মাওলানা সা‘দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে আকাবির উলামায়ে বাংলাদেশের ফতোয়া
‖ বিস্তারিত আলোচনা
(পূর্ব প্রকাশের পর)
৫. নামাযকে মসজিদের যিমনী আমল আখ্যা দেওয়া
মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেন–
مسجد کو وقت دینا، مسجد میں رہنا، بذات خود مقصود ہے، نماز مسجد کا ایک ضمنی عمل ہے، میری بات بہت مشکل سے آوےگی سمجھ میں، نماز مسجد کا ضمنی عمل ہے، نماز مسجد کا ضمنی عمل ہے، نماز مسجد کا ضمنی عمل ہے، مسجد میں ایمان اور عمل کے حلقے چلتے رہتے تھے، اس درمیان نماز کھڑی ہو جاتی تھی، ابوبکر صدیق رضی اللہ عنہ بیان فرما رہے تھے، اور بیان کرتے کرتے فرمایا، بیان کے دوران کہ اب نماز پڑھ لو۔
‘মসজিদকে সময় দেওয়া, মসজিদে অবস্থান করা স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য। নামায তো মসজিদের একটি যিমনী আমল বা পার্শ্বকাজ (অর্থাৎ দ্বিতীয় স্তরের কাজ যেটা মসজিদের উদ্দিষ্ট কাজের মধ্য দিয়ে আদায় করা হয়)। আমার কথা অনেক কষ্টে বোঝে আসবে। নামায মসজিদের যিমনী আমল। নামায মসজিদের যিমনী আমল। নামায মসজিদের যিমনী আমল। মসজিদে ঈমান ও আমলের হালকা চলতে থাকত। এর মধ্যে নামায দাঁড়িয়ে যেত। আবু বকর সিদ্দীক রা. বয়ান করছিলেন। বয়ান করতে করতে বয়ানের মধ্যে বললেন, এখন নামায পড়ে নাও।’ (বয়ান ৩০/১০/২০১৮ ঈ., বাদ ফজর, ৫০ মি. ৫০ সে. থেকে)
পর্যালোচনা
নিঃসন্দেহে এটা গোমরাহীর কথা। এর মাধ্যমে নামাযের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞাও প্রকাশ পায়। ইসলামে দাখেল হওয়ার পর সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় ফরয নামায। নামায ঈমানের পরে ইসলামের সবচেয়ে বড় রোকন। তাছাড়া নামাযই সেই ইবাদত, মসজিদের সঙ্গে যার সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি। এবং মসজিদ প্রতিষ্ঠার যেসব মাকসাদ ও উদ্দেশ্য, সেগুলোর মধ্যে সবার ওপরে হল নামায। মসজিদ আবাদ করার যত আমল আছে, তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আযান ও ইকামতসহ জামাতের সঙ্গে ফরয নামায আদায় করা। যদি মসজিদে সবকিছু হয়, কিন্তু আযান ও ইকামতসহ জামাতের সঙ্গে ফরয নামায আদায় না হয়, তাহলে মসজিদ অনাবাদ বলে ধর্তব্য হবে। যদি মসজিদে জুমার নামায হয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামাত হয়, আযান হয় এবং রমযানে ইতিকাফ হয়, কিন্তু অন্য কোনো আমল না হয়, তাহলেও এ মসজিদ আবাদ হিসেবে ধর্তব্য হবে। এটাকে ঢালাওভাবে অনাবাদ বললে ভুল হবে।
অতএব নামাযকে মসজিদের যিমনী আমল আখ্যা দেওয়া এবং বারবার একই কথা বলতে থাকা যে কত মরাত্মক ভুল, তা স্পষ্ট।
হাদীস শরীফে মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন–
إنما هي لذكر الله عزَّوجل، والصلاة، وقراءة القرآن.
অর্থাৎ মসজিদসমূহ তো আল্লাহ তাআলার যিকির, নামায এবং কুরআন পাঠের জন্য। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫
এ তিন আমল, যেগুলোর উদ্দেশ্যে মসজিদ প্রতিষ্ঠা, এগুলোর মধ্যে নামায হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং সবচে জামে ইবাদত। অর্থাৎ এর মধ্যে অন্য দুটি ইবাদতেরও সমাবেশ ঘটে। কারণ নামাযের মধ্যে যিকিরও আছে এবং কুরআন পাঠও আছে। হাদীস শরীফে আছে–
إِنَّ هূذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلاَمِ النَّاسِ، إِنَّمَا هُوَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ.
নামাযে কথাবার্তা বলা যায় না; নামায তো হল তাসবীহ, তাকবীর এবং কুরআন তেলাওয়াত। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৩৭
এ তিন আমল (যিকির, নামায ও কুরআন তেলাওয়াত)– এর মধ্যে মসজিদের খাস আমল হল ফরয নামায। কারণ মসজিদে ফরয নামায জামাতের সঙ্গে আদায় করা জরুরি। ওযর ব্যতীত মসজিদের ফরয নামাযের জামাত থেকে পিছিয়ে থাকা গুনাহ। এটা সুনানে হুদা থেকে বিমুখতা ও গোমরাহী। অপরদিকে যিকির (যার ব্যাপকতার মধ্যে ইলমের মজলিস ও ঈমানের মজলিসও অন্তর্ভুক্ত) এবং কিরাআতে কুরআন (চাই তা কুরআন কারীমের তেলাওয়াত হোক কিংবা কুরআন কারীম শেখা-শেখানো) যে কোনো জায়গায় হতে পারে। এটা স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সাহাবায়ে কেরামের সীরাত দ্বারা প্রমাণিত।
অতএব যে ইবাদতের জন্য মসজিদ প্রতিষ্ঠা এবং যে ইবাদত ওযর ব্যতীত মসজিদের বাইরে করলে অসম্পূর্ণ গণ্য হয়, মাওলানা সা‘দ সাহেব সেটাকেই মসজিদের যিমনী আমল বলছেন। অপরদিকে তালীমের হালকা ও ঈমানের মুযাকারার হালকা, যেটা মসজিদেও হতে পারে, মসজিদের বাইরেও হতে পারে, সেটাকে পরোক্ষভাবে মসজিদের মূল আমল আখ্যা দিচ্ছেন!!
তিনি বলেছেন, ‘মসজিদে ঈমান ও আমলের হালকা চলতে থাকত; এর মধ্যে নামায দাঁড়িয়ে যেত’। তার এই কথা যদি সঠিকও হত, তবু এটা কীভাবে বোঝা গেল যে, নামায মসজিদের যিমনী আমল? ভিন্ন ব্যবস্থা না থাকার কারণে কিংবা সহজতার জন্যে সে যুগে মসজিদের মধ্যে অনেক কাজ হত। তার অর্থ তো এই নয় যে, যেটা মসজিদের মূল আমল সেটাই যিমনী আমল হয়ে যাবে। উপরন্তু এটাও দৈনিকের ঘটনা ছিল না যে, ঈমান ও তালীমের হালকা চলতে থাকত এবং এর মধ্য দিয়ে নামায দাঁড়িয়ে যেত।
সেজন্য যখন তিনি দলীল বলা শুরু করলেন তখন শুধু এটুকু বললেন–
ابو بکر صدیق رضی اللہ عنہ بیان فرما رہے تھے اور بیان کرتے کرتے فرمایا، بیان کے دوران، کہ اب نماز پڑھ لو!
‘আবু বকর সিদ্দীক রা. বয়ান করছিলেন। এবং বয়ান করতে করতে বয়ানের মধ্যে বললেন, এখন নামায পড়ে নাও!’
অথচ এটা কেবল একটা ঘটনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর যখন সাকীফায়ে বনী সায়িদাতে আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর খেলাফতের বাইআত সংঘটিত হল, তখন দ্বিতীয় দিন সর্বসাধারণের বাইআতের জন্য সবাই মসজিদে এলেন। সেসময় বাইআত ও সংক্ষিপ্ত খুতবার পর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বললেন, ‘নাামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যাও।’ (সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৬৬০-৬৬১; তারীখে তবারী ৩/২১০)
ব্যস, এই এক ঘটনাকে তিনি ‘কায়েদায়ে কুল্লিয়া’ তথা সর্বদা ও সর্বস্থানে প্রযোজ্য মৌলিক নীতি বানিয়ে ফেললেন এবং নিঃসংশয়ে বলে দিলেন, নামায মসজিদের যিমনী আমল!! বরং এই ঘটনাই তো প্রমাণ করে যে, নামাযই হল মূল আমল। সেজন্যই তো আবু বকর রা. বয়ান বন্ধ করে নামাযকে অগ্রাধিকার দিলেন। নামায যিমনী আমল হলে সেসময় নামায পড়ারই বা কী দরকার ছিল; বরং আসল আমল বয়ানই চলত! যেহেতু বয়ান বন্ধ করে সাহাবায়ে কেরাম নামায পড়লেন, সেহেতু বোঝা গেল, বয়ান থেকে নামাযের গুরুত্বই বেশি। সুতরাং নামায আসল আমল; যিমনী আমল নয়।
তাছাড়া এই ঘটনার মধ্যেও তো নেই যে, নামাযের পরে আবার বয়ান বা তালীম শুরু হয়েছিল।
ইসলামে নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কিত কুরআন কারীমের আয়াত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসগুলো স্মরণ করুন। এরপর মসজিদে নামাযে উপস্থিত হওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে ওযু করে বের হওয়ার ফযীলতসমূহ, নামাযের অপেক্ষায় মসজিদে বসে থাকার ফযীলত ও ঘটনাসমূহ স্মরণ করুন। সালাম ফেরানোর পর নামাযের জায়গায় বসে থাকা সম্পর্কিত যেসব ফযীলত আছে, সেগুলোও স্মরণ করুন। এরপর দেখুন, নবীজীর এসব বাণী এবং সীরাতের এসব ঘটনার সঙ্গে মাওলানা সা‘দ সাহেবের এ কথার কোনো মিল আছে কি না?
চিন্তাগত বিপথগামিতার শিকার কিছু লোকের ধারণা হল, দ্বীন তো রাজনীতির জন্য। নামায ও অন্যান্য ইবাদত তো এই কাজেরই প্রস্তুতির জন্য। এখন মাওলানা সা‘দ সাহেব বলছেন, আসল কাজ তো ঈমান ও আমলের হালকা। এজন্যই মসজিদে একত্র হতে হবে। নামায তো ব্যস মসজিদের যিমনী আমল। যেন তার মতে ইসলামে দাওয়াত ও তালীমের হালকা হল আসল কাজ আর নামায হল পার্শ্বকাজ।
কেউ যদি বলে, তিনি সরাসরি নামাযকে তো যিমনী আমল বলেননি; বরং তাকে কেবল মসজিদের যিমনী আমল বলেছেন। প্রশ্ন হল, তাহলে নামায কোথাকার মূল আমল? নামায কি ঘরের বা বাজারের মূল আমল? বাস্তবতা হল, সা‘দ সাহেবের এই কথা গোমরাহী, যাকে কোনো ব্যাখ্যার মাধ্যমে সঠিক বানানো সম্ভব নয়।
মোটকথা ইবাদতের জন্যই তো দাওয়াত, তালীম, তাবলীগ-তাযকীর এবং সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা। সেই ইবাদতের ভিত্তি ও মূল যে জিনিস এবং যে ইবাদত মসজিদের খাস ও বড় আমল, সেটাকেই মসজিদের যিমনী আমল বলা হচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই, এটা নামাযকে ‘ট্রেনিং’ বলার মতোই একটা চিন্তাগত বিপথগামিতা।
শোনা যায়, কিছু মানুষ এখানে এই ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যে, মাওলানা সা‘দ সাহেব মাশাআল্লাহ, নামাযের খাস ইহতিমাম করেন। ধীরে-সুস্থে নামায আদায় করেন। নামাযের দাওয়াত দিতে থাকেন। অতএব তিনি কীভাবে নামাযকে হালকা মনে করতে পারেন? এখানে এ ব্যাখ্যাও চলবে না। কারণ বেদআত ও ফিকরি গোমরাহী (চিন্তাগত বিপথগামিতা), এটা অধিক পরিমাণে ও সুন্দরভাবে ইবাদত করে থাকে এমন মানুষের মধ্যেও অনেক সময় পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে খারেজীদের ইবাদতের কত প্রশংসা করা হয়েছে। অথচ তাদের চিন্তাগত বিপথগামিতার কারণে তাদের সম্পর্কে এটাও বলা হয়েছে–
هم شر الخلق والخليقة.
তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট মাখলুক।
অতএব, কেবল আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার দ্বারা এটা বোঝা যাবে না যে, ওই ব্যক্তি চিন্তাগত বিপথগামিতা থেকে মুক্ত। সেজন্য যখন ফিকরী গোমরাহীপূর্ণ কথাবার্তা বয়ানসমূহে বলতে থাকবে, তখন এই বলে সাফাই দেওয়া যাবে না যে, তিনি তো ভালো আমলওয়ালা।
৬. নাহি আনিল মুনকার এবং খুরূজ ও নফরের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের বিধান হুবহু এক হওয়ার দাবি
শরীয়ত নারীদের মূল কর্মক্ষেত্র ঘরকে বানিয়েছে। এমনকি তাদের জন্য ফরয নামাযের জামাত ও জুমার নামাযের জন্য বের হওয়া মুস্তাহাবও বলেনি।
ইলমও শিখতে বলেছে স্বামী বা কোনো মাহরাম আত্মীয় থেকে। প্রয়োজন ব্যতীত ইলম শেখার জন্যও তাদেরকে ঘর থেকে বের হওয়ার উৎসাহ দেয়নি। জিহাদ ও কিতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানের জন্যও তাদেরকে খুরূজ ও নফরের আদেশ করা হয়নি। তালীম-তাআল্লুম, তরবিয়ত-তাযকিয়া এবং আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার এসব আমল আঞ্জাম দেওয়ার জন্য ঘরকেই নারীদের মূল কর্মক্ষেত্র বা অবস্থানক্ষেত্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কাজের উদ্দেশ্যে বের হতে এবং সফর করতে তাদের আদেশও করা হয়নি এবং উৎসাহও দেওয়া হয়নি। সেজন্য উলামায়ে কেরামের মাঝে এ বিষয়ে তো ইখতিলাফ আছে যে, মাসতুরাতের তাবলীগী জামাত বের হওয়া বা বের করা কি নাজায়েয, নাকি বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে জায়েয! তবে আমাদের জানামতে কোনো নির্ভরযোগ্য ফকীহ ও মুফতী এ বিষয়ে দ্বিমত করেননি যে, পুরুষদের জন্য তাবলীগ জামাতে বের হওয়া বৈধ এবং উৎসাহ প্রদানযোগ্য।
কিন্তু এর বিপরীতে মাওলানা সা‘দ সাহেবের বক্তব্য হল–
میرے نزدیک خدا کی قسم جو ذمہ داری مردوں کی ہے، بعینہ وہ ذمہ داری عورتوں کی ہے، کوئی فرق نہیں ہے، کوئی فرق نہیں ہے ، رائی کے ، بال کے برابر بھی فرق نہیں ہے، مرد اور عورت کی ذمہ داری میں اس دعوت کے کام کے اعتبار سے اور خروج اور نفر کے اعتبار سے جو اہمیت مردوں کی ہے، وہ اہمیت عورتوں کے خروج کی ہے، ایسا نہیں کرو گے، ایسا نہیں کرو گے، تو یعنی امت میں ارتداد عام ہوگا، یہ پکی بات ہے، یہ پکی بات ہے، یہ یقینی بات ہے، کیونکہ دعوت کے سوا ارتداد کو روکنے کی کوئی طاقت اور کوئی راستہ نہیں ہے، یہ پکی بات ہے یہ پکی بات ہے یہ یقینی بات ہے، ارتداد کا کوئی علاج نہیں سوائے دعوت کے یہ پکی بات۔
‘আমার নিকট –খোদর কসম– যে যিম্মাদারি পুরুষদের, হুবহু ওই যিম্মাদারি নারীদের। কোনো পার্থক্য নেই। কোনো পার্থক্য নেই। কণা, চুল পরিমাণ কোনো পার্থক্য নেই। নারী-পুরুষের যিম্মাদারিতে এ দাওয়াতের কাজের বিবেচনায় এবং খুরূজ ও নফরের বিবেচনায়– যে গুরুত্ব পুরুষদের বের হওয়ার, সেই গুরুত্ব নারীদের বের হওয়ার। এমন যদি না কর, এমন যদি না কর, তাহলে উম্মতের মধ্যে ইরতিদাদ ব্যাপক হয়ে যাবে। এটা চূড়ান্ত কথা। এটা চূড়ান্ত কথা। এটা একীনী কথা। ইরতিদাদকে ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা ও রাস্তা নেই দাওয়াত ছাড়া। এটা চূড়ান্ত কথা’। (বয়ান ২৬/৬/২০১৮ ঈ., বাদ ফজর, ত্রৈমাসিক মশওয়ারা, ১ ঘ. ৩৫ মি. ২৫ সে. থেকে)
এখানে এ বিষয়টিও লক্ষণীয়– মাওলানা সা‘দ সাহেব প্রচলিত তাবলীগী কাজের শরয়ী অবস্থান এবং এ কাজের নকল-হরকত, গাশত এবং খুরূজ-নফরের গুরুত্ব যে ভঙ্গিতে আলোচনা করেন, তাতে মানুষ এটা বুঝতে বাধ্য যে, এ কাজের জন্য খুরূজ ও সফর ফরযে আইন। বরং তিনি তো খুরূজ বিলম্ব করাকে কবীরা গোনাহ বলেন! অতএব যখন তিনি বলছেন, এই কাজের দিক থেকে এবং খুরূজ ও নফরের দিক থেকে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে চুল বরাবরও পার্থক্য নেই, তখন তার অর্থ হল, তার কাছে এ কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া ও সফর করা নারীদের জন্য ফরযে আইন!! কোনো সন্দেহ নেই– এ ধরনের কথা উম্মতের ইজমার স্পষ্ট খেলাফ।
তেমনিভাবে আরেক বয়ানেও মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেছেন–
کیوں کہ جو ذمے داری اس کام کرنے میں مردوں کی ہے، خدا کی قسم بعینہ بغیر کسی فرق اور بغیر کسی درجے کی کمی کے وہی ذمے داری عورتوں کے لیے ہے، برابر، جو ذمے داری اس کام کرنے کی مردوں کی ہے وہی ذمے داری خدا کی قسم عورتوں کی ہے۔
কারণ এই কাজ করার ক্ষেত্রে পুরুষদের যে যিম্মাদারি, খোদার কসম, কোনো রকমের পার্থক্য ব্যতীত এবং কোনো স্তরের কমি ব্যতীত হুবহু ওই যিম্মাদারিই নারীদের জন্য প্রযোজ্য। বরাবর। এই কাজের যে যিম্মাদারি পুরুষদের, খোদার কসম, ওই যিম্মাদারিই নারীদের...। (বয়ান ২/১২/২০১৮ ঈ., বাদ মাগরিব, বুলন্দশহর ইজতেমা, ২ ঘ. ২৪ মি. ৫৫ সে. থেকে)
এই বয়ানে তিনি কুরআন কারীমের আয়াত–
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
উল্লেখ করে বলেন–
عورت بھی امت میں داخل ہے، عورتیں امت سے الگ نہیں ہیں، یہ کہنا یہ کام مردوں کا ہے، عورتوں کا نہیں، کون ہے جو اس امر بالمعروف اور نہی عن المنکر کی ذمہ داری سے امت کی عورتوں کو مستثنی کردے؟ ہوہی نہیں سکتا، ممکن ہی نہیں، امت ہے ، امت مردوں کو نہیں کہتے، امت عورت، مرد اور بچہ تینوں مل کر امت ہیں تینوں مل کر امت ہیں۔
নারীও উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। নারীরা উম্মত থেকে পৃথক নয়। এ কথা বলা যে, এ কাজ পুরুষদের, নারীদের নয়। সেই লোক কে, যে এই আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকারের যিম্মাদারি থেকে উম্মতের নারীদেরকে মুস্তাসনা তথা আলাদা করে দিয়েছে? হতেই পারে না। সম্ভবই নয়। (নারীরাও) উম্মত। উম্মত (শুধু) পুরুষদের বলে না। নারী, পুরুষ এবং শিশু এই তিনে মিলে হয় উম্মত। তিনে মিলে হয় উম্মত।’ (বয়ান ২/১২/২০১৮ঈ., বাদ মাগরিব, বুলন্দশহর ইজতিমা, ২ ঘ. ২৫ মি. ১৭ সে. থেকে)
বাস্তবতা হল, নারীদেরকে দাওয়াত, আমর বিল মারূফ এবং নাহি আনিল মুনকারের যিম্মাদারি থেকে কেউই আলাদা করেনি। আসলে এ কাজ নারীরা নিজেদের ঘরে, নিজেদের অঙ্গনে এবং নিজেদের সীমানার ভেতরে আঞ্জাম দেবে। শরীয়ত এসব কাজের জন্য নারীদেরকে ঘর থেকে বের হতে আদেশ করেনি। দেখুন, কুরআন কারীমের আয়াত তো সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, ফুকাহায়ে কেরাম এবং সবযুগের উলামায়ে কেরাম পড়েছেন। কিন্তু কেউই তো একথা বলেননি যে, এসব যিম্মাদারির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, চুল বরাবরও পার্থক্য নেই! তেমনিভাবে একথাও কেউ বলেনি যে, এই কাজগুলো আঞ্জাম দেওয়ার জন্য নারীদের খুরূজ ও সফর করা জরুরি!
আচ্ছা, মাওলানা সা‘দ সাহেব তো নিজেই বললেন, শিশুরাও উম্মতের মধ্যে শামিল। তাহলে কি তিনি كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّة-এর أُمَّة শব্দ থেকে এই হুকুমও আবিষ্কার করবেন যে, বালেগ পুরুষদের মতো না-বালেগ শিশুদের ওপরও দাওয়াতের যিম্মাদারি এবং এর জন্য খুরূজ ও নফরের যিম্মাদারি আরোপিত হবে, এর মধ্যে কোনো পার্থক্য হবে না, কণা বরাবরও পার্থক্য হবে না!!
যাহোক এ ধরনের দলীলবিহীন ও দলীলবিরোধী নতুন নতুন বিধান আবিষ্কার করাকেই বলে শরীয়তে হস্তক্ষেপ করা। এর নাম ‘ইহদাস ফিদ দ্বীন’। এটা নিঃসন্দেহে মারাত্মক গোমরাহী।
এখানে আমরা নারীদের মূল দায়িত্বসমূহ সংক্রান্ত সেই হাদীসটি উদ্ধৃত করে দেওয়া যথেষ্ট মনে করছি, যেটার আলোচনা হযরত শায়খুল হাদীস রাহ. ‘হেকায়াতে সাহাবা’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন। হযরত শায়খুল হাদীস রাহ. লেখেন–
আসমা বিনতে ইয়াযীদ আনসারী নামক এক নারী সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমার মা-বাবা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত। আমি মুসলিম নারীদের পক্ষ থেকে বার্তাবাহক হয়ে আপনার কাছে এসেছি।
আল্লাহ তো আপনাকে নারী-পুরুষ উভয়ের নবী বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তাই আমরা নারীরাও আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি।
আমরা নারীরা তো ঘরে পর্দার অন্তরালে অবস্থান করি। পুরুষদের তত্ত্বাবধানে থাকি। আমাদের মাধ্যমে পুরুষদের চাহিদা পূর্ণ হয়। তাদের সন্তান গর্ভে ধারণ করি। তবুও তারা আমাদের তুলনায় বেশি ফযীলতপূর্ণ আমলে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। যেমন– তারা জুমআর নামাযে শরীক হয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করে, রোগীদের সেবা-শুশ্রƒষা করে, জানাযার নামায আদায় করে, হজ্ব করে এবং সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আমল জিহাদেও তারা শরীক হয়। তারা হজ্ব-উমরা কিংবা জিহাদে গেলে আমরাই তাদের পরিবার-পরিজন ও সম্পদের দেখভাল করি। তাদের কাপড় সেলাই করে দিই। তাদের সন্তানদের লালন-পালন করি। আল্লাহর রাসূল! আমরা কি সাওয়াবে তাদের শরীক হব না?
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি দ্বীন সম্পর্কে অন্য কাউকে এই নারীর চেয়ে উত্তম প্রশ্ন করতে শুনেছ?
সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহর রাসূল! কোনো নারী এমন প্রশ্ন করতে পারে– এমনটা তো আমাদের ধারণাই ছিল না।
তারপর আসমা রা.-কে লক্ষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং বুঝে নাও আর যেসব নারী তোমাকে পাঠিয়েছে তাদের বলে দিও– স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীদের উত্তম আচরণ করা, তাদের সন্তুষ্টি তালাশ করা এবং তাদের কথা মেনে চলা– ওই সকল নেক আমলের বরাবর।
এই উত্তর শুনে আসমা রা. অত্যন্ত খুশি হয়ে ফিরে গেলেন। –হেকায়াতে সাহাবা, পৃ. ১২১-১২২, উস্দুল গাবাহ্র সূত্রে।
আরও দেখুন, মা‘রিফতুস সাহাবা, আবু নুআঈম আসফাহানী ৬/৩২৫৯, বর্ণনা ৭৫১২; শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৬/৪২০; হায়াতুস সাহাবা ১/৬৩২, তাহকীক : ইলিয়াস বারাবাংকী।
উলামায়ে কেরাম জানেন, এটি কেবল একটি হাদীস নয়; বরং এতে নারীদের বিষয়ে শরীয়তের মেযাজ ও সাধারণ বিধান কী– সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি স্মরণে থাকলে বোঝা সম্ভব হবে, মাওলানা সা‘দ সাহেবের এই কথা কত মারাত্মক যে, দাওয়াত এবং আমর বিল মা‘রুফ ও নাহি আনিল মুনকারের জন্য খুরূজ ও সফর করার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে চুল বরাবরও পার্থক্য নেই!!
৭-১১. মশওয়ারার বিষয়ে সা‘দ সাহেব কর্তৃক নতুন নতুন বিধান আবিষ্কার করা
দুনিয়াবী বিষয়াদির ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মশওয়ারা সাপেক্ষ, সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মশওয়ারা করা মুস্তাহাব। শরীয়ত মশওয়ারার প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং তার মৌলিক নীতিমালাও দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার পদ্ধতি ও শাখাগত বিষয়াদি উন্মুক্ত রেখে দিয়েছে, যাতে শরীয়তের নীতিমালার আলোকে যেখানে যে পন্থা মুনাসিব হয়, সেখানে সে পন্থা অবলম্বন করা যায়।
কিন্তু মাওলানা সা‘দ সাহেব মশওয়ারার বিষয়ে এমন এমন বিধান বানিয়েছেন, যেগুলো আজ অবধি না কোনো মুহাদ্দিস বা মুফাসসির বলেছেন আর না কোনো ফকীহ বা মুফতী বলেছেন। প্রথমে তার বক্তব্যসমূহ শুনুন, এরপর মশওয়ারা সংক্রান্ত তার আবিষ্কৃত বিষয়গুলো সম্পর্কে পর্যালোচনা উল্লেখ করা হবে।
মাওলানা সা‘দ সাহেবের বক্তব্য–
اللہ پر ایمان لانے والوں کا ایک سب سے بڑا اجتماعی عمل نماز ہے، دوسرا سب سے بڑا عمل مشورہ ہے، قرآن میں نماز اور مشورے کو ایک ساتھ نقل کیا ہے سمجھانے کے لیے، دعوت کے عمل کے لیے مشورہ ہے، چند چیزیں سمجھانے کے لیے:
الف: مشورہ نماز کی طرح اجتماعی عمل ہے، جیسے ساری چیزوں کو چھوڑ کر نماز کے لیے اس کی ادائیگی کی جگہ مسجد میں آنا ضروری ہے، اسی طرح مشورہ کے لیے آنا نماز کی طرح اہم اور ضروری ہے۔
ب: جس طرح الگ نماز نہیں، الگ مشورہ نہیں۔
ج: جیسے ایک مسجد میں ایک نماز، دو نماز نہیں ہو سکتی، ایک ہی نماز میں شرکت کرنا ہی نماز کی اہمیت ہے، یہی سنت موکدہ کا مقصد ہے، اسی طرح اپنے مشورہ کو سیرت پر اور سنت پر لاؤ۔
‘মুমিনদের সবচেয়ে বড় ইজতিমায়ী একটি আমল নামায। আরেকটি সবচেয়ে বড় আমল মশওয়ারা। কুরআনে নামায ও মশওয়ারাকে একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথা বোঝাতে যে, দাওয়াতের কাজের জন্য মশওয়ারা আছে। কয়েকটি জিনিস বোঝানোর জন্য–
ক. মশওয়ারা নামাযের মতো ইজতিমায়ী আমল। যেমনি সবকিছু ছেড়ে নামাযের জন্য তার আদায়ের স্থান মসজিদে আসা জরুরি, তেমনি মশওয়ারার জন্য আসা নামাযের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি।
খ. যেমনি আলাদা কোনো নামায নেই, তেমনি আলাদা কোনো মশওয়ারা নেই।
গ. যেমনি এক মসজিদে এক নামায; দুই নামায হতে পারে না। এক নামাযে অংশগ্রহণ করাতেই নামাযের গুরুত্ব। এটাই সুন্নাতে মুআক্কাদার উদ্দেশ্য। তেমনিভাবে নিজেদের মশওয়ারাকে সীরাত ও সুন্নতের ওপর নিয়ে আসো।’ (বয়ান ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ঈ, বাদ মাগরিব, ২ মি. ৩০ সে. থেকে)
আরেক বয়ানে তিনি বলেন–
مشورہ کا ادب اور مشورہ کے قیودات اور مشورہ کا طریقہ اور مشورہ کی اہمیت اور اس کی اجتماعیت اور مشورہ کے لیے اپنے سارے کاموں کو چھوڑ کر آ جانا یہ سب کچھ سوفیصد نماز کی طرح ہے سوفیصد نماز کی طرح ہے۔
نماز کے لیے اپنے کاموں کو چھوڑ کر آؤ، یہ پہلا کام ہے کہ تم کسی بھی عمل کو کسی بھی کام کو نماز پر مقدم نہیں کر سکتے یہ نماز کو ضائع کرنا ہے، کہ کسی بھی چیز کو نماز پر مقدم کیا جائے اور یہ مشورہ کا ضائع ہو جانا کہ کسی تقاضے کو مشورہ پر مقدم کیا جائے، یہ مشورہ کا ضائع ہونا ہے، جیسے نماز کا ضائع ہونا یہ ہے کہ نماز پر کسی تقاضے کو مقدم کیا جائے۔
‘মশওয়ারার আদব, মশওয়ারার শর্ত-শরায়েত, মশওয়ারার তরিকা, মশওয়ারার গুরুত্ব ও এর ইজতিমাইয়্যাত এবং মশওয়ারার জন্য নিজের সব কাজ ছেড়ে চলে আসা– এই সবকিছু শতভাগ নামাযের মতো। শতভাগ নামাযের মতো।
নামাযের জন্য নিজের সব কাজ ছেড়ে আসবে– এটা প্রথম কাজ। অর্থাৎ তোমরা কোনো আমল এবং কোনো কাজকে নামাযের ওপর প্রাধান্য দিতে পারবে না। নামাযের ওপর অন্যকিছুকে প্রাধান্য দেওয়া এটা নামাযকে নষ্ট করা। আর মশওয়ারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার অর্থ হল, কোনো প্রয়োজনকে মশওয়ারার ওপর প্রাধান্য দেওয়া। কোনো প্রয়োজনকে মশওয়ারার ওপর প্রাধান্য দেওয়া– এটা হল মশওয়ারা নষ্ট হয়ে যাওয়া। যেমনিভাবে নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার অর্থ হল নামাযের ওপর কোনো তাকাযাকে প্রাধান্য দেওয়া।’ (বয়ান ৯/৯/২০১৯ ঈ., বাদ মাগরিব, ৪-৫ মিনিট)
“... کام میں اجتماعی مشورہ، کام میں اجتماعی مشورہ، نماز کی طرح، کہ جماعت کی نماز ہے، اس کے لیے اپنے تقاضوں کو چھوڑ کر آؤ، اجتماعی مشورہ ہے اس کے لیے اپنی تقاضوں کو چھوڑ کر آؤ۔”
‘... কাজের বিষয়ে ইজতিমায়ী মশওয়ারা, কাজের বিষয়ে ইজতিমায়ী মশওয়ারা নামাযের মতো। অর্থাৎ জামাতের নামায; এর জন্য যেভাবে নিজের অন্যান্য তাকাযাকে ছেড়ে আস। ইজতিমায়ী মশওয়ারা–এর জন্য নিজের তাকাযাকে ছেড়ে আসবে।’ (প্রাগুক্ত, ৫ মি. ৫০ সে. থেকে)
অন্য বয়ানে বলেন–
جو اہمیت اجتماعی نماز کی ہے وہ اہمیت اجتماعی مشورے کی ہے، اور جو ہیئت اجتماعی نماز کی ہے وہ ہیئت اجتماعی مشورے کی ہے، اور جو آداب اجتماعی نماز کے ہیں وہ آداب اجتماعی مشورے کے ہیں۔
‘যেই গুরুত্ব ইজতিমায়ী নামাযের, সেই গুরুত্ব ইজতিমায়ী মশওয়ারার। এবং যেই পদ্ধতি ইজতিমায়ী নামাযের, সেই পদ্ধতি ইজতিমায়ী মশওয়ারার। এবং যেসব আদব ইজতিমায়ী নামাযের, সেসব আদব ইজতিমায়ী মশওয়ারার।’ (বয়ান ১০/৯/২০১৮ ঈ., বাদ মাগরিব, ২৯ মি. ৪০ সে. থেকে)
সা‘দ সাহেব এটাও বলেছেন–
اس لیے مسجد میں دوسری جماعت کرنے کی شرعا اجازت نہیں، مسجد میں دوسری جماعت کرنے کی شرعا اجازت نہیں، جی، جماعت ہوگی مسجد کی، بس ایک ہی نماز ہوگی ایک ہی مسجدمیں، مسجد میں ایک ہی نماز ہوتی ہے، اجتماعی عمل صرف ایک ہوتا ہے، اس لیے جس طرح مسجد میں دو نمازیں نہیں ہو سکتی دو مشورے بھی نہیں ہو سکتے، یہ پکی بات ہے دو مشورے بھی نہیں ہو سکتے۔
‘এজন্য যে, শরীয়তে মসজিদে দ্বিতীয় জামাতের অনুমতি নেই। মসজিদে দ্বিতীয় জামাতের অনুমতি শরীয়তে নেই। হাঁ, মসজিদের জামাত হবে। ব্যস, এক মসজিদে এক নামাযই হবে। মসজিদে এক নামাযই হয়। ইজতিমায়ী আমল কেবল একটাই হয়। সেজন্য মসজিদে যেভাবে দুই নামায হতে পারে না, তেমনিভাবে দুটি মশওয়ারাও হতে পারে না। এটা চূড়ান্ত কথা। দুই মশওয়ারাও হতে পারে না ...।’ (বয়ান ৯/৯/২০১৯ ঈ., বাদ মাগরিব, ২৯ মি. ২৫ সে.)
সা‘দ সাহেব এই পর্যন্ত বলেছেন–
اس لیے میں کہا کرتا ہوں کہ میدان میں قتال کو چھوڑ کر بھاگنا بہت بڑا ظلم ہے، بہت بڑا گناہ ہے، لیکن مشورے کو چھوڑنا اس سے بھی بڑا گناہ ہے، میری بات بہت توجہ سے سننا! لوگ اس بات کی تہ تک پہنچے نہیں، اور اس بات کے مقصد کو سمجھے نہیں، تولى يوم الزحف سے بھی زیادہ، تولى يوم الزحف سے بھی زیادہ برا ہے مشورہ چھوڑ دینا...
এজন্য আমি বলে থাকি, জিহাদের ময়দানে লড়াই ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক বড় জুলুম। অনেক বড় গুনাহ। কিন্তু মশওয়ারা ছেড়ে দেওয়া তার চেয়েও বড় গুনাহ। আমার কথা অনেক মনোযোগসহ শুনতে হবে। লোকেরা এই বিষয়ের গভীর পর্যন্ত পৌঁছেনি এবং এ কথার উদ্দেশ্য বোঝেনি।
تولى يوم الزحف (যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা)-এর চেয়েও বেশি, تولى يوم الزحف (যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা)-এর চেয়েও বেশি খারাপ মশওয়ারা ছেড়ে দেওয়া।... (বয়ান ৯/৯/২০১৯ বাদ মাগরিব, ৩৯ মি. ১৫ সে. থেকে)
এ বয়ানেই একটু পরে বলেছেন–
ہمارے مشوروں میں آوازوں کا بلند ہونا یہ مسجد کی طرح بے حرمتی ہے، مشورہ مسجد کا عمل ہے، مشورہ مسجد کا عمل ہے،....، دونوں عمل مسجد کے ہیں، مشورہ بھی نماز بھی۔
আমাদের মশওয়ারায় আওয়াজ উঁচু করা এটা মসজিদ অবমাননার মতো অবমাননা। মশওয়ারা মসজিদের আমল। মশওয়ারা মসজিদের আমল। ... উভয় আমল মসজিদের; মশওয়ারাও, নামাযও। (প্রাগুক্ত, ১ ঘ. ২ মি. ২৩ সে. থেকে)
ব্রিটেনের এক ইজতিমায় তিনি বলেন–
کام اور انتظام دو چیزیں ہیں الگ الگ، کام اور انتظام، کام تو سیرت کے تابع ہے، انتظام مشورے کے تابع ہے، ...، مشورے والے کام کے تابع ہیں، اور انتظامی امور مشورے کے تابع ہیں۔
‘কাজ আর ইনতেযাম (ব্যবস্থাপনা) দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। (এক হল) কাজ আর (আরেক হল) ইনতেযাম। কাজ তো সীরাতের তাবে‘ (অনুগামী)। আর ইনতেযাম মশওয়ারার তাবে‘...। মশওয়ারা-ওয়ালারা কাজের তাবে‘। আর ইনতেযামি বা ব্যবস্থাপনাগত বিষয় মশওয়ারার তাবে‘।’ (বয়ান ১৯/১০/২০১৮ ঈ., ব্রিটেনের ইজতেমা)
আরেক মজলিসে তিনি বলেন–
مشورہ ہوتا ہے نظم کے لیے، صحابہ نے مشورہ کئے نظم کے لیے، کام کے لیے نہیں کیے، کام تو منصوص ہے، منصوصات میں مشورہ نہیں ہوتا ۔
মশওয়ারা হয় নযমের (ব্যবস্থাপনাগত কাজের) জন্য। সাহাবায়ে কেরাম নযমের জন্য মশওয়ারা করেছেন। কাজের জন্য মশওয়ারা করেননি। কাজ তো মানসূস। আর মানসূস বিষয়ে মশওয়ারা হয় না। (তার এই বক্তব্যের অডিও সংরক্ষিত আছে)
মশওয়ারা সম্পর্কে মাওলানা সা‘দ সাহেবের বানানো কিছু বিধান
উপরিউক্ত বক্তব্যগুলোতে মাওলানা সা‘দ সাহেব মশওয়ারার বিষয়ে নিজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধান আবিষ্কার করেছেন। শরীয়তে এগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই। এসবের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক কথাগুলো এই–
১ (৭). ‘মশওয়ারা ছেড়ে দেওয়া যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেয়ে বেশি খারাপ এবং তার চেয়ে বড় গুনাহ।’
এটা একেবারে তার বানানো কথা। এর পক্ষে তিনি বিভিন্ন কারণ ও যুক্তি পেশ করেছেন। কিন্তু যে কবীরা গুনাহ এমন যে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ভাষায় কুরআন-হাদীসে ধমকি ও সতর্কবাণী এসেছে, কোনো সাধারণ নাজায়েয কাজকে তার চেয়ে মারাত্মক গুনাহ বলা যাবে না। আর কোনো মুস্তাহাব আমল থেকে উঠে যাওয়া কিংবা তা ছেড়ে দেওয়াকে কোনো মানসূস আলাইহি কবীরা গুনাহের চেয়ে বড় গুনাহ বলা– কোনো সন্দেহ নেই, এমনটা করলে সেটা হবে শরীয়তে হস্তক্ষেপ।
এছাড়া মশওয়ারা সংশ্লিষ্ট নিম্নে বর্ণিত আরও যেসব বিধান তিনি বানিয়েছেন সেগুলোরও শরীয়তে কোনো অস্তিত্ব নেই :
২ (৮). ‘সবকিছু ছেড়ে মশওয়ারার জন্য আসা নামাযের জন্য আসার ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি’
কোথায় ঈমানের পর সবচেয়ে বড় ফরয এবং সবচেয়ে বড় ইবাদত, যার জন্য মসজিদের জামাত হল এমন মুআক্কাদ সুন্নতে হুদা যেন তা ওয়াজিবই, আর কোথায় এক মুস্তাহাব পর্যায়ের নেক আমল!? একটিকে আরেকটির ওপর কিয়াস ও তুলনা করে উভয়টাকে এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বলা কত বড় গর্হিত কথা! এমনকি কোনো ক্ষেত্রে যদি মশওয়ারা ওয়াজিব হয়েও যায় তবুও এটিকে নামাযের জন্য উপস্থিত হওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বলার কোনো সুযোগ নেই।
কুরআন-হাদীসে কিংবা কোনো সাহাবী-তাবেয়ীর বক্তব্যে দুই আমল একসঙ্গে উল্লেখিত হওয়ার কারণে এটা কখনো সাব্যস্ত হয় না যে, উভয়ের গুরুত্ব একই রকম অথবা উভয়টা একই স্তরের জরুরি এবং উভয়ের বিধিবিধান একই রকম।
কেবলاقتران في الذكر-এর দ্বারা اقتران في الحكم -এর ওপর ইসতিদলাল করা– এটা ইলমে উসূলে ফিকহের সুস্পষ্ট বক্তব্য মোতাবেক ফাসেদ ইসতেদলাল ১। কুরআন কারীমের কত আয়াতে ভিন্ন ভিন্ন স্তর এবং ভিন্ন ভিন্ন বিধান সম্বলিত কত ইবাদত ও নেক আমল একই সঙ্গে আত্ফ (عطف) করে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ এটা বোঝেনি আর না এটা বোঝার সুযোগ আছে যে, এসব ইবাদত ও আমলের স্তর ও বিধিবিধান এক ও অভিন্ন। মাওলানা সা‘দ সাহেবের রাস্তা অবলম্বন করে কোনো বাতিলপন্থি তো এ কথাও বলতে পারে যে, মশওয়ারা হল মুস্তাহাব, অতএব যখন নামাযকে মশওয়ারার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে তখন বোঝা গেল, নামাযও মুস্তাহাব– নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক।
৩ (৯). ‘মশওয়ারার আদব ও তরিকা এবং মশওয়ারার গুরুত্ব ও তার ইজতিমাইয়্যাত শতভাগ নামাযের মতো’
সবাই জানে– এটাও ইহ্দাস ফিদদ্বীন।
শরীয়তে এর কোনো প্রমাণ নেই। বিশেষত মশওয়ারাকে নামাযের মতো গুরুত্বপূর্ণ বলা এবং শতভাগ নামাযের মতো গুরুত্বপূর্ণ বলা– এটা চূড়ান্ত পর্যায়ের গোমরাহী।
৪ (১০). ‘মশওয়ারা মসজিদের আমল’
অথচ মশওয়ারার জায়গা হিসেবে শরীয়ত মসজিদকে নির্ধারণ করে দেয়নি। মশওয়ারা যে কোনো স্থানে হতে পারে। যেখানে মশওয়ারা প্রয়োজন সেখানেই মশওয়ারা হবে। যদি কোনো আমল বা কোনো জামাত মসজিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে তাদের মশওয়ারা মসজিদে হওয়াই মুনাসিব। কিন্তু মশওয়ারার ইজতিমাইয়্যাতকে নামাযের জামাতের ওপর কিয়াস করে মশওয়ারাকে মসজিদের আমল আখ্যা দেওয়া, অর্থাৎ যেন মসজিদের বাইরে মশওয়ারা করা খেলাফে সুন্নত কিংবা মসজিদের বাইরে মশওয়ারা করলে এর দ্বারা মশওয়ারার সুন্নত আদায় হবে না– এই সব হল ‘মুহদাস’ ও নব সৃষ্ট চিন্তা; শরীয়তে এসবের কোনো প্রমাণ নেই। তেমনিভাবে এ দাবি করা–
‘এক মসজিদে দুই মশওয়ারা হতে পারে না। যেমনিভাবে এক মসজিদে দ্বিতীয় জামাত হতে পারে না।’
এভাবে ঢালাওভাবে মাসআলা বানানোও ভিত্তিহীন। দ্বিতীয় জামাতের ওপর দ্বিতীয় মশওয়ারা বা দুই মশওয়ারাকে কিয়াস করা মারাত্মক ভুল। প্রথমত দ্বিতীয় জামাতের মাসআলাটাই মুখতালাফ ফীহ ও ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। দ্বিতীয়ত মসজিদে দ্বিতীয় মশওয়ারা বা একই সময়ে বা ভিন্ন সময়ে দুই মশওয়ারার নিষেধ হওয়ার কোনো দলীল নেই। আসল কথা হল, মশওয়ারা সহীহ কাজের জন্য সঠিকভাবে হতে হবে। এই মূলনীতি অনুযায়ী দুই মশওয়ারা বা দ্বিতীয় মশওয়ারা হতে কোনো সমস্যা নেই। আর গলত কাজের জন্য মশওয়ারা হলে কিংবা বিভেদ ও বিশৃঙ্খলার জন্য মশওয়ারা হলে সেটা মসজিদে হোক বা মসজিদের বাইরে, কোথাও জায়েয হবে না।
মশওয়ারা সংক্রান্ত মাওলানা সা‘দ সাহেবের বানানো আরেকটা মারাত্মক বিষয় হল–
৫ (১১). ‘ইনতেযাম (ব্যবস্থাপনাগত বিষয়)-এর ক্ষেত্রে মশওয়ারা হয়, কাজের ক্ষেত্রে মশওয়ারা হয় না। কাজ মানসূস। আর মানসূস বিষয়ে মশওয়ারা নেই’। কিংবা এ কথা– ‘কাজ তো সীরাতের তাবে‘ (অনুগামী) আর মশওয়ারা-ওয়ালারা কাজের তাবে‘।’
ইনতেযাম বা ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ে মশওয়ারা আছে– একথা তো ঠিক। কিন্তু কাজের বিষয়ে মশওয়ারা নেই– একথা একদম ভুল। তেমনিভাবে এ কথার আড়ালে এই দাবি করা যে, প্রচলিত তাবলীগ জামাত এবং বিশেষভাবে মাওলানা সা‘দ সাহেবের প্রবর্তিত দাওয়াত ও তাবলীগ সংক্রান্ত রূপরেখা ও নিয়মনীতি কুরআন, হাদীস ও সীরাতের মধ্যে মানসূস তথা স্পষ্টভাবে উল্লেখিত– এমনটা দাবি করা একেবারে ভুল এবং বাস্তবতা পরিপন্থি।
যেসব মানসূস বিষয়ে মশওয়ারা নেই সেগুলো হল قطعي الثبوت এবং قطعي الدلالة নস দ্বারা প্রমাণিত মুতাওয়াতির ও মুজমা আলাইহি আহকাম। এগুলো ব্যতীত মানসূসের অন্য যেসব প্রকার আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে আহলে ফিকহ এবং সংশ্লিষ্ট ফন ও শাস্ত্রের পারদর্শী ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। তেমনিভাবে মানসূস নয় এমন দ্বীনী বিষয়েও স্বয়ং আলেমদেরকে হাদীস শরীফে মশওয়ারা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।
আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন–
قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنْ نَزَلَ بِنَا أَمْرٌ لَيْسَ فِيهِ بَيَانُ أَمْرٍ وَلَا نَهْيٍ، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: تُشَاوِرُونَ الْفُقَهَاءَ وَالْعَابِدِينَ، وَلَا تُمْضُوا فِيهِ رَأْيَ خَاصَّةٍ.২
আমি বললাম, আল্লাহর রাসূল! যদি আমরা এমন কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হই, যে বিষয়ে (কুরআন ও সুন্নাহয়) সুস্পষ্ট আদেশ বা নিষেধ নেই, তাহলে আপনি আমাদের কী আদেশ করেন? (অর্থাৎ তখন আমাদের কী করণীয়?)
তিনি বললেন, তোমরা সেক্ষেত্রে ফকীহ ও আবেদদের সঙ্গে মশওয়ারা করবে। ব্যক্তিবিশেষের মতকে চালিয়ে দেবে না। –আলমুজামুল আওসাত, তবরানী, হাদীস ১৬১৮
এ হাদীসের সারকথা হল, যে বিষয়েই সহীহ সরীহ (সুস্পষ্ট) নস থাকবে না, সেটা মশওয়ারার মুখাপেক্ষী। এ ধরনের শরয়ী ও ইলমী বিষয়ে নেক আহলে ফিকহের সঙ্গে মশওয়ারা করতে হবে।
(আর নিছক ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ে নেককার যোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে মশওয়ারা করার বিষয়টি وَأَمْرُهُم شُوْرَى بَيْنَهُم-এর ব্যাপকতার মধ্যে শামিল।)
কোনো সন্দেহ নেই– কাজ (তথা দ্বীনী ও দাওয়াতী কাজ) অবশ্যই কুরআন, হাদীস ও সীরাতের তাবে‘। কিন্তু দাওয়াতের কাজগুলো প্রচলিত তাবলীগ জামাতে যে আঙ্গিকে এবং যে পদ্ধতিতে আঞ্জাম দেওয়া হয়, ঠিক এভাবে তা কিছুতেই মানসূস নয়। অতএব কুরআন, হাদীস ও সীরাতের ঘটনাবলি থেকে প্রচলিত তাবলীগের বিস্তারিত রূপরেখা ও নিয়মনীতি ইস্তিম্বাত করলে তার কিছু অংশ হবে ইজতিহাদী আর কিছু অংশ ইনতেযামী। আর উভয় ক্ষেত্রে মশওয়ারা জরুরি। এক্ষেত্রে তো মশওয়ারা করার পরও মুস্তাম্বাত মিনান নসকে মানসূসের মর্যাদা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ থেকে আহরিত বিষয়কে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ্য় স্পষ্ট বর্ণিত বিধান বলা যায় না। তথাপি কেউ যদি মশওয়ারা ছাড়াই কোনো কিছু ইস্তিম্বাত করে, অতঃপর সেটাকে মানসূস ও হুবহু সুন্নত ও হুবহু সীরাত দাবি করে এবং বলে যে, মশওয়ারা-ওয়ালারা কাজের তাবে‘, তাহলে এর দ্বারা মূলত এই দাবি করা হচ্ছে যে, কাম-ওয়ালারা এই দাবিকারীর তাবে‘। ভাবা যায়, নিজের ইস্তিম্বাত ও মতকে নস ও সীরাতের মর্যাদা দেওয়া কত বড় গোমরাহী!!
১২. তাবলীগ জামাতের প্রচলিত খুরূজে বিলম্ব করাকে কবীরা গুনাহ ও নেফাক আখ্যা দেওয়া
মাওলানা সা‘দ সাহেব বলেন–
اللہ اکبر! کعب بن مالک کا واقعہ لوگ نہ سنتے ہیں، نہ بیان کرتے ہیں، اور نہ اس سے دعوت کی نقل وحرکت کی اہمیت سمجھتے ہیں، مجھے نہیں ملا سیرت میں کسی صحابہ کا ایسا بڑا جرم جس پر حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم اور تمام صحابہ ان سے ناراض ہوگئے ہوں، سوائے اللہ کے راستے میں نکلنے میں تاخیر کرنے کو، دیکھو غور سے پڑھو وہ قصہ۔
‘আল্লাহু আকবার! কা‘ব ইবনে মালেকের ঘটনা লোকেরা না শুনে, না বয়ান করে, আর না এর দ্বারা দাওয়াতের নকল ও হরকতের গুরুত্ব বোঝে। আমি পাইনি সীরাতে– কোনো সাহাবীর এত বড় অপরাধ, যার কারণে হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সকল সাহাবী তার প্রতি নারায হয়ে গেছেন, কেবল একটা; আর তা হল, আল্লাহর রাস্তায় বের হতে বিলম্ব করা। দেখো! মনোযোগসহ পড়ো সে ঘটনা।’ (বয়ান ১/১২/২০১৮ ঈ., বাদ মাগরিব, বুলন্দশহর ইজতিমা, ৩ ঘ. ৬মি. থেকে)
আরও বলেন–
اگر ایک مرتبہ بھی کہ دیا کہ آج نہیں، کل چلا جاؤں گا، تو تیرے ساتھ اللہ کی ناراضگی کا معاملہ کعب بن مالک کی طرح ہوگا، تیرے ساتھ اللہ کی ناراضگی کا معاملہ کعب بن مالک کی طرح ہوگا، کہ جس طرح کعب بن مالک کے بارے میں سب جانتے ہیں، کہ کیا گناہ ہوا کہ اللہ کے راستے میں نکلنے سے رہ گئے اور رہنے کے ارادے سے نہیں، انکار پر نہیں، نکلنے کے ارادے کے ساتھ رہ گئے ، کل جاؤں گا، پرسو جاؤں گا، کل جاؤں گا، پرسو جاؤں گا، اسی میں وقت گزر گیا، اللہ بھی ناراض، اللہ کے رسول بھی ناراض، سارا مدینہ ناراض، عجیب بات ہے۔
‘যদি একবার বল, আজ নয় কাল রওয়ানা হয়ে যাব, তাহলে তোমার প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টি কা‘ব ইবনে মালিকের মতো হবে। তোমার প্রতি আল্লাহর অসন্তুষ্টি কা‘ব ইবনে মালিকের মতো হবে। যেভাবে কা‘ব ইবনে মালিকের বিষয়ে সবাই জানে যে, কী গুনাহ হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় বের হননি। আগামীকাল যাব, পরশু যাব– এভাবে কালক্ষেপণ করতে করতে সময় চলে গিয়েছে। আল্লাহ নারায, আল্লাহর রাসূলও নারায, সমগ্র মদীনা নারায। আজব কথা!’ (বয়ান ২/১২/২০১৮ ঈ., বাদ মাগরিব, বুলন্দশহর ইজতিমা, ২ ঘ. ১৯ মি. ১৫ সে. থেকে)
প্রচলিত খুরূজে বিলম্ব করাকে আযাবের কারণ এবং গুনাহ বলা, এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নারাযির বড় কারণ এবং কবীরা গুনাহ আখ্যা দেওয়া এবং এ বিষয়ে কা‘ব ইবনে মালিক রা.-এর উক্ত ঘটনা দিয়ে দলীল দেওয়া– এগুলো মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ানে চলতেই থাকে। উদাহরণস্বরূপ শুনুন, ১৭/৯/২০১৯ ঈ., ছত্তিশগড় ইজতিমা, আখেরি মজলিসের বয়ান এবং ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ঈ.-এর বয়ান।
পর্যালোচনা
কা‘ব ইবনে মালিক রা. ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়ের আলোচনা কুরআন কারীমে সূরা তাওবায় এসেছে। তাছাড়া স্বয়ং কা‘ব রা.-এর যবানিতেও বিস্তারিতভাবে সহীহ বুখারীসহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
আহলে ইলম জানেন, এটা গাযওয়ায়ে তাবুকের ঘটনা। তাবুক যুদ্ধে সবার ওপর বের হওয়া ফরযে আইন ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাধারণ নিয়মের খেলাফ একদম স্পষ্টভাবে যাত্রাপথের কথা জানিয়ে দিয়ে এই যুদ্ধের জন্য ‘নাফীরে আম’ করেছিলেন। অর্থাৎ সবাইকে বের হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যারা ওযরগ্রস্ত ছিলেন এবং যাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় রেখে গিয়েছিলেন, তারা তো পরোক্ষভাবে সফরে শরীকই ছিলেন। বাকি আর যারা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ্র উপযুক্ত ছিলেন তাদের সবার জন্য এই সফরে বের হওয়া ছিল ফরযে আইন; মানে সুনির্দিষ্টভাবে সবার জন্য বের হওয়া ফরয ছিল। সেজন্য তাবুকের উদ্দেশে কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর মদীনায় নারী, শিশু, ওযরগ্রস্ত এবং যাদেরকে মদীনায় কোনো কাজে রেখে যাওয়া হয়েছিল–এদের ছাড়া কেবল মুনাফিকদেরই দেখা যাচ্ছিল। এদের বাইরে আরও তিনজন তখন মদীনায় ছিলেন। কা‘ব ইবনে মালিক রা., হিলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকিফী রা. ও মুরারা ইবনে রবীআ আমিরী রা.। তাঁরা খাঁটি মুমিন ছিলেন। কা‘ব রা. তো লাইলাতুল আকাবায় নবীজীর হাতে যারা বাইআত গ্রহণ করেছিলেন তাদের অন্যতম। আর অন্য দুজন ছিলেন বদরী সাহাবী। খাঁটি মুমিন হওয়া সত্ত্বেও কোনো ওযর ছাড়াই তারা পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। একসময় তাদের তওবা কবুল হওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করলেন–
وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا .
‘এবং (আল্লাহ সদয় হয়েছেন) সেই তিন ব্যক্তির প্রতি, যাদের বিষয় মুলতবি রাখা হয়েছিল।’ –সূরা তাওবা (০৯) : ১১৮
তাফসীর ও শরহুল হাদীসের ইমামগণ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই তিন সাহাবীকে তাম্বীহ এজন্য করা হয়েছিল যে, কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ্র ওই সফর ‘নাফীরে আম’-এর কারণে ফরযে আইন ছিল।
এখন যদি তাবলীগের প্রচলিত খুরূজের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে, তাবলীগ জামাতের প্রচলিত খুরূজ ফরযে আইন। এবং যখনই তাবলীগ জামাতের কোনো যিম্মাদার কাউকে খুরূজের জন্য বলবেন তখন অস্বীকৃতি নয়; শুধু বিলম্বের জন্য ওযর পেশ করলেই কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে! নাউযু বিল্লাহ।
প্রশ্ন হল, মাওলানা সা‘দ সাহেবের কাছে খুরূজের ফরযে আইন হওয়া এবং এতে বিলম্বের কারণে আযাব ও কবীরা গুনাহ হওয়ার কী দলীল আছে? কোনো নেক আমলের ফরযে আইন হওয়া এবং তা তরক করার কারণে কবীরা গুনাহ হওয়ার বিষয়টা কি এত হালকা যে, মানুষ সেটাকে শুধু নিজের মত ও যুক্তি দিয়েই নির্ধারণ করে ফেলতে পারে!!
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
টীকা
১. হাঁ, কেউ কেউاستئناس হিসেবে এখান থেকে কোনো ফায়দা বের করেছেন। তবে কেবল اقتران في الذكر তথা দুটি বিষয় পাশাপাশি উল্লেখের দ্বারা এক বিষয়ের হুবহু বিধান আরেক বিষয়ের ওপর প্রয়োগ করে দেওয়াÑ কোনো সন্দেহ নেই, এটা নিতান্তই ভুল কাজ।
২. رواه الطبراني في >المعجم الأوسط< (১৬১৮)، قال الهيثمي في >مجمع الزوائد< (১: ১৭৮): رجاله موثقون من أهل الصحيح، وصححه السيوطي في >مفتاح الجنة< ص ৪০.