মানবতার ত্রাণকর্তা
‖ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মাওলানা ইমরান বিন তাজুল ইসলাম
এই পৃথিবীতে আদি পিতা আদম আ. ও মা হাওয়া রা.-এর মাধ্যমে সূচিত হয় মানবসভ্যতার যাত্রা। এক আলোকিত পরিবেশে। সে সুন্দর পরিবেশেই অগ্রসর হতে থাকে এই মনোরম পৃথিবী। সকলে আদমের সন্তান, আল্লাহর বান্দা। কিন্তু কালের বিবর্তনে এ সুন্দর ও আলোকিত পৃথিবীকে গ্রাস করে অমানিশা। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্ক। মানুষ হয়ে পড়ে প্রবৃত্তি ও শয়তানের দাস। ফলে মানবতাকে আচ্ছন্ন করে শিরক, বিদআত ও কুসংস্কারের ঘন তিমির। দূর হয়ে যায় হৃদয়ের স্বচ্ছতা ও নির্মলতা। শুরু হয় পাপাচার, অনাচার, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা। বিঘ্নিত হয় ঈমান ও হেদায়েতের ঐশী আলোকধারার অগ্রযাত্রা। এ আলোকধারা রক্ষা করতে এবং সামনে অগ্রসর করতে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে প্রেরণ করেন অসংখ্য নবী-রাসূল।
এভাবেই চলছিল বিশ্ব পরিক্রমা। আলো ও অন্ধকার এবং ঐশী হেদায়েত ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব ও পালাবদল। একপর্যায়ে পৃথিবীতে ধেয়ে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। দীর্ঘদিন যাবৎ স্থগিত থাকে আসমানী আলোকধারা। মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ঐশী শিক্ষা ও নির্দেশনা থেকে। ফলে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকে খালেক ও মাখলুকের সম্পর্ক। ধীরে ধীরে বিদায় নেয় মানবতা ও ইনসানিয়াত এবং শেকড় পোক্ত করে নেয় নফস ও শয়তানিয়াত। শুরু হয় মানবতার হাহাকার আর অন্যায় অবিচার ও অমানবিকতার জয়জয়কার। পৃথিবীতে ছেয়ে যায় জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতি, স্বৈরাচার, পৈশাচিকতা, হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা। শান্তির পৃথিবীটা হয়ে পড়ে জ্বলন্ত নরককুণ্ড।
সে বর্বর পৃথিবীতে প্রাণের কোনো মূল্য ছিল না। অতি সামান্য বিষয়কে ক্ষেন্দ্র করে গোত্রে গোত্রে বেঁধে যেত তুমুল যুদ্ধ। সে যুদ্ধের বলি হত হাজার হাজার প্রাণ। যুগ যুগ ধরে চলতে থাকত প্রতিশোধের ধারা।
সে আগ্রাসী জনপদে মানুষের অর্থ ও ধনসম্পদের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি প্রতারণা-আত্মসাৎ ছিল সমাজের ভয়াবহ বাস্তবতা।
মুমূর্ষু মানবতা খুইয়ে বসেছিল সমস্ত মানবিক গুণাবলি। পরিণামে মৃত্যু ঘটেছিল ন্যায়, নীতি, সাম্য ও সমতার। সৃষ্টি হয়েছিল অমানবিক বৈষম্য। সে বৈষম্যে নিষ্পেষিত হচ্ছিল নারী, দাস-দাসী এবং সমাজের দুর্বল ও নিম্নশ্রেণির মানুষ।
পৃথিবী থেকে উঠে গিয়েছিল আইন ও বিচারের নীতিবোধ। মানুষ বেঁচে ছিল শুধু শক্তি আর দাপটের বলে।
আর দ্বীন-ধর্ম! স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্ক! তো সে জন্য যতই বিলাপ করা হবে কম হবে। ধর্ম ছিল সবচেয়ে অবহেলার শিকার। দ্বীন ও শরীয়ত ছিল স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরাচারের সবচেয়ে উর্বর ভূমি। তাওহীদ ও একত্ববাদের প্রতীক কা‘বায় স্থাপিত হয়েছিল তিন শ ষাটটি মূর্তি। আল্লাহর সঙ্গে এই সম্পর্কহীনতাই হচ্ছে জাহেলিয়াতের মূল ব্যাধি।
পৃথিবী থেকে মনুষ্যত্বের জানাযা বের হয়েছিল। মানুষের মন থেকে আল্লাহর ভয়-ভীতি বের হয়ে গিয়েছিল। পরকালের প্রাপ্তি ও শাস্তি সম্পর্কে চরম উদাসীন হয়ে পড়েছিল মানুষ। ফলে হৃদয়গুলো হয়ে উঠেছিল শক্ত, পাথরের চেয়েও কঠিন। আলকুরআনের ভাষায়–
ثُمَّ قَسَتْ قُلُوْبُكُمْ مِّنْۢ بَعْدِ ذٰلِكَ فَهِیَ كَالْحِجَارَةِ اَوْ اَشَدُّ قَسْوَةً .
এসব কিছুর পর তোমাদের অন্তর আবার শক্ত হয়ে গেল, এমনকি তা হয়ে গেল পাথরের মতো; বরং তার চেয়েও বেশি শক্ত। –সূরা বাকারা (০২) : ৭৪
মানুষ এমন অমানুষে পরিণত হয়েছিল যে, জ্যান্ত পুঁতে ফেলা নিষ্পাপ কন্যার ‘আব্বু’ ‘আব্বু’ আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠত, কিন্তু তা গর্তের উপরে থাকা জাহেলিয়াতের অহমিকায় অন্ধ নিষ্ঠুর পিতার মন গলাতে পারত না।
এমনই এক অন্ধকার সময়ে সর্বশেষ নবীরূপে প্রেরিত হন ঐশী জ্ঞান, গুণ ও শক্তিতে বলীয়ান এক মহামানব। সঙ্গে সত্য ও সভ্যতার সূর্য। সে সূর্যের দীপ্তিতে জ্যোতির্ময় হয়ে ওঠে মানুষের হৃদয়। বিদূরিত হয় কুসংস্কার ও জাহেলিয়াতের সমস্ত অন্ধকার। স্থাপিত হয় স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির বন্ধন। সভ্যতা সিঞ্চিত হয় স্রষ্টার প্রেমরসে এবং মনুষ্যত্বের কর্ম-গুণে। মানবতা পুনরায় পান করে সঞ্জীবনী সুধা এবং ফিয়ে পায় তার হারানো প্রাণ ও সজীবতা।
তাঁর আগমনকালে ধর্মের অবক্ষয়ের পরিণামে সারা পৃথিবীতেই ছিল এই অধঃপতন ও অরাজকতা। ভারতবর্ষও এর ব্যক্তিক্রম ছিল না। প্রখ্যাত ইতিহাসবিৎ সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নদবী রাহ. ‘মাযা খাসিরাল আলাম’ গ্রন্থে বলেন–
ভারতবর্ষ : ধর্ম, সমাজ ও নৈতিকতার বিচারে
ভারতবর্ষের ইতিহাস যারা লিখেছেন তারা এ বিষয়ে পূর্ণ একমত যে, খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকের গোড়া থেকে যে সময়কালের শুরু, সেটাই ছিল ধর্ম, সমাজ ও নৈতিকতার দিক থেকে ভারতবর্ষের সবচেয়ে অধঃপতিত যুগ। সমগ্র মানবজনপদের ওপর যে ঘোর অন্ধকার তখন থাবা বিস্তার করেছিল, ভারতবর্ষ যেন সে অন্ধকার থেকে পর্যাপ্ত অংশই নিজের বরাদ্দে টেনে এনেছিল। পক্ষান্তরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো পৃথিবীর এই বিশাল ভূখণ্ড চারপাশের দেশ ও জনপদ থেকে আরও এগিয়ে ছিল। যেমন–
তেত্রিশ কোটি দেবতা!
খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে মূর্তিপূজা ভারতবর্ষে চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। বেদ গ্রন্থে দেবতাদের সংখ্যা ছিল মাত্র তেত্রিশ, যার অকল্পনীয় সংখ্যাস্ফীতি এই শতকে পৌঁছে গিয়েছিল তেত্রিশ কোটিতে। যে কোনো সুন্দর, আকর্ষণীয়, অভিনব ও বিদ্ঘুটে বস্তু এবং জীবনের প্রয়োজনীয় যে কোনো উপকরণ উপাস্য দেবতার মর্যাদা লাভ করত। তাদের উপাস্যদের তালিকায় যেমন ছিল উদ্ভিদ ও বৃক্ষলতা, তেমনি ছিল অসংখ্য জড়বস্তু ও খনিজ পদার্থ; ছিল ছোট বড় হাজারো পশু-পাখি, এমনকি লিঙ্গপূজা পর্যন্ত বাদ পড়েনি।
অবাধ যৌনতা
প্রাচীনকাল থেকেই যৌনতা ও কামকেলি ছিল ভারতবর্ষের ধর্ম ও সমাজ-সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। সম্ভবত আর কোনো দেশ, ধর্ম ও সমাজে যৌনতা ও কামচর্চার এমন ছড়াছড়ি ছিল না, যেমনটি ছিল ভারতবর্ষের পৌত্তলিক ধর্ম ও সমাজ-সংস্কৃতির গভীরে।
মন্দির ও উপাসনালয়ের সেবায়েত, পুরোহিত ও পাণ্ডাদের লাম্পট্য ছিল এমনই চরমে যে, দেবতার সেবাদাসীদের তারা যৌনদাসীরূপে ব্যবহার করত; এমনকি মন্দিরে আগত পূজারিণীদের সতীত্বসম্পদও তাদের দ্বারা লুণ্ঠিত হত। বহু উপাসনালয় শাব্দিক অর্থেই ছিল পাপাচারের আখড়া। আর রাজার রাজপ্রাসাদ ও ধনীর রঙ্গমহল?! সেখানে তো নগ্নতা ও অশ্লীলতার রীতিমতো মহড়া চলত। এভাবে সমগ্র দেশ ভেসে গিয়েছিল পাপাচার ও অবাধ যৌনতার তোড়ে।
শ্রেণিভেদ ও বর্ণপ্রথা
মনুসংহিতায় দেশের জনগোষ্ঠীকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা–
(১) ব্রাহ্মণ, অর্থাৎ ধর্মীয় পুরোহিত শ্রেণি।
(২) ক্ষত্রিয়, অর্থাৎ যোদ্ধাশ্রেণি।
(৩) বৈশ্য, অর্থাৎ কৃষি ও বাণিজ্যজীবী শ্রেণি।
(৪) শূদ্র, অর্থাৎ সেবকশ্রেণি।
ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় যেহেতু সৃষ্টির সেরা এবং জগৎ-অধিপতি, সেহেতু জগতের সকল সম্পদে তাদের একচ্ছত্র অধিকার। ব্রাহ্মণ শূদ্রদাসদের যাবতীয় সম্পদ ইচ্ছামতো দখল করতে পারে, এতে কোনো পাপ নেই। কেননা, দাসের কোনো মালিকানাস্বত্ব নেই; তার সম্পদের স্বত্ব আপন মনিবের। [দ্র. মনুসংহিতা, অষ্টম অধ্যায়]
ঋগবেদ যে ব্রাহ্মণের মুখস্থ, সে পাপমুক্ত ব্যক্তি, যদিও পাপরাশি দ্বারা সে ত্রিলোক নাশ করে ফেলে। ব্রাহ্মণ যদি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করে তবে তার শাস্তি হবে শুধু মস্তক মুণ্ডন করা। পক্ষান্তরে অন্যদের শাস্তি হবে যথারীতি মৃত্যুদণ্ড। [দ্র. মনুসংহিতা, নবম অধ্যায়, দ্বিতীয় অধ্যায়]
মনুপ্রবর্তিত ভারতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় সমাজে শূদ্র হচ্ছে জানোয়ারের চেয়েও নিম্নস্তরের, ইতরের চেয়েও অধম। মনুশাস্ত্রের সুস্পষ্ট ঘোষণা– শূদ্রদের জন্য এটাই পরম সৌভাগ্য যে, তারা ব্রাহ্মণসেবায় নিয়োজিত হতে পারে; এছাড়া তাদের আর কোনো পুণ্য ও প্রাপ্তি নেই। শূদ্র যদি কোনো ব্রাহ্মণের ওপর হাত তোলে বা ক্রুদ্ধ হয়ে লাথি মারে, তাহলে তার হাত বা পা কেটে ফেলা হবে। কোনো শূদ্র যদি কোনো ব্রাহ্মণের সমকক্ষে বসার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে, তাহলে শাসকের অবশ্যকর্তব্য হবে, তার পশ্চাদ্দেশে গরম লোহার দাগ দিয়ে দেশছাড়া করা। শূদ্র যদি কোনো ব্রাহ্মণকে স্পর্শ করে বা তাকে কটু কথা বলে, তবে এর সাজা হবে তার জিহ্বা ছিঁড়ে ফেলা। আর যদি দাবি করে, সে ব্রাহ্মণকে শিক্ষা দিতে পারে, তাহলে তার মুখে ঢেলে দেওয়া হবে তপ্ত তেল। কুকুর, বেড়াল, কাক, পেঁচা আর কোনো শূদ্রকে হত্যা করার প্রায়শ্চিত্ত একই সমান। [দ্র. মনুসংহিতা, ১১, ১০, ৮ অধ্যায়]
নারীর মর্যাদা
ডক্টর লী বোন-এর মতে মনুশাস্ত্রে স্ত্রীজাতিকে দুর্বল ও বিশ্বাসঘাতিনী ভাবা হয়েছে এবং ঘৃণা ও অবজ্ঞার ভাষায় তার আলোচনা করা হয়েছে। বস্তুত মনু যুগের হিন্দুসমাজে নারীর মর্যাদা দাসীর চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। –মাযা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন, পৃ. ৪৬-৫২ [অনুবাদ : মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হল?, পৃ. ৯১-৯৯] (সংক্ষেপিত)
মোটকথা, খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতকের পৃথিবী পতন ও অধঃপতনের চরমে উপনীত হয়েছিল। মানবতা তার ধ্বংস ও বরবাদির সমস্ত আয়োজন পুরা করে ফেলেছিল। আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক তথা সভ্যতার সব অঙ্গনে পচন ধরে গিয়েছিল। অন্যায় ও অবিচার, দুর্নীতি ও স্বৈরাচার এবং নৈরাজ্য ও পাপাচারের অগ্নিতে জগৎসংসার দগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। খালিক, মালিক আল্লাহকে ভুলে গিয়ে মানুষ নিজেকেই ভুলে বসেছিল এবং হারিয়ে ফেলেছিল স্বভাবগত বোধ ও বুদ্ধি এবং কল্যাণ-অকল্যাণের বিবেচনাশক্তি।
বিপর্যস্ত পৃথিবীর এই ক্লান্তিলগ্নে মরু আরবে উদিত হয় এক মুক্তির রবি, মানবতার সূর্য। এই ধরণিতে আগমন করেন মানবতার মুক্তি ও শান্তির দিশারি, ইনসানিয়্যাতের আদর্শ প্রহরী, রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তিনি এসে বিপন্ন মানবতাকে উদ্ধার করেন, মানবসম্পদের উন্নয়ন করেন এবং মানবজনপদকে শান্তি ও স্বস্তির সুবাসে ভরিয়ে তোলেন।
মানবতা কী?
তাঁর দৃষ্টিতে মানবতা হচ্ছে, মানুষের ইহকাল ও পরকালের স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ক্ষণস্থায়ী জীবনের মুক্তি ও শান্তির পাশাপাশি চিরস্থায়ী জীবনেরও শান্তি ও প্রশান্তির নিশ্চয়তা প্রদান করা।
এটাই হচ্ছে প্রকৃত মানবতা, যা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা, বিবেকবুদ্ধি ও মেধা-প্রতিভার সুরক্ষা এবং মানুষের প্রাপ্য ও অধিকার সংরক্ষণ।
আর এই সবকিছুরও আগে প্রয়োজন বিশুদ্ধ তাওহীদের ধর্ম, ঐশী শিক্ষা ও নির্দেশনা, যা হচ্ছে সমস্ত কিছুর প্রাণ। তাই পৃথিবীবাসীকে আলোর পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে তাঁর ওপর নাযিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আলকুরআন।
কুরআনই নির্ধারণ করে দিয়েছে তাঁর দাওয়াত ও সংস্কারের পথ ও পদ্ধতি। আলকুরআন জানাচ্ছে–
هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّٖنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ ۗ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.
তিনিই সেই সত্তা, যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন, যে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমতের শিক্ষা দেবে, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিপতিত ছিল। –সূরা জুমুআ (৬২) : ২
আলকুরআনের এই নির্দেশনা সামনে রেখে তিনি কুরআনের পঠনপাঠন ও শিক্ষাদানে ব্রতী হন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেন। মাখলুককে তার খালেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মানুষকে পরকালের প্রাপ্তি ও শাস্তির বিশ্বাসে বলীয়ান করেন। মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা সৃষ্টি করেন। ঐশী শিক্ষা ও দীক্ষার মাধ্যমে অন্তরাত্মা পবিত্র করেন। আসমানী নূরের আলোয় কলব ও হৃদয় আলোকিত করেন।
সে আলোর স্নিগ্ধতায় অন্ধ ও পাষাণ হৃদয়গুলো আলোকিত হয় এবং বিগলিত হয়। মনোজগতের সমস্ত কলুষতা বিদূরিত হয়। ফলে বস্তুবাদ, ভোগবাদ ও ইহবাদ ঝেড়ে দিয়ে মানুষ আল্লাহমুখী হয়ে ওঠে এবং পরকালের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয় আর মানবতার পাঠ শোনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে চেয়ে থাকে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখপানে। তিনি তখন একের পর এক শোনাতে থাকেন ইনসানিয়াতের মুক্তি ও উন্নতির বার্তা।
‘নরহত্যা মহাপাপ’ স্থির করে কুরআনের ভাষায় ঘোষণা দেন, অন্যায়ভাবে একজনকে হত্যা করা সমস্ত মানুষকে হত্যা করার সমান। আর একটি প্রাণ রক্ষা করা সমস্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করার সমতুল্য। [দ্র. সূরা মায়েদা (০৫) : ৩২]
এরপর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, কেউ কারো ওপর আক্রমণ করলে সমান প্রতিশোধ নেওয়া হবে; প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং আঘাতের বদলে আঘাত। [দ্র. সূরা মায়েদা (০৫) : ৪৫]
এরইসাথে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও উদারতারও পাঠ দান করেন।
হৃদয়গুলো উন্মুখ ছিল। তাঁর নির্দেশনা সাদরে গ্রহণ করল। নিরাপদ হয়ে গেল মানুষের জান-প্রাণ। বন্ধ হয়ে গেল খুনাখুনি, অঙ্গহানি, গর্ভপাত ও শিশু হত্যা।
অর্থ ও ধন-সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে সুদ, ঘুষ, জুয়া ও প্রতারণা নিষিদ্ধ করেন। ওজন, পরিমাপ ও লেনদেনে কমবেশি করতে নিষেধ করেন। চুরি ও ডাকাতির জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারণ করেন।
মোটকথা অন্যের সম্পদ আত্মসাতের যত পদ্ধতি হতে পারে সমস্ত পন্থা হারাম সাব্যস্ত করেন। শুনিয়ে দেন আলকুরআনের সুস্পষ্ট ঘোষণা–
وَلَا تَاْكُلُوْۤا اَمْوَالَكُمْ بَیْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوْا بِهَاۤ اِلَی الْحُكَّامِ لِتَاْكُلُوْا فَرِیْقًا مِّنْ اَمْوَالِ النَّاسِ بِالْاِثْمِ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ.
তোমরা পরস্পরে সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে। –সূরা বাকারা (০২) : ১৮৮
বিশেষ করে এতীমের সম্পদ লুণ্ঠনের ব্যাপারে উচ্চারণ করেন কড়া হুঁশিয়ারি–
اِنَّ الَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ اَمْوَالَ الْیَتٰمٰی ظُلْمًا اِنَّمَا یَاْكُلُوْنَ فِیْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَسَیَصْلَوْنَ سَعِیْرًا.
নিশ্চয়ই যারা এতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা নিজেদের পেটে কেবল আগুন ভরতি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। –সূরা নিসা (০৪) : ১০
আগেই বলা হয়েছে, মানুষের হৃদয় কোমল ছিল, তাই নবীজীর নির্দেশনা হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত হল। ফলে জানের সাথে মানুষের মালেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে গেল।
ইজ্জত ও মান-সম্মান সংরক্ষণে তিনি মানুষকে পরষ্পর মূল্যায়নের শিক্ষা দেন, কারো অসম্মান করার ওপর কঠিন সতর্কবাণী শুনিয়ে দেন। কুৎসা, পরনিন্দা, অপবাদ, গালমন্দ, উপহাস, দোষ চর্চা, মন্দ নামে ডাকা তথা কষ্টদায়ক সব ধরনের আচরণ হারাম সাব্যস্ত করেন। ব্যভিচার ও ব্যভিচারের প্ররোচক সব ধরনের কর্ম ও আচরণ নিষিদ্ধ করেন। এর সঙ্গে হায়া-লজ্জা, পবিত্রতা ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতা অর্জনে অনুপ্রেরণা দেন।
পরিশেষে মানুষের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করত যিলহজ্ব মাসের দশ তারিখে তথা সম্মানিত মাসের সম্মানিত দিনে সম্মানিত স্থানে লক্ষাধিক সাহাবীর সামনে দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন–
فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هূذَا، فِي بَلَدِكُمْ هূذَا، فِي شَهْرِكُمْ هূذَا.
তোমাদের রক্ত ও সম্পদ (নষ্ট করা) এবং তোমাদের মান ও ইজ্জত (খর্ব করা) তোমাদের ওপর হারাম, যেমন এই শহরে এবং এই মাসে আজকের দিন (-এর অসম্মান করা) হারাম। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৩৯
একটি সমাজের শান্তি ও উন্নতি সাধনে জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তার পাশাপাশি অতি প্রয়োজন আকল তথা বুঝ-বুদ্ধি ও উপলদ্ধিজ্ঞানের সুরক্ষা এবং এর সুষ্ঠু বিকাশ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মহারত্নের প্রতিও মনোযোগ নিবদ্ধ করেন। আকল-সম্পদের সুস্থতা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য ও নেশাজাতীয় সবকিছু হারাম স্থির করেন, পরিমাণে তা যতই কম হোক। ঘোষণা দেন–
كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ.
প্রত্যেক নেশাকারক বস্তু হারাম।
–সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৩৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭৩৩
আরও বলেন–
مَا أَسْكَرَ كَثِيرُه فَقَلِيلُه حَرَامٌ.
যে জিনিস বেশি গ্রহণ করলে নেশা হয়, তার সামান্য পরিমাণও হারাম। –জামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৬৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮১
এখানেই কি শেষ! মস্তিষ্কের উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে কুল কায়েনাত নিয়ে চিন্তাভাবনার তাকিদ দেন, আলকুরআনের জ্ঞান ও শিক্ষা দ্বারা মেধাকে বিকশিত করতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং নর-নারী সবার জন্য বিদ্যার্জনকে বাধ্যতামূলক সাব্যস্ত করেন।
আর হক ও অধিকার! সে ক্ষেত্রে তো মানবতার নবীর কোনো তুলনা হয় না। মায়ের সম্মান, স্ত্রীর অধিকার, মেয়ের মূল্যায়ন, বোনের মর্যাদাদান, নারীজাতির ইকরাম (স্নেহময় সম্মান) তাঁর আদর্শের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এতীম, দাস-দাসী ও অধীনস্তের সঙ্গে সদ্ভাব ও সুন্দর আচরণ তাঁর শরীয়তের অনন্য সৌন্দর্য। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থের যত্ন-পরিচর্যা এবং নিঃস্ব, অনাথ ও অসহায়ের সাহায্য-সহযোগিতা নববী দর্শনের অলংকার।
এসম্পর্কে তাঁর কিছু নির্দেশনা লক্ষ করুন–
اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا.
তোমরা নারীদের সঙ্গে সদাচারের উপদেশ গ্রহণ কর। –সহীহ বুখারী, হাদীস ৫১৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৬৮
وَ عَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ.
তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। –সূরা নিসা (০৪) : ১৯
وَ لَهُنَّ مِثْلُ الَّذِیْ عَلَیْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ .
আর স্ত্রীদেরও ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে, যেমন রয়েছে তাদের প্রতি (স্বামীদের) অধিকার। –সূরা বাকারা (০২) : ২২৮
إِنِّي أُحَرِّجُ عَلَيْكُمْ حَقَّ الضَّعِيفَيْنِ الْيَتِيمِ وَالْمَرْأَةِ.
দুই দুর্বল– এতীম ও নারী-এর অধিকার সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে কঠোরভাবে সতর্ক করছি। –মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ২১১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৬৭৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৫৬৫
مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا، وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا فَلَيْسَ مِنَّا.
যে আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া-মমতা দেখায় না এবং বড়দের অধিকার স্বীকার করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। –সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭০৭৩
দাস-দাসীকে মনিবের ভাই-বোন হিসেবে মূল্যায়ন করেন, পানাহারে নিজেদের সঙ্গে সমতাবিধানের নির্দেশ দেন এবং তাদের ওপর ভারি কাজকর্ম চাপিয়ে দিতে বারণ করেন। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৬১)
মৃত্যুর সময় তাঁর জীবনের শেষ ওসিয়ত ছিল–
الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ، اتَّقُوا اللهَ فِيمَا مَلَكَتْ أَيْمَانَكُمْ.
নামায, নামায। দাস-দাসীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। –সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১৫৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৬৬০৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৮৫
এভাবে তিনি বিশ্ব-মানবতাকে পরিত্রাণ দেন। মানবতার সকল স্তম্ভকে পূর্ণতা দান করেন। তবে বলাই বাহুল্য, সমাজের সকল মানুষ তো তাঁর পয়গাম গ্রহণ করেনি। আবার যারা গ্রহণ করেছেন, তারাও তো মানুষ। মানবিক দুর্বলতার ঊর্ধ্বে ছিলেন না তারাও। তাই মানবতার আদর্শ পথ চলায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা ছিল এবং কখনো কখনো সে আশঙ্কা বাস্তব রূপ নিত। কাজেই মানবতার মুক্তি ও সফলতার জন্য শুধু উপদেশদান আর ভীতি-প্রদশন যথেষ্ট নয়। শিষ্টের লালনের পাশাপাশি দুষ্টের দমনও প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ন্যায়নিষ্ঠ বিচারব্যবস্থা। সে ব্যবস্থায় চালু করেন আদর্শ আইন এবং কার্যকরি ও ফলপ্রসূ দণ্ডবিধি।
নির্ধারণ করেন হত্যা ও অঙ্গাহানির যথোপযুক্ত শাস্তি, চুরি, ডাকাতি ও ব্যভিচারের কার্যকরি সাজা এবং অপবাদ, মদপান ও জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উপযুক্ত দণ্ড।
সারকথা, ইনসানিয়াতের নবী, মানবতার দরদি কান্ডারি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতার মুক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন এবং সমাজ-সভ্যতাকে উন্নতি ও উৎকর্ষের সর্বশীর্ষে উপনীত করেছেন। অর্থ-বিত্ত, শক্তি-বংশ, গোত্র-দল, পদ-বর্ণ, সমাজ-ভূখণ্ড ইত্যাদির ওপর প্রতিষ্ঠিত বৈষম্য ও জাহেলিয়াতকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করেছেন।
এর স্থলে তাকওয়াকে সম্মান, মর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক নির্ধারণ করেছেন। মানবতাকে তিনি ঐশী ঘোষণা শুনিয়েছেন–
اِنَّ اَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ اَتْقٰىكُمْ.
প্রকৃতপক্ষে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান সেই, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। –সূরা হুজুরাত (৪৯) : ১৩
এরপর ঘোষণা করেছেন–
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَلَا إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ، وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ، أَلَا لَا فَضْلَ لِعَرَبِيٍّ عَلَى عَجَمِيٍّ، وَلَا لِعَجَمِيٍّ عَلَى عَرَبِيٍّ، وَلَا أَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ، وَلَا أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلَّا بِالتَّقْوَى.
হে লোকসকল! শোনো, তোমাদের সবার রব এক, তোমাদের সবার পিতা এক। শুনে রেখ, অনারবের ওপর আরবের এবং আরবের ওপর অনারবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তেমনি কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের এবং শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হবে কেবল তাকওয়ার মাধ্যমে। –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৪৮৯
শেষকথা, আলকুরআনের নির্দেশনাকে সামনে রেখে মাত্র তেইশ বছরের চেষ্টা-সাধনায় হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জগৎসংসারে প্রতিষ্ঠা করেছেন আদর্শ মানবতা। মানবসভ্যতাকে উন্নীত করেছেন সর্বোচ্চ শিখরে।
এরপর যুগে যুগে যারাই সে পয়গাম গ্রহণ করেছে, সে আলোর অনুসরণ করেছে, তারাই উন্নত মানবতা উপহার পেয়েছে, গ্রহণ ও অনুসরণের মাত্রা ও পরিমাণ অনুসারে।
সে পয়গাম ও বার্তা এবং সে ঐশী গ্রন্থ আলকুরআন আজও বিদ্যমান, তার পূর্ণ দ্যুতি, শক্তি ও সজীবতাসহ।
সুতরাং আজকের বিশ্ব যদি সেই কুরআনকে গ্রহণ করে এবং মানবতার নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শরূপে বরণ করে, তাহলে আজকের মানবতাও লাভ করবে মুক্তি ও সফলতা এবং উন্নীত হবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। আল্লাহ তাআলা বিশ্ববিবেককে সে বোধ ও বুদ্ধি দান করুন এবং সত্য গ্রহণের সৎ-সাহসে বলীয়ান করুন– আমীন।