রজব ১৪৪২ || ফেব্রুয়ারি ২০২১

মাহবুবুর রহমান - সাভার, ঢাকা

৫৩২৫. প্রশ্ন

আমি ঢাকার একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করি। আমাদের মাদরাসায় প্রতিদিন বাদ এশা দুআর মজলিস হয়। শুরুতে ছাত্ররা নিজেরাই কিছু যিকির ও তিলাওয়াত করেন। এরপর একজন উস্তায সবাইকে নিয়ে দুআ করেন। এর মাঝে অনেক উস্তাযকে দেখি ছাত্রদের দিকে ফিরে কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে দুআ করেন। আবার অনেককে দেখি দুআর সময় ছাত্রদের দিকে পিঠ করে কেবলামুখী হয়ে দুআ করেন। আমি জানতে চাচ্ছি, এর মধ্যে সঠিক পন্থা কোন্টি? ছাত্রদের দিকে মুখ করে দুআ করা, না কেবলামুখী হয়ে দুআ করা?

উত্তর

সাধারণ অবস্থায় কেবলামুখী হয়ে দুআ করা মুস্তাহাব। এটি দুআর আদাবের অন্তর্ভুক্ত। তবে দুআ পরিচালনাকারী যদি আগ থেকেই মজমার দিকে মুখ করা অবস্থায় থাকেন তবে তখন সেদিকে ফিরে দুআ করতে কোনো সমস্যা নেই। তা সুন্নত পরিপন্থী হবে না; বরং উভয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে আছে, উমর রা. বলেন-

لَمّا كَانَ يَوْمُ بَدْرٍ نَظَرَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِلَى الْمُشْرِكِينَ وَهُمْ أَلْفٌ، وَأَصْحَابُهُ ثَلَاثُ مِائَةٍ وَتِسْعَةَ عَشَرَ رَجُلًا، فَاسْتَقْبَلَ نَبِيّ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْقِبْلَةَ، ثُمّ مَدّ يَدَيْهِ، فَجَعَلَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ: اللهُمّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي، اللهُمّ آتِ مَا وَعَدْتَنِي، اللهُمّ إِنْ تُهْلِكْ هَذِهِ الْعِصَابَةَ مِنْ أَهْلِ الْإِسْلَامِ لَا تُعْبَدْ فِي الْأَرْضِ، فَمَا زَالَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ، مَادّا يَدَيْهِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ، حَتّى سَقَطَ رِدَاؤُهُ عَنْ مَنْكِبَيْهِ.

অর্থাৎ, বদরের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের দিকে তাকালেন। ... অতঃপর কেবলামুখী হয়ে দুই হাত প্রসারিত করে উচ্চস্বরে দুআ করতে লাগলেন-

اللهُمّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي ...

তিনি এভাবে দুই হাত প্রসারিত করে কেবলামুখী হয়ে দুআ করতে থাকলেন। একপর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে চাদর পড়ে গেল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭৬৩)

সহীহ আবু আওয়ানার এক রেওয়ায়েতে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي قَبْرِ عَبْدِ اللهِ ذِي الَبجادَيْنِ.. فَلَمّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ.

অর্থাৎ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হযরত আব্দুল্লাহ যুল বাজাদাইন-এর কবরে দেখেছি। ... যখন তিনি তাঁর দাফন থেকে ফারেগ হলেন দুই হাত তুলে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। (ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)

মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাকের অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, আব্দুর রহমান ইবনে তারেক তার মা থেকে বর্ণনা করেন-

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا حَاذَى مَكَانًا مِنْ دَارِ يَعْلَى - نَسِيَهُ عُبَيْدُ اللهِ - اسْتَقْبَلَ الْبَيْتَ، ثُمّ دَعَا.

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (তওয়াফ করতে করতে) দার আবু ইয়ালা কাছাকাছি পৌছতেন তখন কেবলামুখী হয়ে দুআ করতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৯০৫৫)

তবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক ক্ষেত্রে অন্য দিকে ফিরে দুআ করার কথাও প্রমাণিত আছে। যেমন, সহীহ বুখারীর এক হাদীসে আছে, হযরত আনাস রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

بَيْنَا النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَخْطُبُ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، ادْعُ اللهَ أَنْ يَسْقِيَنَا، فَتَغَيّمَتِ السّمَاءُ وَمُطِرْنَا، حَتّى مَا كَادَ الرّجُلُ يَصِلُ إِلَى مَنْزِلِهِ، فَلَمْ تَزَلْ تُمْطَرُ إِلَى الجُمُعَةِ المُقْبِلَةِ، فَقَامَ ذَلِكَ الرّجُلُ أَوْ غَيْرُهُ، فَقَالَ: ادْعُ اللهَ أَنْ يَصْرِفَهُ عَنّا فَقَدْ غَرِقْنَا. فَقَالَ: اللَّهُمّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا. فَجَعَلَ السّحَابُ يَتَقَطّعُ حَوْلَ المَدِينَةِ، وَلاَ يُمْطِرُ أَهْلَ المَدِينَةِ.

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আরয করলেন-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র কাছে আমাদেরকে বৃষ্টি দান করার দুআ করুন। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কেবলা দিকে পিঠ দেওয়া অবস্থায়ই দুআ করলেন) সাথেসাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। পুরা এক সপ্তাহ বৃষ্টি হল। পরবর্তী জুমায় সে ব্যক্তি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে আরয করল-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র কাছে বৃষ্টি বন্ধ করার দুআ করুন। আমরা তো ডুবে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন-

اللّهُمّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا.

সাথেসাথে মদীনার আকাশ থেকে মেঘ সরে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৪২)

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ছাত্রদের নিয়ে দুআ করার সময় তাদের দিকে ফিরে দুআ করা ঠিক আছে। এজাতীয় হাদীস থেকে বোঝা যায়, দুআর সময় কেবলামুখী হওয়া জরুরি নয়; বরং অন্য দিকে ফিরে দুআ করাও জায়েযসুতরাং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই।

-আততারগীব ওয়াত তারহীব, পৃ. ৫৩০; শরহে মুসলিম, নববী ১২/৮৪; আলআযকার, নববী, পৃ. ১৫; উমদাতুল কারী ৭/৫০; আলইখতিয়ার ১/২৪৬; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/২১৮; হাশিয়াতুশ শিরওয়ানী আলা তুহফাতিল মুহতাজ ২/১০৫

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন