মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল মারূফ - জামিয়া মাদানিয়া ফেনী

প্রশ্ন

আমি এ বছর শরহে বেকায়া জামাতে পড়ছি। আগামী বছর উলূমুল হাদীস-এর জন্য ওয়াকফ করার ইচ্ছা করছি। আল্লাহ সহায় হোন। এজন্য এখন থেকে উক্ত শাস্ত্রের সাথে পরিচিতি লাভের জন্য এখন ও পরবর্তী জীবনে আমার কী করণীয়? বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইল। হুজুরের নিকট বিশেষ দোয়ার দরখাস্ত রইল।

উত্তর

মাশাআল্লাহ। আপনার এই জযবা অবশ্যই মুবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহ তাআলা আপনাকে ও আমাদের সবাইকে কবুলিয়াত ও মাকবুলিয়াত দান করুন। আমীন। আপনার জিজ্ঞাসিত বিষয়ে পরামর্শ হল, আপনি এখন আপনার দরসী কিতাবগুলোর মুতালাআয় পূর্ণ মনোনিবেশ করুন। বিভিন্ন আরবী শরহ-হাশিয়া মন্থন করে কিতাবী ইসতি’দাদ অর্জনে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রাখুন। বিশেষত শরহে বেকায়ার উপর লিখিত আল্লামা লাখনোভী রাহ.-এর হাশিয়া ও গুরুত্বপূর্ণ মুকাদ্দামাটি অবশ্যই পড়ে নিবেন। এর সাথে যদি সময় ও সুযোগ মিলে তাহলে আপনাদের মাদরাসার কুতুবখানায় হাদীস ও উলূমুল হাদীস সংক্রান্ত যেসব কিতাবাদি রয়েছে সেগুলোর সাথে ধীরে ধীরে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু দাউদ - মাদানী নগর, ঢাকা

প্রশ্ন

নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম এবং আসলাফে উম্মতের প্রতি যাদের অন্তরে, আমাদের ধারণায়, পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে, তাদের লেখায়ও দেখি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, রাযিয়াল্লাহু আনহু ও রহমাতুল্লাহি আলাইহ না লিখে তাঁরা নবী, সাহাবী ও সালাফের আলোচনা করেন। উদাহরণস্বরূপ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এর কাসাসুন নাবিয়্যিন ও আলকিরাআতুর রাশিদার কথা উল্লেখ করা যায়। তো এ অবস্থায় তরজমা করার সময় আমরা কী করব? মূলে যেভাবে আছে সেভাবেই বলব? নাকি উপযোগী দোআ উচ্চারণ করে ইবারতের অর্থ করব? উপরন্তু অনুশীলনের উদ্দেশ্যে এ ধরনের লেখার আদলে যখন নিজেরা নতুন লেখা তৈরি করব তখন নিজেদের লেখায় তাদের নাম কীভাবে লিখব? এ ব্যাপারে মূলনীতি কী জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আরে ভাই এটা তো কাতেব আর প্রকাশকের উদাসীনতা কিংবা কাগজ বাঁচানোর খোঁড়া ফন্দি হতে পারে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে থাকে। আবার ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. কখনো নবীজীর উপর সালাত ও সালাম মুখে উচ্চারণ করে নিতেন। কলমে লিখতেন না। কিন্তু অন্যান্য সালাফ লিখায় লিখতেন, সঙ্গে মুখেও উচ্চারণ করতেন। সালাত-সালাম, তারাজ্জী ও তারাহহুম লেখায় এবং কথায় বর্জন করা অনুচিত। বিশেষত সালাত-সালাম তো পূর্ণাঙ্গ লেখা ও বলা উচিত। সময়ও কাগজস্বল্পতার অজুহাত এক্ষেত্রে একান্ত না-বরকতী ও মাহরূমীর কারণ হতে পারে। আর এজন্য من صلى علي واحدة صلى الله عليه عشرا খোশখবরী যেমন রয়েছে তেমনি البخيل من ذكرت عنده ولم يصل علي এর মতো ধিক্কারও রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অনেক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। এটা খুবই আফসোসের বিষয়। হাদীসের সব কিতাবের প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো দেখুন, কাগজ-কলম-কালির যথেষ্ট সমস্যা সেই প্রাচীন যুগে ছিল। তবুও তাঁরা একবারের জন্যও এই বিষয়ে কাপর্ণ্যের পরিচয় দেননি। অথচ প্রতি লাইনে লাইনে তা তাকরার হয়েছে। আল্লামা খতীব বাগদাদী রাহ.-এর কিতাব আলজামে (১/২৭০-১৭২) এ এরকম একাধিক ঘটনা রয়েছে যে, কোনো মুহাদ্দিস ইন্তেকাল করলেন। অন্য কোনো মুহাদ্দিস তাকে স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি সবুজ-সুন্দর কাপড় পরে নায-এর সাথে পায়চারী করছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহ আপনার সাথে কী মুআমালা করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। প্রশ্ন করা হল, কী আমলের বদৌলতে? তিনি বললেন, আমি হাদীস লিখতাম। যখনই আমার সামনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম আসত আমি প্রত্যেক বারই (পূর্ণাঙ্গভাবে) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখতাম। আল্লাহ শুধু এরই বদৌলতে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কবি খুব সুন্দর বলেছেন- ما ہرچہ خواندہ ايم فراموش كردہ ايم الا حديث يار كہ تكرار مى كنيم অতএব যতবারই নবীজীর নাম আসুক সংক্ষেপে নয়; বরং পূর্ণাঙ্গভাবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখা উচিত।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ কাউসার বিন হাবীব ও ইবনে জসিম -

প্রশ্ন

ক) ইনশাআল্লাহ আগামী বছর মিশকাত জামাতে পড়ব। আমাদের মাদরাসায় উক্ত জামাতে মিশকাত, হেদায়া (৩য় ও ৪র্থ খণ্ড), শরহে আকাঈদ, তাফসীরে বায়যাবী, দেওবন্দ আন্দোলন, নুখবাতুল ফিকার ইত্যাদি কিতাব পড়ানো হয়। জানতে চাই এসব কিতাব কোন পদ্ধতি অধ্যয়ন করব এবং কোন কোন শরাহ পড়লে উপকৃত হব।
খ) অনেক সময় লেখাপড়ায় মন বসে না এবং দরস চলা অবস্থায় মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়। এ বিষয়ে আমার করণীয় কী?

উত্তর

ক) এই বিষয়ে আগেও লেখা হয়েছে। আপনি আলকাউসারের বিগত সংখ্যাগুলো দেখতে পারেন। তাছাড়া একসাথে অনেকগুলো কিতাব ও সেগুলোর অধ্যয়নপদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন না করে এক দুটি কিতাব সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে সহজ হয়। মিশকাতের জন্য মিরকাত ও ফযলুল্লাহ তুরবিশতী রাহ. লিখিত মাসাবিহর চার খণ্ডে সদ্য প্রকাশিত শরহ আল-মুয়াসসির’; শরহে আকাইদের জন্য নিবরাস; বয়যাবীর জন্য মুহিউদ্দীন মুহাম্মাদ বিন মুসলিহুদ্দীন মুস্তফা প্রকাশ শায়খযাদা রাহ. (৯৫১ হি.) লিখিত হাশিয়ায়ে শায়খযাদা এবং নুখবাতুল ফিকারের জন্য শায়খ আকরাম নাসরবুরীর ইমআনুন নাযর প্রভৃতি কিতাব অধ্যয়ন করতে পারেন।
খ) কোনো বিষয়ের গুরুত্ব ও মাহাত্মের অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত থাকলে তা থেকে মানুষের খেয়াল ফেরানোই মুশকিল। একজন তালিবে ইলমের যিন্দেগীতে ইলম অর্জন অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর কী হতে পারে? তালেবে ইলমী যিন্দেগীর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসে এমন সমস্যা আপনার তিনটি কারণে হতে পারে। প্রথমত ইলমের গুরুত্ব ও আযমতের অনুভূতি হ্রাস পাওয়া। দ্বিতীয়ত মানযিল বা ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্র নির্ধারণে হতাশা ও দুশ্চিন্তা। তৃতীয়ত কিতাবী ইসতিদাদ যথাযথ অর্জিত না হওয়া। যাইহোক, যেহেতু কাছেই থাকেন কোনো এক অবসরে এলে আপনার সার্বিক অবস্থা ও সমস্যা বিস্তারিত জেনে কোনো পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ তারীফুজ্জামান - বাঘারপাড়া, যশোর

প্রশ্ন

ক) আমি হেদায়াতুন্নাহু জামাতের ছাত্র। বিভিন্ন জুমলার তারকীবের বিষয়ে বেশ দুর্বল। এ কারণে অনেক সময় ইবারত বুঝতে কষ্ট হয়। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য আমি কী করতে পারি কিংবা কোন কিতাব অধ্যয়ন করতে পারি জানালে কৃতজ্ঞ হব।
খ) বাংলা সাহিত্যের আমি একজন নতুন পাঠক। এ স্তরে কোন ধরনের বই পড়লে আমি সফল হতে পারি? প্রাথমিক বই পড়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ রইল।

উত্তর

ক) এই সমস্যার ব্যাপারে আলকাউসার জুমাদাল উলা ৩১ হি. মোতাবেক মে ১০ সংখ্যায় একটি মাশওয়ারা দেওয়া হয়েছে। আপনিও সে অনুযায়ী আমল শুরু করুন। ইনশাআল্লাহ, সুফল পাবেন বলে আশা রাখি।
খ) হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দা.বা.-এর পুষ্পসমগ্র সংগ্রহ করে পড়ুন। তাঁরই সম্পাদিত শিশু-কিশোর মাসিক পত্রিকা পুষ্প ও নিয়মিত পড়তে থাকুন। মূলত নবীনদের জন্যই তাঁর উদ্যোগ। তাছাড়া তাঁর অন্যান্য সাহিত্যকর্ম বিশেষত সীরাত সিরিজ, আকীদা সিরিজ ও ফাযাইল সিরিজ এবং মরহুম মাওলানা আখতার ফারূক ও মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের প্রথম দিককার লিখিত বিভিন্ন বইও পড়তে পারেন। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম - আশরাফাবাদ, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা

প্রশ্ন

আমি জামাতে জালালাইনের একজন ছাত্র। আমাদের জামাতে জালালাইন, হিদায়া, আলফাওযুল কাবীর (এটা শেষ হয়ে আবার শুরু হয়েছে), আলইতকান ফী উলূমুল কুরআন, উলূমুল কুরআন (মাওলানা তাকী উসমানী), আহকামুল কুরআন জাসসাস (নির্বাচিত অংশ), সফওয়াতুত তাফাসীর (নির্বাচিত অংশ) এই কিতাবগুলো পড়ানো হয়। যেহেতু আমাদের মাদরাসার এই নিসাবটি অন্যান্য মাদরাসা থেকে অনেকটা ভিন্ন তাই (সদ্য আরম্ভকৃত) আলইতকান, আহকামুল কুরআন ও সফওয়াতুত তাফাসীর কিতাবগুলো থেকে ফায়দা হাসিলের পদ্ধতি সম্পর্কে আমার জানা নেই। অতএব এই কিতাবগুলো পড়া ও ফায়দা হাসিলের পদ্ধতি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উস্তাদই ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন। সংক্ষেপে এতটুকু বলা যেতে পারে যে, ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ. (৩৭০হি.)-এর কিতাবটি আহকামুল কুরআন বিষয়ে মৌলিক, প্রাচীন ও বিস্তৃত একটি কিতাব। ফিকহু আহকামিল কুরআন ছাড়াও এই কিতাবে তাফসীর, হাদীস, উসূলে হাদীস ও উসূলে ফিকহসহ বিভিন্ন ইলমের বৈচিত্রময় সমাবেশ ঘটেছে। এই কিতাবের একটি দীর্ঘ ভূমিকাও লিখেছেন, যা আলফুসূল ফিলউসূল নামে চার খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এটি উসূলে ফিকহেরও স্বতন্ত্র একটি কিতাব। এমনিভাবে আলইতকান কিতাবটিও উলূমুল কুরআন বিষয়ে একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। উল্লেখিত উভয় কিতাবই উলূম ও মাআরিফের ভাণ্ডার। তবে আলোচনাগুলো বোঝা ও আত্মস্থ করার জন্য উভয় কিতাবের ভাষা ও উসলুবের সাথে পরিচিত হতে হবে। এই ক্ষেত্রে হযরত থানভী রাহ. যে কোনো দরসী কিতাব বোঝার জন্য যে সাধারণ পরামর্শ দিয়েছেন প্রথমত তার উপর আমল করতে হবে। তিনি বলেন, তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া চাই : এক. সবকের পূর্বে মুতালাআ করা। দুই. সবক বুঝে পড়া, বোঝা ছাড়া সামনে না বাড়া। তিন. সবক পড়ার পর কমপক্ষে একবার তাকরার করা। চাই একাকী হোক কিংবা জামাতে। (উস্তাদ ওয়া শাগরিদ কে হুকুক পৃ. ১৪৯) দ্বিতীয়ত এই চেষ্টা করতে হবে যেন এই কিতাবগুলোর ফন্নী বহছসমূহ ফন্নী উসূল ও আন্দায মোতাবেক বোঝার যোগ্যতা পয়দা হয়। এইজন্য সংশ্লিষ্ট ফনের সঙ্গে মুনাছাবাত রাখেন এমন কোনো উস্তাদের নেগরানীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বহছ চিহ্নিত করে মুযাকারা ও তাকরার করে নেওয়া প্রয়োজন। এরপর তার খোলাসা মৌখিক ও লিখিত আকারে তার সামনে পেশ করবেন। তৃতীয়ত এই দুটি কিতাবের উসলুব ছাড়াও মূল ফনের সাথে পরিচিতি অর্জন করতে হলে আহকামুল কুরআনের জন্য মুহাম্মাদ আলী সাবুনীকৃত রাওয়ায়েউল বয়ান এবং ইতকানের জন্য তাহির জাযায়েরীকৃত আততিবয়ান লিবা যিল মাবাহিসিল মুতাআল্লিকা বিলকুরআন আলা তরীকিল ইতকান’ মাঝে মাঝে মুতালাআ করে সহযোগিতা নিতে পারেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আনিস বেদার - চট্টগ্রাম

প্রশ্ন

ক) আমি আগামী বছর জালালাইন-মিশকাত জামাতে পড়ব ইনশাআল্লাহ। আমাদের মাদরাসায় উক্ত জামাতে তাফসীরে জালালাইন, মিশকাতুল মাসাবীহ, নুখবাতুল ফিকার, শরহুল আকাইদ, আলখিয়ালী আলা শরহিল আকাইদিন নাসাফিয়্যাহ ও আকীদাতুত তাহাবী কিতাব পড়ানো হয়। এই কিতাবগুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য কোন কোন শরাহ মুতালাআ করতে পারি জানালে কৃতজ্ঞ হব। এ বিষয়ক আরবী, উর্দূ ও বাংলা ভাষার কিছু অনুবাদ ও শরহগ্রন্থের তালিকা জানালে ভালো হয়।
খ) ...।

উত্তর

ক) আসলে এইসব কিতাবের কত শরহ, অনুবাদ ও নোট বের হয়েছে তা আমার নিজেরও জানা নেই। আর তার তেমন দরকারও নেই। প্রতিদিনই তো কত ধরনের নোট বাজারে আসছে। আসলে প্রয়োজন মুতকান শরহ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থের, যা কিতাব হল করা, ফনের সাথে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি এবং মুসান্নিফের মাকসাদ নির্ধারণে সহায়তা করে। একজন তালিবে ইলম এই ধরনের শরহ সংগ্রহ করতে পারে এবং পড়তে পারে। যাই হোক, প্রশোক্ত কিতাবগুলোর জন্য উল্লেখিত মানে শরহ-ই খোঁজ করুন। এই জন্য আলকাউসারের বিগত সংখ্যাগুলোর সহায়তা নিন। কিন্তু একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন যে, একজন তালিবে ইলমের এই পরিমাণ কিতাবী ইসতিদাদ অবশ্যই থাকা উচিত যে, সে কোনো ধরনের শরহের সাহায্য ছাড়াই কিতাব হল করতে পারে। শরহ প্রয়োজন তো হয় মূলের কোনো কথা একেবারে অস্পষ্ট হলে তা হল করা কিংবা মূলের চেয়ে অতিরিক্ত কোনো ফায়দা হাসিলের জন্য। তাই সরাসরি মূল কিতাব হল করার জন্য মেহনত না করে একজন তালিবে ইলমের শরহের পেছনে পড়ে থাকা কোনোমতেই উচিত নয়। আর নোট জাতীয় বইপত্রের পেছনে পড়ার তো প্রশ্নই আসে না। খ) অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা যদি না থাকে তাহলে আল্লাহর উপর ভরসা করে আপনি চিল্লায় বের হতে পারেন। আর কুরআন মজীদের হিফয ঠিক রাখার জন্য আপনি এই ব্যবস্থাও করতে পারেন যে, আমীর সাহেবের পরামর্শসাপেক্ষে চিল্লার মধ্যে আপনার যে সব সাথীরা থাকবে, তাদের মধ্যে দু’একজনকে নিয়ে আপনি আলাদা তারাবীর ইন্তিজাম করে নিবেন। জামাতে আপনার মতো আরেকজন হাফেযে কুরআন পেলে তো কোনো কথাই নেই। তবে লক্ষ্য রাখবেন যেন এর দ্বারা অন্য কারো কোনো সমস্যা না হয়। বিশেষত এলাকার মসজিদের মুসল্লীদের। আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মুঈনুদ্দীন - রাহাত হুসাইন তাহফীযুল কুরআন মাদরাসা, মিরপুর-১৩, ঢাকা

প্রশ্ন

ক) আমরা কয়েকজন মিলে দ্বীনের প্রচারের উদ্দেশ্যে আলোর কাফেলা ইসলামী পাঠাগার নামে একটি ইসলামী পাঠাগার গড়ে তুলেছি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের প্রতিষ্ঠানেরও একটি মূলনীতি প্রয়োজন। তাই জানতে চাই, এ বিষয়ে কোনো কিতাবের সাহায্য নিতে হবে কি? অন্যথায় স্বয়ং হুজুর একটি মূলনীতি বাতলে দিলে কৃতজ্ঞ হব।
খ) বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ সৃষ্টিকারী সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমীন প্রতিষ্ঠাতা শহীদ হাসানুল বান্না রাহ.-এর জীবনী জানতে চাই।
গ)দরসে ইবরত পুস্তকের লেখক মুফতী শফী রাহ. মুফতী আযম পাকিস্তান এর জীবনী সম্পর্কিত কোনো কিতাব আছে কি? না থাকলে তাঁর জীবনী জানতে চাই।

উত্তর

ক) আপনি আল্লাহর রহমতে সবেমাত্র হিফয করছেন। এই সময়ে এত ব্যাপক চিন্তাধারা আপনার লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশ করবে বলে আশঙ্কা হয়। খুব বেশি হলে আপনি দূর থেকে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারেন। কিন্তু সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে সংবিধান ও মূলনীতি প্রণয়ন, পাঠাগার পরিচালনা ইত্যাদি কাজে সংশ্লিষ্ট হলে আপনার তালেবে ইলমী যিন্দেগীর মাকসাদ অর্জনে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। অতএব প্রথমে অর্জনের চিন্তা করুন, পরে বিতরণের। আল্লাহ আপনার সহায় হোন।
খ) শায়খ শহীদ হাসানুল বান্না রাহ. জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৩২৪ হিজরী মোতাবেক ১৯০৬ ঈসায়ী সনে মিসরের সীমান্তবর্তী আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চলে। কায়রোর দারুল উলূম মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। এরপর ইসমাঈলিয়া শহরে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের শুরু। সেখানেই তিনি আলইখওয়ানের কার্যক্রম শুরু করেন। যখন তাঁর এই বিপ্লবী দাওয়াত নর-নারী সকলের মাঝে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করে এবং যুবকশ্রেণী সশস্ত্র প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হতে থাকে তখন সরকার ভীত হয়ে তাদের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং বিপ্লবী নেতাদের জেলে বন্দী করে। প্রধান নেতা হাসান আলবান্নার উপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় এবং তাকে নজরবন্দী করা হয়। এরই মাঝে একটি গুপ্ত হামলায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এটি ছিল ১৩২৬ হিজরী মোতাবেক ১৯৪৯ ঈসায়ীর ঘটনা। শাহাদাতকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৩ বছর। তার জীবনের উপর আহমদ আনাস হিযাজীর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রয়েছে روح وريحانة من حياة داع ودعوة নামে।
গ) তাঁর জীবনী নিয়ে মাসিক আলবালাগ-এর আলবালাগ-মুফতীয়ে আযম নম্বর নামে বিশাল একটি সংখ্যা বের হয়েছে। তারই অংশবিশেষ হযরত মাওলানা মুফতী রফী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর হায়াতে মুফতীয়ে আযম এবং হযরত মুাওলানা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর মেরে ওয়ালেদ, মেরে শায়খ নামে দুটি গ্রন্থ ভিন্নভাবেও ছেপেছে। এগুলো পড়ে আপনি তাঁর কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জনতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহী বিন আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইসমাঈল হুসাইন -

প্রশ্ন

ক) আমরা যে উদ্দেশ্যে মাদরাসায় পড়ছি তার অন্যতম হল মানুষের কাছে আল্লাহর দ্বীনকে পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে আমাদেরকে সাধারণত ৪টি ভাষায় এই ইলম শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আরবী, উর্দূ, বাংলা ও ফার্সী। প্রশ্ন হল, যুগ চাহিদানুযায়ী কোনটির উপর কী পরিমাণ দক্ষতা অর্জন করা উচিত।
খ) ইলমে মানতেক কতটুকু প্রয়োজন? কিতাব বোঝার জন্য এই ইলম বোঝা শর্ত কি না?
গ) নাহু-ছরফে কী পরিমাণ পাণ্ডিত্য অর্জন করা জরুরি।

উত্তর

ক) আপনাদের মাদরাসায় যে ভাষাটিকে যতটুকু পরিমাণে পড়ানো হয় এই মুহূর্তে ততটুকু ভালোভাবে পড়া আপনাদের কর্তব্য। আরবী ভাষা দ্বীন ও ইলমের ভাষা। আরবী ভাষা কুরআন, সুন্নাহ ও শরীয়ার মৌলিক জ্ঞান অর্জনের জন্য চাবিকাঠি। তাই তা একজন তালিবে ইলমের কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার দাবী রাখে। সাথে সাথে আপনার আর আপনার কওমের মধ্যকার দাওয়াতী ও দ্বীনী সম্পর্ক তৈরি করতে বাংলা ভাষারও কোনো বিকল্প নেই। আর ভারত উপমহাদেশের আকাবিরদের লেখা অসংখ্য উলূম ও মাআরিফ এখনও রয়ে গেছে উর্দূ ভাষায়। তাদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ার জন্য উর্দূ ভাষারও প্রয়োজন। বাকি রইল ফার্সী ভাষা। দ্বীনের মৌলিক পর্যায়ের কোনো বিষয় এর উপর মাওকূফ নয়, কিন্তু তাসাওউফ, মারেফাত ও হিকমতের অনেক কিছু ফার্সী রচনাবলিতেও রয়েছে। উৎসাহী কারো জন্য এই ভাষা শিক্ষা করাও ফায়দা থেকে খালি নয়। যাই হোক, প্রত্যেক ভাষা অর্জনের মূল মাকসাদ বলে দেওয়ায় আপনি সহজে বুঝতে পারবেন যে, কোনটি অর্জনে কতটুকু মেহনত করা দরকার। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। আমীন।
খ) এ বিষয়ে আলকাউসারে আকাবিরদের হাওয়ালায় লেখার তাওফীক হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে আপনারা উভয়ে তা পড়ে নিন।
গ) নাহু-ছরফ অসীলা পর্যায়ের ইলম। সঠিকভাবে আরবী পড়া, বোঝা ও নির্ভুলভাবে লিখতে পারা তথা আরবী ভাষাজ্ঞানকে সু-সংহত করার জন্যই আরবী ব্যাকরণ বা নাহু-ছরফের প্রয়োজন হয়। অতএব কিতাবী ইসিদাদকে পাকা করার জন্য যতটুকু ব্যাকরণ প্রয়োজন তা প্রত্যেক আলেমে দ্বীনের অর্জন করা জরুরী।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহবুবে এলাহী - চাঁদপুর

প্রশ্ন

আমি একটি মাদরাসায় আততাখাসসুস ফিল ফিকহ বিভাগে অধ্যায়নরত। অনেক আশা নিয়ে ফিকহ বিভাগে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু দিনে দিনে আমার সব আশা দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। কারণ ...।

উত্তর

এই ব্যাপারে কোনো পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপনার সামগ্রিক অবসন্থা বিশেষত কিতাবী ইসতিদাদ সম্পর্কে জানা জরুরি। তাই দ্রুত আপনার তালীমী মুরব্বীর শরণাপন্ন হোন। তিনি এই বিষয়ে আপনাকে সুন্দর পরামর্শ দিতে পারবেন বলে আশা রাখি।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রহমান - সরসপুর, কুমিল্লা

প্রশ্ন

আমি জামাতে শরহেজামী পড়ি। নাহু, ছরফ, বালাগাতে আমার কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। ফারেগ হওয়ার পর ফিকহ পড়ার ইচ্ছা আছে। তাই আগামী বছর আদব পড়ার সাথে সাথে শরহে বেকায়া জামাতে পড়ার ইচ্ছা করেছি। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কামনা করছি।

উত্তর

শরহে বেকায়া জামাতের সাথে সাথে আদবও পড়ার আপনার এই পরিকল্পনাটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আর আদব তো একটি স্বতন্ত্র বিষয়। এই বিষয়টি নাহু-ছরফের দুর্বলতা দূরীকরণের জন্য নয়। যেকোনো ভাষার সাহিত্য এক জিনিস আর ব্যাকরণ ভিন্ন জিনিস। যাই হোক, এখন আপনার প্রধান কর্তব্য হল, কিতাবী ইসতিদাদ তৈরিতে মনোনিবেশ করা। এক্ষেত্রে প্রশ্নে বর্ণিত সমস্যাটিকে যদি বাধা মনে হয় তাহলে আলকাউসার জুমাদাল উলা ৩১, মে ১০ সংখ্যার পরামর্শ অনুযায়ী আমল শুরু করুন। আপনার পূর্ণ ইতমিনানের জন্য প্রয়োজনে ০১৭১২-৮৪১৮৪৭ নাম্বারে শুক্রবার ছাড়া অন্য যেকোনোদিন বেলা ১১টা থেকে ১২ টার মধ্যে যোগাযোগ করতে পারেন।

শেয়ার লিংক