দীর্ঘ দুই বছর পর গাজায় যুদ্ধবিরতি
‖ ত্বরান্বিত করুক ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতার পথ
আলহামদু লিল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ অনুগ্রহ ও দয়ায় দুই বছরাধিক কাল থেকে জায়নবাদী ইসরাইলের জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়া মজলুম গাজাবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছে। গত ১০ অক্টোবর ২০২৫ থেকে সেখানে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যদিও মুসলমানদের চিরশত্রু জায়নবাদীরা মাঝে মাঝেই হঠকারিতা প্রদর্শন করছে। হুমকি-ধমকিও দিয়ে যাচ্ছে। তবুও গাজায় যুদ্ধবিরতি মোটামুটিভাবে কার্যকর রয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস মুজাহিদীন কর্তৃক তূফানুল আকসা সংঘটিত করার পর থেকে ইসরাইল সরকার দুই বছরেরও বেশি সময়কাল যাবৎ জুলুমের স্টিম রোলার চালিয়েছে নিরপরাধ গাজাবাসীর ওপর। হাজার হাজার মাসুম শিশু ও নারীসহ হত্যা করেছে লক্ষাধিক মানুষকে। যদিও তা দাপ্তরিক হিসাবে ৭০ হাজারের মতো। পুরো গাজা উপত্যকাকে পরিণত করা হয়েছে আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসস্তূপে। মানুষের ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল, ব্যবসাকেন্দ্রগুলো ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে তারা থামেনি; বরং গাজার হাসপাতালগুলোও মিসমার করা হয়েছে। রক্ষা পায়নি হাসপাতালের রোগী, ডাক্তার, নার্স, সে এলাকায় কর্মরত সাংবাদিক, উদ্ধারকর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ কোনো শ্রেণির মানুষই। এই কঠিন অবস্থায়ও মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতাবানেরা গাজাবাসীর সহায়তায় এবং এ দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য কার্যকরভাবে এগিয়ে আসেনি। তবে পুরো পৃথিবীর মুসলিম সমাজ নিজেদের দুআ ও সমর্থনে গাজাবাসীর পাশেই ছিল। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মুসলমান এই দুই বছরে হয়তো নিজেদের জন্যও আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে এত কিছু চায়নি, যেভাবে তারা গাজাবাসীর জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেছে। শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি মুক্তি ও স্বাধীনতা না এলেও গাজাবাসী নিজেদের ভিটায় ফেরত যাওয়া শুরু করেছে। যদিও সেখানে এখন আর বসত বাড়ি, খাবার ও পানীয়সহ কোনো কিছুরই তেমন ব্যবস্থা নেই; তবুও যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলে আন্তর্জাতিক সহায়তা সেখানে পৌঁছাবে এবং ইনশাআল্লাহ গাজা উপত্যকায় প্রয়োজনীয় স্থাপনা ও ইউটিলিটি ব্যবস্থা পুনর্নির্মিত ও পুনঃস্থাপিত হবে।
যেভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হল
তূফানুল আকসায় হামাস যোদ্ধাদের হাতে অতর্কিতভাবে ঐতিহাসিক মার খাওয়ার পর ইসরাইল এত বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে, তারা হামাস এবং তাদের সহযোগিতাকারী সবাইকে গুণে গুণে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। বহুবার তারা দম্ভের সাথে বলেছিল, পৃথিবী থেকে হামাসের চিহ্নই মুছে ফেলা হবে। হামাসের বড় বড় অনেক নেতাকে তারা হত্যাও করেছে। কিন্তু হামাসকে শিক্ষা দেওয়ার নামে তারা মূলত টার্গেট করেছে নিরপরাধ ফিলিস্তিন, গাজার জনগণ ও গাজা নগরীকে। যে ফিলিস্তিনীদের ভূমি অবৈধভাবে দখল করে তারা নিজেদের রাষ্ট্র সেখানে বানিয়েছে, তাদেরকেই তারা হত্যা করে সে অঞ্চলে একক রাজত্বের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দুই বছরের এই নির্মম অত্যাচারের পরও হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে তারা।
অন্যদিকে গাজাকে খালি করার জন্য নেতানিয়াহু ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রলোভন দেখিয়ে, নরমে-গরমে বিভিন্নভাবে গাজাবাসীকে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করেছেন অনেক দিন থেকে। কিন্তু গাজাবাসী সে প্রলোভনে সাড়া দেয়নি। নিজেদের জানমাল, সন্তান-সম্পদ হারিয়েও নিজ দেশে থাকতে সংকল্পবদ্ধ থেকেছে। আর ক্ষমতালোভী ও বিলাসী আরব রাষ্ট্রগুলোর সরকারদের মাধ্যমে ইসরাইলকে পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়ে সে অঞ্চলে ফিলিস্তিনের নাম মুছে ফেলার চেষ্টাও করা হয়েছে ইব্রাহীমী চুক্তির শিরোনামে। কিন্তু নিজ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আক্রোশের ভয়ে আরব নেতারা সেটি করার সাহস দেখাতে পারেননি। এসবের মধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন হয় ইসরাইল ও আমেরিকা। ইউরোপ আমেরিকাসহ পশ্চিম ও প্রাচ্যের অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতেও ইসরাইলবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। আরব সরকারগুলো তাদের দেশে ভ্রাতৃপ্রতিম আরব ফিলিস্তিনীদের পক্ষে বিক্ষোভ করতে না দিলেও অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে এই বিক্ষোভ দিন দিন আরও বেগবান হয়ে উঠছিল। জাতিসংঘে ৪৯ বার যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও ইসরাইলের মুরুব্বি ও প্রধান সহায়তাকারী আমেরিকার ভেটোতে তা কার্যকর হতে পারেনি। এরই মধ্যে একে একে ইউরোপের বহু রাষ্ট্র তাদের জনগণের বিক্ষোভ ও দাবির মুখে ফিলিস্তিনকে একে একে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে থাকে। এমন নানামুখী চাপ ও বিশ্বব্যাপী আমেরিকার ভেটো প্রয়োগের নিন্দার মুখে হয়তোবা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটু লজ্জা পেয়ে যান।
এসবের মধ্যেই ইসরাইল একদিন কাতারের ওপরও হামলা করে বসে। তাদের দাবি ছিল, তারা সেখানে অবস্থানরত হামাস নেতাদেরকে টার্গেট করেছে। কাতার আবার বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বড় বন্ধু। সেখানে রয়েছে আমেরিকার ওই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সেনাঘাঁটি। কয়েক মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য সফর উপলক্ষে কাতার তাঁকে দিয়েছিল বিলাসবহুল বোয়িং বিমানের উপহার এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্রয় চুক্তির পুরস্কার। স্বভাবতই কাতার ও সৌদি আরব কাতারের ওপর ইসরাইলী হামলায় নড়ে চড়ে বসে। নিজেদের ওপর মর্কিন নিরাপত্তার আশ্রয় আছে ভেবে যারা এত দিন নাকে তেল দিয়ে আয়েশ করছিলেন, তারা এখন নিজেদেরকে অনিরাপদ অনুভব করা শুরু করেন।
এসব আলোচনার মধ্যেই হঠাৎ একদিন পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী সেনাকর্মকর্তা ও সরকারের বড় বড় নেতাদের নিয়ে রিয়াদে গিয়ে হাজির হন। সেখানেই স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক কৌশলগত নিরাপত্তা চুক্তি। যাতে বলা হয়, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের কোনো একটি দেশ আক্রান্ত হলে উভয় দেশ আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। এবং দুটি দেশ একত্রিত হয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবে এবং নিজেদের নিরাপত্তা বিধান করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ চুক্তি আমেরিকাকে ভালোভাবেই নাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ গুঞ্জন চলছিল, কিছুদিনের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোও এ চুক্তির আওতায় আসবে। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ইসরাইল কর্তৃক হামলার পরই কাতার সফরে গিয়ে সে দেশের আমীরের কাছে সহমর্মিতা প্রকাশ করে এসেছেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। অনেকেই মনে করছেন, পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কৌশলগত সামরিক সম্পর্ক আমেরিকা ও তার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।
যাহোক শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ২০ দফা যুদ্ধবন্ধ ও শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাসের কাছে হাজির হন। পরিকল্পনাটি হয়তো তিনি আগেই ইসরাইল ও নেতানিয়াহুকে দেখিয়ে নিয়েছিলেন অথবা তারা উভয়ে মিলেই প্রস্তুত করেছেন। ট্রাম্প ঘোষণা দেন– ‘এ দফাগুলো মানতে ইসরাইল প্রস্তুত রয়েছে। এখন হামাস মেনে নিলেই যুদ্ধবন্ধ কার্যকর হবে।’
এ প্রস্তাব গাজার গণমানুষের প্রিয় সংগঠন হামাস ও তার নেতাদের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে নিজ জাতির রক্ষা এবং অমানবিক নির্যাতন ও দুর্দশা থেকে পরিত্রাণের সুযোগ, অন্যদিকে দখলদার শত্রুগোষ্ঠী ইসরাইল ও তার মিত্র আমেরিকার অনেকগুলো অন্যায় ও একপেশে শর্ত মেনে নেওয়ার চাপ। যেহেতু হাতে সময় ছিল খুবই কম, ট্রাম্প ছড়ি ঘোরানোর মতো আচরণ শুরু করে দিয়েছিলেন, তাই হামাসকে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের অনুরোধও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। অবশেষে ৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে মিশরের শহর শারম আলশাইখে হামাস ও ইসরাইলী নেতারা আলোচনায় বসেন। যুদ্ধবন্ধ চুক্তিতে সম্মত হন। এরপরই শুরু হয় যুদ্ধ বন্ধের প্রক্রিয়া। এর ৫ দিন পর (১৩ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিশরের শারম আলশাইখে হাজির হন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোগান, মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ সিসি, কাতারের আমীর শেখ তামীম বিন হামাদ আলসানী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে কারণেই হোক তার মুখ দিয়ে সত্য বের হয়ে পড়ে, ‘বিশ্বের জনগণ মনে করছে, আমরা গাজায় শান্তি ফেরাতে অনেক বিলম্ব করে ফেলেছি।’ তিনি এ-ও বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধে প্রায়শই তার কাছে অস্ত্র চেয়েছিলেন, যার মধ্যে এমন কিছু রয়েছে, যার নাম তিনি আগে কখনও শোনেননি।’
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফা ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে এবং বিশ্ববাসী জেনে গেছে, এতে বেশ কিছু দফা একতরফা রয়েছে, যা শুধু ইসরাইলের পক্ষপাতিত্ব করে। আবার এমন কয়েকটি দফাও রয়েছে, যেগুলো খুবই অস্পষ্ট। সম্ভবত মতলবি। ভবিষ্যতে গাজা পুনর্নির্মাণে পশ্চিমা পুঁজিবাদীদের স্বার্থ রক্ষারও হয়তো বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে কোনো কোনো দফায়। আর ফিলিস্তিন এবং গাজা অঞ্চলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তো আগের মতোই থেকে গেছে। তবুও নিজ দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে হামাস নেতাগণ এই চুক্তি মেনে নিয়েছেন।
কে কী পেল, কী হারাল?
যুদ্ধবন্ধ চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরই বিভিন্ন মহলে বিশ্লেষণ চলছে, এ চুক্তির ফলে কে জিতল, কে হারল? এটি হামাসের পক্ষে গেল, না ইসরাইলের? প্রত্যেকে যার যার মতো বিশ্লেষণ করছে। কেউ বলছেন, এতে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুরই বিজয় হয়েছে। কারণ গাজা এখন হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। ফিলিস্তিনীদের স্বাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়াই একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আপাতত অবসান হয়েছে। আবার কেউ কেউ ভিন্নভাবেও বিশ্লেষণ করছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস কর্তৃক ইসরাইলের ওপর অতর্কিত হামলার পর ‘ফিলিস্তিন সংকট : স্বদেশ ও বিদেশ’ শিরোনামে আলকাউসারে (রবিউল আখির ১৪৪৫/নভেম্বর ২০২৩) আমরা একটি নিবন্ধে কিছু কথা বলেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা মনে করি, যদিও অক্টোবর ২০২৫-এ যুদ্ধবন্ধ চুক্তিতে ইসরাইল বা হামাস কেউ জয়ী হয়নি; কারণ ইসরাইলও হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি আর গাজা বা ফিলিস্তিনবাসীরও কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা আসেনি। তবুও এই চুক্তিতে বিভিন্ন কারণে হামাসের প্রাপ্তির পাল্লাই ভারি। কারণ ইসরাইল ও তার মিত্র আমেরিকা দুই বছর নিকৃষ্টতম জুলুম ও চাপ প্রয়োগ করেও হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি।
১. যুদ্ধবাজ ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বহুবার দম্ভভরে বলেছিলেন, হামাস নামক কোনো কিছু পৃথিবীতে আর অবশিষ্ট থাকবে না। তাদের প্রতিটি সদস্যকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে ইত্যাদি। কিন্তু তা তারা করতে পারেনি। হামাসের বড় বড় কয়েকজন মুজাহিদ নেতাকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও হামাস কিন্তু সদর্পেই সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
২. নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প চেয়েছিলেন, গাজা উপত্যকা থেকে সেখানকার অধিবাসীদেরকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরা দখল করে নেবে। এজন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা পেশ করাসহ প্রলোভন, হুমকি-ধমকি এবং নির্যাতন– সকল রাস্তাই অবলম্বন করেছে; কিন্তু এর সবকিছুই বিফলে গেছে। গাজাবাসী তাদের এলাকা ছেড়ে যায়নি। সেখানেই তারা এখন পুনর্বাসিত হবে ইনশাআল্লাহ।
৩. ইসরাইলের সামরিক শক্তিমত্তার বিষয়ে যুগ যুগ থেকে দুনিয়াবাসীকে জুুজুর ভয় দেখিয়ে আসছিল মতলবি গোষ্ঠী; ইসরাইল অপরাজেয়, তার সামরিক শক্তির কোনো তুলনা নেই। তার দেশের প্রতিরোধের দেয়াল টপকানো সম্ভব নয়– এরকম কত কী! কিন্তু পৃথিবীবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, বাস্তবে ইসরাইল তেমনটি নয়। ক্ষমতার মোহে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা আরব শাসকরাও যদি যৌথভাবে সাহস দেখাত, তাহলে ইসরাইলকে পরাজিত করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হয়ে যেত। কিন্তু তারা তা না করলেও ইসরাইলকে এক ফোঁটাও ছাড় দেয়নি ফিলিস্তিনীদের প্রিয় সংগঠন হামাস। তারা নিজ জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। এবং দুই বছর আগে সীমিত সামর্থ্য নিয়েও বীরদর্পে মিসমার করে দিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যূহ।
সীমিত সংখ্যক যোদ্ধা, আরও সীমিত অস্ত্র-বারুদ তাদেরই মোকাবেলা করতে পারেনি ইসরাইল। অথচ তাদের গোয়েন্দারা পুরো পৃথিবীকে নজরদারিতে রাখে। মোসাদের নাম শুনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন অনেকে। কিন্তু সে মোসাদই খবর পায়নি তার দেশ আক্রান্ত হচ্ছে।
এ হল, অপ্রতিরোধ্য ইসরাইল। যদি নিরস্ত্র নিরীহ নারী-শিশু ও সাধারণ মানুষের ওপর বোমা মারাই শক্তির পরিচয় হয়, তো সেটি তো বহু দেশের ফ্যাসিবাদীরাই করে থাকে। এমনকি অনেক বেসামরিক গডফাদার গ্যাংও করে থাকে। যাহোক সেই ২০২৩-এ যে নেতানিয়াহু ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের চেহারা মলিন ও বিকৃত হয়েছে, তাতে কিন্তু আর হাসি ফুটতে দেখা যায়নি।
৪. হামাসের সাথে ইসরাইলের সরাসরি শান্তিচুক্তিতে বসতে বাধ্য হওয়া। বিগত দুই বছর যাবৎ ইসরাইল হামাস বিভিন্ন শান্তি আলোচনা হয়েছে পরোক্ষভাবে অন্যান্য দেশের মাধ্যমে। কিন্তু অবশেষে শারম আলশাইখে হামাস নেতাদের সাথে যুদ্ধবন্ধ চুক্তির আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে ইসরাইল। এটি অবশ্যই হামাসের জন্য বড় প্রাপ্তি।
৫. পশ্চিমের দেশগুলো তাদের দুচোখো নীতির কারণে হামাস প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করত। কিন্তু এই দুই বছরের ঘটনা প্রবাহের পর এখন তারাও হামাসকে আমলে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
৬. হামাসের এই প্রতিরোধের ফলেই ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত হয়েছেন। নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বরং অনেক পশ্চিমা দেশ তাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। যা ইসরাইলের জন্য ছিল চরম অপমানজনক বিষয়।
সারকথা, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবন্ধ চুক্তিতে যদিও বিভিন্ন নেতিবাচক দফা রয়েছে, তবুও গাজাবাসীর বৃহত্তর স্বার্থে এখনকার মতো হামাস মেনে নিয়েছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, এসব নেতিবাচক ধারা নিয়ে এখনই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এমন তো নয় যে, গাজাবাসী মোটামুটি শন্তিতে ছিল, এই চুক্তির কারণে তাদের সমস্যা বাড়বে। বরং আসলে তো তাদের হারানোর কিছু নেই। তারা তো কয়েক যুগ থেকে দখলদারদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রয়েছে। সে বিবেচনায় এসব তো তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। অবশেষে দৃঢ়তার সাথেই আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়, ইনশাআল্লাহ হামাস ও গাজাবাসীর এ আত্মদান ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করবে। আজকে শত্রুরা যুদ্ধবন্ধ চুক্তিতে বাধ্য হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনবাসীর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দিতেও বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ।
اگر عثمانیوں پر کوہ غم ٹوٹا تو کیا غم ہے
کہ خون صد ہزار انجم سے ہوتا ہے سحر پیدا
উসমানীদের ওপর বেদনার পাহাড় ভেঙে পড়লে ভাবনার কী আছে
শত-সহস্র নক্ষত্রের আত্মত্যাগেই তো ভোরের আগমন ঘটে।