মুহাররম ১৪২৯   ||   জানুয়ারি ২০০৮

তালীম এবং তাবলীগ

ইসহাক ওবায়দী

খতীবে আযম হযরত মাওলানা সিদ্দীক আহমদ রহ. একবার ফেনী শর্শদী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে তাশরীফ এনেছিলেন। এক অবুঝ তাবলীগী ভাই হযরতকে বললেন, হুজুর! অনেক কিছুই তো করলেন, এবার দ্বীনের কিছু কাজ করুন না। খতীবে আযম রহ. বললেন, চলুন!  গাঁটরি-বুঁচকা মাথায় নিয়ে আমি তাবলীগে চললাম, তবে আমার কাজগুলো আপনাকে করতে হবে। লোকটি বলল, তা কি করে সম্ভব? হযরত বললেন, আমি তো আপনার কাজটি করতে সক্ষম, তবে কেন আপনি আমার কাজগুলো করতে পারবেন না?

 

তালীম জরুরি, নাকি তাবলীগ জরুরি- এ বিতর্ক অনেক পুরানো। এ বিষয়ে মাজালিসে হাকীমুল ইসলাম গ্রন্থে হাকীমুল ইসলাম হযরত ক্বারী তৈয়্যেব রহ.-এর মনোমুগ্ধকর সুদীর্ঘ এক আলোচনা কয়েক পাতাব্যাপী বর্ণনা করা হয়েছে। তাতে হযরত রহ.-এর ভাষণের যে নির্যাস বেরিয়ে এসেছে তা হচ্ছে, তালীমের মাকসাদ বা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাবলীগ, আর তাবলীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে তালীম। যে তালীমের পরে দ্বীন-প্রচার থাকবে না তা সত্যিকারের তালীম নয়। আবার যে তাবলীগের পরে দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণের প্রেরণা আসবে না তাও সত্যিকারের তাবলীগ হবে না। অর্থাৎ তালীম-তাবলীগ একে অপরের সম্পূরক বিধায় দুটি একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবেই জড়িত। 

আজ আমাদের অনেক মাদরাসার অবস্থা এমন যে, গণমানুষের সাথে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে (ইল্লা মাশাআল্লাহ)। যার ফলে মাদরাসাগুলো জনগণের সার্বিক সহযোগিতা থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের সাথে দ্বীনী আদান-প্রদানের সম্পর্ক গভীরভাবে গড়ে উঠছে না। তাদের কাছ থেকে আমরা মাদরাসার জন্য টাকা-পয়সা নেই বটে; কিন্তু তাদের দ্বীনী ব্যাপারে আমাদের মধ্যে সে পর্যায়ের দরদ বা মাথাব্যথা নেই। আর অসচেতনতা বা অজ্ঞতার কারণে তারাও আলেমদের কাছ থেকে দ্বীনী বিষয়ে উপকৃত হতে পারছে না। এমতাবস্থায় আমরা যদি দরদমাখা দাওয়াত নিয়ে তাদের কাছে যেতে পারতাম, তাহলে দাওয়াতের কারণে তাদের মধ্যে হয়তো দ্বীনের চেতনা ফিরে আসতো। তারা হয়তো আরো বেশি দ্বীনদার হতে সক্ষম হতো এবং তাদের মধ্যে দ্বীনের সমঝ-বুঝ আরো পাকাপোক্ত হতো। আর এ অবস্থায় তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে দ্বীনকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াস হিসাবে মক্তব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতো এবং মাদরাসাগুলোর জন্য দুই হাতে সাহায্য করতো। আর মাদরাসার সাথে মানুষের একটা সুসম্পর্ক সবসময় বিদ্যমান থাকতো। সত্যি কথা বলতে কি, দাওয়াতের সাথে আমাদের ঐ পর্যায়ের সম্পর্ক না হওয়ার কারণে গণমানুষের সাথে আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে এসে গেছে যে, আমরা নিজ দেশেই পরবাসী জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। যে আলেম সমাজের কারণে দ্বীন টিকে আছে, এমনকি তাবলীগের কাজও বহাল রয়েছে, সে আলেম সমাজ সম্পর্কে গণমানুষের অন্তরে আযমত-ভক্তি এখন আর তেমন পর্যায়ে বাকী নেই। সাধারণ মানুষ তো বটে; যারা তাবলীগের বরকতে কিছুটা দ্বীন শিখতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদের অন্তরেও আজ আর সেই ভক্তি পরিলক্ষিত হয় না। এর একটা কারণ আমার যা বুঝে আসে তা হল, ঐ তাবলীগী দ্বীনদার ভাইটি সরাসরি আমার মাধ্যমে দ্বীন পাননি। তিনি দ্বীন পেয়েছেন আরেকজন তাবলীগী ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে। তাই তার মধ্যে আলেম বা মাদরাসার প্রয়োজনীয়তার অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি। বরং অনীহার নতুন একটি কারণ যুক্ত হয়েছে। তাই তারা আলেম সমাজ বা মাদরাসার প্রতি উদাসীন।

ফলে খতীবে আযমের মতো বাংলার শ্রেষ্ঠতম আলেমকুল শিরমণিকেও একজন সাধারণ তাবলীগী কর্মী দ্বীনের কাজ করার জন্য দাওয়াত দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তার ধারণায় খতীবে আযম রহ. তালীম তাদরীস ও ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে দ্বীনের যে মহান খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন তা দ্বীনের কাজ নয়, দ্বীনের কাজ শুধু তাবলীগের মাধ্যমে যা করা হচ্ছে তাই। গণমানুষের অন্তর থেকে আলেমদের সম্পর্কে এবং দ্বীনী কাজের পরিধি সম্পর্কে এই অজ্ঞতা যদি আমরা দূর করতে সক্ষম না হই, তাহলে অচিরেই এই দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ভাইয়েরা ফেৎনার শিকার হয়ে যেতে পারে বলে শংকা জাগে।

আসলে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ জাহেল-মুর্খদের কাজ অবশ্যই নয়। নবুওয়তী ফরীযাহ্ নবীর ওয়ারিশরাই সুচারুরূপে আঞ্জাম দিতে পারেন। হযরত মাওলানা ইলিয়াছ রহ. মেওয়াতীদের মতো একটি অভব্য সমাজের মধ্যে এই কাজের সূচনা করলেও তিনি সবসময় এ কাজের জন্য আলেমদের নেতৃত্ব শুধু কামনাই করতেন না; বরং জরুরি বলে মনে করতেন। এই কাজের পূর্ণতা তখনই হতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন যখন এই কাজের নেতৃত্ব সম্পূর্ণ আলেমদের হাতে আসবে। দেখুন! তাঁর মালফুযাত।

আমার শেখ ওলামা বাজারের হযরত মাওলানা আবদুল হালীম ছাহেব রহ. বলতেন, হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর মালফুযাতে আছে যে, একেকটি জামাতে যখন দুই দুইজন মুহাক্কেক আলেম থাকবেন তখন দাওয়াতের আসল কাজ আরম্ভ হবে। হযরত আরো বলতেন, মুহাক্কেক আলেম গাছের গোটা নয়, মুহাক্কেক আলেমের অস্তিত্ব একেকটা এলাকায় ফরযে-কেফায়ার বিধান রাখে। অথচ দ্বীনের যেকোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান দিতে পারা আলেমকেই মুহাক্কেক আলেম বলা হয়। আর এই মুহাক্কেক আলেমের অভাবে এই ফরযটি আঞ্জাম দেওয়া হচ্ছে মাদরাসাগুলোর অস্তিত্বের মাধ্যমে। এমতাবস্থায় একেকটি জামাতে দুই দুইজন মুহাক্কেক আলেমের বিষয়টি কত দুরূহ ব্যাপার, তা সহজেই বোঝা যায়। হযরত আরো বলতেন, একটি জামাতে কেবল একজন নয়, দুজন আলেম থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমি অনেক দিন পর্যন্ত চিন্তা করেছি, শেষমেশ আল্লাহর ফযলে বুঝে এসেছে যে, বিমানে একজন পাইলট থাকে না, একাধিক পাইলট থাকে। যদিও বিমান চালনা করে একজনই। অন্য কো-পাইলট অবসর বসে থাকে এই জন্য যে, যেকোনো মুহূর্তে যদি চালক পাইলটটির কোনো সমস্যা হয়ে যায় সাথে সাথে যেন কো-পাইলট বিমানকে টেকআপ করতে পারে। এত কোটি টাকার সম্পদ এবং এতগুলো মানব সন্তানের জান-মাল নিরাপত্তাপূর্ণ করার লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থা। নবীওয়ালা কাজ এই দাওয়াত ও তাবলীগের অবস্থা তো তার চাইতেও হাজার গুণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই হয়তো দুইজন মুহাক্কেক আলেম থাকার কথা হযরত রহ. বলেছেন।

এখন কথা হচ্ছে, আলেমদের থাকার ব্যবস্থা কীভাবে হতে পারে? তালীমের কাজ তো দ্বীনের মূল ও অস্তিত্ব রক্ষার কাজ। আর এ কাজেই অধিকাংশ আলেম সমাজ ব্যস্ত আছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তাবলীগের অন্যতম মুরববী মরহুম হযরত মাওলানা লুৎফুর রহমান ছাহেবের সাথে কাকরাইলে বসে একদিন আলোচনা করছিলাম। আমি বললাম, হুজুর! তালীম-তাবলীগ দুটিই যখন জরুরি, তখন প্রতিটি মাদরাসায় এ নিয়ম করলে কেমন হয় যে, মাদরাসায় যেমন মোহাচ্ছেল বা চাঁদা উসূলকারী বেতন ভাতা দিয়ে রাখার নিয়ম রয়েছে তেমনি একজন করে মোবাল্লেগ রাখা হবে। চার মাস (তিন চিল্লা) করে একেকজন উস্তাদ তাবলীগে সময় নিয়ে চলে যাবেন, তিনি ফিরে আসলে পর আরেকজন তিন চিল্লার জন্য বেরিয়ে পড়বেন। যিনি তাবলীগে যাবেন তাঁর কিতাবগুলো ঐ মোবাল্লেগ নামের মুয়িনুল মোদাররেস বা অতিরিক্ত শিক্ষক দ্বারা চালানো হবে। তাহলে পালাক্রমে মাদরাসার সকল উস্তাদেরই তাবলীগের সাথে জড়িত হওয়ার সুযোগ হয়ে যাবে। এতে করে তাবলীগে-আসা সাধারণ মানুষের যেমন আলেমদের থেকে উপকৃত হবার সুযোগ হবে তেমনি ঐ আলেমগণের তাবলীগী ফরীযাহ আদায় হবার সাথে সাথে ইসলাহী ফায়দাও বিরাট আকারে হয়ে যাবে। সাথে সাথে গণমানুষের সাথে আলেম সমাজের একটা খালেস দ্বীনী সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

আমার প্রস্তাব শোনার পর হযরত মাওলানা লুৎফুর রহমান ছাহেব বললেন, আমরা তো হুবহু এটাই চাই। তবে তিন চিল্লার পরিবর্তে এক বৎসর কামনা করি। কারণ একজনের কিতাব বছরের মাঝে অন্যজন পড়াতে গেলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে। তাই বলি যে, এক বছরের জন্যই একেকজন বেরিয়ে যাক, তাহলে কিতাবের সমস্যাটা আর থাকবে না। আরেক বছর অন্যজন বের হবেন। এভাবে একটি মাদরাসার সকল উস্তাদই তাবলীগের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।

আমার এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার ব্যাপারেও আমি কোনো কোনো মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। চট্টগ্রাম হীলা বড় মাদরাসার শ্রদ্ধেয় মুহতামিম মরহুম মঞ্জুর ফকির সাহেব অত্যন্ত খুশি মনেই তা বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাকে জানিয়ে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখন তা কি অবস্থায় আছে আমার জানা নেই।

ইতোমধ্যে আমার এই প্রস্তাবের উপর দলীল পেয়ে গেছি। আমার পড়ার টেবিলে এখন যে কিতাবটি আছে, তা হচ্ছে, হাকীমূল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর বয়ান- সংকলন আল ইলমু ওয়াল উলামা। সময় পেলেই সেখান থেকে পড়তে থাকি। কদিন আগে দেখলাম, হযরত থানভী রহ. অত্যন্ত জোরালো ভাষায় কয়েকটি বয়ানে বলেছেন, প্রতিটি মাদরাসায় বেতন করা একজন মোবাল্লেগ থাকা জরুরি। যার কাজই হবে শুধু আমজনগণকে দ্বীনের দিকে আহবান করা ও তাদের দ্বীন শেখানো। এই ওয়াজ বা তাবলীগের জন্য কোনো রকম বিনিময় তো দূরের কথা, হাদিয়া-তোহ্ফাও নেওয়া উচিত হবে না। এমনকি মাদরাসার জন্য চাঁদা বা টাকাও উসুল করা ঠিক হবে না। কেউ যদি স্বেচ্ছায় মাদরাসায় চাঁদা দিতে চায়, তাকে মাদরাসার ঠিকানায় সরাসরি মাদরাসায় পাঠানোর কথা ঐ মোবাল্লেগ সাহেব বলে দেবেন। এতে মাদরাসার চাঁদা আরো বেড়ে যাবে এবং বিনিময় ছাড়া তাবলীগ করার কারণে জনগণের উপর তার প্রভাব পড়বে অনেক বেশি। মাদরাসা-কর্তৃপক্ষকে মনে করতে হবে এই মোবাল্লেগ সাহেবও মাদরাসারই একজন উস্তাদ। অন্যরা যদি খাছ ছাত্রদের উস্তাদ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি আমজনতার উস্তাদ। এটাও মাদরাসার উদ্দেশ্যের মধ্যে শামিল।

হযরত রহ. আরো বলেন, চাঁদা উসুলকারী মোহাচ্ছেল আলাদাভাবে থাকবে, আর মোবাল্লেগ আলাদা থাকবে। মাদরাসা যদি বড় হয়, যেমন দেওবন্দ মাদরাসা, তাহলে মাদরাসার পক্ষ থেকে প্রতিটি এলাকায় একাধিক মোবাল্লেগ থাকা চাই। হযরত আরো বলেন, এটা একটা এভাব বিস্তারকারী কার্যকরী ফর্মূলা। কারো সন্দেহ থাকলে তা পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করে দেখতে পারেন। যদি ফলপ্রসু না হয়, তবে বন্ধ করে দেওয়ার এখতেয়ার তো আছেই। (আল ইলমু ওয়াল উলামা পৃ. ১০৬-১০৮)

হযরত থানভী রহ.-এর এই জোরদার বক্তব্য দেখে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম। আলোচনা প্রসঙ্গে আমার একটি প্রস্তাবের প্রায় ৩০ বছর পর এই বক্তব্য পেলাম।

আমাদের আলেমদের মধ্যে যারা শুধু তালীমী দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তাদের পক্ষে যদি তালীম-তাবলীগের মধ্যে সমন্বয় সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে কমছে কম তালীমী দায়িত্বের পাশাপাশি তাবলীগের কাজে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা আমরা অবশ্যই করতে পারি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুফতী হযরত মুফতী ফয়জুল্লাহ ছাহেব রহ. তাবলীগ জামাতের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একদিনের জন্যেও কোথাও শরীক হয়েছিলেন কি না সন্দেহ আছে। কিন্তু মুফতী ছাহেব রহ. তাঁর লেখনী ও বক্তব্য দ্বারা এই জামাতের পূর্ণ সমর্থনই শুধু করেননি; হক জামাত হিসাবে এই কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য সকলকে রীতিমতো উদ্বুদ্ধ করে গেছেন।

ফাজায়েলে আমাল-এর লেখক শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া রহ.  জীবনে একটি চিল্লাও দিয়েছেন কি না সন্দেহ আছে। অথচ তিনি মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর যুগেও তাবলীগের অন্যতম মুরববী ছিলেন।

শায়খুল আরব ওয়াল আজম হযরত সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. আযাদী আন্দোলন ও তালীমী দায়িত্বসহ বিভিন্নমুখী দায়িত্ব্ পালন সত্ত্বেও হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর ডাকে যে কোনো সময় সাড়া দিতেন। হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর আন্তরিকতা ও লিল্লাহিয়্যাত দর্শনে তিনি তাঁর শত ব্যস্ততার মাঝেও বড় ভাই ও মুরববী হিসাবে দ্বীনের এই প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছেন। ১৯৩৩ ঈসায়ীতে কনকনে শীতের প্রকোপ উপেক্ষা করে ২০০জন মেওয়াতী হযরত মাওলানা রহ.-এর দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাসের জন্য বের হয়। বিভিন্ন এলাকার জন্য কয়েকটি জামাতে তাদের বিভক্ত করা হয়। শায়খুল ইসলাম হযরত মাদানী রহ. দিল্লী জামে মসজিদে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর অনুরোধে এদেরকে বিদায়ী হেদায়াত দান করেন। হযরত মাদানী রহ. হেদায়াত দান করতে গিয়ে আবেগের সাথে বলেন, আপনারা যে কাজের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তার ফলে বাতিল খতম হয়ে যাবে, ভারতবর্ষ থেকে বৃটিশের শাসন-শোষণের অবসান ঘটবে। লাল কেল্লার উপর যে ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা উড়ছে, তা ভূপাতিত হবে। হযরত মাদানী রহ.-এ কথা বলার সাথে সাথে আকস্মিকভাবে লাল কেল্লার পতাকাটি নিচে পড়ে যায়। জামে মসজিদ লোকে লোকারণ্য ছিল। তারা এই অস্বাভাবিক কারামতী কান্ড দেখে সকলে জোরে নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে উঠে। হযরত মাদানী রহ. জোরের সাথে ভৎর্সনা করে বললেন, আজকাল লোকেরা জোশ-জয্বা সব নারা লাগানোর মাঝেই শেষ করে দেয়। একটি দ্বীনী আমলের কথা বলছি, তা মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন।

(বৈচিত্রের মাঝে ঐক্যের সুর পৃ. ৫৭৮ তাবলীগী তাহরীকের সূচনা ও মূলনীতি পৃ. ২৬,২৭, সীরাতে শাইখুল ইসলাম, মাওলানা নাজমুদ্দীন এসলাহীকৃত, ২য় খ  পৃ. ৪০৭-৪০৮)

আমাদের পূর্বসূরী এ সকল আকাবির মনীষীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের মুআল্লিম মুদাররিস হযরাতও যদি এভাবে তাবলীগের সহায়তায় এগিয়ে আসেন, তবে বাতিল রাজনীতি থেকে নিয়ে সর্বপ্রকার বাতিলের জড় উৎখাত হতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। এতে নববী যুগের মতো তালীম-তাবলীগের সফল সমন্বয়ও সাধিত হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার ও মানার তাওফীক দান করুন। আমীন। #

 

 

advertisement