানায় শয়তানের ধোঁকা

تم ہر عمل خير کو اللہ کا راستہ اس ليے کہنے لگے ہو تاکہ خروج سے بچ جاؤ۔

তোমরা সমস্ত নেককাজকে আল্লাহর রাস্তা এজন্য বল, যাতে খুরূজ থেকে বেঁচে যাও’ (বয়ান মে ২০১৯ .)

. কিতাল হল আরেয (عارض) অর্থাৎ সাময়িক বিষয়, খুরূজ হল মূল (জানা নেই, কোন্ আয়াত বা কোন্ হাদীসে খুরূজটাই মূল আসল আখ্যা দিয়ে খুরূজের আদেশ করা হয়েছে এবং সেটাকে ফরয বলা হয়েছে? যদি খুরূজকেই মূল হিসেবে নির্ধারণ করে কোনো আদেশ এসে থাকে, তাহলে প্রশ্ন হল, সেই আদেশকৃত খুরূজ কোন্টি? এবং তা কোন্ কাজের জন্য?)

. তাবলীগই জিহাদ (অর্থাৎ গাশত করে মানুষদেরকে মসজিদে নিয়ে আসা এবং তাশকিল করে খুরূজ করানো এটাই জিহাদ)

সর্বশেষ কথাটি (অর্থাৎ তাবলীগই জিহাদ) তিনি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ . তারিখে ফজরবাদ বয়ানে বলেছেন অবশিষ্ট ছয়টি কথার আলোচনা পূর্বোল্লিখিত চারটি বয়ানেই বিদ্যমান আছে আর এই ছয়টি কথা তিনি এই আয়াত তার শানে নুযূল প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েই বলেছেন

বেদআতী তো তাকেই বলে, যে সমাজে প্রচলিত বেদআতসমূহের ওপর কেবল আমল করে থাকে কিন্তু যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন বেদআত সৃষ্টি করে, বেদআতসমূহের জন্য শরয়ী নসের মধ্যে অর্থগত বিকৃতি সাধন করে, সেগুলোর সমর্থনে হাদীস বানায়, সেগুলোর প্রতি অনবরত দাওয়াত দিয়ে যায়, বাড়াবাড়ি করে, এমনকি যারা এসব বেদআত থেকে দূরে থাকে এবং এগুলোর খণ্ডন করে, তাদের সমালোচনা তাচ্ছিল্য করে, তাদেরকে রেওয়াজী এবং সুন্নতের দুশমন আখ্যা দেয় এমন ব্যক্তিকে কি কেবল বেদআতী বলা যথেষ্ট হবে?!

. যখন সা সাহেব শানে নুযূলের রেওয়ায়েতে এবং আয়াতের তাফসীর শরীয়তের হুকুম-আহকামের মধ্যে এত কিছু বানিয়ে ফেলেছেন, তখন তার তো কমপক্ষে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া উচিত যে, আবু আইয়ুব আনসারী রা. যুদ্ধ ছাড়া নিছক দাওয়াতের উদ্দেশ্যে কোন্ কোন্ জামাতে তাশকীল হয়েছিলেন এবং ওই জামাতগুলোর কোন্ কোন্ ইসলামী শহরে কোন্ কোন্ মসজিদে রোখ্ হয়েছিল?!

সারকথা

সারকথা হল, শানে নুযূলের রেওয়ায়েত দ্বারা এটা পরিষ্কার যে, আয়াতে ( : ১৯৫) এমন কোনো কথা নেই, যার দ্বারা বোঝা যায় যে, কিতাল না হলেও আল্লাহর রাস্তায় বের হতে হবে এবং বের হওয়া অবস্থায় সম্পদ ব্যয়ে কমি করা ধ্বংসের কারণ

বরং ধ্বংস তো হল যুদ্ধ ছেড়ে দেওয়া বা যুদ্ধে বের হতে বিলম্ব করার মধ্যে

মাওলানা সা সাহেব প্রমাণ করতে চাইছেন, আয়াতে নাকি যুদ্ধ না হওয়া অবস্থাতেও আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার আদেশ করা হয়েছে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে বিলম্ব করলে এবং তাতে মাল খরচে কমি করলে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ধমকি দেওয়া হয়েছে অথচ এমন কথা না শানে নুযূলের রেওয়ায়েতে আছে, আর না কোনো মুফাসসির বা ফকীহ এমন কথা বলেছেন

এটা ভিন্ন কথা যে, যদি যুদ্ধের সক্ষমতা না থাকে কিংবা মুসলিম শাসকদের উদাসীনতার কারণে যুদ্ধ না হয়, এর পরও দাওয়াত, তালীমসহ সমস্ত দ্বীনী কাজ চালু রাখা জরুরি সেটা এজন্য যে, যুদ্ধ স্বতন্ত্র আমল এবং দাওয়াত, তাবলীগ, তালীম তাআল্লুম স্বতন্ত্র আমল অতএব একটা না হলে সে কারণে আরেকটা থেকে কেন বিরত থাকা হবে?

কিন্তু মাওলানা সা সাহেব জোরজবরদস্তি করে মানুষকে এটা বিশ্বাস করাতে চাইছেন যে, এই তাবলীগী খুরূজটাই আসল দাওয়াত; বরং পূর্ণাঙ্গ দাওয়াত এটা কুরআনে বর্ণিতনফর’-এর প্রথম মিসদাক উদ্দেশ্য এটা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহর নফরের চেয়েও অধিক তাকীদপূর্ণ বড় ফরয এবং যখন কিতাল না থাকে তখনো প্রচলিত তাবলীগের এই খুরূজটাই জিহাদ এবং কুরআনে বর্ণিত নফর হিসেবে গণ্য হবে যা জারি রাখা ফরয এতে খরচ করতে কমি করা হারাম যদি এমনটা করা হয় তাহলে ধ্বংস অনিবার্য

মাওলানা সা সাহেবের দাবি, সূরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতে নাকি একথাই বলা হয়েছে স্পষ্ট যে, তার এসব কথা একদম অবাস্তব! এগুলো মারাত্মক ভুল কথা এবং বিকৃতি আর বিকৃতি!

* * *

শরীয়তের উসূল আহকামে মাওলানা সা সাহেবের বিভিন্ন পরিবর্তন বিকৃতি সম্পর্কে (প্রকাশিত বইয়ের ৮২-৮৭ পৃষ্ঠায়) যে তালিকা পেশ করা হয়েছে, সেখান থেকে ১৩ টি বিষয়ে কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করা হল এখান থেকেই বোঝা যায়, মাওলানা সা সাহেব কী পরিমাণ বিকৃতি বেদআত সৃষ্টি করেছেন! অবশিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বতন্ত্র কোনো কিতাবে আলোচনা করা যেতে পারে এমনিতেই ফতোয়াটি দীর্ঘ হয়ে গেছে তাই এখানে আরও বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই

খোলাসা কথা

খোলাসা কথা হল, মাওলানা সা সাহেবের বয়ানে এখনো

. নবীগণের বিষয়ে সমালোচনা আপত্তিকর কথাবার্তা পাওয়া যায়

. তিনি শরীয়তের অনেক উসূল আহকামে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এবং শরীয়তে নতুন নতুন বিধান যুক্ত করছেন

. এই পরিবর্তনসমূহ ঘটানোর উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন আয়াত হাদীসে মারাত্মক রকমের মর্মগত বিকৃতি ঘটিয়েছেন শরীয়তে পরিবর্তন ঘটানোটাই হারাম; উপরন্তু তিনি এর সমর্থনে শরীয়তের বাণীসমূহের মধ্যে বিকৃতি ঘটাচ্ছেন এটা কত ভয়ংকর বিষয়!

. এই পরিবর্তন বিকৃতিগুলো তো এমনিতেই হারাম তদুপরি এগুলোর সমর্থনে তিনি নিজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাদীসে নিজের মতলবের কথাগুলো ঢুকিয়ে পুরোটাকে হাদীসের নামে চালিয়ে দিয়েছেন আর কখনো তো গোটা একটা হাদীসই নিজের পক্ষ থেকে বানিয়ে ফেলেছেন

এই ধরনের ভয়ংকর মারাত্মক রকমের গোমরাহীর কারণে মাওলানা সা সাহেবকে কোনো দ্বীনী জামাতের দ্বীনী যিম্মাদার দ্বীনী রাহবার বানানো জায়েয নয় এবং যারা সঠিক-ভুল সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, তাদের জন্য মাওলানা সা সাহেবের বয়ান শোনা জায়েয নয়

অন্যান্য প্রশ্নের জবাব আমরা শুরুতেই উল্লেখ করেছি তাই সেগুলোর বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করার প্রয়োজন নেই

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হকের ওপর ইসতিকামাত নসিব করুন মাওলানা সা সাহেব তার অনুসারীদেরকে সকল শুযূয (বিচ্যুতি-বিভ্রান্তি) গোমরাহী থেকে তওবা করে সঠিক পথে আসার তাওফীক দিন আমীন

هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم على سيدنا ومولانا محمد، آخر الأنبياء وخاتم النبيين، وعلى آله وصحبه أجمعين، والحمد لله رب العالمين.

 

টীকা

১. এখানে ‘দাওয়াত ও তাবলীগ’ বলতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শাখার কথা বলা হচ্ছে শুধু বর্তমান তাবলীগ জামাতের কথা বলা হচ্ছে না

 

২.  হাদীস শরীফে আছে

مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَلَه أَجْرُهَا، وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَه مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا، وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَه مِنْ غَيْرِ أَنْ يُنْتَقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ.

অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো ‘সুন্নতে হাসানা’-এর প্রচলন করবে, তার জন্য রয়েছে সেই সুন্নতে হাসানার সওয়াব এবং তার পরে যারা সে অনুযায়ী আমল করবে তার (সমপরিমাণ) সওয়াব তবে তাদের সওয়াব থেকে কিছু কমবে না আর যে ইসলামের মধ্যে কোনো ‘সুন্নতে সায়্যিআ’ তথা কোনো মন্দ প্রথা জারি করবে তার জন্য রয়েছে সেই মন্দ প্রথার গুনাহ এবং তার পরে যারা সে অনুযায়ী মন্দ কাজ করবে তাদের (সমপরিমাণ) গুনাহ তবে তাদের গুনাহ থেকে কিছু কমবে না মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৯১৭৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৭

উলামায়ে কেরাম জানেন, সুন্নতে হাসানা জারি করা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কোনো নেক কাজের প্রচলন ঘটানো এটা দুইভাবে হতে পারে

১. কোনো এলাকা এমন, যেখানে কোনো একটি মানসূস নেক আমলের প্রচলন নেই সেখানে কেউ ওই নেক আমলের প্রচলন ঘটালো উদাহরণস্বরূপ এর মধ্যে এ বিষয়টাও অন্তর্ভুক্ত যে, কোনো ঘরের সদস্যদের মধ্যে নামাযের প্রচলন নেই একজন দাওয়াতের মাধ্যমে ওই ঘরের এক সদস্যকে নামাযী বানিয়ে দিল অতঃপর তাকে দেখে অন্যরাও নামায পড়া শুরু করে দিল

২. কোনো নেক আমল, যার নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি শরীয়ত আবশ্যক করে দেয়নি এমন নেক আমলের কোনো একটি জায়েয ও সহজ পদ্ধতির প্রচলন কেউ ঘটালো যেমন দাওয়াত ও তাবলীগের মুবাহ পদ্ধতিসমূহ, দ্বীনী তালীমের বিভিন্ন জায়েয তরিকা, চিকিৎসার নতুন মুবাহ পদ্ধতি...

এ প্রকারের মধ্যে এটাও অন্তর্ভুক্ত যে, কোনো নেক আমলের সহজতার জন্য কেউ কোনো জিনিস আবিষ্কার করল এবং ওই আমলের জন্য সেটার প্রচলন ঘটালো

সুন্নতে হাসানার দ্বিতীয় প্রকারকে কখনো বেদআতে হাসানাও বলা হয় উভয় নামই সঠিক; তবে হাদীস মোতাবেক তাকে ‘সুন্নতে হাসানা’ বলাই বেশি উত্তম

সুন্নতে সায়্যিআ সুন্নতে হাসানার একদম বিপরীত সুন্নতে সায়্যিআর মধ্যে সমস্ত গুনাহের নতুন-পুরোনো সব পন্থা এবং সমস্ত বেদআত অন্তর্ভুক্ত

যেমনিভাবে কোনো সুন্নতে হাসানাকে বেদআত, খেলাফে সুন্নত বা রেওয়াজ-রসম নাম দিয়ে প্রত্যাখ্যান করা জায়েয নেই, তেমনিভাবে কোনো সুন্নতে সায়্যিআকে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সুন্নতে হাসানা বা বেদআতে হাসানা আখ্যা দেওয়া স্পষ্ট গোমরাহী

এটাও মনে রাখা দরকার, সুন্নতে হাসানার যে সূরত ও পন্থা নিছক মুবাহ, সেটাকে হুবহু সুন্নত (সুন্নতে মাকসূদা) এবং একমাত্র সুন্নত বলাও বেদআত ও গোমরাহী

 

.

مزيد ملاحظہ ہو، تفسير ماجدي، مولانا عبد المجيد درياباديؒ : 1؍370-369، ترجمة القرآن المسمي کشف الرحمن مع تفسير القرآن و تسہيل القرآن، مولانا احمد سعيد دہلويؒ: 1؍203-204، قرآن عزيز مع ترجمہ مولانا احمد علي لاہوري (؁1304-؁1381ھ مطابق؁1962ء-؁1887ء) ص: 38، ترجمہ شيخ الہند مع حواشي : 1؍133-131، موضح قرآن، شاہ عبد القادر دہلويؒ ، ص: 38، بيان القرآن، حکيم الامت حضرت مولانا محمد اشرف علي تھانويؒ : 1؍111-110، تفسير حقاني، حضرت مولانا عبد الحق حقانيؒ :1؍556، تفسير مواہب الرحمن ، حضرت مولانا سيد امير عليؒ (؁1337ھ-؁1274ھ مطابق ؁1919ء-؁1858ء) 2؍132-129، معالم العرفان في دروس القرآن حضرت مولانا صوفي عبد الحميد سواتيؒ 3؍246-214، تبيان الفرقان في تفسير القرآن درسي افادات حضرت مولانا عبد المجيد لدھيانوي 1؍521، انوار البيان حضرت مولانا عاشق الہي بلند شہريؒ 1؍309-308، معارف القرآن حضرت مولانا محمد ادريس کاندھلويؒ 1؍301-300۔

.

وكلام الجصاص في هذا المقام أقوى وأحكم مما جاء في ”شرح مشكل الآثار“، وما بنى عليه كلامه هناك في ترجيح تفسير أبي أيوب الأنصاري رضي الله عنه على تفسير عمرو بن العاص رضي الله عنه قد خالفه نفسه في نفس الكتاب، فعلى الطالب بالتأني والتثبت وترك العجلة.

 

.

ولا بد من ضم آخر كلام الطبري (وأنفقوا أيها المؤمنون في سبيل الله...) إلى أول كلامه (وأنفقوا في إعزاز ديني...).

.

شان نزول کي موقوف روايات شرائط کے ساتھ متعدد اہل علم کے نزديک مرفوع حکمي کا درجہ رکھتا ہے، ليکن ان کے نزديک بھي انہيں مرفوع حقيقي کا درجہ دينا جائز نہيں، اور انہيں براہ راست مرفوع حقيقي بنا کر روايت کرنا تو صريح روايت سازي اور علانيہ جعل و اختلاق ہے، يہاں مولانا سعد صاحب نے ايسا ہي کيا۔

 

 

 

 

advertisement