কুরআনের বার্তা
‖ না জেনে বলা নিষেধ
কোনো বিষয়ে নিশ্চিতভাবে না জেনে অনুমান করে কথা বলা অন্যায়। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে কথা ও সংবাদের সত্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আন্দাজে ও অনুমান করে বলতে নিষেধ করেছেন। আরও বড় অন্যায় হল, না জানা ও ধারণা প্রসূত বিষয়কে সঠিক ও নিশ্চিত বিষয়ের মতো বলা ও বলতে থাকা। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলেছেন–
وَلَا تَقْفُ مَا لَیْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓىِٕكَ كَانَ عَنْهُ مَسْـُٔوْلًا.
যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত জ্ঞান নেই (তাকে সত্য মনে করে) তার পেছনে পড়ো না। জেনে রেখো, কান, চোখ ও অন্তর এর প্রতিটি সম্পর্কে (তোমাদেরকে) জিজ্ঞেস করা হবে। –সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩৬
যে বিষয়ে জানা নেই, সে বিষয়ে কথা বলতে গেলে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। এ থেকে নানান ফেতনা সৃষ্টি হয়। বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে হালকা এ বিষয়টি বড় বড় গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ও সমাজ ধ্বংসের অন্যতম একটি কারণ। ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক মূলনীতি হল, নিশ্চিতভাবে না জেনে ধারণা ও অনুমান করে কথা বলা নিষেধ।
জীবনের সব ক্ষেত্রেই এ মূলনীতি মেনে চলা আবশ্যক। ব্যক্তিগত, সামাজিক সকল ক্ষেত্রেই না জেনে কিছু বলা ও করা অনুচিত। এর সবচেয়ে বড় প্রয়োগক্ষেত্র হল কুরআন, সুন্নাহ ও শরীয়ত। দ্বীনী বিষয়ে ধারণার ভিত্তিতে কথা বলা বিরাট অন্যায়। এতে বদদ্বীনী ও বিদআত ছড়ানো হয়, দ্বীনকে বিকৃত এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মিথ্যারোপ করা হয়। এটা কবীরা গুনাহ। কাফের মুশরিকদের স্বভাব ছিল, তারা আল্লাহর নামে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলত।
আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে এক জায়গায় বলেছেন–
وَلَا تَقُوْلُوْا لِمَا تَصِفُ اَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هٰذَا حَلٰلٌ وَّهٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوْا عَلَی اللهِ الْكَذِبَ اِنَّ الَّذِیْنَ یَفْتَرُوْنَ عَلَی اللهِ الْكَذِبَ لَا یُفْلِحُوْنَ.
যেসব বস্তু সম্পর্কে তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা রচনা করে, সে সম্পর্কে বলো না, এটা হালাল এবং এটা হারাম। কেননা তার অর্থ হবে, তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ। জেনে রেখো, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়, তারা সফলকাম হয় না। –সূরা নাহ্ল (১৬) : ১১৬
হালাল-হারামের মতো বড় বিষয়ে তো বটেই, দ্বীন-শরীয়তের সাধারণ কোনো বিষয়েও যদি এমন কথা বলা হয়, যা কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামে নেই, তাহলে সেটাও আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করার শামিল।
আমরা অনেক সময় না জেনে বা অসম্পূর্ণ জেনে কোনো বিষয়ে বলে ফেলি, এই ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা এরকম। অনেক সময় নিজের ভ্রান্ত যুক্তি ও নিছক ধারণার ভিত্তিতেও বলি। অথচ ওই ব্যাপারে কুরআন সুন্নাহ্র নির্দেশনা হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটা করতে গিয়ে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করি। বিভ্রান্তি ও বিদআত ছড়াই।
অথচ আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে বলেছেন–
فَسْـَٔلُوْۤا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ.
যদি তোমাদের জানা না থাকে, তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। –সূরা নাহল (১৬) : ৪৩
আয়াতটি এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে। কিন্তু আয়াতের ব্যাপকতার মধ্যে এ কথাও রয়েছে, শরীয়তের কোনো বিষয় যার জানা না থাকবে সে আন্দাজ-অনুমান ও নিজ যুক্তি-বুদ্ধির পেছনে না পড়ে আলেমগণের কাছ থেকে জেনে নেবে। যে কোনো বিষয় না জানলে জেনে নেওয়া একটা সাধারণ বোধের বিষয়।
কিন্তু আমরা জিজ্ঞেস করার কষ্ট করতে রাজি নই। অনেক কারণেই আমরা কোনো বিষয়ে বিজ্ঞজনদের কাছে জানতে চাই না। এর মধ্যে এ দুটি কারণও আছে– অহংবোধ ও আত্মতুষ্টি। অথচ এ দুটি বিষয়ই খুব খারাপ। এদিকে ভালোভাবে না জেনে আন্দাজে বলে বলে ইসলামের নামে নানান কথা বানাতে থাকি। নিজেও ভ্রান্তিকে আঁকড়ে ধরি, অপরকেও বিভ্রান্তিতে ডুবাই।
কয়েকদিন আগে এক লোককে বলতে শুনেছি, আলেমগণ মানুষকে ধন দৌলতের পেছনে ছুটতে নিষেধ করেন, আখেরাতের পেছনে ছুটতে বলেন। অথচ আল্লাহ আগে দুনিয়া উপার্জনের কথা বলেছেন, তারপরে আখেরাতের কথা বলেছেন। এ বক্তব্যের দলীলস্বরূপ তিনি দু-তিনটি আয়াত-হাদীসও বললেন। এর মধ্যে সূরা তাওবার ১১১ নম্বর আয়াতটিও বলেছেন। অথচ সবগুলো আয়াতেরই বার্তা, প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন। তার বক্তব্যের সঙ্গে যার কোনো সামঞ্জস্য নেই।
কুরআন-হাদীসের বার্তা সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম জ্ঞান আছে, তারা তার কথার অসারতা ও বিভ্রান্তি সহজেই বুঝবে। কিন্তু লক্ষণীয় হল, দ্বীনের ব্যাপারে না জেনে আন্দাজে বলার এরকম স্বভাব আমাদের অনেকেরই আছে। একেক জন একেক ক্ষেত্রে বলি এবং কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যা করি। আল্লাহ তাআলা বলছেন–
وَلَا تَقْفُ مَا لَیْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ اِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓىِٕكَ كَانَ عَنْهُ مَسْـُٔوْلًا.
যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত জ্ঞান নেই (তাকে সত্য মনে করে) তার পেছনে পড়ো না। জেনে রেখো, কান, চোখ ও অন্তর– এর প্রতিটি সম্পর্কে (তোমাদেরকে) জিজ্ঞেস করা হবে।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন–
قُلْ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْاِثْمَ وَ الْبَغْیَ بِغَیْرِ الْحَقِّ وَاَنْ تُشْرِكُوْا بِاللهِ مَا لَمْ یُنَزِّلْ بِهٖ سُلْطٰنًا وَّاَنْ تَقُوْلُوْا عَلَی اللهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ.
(হে নবী) বলে দিন, আমার প্রতিপালক তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজসমূহ– প্রকাশ্য হোক বা গোপন এবং সর্বপ্রকার গুনাহ, অন্যায়ভাবে (কারও প্রতি) সীমালঙ্ঘন, আল্লাহ যে সম্পর্কে কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, এমন জিনিসকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্তকরণ এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কথা বলাকে, যে সম্পর্কে তোমাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই। –সূরা আ‘রাফ (০৭) : ৩৩
যে কারও নামেই কোনো অসত্য কথা চালানো সর্ব বিচারে অন্যায় ও অনৈতিক কাজ, কিন্তু এ অপরাধ যদি আল্লাহ তাআলার সঙ্গে করা হয়, তবে তা এতই গুরুতর, যা মানুষকে কুফর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। অতএব আল্লাহ তাআলার বরাতে কোনো কথা বলার সময়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
কোনো বিষয়ে নিশ্চিতভাবে জানার পরে সেই বিষয়টি কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে, তারও তো কত আদব ও লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তারও আগে আমি সত্যিই সঠিক জানি কি না, তা-ও তো যাচাই করতে হবে। দ্বীনী বিষয়ে কিছু বলতে হলে এরকম শত বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
না জেনে কিছু বলা যেমন নিষেধ, না জেনে কিছু করাও নিষেধ। শরীয়তের বিধান না জেনে নিজের ইচ্ছেমতো আমল করার কোনো সুযোগ নেই। এমন ব্যক্তির অনুগামী অন্য কেউ হলে তাদের গুনাহ্ও তার ওপরে বর্তাবে। ইসলাম এক পরিপূর্ণ দ্বীন, এখানে কারও কিছু বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ.
এই দ্বীনের মধ্যে কেউ নতুন কিছু সৃষ্টি করলে তা প্রত্যাখ্যাত। –সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৮
সুতরাং ইসলামের বিষয়ে কিছু বলতে হলে এবং শরীয়ত সমর্থিত ভেবে কোনো আমল করতে হলে আগে খুব ভালোভাবে জানতে হবে। আন্দাজে বললে ও কিছু করলে এতে দ্বীনকে বিকৃত করা হবে। এটা মারাত্মক পর্যায়ের কবীরা গুনাহ।
অন্যদিকে সামাজিক ক্ষেত্রে ধারণার ভিত্তিতে কথা বললে পরস্পরে ভুল বোঝাবুঝি হবে, কলহ বিবাদ ছড়িয়ে পড়বে। অন্যের ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া হবে, মিথ্যা বলা হবে এবং গীবত করা হবে। এর প্রত্যেকটিই কবীরা গুনাহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনোমালিন্য ও ঝগড়ার মূলে রয়েছে, না জেনে আন্দাজে কথা বলা। আল্লাহ তাআলা ধারণার ভিত্তিতে চলতে নিষেধ করে বলেন–
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِیْرًا مِّنَ الظَّنِّ ؗ اِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ اِثْمٌ وَّلَا تَجَسَّسُوْا وَلَا یَغْتَبْ بَّعْضُكُمْ بَعْضًا.
হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোনো কোনো অনুমান গোনাহ। তোমরা কারও গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়বে না এবং তোমাদের একে অন্যের গীবত করবে না। –সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১২
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যায় ধারণা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন–
إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ؛ فَإِنَّ الظَّنَّ أكذبُ الْحَدِيثِ.
তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, কারণ ধারণা সবচে বড় মিথ্যা। –সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৬৩
ধারণার ভিত্তিতে কথা বলা যেমন নিষেধ, তেমনি শোনা কথা বলাও নিষেধ। অনেক সময় আমরা কোনো কথা শুনেই তা প্রচার করতে থাকি। সত্যমিথ্যা যাচাই করি না। কুরআন-সুন্নাহ্য় শোনা কথা যাচাই না করে প্রচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাও বলেছেন–
كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ.
কারও মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই প্রচার করতে থাকে। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ০৫
অন্য বর্ণনায় আছে, গুনাহগার হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই প্রচার করতে থাকে। –সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৯
সামাজিক বিষয়ের সকল ক্ষেত্রে ‘না জেনে বলব না’– এ মূলনীতির ওপর চলা সকলের জন্যই আবশ্যক। কোনো বিষয় ভালোভাবে না জেনে সে বিষয়ে কথা বলা কারওই উচিত নয়। কিন্তু আমরা প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এ নীতি লঙ্ঘন করে থাকি। যেসকল ক্ষেত্রে এ নীতি সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল ‘পরামর্শ’। কারও কোনো বিষয়ে পরামর্শের দরকার হলে সে বিষয়ে না জানলেও আমরা পরামর্শ দিতে পিছপা হই না। অনেক সময় পরামর্শ দিয়ে আরও বেশি সমস্যায় ফেলি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় সে আমানতদার। (অর্থাৎ সে যেন আমানতদারীর সাথে পরামর্শ দেয়।) (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ২৮২২)
কর্তব্য হল, যে বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে, যদি তা ভালোভাবে না জানি, তাহলে পরামর্শ দেব না এবং যে জানে তার পরামর্শ নিতে বলব। না জেনে কিংবা অসম্পূর্ণ জানার ভিত্তিতে কিছুতেই পরামর্শ দেওয়া উচিত নয়। এরচেয়েও বড় অন্যায় হল, সকল বিষয়ে আগ বেড়ে পরামর্শ দেওয়া। অনেক সময় এমনও করি যে, আমার কাছে পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে না এবং বিষয়টা আমি ভালোভাবে জানিও না। তারপরেও কিছু একটা বলি।
কিছু কিছু বিষয়ে পরামর্শ দিতে তো খুবই বাড়াবাড়ি করি। যেমন, কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা জানি আর না জানি, তাকে বিভিন্ন ওষুধ-পথ্যের কথা বলি। দরকার হল, দুআ করা, আরামের ব্যবস্থা করা এবং বিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন করা।
মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করতেও আমরা বাড়াবাড়ি করি। কারও সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনেই মন্তব্য করে বসি। তাতে তার ক্ষতি হল কি না, লক্ষ করি না।
অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যাস হল, আমার যা বিষয় নয়, যা জানি না, সে বিষয়ে কথা বলি। আর তা বলি– না জেনে, আন্দাজে, অনুমানে, নিজের যুক্তি-বুদ্ধিতে। কথা বলা নিয়ে আমরা এমন হাজারো রকমের বাড়াবাড়ি করে থাকি। পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা অবশ্যই অনেক বড় সওয়াবের কাজ। কিন্তু আন্দাজে পরামর্শ দিয়ে যদি তাকে আরও বড় বিপদে ফেলি, তাহলে এতে উল্টো গুনাহ হবে।
মোটকথা, বহু বিষয়েই আমরা ‘না জেনে না বলা’– এই নীতি লঙ্ঘন করি। এ সীমালঙ্ঘন সমাজের সকল স্তরেই হয়ে থাকে, সর্বত্র হয়ে থাকে। সাধারণ লোকজন তো বটেই, এমনকি দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গও নিজের বিষয়ের বাইরে কথা বলে ফাসাদ সৃষ্টি করে। এটা যে একটা বড় জুলুম, তা-ও আমরা খেয়াল করি না। আমাদের এ প্রতিজ্ঞা করা দরকার, যা ভালোভাবে জানি না, সে বিষয়ে কিছুই বলব না।
সূরা বনী ইসরাঈলে উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই কান-চোখ ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, সেগুলোকে সঠিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কি না। আবার চোখ-কান থেকেও ব্যক্তি মানুষের ব্যাপারে সাক্ষ্য নেবেন, সে সেগুলোকে অবৈধ পথে ব্যবহার করেনি তো! শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আমরা কী কী কাজে ব্যবহার করেছি, তার পরিপূর্ণ হিসাব আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন নেবেন।
স্মর্তব্য, অন্যায় কথা বলা যেমন নিষেধ, অন্যায় কথা শোনাও নিষেধ। মিথ্যা কথা বলা ও শোনা, গীবত করা ও শোনা, অপবাদ দেওয়া ও শোনা, অন্যায় সাক্ষ্য দেওয়া ও শোনা ইত্যাদি সবই নিষেধ। চোখ-কানকে অন্যায় কাজে ব্যবহার করা জায়েয নেই।
আল্লাহ তাআলা সূরা বনী ইসরাঈলের উক্ত আয়াতে যে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি বলেছেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে তা মেনে চলা আমাদের অবশ্যকর্তব্য। কোনো কথা বলার আগে ও কোনো কাজ করার আগে তা সত্য, সঠিক ও যথার্থ কি না– জেনে নেওয়া আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন থেকে হেফাযত করুন।