জুমাদাল উলা ১৪৪৭   ||   নভেম্বর ২০২৫

মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন
‖ কুরআনে বর্ণিত কয়েকটি ঘটনা

মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ

কিয়ামতের সময় আল্লাহ তাআলা সমস্ত মানুষকে আবার জীবিত করবেন দুনিয়ার আমলের হিসাবে মানুষকে জান্নাত-জাহান্নামে দেবেন আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই করবেন এবং তিনি তা করতে পরিপূর্ণভাবে সক্ষম কুরআন কারীমে বহুবার আল্লাহ তাআলা সেই কথা বলেছেন কিন্তু যাদের অন্তরে ঈমান নেই, তারা বিষয়টি বিশ্বাস করে না তারা আখেরাতও বিশ্বাস করে না এবং আল্লাহ তাআলা যে মৃত্যুর পরে পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম তাও বিশ্বাস করে না তাদের সেই অবিশ্বাসের কথা কুরআন কারীমেও বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ কুরআনে তাদের অবিশ্বাস সংশয়ের জবাবও দিয়েছেন কুরআনে বহু জায়গায় অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তিনি কিয়ামতের সময় অবশ্যই সবাইকে পুনরায় জীবিত করবেন মর্মে আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে অনেক দলীল-প্রমাণ নিদর্শনও উল্লেখ করেছেন

সূরা ইয়া সীন তো আমরা নিয়মিতই তিলাওয়াত করি সূরার শেষ কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন

قَالَ مَنْ یُّحْیِ الْعِظَامَ وَ هِیَ رَمِیْمٌ،قُلْ یُحْیِیْهَا الَّذِیْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَ هُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِیْمُ .

সে (মানুষ) বলে, কে এই অস্থিগুলোকে জীবিত করবে এগুলো পচে-গলে যাওয়া সত্ত্বেও? বলে দাও, সেগুলোকে জীবিত করবেন সেই সত্তা, যিনি তাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন তিনি প্রত্যেক সৃষ্টি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত আয়াত : ৭৮-৭৯

তার পরে আরও বলেছেন

اَوَ لَیْسَ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ بِقٰدِرٍ عَلٰۤی اَنْ یَّخْلُقَ مِثْلَهُمْ بَلٰی وَهُوَ الْخَلّٰقُ الْعَلِیْمُ، اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیْـًٔا اَنْ یَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَیَكُوْنُ.

তবে কি যে সত্তা আকাশমণ্ডলী পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ (পুনরায়) সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? কেন নয়? তিনি তো মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ! তাঁর ব্যাপার তো এই যে, তিনি যখন কোনো কিছুর ইচ্ছা করেন, তখন কেবল বলেন, ‘হয়ে যাও’, অমনি তা হয়ে যায় আয়াত : ৮০-৮১

সূরা কিয়ামাহ্য় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (তরজমা) ‘মানুষ কি মনে করে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারব না? কেন নয়? আমি তো তার আঙুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম আয়াত : -

দুনিয়াতে যে মানুষটা ছিল, আখেরাতে ঠিক সে মানুষটাকেই আল্লাহ জীবিত করে তুলবেন তা যতই বিস্ময়কর মনে হোক, কাফেররা যতই অস্বীকার করুক, আল্লাহ তা করতে পরিপূর্ণভাবে সক্ষম

মৃতকে জীবিত করা আল্লাহ তাআলার জন্য বিন্দুমাত্র কঠিন কিছু নয় আল্লাহ যে তা করবেন বলেছেন, বিষয়টি বিশ্বাস করার জন্য কেবল এটাই যথেষ্ট কিন্তু মানুষের যেন তা বিশ্বাস করতে আরও সহজ হয় এবং যেন মুমিনদের অন্তরে আরও দৃঢ়তা আসে, এজন্য মানব ইতিহাসে বেশ কয়েকবার আল্লাহ তাআলা তা করেও দেখিয়েছেন বিভিন্নভাবে করে দেখিয়েছেন কুরআন কারীমে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে এমন কয়েকটি ঘটনা বর্ণিতও হয়েছে

হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম একবার আল্লাহ তাআলাকে বললেন, আল্লাহ! আপনি মৃতকে কীভাবে জীবিত করবেন, তা আমাকে দেখান

আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিষয়টি বিশ্বাস করো না?

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, অবশ্যই বিশ্বাস করি কিন্তু আমার মনের প্রশান্তির জন্য আমি বিষয়টি দেখতে চাই

আল্লাহ বললেন, ঠিক আছে, তুমি চারটি পাখি ধর সেগুলোকে পোষ মানাও তারপর জবাই করে সেগুলোর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন পাহাড়ে রেখে আস তারপর তাদেরকে ডাক দাও সবগুলো আবার জীবন্ত হয়ে তোমার কাছে ছুটে চলে আসবে

ঘটনা কুরআন কারীমে এভাবে বর্ণিত হয়েছে

وَاِذْ قَالَ اِبْرٰهٖمُ رَبِّ اَرِنِیْ كَیْفَ تُحْیِ الْمَوْتٰی قَالَ اَوَ لَمْ تُؤْمِنْ قَالَ بَلٰی وَلٰكِنْ لِّیَطْمَىِٕنَّ قَلْبِیْ قَالَ فَخُذْ اَرْبَعَةً مِّنَ الطَّیْرِ فَصُرْهُنَّ اِلَیْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلٰی كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ یَاْتِیْنَكَ سَعْیًا وَاعْلَمْ اَنَّ اللهَ عَزِیْزٌ حَكِیْمٌ.

এবং (সেই সময়ের বিবরণ শোন) যখন ইবরাহীম বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি মৃতকে কীভাবে জীবিত করবেন আমাকে তা দেখান আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করছ না? বলল, অবশ্যই করছি, কিন্তু ( আগ্রহ প্রকাশ করেছি এজন্য যে,) যাতে আমার অন্তর পরিপূর্ণ প্রশান্তি লাভ করে আল্লাহ বললেন, আচ্ছা, চারটি পাখি ধর এবং সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও তারপর (সেগুলোকে জবাই করে) তার একেক অংশ একেক পাহাড়ে রেখে দাও তারপর তাদেরকে ডাক দাও সবগুলো তোমার কাছে ছুটে চলে আসবে আর জেনে রেখ, আল্লাহ তাআলা মহাক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময় সূরা বাকারা (০২) : ২৬০

ঘটনায় কয়েকটি পাখি জবাই করে সেগুলোর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একত্রে মিশিয়ে ভাগ ভাগ করা হয়েছে কোন্ অঙ্গ কোন্ পাখির মানুষের পক্ষে তা আলাদা করা সম্ভব নয় কিন্তু মহান আল্লাহ সেখান থেকে প্রত্যেক পাখিকে ঠিক তার অঙ্গসহই জীবিত করেছেন

কুরআনে আরেকটি ঘটনা রয়েছে, এক এলাকার সমস্ত বাসিন্দা মারা গিয়েছিল, সেখানকার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে ধুলোয় মিশে গিয়েছিল অর্থাৎ এলাকাটি বিরানভূমি হয়ে গিয়েছিল এক ব্যক্তি গাধায় চড়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন বসতির এমন বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে তিনি ভাবলেন, এই ধুলোয় মিশে যাওয়া নগরী, এটাকে আল্লাহ তাআলা কীভাবে আবার আবাদ করবেন? এই ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদ, যাদের হাড্ডি পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের সময় এদেরকে কীভাবে পুনরায় জীবিত করবেন! তাঁর চিন্তা কোনো ধরনের সন্দেহের কারণে ছিল না, বরং এটা ছিল তাঁর বিস্ময় প্রকাশ

আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে স্বচক্ষে দেখাতে চাইলেন, কীভাবে তিনি পুনরায় জীবন দান করতে পারেন তাতে ঘটনা সকলের জন্য একটি দৃষ্টান্তও হবে এবং এর দ্বারা মানুষ হেদায়েতপ্রাপ্তও হবে আল্লাহ তখন ওই ব্যক্তিকে মৃত্যু দান করলেন সে অবস্থায় প্রায় এক বছর কাটল তারপরে আল্লাহ তাআলা তাকে আবার জীবন দান করলেন এবং তাকে জীজ্ঞেস করলেন, এই মৃত অবস্থায় তুমি কতদিন ছিলে?

ওই ব্যক্তি বললেন, মনে হয় এক দিন বা এক দিনেরও কম সময়

আল্লাহ বললেন, তুমি তো অবস্থায় এক বছর ছিলে তোমার খাদ্যসামগ্রীর দিকে তাকাও, এগুলো দ্রুত পচনশীল, অথচ এক বছর পরে এখনো কেমন তরতাজা আছে আর তোমার গাধাটাকে দেখো, সেটা মরে পচে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে! এবার দেখো, তোমার গাধাটাকে আমি কীভাবে আবার জীবিত করে তুলি

তারপরে আল্লাহ তাআলা তার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া গাধাটাকে আগের মতো জীবিত করে দেখালেন

বিস্ময়কর ঘটনা দেখে ওই ব্যক্তি বলে উঠলেন, আল্লাহ! আমার বিশ্বাস ছিল, আপনি সব বিষয়ে ক্ষমতা রাখেন আপনি মহান!

আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি ঘটনা এজন্য ঘটিয়েছি যে, তোমাকে কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য আমার কুদরতের একটি নিদর্শন বানাতে চাই

কুরআন কারীমে ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে

اَوْ كَالَّذِیْ مَرَّ عَلٰی قَرْیَةٍ وَّ هِیَ خَاوِیَةٌ عَلٰی عُرُوْشِهَا قَالَ اَنّٰی یُحْیٖ هٰذِهِ اللهُ بَعْدَ مَوْتِهَا فَاَمَاتَهُ اللهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَهٗ قَالَ كَمْ لَبِثْتَ قَالَ لَبِثْتُ یَوْمًا اَوْ بَعْضَ یَوْمٍ قَالَ بَلْ لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانْظُرْ اِلٰی طَعَامِكَ وَ شَرَابِكَ لَمْ یَتَسَنَّهْ وَانْظُرْ اِلٰی حِمَارِكَ وَ لِنَجْعَلَكَ اٰیَةً لِّلنَّاسِ وَ انْظُرْ اِلَی الْعِظَامِ كَیْفَ نُنْشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوْهَا لَحْمًا فَلَمَّا تَبَیَّنَ لَهٗ قَالَ اَعْلَمُ اَنَّ اللهَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ.

অথবা (তুমি) সে ব্যক্তি (-এর ঘটনা) সম্পর্কে (চিন্তা করেছ), যে একটি বসতির ওপর দিয়ে এমন এক সময় গমন করছিল, যখন তা ছাদ উল্টে (থুবড়ে) পড়ে রয়েছিল সে বলল, আল্লাহ বসতিকে এর মৃত্যুর পর কীভাবে জীবিত করবেন? অনন্তর আল্লাহ তাকে এক বছরের জন্য মৃত্যু দান করলেন এবং তারপর তাকে জীবিত করলেন (অতঃপর) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কত কাল যাবৎ ( অবস্থায়) থেকেছ? সে বলল, এক দিন বা এক দিনের কিছু অংশ! আল্লাহ বললেন, না, বরং তুমি (এভাবে) এক বছর থেকেছ এবার নিজ পানাহার সামগ্রীর প্রতি লক্ষ করে দেখ তা একটুও পচেনি আবার নিজ গাধাটিকে দেখ, (পচে গলে কী অবস্থা হয়েছে) (আমি এটা করেছি) এজন্য যে, আমি তোমাকে মানুষের জন্য (নিজ কুদরতের) একটি নিদর্শন বানাতে চাই এবং (এবার গাধাটির) অস্থিসমূহ দেখ, আমি কীভাবে সেগুলোকে উত্থিত করি এবং তাতে গোশতের পোশাক পরাই সুতরাং যখন সত্য তার সামনে সুস্পষ্ট হয়ে গেল, তখন সে বলে উঠল, আমার বিশ্বাস আছে, আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমতা রাখেন সূরা বাকারা (০২) : ২৫৯

ঘটনাটি কোথায়, কার সঙ্গে ঘটেছিল, কুরআন কারীম বা সহীহ হাদীসে সেসব বর্ণিত হয়নি ইতিহাসবিদগণ বলেন, বনী ইসরাঈলের যুগে বুখতে নসরের আক্রমণে যখন জেরুজালেম নগরী ধ্বংস হয়ে যায়, তার পরে হযরত উযায়ের আলাইহিস সালাম সে ধ্বংসপ্রাপ্ত জেরুজালেমে গিয়েছিলেন তখন তার সঙ্গেই ঘটনা ঘটেছিল

আবার অনেকে বলেন, ঘটনা আরমিয়া আলাইহিস সালামের সঙ্গে ঘটেছিল ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আরও অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে সেগুলো বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়

দ্রষ্টব্য : সূরা বাকারার ২৫৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর, তাফসীরে তবারী; তাফসীরে ইবনে কাসীর; আলকামিল ফিততারীখ /২০৪-২০৫; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া /৩৮৪-৩৮৬; কাসাসুল কুরআন, সিওহারবী /৫৯৭-৬০২

সূরা বাকারার ২৪৩ নম্বর আয়াতে সংক্ষেপে আরও এক জনপদের কথা বলা হয়েছে কোনো এক কালে এক জনপদের বাসিন্দারা মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে বের হয়ে পড়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল হাজার-হাজার কিন্তু আল্লাহ তাআলা ঠিকই তাদের মৃত্যু ঘটান তারপর আবার তাদেরকে জীবিত করে তোলেন

কুরআন কারীমে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে

اَلَمْ تَرَ اِلَی الَّذِیْنَ خَرَجُوْا مِنْ دِیَارِهِمْ وَ هُمْ اُلُوْفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللهُ مُوْتُوْا ثُمَّ اَحْیَاهُمْ اِنَّ اللهَ لَذُوْ فَضْلٍ عَلَی النَّاسِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا یَشْكُرُوْنَ.

তুমি কি তাদের অবস্থা জানো না, যারা মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল এবং তারা সংখ্যায় ছিল হাজার-হাজার? অতঃপর আল্লাহ তাদের বললেন, মরে যাও তারপর তিনি তাদের জীবিত করলেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মানুষের প্রতি অতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সূরা বাকারা (০২) : ২৪৩

এসব লোক কারা ছিল? কোন্ কালের ছিল? কেন তারা মৃত্যু ভয়ে পালাচ্ছিল? এসব বিষয়ে কুরআন মাজীদে বা সহীহ হাদীসে কিছু বর্ণিত হয়নি তবে ইতিহাসবিদগণ বলেন, এটা বনী ইসরাঈলের ঘটনা বনী ইসরাঈলের কোনো এক জনপদবাসী কোনো কারণে মৃত্যু ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল তারা যে স্থানকে নিরাপদ মনে করেছিল, সেখানে পৌঁছার পরেও আল্লাহ তাআলার হুকুমে তাদের মৃত্যু এসে যায় অনেক পরে যখন তাদের অস্থিরাজি জরাজীর্ণ হয়ে যায়, তখন একসময় হযরত হিযকীল আলাইহিস সালাম সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি আল্লাহর কাছে তাদের জীবনদানের দুআ করলেন আল্লাহ তাআলা তাঁকে আদেশ করলেন, তিনি যেন সেই অস্থিরাজিকে ডাক দেন হিযকীল আলাইহিস সালাম ডাক দিলেন সাথে সাথেই অস্থিসমূহে প্রাণ সঞ্চার হল এবং ওই মানুষগুলো আবার জীবিত হয়ে উঠল

দ্রষ্টব্য : সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর; তাফসীরে তবারী, তাফসীরে ইবনে কাসীর, আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া /২৮০-২৮২; কাসাসুল কুরআন, সিওহারবী /৪৪৩-৪৪৪

উপরিউক্ত ঘটনাদুটির বিশদ বিবরণ যা- হোক, উভয় ঘটনাতেই আল্লাহ তাআলা কিছু মানুষকে মৃত্যুর পর আবার জীবন দান করেছেন তাদের অস্থিরাজি মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ধুলোয় মিশে যাওয়া সেই হাড্ডিগুলোকে আল্লাহ আবার সম্পূর্ণ আগের রূপে ফিরিয়ে দিলেন, তাতে বিন্দুমাত্র কমতি হল না, ত্রুটি হল না এবং ওই মৃত মানুষকে তার আগের দেহতেই জীবিত করে তুললেন কুরআনের ভাষ্যে দ্বিতীয়বার জীবন দান আল্লাহ তাআলার জন্য আরও বেশি সহজ

মৃত্যু বা মৃত্যু-মতো অবস্থার পরে আল্লাহ তাআলার পুনরায় জীবিত করার এরকম আরও একাধিক ঘটনা কুরআন কারীমে সংক্ষেপে বা ইশারায় ব্যক্ত হয়েছে

এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন

كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَه ذلِكَ، وَشَتَمَنِي، وَلَمْ يَكُنْ لَه ذلِكَ، فَأمَّا تَكْذِيبُه إيَّايَ فَزَعَمَ أنِّي لا أقْدِرُ أنْ أُعِيدَهُ كَمَا كَانَ، وأمَّا شَتْمُه إيَّايَ، فَقَوْلُه لِي وَلَدٌ، فَسُبْحَانِي أنْ أتَّخِذَ صَاحِبَةً أوْ وَلَدًا.

বনী আদম আমার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে, অথচ তার তা করার অধিকার নেই সে আমাকে নিন্দাও করেছে, অথচ তা করারও তার কোনো অধিকার নেই

আমার প্রতি তার মিথ্যারোপ হল, সে মনে করে, আমি তাকে পুনরায় সেভাবে জীবিত করতে সক্ষম নই, যেমনটি সে পূর্বে (ইহজগতে) ছিল আর আমার প্রতি তার মন্দ কথা হল, সে বলে আমার সন্তান আছে অথচ আমি স্ত্রী-সন্তান গ্রহণ করা থেকে পবিত্র সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪৮২

সকল যুগেই অবিশ্বাসীরা বলত, মৃত্যুর পরে অস্থি মাংস ধুলোয় মিশে গিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে সে মানুষকে আল্লাহ আর জীবিত করতে পারবেন না

কেউ কেউ বলে, জীবিত করলেও তা আর আগের মানুষটি হবে না অথচ আল্লাহ তাআলা ইহজগতেই মানুষকে চাক্ষুষ দেখিয়েছেন, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া প্রাণকে তিনি কত সহজে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে পারেন আর পৃথিবীর অন্য অনেক বিষয়ে তো আমরা এটা দেখেই থাকি যে, প্রাণবন্ত কোনো জিনিস ধীরে ধীরে মৃতপ্রায় হয়ে যায়, তারপরে আল্লাহ কীভাবে আবার তাতে প্রাণ সঞ্চার করেন সবুজ সতেজ গাছপালা, উর্বর ভূমি এসব একসময় নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, তারপর আল্লাহ তাতে আবার জীবন সঞ্চার করেন, এগুলো আবার প্রাণপ্রাচুর্যে খলবলিয়ে হেসে ওঠে

কেবল প্রকৃতির পুনর্জীবন দেখেই তো হৃদয় ঈমানের সঞ্জীবনী সুধায় প্লাবিত হবার কথা প্রকৃতির প্রতিটি আবর্তনই তো ঈমান প্রবর্ধক, ঈমান সঞ্চারক কিন্তু যার জেদ হল ঈমান না আনার, সে তো চোখের সামনে লাশ যিন্দা হতে দেখলেও ঈমানমুখী হবে না এতসব দলীল-প্রমাণ নিদর্শন দেখার পরেও ব্যাপারে যার বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকবে, কিয়ামতের দিন জেগে ওঠার পরে তার মন্দ পরিণাম ভোগ করা ছাড়া নিশ্চয়ই আর কিছুই করার থাকবে না

 

 

advertisement