রবিউল আখির ১৪৪৭   ||   অক্টোবর ২০২৫

কাতারে ইসরাইলের বিমান হামলা
‖ আরব ও মুসলিম বিশ্বকে কী বার্তা দিয়ে গেল?

গত ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান হামলা করে ইরসাইল মিডল ইস্ট আই বলছে, বারোটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে খবরে বলা হয়েছে, গতকাল (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেল পর্যন্ত গাজাসহ বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেনের মতো আরব রাষ্ট্রগুলোতেও হামলা করেছে ইসরাইল ইসরাইলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কাতারে বসবাসরত হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে যদিও হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ হামলায় তাদের নেতাদের কেউ শহীদ হননি এ হামলা যখন করা হয়, তখন কাতারে হামাস নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও বন্দিবিনিময় বিষয়ক প্রস্তাবনা নিয়ে পরামর্শ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন ইসরাইল তাদেরকে সেখানেই শেষ করে দিতে চেয়েছিল

ইতিপূর্বে বিভিন্ন আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রে ইসরাইল হামলা করে এলেও কাতারে এ হামলা ছিল নজিরবিহীন শুধু আরব নেতারাই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের নেতারাও এতে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন কারণ, যদিও কাতার গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের পর থেকে হামাসের বিভিন্ন নেতাকে মেহমানদারি করে আসছে, কিন্তু সেটি একতরফা ছিল না; বরং তাতে বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা-ইসরাইলের স্বার্থও রক্ষিত হয়েছে তূফানুল আকসা পরবর্তী সময়ে বিগত প্রায় দুই বছর থেকে যখন গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসন চলছেই এসময়ের মধ্যে যে বারবার হামাস কর্তৃক ইসরাইলী ও আমেরিকান বন্দিদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের দূতিয়ালি ও সালিশ মূলত কাতারের মধ্যস্থতায়ই হয়েছিল এছাড়া ইসরাইলের মূল পৃষ্ঠপোষক আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিও এ কাতারেই অবস্থিত শুধু কি তাই, ওই অঞ্চলের আরব নেতারা বর্তমান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য তো নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন! এ কয়েক মাস আগেই ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য নিয়ে গেছেন সেসময় কাতার মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে খুশি করার জন্য নজিরবিহীন হাদিয়াও প্রদান করেছে ট্রাম্পকে তারা উপহার দিয়েছে বিলাসবহুল বোয়িং বিমান সে কাতারই এখন সরাসরি আক্রান্ত হল এর পরও ইসরাইল থামেনি; বরং পুনঃপুনঃ হামলা করার হুমকি দিয়েছে আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইসরাইল কাজটি ভালো করেনি এমনটি তার করা উচিত হয়নি!

ইসলামী  ফিকহের পরিভাষায় ট্রাম্পের কথাকে বিশ্লেষণ করলে মনে হবে, তিনি এটিকে মাকরূহে তানযিহী বলেছেন হামলার পর ইসরাইল বলেছে, তারা হামলার আগেই আমেরিকাকে অবহিত করেছিল আমেরিকা বলছে, তারা বিষয়টি কাতারকে জানিয়েছিল কিন্তু কাতার সাফ জানিয়েছে, তাদেরকে এ বিষয়ে আগে কিছুই জানানো হয়নি

এখন তো প্রায় প্রতিদিনই খবর আসছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের জন্য নোবেল পুরস্কার দাবি করে যাচ্ছেন তার বন্ধ করা যুদ্ধের সংখ্যা প্রতিনিয়তই মনে হয় বেড়ে চলেছে যদিও এই সেদিনও জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধ বন্ধের প্রায় সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ওপর ষষ্ঠ বারের মতো আমেরিকা ভেটো প্রয়োগ করেছে এমনিতে তো কথাটি আগে থেকে মশহুর আছে কয়েকদিন আগে আবারও কয়েকজন বিচক্ষণ লোককে বলতে শুনলাম, আমেরিকার সরকারগুলোর অভিধানে নাকি ‘লজ্জা’ নামে কোনো শব্দ নেই যদি তাই না হবে, তাহলে বিশ্বের সুপ্রিম পাওয়ার হওয়ার দাবিদার দেশের রাষ্ট্রপতি নিজের জন্য এভাবে নোবেল প্রাইজ ভিক্ষা করে যেতেন? নারী-শিশুসহ লক্ষ নিরীহ মানুষ হত্যাকারী দখলদার গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা ও নির্লজ্জ সমর্থন অব্যাহত রাখার পরও শান্তিতে নোবেল পাওয়ার দাবি তাদের মুখে মানায়?

কাতারে ইসরাইলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানসহ বিভিন্ন আরব দেশ ও কোনো কোনো মুসলিম দেশের নেতা সহানুভূতিস্বরূপ কাতার সফর করেছেন কাতারের আমীর শেখ তামীম বিন হামাদ আসসানীকে মৌখিক সহমর্মিতা জানিয়ে এসেছেন এর কয়েকদিন পর কাতারের রাজধানী দোহায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা ওআইসি সম্মেলনও হয়েছে সেখানেও তারা বহু কথাবার্তা শুনিয়েছেন দুয়েকজন নেতা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে একত্রিত হয়ে ইসরাইলের মোকাবেলা করার ওপরও জোর দিয়েছেন কিন্তু সপ্তাহ-দশ দিনের মধ্যেই ওই খবর অনেকটা পুরোনো হয়ে গেছে ইসরাইল গাজাসহ মুসলিম অঞ্চলে তার আগ্রাসন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করতে থাকলেও তা প্রতিরোধে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নজরে আসেনি

 

আরব নেতারা কী ভেবেছিলেন, কী হয়ে গেল?

বর্তমানে উপসাগরীয়সহ আরব আঞ্চলের নেতাদের মানসিকতা প্রায় একই রকম কাতারের মতো এক-আধটি রাষ্ট্র ছাড়া বাকি সকলেই প্রায় নীতিগতভাবে হামাসের বিরোধী খোদ ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নামধারী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও দিলের কথা ও হামাস-বিদ্বেষ জাহির করে দিয়েছেন বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই অস্ত্র ছাড়তে হবে অর্থাৎ তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ চান না আর আমেরিকাকে খুশি রেখে নিজেদের রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র আঁকড়ে রাখার দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে তো ওই অঞ্চলের সকল দেশই একাট্টা তারা ধরে নিয়েছিল, আমেরিকাকে খুশি রাখতে পারলেই তারা নিরাপদ এজন্য কে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রেসিডেন্টদেরকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে আনুকূল্য নেবে সে প্রতিযোগিতা তাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই দেখা যায়

কাতারে ইসরাইলের বোমা হামলা আরব নেতাদের সেই অবস্থা ও বিশ্বাসে চির ধরিয়েছে কি না তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না কারণ, জিসিসি বা উপসাগরীয় পরিষদের রাষ্ট্রগুলোর মূলনীতিতে বলা আছে, ‘কোনো একটি রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে সকলেই আক্রান্ত হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে সকলে মিলে তা প্রতিরোধ করবে’ কিন্তু কাতারের ওপর হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো জিসিসি সদস্য দেশ একক বা সম্মিলিতভাবে ইসরাইলকে কোনো জবাব দিয়েছে বলে জানা যায়নি এর মানে, কাতার বেচারার একা করুণ দশা সৃষ্টি হলেও অন্য দেশগুলো হয়তো ভাবছে, এটা তো কাতারের মাথাব্যথা আমরা মুখে মুখে সহমর্মিতা জানিয়ে যাই; আমরা তো নিরাপদেই আছি আমাদের সাথে তো আর ইসরাইল কখনো এমনটি করবে না

অনেকেই মনে করেছেন, আরব নেতাদের এই আত্মকেন্দ্রিক অবস্থানই তাদের পতন ত্বরান্বিত করবে যেনতেনভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চিন্তা, ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্মিলিতভাবে সামাল দেওয়ার ব্যর্থতা দিনদিন তাদেরকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে যতই দিন যাচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে মনে হচ্ছে, ওই অঞ্চলের প্রভাবশালী দেশটিসহ আরবের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো ন্যূনতম সাহসটুকুই হারিয়ে ফেলেছে তাই আত্মরক্ষামূলক সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সাহসই তাদের হচ্ছে না মুসলিমবিশ্ব ও ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য অঞ্চলের মজলুমদের পক্ষে যথাযথ কোনো কাজ করা তো দূরে থাক, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তারা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এখন ব্যর্থ ভাবটা এমন যে, আমি তো ঠিক আছি অর্থ ও ক্ষমতার মোহ তাদেরকে এত ভীত-সন্ত্রস্ত করে রেখেছে যে, ইকদামী তথা আক্রমণাত্মক জিহাদ তো দূরে থাক, নিজেদের দেশ ও অঞ্চল রক্ষার জন্য তারা কোনো দিফায়ী তথা প্রতিরোধমূলক জিহাদের চিন্তা করারও সাহস পাচ্ছে না তাদের উদ্দেশেই হয়তো কবি বলেছেন

جلتے گھر کو دیکھنے والو پھوس کا چھپّر آپ کا ہے

آگ کے پیچھے تیز ہوا ہے ، آگے مقدر آپ کا ہے

জ্বলন্ত ঘরের তামাশা দেখছেন, পাশের খড়ের ঘর আপনার

আগুনের পেছনে প্রবল বাতাস, সামনে ভাগ্য আপনার!

اس کے قتل پہ میں بھی چپ تھا میرا نمبر اب آیا

میرے قتل پہ آپ بھی چپ ہیں اگلا نمبر آپ کا ہے

তার খুনের সময় আমি নীরব ছিলাম, এখন আমার পালা

আমি খুন হচ্ছি, আপনিও নীরব, সামনে আপনার পালা

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগ <br>

এ অযৌক্তিক ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত এখনই প্রত্যাহার করুন

যতই দিন যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন বিতর্কের বোঝা নিজের ঘাড়ে বৃদ্ধিই করছে যে আশা নিয়ে এদেশের জনগণ তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, সেখানে কার্যকরভাবে সফল না হলেও বিভিন্ন বিতর্কিত ও অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত তারা নিয়েই চলেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন তেমনি একটি বিষয় এ বিষয়ে চলতি সংখ্যায় মাওলানা শরীফ মুহাম্মদের একটি লেখা ছাপা হয়েছে সম্মানিত পাঠক তা আদ্যোপান্ত পড়বেন বলে আশা করি আমরা এখানে শুধু একটি কথা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, তা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত যেমনিভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ধ্বংসাত্মক ও গুনাহে জারিয়ার কাজ, তেমনি এটি অত্যন্ত অযৌক্তিক ও হঠকারীও বটে

এ কথা কে না জানে যে, সংগীত চর্চা যে কোনো লোকের কাজ নয় আপনি চাইলেই যে কোনো নাগরিককে গায়ক-গায়িকা বানিয়ে দিতে পারেন না এটা শুধু এজন্যই নয় যে, সবার গলায় সুর থাকে না; বরং এর চেয়ে বড় বাস্তবতা হচ্ছে, মুষ্টিমেয় ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া প্রায় সকলেই গানবাদ্য থেকে বা এটাকে পেশা হিসেবে নেওয়া থেকে নিজেদেরকে সযত্নে দূরে রাখে এবং অভিভাবক মহলের তো বিশাল অংশই এটা চাইবেন না যে, তাদের ছেলে-মেয়ে গায়ক-গায়িকা হোক

ওই রঙিন জগতের লোকদের অধিকাংশের পরিণাম কার অজানা? সুতরাং কোনোভাবেই সরকারের জন্য এমন সিদ্ধান্ত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার নেই এ সিদ্ধান্ত যত দ্রুত তারা প্রত্যাহার করবেন, ততই তাদের ওপর জনগণের অর্পিত দায়িত্ব আদায় করবেন তার চেয়ে বেশি নিজেদেরকে অনন্তকাল পর্যন্ত চলমান গুনাহে জারিয়া থেকেও বাঁচানোর রাস্তা করবেন সরকারকে এ ধরনের হঠকারী কাজের বিষয়ে পরামর্শদাতাদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে

মনে রাখতে হবে, যদি এ হঠকারী সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকে, তাহলে শুধু এ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই বহু ধর্মপ্রাণ অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠানো থেকে বিরত থাকবেন

 

 

advertisement