রবিউল আখির ১৪৪৭   ||   অক্টোবর ২০২৫

‘আব্রাহাম চুক্তি’ : অন্তরালের বাস্তবতা ও পরিণতি

হযরত মাওলানা মুফতি তকী উছমানী

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আব্রাহাম চুক্তি’ (Abrahamic Accords) নামে একটি চুক্তির ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, মুসলিম, ইহুদী ও খ্রিস্টান এই তিন ধর্মের অনুসারীরা যেহেতু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নিজেদের ‘অনুসৃত ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে স্বীকার করে, তাই তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক হওয়া উচিত

কিন্তু এখন এ পরিভাষা কার্যত একটি বিন্দুতেই স্থির হয়ে গেছে তা হল, মুসলিম ও আরব সরকারগুলো যেন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করে, উদীয়মান পূর্বাঞ্চলীয় রাজনৈতিক পরাশক্তি চীনের বিপরীতে আমেরিকান ব্লক সুদৃঢ় হয় এবং মুসলিম ও আরব দেশগুলোকে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো যায়

এই চুক্তির অধীনে প্রথম পদক্ষেপ নেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন তারা শুধু ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েই থেমে থাকেনি; বরং গোয়েন্দা তথ্যের আদানপ্রদানসহ বিভিন্ন সেক্টরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে

এটা তো হল ‘আব্রাহাম চুক্তি’র চূড়ান্ত রাজনৈতিক পরিণতি; তবে এই পরিণতিতে পৌঁছানোর জন্য বহুদিন ধরে পথ সুগম করা হয়েছে একাডেমিক ও তাত্ত্বিক পরিসরে এ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, যেন মুসলিম, ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে একে অপরের কাছাকাছি আনা যায়

দেখুন, যদি এ প্রচেষ্টা এই উদ্দেশ্যে হত যেই সমাজে তিন ধর্মের অনুসারীরা একসঙ্গে বাস করে, সেখানে তারা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করবে এবং ধর্মকে পুঁজি করে একে অপরের জান ও মালের ক্ষতি করবে না; তাহলে বিষয়টি তেমন আপত্তিকর হত না

কিন্তু এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এমন ধারণা প্রচার করা হল যে, যেহেতু এই তিন ধর্মই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নিজেদের ‘অনুসৃত ব্যক্তিত্ব’ মানে, তাই তারা একই পরিবারের সদস্য

প্রথমত, এই উদ্দেশ্যে একটি নীতি চালু করার চেষ্টা হল যদি কোনো রাষ্ট্রে বহু ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করে, তাহলে তারা সেই রাষ্ট্রের নাগরিকত্বের ভিত্তিতে ‘এক উম্মাহ’!

দ্বিতীয়ত, মুসলিম, ইহুদী ও খ্রিস্টানদের জন্য ‘আব্রাহামিক পরিবার’ বলে একটি পরিভাষা তৈরি করা হল এর দ্বারা বোঝানো হল, তারা সবাই এক পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং সকলেই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী

পরিণতিতে এই কুফরী ধারণা প্রতিষ্ঠিত হল যে, এই ধর্মগুলোর মধ্যে সত্য ও মিথ্যার কোনো সংঘাত নেই; সবাই ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী হওয়ার কারণে একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত তাই ধর্মের পরিচয়ে কাউকে আলাদা মনে করার প্রয়োজন নেই এর ফলে এই (ভ্রান্ত) ধারণা হাজির হল সব ধর্মই সত্য এবং আখেরাতে নাজাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম অনুসরণ অপরিহার্য নয় অর্থাৎ, সেই পুরোনো কুফরী মতবাদ যা ‘তাওহীদুল আদইয়ান’ মতাবলম্বীরা প্রচার করে আসছে (যারা বলে থাকে, সব ধর্মই সত্য ও গ্রহণযোগ্য, ধর্মগুলোর মধ্যে হক ও বাতিলের কোনো পার্থক্য নেই এবং আখেরাতে নাজাত ও পরম মুক্তি কেবল ইসলামেই সীমাবদ্ধ নয়, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম অনুসরণ করেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব!)

আর এখন তো ‘আব্রাহাম চুক্তি’ এবং ‘ইসরাইলকে বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা’ এই দুটি বিষয় কার্যত সমার্থক হয়ে গেছে

***

অনেক সময় কোনো বিষয় দেখতে মামুলি মনে হলেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয়, এর পরিণতি দীর্ঘসময় পর প্রকাশ পায় মুসলিম বিশ্বের প্রবীণ আলেম, হযরত শায়েখ আবদুল্লাহ বিন মাহফূয বিন বাইয়াহ মুদ্দা যিল্লুহুমুল আলী যিনি মূলত মৌরিতানিয়ার অধিবাসী সেখানের মাশায়েখের কাছে বিস্তৃত ও গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন ফিকহী প্রজ্ঞা ও অসামান্য পাণ্ডিত্যে তিনি বিশ্বের খ্যাতিমান আলেমদের মধ্যে গণ্য

যখন থেকে তিনি ‘মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী’র সদস্য হিসেবে আসা-যাওয়া করতেন, তখন থেকে আমার সাথে তাঁর সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক শুরু হয় তাঁর গভীর পাণ্ডিত্য থেকে আমি উপকৃত হতাম মাঝে মাঝে কিছু বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা ও চিঠিপত্র আদান-প্রদানও হত সে সময় তিনি সম্পূর্ণ ইলমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন বাস্তব রাজনীতির সাথে উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা ছিল না

একটা সময় পর তিনি تعزيز السلم- ‘তা‘যীযুস্-সিলম’ বা ‘শান্তি-শৃঙ্খলা সংহতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন শুরু করেন সে সময় বিভিন্ন মুসলিম দেশে ‘শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা’র নামে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছিল এর ফলে অকারণে বহু নিরপরাধ মুসলিমের রক্ত ঝরছিল তাই এ প্রেক্ষাপটে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’-র আহ্বান মোটের ওপর একটি প্রশংসনীয় বিষয় ছিল

এই লক্ষ্য সামনে রেখে শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ হাফিযাহুল্লাহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আয়োজন করেছেন, যেখানে আমি নিজে এবং আমার শ্রদ্ধেয় ভাই হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ রফী উসমানী রাহ.-ও উপস্থিত ছিলাম

এরকম একটি কনফারেন্সের বক্তব্যে আমি এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি যে, মুসলিম সরকারগুলোর বিরুদ্ধে যারা সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে এবং এর ফলে যে অশান্তি ও বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়ছে তার মোকাবেলায় শুধু সম্মেলন আয়োজন করে বিশেষ ফায়েদা নেই; বরং মুসলিম দেশগুলোতে প্রকাশ্যে (রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে) যেসব শরীয়াহ বিরোধী কর্মকাণ্ড চলছে, সেগুলো বন্ধ করা জরুরি যাতে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এসব কর্মকাণ্ডকে তাদের কার্যকলাপের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে অপরদিকে, যারা সরল মনে আন্তরিকতার সঙ্গে এসব আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তাদের কাছে কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক বিধান ও নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া দরকার

যাহোক, এ বিষয়ে একাধিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছিল পরবর্তীতে মরক্কোর বিখ্যাত শহর মারাকেশে আরেকটি কনফারেন্সের  আয়োজন করা হয় এর বিষয়বস্তু ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় ইহুদীদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন যা ‘মদীনা সনদ’ নামে সুপরিচিত অনুরূপ একটি চুক্তি মুসলিমরা যেন অমুসলিম নাগরিকদের সঙ্গে সম্পাদন করে

আমি এই কনফারেন্সে  যোগদানের জন্য পৌঁছলে ‘তা‘যীযুস্-সিলম’ সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল আমাকে স্বাগত জানাতে এলেন তিনি জানালেন, মদীনা সনদের একটি বাক্য থেকে বোঝা যায় মদীনা মুনাওয়ারায় বসবাসকারী মুসলমান ও ইহুদী উভয় সম্প্রদায় ছিল ‘একই উম্মাহ’ তাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল, প্রতিটি মুসলিম দেশে এই ধারণা প্রচার করা যে, মুসলিম ও অমুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অনুসারীগণ একই দেশের নাগরিক হওয়ার কারণে ‘এক উম্মাহ্’র অন্তর্ভুক্ত!

এ কথা শুনে আমার মনে খটকা জাগে আমি ‘মদীনা সনদ’-এর বর্ণনা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করি এবং এ স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাই মদীনা সনদের পাঠ থেকে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে ‘এক উম্মাহ’ হওয়ার ধারণা প্রমাণ করা নিশ্চিত ভুল

তাই সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে আমি শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ হাফিযাহুল্লাহর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করি এবং তাঁকে বলি জনৈক দায়িত্বশীল আমাকে এ কথা বলেছেন, অথচ ‘মদীনা সনদে’র পাঠে এমন কোনো শব্দ বা বাক্য নেই, যা থেকে মুসলিম ও ইহুদী উভয়ে ‘এক উম্মাহ’ হওয়ার ধারণা বোঝা যায় আমি ‘মদীনা সনদে’র সংশ্লিষ্ট বক্তব্য তাঁকে দেখিয়ে বলি, এই ধারণা এখান থেকে প্রমাণ হয় না

শায়েখ হাফিযাহুল্লাহ আমার সঙ্গে একমত হন এবং বলেন, আপনার কথা সঠিক

এরপর যখন আনুষ্ঠানিক অধিবেশন শুরু হল, কিছু বক্তৃতায় সে ধারণাটি উঠে আসল একই দেশের নাগরিক, তারা মুসলিম হোক বা অমুসলিম, সবাই মিলে ‘এক উম্মাহ’ এবং এটি নাকি ‘মদীনা সনদ’-এরই দাবি তখন আমি

إن هذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً.

এবং কুরআনের এজাতীয় আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলি, ধারণাটি আপত্তিকর ‘এক উম্মাহ’ একটি কুরআনী পরিভাষা, যা কুরআনে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী তথা মুসলিমদের জন্যই ব্যবহৃত হয়েছে একে যদি জাতিরাষ্ট্রের (Nation State) নাগরিকদের বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি হবে, বাস্তব ও অবাস্তব বিষয় গুলিয়ে যাবে; তাই এ পরিভাষা ব্যবহার না করাই উত্তম

কিন্তু সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যখন ‘মারাকেশ ঘোষণাপত্র’ (Marrakesh Declaration) পাঠ হওয়ার কথা, তখন শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ হাফিযাহুল্লাহ আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় থামলেন এবং বললেন, মদীনা সনদের যে বাক্য নিয়ে আপনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনা করে দেখলাম সেখান থেকে জাতিরাষ্ট্রের সকল নাগরিক ‘এক উম্মাহ’ হওয়ার ধারণা প্রমাণ হয় আর এতে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই

তখন তিনি এতটাই তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলেন যে, তাঁর কথাটির জবাব দেওয়ার সুযোগ হল না অবশেষে ‘মারাকেশ ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হল পরে আর কারও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ রইল না ঘোষণাপত্রটি আমার কাছে স্বাক্ষরের জন্য আনা হলে আমি আমার পেশকৃত পূর্ববর্তী আপত্তিগুলোর শর্তযুক্ত স্বাক্ষর করি এবং এভাবে আমার ভিন্ন মত থাকার ইঙ্গিত যুক্ত করি

এই ঘটনার পর শায়েখ আরেকটি কনফারেন্স আহ্বান করেন এবং সেখানে ‘আব্রাহামিক পরিবার’ বলে একটি নতুন পরিভাষা হাজির করা হয়

আমি আগেও বলেছি, একটি দেশে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদীরা যদি শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করে, তাতে আপত্তির কিছু নেই কিন্তু তাদেরকে ‘আব্রাহামিক পরিবার’ বলে অভিহিত করার অর্থ দাঁড়ায় এই সকল সম্প্রদায় বাস্তব অর্থেই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী এবং মুসলমানদের মতো ইহুদী ও খ্রিস্টানরাও ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রকৃত আদর্শ অনুসরণ করছে অথচ কুরআনের স্পষ্ট বক্তব্য অনুযায়ী, ইহুদী ও খ্রিস্টানরা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের শিরকমুক্ত তাওহীদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে এবং এখন তাদের সাথে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বাস্তব কোনো সম্পর্ক নেই এ বিষয়ে কুরআনের আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট

যাইহোক ঐ সম্মেলনে এই তিন ধর্মের নেতৃবৃন্দকে একত্র করে তাদেরকে ‘আব্রাহামিক পরিবার’ বলা হল এবং প্রত্যেকের জন্য ইবাদত পালনের আলাদা ব্যবস্থা করা হল

এই প্রেক্ষাপটে আমি ‘আব্রাহামিক পরিবার’ পরিভাষার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ হাফিযাহুল্লাহকে অবহিত করার প্রয়োজন অনুভব করলাম তাঁর নেক নিয়তের বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই; তবে মনে হচ্ছিল, কিছু পরিণতিজ্ঞান-শূন্য লোক তাঁর সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁকে এসব পরিভাষার ধাঁধায় জড়িয়ে দিচ্ছে এবং পরবর্তীতে তারা সেখান থেকে নানা মতলব উদ্ধার করবে তাই শায়েখের সম্মান রক্ষা করে তাঁকে একটি চিঠি লিখি এখনো পর্যন্ত আমি সেই চিঠি প্রকাশ করিনি, কারণ সেটি ছিল একটি ব্যক্তিগত পত্র

কিন্তু যখন ‘আব্রাহামিক পরিবার’ পরিভাষার ফলশ্রুতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে একাধিক মুসলিম সরকারকে ‘আব্রাহাম চুক্তি’র অন্তর্ভুক্ত করলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ছিল এই তালিকার শীর্ষে যার প্রধান শর্ত ছিল, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক বা না হোক, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে হবে, ইসরাইলের সঙ্গে বিভিন্ন সেক্টরে সহযোগিতা এবং যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের চুক্তি সম্পাদন করতে হবে

তখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যা কিছুই হোক না কেন, পর্দার অন্তরালে ওই কনফারেন্সগুলো এ উদ্যোগকে বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন জুগিয়েছে মানুষের  চিন্তা ও মনোভাবকে এর কাছাকাছি আনার জন্য সেখানে ‘এক উম্মাহ’ এবং ‘আব্রাহামিক পরিবার’ এই দুটি পরিভাষা ব্যবহার করে পথ পরিষ্কার করা হয়েছিল

তাই এখন আমি চিঠিটি প্রকাশ করা উপযুক্ত মনে করছি, যা আমি এই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ হাফিযাহুল্লাহকে পাঠিয়েছিলাম চিঠির কোনো উত্তর আমি আজও পাইনি

নিচে চিঠিটি তুলে ধরা হল

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على رسوله الكريم، وعلى آله وأصحابه أجمعين، وعلى كل من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين.

سماحة العلامة المحقق الداعية الكبير الشيخ عبد الله بن بيّه، حفظه الله تعالى، وأبقاه ذخرا للإسلام والمسلمين.

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته.

 

প্রথমেই আল্লাহ তাআলার অশেষ শোকর আদায় করছি, যিনি গত কয়েক বছর ধরে আপনার মহৎ সান্নিধ্য থেকে উপকৃত হওয়ার, আপনার স্নেহ-সমাদর লাভের তাওফীক দিয়েছেন সেই যে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকহ একাডেমির অধিবেশনে আপনার সাথে প্রথম দেখা, তখন থেকেই আমি এটা অনুভব করেছি তারপর তো বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে দেখা হয়েছে, বিশেষ করে ‘তা‘যীযুস্-সিলম’ সংগঠনের সম্মেলনসমূহে, যেখানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন

অন্যায়-অবিচার, যুদ্ধ ও সন্ত্রাসে ক্লান্ত এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সুসংহত করার জন্য আপনি যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি শেষ বয়সেও যে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করছেন (যখন মানুষ শান্তি ও নির্বিঘ্ন জীবন প্রত্যাশা করে) আমি এর প্রশংসা ও মূল্যায়ন করি আল্লাহ তাআলা আপনাকে এর সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন

আপনার এই প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা এটি মহৎ ও মহান উদ্দেশ্য তবে অনেক দিন থেকে কিছু প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে কয়েকবার ইচ্ছে হয়েছে আপনার সামনে পেশ করি; কিন্তু এই ভেবে বিরত থেকেছি যে, ‘লুকমান হাকীম’কে ‘হেকমত’ শেখানোর দুঃসাহস করছি না তো! কিন্তু আজ মনে হল, আপনার দয়া ও স্নেহের আচরণের ওপর ভরসা করে নেক নিয়তের সাথে প্রশ্নগুলো আপনার সামনে তুলে ধরি

 

প্রথম প্রশ্ন

আজকের দুনিয়া যে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জর্জরিত, সেগুলো কেবল সম্মেলন ও কনফারেন্সে গৃহীত প্রস্তাব দিয়ে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব; যখন মুসলিমরা ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, ভারত, ইরাক, সিরিয়া, বার্মা, ইয়েমেনসহ বিশ্বের বহু অঞ্চলে চরম নিপীড়নের শিকার হচ্ছে?

যদি এসব কনফারেন্স আয়োজনের বিপুল অর্থ মুসলিমদের পারস্পরিক কলহ-বিবাদ নিরসন, ধর্ম ও জাত নির্বিশেষে মজলুমের সহায়তা এবং বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ এবং সেই মৌলিক কারণগুলো দূরীকরণের পেছনে ব্যয় হত, যেগুলো সন্ত্রাস ও সহিংসতার জন্ম দেয় তাহলে বেশি ফলপ্রসূ হত

দ্বিতীয় প্রশ্ন

সন্দেহ নেই, এসব সম্মেলন ও সেমিনারের কিছু তাত্ত্বিক ও একাডেমিক উপকার আছে বটে, কিন্তু শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সম্মেলনগুলোর দেওয়া কর্মসূচী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এগুলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও অসহিষ্ণুতার অভিযোগকারীদের সামনে, ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষ থেকে একপ্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের ভূমিকা গ্রহণ করে মনে হয়, কেবল মুসলিমরাই দুনিয়াজুড়ে অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বীজ বপন করেছে, তারাই দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধ-সংঘাত ও সন্ত্রাসবাদের সূত্রপাত করেছে আর আমরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সামনে প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা নির্দোষ, অসহিষ্ণুতা ও সন্ত্রাসের সাথে আমরা নেই অথচ বাস্তবতা হল, বর্তমান সময়ে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা, নিপীড়ন ও অসহিষ্ণুতার শিকার

তবু আমাদের কনফারেন্সগুলোতে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি সহনশীল আচরণ এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় প্রশ্ন হল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে কি এমন অমুসলিম সংখ্যালঘু আছে, যারা নিয়মিত ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, বার্মা বা ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুর মতো নির্যাতন-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে?

নিপীড়িত মুসলিমদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কি অধিক জরুরি লক্ষ্য নয়?

তৃতীয় প্রশ্ন

অবশ্যই মুসলিম ও অমুসলিমদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার তবে এজন্য কি এমন পরিভাষা ব্যবহার করা উচিত, যা এই ভুল ধারণার জন্ম দেয় যে, মুসলিম-অমুসলিমের বিশ্বাসের পার্থক্য কোনো গুরুত্ব বহন করে না? যেমন ‘মারাকেশ ঘোষণাপত্রে’ বলা হয়েছে, ‘মুসলিম ও অমুসলিম নাগরিক সবাই এক উম্মাহ

অভিধান থেকে ‘উম্মাহ’ শব্দের অর্থ নিয়ে এই বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেতে পারে, তবে প্রসিদ্ধ ও সর্বজনগৃহীত পরিভাষায় ‘উম্মাহ’ বলতে বোঝায় একই বিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ একটি জনগোষ্ঠী আর আপনি জানেন, কুরআনে একাধিক আয়াতে শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে :

এক.

اِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً ۖؗ وَّ اَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْنِ.

(তাওহীদের) এ দ্বীনই তোমাদের দ্বীন, যা (নবী-রাসূলদের) অভিন্ন দ্বীন আর আমি তোমাদের রব, অতএব আমারই ইবাদত কর সূরা আম্বিয়া (২১) : ৯২

দুই.

وَ اِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ اَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُوْنِ.

(তাওহীদের) এ দ্বীনই তোমাদের দ্বীন, যা (নবী-রাসূলদের) অভিন্ন দ্বীন আর আমি তোমাদের রবসুতরাং আমাকে ভয় কর সূরা মুমিনূন (২৩) : ৫২

তিন.

وَ مَا كَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّةً وَّاحِدَةً فَاخْتَلَفُوْا وَ لَوْ لَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَّبِّكَ لَقُضِیَ بَیْنَهُمْ فِیْمَا فِیْهِ یَخْتَلِفُوْنَ.

(প্রথমে) সমস্ত মানুষ একই উম্মত (অর্থাৎ অভিন্ন দ্বীনের অনুসারী) ছিল তারপর তারা পরস্পরে মতভেদে লিপ্ত হয়ে আলাদা-আলাদা হয়ে যায় তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পূর্ব থেকেই একটা কথা স্থিরীকৃত না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতভেদ করছে (দুনিয়াতেই) তার মীমাংসা করে দেওয়া হত সূরা ইউনুস (১০) : ১৯

চার.

وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ لٰكِنْ یُّضِلُّ مَنْ یَّشَآءُ وَ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ .

আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত (অর্থাৎ একই দ্বীনের অনুসারী) বানাতে পারতেন কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা (তার জেদি আচরণের কারণে) বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করেন  সূরা নাহ্ল : (১৬) : ৯৩

পাঁচ.

وَ لَوْ شَآءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ لَا یَزَالُوْنَ مُخْتَلِفِیْنَ،اِلَّا مَنْ رَّحِمَ رَبُّكَ وَلِذٰلِكَ خَلَقَهُمْ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَاَمْلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ اَجْمَعِیْنَ.

তোমার প্রতিপালক চাইলে সমস্ত মানুষকে একই পথের অনুসারী বানিয়ে দিতেন, কিন্তু (কাউকে জোরপূর্বক কোনো দ্বীন মানতে বাধ্য করাটা তাঁর হেকমতের পরিপন্থি তাই তাদেরকে তাদের ইচ্ছাক্রমে যে কোনো পথ অবলম্বনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সুতরাং) তারা বিভিন্ন পথেই চলতে থাকবে

অবশ্য তোমার প্রতিপালক যাদের প্রতি দয়া করবেন, তাদের কথা ভিন্ন (আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন) আর এরই (অর্থাৎ এই পরীক্ষারই) জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমার প্রতিপালকের এই কথা পূর্ণ হবেই, যা তিনি বলেছিলেন যে, আমি জিন ও ইনসান উভয়ের দ্বারা জাহান্নাম ভরব সূরা হুদ  (১১) : ১১৮-১১৯

ছয়.

كَانَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً ۫ فَبَعَثَ اللهُ النَّبِیّٖنَ مُبَشِّرِیْنَ وَمُنْذِرِیْنَ وَاَنْزَلَ مَعَهُمُ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِیَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ فِیْمَا اخْتَلَفُوْا فِیْهِ وَمَا اخْتَلَفَ فِیْهِ اِلَّا الَّذِیْنَ اُوْتُوْهُ مِنْۢ بَعْدِ مَا جَآءَتْهُمُ الْبَیِّنٰتُ بَغْیًۢا بَیْنَهُمْ  فَهَدَی اللهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لِمَا اخْتَلَفُوْا فِیْهِ مِنَ الْحَقِّ بِاِذْنِهٖ  وَاللهُ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ.

(শুরুতে) সমস্ত মানুষ একই দ্বীনের অনুসারী ছিল তারপর (যখন তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিল তখন) আল্লাহ নবী পাঠালেন, (সত্যপন্থিদের জন্য) সুসংবাদদাতা ও (মিথ্যাশ্রয়ীদের জন্য) ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে আর তাদের সাথে সত্যসম্বলিত কিতাব নাযিল করলেন, যাতে তা মানুষের মধ্যে সেইসব বিষয়ে মীমাংসা করে দেয়, যা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ ছিল আর অন্য কেউ নয়; বরং যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তারাই তাদের কাছে সমুজ্জ্বল নিদর্শনাবলি আসার পরও কেবল পারস্পরিক রেষারেষির কারণে তাতেই (সেই কিতাবেই) মতভেদ সৃষ্টি করল অতঃপর যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদেরকে তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত, সে বিষয়ে নিজ ইচ্ছায় সঠিক পথে পৌঁছে দেন আর আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল-সঠিক পথে পৌঁছে দেন সূরা বাকারা (০২) : ২১৩

সাত.

وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَعَلَكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ لٰكِنْ لِّیَبْلُوَكُمْ فِیْ مَاۤ اٰتٰىكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَیْرٰتِ  اِلَی اللهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِیْعًا فَیُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ فِیْهِ تَخْتَلِفُوْنَ.

আল্লাহ চাইলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত বানিয়ে দিতেন কিন্তু (পৃথক শরীয়ত এজন্য দিয়েছেন,) যাতে তিনি তোমাদেরকে যা-কিছু দিয়েছেন, তা দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন সুতরাং তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর তোমাদের সকলকে আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে অতঃপর যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছিলে, সে সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন সূরা মায়িদা (০৫) : ৪৮

আট.

وَلَوْ شَآءَ اللهُ لَجَعَلَهُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً وَّ لٰكِنْ یُّدْخِلُ مَنْ یَّشَآءُ فِیْ رَحْمَتِهٖ وَ الظّٰلِمُوْنَ مَا لَهُمْ مِّنْ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیْرٍ.

আল্লাহ চাইলে তাদের সকলকে একই  উম্মত বানাতে পারতেন কিন্তু তিনি যাকে চান নিজ রহমতের ভেতর দাখেল করেন আর যারা জালেম তাদের নেই কোনো অভিভাবক, না কোনো সাহায্যকারী সূরা শূরা (৪২) : ০৮

নয়.

وَلَوْ لَاۤ اَنْ یَّكُوْنَ النَّاسُ اُمَّةً وَّاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَنْ یَّكْفُرُ بِالرَّحْمٰنِ لِبُیُوْتِهِمْ سُقُفًا مِّنْ فِضَّةٍ وَّمَعَارِجَ عَلَیْهَا یَظْهَرُوْنَ.

সমস্ত মানুষ একই উম্মত (অর্থাৎ কাফের) হয়ে যাবে এই আশঙ্কা না থাকলে, যারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে, আমি তাদের ঘরের ছাদও করে দিতাম রুপার এবং তারা যে সিঁড়ি দিয়ে চড়ে তাও সূরা যুখরুফ (৪৩) : ৩৩

দশ.

فَكَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیْدًا.

সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? সূরা নিসা (০৪) : ৪১

(এই আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে, মুসলিম ও অমুসলিম কখনোই ‘এক উম্মাহ’ নয়) এজন্যই ‘উম্মাহ’ শব্দটি দেশ ও অঞ্চল নির্বিশেষে শুধু মুসলিমদেরকে বোঝানোর নির্দিষ্ট পরিভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে

আর মদীনা সনদের যে বাক্যের ভিন্ন অর্থ ধরে নিয়ে ‘মারাকেশ ঘোষণাপত্র’-এ (মুুসলিম-অমুসলিম উভয়ে এক উম্মাহ হওয়ার অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে) সে বাক্যটি দ্ব্যর্থহীন নয়; বরং একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রাখে কথাটি আপনাকে মৌখিকভাবেও বলেছি

তদ্রূপ, ‘ইবরাহীমী পরিবার’ পরিভাষাটিতে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদী তিন সম্প্রদায়কেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই পরিভাষা নানা উপলক্ষে ব্যবহার হয়েছে, বিশেষত সম্প্রতি আবুধাবি সম্মেলন থেকে ঘোষিত ‘নতুন হিলফুল ফুযূল’ অঙ্গীকারনামায়ও ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু পরিভাষাটি এই ভ্রান্ত ধারণা জন্ম দেয় যে, এই সব ধর্ম বাস্তবেই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে অনুসরণ করে অথচ এ দাবি কুরআনুল কারীমের সুস্পষ্ট বক্তব্য পরিপন্থি

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন

ক.

وَ قَالُوْا كُوْنُوْا هُوْدًا اَوْ نَصٰرٰی تَهْتَدُوْا قُلْ بَلْ مِلَّةَ اِبْرٰهٖمَ حَنِیْفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ.

এবং তারা (ইহুদী ও খ্রিস্টানরা মুসলিমদেরকে) বলে, তোমরা ইহুদী বা খ্রিস্টান হয়ে যাও, তবে সঠিক পথ পেয়ে যাবে বলে দাও, বরং (আমরা তো) ইবরাহীমের মিল্লাত (মেনে চলব), যিনি যথাযথ সরল পথের ওপর ছিলেন তিনি সেইসব লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, যারা (আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে) শরীক করত সূরা বাকারা (০২) : ১৩৫

খ.

اَمْ تَقُوْلُوْنَ اِنَّ اِبْرٰهِیْمَ  وَ اِسْمٰعِیْلَ وَ اِسْحٰقَ وَ یَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطَ كَانُوْا هُوْدًا اَوْ نَصٰرٰی قُلْ ءَاَنْتُمْ اَعْلَمُ اَمِ اللهُ وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهٗ مِنَ اللهِ وَمَا اللهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ.

তোমরা কি বল, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তাদের বংশধরগণ ইহুদী বা নাসারা ছিল? (হে মুসলিমগন! তাদেরকে) বলে দাও, তোমরাই কি বেশি জান, না আল্লাহ? আর সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে তার নিকট আল্লাহ হতে যে সাক্ষ্য পৌঁছেছে তা গোপন করে? তোমরা যা-কিছু কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ বে-খবর নন সূরা বাকারা (০২) : ১৪০

গ.

یٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ لِمَ تُحَآجُّوْنَ فِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَمَاۤ اُنْزِلَتِ التَّوْرٰىةُ وَالْاِنْجِیْلُ اِلَّا مِنْۢ بَعْدِهٖ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ.

হে আহলে কিতাব! তোমরা ইবরাহীম সম্পর্কে কেন বিতর্ক করছ, অথচ তাওরাত ও ইনজীল তো তাঁর পরে নাযিল হয়েছে তোমরা কি এতটুকুও বোঝ না? সূরা আলে ইমরান (০৩) : ৬৫

ঘ.

هٰۤاَنْتُمْ هٰۤؤُلَآءِ حَاجَجْتُمْ فِیْمَا لَكُمْ بِهٖ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَآجُّوْنَ فِیْمَا لَیْسَ لَكُمْ بِهٖ عِلْمٌ وَاللهُ یَعْلَمُ وَاَنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ .

দেখ, তোমরাই তো তারা, যারা এমন বিষয়ে বিতর্ক করেছ, যে বিষয়ে কিছু না কিছু জ্ঞান তোমাদের ছিল এবার এমন সব বিষয়ে কেন বিতর্ক করছ, যে সম্পর্কে তোমাদের মোটেই জ্ঞান নেই আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না সূরা আলে ইমরান (০৩) : ৬৬

ঙ.

مَا كَانَ اِبْرٰهِیْمُ یَهُوْدِیًّا وَّ لَا نَصْرَانِیًّا وَّلٰكِنْ كَانَ حَنِیْفًا مُّسْلِمًا  وَ مَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ، اِنَّ اَوۡلَی النَّاسِ بِاِبۡرٰہِیۡمَ لَلَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُ وَہٰذَا النَّبِیُّ وَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا  وَاللّٰہُ وَلِیُّ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ.

ইবরাহীম ইহুদীও ছিল না এবং খ্রিস্টানও নয়; বরং সে তো একনিষ্ঠ মুসলিম ছিল সে কখনো শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না ইবরাহীমের সাথে ঘনিষ্ঠতার সর্বাপেক্ষা বেশি হকদার লোক তারা, যারা তাঁর অনুসরণ করেছে এবং এই নবী (অর্থাৎ শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সেই সকল লোক, যারা ঈমান এনেছে আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক সূরা আলে ইমরান (০৩) : ৬৭

চ.

قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِیْۤ اِبْرٰهِیْمَ وَ الَّذِیْنَ مَعَهٗ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَءٰٓؤُا مِنْكُمْ وَ مِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ، كَفَرْنَا بِكُمْ وَ بَدَا بَیْنَنَا وَ بَیْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰی تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗۤ.

তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সঙ্গীদের মধ্যে উত্তম আদর্শ আছে, যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করছ তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই আমরা তোমাদের (আকীদা-বিশ্বাস) অস্বীকার করি আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে গেছে, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সূরা মুমতাহিনা (৬০) : ০৪

দেখুন, এটা নিছক শব্দ কেন্দ্রিক সাধারণ আলোচনা ভাবা ভুল হবে; কারণ ‘এক উম্মাহ’ কিংবা ‘ইবরাহীমী পরিবার’-এর মতো শব্দ মুসলিমদের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরও অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করলে তা সেই চিহ্নিত শ্রেণির মদদ জোগাতে পারে কিংবা অন্তত অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, যারা ‘ওয়াহ্দাতুল আদইয়ান’-এর মতো কুফরী মতবাদে বিশ্বাসী যারা বলে থাকে, সব ধর্মই সত্য ও গ্রহণযোগ্য, ধর্মগুলোর মধ্যে হক ও বাতিলের কোনো পার্থক্য নেই এবং আখেরাতের নাজাত ও পরম মুক্তি কেবল ইসলামেই সীমাবদ্ধ নয়, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম অনুসরণ করেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব!

এছাড়াও, এই ধরনের পরিভাষার ব্যবহার ‘জাতিরাষ্ট্রের’ (Nation State) ধারণাকেও শক্তি জোগায় যে ধারণার মূল কথা হল ধর্ম নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে জাতীয়তাবাদ জাতীয়তাবাদী দর্শনে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র কিংবা খাঁটি ইসলামী রাষ্ট্রের কোনো স্থান নেই; বরং সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতাই জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের বুনিয়াদ

এ আশঙ্কা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে ‘মারাকেশ ঘোষণাপত্র’ পাঠের কনফারেন্সের প্রস্তাবিত খসড়ার এ বক্তব্যে

د. إن السياق الحضاري المعاصِر يرشِّحصحيفة المدينةلِتُقدِّم للمسلمين النموذجَ الأصيل للمواطنة. إنه الوضع الملائم لحالة الأقليات في الديار الإسلامية، فالعقد الذي ينطبق عليهم هو عقد جديد تاريخياً لكنه متجذِّر في التجربة الإسلامية؛ تحترم فيه الخصوصية، وتتمتع فيه الأقلية بحرية ممارسة دينها، ويتضامن الجميع في إدارة شؤون دنياهم، طبقاً لواجبات وحقوق محدَّدة بالدستور العَقْلاني الذى يكفُل التوازنَ والتعايشَ السعيد، وسيادةَ حكم القانون، وتسويةَ الإشكالات السياسية بالعدل والإنصاف.

সমকালীন সভ্যতার প্রেক্ষাপট মুসলিমদের সামনে মদীনা সনদকে নাগরিকত্বের খাঁটি ইসলামী মডেল হিসেবে পেশ করে এটি মুসলিমপ্রধান দেশে অবস্থানরত সংখ্যালঘুদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে উপযুক্ত মডেল সুতরাং যে চুক্তি সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হতে যাচ্ছে, তা ঐতিহাসিক বিবেচনায় নতুন হলেও ইসলামী অভিজ্ঞতার সাথে গভীরভাবে যুক্ত এই চুক্তিতে সংখ্যালঘুদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষিত হয়, তারা নিজ ধর্ম চর্চায় পূর্ণ স্বাধীনতা পায় এবং সব ধর্মের নাগরিক পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে জাগতিক বিষয়গুলো সম্পাদন করে এমন সব দায়িত্ব ও অধিকারের ভিত্তিতে, যা ‘যুক্তিনির্ভর সংবিধান’ দ্বারা প্রণীত; যে সংবিধান ভারসাম্য, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, আইনের শাসন ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর ন্যায়সঙ্গত সমাধান নিশ্চিত করে

এখানে বিশেষভাবে ‘যুক্তিনির্ভর সংবিধান’ (rational constitution)-এর উল্লেখ করা হয়েছে, তা-ও মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর প্রসঙ্গে বুঝতে পারছি নাযুক্তিনির্ভর সংবিধান’ কি এখানে ‘সেক্যুলার সংবিধান’-এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ‘র‌্যাশনাল’ বা ‘সেক্যুলার’ সংবিধানের পরিবর্তে, ‘ইসলামী সংবিধান’ দ্বারা প্রণীত দায়িত্ব ও অধিকারের ভিত্তিতে সব ধর্মের নাগরিক পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে জাগতিক বিষয়গুলো সম্পাদন করা সম্ভব নয়?

আমি পুনরায় স্পষ্ট করতে চাই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান একটি মহৎ উদ্দেশ্য ও উঁচু লক্ষ্য গোঁড়া বা সংকীর্ণমনা না হলে কেউ এটি অস্বীকার করতে পারে না তবে এ সহাবস্থান অবশ্যই যুক্তিসংগত সীমারেখার ভেতরে হতে হবে এমন যেন না হয় যে, এর ফলে ধর্মগুলোর পার্থক্যরেখা বিলীন হয়ে যায়, বিশ্বাসের বুনিয়াদি পার্থক্যগুলো উপেক্ষিত হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সত্য-মিথ্যা গুলিয়ে যায়

আমার আশঙ্কা হয়, বিভ্রান্তিকর এসব পরিভাষা ও প্রকাশভঙ্গির ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ‘সব ধর্ম সত্য’ হওয়ার সেই কুফরী ধারণা কিংবা ‘জাতিরাষ্ট্র’ বা ‘সেক্যুলারিজম’-এর ধারণা মেনে নেওয়ার প্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দেবে এভাবে আমরা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে সরাসরি নালার নিচে পড়ব!

এই বিনীত পর্যবেক্ষণগুলো পেশ করেছি, যেন আপনি এগুলো বিবেচনা করেন ভয় হচ্ছে, সীমা অতিক্রম করে ফেললাম না তো! তবে সর্বদা আপনার যে স্নেহপূর্ণ আচরণ পেয়েছি, সেটা আমাকে আশা দেয় কোনো কথায় মনে আঘাত পেলে ক্ষমা করবেন আল্লাহ তাআলা আপনাকে সুস্থতার সাথে দীর্ঘ হায়াত দান করুন সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফীক দিন

والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته.

আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভাই

মুহাম্মাদ তাকী উসমানী

 

***

প্রিয় পাঠক! আপনি লক্ষ করেছেন যে, ঐ সম্মেলনগুলোতে নতুন নতুন পরিভাষা চালু করে প্রথমে একাডেমিক স্তরে ‘আব্রাহাম চুক্তি’র ক্ষেত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করা হয়েছিল আর ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ বাস্তবে রূপ নেয়, যার অধীনে আরও একাধিক চুক্তি (Agreements) রয়েছে; যার অন্যতম হল, চুক্তির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো ইসরাইলের সাথে যৌথ বাণিজ্য ও কৌশলগত (strategic) সহযোগিতা করবে আপনি ‘আব্রাহাম চুক্তি’ শব্দটি গুগল বা উইকিপিডিয়াতে সার্চ করলে একটাই অর্থ পাবেন, চুক্তির অন্তর্ভুক্ত সকল দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করবে

ফলাফল হল, কথিত ‘আব্রাহামিক পরিবার’-এর কেবলমাত্র একটি রাষ্ট্র অর্থাৎ ইসরাইলের এই অধিকার রয়েছে যে, সে তার মর্যাদা ও স্বীকৃতি আদায় করে নেবে যদিও ধোঁকা, প্রতারণা এবং নিরাপরাধ মানুষের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর ‘আব্রাহামিক পরিবার’-এর সেসব সদস্য, যারা ফিলিস্তিনের প্রকৃত অধিবাসীতাদের সমস্যা ও সংকটগুলো অন্তত সে পর্যন্ত ঝুলে থাকবে, যতদিন ইসরাইল চাইবে

এই চুক্তিতে বহু আরব রাষ্ট্র যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদান স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব স্বাক্ষর করেনি এবং এই ইনসাফের অবস্থান গ্রহণ করেছে জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হলে তারা এই চুক্তির অংশীদার হবে না

এখন কল্পনা করুন, ‘আব্রাহামিক পরিবার’ নামক এই পরিভাষার মাধ্যমে কেবল একটি অবৈধ রাষ্ট্রইসরাইলকে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে রাষ্ট্র হিংস্র জানোয়ারের মতো ফিলিস্তিনীদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে কখনো ইরান, কখনো লেবানন, কখনো সিরিয়ার ওপর নির্লজ্জ হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরাইল না কোনো আন্তর্জাতিক আইন মানে, না নৈতিক ঐতিহ্য, না কোনো চুক্তির প্রতি আনুগত্য তার অভিধানে আছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘শান্তি ও নিরাপত্তা’র প্রতারণাপূর্ণ স্লোগান তুলে মুসলিম দেশগুলোকে এই চুক্তির দিকে আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে সকল আরব মুসলিম দেশ ইসরাইলের কাছে নতি স্বীকার করে এবং ট্রাম্প তাদেরকে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারেন

ترے نشتر کی زدشریان قیس ناتواں تک ہے

তোমার খঞ্জরের আঘাত দুর্বলের শিরায় গিয়ে লেগেছে

মুহাম্মাদ তাকী উসমানী

২৬-০১-১৪৪৭ হি.

 

[মাসিক আলবালাগ

সফর ১৪৪৭ হি./আগস্ট ২০২৫

(আরবী ‘আলবালাগ’-এ প্রকাশিত  এ নিবন্ধেরও সহায়তা নেওয়া  হয়েছে)

ভাষান্তর : মাওলানা মুনশী মুহাম্মাদ মহিউদ্দীন

এবং মাওলানা মুহাম্মাদ সালমান]

 

 

advertisement