যিলকদ ১৪৪৩   ||   জুন ২০২২

শ্বেতপত্র!
উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ নিন্দাবাদ...!

সম্প্রতি ঘাদানিক কর্তৃক রচিত ও প্রকাশিত একটি বস্তু জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এর প্রধান কুশিলবদের ইসলাম বিদ্বেষ তো আগে থেকেই প্রমাণিত; শ্বেতপত্র নামক এই বস্তুটির মধ্য দিয়ে তার আরেকটি লিখিত প্রমাণ জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়েছে। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ইসলামী ব্যক্তিত্ব, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ইসলামী প্রকাশনা সম্পর্কে এরকম মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের স্পর্ধা এরা কীভাবে কোত্থেকে পায় তা অবশ্যই ভেবে দেখা দরকার। এদের গোয়েবলসীয় প্রচারণা থেকেই পরিষ্কার, এদেশে যে কোনো প্রকারের ইসলামী দাওয়াতী কর্মতৎপরতাই এদের চক্ষুশূল; তা যতই শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিসঙ্গত পন্থায়ই করা হোক না কেন। মিলুক না মিলুক যে কোনো ইসলামী কাজের সাথেই মৌলবাদ জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দেয়া এদের রুটিনওয়ার্ক।

কে না জানে, এদেশের কওমী উলামায়ে কেরাম সব সময়ই ইসলামের নীতি ও বিধান অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ পন্থায় দাওয়াতী কাজের পক্ষে। যুগ যুগ ধরে এভাবেই তারা কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা বিস্তার করে চলেছেন।

এদেশের জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে এমনকি সহীহ-শুদ্ধভাবে কুরআন শেখারও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই মুসলিম হিসেবে জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ইসলামী জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থাও। বিদ্যমান কারিকুলামে শিক্ষারত বা শিক্ষা সমাপনকারীদের মাঝে জরিপ চালানো হলে এই ভয়াবহ বাস্তবতা সামনে এসে যাবে। এর পরও এখনো পর্যন্ত এই দেশটি বিশ্বের দরবারে একটি ধর্মপ্রাণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশ হিসেবে শ্রদ্ধার আসন ধরে রাখার পেছনে এদেশের কওমী উলামা ও কওমী মাদরাসাসমূহের অবদান বড়। দেশের হাজার হাজার মসজিদে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমা-ঈদের বয়ান, দরসে কুরআন, দরসে হাদীস, দ্বীনী মাসাইলের আলোচনা ও অন্যান্য দাওয়াতী কর্মতৎপরতার মাধ্যমে জনগণের মাঝে যারা দ্বীনী শিক্ষা ও দ্বীনী চেতনাবোধ জাগ্রত রেখেছেন তাদের সিংহভাগই কওমী মাদরাসার সন্তান।

প্রত্যেক মসজিদ-মহল্লার ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের গভীর শ্রদ্ধা-ভালবাসা নিয়েই তারা দ্বীনের কাজ করে যাচ্ছেন। যারা মুসলিম এবং যারা নিয়মিত মসজিদে যান, তারা জানেন, মসজিদের ইমাম-খতীব এবং দ্বীনী মাদরাসায় কর্মরত উলামায়ে কেরাম গণমানুষের কতটা আস্থা-ভালবাসার পাত্র। সুখে-দুঃখে মানুষ তাদের কাছেই ছুটে আসে, তাদের কাছে বুদ্ধি-পরামর্শ নেয়। বহু সামাজিক কাজে আলিমগণ হৃদ্যতা ও সহমর্মিতা নিয়ে আম জনতার সাথে থাকেন। যারা নিয়মিত মসজিদে নামায পড়েন, দ্বীনী নির্দেশনার জন্য আলিম-উলামার কাছে যান, তাদের কাছে এটা এক প্রাত্যহিক বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে মসজিদ-মাদরাসার সাথে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই, যাদের কর্মকাণ্ড তাদের ধর্মহীনতা, ধর্ম-বিদ্বেষের জ্বলন্ত সাক্ষী- তারাই যখন শ্বেতপত্রের নামে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের পুঁতিগন্ধময় রচনা প্রকাশ করে তখন তা শুধু আলিম-উলামার বিরুদ্ধেই যায় না, দেশের সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ জনতার বিরুদ্ধেই চলে যায়।

বিভিন্ন সময় এদেশের কওমী মাদরাসাগুলোকে জঙ্গি তৈরির কারখানা বলা হয়েছে আবার তা প্রত্যাহারও করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও এই গোয়েবলসীয় প্রচারণার কোনো বিরাম নেই।

একটা বিষয় হয়তো অনেকেই লক্ষ্য করেন না। এদেশের কওমী মাদরাসাগুলো জনসাধারণের জন্য যতটা উন্মুক্ত আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তেমন নয়। অধিকাংশ কওমী মাদরাসায় মসজিদ আছে এবং তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে মহল্লার সর্বস্তরের মুসল্লী নামায আদায়ের জন্য মসজিদে আসেন। মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়েন। একসাথে বসে দুআ-মুনাজাত করেন, কুরআন-হাদীসের কথা শোনেন। সবার জন্য দৈনিক অন্তত পাঁচবার এরকম উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আছে কি না আমাদের জানা নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামায ছাড়াও জুমা, ঈদ, জানাযা, তারাবী, তিকাফসহ বহু ধর্মীয় কাজে জনগণ মাদরাসা ও মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। উলামায়ে কেরাম সর্বস্তরের জনগণকে মসজিদ-মাদরাসায় এসে নিজেদের দ্বীন-ঈমান নৈতিকতা গঠনের জন্য সর্বদা উৎসাহিতও করে থাকেন।

এ ধরনের গণমুখী ও জনগণের প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে যখন জনবিচ্ছিন্ন মুষ্টিমেয় কিছু ভাগ্যান্বেষী জনগণকে অবহিত করার জন্য শ্বেতপত্র নামক কোনো কিছু উদ্গীরণ করে তখন তা কেমন উদ্ভট ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়- তা বোঝার জন্য অনেক বেশি জ্ঞান-বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না।

ধর্ম-বিদ্বেষী লোকেরা যখন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সাময়িকী ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করে তখন তারা যে সাধারণত সততা রক্ষা করে না, তার আরেকটি জ¦লজ্যান্ত প্রমাণ এই শ্বেতপত্র। এদেশের প্রতিষ্ঠিত দ্বীনী সাময়িকীগুলোকেও ঢালাওভাবে জঙ্গিবাদ প্রচারকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। অথচ সব ধরনের অন্যায় সহিংস কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এই সাময়িকীগুলোই সব সময় সরব ভূমিকা পালন করেছে। যারা কওমী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সাময়িকীর তালিকা দিয়েছেন তারা যে এইসব সাময়িকীর পাঠক নন, তা তো বলাই বাহুল্য। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, কোনো কোনো সাময়িকীর নামটি পর্যন্ত তারা সঠিকভাবে দিতে পারেননি। তারা যদি এইসব সাময়িকী নিয়মিত পাঠ করতেন তাহলে জানতে পারতেন, দেশব্যাপী জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা থেকে শুরু করে হলি আর্টিজান হামলা, গুম, খুন, পেট্রোল বোমা হামলাসহ নানা প্রকারের সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক, নারী নির্যাতন, সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে এই সাময়িকীগুলোতে নিয়মিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাপা হয়ে থাকে। এইসকল দ্বীনী পত্রিকার এক বিরাট পাঠকগোষ্ঠী আছে, যারা বিষয়টি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত। কাজেই না জেনে, না পড়ে অসত্য ও তিলকে তাল বানানো মন্তব্যের দ্বারা তারা যে এই বিরাট জনগোষ্ঠীর সামনে নিজেদের আত্মপরিচয় নির্লজ্জভাবে প্রকাশ করে দিচ্ছেন তা কি বোঝেন?

এই চরম বিদ্বিষ্ট ও স্বার্থান্বেষী শ্রেণিটির জন্য আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করি, আল্লাহ তাআলা তাদের হেদায়েত দিন। সত্য কথা বলার এবং হিংস্রতা ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপনের তাওফীক দান করুন- আমীন।

উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ,/আমরা বলিব, সাম্য-শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।

 

 

advertisement