শাবান-রমজান ১৪৩১ || আগস্ট-সেপ্টেম্বর ২০১০

মুহাম্মাদ আবু দাউদ - মাদানী নগর, ঢাকা

প্রশ্ন

নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম এবং আসলাফে উম্মতের প্রতি যাদের অন্তরে, আমাদের ধারণায়, পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে, তাদের লেখায়ও দেখি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, রাযিয়াল্লাহু আনহু ও রহমাতুল্লাহি আলাইহ না লিখে তাঁরা নবী, সাহাবী ও সালাফের আলোচনা করেন। উদাহরণস্বরূপ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এর কাসাসুন নাবিয়্যিন ও আলকিরাআতুর রাশিদার কথা উল্লেখ করা যায়। তো এ অবস্থায় তরজমা করার সময় আমরা কী করব? মূলে যেভাবে আছে সেভাবেই বলব? নাকি উপযোগী দোআ উচ্চারণ করে ইবারতের অর্থ করব? উপরন্তু অনুশীলনের উদ্দেশ্যে এ ধরনের লেখার আদলে যখন নিজেরা নতুন লেখা তৈরি করব তখন নিজেদের লেখায় তাদের নাম কীভাবে লিখব? এ ব্যাপারে মূলনীতি কী জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আরে ভাই এটা তো কাতেব আর প্রকাশকের উদাসীনতা কিংবা কাগজ বাঁচানোর খোঁড়া ফন্দি হতে পারে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনটাই হয়ে থাকে। আবার ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. কখনো নবীজীর উপর সালাত ও সালাম মুখে উচ্চারণ করে নিতেন। কলমে লিখতেন না। কিন্তু অন্যান্য সালাফ লিখায় লিখতেন, সঙ্গে মুখেও উচ্চারণ করতেন। সালাত-সালাম, তারাজ্জী ও তারাহহুম লেখায় এবং কথায় বর্জন করা অনুচিত। বিশেষত সালাত-সালাম তো পূর্ণাঙ্গ লেখা ও বলা উচিত। সময়ও কাগজস্বল্পতার অজুহাত এক্ষেত্রে একান্ত না-বরকতী ও মাহরূমীর কারণ হতে পারে। আর এজন্য من صلى علي واحدة صلى الله عليه عشرا খোশখবরী যেমন রয়েছে তেমনি البخيل من ذكرت عنده ولم يصل علي এর মতো ধিক্কারও রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অনেক উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। এটা খুবই আফসোসের বিষয়। হাদীসের সব কিতাবের প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো দেখুন, কাগজ-কলম-কালির যথেষ্ট সমস্যা সেই প্রাচীন যুগে ছিল। তবুও তাঁরা একবারের জন্যও এই বিষয়ে কাপর্ণ্যের পরিচয় দেননি। অথচ প্রতি লাইনে লাইনে তা তাকরার হয়েছে। আল্লামা খতীব বাগদাদী রাহ.-এর কিতাব আলজামে (১/২৭০-১৭২) এ এরকম একাধিক ঘটনা রয়েছে যে, কোনো মুহাদ্দিস ইন্তেকাল করলেন। অন্য কোনো মুহাদ্দিস তাকে স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি সবুজ-সুন্দর কাপড় পরে নায-এর সাথে পায়চারী করছেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহ আপনার সাথে কী মুআমালা করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। প্রশ্ন করা হল, কী আমলের বদৌলতে? তিনি বললেন, আমি হাদীস লিখতাম। যখনই আমার সামনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম আসত আমি প্রত্যেক বারই (পূর্ণাঙ্গভাবে) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখতাম। আল্লাহ শুধু এরই বদৌলতে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কবি খুব সুন্দর বলেছেন- ما ہرچہ خواندہ ايم فراموش كردہ ايم الا حديث يار كہ تكرار مى كنيم অতএব যতবারই নবীজীর নাম আসুক সংক্ষেপে নয়; বরং পূর্ণাঙ্গভাবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখা উচিত।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন