রবিউল আউয়াল ১৪৩১   ||   মার্চ ২০১০

অন্যকে খাওয়ানো

আবিদা

শিশুর মনে স্বার্থপরতার যে বীজ থাকে তা সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় খাবারের সময়। শৈশবেই তা দূর করার চেষ্টা করুন এবং তাদেরকে ত্যাগ ও ভদ্রতা শিক্ষা দিন। এতে তারা যেমন মানুষের ভালবাসা লাভ করবে তেমনি অর্জন করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। স্বার্থপরতা অত্যন্ত মন্দ প্রবণতা, যা ত্যাগ করে পরার্থপরতা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। কারণ এটা ইসলামের শিক্ষা। এজন্য নানাজী সর্বদা চেষ্টা করতেন, আমরা যেন ত্যাগের গুণ এবং গ্রহণের পরিবর্তে দানের মানসিকতা অর্জন করি। বিশেষত খাবারের বিষয়ে। তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, খাবারের সময় আমরা যেন অন্যকে অগ্রাধিকার দেই এবং সবার আগে দস্তরখানে এসে বসার চেষ্টা না করি; বরং বড়রা বসার পর শান্তভাবে দস্তরখানে এসে বসি। তাই আমরা একে অপরকে ভালো জায়গায় বসার জন্য অনুরোধ করতাম এবং অন্যকে আগে বসার সুযোগ দিয়ে নিজেরা পরে বসতাম। নানাজী আরো বলতেন, আমরা যেন খাবারের পরিমাণ ও দস্তরখানের উপস্থিতি সম্পর্কেও সচেতন থাকি। কোনো বিশেষ পদ পরিমাণে অল্প হলে সবাই যেন তা থেকে কিছু কিছু নিতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখে আমার অংশটুকু নেই। তার তরবিয়তের ফলে আমাদের মাঝে ভদ্রতা ও সংযম তৈরি হয়েছিল। তাই দেখা যেত, খাবারের শেষ অংশটুকু কেউ তুলে নিচ্ছে না। জুসের শেষ পেয়ালা, পেপসির বোতলের অবশিষ্ট অংশ এবং কেক, মিষ্টির শেষ টুকরাটি দস্তরখানে স্বমহিমায় বিরাজ কত। আমরা ঠাট্টা করে এর নাম দিয়েছিলাম ‘পবিত্র অংশ’! তরবিয়তের ক্ষেত্রে নানাজীর নীতি এই ছিল যে, ১. যখনই সুযোগ পেতেন আমাদেরকে ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিতেন। পাশাপাশি আমাদের আচার-আচরণ লক্ষ করতেন এবং ভুল হলে সংশোধন করতেন। ২. তাঁর শিক্ষা আমরা কতটুকু গ্রহণ করেছি তা সুকৌশলে পরীক্ষা করতেন। ফলে আমাদের মনে আরো গভীরভাবে বসে যেত এবং আমরা কখনো তা ভুলতাম না। একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি : একদিন আমরা নিজ নিজ কাজে আছি। নানা একটি .... তা কয়েক টুকরা করলেন। টুকরাগুলো বিভিন্ন আকারের ছিল। কোনোটা ছোট, কোনোটা বড়। তিনি টুকরাগুলি উঠোনে সাজিয়ে আমাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে ডাকলেন এবং কোনো একটি টুকরা উঠিয়ে নিতে বললেন। তার এক নাতনী আমাকে বলেছে যে, ‘নানাজী যখন আমাকে ডাকলেন এবং একটি খণ্ড তুলে নিতে বললেন, তখন আমি বেশ অবাক হলাম এবং সবচেয়ে বড় খণ্ডটিই তুলে নিলাম। নানাজী অনেকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর বললেন, ‘সবচেয়ে বড় খণ্ডটিই তুলে নিলে মামণি!’ আমি খুব লজ্জা পেলাম এবং তাঁকে কী উত্তর দিব বুঝে উঠতে পারলাম না। সেই ঘটনার পর বিশ বছর অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু এখনও আমি তা ভুলতে পারিনি। বিষয়টি আমার মনে এমনভাবে রেখাপাত করেছে যে, এখনো কোনো কিছুর বড় অংশটি আমি নিতে পারি না। দস্তরখানে সবার পরে বসতে এবং যে পেয়ালায় খাবার বা পানীয় সবচেয়ে কম, তা নিতেই আমি স্বচ্ছন্দবোধ করি। অন্যদের তৃপ্ত হতে দেখলেই আমার আনন্দবোধ হয়।’ প্রিয় পাঠক! এটি হচ্ছে একটিমাত্র দৃষ্টান্ত। আপনি কি কোনো শিক্ষক সম্পর্কে শুনেছে, যার শিক্ষা এত গভীরভাবে শিক্ষার্থীর মনে রেখাপাত করেছে?

 

advertisement