ফয়সাল - যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

৫২৯৯. প্রশ্ন

আমি একদিন বদনার মধ্যে পানি ভরে বারান্দায় রেখে মিসওয়াক আনতে ঘরে যাই। এসে দেখি আমাদের ঘরের বিড়ালটি বদনা থেকে পানি পান করছে। যেহেতু ঘরের বিড়াল, তাই আমি বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অযু করে নিই। পরবর্তীতে আমার মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়-আসলে কাজটি ঠিক করলাম কি না। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, বিড়ালের ঝুটা পাক না নাপাক। উক্ত পানি দিয়ে অযু করা কি আমার জন্য ঠিক হয়েছে?

উল্লেখ্য, উক্ত পানি ছাড়াও অন্য পানির ব্যবস্থা ছিল।

উত্তর

আপনার অযু ও নামায সহীহ হয়েছে। তবে অন্য পানির ব্যবস্থা থাকতে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি ব্যবহার করা মাকরূহে তানযীহি। অবশ্য যেহেতু এটি নাপাক নয়, তাই তা দ্বারা অযু সহীহ। ইকরিমা রাহ. থেকে বর্ণিত আছে-

أَنّهُ رَأَى أَبَا قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيّ يُصْغِي الْإِنَاءَ لِلْهِرِّ فَتَشْرَبُ مِنْهُ، ثُمّ يَتَوَضّأُ بِفَضْلِهَا.

তিনি আবু কাতাদা আনসারী রা.-কে দেখেছেন, বিড়ালকে পানি পান করার জন্য পানির পাত্র কাত করে দিয়েছেন। বিড়ালটি পানি পান করার পর অবশিষ্ট পানি দ্বারা তিনি অযু করেছেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৪৬)

নাফে রাহ. বর্ণনা করেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنّهُ كَانَ يَكْرَهُ سُؤْر السِّنّوْرِ أَنْ يُتَوَضّأَ بِهِ.

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা অযু করা অপছন্দ করতেন। (আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ১/৪১১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৩৪০)

৩৪০) -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯২; কিতাবুল আছল ১/২২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/২৮২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৫১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/২২৩

শেয়ার লিংক

হাবিবুল্লাহ - চাঁদপুর

৫৩০০. প্রশ্ন

গত ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে আমাদের ঈদগাহ মাঠে এক শূকরের পাল ওঠে ব্যাপক হারে সেখানে মলত্যাগ করে। পরবর্তীতে আমরা সেখানে মেশিন দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পানি প্রবাহিত করি। ফলে আমাদের দৃষ্টিতে নাপাকির কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট থাকেনি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতিতে আমাদের ঈদগাহ মাঠ কি পবিত্র হয়েছে। উল্লেখ্য, পরবর্তীতে মাঠে কোনো পানিও জমে ছিল না; বরং পাশের এক খালে তা চলে যায় এবং মাঠ শুকিয়ে যায়।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঈদগাহে প্রচুর পানি প্রবাহিত করার পর যেহেতু নাপাকির কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট ছিল না এবং পানি শুকিয়েও গিয়েছে, তাই আপনাদের উক্ত ঈদগাহ পবিত্র হয়ে গেছে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৬২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪১; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৪-৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৬

শেয়ার লিংক

হাবীব - খুলনা

৫৩০১. প্রশ্ন

আমি ওযুর মধ্যে সাধারণত পূর্ণ মাথা মাসাহ করি। একদিন তাড়াহুড়োর দরুন পূর্ণ মাথা মাসাহ করতে পারিনি। মোটামুটি অর্ধেকের মত করেছি। মুহাতারামের কাছে জানার বিয়ষ হল, অর্ধেক মাথা মাসাহ করলে ওযু হবে কি? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, অর্ধেক মাথা মাসাহ করলেও মাসাহের ফরয আদায় হয়ে যায়। তাই আপনার ওযু সহীহ হয়েছে। তবে সুন্নত হল, পূর্ণ মাথা মাসাহ করা ।

উল্লেখ্য, সুন্নত ও মুস্তাহাবের প্রতি খেয়াল রেখে ধীরস্থিরভাবে ওযু করা উচিত। কেননা বহু হাদীসে পরিপূর্ণভাবে ওযু করা এবং সুন্দরভাবে ওযু করার প্রতি তাকিদ এসেছে এবং এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছেহযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنْ تَوَضّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ، حَتّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ.

যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে, তার (সমস্ত) শরীর থেকে পাপসমূহ বেরিয়ে যাবে। এমনকি তার নখের নিচ থেকেও। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৫)

অন্য বর্ণনায় হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَلَا أَدُلّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصّلَاةِ بَعْدَ الصّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ.

আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করবো না? যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? (উত্তরে) তাঁরা বললেন, হাঁ, আবশ্যই। তিনি বললেন, (তা হল-) কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণরূপে অযু করা এবং বেশি বেশি মসজিদে যাওয়া এবং এক নামায আদায়ের পর পরবর্তী নামাযের জন্য অপেক্ষায় থাকা। এটাই হল রিবাত (জিহাদের প্রস্তুতি নিয়ে সীমান্ত প্রতিরক্ষার মত)। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫১)

-কিতাবুল আছল ১/৪৬; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪; রদ্দুল মুহতার ১/৯৯

শেয়ার লিংক

ফযলুদ্দীন - সাভার

৫৩০২. প্রশ্ন

একবার আমার হাতের এক অংশ কেটে যায় এবং রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ে। আমি টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে টিস্যুটি পকেটে রেখে দিই। পরে ভুলে টিস্যু পকেটে নিয়েই নামায পড়ি। প্রশ্ন হল, সেই টিস্যু পকেটে নিয়ে নামায পড়ায় আমার নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

উত্তর

উক্ত টিস্যুতে লেগে থাকা রক্তের পরিমাণ যদি এক দিরহাম অর্থাৎ হাতের তালুর গভীরতার চেয়ে বেশি হয় তাহলে আপনার ঐ নামায আদায় হয়নি। আর যদি টিস্যুতে রক্তের পরিমাণ এরচেয়ে কম হয়ে থাকে তাহলে নামায আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু এ ধরনের নাপাক মিশ্রিত বস্তু পকেটে নিয়ে নামায পড়া কিছুতেই সমীচীন নয়। সামনে থেকে এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

-কিতাবুল আছল ১/৫৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৬০; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৩৩; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৭; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫০৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৮

শেয়ার লিংক

খালেদ - খুলনা

৫৩০৩. প্রশ্ন

একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার গেঞ্জির সাথে একটি ছারপোকা লেগে আছে। তার আশপাশে কিছু রক্তও ছড়িয়ে আছে। নামাযের সময় ঘনিয়ে এলে আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই যে, এ রক্তসহ নামায পড়ব কি না। পরবর্তীতে আমার এক বন্ধু বলল, ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়। সুতরাং তাসহ নামায পড়তে কোনো অসুবিধা নেই। তার কথায় আমি সেই রক্তসহ নামায আদায় করি। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, ছারপোকার রক্ত পাক না নাপাক। আমার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে? জানালে উপকৃত হব

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নামায সহীহ হয়েছে। কারণ ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়। শরীর বা কাপড়ে ছারপোকার রক্ত লাগলে তা নাপাক হয় না। অবশ্য রক্তের দাগ বেশি হলে। তা ধুয়ে নেওয়া ভালো বা সম্ভব হলে কাপড় পরিবর্তন করে নেওয়া ভালো।

-কিতাবুল আছল ১/৫৪; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/২৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২২৯; রদ্দুল মুহতার ১/৩২০

শেয়ার লিংক

মাহমুদ - রংপুর

৫৩০৪. প্রশ্ন

আমি একটি মাছের দোকানে কাজ করি। আমার কাজ হল ক্রেতাদের মাছ কেটে দেয়া। অনেক সময় মাছ কাটতে গেলে মাছের রক্ত আমার শরীরে এবং কাপড়ে লেগে যায়। জানার বিষয় হল, কোনো কাপড়ে মাছের রক্ত লাগলে সে কাপড় পরে নামায পড়লে কি নামায সহীহ হবে, নাকি তা ধুয়ে পবিত্র করতে হবে?

উত্তর

মাছের রক্ত অপবিত্র নয়। সুতরাং কাপড়ে মাছের রক্ত লাগলে কাপড় নাপাক হবে না; তা পরিধান করে নামায পড়া যাবে। তবে এমন ময়লা কাপড় নিয়ে নামায না পড়াই ভাল। তাই সম্ভব হলে ধুয়ে নেবে কিংবা কাপড় বদলে নেবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৩৬; কিতাবুল আছল ১/৫৫;আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩২২

শেয়ার লিংক

কাজি রাফি - হাজারীবাগ, ঢাকা

৫৩০৫. প্রশ্ন

আমি ফরয গোসলের সময় নাকে পানি দিতে ও কুলি করতে ভুলে যাই। তারপর ফরয নামায আদায় করি। আমার জানার বিষয় হল, আমাকে কি পুনরায় পূর্ণ গোসল করতে হবে এবং নামায পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্মরণ হওয়ার পর শুধু কুলি করলে ও নাকে পানি দিলেই গোসল সম্পন্ন হয়ে যাবে। নতুন করে পূর্ণ গোসল করতে হবে না। আর এক্ষেত্রে নাকে পানি দেওয়া ও কুলি করার আগে কোনো ফরয-ওয়াজিব নামায আদায় করা হয়ে থাকলে তা পুনরায় পড়ে নিতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২০৭১, ২০৭৩; কিতাবুল আছল ১/৩২; খিযানাতুল আকমাল ১/৩১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৫০; আদ্দুররুর মুখতার ১/১৫৪

শেয়ার লিংক

জুনায়েদ - খুলনা

৫৩০৬. প্রশ্ন

আমার বাড়ী চট্টগাম। মাসের ১ তারিখে ভিসা সংক্রান্ত কাজে ঢাকায় আসি। আসার সময় নিয়ত ছিল কাজটা শেষ হলেই চলে যাব। ঘটনাক্রমে কাজ শেষ হতে হতে বিশ দিন লেগে যায়। আর আমি উক্ত দিনগুলোর চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামায (একাকী আদায় করলে) দুই রাকাত করে আদায় করি। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল-আমার এভাবে নামায আদায় করা কি শরীয়তসম্মত হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যেহেতু ঢাকায় একত্রে ১৫ দিন কিংবা এর বেশি সময় অবস্থানের ইচ্ছা করেননি; বরং কাজ শেষ হলেই আপনার চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল, তাই এ ক্ষেত্রে ২০ দিন অতিবাহিত হলেও আপনি মুসাফির ছিলেন। সুতরাং কসর পড়া ঠিকই হয়েছে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৮২৭৯, ৮৩০৫; কিতাবুল আছল ১/৭৮; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২৩৭; আলহাবিল কুদসী ১/২২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩১

শেয়ার লিংক

আবু হানিফ - ত্রিশাল, মোমেনশাহী

৫৩০৭. প্রশ্ন

গত কয়েকদিন আগে আমি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হই এবং সাথেসাথে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসার মাধ্যমে দুই দিন পরে জ্ঞান ফিরে পাই। তখন আমার ১০ ওয়াক্তের নামায ছুটে যায়। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, অজ্ঞান থাকা অবস্থায় যে ১০ ওয়াক্ত নামায আমার ছুটে গেছে, তা কি কাযা করতে হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ নামাযগুলোর কাযা করতে হবে না। কেননা অজ্ঞান অবস্থায় লাগাতার ৬ ওয়াক্ত কিংবা তার চেয়ে বেশি নামায ছুটে গেলে তা কাযা করতে হয় না। হযরত নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত-

أَنّهُ أُغْمِيَ عَلَيْهِ يَوْمَيْنِ فَلَمْ يَقْضِ.

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. দুই দিন অজ্ঞান ছিলেন কিন্তু ঐ সময়ের নামায কাযা করেননি। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৬৬২

হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

إِذَا أُغْمِيَ عَلَيْهِ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ أَعَادَ، وَإِذَا كَانَ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ لَمْ يُعِدْ.

এক দিন এক রাত অজ্ঞান থাকলে নামায কাযা করবে। এর চেয়ে বেশি হলে কাযা করবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৬৫৪)

 -কিতাবুল আছল ১/১৯০; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২১৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৩৭

শেয়ার লিংক

হাসীবুর রাহমান - চান্দিনা, কুমিল্লা

৫৩০৮. প্রশ্ন

গত রমযানে তারাবীর নামাযে আমি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করি এবং সিজদা আদায় করি। ঐ রাকাত শেষ করে যখন পরের রাকাতে দাঁড়াই সামনের পড়া প্যাঁচ লাগার কারণে আগের পৃষ্ঠা থেকে আবার পড়ি। ফলে সিজদার আয়াতটি দ্বিতীয়বার পড়া হয়। তবে এই আয়াত পড়ে আমি যেহেতু আগের রাকাতে সিজদা করেছি তাই দ্বিতীয়বার সিজদা করিনি। জানার বিষয় হল, দ্বিতীয়বার ঐ আয়াত পড়ার কারণে কি আমার উপর নতুন সিজদা ওয়াজিব হয়েছে। নাকি আদায়কৃত সিজদাটি উভয় পাঠের জন্য যথেষ্ট হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে প্রথম রাকাতে আদায়কৃত সিজদাটিই যথেষ্ট। দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার আয়াতটি পুনরায় পড়ার কারণে নতুন করে সিজদা ওয়াজিব হয়নিতাই আপনার জন্য দ্বিতীয় রাকাতে পুনরায় সিজদা না করা ঠিকই হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/২৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৭০; রদ্দুল মুহতার ২/১১৭

শেয়ার লিংক

কবীর হুসাইন - নারায়ণগঞ্জ

৫৩০৯. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে আমি এশার সুন্নত পড়ে চিন্তা করছিলাম-বিতির পড়ব, নাকি আগে দু-চার রাকাত নফল পড়ব। কিছুক্ষণ পর অন্যমনস্ক হয়ে কোনো নিয়ত স্থির না করেই নামায শুরু করি। নামায শুরু করার পর মনে মনে ঠিক করে নেই যে, বিতির পড়ব। প্রশ্ন হল, এভাবে নিয়ত করা কি ঠিক আছে?

উত্তর

ফরয ও ওয়াজিব নামাযের ক্ষেত্রে নামায শুরু করার আগেই নিয়ত করে নেওয়া আবশ্যক। কোনো নিয়ত স্থির না করে নামায শুরু করলে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। তাই এক্ষেত্রে নামায শুরু করে দেওয়ার পর ফরয বা ওয়াজিবের নিয়ত করা যাবে না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বিতির আদায় হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নিবেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ২৫৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪১৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ তাকী - চট্টগ্রাম

৫৩১০. প্রশ্ন

কোনো মাসবুক যদি বিতিরের তৃতীয় রাকাতের রুকুতে ইমামের সঙ্গে শরীক হয় তাহলে কি তাকে নিজ তৃতীয় রাকাতেও দুআ কুনূত পড়তে হবে?

উত্তর

বিতিরের তৃতীয় রাকাতের রুকুতে জামাতে শরীক হলে উক্ত রাকাত পাওয়ার কারণে কুনূত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। তাই সে তার ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের সময় কুনূত পড়বে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৮৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৪২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১১

শেয়ার লিংক

ওয়াসেল - বংশাল, ঢাকা

৫৩১১. প্রশ্ন

আমার দাদার বাড়ি কুমিল্লায়। আব্বু আম্মু ও আমার অন্যান্য ভাই-বোনসহ আমরা ঢাকায় থাকি। এখানে আমাদের নিজস্ব ভবন রয়েছে। কুমিল্লায় আব্বু মিরাছসূত্রে যে জমির মালিক হয়েছিলেন, তা চাচাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেখানে আমাদের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা কিছুই নেই এবং সেখানে বসবাসের ইচ্ছাও নেই। তবে আমার দাদী এখনো হায়াতে আছেন। তাই বছরে কয়েকবার আব্বুকে কুমিল্লায় যেতে হয়। আমরাও দু-এক বছর পর পর বেড়াতে যাই। এমতাবস্থায় কুমিল্লায় কি আমরা মুসাফির গণ্য হব, নাকি মুকীম গণ্য হব?

উত্তর

আপনার আব্বু যেহেতু কুমিল্লা থেকে চলে এসে স্থায়ীভাবে পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করছেন এবং কুমিল্লায় আর বসবাস করার নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা নেই, তাই কুমিল্লা তার জন্য এখন আর ‘ওয়াতনে আসলী’ হিসেবে বাকি থাকেনি। সুতরাং এখন আপনারা ১৫ দিনের কম সময়ের জন্য কুমিল্লায় গেলে মুসাফির গণ্য হবেন এবং চার রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত আদায় করবেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৩১

শেয়ার লিংক

সেলিম হাসান - নরসিংদী

৫৩১২. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মসজিদগুলোতে সাধারণত আলাদা মুআযযিন থাকে না; বরং ইমাম ও মুআযযিন একই ব্যক্তি হয়ে থাকেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা কেমন? আর এক্ষেত্রে ইকামত দেবে কে? ইমাম নিজেই, না অন্য কোনো মুসল্লি? সাধরণত দেখা যায়, ইমাম যাকে বলে সে কিংবা নিয়মিত মুসল্লিদের মধ্যে থেকে কোনো একজন ইকামত দিয়ে থাকে।

উত্তর

নির্ধারিত মুআযযিন না থাকলে মুক্তাদীদের মধ্যে সহীহ-শুদ্ধভাবে ইকামত দিতে পারে-এমন কেউ ইকামত দিবেন। এছাড়া ইমামও আযান-ইকামত উভয়টি বলতে পারেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। আর আযান যে দেবে তার অসন্তুষ্টি না থাকলে অন্য যে কেউ ইকামত দিতে পারে। বিশেষত যখন এ দায়িত্বের জন্য নির্ধারিত কোনো ব্যক্তি না থাকে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে হযরত বিলাল আযান দিয়েছেন এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ ইকামত দিয়েছেন(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১২)

-ফাতহুল কাদীর ১/২২৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৫

শেয়ার লিংক

আম্মার - খুলনা

৫৩১৩. প্রশ্ন

গত কয়েকদিন আগে মসজিদে যোহরের নামায দুই রাকাত শেষ হওয়ার পর আমি জামাতে শরীক হই। তারপর জামাতের সাথে দুই রাকাত আদায় করি। আমার জানামতে এই দুই রাকাতের মধ্যে ইমাম সাহেবের এমন কোনো ভুল হয়নি, যার কারণে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। কিন্তু ইমাম সাহেবকে দেখি,সিজদায়ে সাহু আদায় করছেন। তখন ধরে নিলাম, আগের দুই রাকাতে কোনো ভুল হয়েছে। ভুলের সময় যেহেতু আমি শরীক ছিলাম না, তাই সিজদা করব কি না-এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। শেষে সিজদায়ে সাহুতে শরীক হয়ে যাই। জানার বিষয় হল, এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী ছিল? ইমাম সাহেবের সিজদায়ে সাহুতে শরীক হওয়া কি আমার ঠিক হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

কোনো ব্যক্তি ইমামের পিছনে ইক্তিদা করলেই তাকে ইমামের সিজদায়ে সাহুর অনুসরণ করতে হয়; সে নামাযে যখনই শরীক হোক না কেন। এমনকি যে ভুলের কারণে সাহু সিজদা দেওয়া হচ্ছে তখন সে শরীক না থাকলেও ইমামের সাথে তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে। তাই ইমাম সাহেবের সাথে সিজদায়ে সাহুতে শরীক হওয়া আপনার ঠিক হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ১/২০২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/২২৫; ফাতহুল কাদীর ১/৪৪২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৯; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯২

শেয়ার লিংক

হাবীব - খুলনা

৫৩১৪. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদে সাধারণত আমি আযান দিই। একদিন এশার আযান দেওয়ার পর জানতে পারি, এশার ওয়াক্ত এখনো হয়নি। ওয়াক্ত হওয়ার পর লজ্জায় দ্বিতীয়বার আযান দিইনি। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান দিলে কি পুনরায় আযান দিতে হয়? লজ্জার কারণে পুনরায় আযান না দেওয়া কি আমার জন্য ঠিক হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দিলে তা সহীহ হয় না। তাই এমনটি হয়ে গেলে ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিতে হয়। সুতরাং লজ্জার কারণে পুনরায় আযান না দেওয়া অন্যায় হয়েছে। হযরত নাফে‘ রাহ. থেকে বর্ণিত-

أَنّ مُؤَذِّنًا لِعُمَرَ يُقَالُ لَهُ : مَسْرُوحٌ أَذّنَ قَبْلَ الْفَجْرِ، فَأَمَرَهُ عُمَرُ أَنْ يُعِيدَ.

হযরত উমর রা.-এর একজন মুআযযিন ছিলেন। তার নাম মাসরূহ। তিনি একদিন সুবহে সাদিকের আগেই আযান দিয়ে দেন। তখন হযরত উমর রা. তাকে পুনরায় আযান দিতে বলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩২২)

-কিতাবুল আছল ১/১১০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮১; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬২

শেয়ার লিংক

উসামা - ঢাকা

৫৩১৫. প্রশ্ন

গতকাল যোহরের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত পড়ছিলাম, দ্বিতীয় রাকাতে থাকতে ইকামাত শুরু হয়। তখন আমি চার রাকাত পূর্ণ না করে দুই রাকাত পড়েই সালাম ফিরিয়ে জামাতে শরীক হই। জানার বিষয় হল, চার রাকাতের নিয়ত করে দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরিয়ে ফেলাটা কি সঠিক ছিল,নাকি চার রাকাত পূর্ণ করে জামাতে শরীক হওয়াই উচিত ছিল?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য দুই রাকাত পড়ে জামাতে শরীক হওয়া যথাযথ হয়েছে। ফরয নামায শুরু হয়ে গেলে তখন ফরয ছাড়া অন্য নামায পড়তে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-

إِذَا أُقِيمَتِ الصّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلّا الْمَكْتُوبَةُ.

যখন ফরয নামাযের জামাত দাঁড়াবে তখন ফরয ছাড়া অন্য নামায পড়ো না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭১০)

উল্লেখ্য যে, যোহরের ফরযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত না পড়া হলে যথাসম্ভব ফরযের পরের দুই রাকাত সুন্নতের পর তা পড়ে নেয়া উচিত।

-আলমুহীতুল বুরাহনী ২/২৪৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৫; যাদুল ফাকীর, পৃ. ১৬৪; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ২৪৫; রদ্দুল মুহতার ২/৫৩

শেয়ার লিংক

আতাউল্লাহ - সিলেট

৫৩১৬. প্রশ্ন

মাগরিবের শেষ বৈঠকে ইমাম সাহেব তাশাহহুদ পড়ার পর দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। এরপর মুসল্লিরা লোকমা দিয়েছে। তখন তিনি বৈঠকে ফিরে আসেন এবং সাহু সিজদা দিয়ে নামায শেষ করেন। আমাদের এই নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। ইমাম যদি শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে দাঁড়িয়ে যান তাহলে নিয়ম হল, মুক্তাদির লোকমা শোনার পর বৈঠকে ফিরে আসবেন এবং সাহু সিজদা দিয়ে যথানিয়মে নামায শেষ করবেন।

-কিতাবুল আছল ১/২২৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৮;আলবাহরুর রায়েক ২/১০৪; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৮৭

শেয়ার লিংক

আব্দুল আযীয - মৌলভীবাজার, সিলেট

৫৩১৭. প্রশ্ন

আমি একদিন মসজিদে প্রবেশ করার পর দেখি ইমাম সাহেব রুকুতে আছেন। আমি কাতারে পৌঁছার পর তাকবীর বলে রুকুতে যাই। রুকুতে যাওয়ামাত্রই কোনো কিছু পড়ার পূর্বেই ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে গেলেন। আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। এ অবস্থায় আমি সন্দেহে পড়ে যাই যে, আমি রাকাত পেয়েছি কি না। অবশেষে আমি রাকাত পেয়েছি বলে ধরে নিই এবং উক্ত রাকাত পুনরায় না পড়েই ইমাম সাহেবের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেলি। এ অবস্থায় আমার নামায কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, আপনার নামায সহীহ হয়েছে। কারণ ইমাম সাহেবের সাথে রুকুতে অল্প সময় পেলেই রুকু আদায় হয়ে যায়। অবশ্য এক্ষেত্রে মুক্তাদীর কর্তব্য, একবার তাসবীহ পড়ে রুকু থেকে ওঠা। কেননা রুকুতে এক তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করা ওয়াজিব।

 -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২৫৩৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৮৯; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৬০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৫৬; আলহাবিল কুদসী ১/১৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০

শেয়ার লিংক

মাহমুদ - ঢাকা

৫৩১৮. প্রশ্ন

আমি গতকাল মসজিদের প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে যোহরের নামায আদায় করছিলাম। সামনের দেয়ালের একটি লেখায় অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি পড়ে এবং লেখাটি বুঝেও ফেলি। সাথেসাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিই এবং যথারীতি ইমামের সাথে নামায শেষ করি।

আমার জানার বিষয় হল, নামাযের মধ্যে উক্ত লেখাটির দিকে অনিচ্ছাকৃত দৃষ্টি পড়ার কারণে কি আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়েছে? উক্ত নামায কি পুনরায় আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু অনিচ্ছাকৃত লেখাটির দিকে দৃষ্টি পড়েছে তাই একারণে আপনার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়নি। এক্ষেত্রে লেখাটি বুঝে ফেললেও কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু নামাযে ইচ্ছাকৃত কোনো লেখার দিকে দৃৃষ্টিপাত করা মাকরূহ।

উল্লেখ্য, নামাযে কিয়াম অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা সুন্নত। বিনা কারণে সামনের দিকে তাকানো অনুত্তম।

আরো উল্লেখ্য, মসজিদের সামনের দেয়ালে মুসল্লীর দৃষ্টিগোচর হয়, এমন স্থানে কোনো লেখা বা নকশা অংকন করা বা ঝুলিয়ে রাখা নিষেধ। কেননা এতে নামাযীদের দৃষ্টি পড়ে নামাযের খুশুখুযু নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৭০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৩৪v

শেয়ার লিংক

আহমাদ - ফার্মগেট, ঢাকা

৫৩১৯. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে যোহরের সময় আমার একজন নিকটাত্মীয় ইন্তেকাল করেন। তাঁর আশা রক্ষার্থে আমি জানাযার নামায পড়াই এবং দাফনের সময় কবরে নামি। দাফন শেষ হয় আসরের সময় হবার এক ঘণ্টা পর। তাই আমি দাফনের কাজ শেষে (অযু অবস্থায় থাকার কারণে) নতুন করে অযু না করেই আসরের নামায পড়ে নিই। পরে আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি, যিনি ঐ দাফনকার্যে শরীক হয়েছিলেন, আমাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি দাফনের পরে গোসল না করেই আসরের নামায পড়লে কেন?

এখন জানার বিষয় হল, মৃত ব্যক্তিকে গোসল বা কাফন-দাফন করানোর পর কি গোসল করা জরুরি? যদি জরুরি হয় তাহলে সেই গোসলের হুকুম কী? এবং আমি গোসল ছাড়াই যে নামায আদায় করলাম, সেই নামায কি আবার পড়তে হবে?

উত্তর

মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে বা দাফনের সময় কবরে নামলে তার গোসল করা জরুরি হয়ে যায় না। তাই আপনার উপরও গোসল করা বা অযু করা অবশ্যক ছিল না। অতএব এ অবস্থায় আপনার নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে। তা আবার পড়তে হবে না।

উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালে শরীরে পানির ছিটা ইত্যাদি পড়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় কোনো কোনো ফকীহ তার জন্য গোসল করে নেওয়া মুস্তাহাব বলেছেন। অবশ্য গোসল করাতে গিয়ে শরীরে নাপাকি লেগেছে বলে নিশ্চিত হলে শুধু ঐ জায়গা ধুয়ে নিতে হবে।

 -কিতাবুল আছল ১/৪৮; আলমাবসূত,সারাখসী ১/৮২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৬; খিযানাতুল আকমাল ১/৩৪; ফাতহুল কাদীর ১/৫৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭০

শেয়ার লিংক

যাকির হোসেন - ফরিদপুর

৫৩২০. প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন অযুতে কুলি করার সময় ভুলে গলা দিয়ে পানি প্রবেশ করে। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, এ কারণে আমার রোযার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না?

উত্তর

রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অসাবধানতাবশত গলায় পানি প্রবেশ করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন রোযাটি কাযা করতে হবে; কাফফারা আদায় করা লাগবে না। ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন-

إِذَا تَمَضْمَضَ الصّائِمُ وَدَخَلَ حَلْقَهُ مِنْ ذَلِكَ الْمَاءِ وَهُوَ ذَاكِرٌ صَوْمَهُ أَتَمّ صَوْمَهُ وَعَلَيْهِ يَوْمٌ مَكَانَهُ، وَإِنْ دَخَلَ الْمَاءُ حَلْقَهُ وَهُوَ نَاسٍ لِصَوْمِهِ أَتَمّ صَوْمَهُ وَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاؤُهُ.

রোযাদার ব্যক্তি রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় কুলি করার সময় যদি গলায় পানি চলে যায় তাহলে সে তার রোযাটি পূর্ণ করবে (অর্থাৎ ইফতার পর্যন্ত কোনো কিছু খাবে না) এবং এর জন্য তাকে একটি রোযা কাযা করতে হবে। আর যদি পানি প্রবেশের সময় তার রোযার কথা স্মরণই না থাকে অর্থাৎ ভুলে পান করে ফেলে তাহলে সে তার রোযাটি পূর্ণ করবে। আর এ ক্ষেত্রে তাকে কোনো কাযা করতে হবে না। (কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, হাদীস ৮২৩)

-কিতাবুল আছল ২/১৫০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৯; আলহাবিল কুদসী ১/৩১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২; রদ্দুল মুহতার ২/৪০১

শেয়ার লিংক

আসআদ - বিজয়নগর, ঢাকা

৫৩২১. প্রশ্ন

দুবাই থেকে এক ব্যক্তি মাদরাসার অফিসের বিকাশ নাম্বারে কিছু টাকা পাঠান এবং ফোন করে বলে দেন যে, তা আমি যাকাত ফান্ডের জন্য পাঠিয়েছি। এর কিছুদিন পর তিনি আবার অফিসে ফোন করে বলেন যে, পুরো টাকা যাকাত ফান্ডে যেন ব্যবহার না করা হয়; বরং এর থেকে এত (একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ) টাকা অমুক দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের সাধারণ ফান্ডের জন্য আর এত টাকা অমুক হুজুরকে হাদিয়া আর অবশিষ্ট টাকা মাদরাসার যাকাত ফান্ডের জন্য। হুজুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, দফতরের বিকাশ নাম্বারে যাকাতের জন্য টাকা পাঠানোর পর পূনরায় টাকাগুলো বণ্টন করা সহীহ হবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বক্তব্য অনুযায়ী লোকটি যেহেতু প্রথমে যাকাত ফান্ডের জন্যই সরাসরি মাদরাসার একাউন্টে টাকা পাঠিয়েছেন। আর এধরনের মাদরাসার দায়িত্বশীল হচ্ছেন যাকাত গ্রহীতা দরিদ্রদের প্রতিনিধি, তাই ঐ একাউন্টে টাকা দেওয়ার সাথেসাথে তা গরীবদের মালিকানাধীন হয়ে যাকাত আদায় হয়ে গেছে। সুতরাং পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির জন্য ঐ টাকার অংশ বিশেষ কাউকে দিতে বলার সুযোগ ও বৈধতা নেই। ঐ পুরো টাকা প্রতিষ্ঠানের গোরাবা ফান্ডের জন্যই থাকবে।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২১০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৯৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৯

শেয়ার লিংক

আব্দুল্লাহ - ফেনী

৫৩২২. প্রশ্ন

আমি একদিন আমার স্ত্রীর সাথে ইমোতে কথা বলছিলাম। একপর্যায়ে পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। যার কারণে আমি কল কেটে দিয়ে তার কাছে ইমোতে মেসেজ লিখে এমর্মে তালাক দেই যে, ‘তোকে এক, দুই, তিন তালাক’।

জানার বিষয়, আমার এ তালাক কি স্ত্রীর উপর পতিত হয়েছে? আমি মুখে কোনো শব্দ উচ্চারণ করিনি। শুধু উপরোক্ত কথাগুলো লিখে তাকে সেন্ড করেছি। আর স্ত্রীও তা পড়েছে। তাই জানতে চাচ্ছি যে, এই কথাগুলো লিখে পাঠানোর কারণে কি তালাক কার্যকর হবে? যদি হয় তাহলে কয় তালাক হবে?

আমি যদি আমার স্ত্রীকে পুনরায় ফিরে পেতে চাই তাহলে এর কী উপায়?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এভাবে স্ত্রীকে তালাক লিখে পাঠানোর দ্বারা তার উপর তিন তালাক পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে গেছে। কেননা তালাক মুখে উচ্চারণ করে দিলে যেমন কার্যকর হয় অনুরূপভাবে লিখিতভাবে দিলেও তা কার্যকর হয়ে যায়। তালাকের পর থেকেই আপনাদের স্বামী-স্ত্রীসূলভ কোনো আচরণ বা পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষেধ। তালাকের দিন থেকে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী (ঋতুমতী হলে পূর্ণ তিনটি ঋতুস্রাব আর অন্তঃসত্তা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত) ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দত চলাকালীন তালাকপ্রাপ্তার ভরণ-পোষণ আপনার জিম্মায় থাকবে। তার দেনমোহর অনাদায়ী থাকলে অনতিবিলম্বে তা পরিশোধ করে দিতে হবে।

ইদ্দত পালনের পর ঐ মহিলা চাইলে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। কিন্তু তিন তালাক হয়ে যাওয়ার কারণে ইদ্দতের ভেতর বা ইদ্দতের পরেও আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না। অবশ্য যদি ইদ্দত শেষ হওয়ার পর তার অন্যত্র বিবাহ হয় এবং সেখানে দাম্পত্য সম্পর্ক (স্বামী-স্ত্রী মিলন) হয়, এরপর কখনো যদি ঐ স্বামী মৃত্যুবরণ করে অথবা সে তাকে তালাক দিয়ে দেয় তবে ঐ স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের ইদ্দতের পর চাইলে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

উল্লেখ্য, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা নিরসনের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে, বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। কথায় কথায় তালাক দেওয়া, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া, একত্রে তিন তালাক দেওয়া সবই গুনাহের কাজ। মুসলমানদের এসব থেকে বেঁচে থাকা উচিত।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৪৮৪; আলহাবিল কুদসী ১/৪১৮; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া, পৃ. ২২৮; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/৯১

শেয়ার লিংক

সাজ্জাদ হুসাইন - ফকিরাপুল, ঢাকা

৫৩২৩. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মসজিদটি প্রায় ৩০ বছর আগের। মসজিদটি টিনশেড ছিল। মুসল্লি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় টিনশেড ভেঙে তিন তলাবিশিষ্ট মসজিদ বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কমিটির কেউ কেউ চাচ্ছে, নিচ তলায় মার্কেট বানাবে আর দোতলা থেকে মসজিদ শুরু হবে। যেন নিচতলার আয় দিয়ে মসজিদের কার্যক্রম চালানো যায়। এ অবস্থায় নিচতলাকে কি মসজিদ উন্নয়নের স্বার্থে মার্কেট বানানো যাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত স্থানে যেহেতু বহুদিন ধরে টিনশেডে নামায পড়া হয়েছে এবং পূর্ব থেকে নিচতলা মার্কেট ইত্যাদি বানানোর কথা ছিল না, তাই নতুন করে মসজিদ বানানোর সময় নিচতলাকে মার্কেট বানানো যাবে না; বরং নিচতলাসহ সকল তলাই মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/১৬২; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৫৮

শেয়ার লিংক

সাদিকুর রহমান - নেত্রকোণা

৫৩২৪. প্রশ্ন

বিভিন্ন বইয়ের শুরুতে লেখা থাকেলেখক/প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। বর্তমানে কিছু বইয়ে কথাটি আরো লম্বা করে লেখা থাকে। যেমন, প্রকাশক এবং স্বত্বাধিকারীর লিখিত অনুমতি ছাড়া এ বইয়ের কোনো অংশের পুনরুৎপাদন বা প্রতিলিপি করা যাবে নাযান্ত্রিক উপায়ে কোনো প্রতিলিপি করা যাবে নাডিস্ক বা তথ্য সংরক্ষণের কোনো যান্ত্রিক পদ্ধতিতে উৎপাদন বা প্রতিলিপি করা যাবে না। এ শর্তের লঙ্ঘন দেশীয় ও ইসলামী আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দণ্ডনীয়।

এ কথার দ্বারা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রেতার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপকে নিষেধ করা হয়কেউ যদি উক্ত বই কেনার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিজে ব্যবহারের জন্য অথবা বইটি দুষ্প্রাপ্য হওয়ার কারণে বা মূল বইয়ের দাম নিজ সামর্থ্যরে চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কারণে কারো থেকে তার মালিকানাধীন কপিটি নিয়ে ফটোকপি করে অথবা পিডিএফ তৈরি করে বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে এর প্রতিলিপি তৈরি করে সংরক্ষণ করে তাহলে তা জায়েয হবে কি?

উত্তর

কোনো বইয়ের স্বত্ব লেখক বা প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত হওয়ার উদ্দেশ্য হলঐ বইয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনার সকল অধিকার লেখক বা প্রকাশকের। এভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ করা জায়েয। এক্ষেত্রে লেখক বা প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া উক্ত বইয়ের মুদ্রণ ও বাজারজাত করা জায়েয নেই। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া নিজ ব্যবহারের জন্য পিডিএফ বা ফটোকপি করা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই কোনো বই দুষ্প্রাপ্য হওয়ার কারণে বা মূল বইয়ের দাম নিজের সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় কারো মালিকানাধীন কোনো বই তার অনুমতি নিয়ে নিজ ব্যবহারের জন্য ফটোকপি করা বা অন্য কোনোভাবে এর প্রতিলিপি তৈরি করে সংরক্ষণ করা নাজায়েয নয়। এটি লেখকের حقوق তথা স্বত্বের খেলাফ বলে ধর্তব্য হবে না।

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ৩/২৫৮১

শেয়ার লিংক

মাহবুবুর রহমান - সাভার, ঢাকা

৫৩২৫. প্রশ্ন

আমি ঢাকার একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করি। আমাদের মাদরাসায় প্রতিদিন বাদ এশা দুআর মজলিস হয়। শুরুতে ছাত্ররা নিজেরাই কিছু যিকির ও তিলাওয়াত করেন। এরপর একজন উস্তায সবাইকে নিয়ে দুআ করেন। এর মাঝে অনেক উস্তাযকে দেখি ছাত্রদের দিকে ফিরে কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে দুআ করেন। আবার অনেককে দেখি দুআর সময় ছাত্রদের দিকে পিঠ করে কেবলামুখী হয়ে দুআ করেন। আমি জানতে চাচ্ছি, এর মধ্যে সঠিক পন্থা কোন্টি? ছাত্রদের দিকে মুখ করে দুআ করা, না কেবলামুখী হয়ে দুআ করা?

উত্তর

সাধারণ অবস্থায় কেবলামুখী হয়ে দুআ করা মুস্তাহাব। এটি দুআর আদাবের অন্তর্ভুক্ত। তবে দুআ পরিচালনাকারী যদি আগ থেকেই মজমার দিকে মুখ করা অবস্থায় থাকেন তবে তখন সেদিকে ফিরে দুআ করতে কোনো সমস্যা নেই। তা সুন্নত পরিপন্থী হবে না; বরং উভয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে আছে, উমর রা. বলেন-

لَمّا كَانَ يَوْمُ بَدْرٍ نَظَرَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِلَى الْمُشْرِكِينَ وَهُمْ أَلْفٌ، وَأَصْحَابُهُ ثَلَاثُ مِائَةٍ وَتِسْعَةَ عَشَرَ رَجُلًا، فَاسْتَقْبَلَ نَبِيّ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْقِبْلَةَ، ثُمّ مَدّ يَدَيْهِ، فَجَعَلَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ: اللهُمّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي، اللهُمّ آتِ مَا وَعَدْتَنِي، اللهُمّ إِنْ تُهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةَ مِنْ أَهْلِ الْإِسْلَامِ لَا تُعْبَدْ فِي الْأَرْضِ، فَمَا زَالَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ، مَادّا يَدَيْهِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ، حَتّى سَقَطَ رِدَاؤُهُ عَنْ مَنْكِبَيْهِ.

অর্থাৎ, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের দিকে তাকালেন। ... অতঃপর কেবলামুখী হয়ে দুই হাত প্রসারিত করে উচ্চস্বরে দুআ করতে লাগলেন-

اللهُمّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي ...

তিনি এভাবে দুই হাত প্রসারিত করে কেবলামুখী হয়ে দুআ করতে থাকলেন। একপর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে চাদর পড়ে গেল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭৬৩)

সহীহ আবু আওয়ানার এক রেওয়ায়েতে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي قَبْرِ عَبْدِ اللهِ ذِي الَبجادَيْنِ.. فَلَمّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ.

অর্থাৎ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হযরত আব্দুল্লাহ যুল বাজাদাইন-এর কবরে দেখেছি। ... যখন তিনি তাঁর দাফন থেকে ফারেগ হলেন দুই হাত তুলে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। (ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)

মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাকের অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, আব্দুর রহমান ইবনে তারেক তার মা থেকে বর্ণনা করেন-

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا حَاذَى مَكَانًا مِنْ دَارِ يَعْلَى - نَسِيَهُ عُبَيْدُ اللهِ - اسْتَقْبَلَ الْبَيْتَ، ثُمّ دَعَا.

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (তওয়াফ করতে করতে) দার আবু ইয়ালা কাছাকাছি পৌছতেন তখন কেবলামুখী হয়ে দুআ করতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৯০৫৫)

তবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক ক্ষেত্রে অন্য দিকে ফিরে দুআ করার কথাও প্রমাণিত আছে। যেমন, সহীহ বুখারীর এক হাদীসে আছে, হযরত আনাস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

بَيْنَا النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَخْطُبُ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، ادْعُ اللهَ أَنْ يَسْقِيَنَا، فَتَغَيّمَتِ السّمَاءُ وَمُطِرْنَا، حَتّى مَا كَادَ الرّجُلُ يَصِلُ إِلَى مَنْزِلِهِ، فَلَمْ تَزَلْ تُمْطَرُ إِلَى الجُمُعَةِ المُقْبِلَةِ، فَقَامَ ذَلِكَ الرّجُلُ أَوْ غَيْرُهُ، فَقَالَ: ادْعُ اللهَ أَنْ يَصْرِفَهُ عَنّا فَقَدْ غَرِقْنَا. فَقَالَ: اللَّهُمّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا. فَجَعَلَ السّحَابُ يَتَقَطّعُ حَوْلَ المَدِينَةِ، وَلاَ يُمْطِرُ أَهْلَ المَدِينَةِ.

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আরয করলেন-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র কাছে আমাদেরকে বৃষ্টি দান করার দুআ করুন। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কেবলা দিকে পিঠ দেওয়া অবস্থায়ই দুআ করলেন) সাথেসাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। পুরা এক সপ্তাহ বৃষ্টি হল। পরবর্তী জুমায় সে ব্যক্তি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আরয করল-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র কাছে বৃষ্টি বন্ধ করার দুআ করুন। আমরা তো ডুবে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন-

اللّهُمّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا.

সাথেসাথে মদীনার আকাশ থেকে মেঘ সরে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৪২)

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছাত্রদের নিয়ে দুআ করার সময় তাদের দিকে ফিরে দুআ করা ঠিক আছে। এজাতীয় হাদীস থেকে বোঝা যায়, দুআর সময় কেবলামুখী হওয়া জরুরি নয়; বরং অন্য দিকে ফিরে দুআ করাও জায়েযসুতরাং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই।

-আততারগীব ওয়াত তারহীব, পৃ. ৫৩০; শরহে মুসলিম, নববী ১২/৮৪; আলআযকার, নববী, পৃ. ১৫; উমদাতুল কারী ৭/৫০; আলইখতিয়ার ১/২৪৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/২১৮; হাশিয়াতুশ শিরওয়ানী আলা তুহফাতিল মুহতাজ ২/১০৫

শেয়ার লিংক