রবিউল আখির ১৪৪৭   ||   অক্টোবর ২০২৫

মজলুমের পাশে না দাঁড়ানো অনেক বড় জুলুম

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

গায্যার বিষয়টা পুরোনো হচ্ছে ঠিক কোনো কিছু পুরোনো হলে মানুষ ধীরে ধীরে সেটি ভুলে যায়! আমরা তো ভুলে বসে আছি, কিন্তু ইসরাইল কি জুলুম করা ভুলেছে, নাকি জুলুমের মাত্রা আরও বাড়াচ্ছে?

বিভিন্ন অমুসলিম দেশে অমুসলিমরা পর্যন্ত প্রতিবাদ জানাচ্ছে! তাহলে আমাদের দিলে কি একটু ঈমানী চেতনা নেই? কাজেই সব সময় তাদেরকে দুআতে স্মরণ রাখতে হবে

আরেক হল যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, সেখানে সাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করা আপনি যদি চারদিকে তাকান, সেখানে সাহায্য পাঠানোর নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র খুঁজে পাবেন! আপনি তালাশ করলে এবং খুঁজলে নির্ভরযোগ্য সূত্র অবশ্যই পাবেন! প্রত্যেকে যার যতটুকু সাধ্য আছে, নিজ দায়িত্বে সেখানে সাহায্য পাঠানোর জন্য খুব গুরুত্বের সাথে বিষয়টাকে নেওয়ার চেষ্টা করি! এতে আল্লাহর কাছে যদি কোনোরকমে বাঁচা যায় যে, আল্লাহ আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী কিছুটা হলেও চেষ্টা করেছি! নতুবা এই আন্তর্জাতিক পাপ ও আন্তর্জাতিক জুলুমের দায় সবাইকে নিতে হবে! ইসরাইল জুলুম করে যাচ্ছে আর আমরা বসে বসে তামাশা দেখছি, যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি না! মজলুমদের পাশে দাঁড়াচ্ছি না!

এই যে মজলুমের পাশে আমি দাঁড়াচ্ছি না, এটাও অনেক বড় জুলুম মজলুমকে জালেমের হাতে ছেড়ে দেওয়া, জালেমের হাত থেকে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা না করা, এটা কবীরা গুনাহ এবং বড় জুলুম

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُه وَلاَ يُسْلِمُه.

মুসলিম মুসলিমের ভাই সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালেমের হাতে ছেড়ে দেবে না, সোপর্দ করবে না সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৪২

আন্তর্জাতিকভাবে আমরা সবাই এই জুলুমের মধ্যে লিপ্ত আছি বিষয়টা নিয়ে একটু ভেবে দেখা উচিত! বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের যত দেশের দূতাবাস রয়েছে, বাংলাদেশের তাওহীদী জনতার পক্ষ থেকে সকল দূতাবাসের দায়িত্বশীলদেরকে আমরা জানাতে চাচ্ছি যে, তোমরা তোমাদের দেশের সরকারকে আমাদের এই বার্তা পৌঁছাও, যেন এই জুলুম বন্ধ করার জন্য সবাই ইসরাইলের ওপর যথাযথ চাপ প্রয়োগ করে!

আমাদের এখানে মিশরের দূতাবাস আছে মিশরের দূতাবাসের কাছে আমরা এই বার্তা পাঠালাম, তুমি তোমার সরকারের কাছে আমাদের এই জোর দাবি পৌঁছাও যে, তোমরা বর্ডার খুলে দাও, যাতে গায্যায় সাহায্য যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারে! গায্যার দিকে তোমাদের যে বর্ডার সেটা যদি বন্ধ থাকে, তাহলে তোমাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমতও বন্ধ হয়ে যাবে! মুসলিম দেশগুলোর রাস্তা তোমাদের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে! সবাই সবকিছু অনেক দিন বরদাশত করে না! মজলুমদের ওপর জুলুম হতে থাকবে আর সবাই তামাশার মতো করে দেখতে থাকবে, এটা হয় না! কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, সবাই নিজেকে মাযূর মনে করে! আল্লাহ জানেন, কে বাস্তবে মাযূর আর কে মাযূর নয়!

আসলেই কি সবাই মাযূর ও  অক্ষম?!

অনেক শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিজেদের কেন মাযূর (অক্ষম) মনে হয়? বাস্তবেই কি সবাই অক্ষম?

বর্তমান বিশ্বের অবস্থা এমন যে, সবাই নিজেকে অক্ষম মনে করে গাজায় গণহত্যা চলছে, জাতিগত নিধন চলছে, নিজেরাই যুদ্ধবিরতির চুক্তি করে, কিন্তু সেই চুক্তি ভঙ্গ করে নিজেরাই নতুন করে হামলা শুরু করে হাজার হাজার নারী-শিশু শহীদ হচ্ছে আর গোটা বিশ্ব নীরব ভূমিকা পালন করছে আবার তারাই মানবাধিকারের স্লোগান দেয়!

বিষয়টা কিন্তু সবাই দেখছে আমি দেখছি, আমি বলি, আমি কী করতে পারি? আপনি দেখছেন, আপনি বলছেন, আমার কী করার আছে? আমাদের দেশের সরকার দেখছে, সরকার বলে, আমরা কী করতে পারি? পাকিস্তান সরকার দেখছে, তারা বলে, আমরা কী করতে পারি? আরব দেশগুলো দেখছে, তারা বলে, আমরা কী করতে পারি? যেন সবাই মাযূর ও অপারগ! কারোরই কিছু করার কোনো শক্তি-সামর্থ্য নেই আসলেই কি সবাই মাযূর ও  অক্ষম?!

বাস্তবে অক্ষম হওয়া আর নিজেকে অক্ষম মনে করা এক নয়

এ তো গুনাহের শাস্তি

আরেকটা বিষয় হল, অনেক ওযর ও অপারগতা মূলত নিজেদের গুনাহের শাস্তি ওই গুনাহ থেকে বের হয়ে এলেই কাজ হয়ে যায় ওসব অপরাধ ছেড়ে তওবা করলেই ঈমানী শক্তি জাগ্রত হয়ে যায়! তখন দেখা যাবে, আপনার ঈমানী শক্তি কত বেশি! তখন নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য সামনে আসবে; যা কাজে লাগাতে পারলে সমস্ত জালেম শক্তি পরাস্ত হতে বাধ্য!

আমার কাছে যদি আমার আখেরাতের ফিকিরই না থাকে, আল্লাহর বান্দার কোনো কদরই যদি আমার অন্তরে না থাকে, তখন হাজারো শক্তি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অক্ষম ও মাযূরই মনে হবে!

এখন সৌদি আরবও মাযূর! মিশরও মাযূর! জর্ডানও মাযূর! মধ্যপ্রাচ্যের সবাই মাযূর কেউ পারছে না পাশে দাঁড়াতে অথচ কেউই মূলত মাযূর নয়; বরং প্রত্যেকের কাছেই আছে শক্তি-সামর্থ্য; নেই কেবল ঈমানী শক্তি নেই আল্লাহর বান্দাদের প্রতি ভালবাসা! নেই মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি দরদ ও ব্যথা!

মুসলিম দেশগুলো যদি আজও নিজেদের ঈমানী শক্তিকে জাগ্রত করে, এক আমেরিকা কেন; আরও দশ আমেরিকাও যদি ইসরাইলের পেছনে থাকে, মুসলিম উম্মাহ্র সঙ্গে তাদের পারার কোনো সম্ভাবনা নেই ইনশাআল্লাহ!

এই যে আমেরিকাকে খোদা মনে করা এটা শিরক কি না? কেমন যেন আল্লাহ না চাইলেও আমেরিকা আমাদের এই এই ক্ষতি করে ফেলতে পারবে! এমন আকীদা শিরক কি না? তুমি যে আমেরিকা আর ইসরায়েলকে খোদার মতো মনে করছ, এটাও তো শিরক

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করুন! ইচ্ছা থাকলে সূত্র আপনিই খুঁজে পাবেন তালাশ করলে এবং চেষ্টা করলেই নির্ভরযোগ্য সূত্র আপনি আপনার চারপাশে পেয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন আমীন!

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

[বায়তুল মোকাররমের জুমার বয়ান থেকে]

 

 

advertisement