রবিউল আখির ১৪২৮   ||   মে ২০০৭

দশদিক

আত্মহত্যার পথে...

হতাশা থেকে মানুষের জীবনে চরম থেকে চরমতর দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় নেমে আসার ঘটনা প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। কখনো বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, কখনো আত্মহত্যার পথে পা বাড়ানো, আবার কখনো ধর্ম ও ঈমান বেচে দেওয়ার মতো মারাত্মক বিপর্যয়ও নেমে আসে। এ হতাশার পেছনে আবার বিচিত্র কারণ কার্যকর হয়ে ওঠে। কখনো প্রেমে ব্যর্থতা, কখনো তীব্র কষ্টদায়ক ঘটনা, কখনো সামাজিক অবমাননা এবং ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র্যও মানুষকে হতাশ করে আত্মহননের পথে ঠেলে দিয়ে থাকে।

এপ্রিলের ৭ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোর মফস্বল পাতার কিশোরগঞ্জের  বাজিত পুরের সরারচর রেলস্টেশন এলাকায় এ ধরনের একটি বিয়োগান্তুক ঘটনার খবর ছাপা হয়েছে। পঞ্চাশ বছর বয়সী আঙ্গুরা খাতুন তার ছেলে মোবারককে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবরে জানা গেছে, সন্তানদেরসহ তাকে ছেড়ে স্বামী বিবাহ করেন। তারপর বড় ছেলের উপার্জনের পাশাপাশি নিজের শ্রম দিয়ে সন্তানদের নিয়ে সংসারটিকে মাতৃমমতায় তিনি ধরে রাখেন। বড় ছেলের বিবাহের  কিছুদিন পর শুরু হয় সংসারে টানাপড়েন। এই টানাপড়েনেরই এক পর্যায়ে অভিমানী মা তার ছোট্ট ছেলেকে সঙ্গে করে হতাশার চরম পথটি বেছে নেন । দুটি জীবন নাশ হয়ে যায় আত্মহননের পথে। প্রৌঢ়া মা আঙ্গুরা হয়তো তার মতো করে ঝামেলা ও ক্লেশপূর্ণ জীবনের ইতি টানতেই এ পথে পা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু জীবন ও জগতের ব্যাপক ধারণার অভাব থেকে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে তার ইহকালের ঝামেলা ও ক্লেশ শেষ হয়ে গেলেও যে তার সামনে অনন্তকালের  জীবনটি শাস্তিমুক্ত হয় না-এই বোধটি দৃঢ় বিশ্বাসের পর্যায়ে তার অন্তরে প্রোথিত ছিল না, বলা যায়।  সে বিশ্বাসটি দৃঢ় থাকলে তার সিদ্ধান্ত হয়তো হাজারো জীবন-যন্ত্রণার মধ্যেও এ রকম হতো না। দ্বীনের শিক্ষার অভাব, দ্বীনের বিশ্বাসের ঘাটতি মানুষের ইহ-পরকালের পরিণতিতে তীব্রভাবে দখল দিতে পারে-এ ধরনের ঘটনা তার একটি বড় দলীল। এ ঘটনাটিতে আবারো  অনাথ, আশ্রয়হীন, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা নারীর জন্য একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অভিভাবকত্বহীনতার দুর্ভোগ সামনে এসে দাঁড়াল। যেকোনো অসহায়, কর্মক্ষমতাহীন ও বিপন্ন মানুষের জন্য এ সমাজের আয়োজন বড়ই দুর্বল। সরকারি, বেসরকারি কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগেও  এ আয়োজনটি সুন্দর হয়ে উঠছে না। আর একজন নারীর ক্ষেত্রে এই দুর্ভোগ ও সংকট আরও মারাত্মক হয়ে থাকে।

দায়িত্বশীল মহল যদি নাজুক এ বিষয়টি আদৌ ভাবতে না বসেন তাহলে এ সমাজের বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবনের গ্লানি ও দুর্ভোগ বন্ধে নিয়মতান্ত্রিক কোনো ব্যবস্থাপনা হয়তো কখনোই গড়ে উঠবে না।

হুজুগে আধুনিকতা

হুজুগে কিংবা স্রোতে গা ভাসানোর অভ্যাসের কারণে আমরা অনেক সময় অনেক বড় রকমের ধাক্কা খেলেও  সহজে টের পাই না। একই সঙ্গে আধুনিকতা পুজার শ্লোগান দিয়ে অশোভন যেকোনো কিছুকে বরণ করে নিজেদের বারোটা নিজেরাই বাজাতে থাকলেও এই বিষয়ে আধুনিকতার বড় ধ্বজাধারীদের সতর্কতাটা লক্ষ করি না। দৈনিক যায় যায়দিন-এর ১২ এপ্রিল সংখ্যায় ওপিনিয়ন পাতায় একটি রিপোর্ট দেখে আমাদের চরিত্রের এ বৈপরিত্বের  কথাটি  আবার  মনে পড়ে গেল।

মুম্বাইয়ে নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে চুমু এ শিরোনামে মুদ্রিত রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, বলিউডের শহর মুম্বাইয়ে তরুণ-তরুণীযুগলদের প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার মতো অভব্যতাকে আর সুনজরে দেখতে রাজি নন সেখানকার বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠী। এ নিয়ে সেখানে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার ধরপাকড়ও হয়েছে। প্রশাসনও শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এসব যুগলদের থানায় ধরে নিয়ে, গার্ডিয়ান ডেকে এনে তাদের হাতে সতর্ক বার্তা দিয়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বলিউডের  রাজত্ব যেখানে একছত্র সেখানেও বৃটেন আমেরিকার অভব্য খোলামেলা কালচারকে মেনে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জোরদার হয়েছে। জানা গেছে ভ্যালেন্টাইন ডে উদ্যাপনসহ তরুণ-তরুণীজুটির যেকোনো খোলামেলা আচরণ, প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও অভব্যতাকে মুম্বাইয়ের জন সাধারণ বিরক্তির চোখে দেখছেন।  প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে বলছেন। প্রশাসনও সে হিসেবে কঠোর পদক্ষেপ  গ্রহণ করছে। লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকা এ খবরটি প্রচার করে এর পেছনে হিন্দুজাতীয়তাবাদী দলের  উত্থানের কথাও বলেছে। এভাবে বিষয়টিকে কোনো একটি গোঁড়া দলের আপত্তির বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। কিন্তু সে রিপোর্টেরই শেষে ২০ বছর বয়সী এক তরুণের একটি অশ্লীলতা বিরোধী বক্তব্য রিপোর্টের এই উদ্দেশ্যমূলক উপস্থাপনার স্বরটা পাল্টে দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার বহু অশ্লীল ছায়াছবির  উৎপাদনস্থল মুম্বাইয়েও বাস্তব জীবনে প্রকাশ্য অশ্লীলতাকে মেনে নেওয়া হচ্ছে না এবং গণরোষ ও বিরক্তির অনুগামী হয়ে প্রশাসনও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু পশ্চিমা সমাজ, মুম্বাই ছবি ও ডিশ কালচারের স্রোতে এদেশের বহু তরুণ-তরুণী জুটি বেঁধে পাপের স্রোতে ভাসলেও, রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা প্রদর্শন করলেও এটাকে সময়ের স্বাভাবিক গতি ও নিয়ম হিসেবে এ দেশের বহু জ্ঞানপাপী রথী-মহারথী চালিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে হুজুগে আধুনিকতার এক অন্ধ চক্রে আমাদের তারুণ্য বাঁধা পড়ে যাচ্ছে।

এনজিওদের দিন

বেসরকারি সেবা সংস্থা এনজিওগুলোর প্রভাবের মাত্রা এখন এ দেশে অনেক বেশি। একসময় এ বিষয়টি নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতিবাদী কথাবার্তা বলতেন। তখন অনেকেই সেসব প্রতিবাদী ভূমিকাকে বাড়াবাড়ি বলে নাক সিঁটকাতেন। ভাবতেন, এনজিওরা বিদেশী পয়সায় গোবেচারার ভূমিকা নিয়ে দেশে কিছু সেবাকর্ম করছে এটা নিয়ে এত হল্লাচিল্লার কী দরকার! কিন্তু এক যুগ পার হয়ে এসে এখন দেখা যাচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণদানের গণ্ডি এড়িয়ে নিয়মিত বাণিজ্যিক ব্যাংক, ফোন কোম্পানী, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বহু অঙ্গনে তারা এখন নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় অবতরণ করতে শুরু করেছে। এটা এখন বহু সুধীজনেরই উদ্বেগের কারণে পরিণত হয়েছে।

গত ৮ এপ্রিলের দৈনিক ইনকিলাব প্রথম পাতায় দ্বিতীয় প্রধান শিরোনাম করেছে এনজিওদের নিয়ে। শিরোনামটি হচ্ছে - রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে এনজিওগুলো দেশের গরীবানা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে তারা এখন সুশীল সমাজের কর্ণধার। রিপোর্টটিতে এনজিও কর্ণধারদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতা-দখল প্রয়াসের বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা করা হয়েছে। এনজিওগুলো দেশের গরীব মানুষকে পুঁজি করে বিদেশ থেকে আনা টাকায় এদেশে কিছু কিছু খাতে শোষণ ও জুলুম নির্যাতন চালিয়ে প্রভাব প্রতিপত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষত রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অসততা ও দুর্নীতিগ্রস্ততার অভিযোগের সুযোগে সুশীল সমাজ গঠন, নেতৃত্বদান এবং নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের এক কৌশলী পথ ধরে এনজিওগুলোর বিচরণকে এ রিপোর্টে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এনজিওদের টাকা ও প্রোগ্রাম আসে বাহিরের প্রভাবশালী দেশগুলো থেকে। এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নানা রন্দ্রে এনজিওদের নিষ্কণ্টক অনুপ্রবেশের পথ রচনায় তাই বাহিরের সেসব রাষ্ট্রের থাকে সাহায্যকারী ভূমিকা। একটি মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে এখানে প্রভাবশালী দেশগুলোর এজেন্ডা বাস্তবায়নে এনজিওদের সেবা ও তৎপরতা। এ কারণেই বাহিরের প্রতি আনুগত্যশীল থাকার অভিযোগ উঠে থাকে। যদিও নিজের দেশের মানুষের প্রতি তাদের শোষণ ও নির্যাতনের তীব্র মাত্রা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন উঠে এসেছে। কিছুদিন যাবৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যস্ত হওয়ার জন্য এক প্রধান এনজিও কর্মকর্তার ব্যাপক প্রচার শো-ডাউনের ফলে এনজিওদের বাহিরের কালেকশন ও দেশ সেবা নিয়ে নতুন তর্ক ও উদ্বেগের জন্ম হয়েছে। মূল বিষয়টি হচ্ছে, যেকোনো সংস্থা, সংগঠনের দ্বারা এদেশের আর্থ-সামাজিক কোনো কল্যাণ সাধনের বিষয়টিকে স্বাগত জানাতে কুণ্ঠা থাকতে পারে না। কিন্তু দেশ, জাতির ঐতিহ্য, নীতিও। মূল্যবোধকে আহত করে কিংবা শোষণমূলক উপায়ে এদেশের মানুষের মাঝে সুদের অভিশাপ ছড়িয়ে দিয়ে কিংবা বাইরের ইন্ধনে এদেশের শান্ত-স্থিতিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে কোনো সংস্থা কিছু করতে চাইলে নিশ্চয়ই সেটাকে দেশের মানুষ অকুণ্ঠ চিত্তে স্বাগত জানাতে পারে না। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে এনজিও সম্পর্কে এদেশের বহু উদ্বিগ্ন মানুষের প্রতিবাদী ভূমিকার কার্য কারণ খুঁজে দেখা যেতে পারে।

মাতৃত্বহীন মায়ের কথা

যে মায়ের কাছে সন্তানের চাঁদমুখের মূল্য গোটা দুনিয়ার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে, সেই মায়েরই ঘটনা ছাপানো হয়েছে যে, অত্যন্ত  নিরাসক্ত মনে এমন দুমা তাদের ছেলে সন্তানদের মাত্র পাঁচশ টাকা করে বেচে দিয়েছেন। প্রথম আলোর ৭ এপ্রিলের সংখ্যায় চট্রগ্রামের কদমতলার তরুণী মা শান্তা ও জেসমিন নেশার টাকা যোগার করতে তাদের শিশু সন্তানদের বিক্রি করে দেওয়ার খবরটি ছাপা হয়েছে। খবরে জানা গেছে, ওই এলাকার বরিশাল কলোনীর নেশাগ্রস্ত তরুণী মায়েদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে সেখানে। একই সঙ্গে এ খবরটিও  জানা গেছে যে, এ দুমা-ই তাদের সন্তানদের পিতৃপরিচয় জানতেন না। নেশা ও মাদকের রাজ্যে বিভোরতার মধ্যে কোনো না কোনোভাবে গর্ভ সঞ্চার এবং তীব্র অনিহার মধ্যেই সন্তান প্রসবের ঘটনাটি থেকে সন্তানকে বেচে দিয়েই যেন সহজে বের হয়ে গেলেন। ভাবনাহীন অবস্থায় সন্তান বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাটি থেকে এটাই মনে হতে পারে।

নেশা ও মাদকের বিস্তার নিম্নবিত্ত শ্রেণীতে কী তীব্র মনুষ্যত্বহীনতা, বিকার ও ক্ষয় নিয়ে আসছে এ ঘটনা তার একটি উদাহরণ প্রকাশ করেছে। এর মানে নিশ্চয়ই এটা নয় যে, উচ্চবিত্ত শ্রেণীতে নেশার কোনো বিষফল নেই। শরীয়ত নিষিদ্ধ এ মাদক ও নেশা দামীই হোক কিংবা কমদামী, উচ্চবিত্তই গ্রহণ করুক কি নিম্নবিত্ত, নেশার সর্বনাশ থেকে কারোই রেহাই পাওয়ার কথা নয়। দরিদ্র-নিম্নবিত্তদের দায় ও যন্ত্রণা বেশি এবং ক্ষমতা ও সাধ্য কম বলে এ ক্ষেত্রে তাদের উৎকট চেহারা সংবাদপত্রে জায়গা  পেয়ে আসছে কিছুটা করুণা ও উপহাসের সাথে। ভাবখানা এমন যে, এ অপরাধের সঙ্গে যেন উচ্ছন্নে যাওয়া কিছু গরীব মানুষই জড়িত। কিন্তু  বিত্তবান প্রভাবশালী হর্তাকর্তাদের বাড়ি তল্লাশি করে যখন যৌথবাহিনী মাদকের বোতল, ক্যানের ভা-ার পেয়ে যাচ্ছে  ইদানীং, তখন নিকট ভদ্রলোকের আভিজাত্যের মুখোশ খুলে পড়ে যেতে শুরু করেছে। মাদক বিষয়ক পঁচন উপর থেকে শুরু হওয়ায় নিচে গিয়ে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এর সঙ্গে স্বার্থ, ব্যবসাবুদ্ধি এবং দেশ ও তারুণ্য ধ্বংসের ষড়যন্ত্র যুক্ত হয়েছে।  শান্তা ও জেসমিনদের মতো নেশাগ্রস্ত তরুণীরা তাই সন্তানদের মা হয়েও বুঝতে পারছে কেবল নেশার জন্য টাকা হাতানোর আরেকটি ছোট্ট উপাদানের মালিক হতে পেরেছে তারা; এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। সন্তান বিক্রির টাকায় তারা দু-এক বেলা নিরাপদে নেশা করার সুযোগ পাবে আরও। মায়ের মাতৃত্ব, মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়া এই সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে গোটা সমাজ ও প্রশাসনের সক্রিয় হওয়ার পথে কোনো কালক্ষেপন অনুচিৎ। উপর নিচ সবখানেই নেশার সাজ সরঞ্জাম ও উপাদান ঝাঁটিয়ে বিদায় করতে না পারলে এ সমাজে দিন দিন আরও বহু মা-বাবাহীন সন্তান এবং মাতৃত্বহীন মায়ের দেখা যেতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই সুখবর হবে না।

বিজেপির দুঃখ প্রকাশ

ভারতীয় মুসলমানদের নানাভাবে কোণঠাসা করতে করতে  জাগতিক সব সুযোগ সুবিধা, চাকরি-বাকরি থেকে তাদের একদম একঘরে করে রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত সাচার রিপোর্টে এর একটি করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। কিন্তু তারপরও ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বনাশা ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। তাদেরকে আরও ঘায়েল করতে, আরও অপাংক্তেয় বানাতে একের পর এক প্রোগ্রাম চালিয়েই যাচ্ছে সেখানকার কোনো না কোনো মহল। উত্তর প্রদেশের বিধান সভা নির্বাচনের আগে উত্তেজনাকর ও উসকানিমূলক একটি সিডি প্রকাশ করেছিল বিজেপি। সিডিটিতে মুসলমানদের গরু জবাই নিয়ে প্রচারণার পাশাপাশি, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা, বাবরী মসজিদ ধ্বংস এবং গোধরায় ট্রেনে অগ্নিসংযোগে তাদের সম্পৃক্ততার বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। এরপর নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলে শেষ পর্যন্ত বিজেপি ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়েছিল। খবরটি ঢাকার প্রথম আলো ৭ এপ্রিল সংখ্যায় ছাপা হয়েছে।

বিজেপি ভারতের প্রধান বিরোধীদল। বেশ কিছুদিন তারা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাতেও ছিল। ভারতের মতো দেশের এ পর্যায়ের একটি দলের খোলামেলা সাম্প্রদায়িক ও উসকানিমূলক কা- এটাই প্রথম নয়। বাবরী মসজিদ ধ্বংসে রথযাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়া, বাবরী সমজিদ ধ্বংসের পরের সাম্প্রদায়িক হানাহানি, গুজরাটে  সাম্প্রদায়িক নিধনপর্বসহ মুসলিম বিরোধী নানা অভিযান ও প্রোপাগাণ্ডায় প্রকাশ্য ভূমিকা পালনকারী দল হিসেবে এ দলটির পরিচিতি রয়েছে। এরা এদেশের এক নষ্টা লেখিকার সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বই লিফলেটের মতো প্রচার করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে। সেই বিজেপি যখন ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে পারে, তখন বুঝতে হবে সে দেশে সাম্প্রদায়িকতার শেকড় বহু গভীরে প্রোথিত। বিজেপির এটা একক দলীয় ও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। সাম্প্রদায়িক বহু ভোটারের মেজাজ ও রুচির প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েই তারা এ রকম কাজ করে থাকে। বিজেপি এবারের ঘটনার পর নির্বাচন কমিশনের চাপে ও নির্বাচনের পর্ব মুহূর্তের হিবাস-নিকাশ বুঝে দুঃখ প্রকাশ করেছে। এটি অবশ্যই নতুন ঘটনা । এ নতুন ঘটনাটিকে আপাত দৃষ্টিতে কৌশলই মনে হচ্ছে। তবে, সহাবস্থানের বোধোদয় ভারত নামক রাষ্ট্রটির সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর মাঝে উদয় হলে সেটা অবশ্যই আনন্দের সংবাদ হবে।

আবু তাশরীফ

 

 

advertisement