আনওয়ারুল কুরআন : প্রশ্নোত্তর
আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।
প্রশ্ন ১১৫ : তাফসীরে জালালাইনে সূরা আলে ইমরানের ৫৭ নং আয়াতের তাফসীরে প্রসঙ্গক্রমে বলা হয়েছে, ঈসা আলাইহিস সালামকে যখন আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়, তখন তার মা জীবিত ছিলেন। এটার বাস্তবতা কতটুকু, জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর : এ কথাটি ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। যে বর্ণনার ভিত্তিতে এ কথা বলা হয়, সে বর্ণনাটি গ্রহণযোগ্য নয়। সে বর্ণনার সনদে মাতরূক (পরিত্যাজ্য) রাবী আছে।
প্রশ্ন ১১৬ : সূরা মুজাদালার ৮-১০ নম্বর আয়াতের শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা কী?
উত্তর : মদীনার ইহুদীরা মুসলিমদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য এই কাজ করত যে, মুসলিমদেরকে দেখলেই তারা পরস্পরে কানাকানি করত ও ইশারা দিত, যা দেখে মুসলিমদের মনে হত, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কোনো কোনো মুনাফিকও এরকম করত। এতে যেহেতু মুমিনদের কষ্ট হত, তাই ইহুদী ও মুনাফিকদেরকে এসব করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তবুও তারা এমন করত। সে কথাই উক্ত আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে।
এরপর পরস্পরে কানাকানি বিষয়ে উক্ত আয়াতগুলোতে মুসলমানদেরকে এই হেদায়েত দেওয়া হয়েছে যে, তোমরা পরস্পরে যখন কানে কানে কথা বল, তখন এমন বিষয়ে কানাকানি করবে না, যাতে গুনাহ, সীমালঙ্ঘন ও রাসূলের অবাধ্যতা হয়। কানাকানি যদি করতেই হয়, তাহলে কোনো ভালো বিষয়ে করবে, তাতে তাকওয়ার প্রতি লক্ষ রাখবে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করবে। আর ইহুদীরা যে কানাকানি করে, তা শয়তানের প্ররোচনায় তোমাদেরকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই করে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কেউ তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তাই তোমাদের উচিত, সেদিক ভ্রুক্ষেপ না করা এবং কেবল আল্লাহরই ওপর ভরসা করা।
প্রশ্ন ১১৭ : হুজুর, আমি কোনো কোনো কিতাবে কুরআনের আয়াত সংখ্যার বিভিন্নতা সম্পর্কে পড়েছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শেখানোর জন্য আয়াত পড়তেন, তখন আয়াতের শুরু-শেষ বোঝানোর জন্য থামতেন। তা থেকে সাহাবায়ে কেরাম বুঝে নিতেন, কোত্থেকে আয়াত শুরু আর কোথায় শেষ। কিন্তু পরে যখন তিনি আবার দুই আয়াত মিলিয়ে পড়তেন, তখন যে প্রথমবার শোনেনি, সে মনে করত, দুই আয়াত মিলে এক আয়াত। এভাবে আয়াত সংখ্যার গণনার মধ্যে পার্থক্য হয়েছে। আমি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেবের ‘কুরআন কারীমের আয়াতসংখ্যা : একটি পর্যালোচনা’ বইটি পড়েছি। তাতে এমন কোনো কথা পাইনি। আমার প্রশ্ন হল, ওই কথা কি ঠিক?
উত্তর : ওই কথা সঠিক নয়। এমন বক্তব্যের বিস্তারিত খণ্ডন মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেব দামাত বারাকাতুহুমের ওই কিতাবেরই উর্দূ সংস্করণের শেষ দিকে আরবী অংশে রয়েছে। আর আয়াত গণনাতে যে বৈচিত্র্য, তার মূল কারণ কী– তা তো ওই বইয়ের বাংলা সংস্করণেই সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ওই কিতাবের উর্দূ সংস্করণটির নাম–
عنايات رحمن در عدد آيات قرآن
প্রশ্ন ১১৮ : কুরআন কারীম খতম করার যে দুআ– اللهم آنس وحشتي في قبري.. প্রচলিত হাফেজী কুরআন শরীফে পাওয়া যায়, তার ভিত্তি বা দলীল কী? দুআটি কোন্ কিতাবে পাওয়া যাবে?
উত্তর : সংক্ষিপ্ত কথা হল, এ দুআটি তাবে তাবেয়ী দাউদ ইবনে কায়স রাহ.-এর সূত্রে মুহাদ্দিস আবু মানসূর মুযাফ্ফার আলআরজানী রাহ. তার ‘ফাযাইলুল কুরআন’ গ্রন্থে এবং মুহাদ্দিস আবু বকর ইবনুয যাহহাক রাহ. তার ‘আশশামায়েল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাদের উদ্ধৃতিতে ইবনুল জাযারী রাহ. তার ‘আননাশর ফিল কিরাআতিল আশর’ (২/৪৬৩-৪৬৪) কিতাবেও উল্লেখ করেছেন। তবে সেখানে দুআর প্রথম বাক্যটি নেই। তাবে তাবেয়ী দাউদ ইবনে কায়স রাহ. সরাসরি বলেছেন, নবীজী এই দুআটি কুরআন খতমের পরে পড়তেন।
প্রথম বাক্যটিসহ পুরো দুআটি মোল্লা আলী কারী রাহ. তার ‘আলহিযবুল আ‘যম’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক দামাত বারাকাতুহুম কর্তৃক রচিত ‘কুরআন কারীমের আয়াতসংখ্যা : একটি পর্যালোচনা’ নামক গ্রন্থের শেষে উল্লেখিত সাক্ষাৎকারটি পড়তে পারেন।
প্রশ্ন ১১৯ : সূরা রূমের ৫৪ নম্বর আয়াতে তিনবার ضُعْف শব্দটি রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশি ছাপা কুরআন শরীফে শব্দটির ض হরফে পেশ রয়েছে। কিন্তু আমি সৌদি আরবের ছাপা কুরআন শরীফে শব্দটির ض হরফে যবর দেখেছি। আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : ضعف শব্দের অর্থ দুর্বলতা। আরবী ভাষায় শব্দটির উচ্চারণ ض হরফে পেশ ও যবর দুইভাবেই আছে। কুরআন কারীমের এ আয়াতের পাঠপদ্ধতিও অবিচ্ছিন্ন ধারায় দুইভাবেই চলে এসেছে। এমনকি আমরা যে পাঠরীতি অনুযায়ী পড়ি, সেই রীতিতেও শব্দটি দুইভাবেই আছে। অতএব শব্দটির ض হরফে যবর ও পেশ দুইভাবে পড়াই সঠিক।
আরও বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, মাআনিল কিরাআত, আবু মানসূর আলআযহারী ৩/২৬৭; জামিউল বায়ান, আবু আমর আদদানী, পৃ. ৫৩১-৫৩২; আততাইসীর ফিল কিরাআতিস সাবআ, আবু আমর আদদানী, পৃ. ১৩৫; ইবরাযুল মাআনী (শরহুশ শাতিবিয়্যাহ) পৃ. ৪৯৪; আননাশর ফিল কিরাআতিল আশর, ইবনুল জাযারী ৪/২৫৪৬-২৫৪৯