আতাউল গণী ওসমানী - বগুড়া

৫৮৬৬. প্রশ্ন

আমি এক তালীমে শুনেছি, মাথা মাসেহ করার সুন্নত তরিকা হল, উভয় হাতের কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা আঙ্গুল মাথার অগ্রভাগে রেখে পেছন দিক টেনে আনবে এবং শাহাদাত আঙ্গুল, বৃদ্ধাঙ্গুল ও উভয় হাতের তালু আলাদা রাখবে, এরপর উভয় হাতের তালু দ্বারা মাথার দুই পার্শ্ব এবং বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কানের পিঠ ও শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কানের ভেতরের অংশ মাসেহ করবে। এখন মুফতী সাহেবের নিকট জানার বিষয় হল, মাথা মাসেহ করার উক্ত পদ্ধতি সুন্নতসম্মত কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নে মাথা মাসেহ করার যে পদ্ধতি বলা হয়েছে তা ঠিক নয়; বরং মাথা মাসেহ করার সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হল, মাসেহের শুরু থেকেই উভয় হাত পুরোপুরি ব্যবহার করবে। হাতের কোনো অংশ পৃথক রাখবে না। আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

ثُمّ مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ، فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ، بَدَأَ بِمُقَدّمِ رَأْسِهِ حَتّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ، ثُمّ رَدّهُمَا إِلَى المَكَانِ الّذِي بَدَأَ مِنْهُ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত দ্বারা মাথা মাসেহ করলেন- উভয় হাত সামনে থেকে পেছনে এবং  পেছন থেকে সামনে টেনে নিলেন, মাথার অগ্রভাগ থেকে মাসাহ শুরু করলেন এবং উভয় হাত ঘাড় পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। অতঃপর উভয় হাত পুনরায় পেছন থেকে মাথার অগ্রভাগ পর্যন্ত টেনে নিলেন। (সহীহ বুখারী, বর্ণনা ১৮৫)

-ফাতহুল কাদীর ১/১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪০; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭; রদ্দুল মুহতার ১/১২১; আসসিআয়া ১/১৩২

শেয়ার লিংক

হুমায়রা - সদর, সিলেট

৫৮৬৭. প্রশ্ন

১. আমার সাধারণত প্রতি মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত মাসিক হয়ে থাকে। কিন্তু মাঝেমধ্যে নির্ধারিত দিনের এক দিন আগে স্রাব শুরু হয়ে ৯ তারিখ বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমার মাসিক কত দিন ধরা হবে?

২. গত মাসে ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত আমার মাসিক হয়। কিন্তু এ মাসে ৩০ তারিখ থেকে স্রাব শুরু হয়ে ১০ তারিখ পর্যন্ত চলতে থাকে। তাই এই মাসে আমার মাসিক কত দিন ধর্তব্য হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি কখনো অভ্যাসের এক দিন আগে স্রাব শুরু হয়ে অভ্যাস অনুযায়ী ৯ তারিখে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে মোট ১০ দিন স্রাব চালু থাকার কারণে পুরো সময়টাই হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।

২. এ মাসে যেহেতু অভ্যাসের বিপরীতে ৩০ তারিখ থেকে স্রাব শুরু হয়ে ১০ তারিখ পর্যন্ত চালু ছিল। তাই শুরু ও শেষ মিলে ১০ দিনের বেশি স্রাব থাকার কারণে আপনার অভ্যাসের দিনগুলোই হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।  বাকি দুই দিন অর্থাৎ ৩০ তারিখ ও ১০ তারিখ ইস্তেহাযা ধরা হবে। সুতরাং উক্ত দুই দিনের নামায কাযা করে নিতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৮৮; আলমুহীতুর রাযাবী ২/১০৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৪১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩২; ফাতহুল কাদীর ১/১৫৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২০৬

শেয়ার লিংক

তালহা সিদ্দিক - মহাখালী, ঢাকা

৫৮৬৮. প্রশ্ন

আমাদের বাড়ি জামালপুর। আমার মামার বাড়ি খুলনা। আমার মামা একজন বড় আলেম। একবার তিনি দুই-তিন দিনের জন্য আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। জুমার দিন আমাদের আবেদনের ফলে তিনি জুমা পড়ান। নামাযের পর একজন আমাকে বললেন, হুজুর তো মুসাফির। আর মুসাফিরের উপর তো জুমা পড়াই ফরয হয় না। তাহলে হুজুরের জুমা পড়ানোটা কি ঠিক হল? মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, মুসাফির কি জুমার নামাযে ইমামতি করতে পারে?

উত্তর

মুসাফিরের উপর জুমার নামায ফরয নয়; কিন্তু তার জন্য জুমা আদায় করা জায়েয এবং জুমার ইমামতি করাও জায়েয। অতএব মুসাফির অবস্থায় আপনার মামার জুমার ইমামতি করা ঠিক হয়েছে এবং সকল মুসল্লীর জুমা সহীহ হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৫৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৩৩; আলইখতিয়ার ১/২৭৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫৫৭

শেয়ার লিংক

রাইয়ান - টেকনাফ

৫৮৬৯. প্রশ্ন

আমার বাড়ি টেকনাফ। এক সপ্তাহের জন্য আমি ময়মনসিংহ আসি। যোহরের নামাযের সময় মসজিদে ইমামের অনুসরণ করে চার রাকাত পড়ছিলাম। কিন্তু দুই রাকাত পড়ার পর আমার ওযু চলে যায়। ভিড়ের কারণে  আমি মসজিদ থেকে বের হতে পারিনি। মুহতারামের কাছে জানতে চাই, আমি উক্ত যোহরের নামায কি চার রাকাত পড়ব, নাকি দুই রাকাত? আর কাযা আদায় করলে কী করব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যোহরের নামাযটি একাকী আদায় করলে মুসাফিরের নামায হিসেবে দুই রাকাত কসরই আদায় করতে হবে। কোনো ওজরে ওয়াক্তের মধ্যে পড়া সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রেও দুই রাকাতই কাযা করবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১০৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২০১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৫; ফাতহুল কাদীর ২/১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২; রদ্দুল মুহতার ২/১৩০

শেয়ার লিংক

জামালুদ্দীন - বাগেরহাট

৫৮৭০. প্রশ্ন

আমি একজন বাস চালক। বাগেরহাট শহরে আমার বাসা। প্রতিদিন বাগেরহাট থেকে ঢাকা যাত্রী নিয়ে যাই। ওই দিনই আবার বাগেরহাট ফিরে আসি। ঢাকা শহরে আমার কোনো বাসা-বাড়ি নেই। ঢাকাতে অবস্থানের সময়টুকু সাধারণত বাসে এবং বাস কাউন্টার-রুমে বসেই কাটাই। আসর এবং মাগরিবের নামায সাধারণত আমার ঢাকাতেই পড়তে হয়।

হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, ঢাকাতে অবস্থানের এই সময়টুকুতে কি আমার ওপর মুসাফিরের হুকুম প্রযোজ্য হবে? প্রতিদিনই কি আমাকে কসর আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ঢাকাতে অবস্থানই করেন না, তাই আপনি ঢাকাতে মুসাফির হিসেবে থাকবেন। এক্ষেত্রে চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়তে হবে। তবে যদি আপনি কোনো মুকীমের পেছনে ইক্তিদা করেন তাহলে আপনাকে তার সাথে পূর্ণ চার রাকাতই আদায় করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/২৩২; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৫৭

শেয়ার লিংক

হুসাইন আহমাদ - মাগুরা

৫৮৭১. প্রশ্ন

আমি দোকানে টাইপের কাজ করি। বিভিন্ন সময় কুরআনের আয়াতও টাইপ করতে হয়। সেদিন টাইপ করার সময় এক ভাই আমাকে বলল, সিজদার আয়াত মুখে উচ্চারণ না করে শুধু টাইপ করলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। বিষয়টা আমার কাছে কেমন লাগছে।

তাই জানতে চাই, আসলেই কি সিজদার আয়াত টাইপ করার দ্বারা সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না? জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

না, সিজদার আয়াত মুখে উচ্চারণ না করে শুধু টাইপ করা বা লেখার দ্বারা সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে না। কেননা, শুধু লেখার দ্বারা সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয় না।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০৯

শেয়ার লিংক

আবদুল হক - সাভার, ঢাকা

৫৮৭২. প্রশ্ন

সেদিন একজনের কাছে শুনলাম, জুমার দিন নাকি সফরে বের হওয়া মাকরূহ। আমি একথা আগে শুনিনি। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত কথাটি কি সঠিক?

উত্তর

মাসআলাটি এত ব্যাপক নয়; বরং এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা হল, পথে জুমার নামায পড়া সম্ভব না হলে জুমার ওয়াক্ত হওয়ার পর শরীয়তসম্মত ওজর ছাড়া সফরে বের হওয়া মাকরূহে তাহরীমী।

আর জুমার দিন জুমার ওয়াক্ত হওয়ার আগে এবং জুমার পরে সফরে বের হতে কোনো অসুবিধা নেই। তদ্রƒপ পথে জুমার নামায পড়ার সুযোগ থাকলে জুমার ওয়াক্ত হওয়ার পরও সফরে বের হওয়ার অনুমতি আছে।

-মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৫৫৩৬; আততাজরীদ, কুদুরী, ২/৯৪০; আলহাবিল কুদসী ১/২৪১; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৬৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৬৫; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৮৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৬২

শেয়ার লিংক

আহনাফ উবায়েদ - মৌচাক, ঢাকা

৫৮৭৩. প্রশ্ন

কখনো কখনো মসজিদে যোহরের চার রাকাত সুন্নত পড়া অবস্থায় জামাত শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে চার রাকাত সুন্নত শেষ করে তারপর জামাতে শরীক হওয়া উচিত, নাকি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দ্রুত জামাতে শরীক হওয়া উচিত? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত পড়া অবস্থায় জামাত শুরু হয়ে গেলে দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরীক হয়ে যাবে। তবে যদি দুই রাকাত পড়ে ফেলার পরে তৃতীয় রাকাত শুরু করে দেয় তাহলে চার রাকাত পূর্ণ করে তারপর জামাতে শরীক হবে। আর এক্ষেত্রে ছোট ছোট সূরা দ্বারা দ্রুত নামায সমাপ্ত করবে।

প্রকাশ থাকে যে, জামাতের পূর্বে সুন্নত পড়ার সময় আছে কি না তা দেখে নামাযে দাঁড়ানো উচিত। কেননা জামাতের কাতারে দাঁড়িয়ে কিংবা কাছাকাছি সুন্নত বা নফল পড়াটাও মাকরূহ।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৪৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৪৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সায়ীদ - ফরিদপুর

৫৮৭৪. প্রশ্ন

গতকাল এশার নামাযের কেরাতে ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করেন। কিন্তু সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায়ের পূর্বেই তিনি নামায ছেড়ে দিয়ে বলেন যে, কোনো কারণে নামায নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে নামায আবার পড়তে হবে। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, এখন কি আমাদেরকে উক্ত সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে হবে?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু নামাযটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং এর আগে সিজদায়ে তিলাওয়াতটি আদায় করা হয়নি তাই উক্ত সিজদায়ে তিলাওয়াত প্রত্যেকে নামাযের বাইরে পৃথকভাবে আদায় করে নেবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/১২২; মাজমাউল আনহুর ১/২৩৪; জামেউর রুমূয ১/২৪২; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১১

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - শরীয়তপুর

৫৮৭৫. প্রশ্ন

মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে নিম্নোক্ত দুটি বিষয়ের উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন।

ক. মৃত ব্যক্তির কাফনের সময় কোন্ কোন্ জায়গায় আতর বা সুগন্ধি লাগাবে? কাফনের কাপড়ের উপর আতর লাগাবে কি না?

খ. দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী অসুস্থ স্ত্রী মৃত্যুর আগে নিজের মহর মাফ করে দিয়েছে। তা কার্যকর হবে কি?

উত্তর

ক. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর কাফনের উপর রেখে তার মাথা এবং দাড়িতে সুগন্ধি লাগাবে। তদ্রƒপ যেসব অঙ্গ দ্বারা সিজদা করা হয় অর্থাৎ কপাল, নাক, উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের পাতায়ও সুগন্ধি লাগাবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

يُوضَعُ الْكَافُورُ عَلَى مَوْضِعِ سُجُودِ الْمَيِّتِ.

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সিজদার অঙ্গসমূহে كَافُور (বিশেষ সুগন্ধি) লাগাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১১১৩৩)

ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আতা ইবনে আবী রাবাহকে জিজ্ঞাসা করলাম-

أَيّ الْحِنَاطِ أَحَبّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: الْكَافُورُ.

কোন্ সুগন্ধি আপনার কাছে অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, কাফুর (বিশেষ সুগন্ধি)। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৬১৪৬)

আল্লামা ইবনে মানযুর রাহ. বলেন, আতা রাহ.-এর উপরোক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে, প্রত্যেক বস্তু, যা মৃতের জন্য সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয় যেমন, যারিরাহ (সুগন্ধিবিশেষ), মেশক, আনবর, কাফুর ইত্যাদি সবই হানুতের অন্তর্ভুক্ত। (লিসানুল আরব ৩/৩৬০)

কাফনের কাপড়ের উপর সুগন্ধি লাগানোর কথা হাদীস-আসারে পাওয়া যায় না। তাই এ থেকে বিরত থাকবে। -কিতাবুল আছল ১/৩৪৮; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/১৯১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬১; আলমাদখাল, ইবনুল হাজ¦ ৩/২৪১; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৭

খ. মৃত্যুশয্যায় থাকা অসুস্থ নারী অসুস্থ অবস্থায় অনাদায়ী মহর মাফ করে দিলে তা কার্যকর হয় না। এ সময়ের দান বা ক্ষমা করা ওসিয়তের অন্তর্ভুক্ত। আর ওয়ারিশের জন্য (আলোচ্য ক্ষেত্রে স্বামী) ওসিয়ত কার্যকর হতে হলে অন্যান্য ওয়ারিশের সম্মতির প্রয়োজন হয়। তাই মহিলার অন্য ওয়ারিশগণ সম্মতি না দিলে ঐ মহর মাফ হবে না। -আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/১৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩১৩; আননাহরুল ফায়েক ৩/৫২৩; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ২/৩১৫, ২/৫৭; রদ্দুল মুহতার ৩/১১৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাসেল - মানিকগঞ্জ

৫৮৭৬. প্রশ্ন

কয়েক মাস আগে আমাদের এলাকার এক লোক ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। লোকটি অনেক সৎ ছিল। পারিবারিক ঝামেলার কারণে আত্মহত্যা করে ফেলে। তারপর এলাকার লোকজন কেউ জানাযা পড়তে রাজি হয়নি। মসজিদের ইমাম সাহেবও তার জানাযা পড়াননি। অবশেষে তার পরিবারের কিছু লোক অন্য একজনকে ইমাম বানিয়ে জানাযা পড়ে দাফন করেন। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া কি নাজায়েয?

উত্তর

আত্মহত্যা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। তবে কোনো মুসলমান আত্মহত্যা করলে তারও জানাযা পড়তে হবে। ইমরান রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

سَأَلْتُ إبْرَاهِيمَ النّخَعِيّ عَنْ إنْسَانٍ قَتَلَ نَفْسَهُ أَيُصَلّى عَلَيْهِ؟ قَالَ : نَعَمْ، إنّمَا الصَّلاَةُ سُنّةٌ.

আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে প্রশ্ন করলাম, আত্মহত্যাকারীর জানাযা কি পড়া হবে?

তিনি বললেন, হাঁ, পড়া হবে, আর এটাই নিয়ম। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১১৯৯০)

তবে যেহেতু প্রকাশ্যে কবীরা গুনাহের মাধ্যমে মারা গেছে, তাই তার জানাযায় সমাজের গণ্যমান্য ও দ্বীনী বড় ব্যক্তিত্বগণ অংশগ্রহণ করবেন না। যাতে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

-মুখতাসারু ইখতিলাফিল উলামা ১/৩৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৮৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৩২; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ৩৩০

শেয়ার লিংক

আব্বাস - বরিশাল

৫৮৭৭. প্রশ্ন

আমার ভাগিনার আর্থিক অবস্থা খারাপ দেখে ছোটখাটো একটা ব্যবসা ধরার জন্য ৭০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছিলাম। তখন ওর সাথে কথা হয়েছিল, তিন বছরের মধ্যে সব টাকা পরিশোধ করে দেবে। কিন্তু কোনো এক কারণে ব্যবসায় লস খেয়ে ঋণ পরিশোধের কোনো সম্ভাবনা না দেখে তাকে মাফ করে দিই এবং তাকে একদিন ডেকে বলি, ঠিক আছে, তোমার ওই ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এ নিয়ে কোনো টেনশন করার দরকার নেই।

মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, ঋণের পূর্ণ টাকা মাফ করে দেওয়ার পরও কি আমাকে এখন ওই টাকার উপর বিগত তিন বছরের যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

আপনার ভাগিনা যেহেতু দরিদ্র তাই ঋণের পুরো টাকা মাফ করে দেওয়ার কারণে উক্ত টাকার বিগত বছরের যাকাত আদায় করতে হবে না। কেননা, কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করে দিলে সেই ঋণের টাকার উপর বিগত বছরের যাকাত অনাদায়ী থাকলে তাও আদায় হয়ে যায়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২০৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১; মাজমাউল আনহুর ১/২৯০

শেয়ার লিংক

উসামা - মানিকগঞ্জ

৫৮৭৮. প্রশ্ন

আমি একজন সাধারণ মানুষ। ছোট্ট একটি চাকরি করি। এতেই মোটামুটিভাবে আমার সংসার চলে। আমার কাছে যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। একদিন আমি লটারি ধরি। তাতে দুই লক্ষ টাকা পেয়ে যাই। পরবর্তীতে জানতে পারি, লটারিতে পাওয়া টাকা হারাম। তাই এ টাকা গরীব-অসহায়দের দেওয়ার জন্য রেখে দেই। আমি আর এ টাকা খরচ করিনি। কিন্তু আমার কাছে থাকতেই এ টাকার ওপর বছর পূর্ণ হয়ে যায়। এখনো তা কাউকে দিতে পারিনি।

মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এখন কি আমাকে এ টাকার যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

না, লটারির এ টাকার যাকাত নয়, বরং এই টাকার পুরোটাই আপনাকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে। কেননা যাকাত আসে হালাল মালের উপর। যার পরিমাণ ২.৫%। আর হারাম মালের পুরোটাই সদকাযোগ্য। এক্ষেত্রে শুধু ২.৫% দেওয়া যথেষ্ট নয়।

-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/৮৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২৩৩; শরহু মানযুমাতি ইবনি ওহবা ১/৭৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৯১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আরিফ জামীল - সাভার, ঢাকা

৫৮৭৯. প্রশ্ন

আমার এক গরীব বন্ধু কিছুদিন আগে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখন আমি আমার যাকাতের কিছু টাকা তাকে দিতে চাচ্ছি। তবে যাকাতের কথা বলে দিলে সে তা গ্রহণ করতে সংকোচ করবে। তাই আমি তাকে যাকাতের টাকা হাদিয়ার কথা বলে দিতে চাই। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, উপরোক্ত সূরতে আমার যাকাত আদায় হবে কি?

 

উত্তর

যাকাতের টাকা হাদিয়া বলে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। কেননা যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাতের নিয়তে দেওয়াই যথেষ্ট। গ্রহীতাকে যাকাতের কথা বলে দেওয়া জরুরি নয়।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ এমদাদ - খুলনা

৫৮৮০. প্রশ্ন

অধিক সওয়াবের আশায় আমাদের পরিবারের যাকাত ফিতরা সবসময় রমযান মাসেই আদায় করা হত। কিন্তু আমি সেদিন এক বইতে পড়েছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

জানার বিষয় হল, বিগত বছরগুলোতে যে আমাদের পরিবারের সদকায়ে ফিতর রমযান মাসে অগ্রিম আদায় করা হয়েছে তা কি ঠিক হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাযে বের হওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَمَرَ بِزَكَاةِ الفِطْرِ قَبْلَ خُرُوجِ النّاسِ إِلَى الصّلاَةِ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে ঈদের নামায আদায়ের জন্য বের হওয়ার আগেই সদকায়ে ফিতর আদায় করার আদেশ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫০৯)

হাকাম রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانُوا يَسْتَحِبّونَ إخْرَاجَهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ.

তারা (সাহাবীগণ রা.) ঈদের নামাযের আগেই সদকায়ে ফিতর আদায় করা পছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৪৩১)

তবে যদি কেউ তা রমযানে আদায় করে দেয় তাহলেও আদায় হয়ে যাবে। নাফে রাহ. বলেন-

كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُؤَدِّيهَا قَبْلَ ذَلِكَ بِالْيَوْمِ وَالْيَوْمَيْنِ.

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ঈদের এক-দুই দিন আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৬০৬)

এবং আমের রাহ. বলেন-

إِنْ شَاءَ عَجّلَهَا، وَإِنْ شَاءَ أَخّرَهَا.

অর্থাৎ যদি কেউ সদকায়ে ফিতর অগ্রিম আদায় করতে চায় তাও পারবে। আর যদি কেউ পরে আদায় করতে চায় তাও পারবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৪৩১)

সুতরাং আপনাদের পরিবারের সদকায়ে ফিতর রমযানে আদায় করা ভুল হয়নি। তা আদায় করা সহীহ হয়েছে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০২, ১১০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩১; যাদুল ফুকাহা ১/২৪০; আলইখতিয়ার ১/৩৯১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৫

শেয়ার লিংক

হুমাইরা - চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা

৫৮৮১. প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন আমাদের বাসায় কিছু কাজ ছিল। আমি ও আমার শাশুড়ি কয়েক ঘণ্টা কাজ করি। কাজের পর আমি কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। একটু কষ্ট করলেই রোযা না ভেঙে থাকতে পারতাম। কিন্তু তার পরেও আমি পানি খেয়ে রোযা ভেঙে ফেলি। তবে ঘটনাক্রমে ওই দিন আসরের সময় আমার ঋতুস্রাব শুরু হয়। এখন হুজুরের নিকট জানার বিষয় হল, ওই দিন রোযা ভাঙার কারণে কি আমার উপর কাযা ও কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যথাযথ ওজর ছাড়া ইচ্ছাকৃত রোযা ভাঙার কারণে মারাত্মক গুনাহ হয়েছে। এভাবে রোযা ভাঙলে কাযা ও কাফ্ফারা দুটোই ওয়াজিব হয়। কিন্তু ওই দিন সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার হায়েয আসার কারণে কাফফারা মাফ হয়ে গেছে। শুধু উক্ত রোযার কাযা করে নিতে হবে এবং তাওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৫৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৭৫; আলমুহীতুর রিযাবী ২/৪৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৭; ফাতহুল কাদীর ২/২৬২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১২

শেয়ার লিংক

যোবায়ের হাসানাত - ফেনী

৫৮৮২. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে একটি কোম্পানিতে আমার চাকরি হয়। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে আমি মান্নত করেছিলাম, আমার এই চাকরিটা যদি হয়ে যায় তাহলে শুকরিয়াস্বরূপ এক দিন এক রাত ইতিকাফ করব। আলহামদু লিল্লাহ আমার চাকরিটা হয়েছে। তারপর মান্নত অনুযায়ী ইতিকাফের নিয়তে একদিন সকালে মসজিদে চলে যাই। যোহরের সময় এক ব্যক্তি বললেন, আপনি কি রোযা রেখেছেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, মান্নতের ইতিকাফে রোযা আবশ্যক।

মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির কথা কি ঠিক? মান্নতের ইতিকাফে কি রোযা রাখা আবশ্যক?

উত্তর

হাঁ, ঐ ব্যক্তির কথা সঠিক। মান্নতের ইতিকাফের জন্য রোযা রাখা আবশ্যক। রোযা না রেখে শুধু মসজিদে অবস্থানের দ্বারা মান্নতের ইতিকাফ আদায় হবে না। হযরত আলী রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

لَيْسَ عَلَيْهِ صَوْمٌ، إِلاّ أَنْ يَفْرِضَهُ هُوَ عَلَى نَفْسِهِ.

অর্থাৎ ইতিকাফকারী যদি নিজের উপর ইতিকাফকে আবশ্যক করে নেয় তাহলে তার উপর রোযা রাখা আবশ্যক। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৭১৩

সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার করণীয় হল, কোনো একদিন সূর্যাস্তের আগে ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে চলে যাবেন এবং পরবর্তী দিন রোযা রাখবেন এবং ইফতার পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করবেন।

-কিতাবুল আছল ২/১৮৩, ১৯৬; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৪৪৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪৩; মাজমাউল আনহুর ১/৩৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১

শেয়ার লিংক

আহমাদ - ফেনী

৫৮৮৩. প্রশ্ন

আমার বয়স যখন আট বা দশ বছর তখন আমার পিতা-মাতা আমাকে সাথে নিয়ে হজ্ব করতে যান। আমিও হজ্বের সকল কাজ তাদের সাথে সম্পন্ন করি। এখন আমার বয়স ২৫ বছর। গত বছর আমার পিতা ইন্তেকাল করেন। আমি তার পক্ষ থেকে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছি এবং হজ্বের  সামর্থ্য রাখি। জানতে চাচ্ছি, এখন কি আমাকে নতুন করে হজ্ব করতে হবে, নাকি আগের হজ্বই যথেষ্ট হবে?

উত্তর

আপনাকে এখন ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে। নাবালেগ অবস্থায় যে হজ্ব করেছেন তা নফল হজ্ব হয়েছে। সুতরাং বালেগ অবস্থায় সম্পদ পাওয়ার পর যে হজ্ব ফরয হয়েছে সেটা নাবালেগ অবস্থার হজ্ব দ্বারা আদায় হয়ে যায়নি। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا حَجّ الصّبِيّ فَهِيَ لَهُ حَجّةٌ حَتّى يَعْقِلَ، فَإِذَا عَقَلَ فَعَلَيْهِ حَجّةٌ أُخْرَى.

নাবালেগ অবস্থায় যদি কেউ হজ্ব করে  তাহলে বালেগ হওয়ার পর সামর্থ্যবান হলে তাকে পুনরায় হজ্ব করতে হবে। (সহীহ ইবনে খুযাইমা, বর্ণনা ৩০৫০)

-শরহু সহীহি মুসলিম, নববী ৮/১৬০; নুখাবুল আফকার ৬/৬১৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৬

শেয়ার লিংক

আহমাদুল্লাহ - ফেনী

৫৮৮৪. প্রশ্ন

আমি গত বছর হজ্ব করতে যাই। আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। সেখানে অবস্থান করার সময় কয়েকটি কালো পিঁপড়া আমার পায়ে কামড় দেয়। আমি তখন পা ঝেড়ে সেগুলোকে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে ঘষে মেরে ফেলি। জানতে চাচ্ছি, ইহরাম অবস্থায় উক্ত কাজ করার কারণে আমার উপর কি কিছু ওয়াজিব হয়েছে?

উত্তর

উক্ত পিঁপড়াগুলো যেহেতু কামড়ায় তাই মেরে ফেলা অন্যায় হয়নি এবং ইহরাম অবস্থায় মেরে ফেলার দ্বারা কোনো জরিমানাও ওয়াজিব হয়নি। লাইস রাহ. থেকে বর্ণিত-

رَأَى مُجَاهِدًا، وَهُوَ بِعَرَفَةَ لَسَعَتْهُ نَمْلَةٌ فِي صَدْرِهِ فَحَدَبَهَا حَتّى قَطَعَ رَأْسَهَا فِي صَدْرِهِ.

তিনি মুজাহিদ রাহ.-কে আরাফার ময়দানে দেখেছেন- একটি পিঁপড়া তার বুকে কামড় দেওয়ার পর তা ধরে মেরে ফেলেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৮৪৩৪)

-আলজামেউস সাগীর, পৃ. ১৫৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৫৫৯; আলবাহরুল আমীক ২/৯০৩; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৮৯

শেয়ার লিংক

নজরুল ইসলাম - জোয়ার সাহারা, ঢাকা

৫৮৮৫. প্রশ্ন

আমার বোনের স্বামী এক মেয়ে রেখে ইন্তেকাল করেন। মেয়ের চাচারা তাকে তার প্রাপ্য মীরাস থেকে বঞ্চিত করলে তারা আলাদা থাকতে শুরু করে। কয়েকদিন আগে তার বিবাহ হয়। সেখানে তার পুরুষ অভিভাবক হিসাবে একমাত্র আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি তার থেকে ইযন গ্রহণ করি। কিন্তু যিনি বিবাহ পড়িয়েছেন, তিনি দুজন মাহরাম ইযন আনা আবশ্যক বলে জানান। ফলে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাই। এখন আমার প্রশ্ন হল, ইযনের সময় কি দুজন মাহরাম থাকা আবশ্যক?

উত্তর

কনে থেকে বিবাহের ইযন আনার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের যাওয়াই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে দুজন থাকা জরুরি নয়। আর মেয়ের ইযন আনবে তার মাহরাম কোনো পুরুষ। গাইরে মাহরাম পুরুষ যেন ইযন নেওয়ার জন্য মেয়ের সামনে না যায়- এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৫২৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০১; রদ্দুল মুহতার ৩/২১

শেয়ার লিংক

মাহমুদ হাসান - কুমিল্লা

৫৮৮৬. প্রশ্ন

আমি স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বর্তমানে বিবাহ করার জন্য পাত্রী তালাশ করছি। একটি ধার্মিক তবে অতি দরিদ্র পরিবারের একজন মেয়েকে আমার পছন্দ হয়েছে। আমার পিতা এই পরিবারে আত্মীয়তা করতে রাজি হলেও আমার চাচা-মামাগণ রাজি হচ্ছেন না। কারণ, মেয়েরা গরীব। আমার সাথে কুফু মিলবে না। এখন আমার প্রশ্ন হল, ছেলের জন্য কুফুতে বিবাহ করা কি জরুরি?

উত্তর

কুফু বা সমতার আবশ্যকতা মেয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছেলের জন্য নয়। তাই ছেলের জন্য নিজের থেকে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারে বিবাহ করাও জায়েয। অর্থাৎ ছেলের আর্থিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে গিয়ে বিয়ে করলেও তা জায়েয আছে। সুতরাং আপনি চাইলে উক্ত দরিদ্র পরিবারে বিবাহ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার অভিভাবকদের পরামর্শ, বিশেষত মা-বাবার মতামতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

প্রকাশ থাকে যে, এক্ষেত্রে বিবাহ সহীহ হয়ে গেলেও ছেলের জন্য নিজের অবস্থানের প্রতি মোটামুটি মিল রেখে কনের পরিবার পছন্দ করা উচিত। যাতে পরবর্তীতে উভয় পরিবারে একেন্দ্রিক কোনো ঝামেলা না হয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৬২৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/১৩২; হাশিয়াতুশ শুরুমবুলালী আলাদ্দুরার ১/৩৩৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৮৪

শেয়ার লিংক

আব্দুল আলীম - সাতক্ষীরা

৫৮৮৭. প্রশ্ন

আমি ১০ বছরের জন্য একটি দোকান ভাড়া নিই। প্রতি মাসে যার ভাড়া ধরা হয় ৩৫০০/- টাকা। দোকানটি ভাড়া নিয়ে চশমার ব্যবসা করার জন্য এর ডেকোরেশন করি। এতে আমি অনেক টাকা খরচ করি। কিন্তু দোকানে মাল উঠানোর আগে সরকারিভাবে ৫ বছরের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার জন্য নাম আসে। বিদেশে যেহেতু অল্প সময়ে বেশি টাকা আয় করা যায় তাই বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। দোকানটি যেহেতু ডেকোরেশন করে ফেলেছি এবং বিদেশ থেকে আসার পর দোকানটিতে চশমার ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে, তাই মালিকের সাথে দোকানটির ভাড়াচুক্তি বাতিল না করে ৫ বছরের জন্য প্রতি মাসে ৪২০০/- টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে আরেকজনের কাছে ভাড়া দিই। সেও চশমার ব্যবসা করবে। এতে দোকানের মালিকের কোনো আপত্তি নেই।

এখন আমার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে ৭০০/- টাকা বৃদ্ধি করে ওই ব্যক্তির কাছে দোকানটি ভাড়া দিতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা আছে কি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দোকানটি যেহেতু আপনি ডেকোরেশন করেছেন তাই আপনার জন্য বেশি মূল্যে ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া আপনার ডেকোরেশন বাবদ ধর্তব্য হবে।

প্রকাশ থাকে যে, দোকান বা ঘর ভাড়া নিয়ে ডেকোরেশন বা সংস্কারমূলক কোনো কাজ করা ছাড়া অন্যত্র বেশি মূল্যে ভাড়া দেওয়া জায়েয নয়।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৩৭৬৩; কিতাবুল আছল ৪/৪৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪২৫

শেয়ার লিংক

আবদুর রশীদ - ঢাকা

৫৮৮৮. প্রশ্ন

দুই বছর আগে আমার মামাতো ভাই মুদারাবার ভিত্তিতে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে বলে, যে ব্যবসা ভালো মনে করিস তা কর। তখন আমি ঐ টাকা দিয়ে মুদি দোকান করি। এতদিন আমি একাই দোকানটি পরিচালনা করে এসেছি। এখন দোকানে মাল বেশি হয়েছে। বেচা-কেনাও বেড়েছে। তাই এখন দোকানটি পরিচালনা করা আমার একার দ্বারা অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই দোকানে একজন কর্মচারী রেখেছি এবং ব্যবসার টাকা দিয়ে সম্প্রতি পানির জারের ব্যবসা শুরু করেছি। পুরোনো দোকানঘরে জায়গা না হওয়াই ওই জারগুলো রাখার জন্য একটা ঘর ভাড়া নিয়েছি।

এখন আমার জানার বিষয় হল, উক্ত কর্মচারীর বেতন এবং উক্ত ঘর ভাড়া কি আমি ব্যবসার টাকা থেকে দিতে পারব?

উত্তর

ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক হলে মুদারাবা ব্যবসার খরচ দ্বারা কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া জায়েয। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই অতিরিক্ত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে থাকলে অর্থদাতার অনুমতি সাপেক্ষে নেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে তার বেতন-ভাতা ব্যবসার টাকা থেকে দেওয়া যাবে। তদ্রƒপ ব্যবসার মাল রাখার জন্য যে ঘর ভাড়া নিয়েছেন তার ভাড়াও ব্যবসার টাকা থেকে দেওয়া যাবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২২/৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১২২; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ১১/৩৫৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; আলমাআয়ীরুশ শারইয়্যাহ, পৃ. ৩৭৬

শেয়ার লিংক

হাসান - সাতক্ষীরা

৫৮৮৯. প্রশ্ন

আমার ব্যবহৃত পুরাতন অটো রিকশাটি একজনের কাছে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করি। বিক্রির সময় সে আমাকে ৪০ হাজার টাকা দেয়। বাকি ৩০ হাজার টাকা দুই মাসের মধ্যে দেওয়ার কথা হয়। গাড়িটি কেনার সময় তার এলাকায় বন্যার পানি থাকার কারণে গাড়িটি বুঝে নেওয়ার পর আমার গ্যারেজে রেখে দেয়। কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যেই ঐ বন্যার কারণে সেও অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এখন তার নগদ টাকার অনেক প্রয়োজন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সে বাকি ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেও সক্ষম নয়। সে আমাকে অনুরোধ করছিল, যেহেতু সে এখনো গাড়িটি চালানো শুরু করেনি তাই আমি যেন বিক্রি-চুক্তি বাতিল করে গাড়িটি ফেরত নিই। কিন্তু আমি রাজি না হওয়াতে সে গাড়িটি যে দামে কিনেছিল তার থেকে ৫ হাজার টাকা কমে আমার কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছে।

আমার জানার বিষয় হল, আমি কি ওই ব্যক্তি থেকে গাড়িটি এভাবে পুনরায় ক্রয় করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অটো রিকশাটির আংশিক মূল্য (৩০ হাজার টাকা) যেহেতু এখনো বাকি আছে তাই বিক্রিত মূল্য (৭০ হাজার টাকা) থেকে কম মূল্যে আপনার জন্য তা ক্রয় করা জায়েয হবে না। ক্রেতা যদি বাকি টাকা পরিশোধ করতে অক্ষম হয় তাহলে আপনি চাইলে ক্রয়-চুক্তিটি বাতিল করে দিতে পারেন। আর বাতিল করতে না চাইলে তাকে মূল্য পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তার থেকে অতিরিক্ত কিছু নিতে পারবেন না। আর ক্রয়-চুক্তিটি বাতিল করে দিলে তার থেকে গৃহীত পূর্ণ মূল্য ফেরত দিতে হবে। গৃহীত মূল্য থেকে কিছু রেখে দেওয়া জায়েয হবে না। আর ক্রেতার সমস্যার কথা বিবেচনা করে বিক্রয়-চুক্তি বাতিল করা সওয়াবের কাজ। এমন ব্যক্তির ব্যাপারে হাদীস শরীফে অনেক বড় সুসংবাদ এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ أَقَالَ نَادِمًا بَيْعَتَهُ، أَقَالَ اللهُ عَثْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

যে অনুতপ্ত কোনো ব্যক্তির সাথে কৃত বিক্রয়-চুক্তি বাতিল করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫০৩৬)

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/৪৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪২৬, ৫৯৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩৮১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪১৯; ফাতহুল কাদীর ৬/১১৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৭৪

শেয়ার লিংক

খন্দকার আব্দুল্লাহ - সিরাজগঞ্জ

৫৮৯০. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের বাজার থেকে ১২০০ টাকা দিয়ে আমি একটি ডিনার সেট ক্রয় করি। দুদিন পর বিক্রেতার সাথে দেখা হলে আমাকে বলল, ভাই আমি তো ভেবেছিলাম পণ্যটির ক্রয়মূল্য ১১৫০ টাকা। কিন্তু পরে ভাউচারে দেখলাম সেটির ক্রয়মূল্য ১২৫০ টাকা। ফলে পণ্যটি ১২০০ টাকায় বিক্রি করে আমার লস হয়ে গেল। আপনি আমাকে অন্তত আর ৫০ টাকা দিন; তাহলে আমার ক্রয়মূল্যটা উসূল হবে। হুজুরের কাছে জানতে চাই, এমতাবস্থায় আমার জন্য কি তাকে ৫০ টাকা দেওয়া জরুরি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু আপনাদের মাঝে উভয়ের সম্মতিতে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়েছে এবং আপনার পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ধোঁকাও ছিল না। তাই উক্ত বেচা-কেনা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। বিক্রেতার দাবি অনুযায়ী অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা আপনার জন্য আবশ্যক নয়। অবশ্য তার কথা বিশ্বাসযোগ্য হলে তার দাবিকৃত মূল্য দিয়ে দেওয়া উচিত হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ২৩২৮২; ফাতাওয়া কারিইল হিদায়াহ, পৃ. ১১৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/১০২; মাজমূউ রাসাইলি ইবনে আবিদীন ২/৭৯-৮০; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৩৩৫-৩৩৬

শেয়ার লিংক

ওলিউল্লাহ - সাতক্ষীরা

৫৮৯১. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামে একটি মেয়ের সাথে এক ছেলের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে মেয়েটি একটি ছেলে সন্তান প্রসব করে। ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামের লোকেরা ছেলেটির সাথে মেয়েটিকে বিবাহ করিয়ে দেয়। বিবাহের পর তাদের আরো দুটি ছেলে সন্তান হয়। তারা বড় হয়। পূর্বের অবৈধ সন্তানটি এখন আমেরিকায় থাকে।

এখন এই দম্পতির পরের দুই ছেলে জানতে চাচ্ছে, ওই অবৈধ সন্তান কি তাদের মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের থেকে মিরাস পাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওই দম্পতির সন্তানটি যেহেতু অবৈধ সম্পর্কের কারণে হয়েছে তাই ওই সন্তান বাবা থেকে মিরাস পাবে না। হাদীস শরীফে আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

أَيّمَا رَجُلٍ عَاهَرَ بِحُرّةٍ أَوْ أَمَةٍ فَالوَلَدُ وَلَدُ زِنَا لَا يَرِثُ وَلَا يُورَثُ.

যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন নারী অথবা বাদীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হল (এবং এতে কোনো সন্তান জন্ম নিল) তাহলে সেটা জারজ সন্তান। সে ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে না এবং ব্যভিচারীও তার থেকে মিরাস পাবে না। (জামে তিরমিযী, হাদীস ২১১৩)

তবে ওই সন্তান তার মা থেকে মিরাস পাবে এবং ওই মায়ের সন্তান হিসাবে ধর্তব্য হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩৬৪; জামেউল মুযমারাত ৫/৬২৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৯১; মাজমাউল আনহুর ৪/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৭৭

শেয়ার লিংক

নূরে আলম - বরুনা, শ্রীমঙ্গল

৫৮৯২. প্রশ্ন

আমরা দুই ভাই। আমাদের মা প্রায় চার বছর পূর্বে ইন্তেকাল করেন। তারপর আমাদের পিতা পুনরায় বিবাহ করেন। গত মাসে আমাদের পিতা ইন্তেকাল করেন। এখন আমাদের সৎ মা ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আব্বা ইন্তেকালের পূর্বে তার গর্ভস্থ সন্তানের মীরাসের ব্যাপারে কিছু বলে যাননি। এখন আমাদের প্রশ্ন হল, আমাদের সৎ মায়ের গর্ভের সন্তান মীরাস পাবে কি? যদি সে মীরাস পায় তাহলে তার অংশ বাদ রেখে বাকি সম্পদ বণ্টন করা যাবে কি?

উত্তর

আপনাদের সৎ মায়ের গর্ভের সন্তান জীবিত ভূমিষ্ঠ হলে সে অবশ্যই তার পিতার মীরাস পাবে। আর বর্তমান ওয়ারিসগণ মীরাস বণ্টন করতে চাইলে মায়্যেতের একজন পুত্রের সমপরিমাণ মীরাস বাকি রেখে অবশিষ্ট মীরাস বণ্টন করতে পারবেন। পরবর্তীতে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে উক্ত অংশ তার হবে। আর কন্যা সন্তান হলে তার অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট অংশ ওয়ারিশগণের মাঝে মীরাসের নিয়মানুযায়ী বণ্টন করে নেবে। একইভাবে সন্তান মৃত জন্ম হলে সন্তানের জন্য বরাদ্দ অংশ ওয়ারিশগণের মাঝে বণ্টন করা হবে।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৬৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৩০/৫২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৫৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩৮৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/৫০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৫৬

শেয়ার লিংক

মাওলানা আবদুর রহমান - সিলেট

৫৯৯৩. প্রশ্ন

তালিবানে ইলমের আমলী তারাক্কী ও আমলের প্রতি অভ্যস্ত করার জন্য আমরা মাদরাসায় এমন নেযাম করতে চাচ্ছিলাম যে, প্রতি জুমাবার রাতের শেষাংশে সবাইকে জাগ্রত হতে হবে এবং ইনফেরাদীভাবে তাহাজ্জুদ আদায় করতে হবে। তাহাজ্জুদের পর সম্মিলিত যিকির ও দুআর আমল হবে।

 

উল্লেখ্য, শুধু জুমার রাতকে খাছ করার কারণ হল, যেহেতু সপ্তাহের অন্যান্য দিন দরস-তাদরীসের বিষয় থাকে, এজন্য অনেকের কষ্ট হতে পারে। সপ্তাহের অন্যান্য রাতেও ইনফেরাদীভাবে আমল করার প্রতি তারগীব দেয়া হয়। তবে সে দিনগুলোতে কেউ জাগিয়ে দেয় না এবং ইজতেমায়ীভাবে যিকির ও দুআর আমলও হয় না। এখন আমাদের জানার বিষয় হল-

১. এভাবে নফল ইবাদতের জন্য সবাইকে জাগিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?

২. এভাবে সপ্তাহে এক দিন নির্ধারণ করে আমল করা কি ঠিক হবে?

৩. নফল ইবাদতের জন্য এভাবে নেযাম করে আমল করতে বাধ্য করা কি জায়েয হবে?

বিষয়গুলোর দলীলসহ শরয়ী সমাধান প্রদান করতে আপনার সুমর্জি কামনা করছি।

উত্তর

মুস্তাহাব বা নফল ইবাদত পালনের জন্য শরীয়ত তারগীব ও উৎসাহ প্রদান করেছে। তবে এ পর্যায়ের আমল পালনের জন্য ফরয ওয়াজিবের মত চাপ প্রয়োগ করেনি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, মুস্তাহাব ও সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদার মত নফল ইবাদতগুলো শরীয়তে একদম মুবাহ আমলের মত; বরং হাদীস-আসার থেকে প্রমাণিত হয় যে, একজন মুসলিম ফরয-ওয়াজিবের সাথে মুস্তাহাব, নফল আমলও গুরুত্বের সাথে পালন করবে এবং নিজ পরিবার-পরিজন ও অধীনস্থকে তা পালনেও উৎসাহিত করবে। নিজ সন্তানাদিকে সেভাবে তরবিয়তও করবে। এমনকি আমলে অভ্যস্ত করার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে নিজ পরিমণ্ডলে অধীনস্থদের কিছুটা চাপও প্রয়োগ করতে পারবে। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এতে অসুবিধা নেই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের জন্য আলী রা. ও ফাতেমা রা.-কে জাগ্রত করেছেন- তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

إِنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ طَرَقَهُ وَفَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَ لَهُمْ: أَلاَ تُصَلّونَ؟، فَقَالَ عَلِيّ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنّمَا أَنْفُسُنَا بِيَدِ اللهِ، فَإِذَا شَاءَ أَنْ يَبْعَثَنَا بَعَثَنَا، فَانْصَرَفَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حِينَ قَالَ لَهُ ذَلِكَ، وَلَمْ يَرْجِعْ إِلَيْهِ شَيْئًا، ثُمّ سَمِعَهُ وَهُوَ مُدْبِرٌ، يَضْرِبُ فَخِذَهُ وَهُوَ يَقُولُ: وَكَانَ الإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا.

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (অর্থাৎ হযরত আলী রা.) ও রাসূল-কন্যা ফাতিমার কাছে রাতে এলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা নামায (তাহাজ্জুদ) আদায় করছ না?

আলী বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জীবন তো আল্লাহর হাতে। তিনি যখন আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগাতে চান জাগিয়ে দেন। আমি এ কথা বলার পর, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে গেলেন। কথার কোনো উত্তর দিলেন না। যাওয়ার সময় তাঁকে উরুর ওপর আঘাত করে বলতে শুনেছি-

وَ كَانَ الْاِنْسَانُ اَكْثَرَ شَیْءٍ جَدَلًا.

[মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্কপ্রিয়।] -সূরা কাহ্ফ (১৮) : ৫৪]। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৩৪৭)

মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে একবার ডেকে জাগিয়ে তুলেছেন। এরপর তিনি গৃহে ফিরে নামাযে দাঁড়িয়েছেন। যখন তিনি আমাদের সাড়াশব্দ পেলেন না, তখন পুনরায় এসে জাগ্রত করলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে ওঠ এবং নামায আদায় কর...। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭০৫)

যায়েদ বিন আসলাম রাহ. তার পিতা আসলাম রাহ. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-

أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللّيْلِ مَا شَاءَ اللهُ، حَتّى إِذَا كَانَ مِنْ آخِرِ اللّيْلِ،أَيْقَظَ أَهْلَهُ لِلصّلَاةِ. يَقُولُ لَهُمُ: الصّلَاةَ الصّلَاةَ، ثُمّ يَتْلُو هَذِهِ الْآيَةَ وَ اْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَ اصْطَبِرْ عَلَیْهَا ؕ لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا ؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَ ؕ وَ الْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰی

উমর ইবনুল খাত্তাব রা. রাতে বেশকিছু সময় নামায আদায় করতেন। রাত্রের শেষভাগে নিজ পরিবারকে নামায আদায়ের জন্যে জাগিয়ে তুলতেন। তিনি তাদের বলতেন, নামায আদায় কর, নামায আদায় কর। তারপর এ আয়াত পাঠ করতেন-

وَ اْمُرْ اَهْلَكَ بِالصَّلٰوةِ وَ اصْطَبِرْ عَلَیْهَا ؕ لَا نَسْـَٔلُكَ رِزْقًا ؕ نَحْنُ نَرْزُقُكَ ؕ وَ الْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوٰی

[অর্থাৎ আপনার পরিবারের লোকজনকে নামাযের আদেশ করতে থাকুন। নিজেও (এ কষ্টের) জন্য ধৈর্য ধারণ করতে থাকুন। আমি আপনার নিকট রিযিক চাই না। রিযিক তো আমিই আপনাকে দান করি। আখিরাতের সফলতা তো মুত্তাকী লোকদের জন্য।] -সূরা ত-হা (২০) : ১৩২] (মুআত্তা মালেক, হাদীস ৫)

উপরোক্ত বর্ণনাতে যেমনিভাবে পরিবারের লোকদের নফলে উৎসাহিত করার বিষয়টি সামনে আসে, তেমনি তাদের উপর বেশি চাপ না দেওয়ার বিষয়টিও বুঝে আসে। কারণ, উমর রা. নিজে বেশি আগে উঠে নামায শুরু করলেও পরিবারের লোকদের রাতের শেষভাগে ওঠাতেন। মুসনাদে আহমাদে আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

رَحِمَ اللهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللّيْلِ، فَصَلّى،وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ، فَصَلّتْ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ، وَرَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللّيْلِ، فَصَلّتْ، وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَصَلّى، فَإِنْ أَبَى، نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ.

আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির ওপর যে রাতে ঘুম হতে জেগে নামায আদায় করে এবং স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়, অতঃপর সেও নামায আদায় করে। স্ত্রী যদি জাগতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে যেন তার মুখম-লে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ রহম করুন ঐ স্ত্রীলোকের ওপর যে রাতে ঘুম হতে জাগ্রত হয় ও নামায আদায় করে এবং স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়। স্বামী যদি জাগতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে যেন তার মুখম-লে পানি ছিটিয়ে দেয়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৪১০, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৩৪

অপর এক হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. ও আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إِذَاأَيْقَظَالرّجُلُأَهْلَهُ مِنَ اللّيْلِ فَصَلّيَا، أَوْ صَلّى رَكْعَتَيْنِ جَمِيعًا، كُتِبَا فِي الذّاكِرِينَ وَالذّاكِرَاتِ.

কোনো ব্যক্তি যখন রাতের বেলায় নিজ স্ত্রীকে জাগ্রত করে উভয়ে দুই দুই রাকাত নামায আদায় করে তবে তাদেরকে যাকেরীন তথা আল্লাহর স্মরণকারী ও স্মরণকারিণীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩০৯)

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী রাহ. বলেন-

(إذاأيقظالرجلأهله) أي: امرأته أو نساءه وأولاده وأقاربه وعبيده وإماءه.

ব্যক্তি তার পরিবারকে জাগানোর অর্থ হল, তার স্ত্রী, সন্তান, নিকটাত্মীয়, দাস-দাসীদের জাগিয়ে দেয়া। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/২৮২)

অর্থাৎ তাঁর মতে অধীনস্থ লোকগণও أهل -এর অন্তর্ভুক্ত।

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলেন-

وفيه حث عظيم على قيام الليل، حتى إن من لم يقم اختيارا يقام بالإزعاج.

এ হাদীসে তাহাজ্জুদের জন্য বিপুল উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে, যে স্বেচ্ছায় উঠতে পারে না, তাকে ডেকে উঠিয়ে দেওয়া হবে। (শরহু সুনানি আবী দাউদ, আইনী ৫/২১৫)

ইবনুল মালাক রাহ. বলেন-

وهذا يدل على أن إكراهَ أحد على خير يجوزُ، بل يستحب.

এ হাদীস প্রমাণ বহন করে যে, কাউকে (অধীনস্থদের) সৎকর্ম পালনে  কিছুটা চাপ প্রয়োগ করা কেবল জায়েযই নয়; বরং (ক্ষেত্র বিশেষে) তা উত্তম কাজ। (শরহুল মাসাবীহ, ইবনুল মালাক ২/১৬৮)

আরও দ্রষ্টব্য : মিরকাতুল মাফাতীহ ৩/২৭৮

সুতরাং তালিবুল ইলমদের আমলী তারাক্কী ও অভ্যাসের জন্য তাহাজ্জুদ, যিকির-আযকার ও দুআর জন্য সুবহে সাদিকের কিছু আগে জাগিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জায়েয। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা আপত্তিকর নয়।

যে বিশেষ কারণে জুমার রাতে নফল ইবাদতে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাতেও অসুবিধার কিছু নেই। যে হাদীসে জুমার রাতকে কিয়ামুল লাইলের জন্য খাস করতে নিষেধ করা হয়েছে হাদীসব্যাখ্যাকারদের ভাষ্য অনুযায়ী তা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কারণ-

এক. কারো কারো মতে হাদীসে কিয়ামুল লাইল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, পুরো রাত্রি জাগরণ। যার ফলে অনিদ্রা ও ক্লান্তির কারণে জুমার দিনের বিশেষ হুকুম জুমার নামায আদায়ে আলস্য ও উদাসীনতা ভর করে।

দুই. এ নিষেধাজ্ঞা ঐ ক্ষেত্রে যখন কেউ জুমার রাত্রি জাগরণকে আবশ্যক মনে করে করবে। কিন্তু প্রশ্নোল্লিখিত কারণে যদি জুমার রাতকে কিয়ামুল লাইলের জন্য নির্ধারণ করা হয় তবে সেক্ষেত্রে তা হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।

মোটকথা, জুমার রাতে জাগ্রত হওয়া, যিকির আযকার, দুআ মোনাজাত করা জুমার রাতের বিশেষ আমল বা অতিরিক্ত ফযীলত মনে করে যে করা যাবে না- এ বিষয়টি সবার নিকট স্পষ্ট থাকতে হবে; বরং জুমার রাতে মাদরাসার উক্ত আয়োজন ও পদক্ষেপটি ইন্তেযামী মাসলাহাতের কারণেই করা হচ্ছে তাও স্পষ্ট থাকা দরকার।

আরো উল্লেখ্য, তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত করার ক্ষেত্রে কোমলতা ও নম্রতা অবলম্বন করা কর্তব্য। এক্ষেত্রে অসুস্থ বা শারীরিকভাবে দুর্বলদের ছাড় দিতে হবে। আর ঘুম থেকে জাগানোর ক্ষেত্রে প্রহার বা শাস্তির পথ অবলম্বন করা যাবে না; বরং তারগীবের মাধ্যমে তালিবে ইলমদের নফল ইবাদতে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করতে হবে।

শেয়ার লিংক