যিলক্বদ ১৪৩৪   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৩

মিডিয়া ও গণতন্ত্রের স্বরূপ : প্রেক্ষিত মিশর ও বাংলাদেশ

মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ

আমরা হলাম একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক সভ্য (!) সমাজের বাসিন্দা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদেরকে ক্রমেই উন্নত থেকে উন্নততর করছে। মিডিয়া-সোশাল মিডিয়া আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়া পালন করছে রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভের ভূমিকা। তারা হচ্ছে সমাজের আয়না। অন্যদিকে গণতন্ত্র আমাদেরকে দিয়েছে রাষ্ট্রের মালিকানা, গণতান্ত্রিক নীতি অনুযায়ী জনগণ হচ্ছে সকল ক্ষমতার উৎস ও প্রজাতন্ত্রের মালিক। এ গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো ও স্বাধীনতাগুলো নিশ্চিত হয়েছে। আর মিডিয়া তথা গণমাধ্যম আমাদেরকে ২৪/৭ সেবা দিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে। সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা সপ্তাহের ৭ দিন এবং দিনের ২৪ ঘণ্টা হালনাগাদ (আপডেটেড) থাকছি। খবর দেখছি, শুনছি, চুলচেরা বিশ্লেষণ শুনছি। মধ্যরাতের বিশ্রাম ত্যাগ করে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ অর্থাৎ টকশোতে মনোনিবেশ করছি। বিভিন্নভাবে নিজেদের মন্তব্যগুলো (কমেন্ট) পেশ করার সুযোগ পাচ্ছি। কখনো ই-মেইলে কখনো বা টেলিফোন লাইনে সরাসরি সম্প্রচারে অংশ নিয়ে। এবং কখনো অনলাইনে মতামত দিয়ে। আর সোশাল মিডিয়া (ফেসবুক ইত্যাদি) তো আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। কোনো আধুনিক তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও উন্নত মস্তিষ্কের লোকজন ফেসবুকে একাউন্ট না করে, নিয়মিত স্ট্যাটাস না দিয়ে, জীবন ও কর্ম পুরো বিশ্বের সাথে শেয়ার না করে কোনোভাবেই সময় পার করতে পারেন না।

প্রিয় পাঠক দয়া করে বিরক্ত হবেন না। আপনার নারাজীর আশংকাতেই এ ফিরিস্তিকে লম্বা করতে পারলাম না এবং কথাগুলোর বিশ্লেষণ করতে পারলাম না। আশা করি বর্তমান সমাজের অনেকের ক্ষেত্রে কথাগুলো বাস্তবসম্মত হওয়ার ব্যাপারে আপনাদের কোনো ভিন্নমত নেই।

কিন্তু বাস্তবে প্রচলিত গণতন্ত্রের কি কি সুফল আমরা পেয়েছি বা পাচ্ছি, রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে, আইন প্রণয়নে এবং সঠিক পরিচালনায় সাধারণ জনগণের কতটুকু স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে। বাস্তবে কি এক ব্যক্তির শাসন চলে থাকে না জনগণের, খোদ জন-প্রতিনিধিরা স্বাধীন কি না? এখনকার গণতান্ত্রিক সমাজের কর ব্যবস্থা কতটুকু জনবান্ধব, আগের কালের রাজা-বাদশাহদের এবং এক নায়কদের চেয়ে বর্তমানে কর বেশি দিতে হয় না কম, সেই সেকেলে সময়ের পারিবারিক, সামাজিক জীবনের তুলনায় এ আধুনিক সমাজ কতটুকু শান্তিপূর্ণ, ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের মাণদন্ডে এ সমাজ কতটা উত্তীর্ণ। ধনী-গরীবের তারতম্য কতটুকু কমেছে। মোটকথা এখনকার সরকারগুলোর শতকরা কতভাগ কাজ জনগণের জন্য, জনগণের পক্ষে ও জনগণের স্বার্থে সংগঠিত হচ্ছে? এ সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কি কোনোই প্রয়োজন নেই? এ কথাগুলো বলার অর্থ এটা নয় যে, একনায়কতন্ত্র কোনো ভাল ব্যবস্থা বরং যেটাকে ভালো বলে পেশ করা হচ্ছে তা কতটুকু ভাল, তা যাচাই করা দরকার নয় কি?

এমনিভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার লাইভ সম্প্রচার, সরেজমিন প্রতিবেদন, সংবাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ ইত্যাদির আড়ালে আমাদেরকে কী কী হজম করানো হচ্ছে, কীভাবে তাদের মিশন ও ভিশন, চিন্তা-চেতনা জাতির উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের মতলব আদায় করে নিচ্ছে। একশ্রেণীর মিডিয়া কতভাগ কথা সত্য বলছে, তারা কি জনগণের জন্য জনগণের উপকারে কাজ করছে, না জনগণকে গিলাচ্ছে তাদের এবং ভিনদেশী প্রভুদের নীতি ও চেতনা, এসব নিয়ে কবে ভাববো আমরা?

না, সম্মানিত পাঠক আজ এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা নয়। দেশ-বিদেশের বাস্তব উদাহরণগুলোর আলোকে উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে কেউ চাইলে দুচারটি বই লিখে ফেলতে পারবেন। এবং বাস্তবে তার প্রয়োজনও রয়েছে। কিন্তু আজকের এ সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে আমরা শুধু দেশ-বিদেশের তাজা কয়েকটা উদাহরণ দেখব এবং ভবিষ্যতের জন্য সেগুলোর নোট রাখব।

প্রথমেই আসা যাক মিশর প্রসঙ্গে। মিশর, মুসা আলইহিসসালাম ও ফিরআউনের দেশ, কিবতী সম্প্রদায় ও বনী ইসরাঈলের দেশ, নীলনদ ও তূর পর্বত, সুয়েজ খালের দেশ, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিদ্যাপিঠ আল আযহারের দেশ। পৃথিবীর বহু ইতিহাসের জন্মদাতা এই মিশর। অসংখ্য অগণিত মজলুমের অশ্রু ও রক্ত যেমন প্রত্যক্ষ করেছে মিশরের রাস্তা-ঘাট ও নদী-বন্দর, তেমনি দেখেছে যুগ সেরা ক্ষমতাবান জালিমদের করুণ পরিণতি। সে মিশর আবার দুনিয়াবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে গতমাসের (জুলাই ২০১৩) শুরুর দিক থেকে। মাস খানেক আলোচিত থাকার পর এখন আবার মিশর চলে গেছে অন্তরালে, সামনে এসে গেছে সিরিয়া, কারণ মিশরে যারা যা যা করতে চেয়েছিল তার অনেকখানি করা হয়ে গেছে। এখন মনোযোগ অন্যদিকে ফেরাতে হবে বিশ্ববাসীর। সে জন্যেই সিরিয়া প্রসঙ্গ।

সাম্প্রতিককালে মিশরে কি ঘটেছিল তা কম বেশি সকলেরই জানা থাকার কথা। যুগ যুগের স্বৈর শাসন এবং ৩০ বছর যাবৎ এক ব্যক্তির ক্ষমতা আকড়ে রাখার পর ব্যাপক গণআন্দোলন (যা পরববর্তীতে রবীউল আরব বা আরব বসন্ত উপাধি লাভ করেছে) এবং মিশরের ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ড. মুহাম্মদ মুরসীর ক্ষমতা গ্রহণ, রাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চপদে মোবারকের বসিয়ে যাওয়া লোকজন কর্তৃক মুরসীকে তার দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, পার্লামেণ্ট অবৈধ ঘোষণা করা এমনকি নতুন প্রণিত সংবিধানের উপর ভোটাভুটি করতেও বার বার বাধা দানের ঘটনার মধ্যেই পার হয়ে গেছে প্রায় এক বছর। এরপর হঠাৎ করেই বড় ধরনের সমাবেশ এবং আল্টিমেটাম প্রদান আর ১ দিনের মধ্যেই সেনাবাহিনীর হাতে মুরসীর ক্ষমতাচ্যুতি, এবং অজ্ঞাত স্থানে বন্দী হয়ে থাকা।

আজ আমরা এসব বিষয়ের বিশ্লেষণের দিকে যাব না। আমরা শুধু কথা বলব দুটি শব্দ নিয়ে। তা হচ্ছে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ। মিশর সম্পর্কে মিডিয়াতে হঠাৎ চালু হওয়া শব্দ এ দুটি। ড. মুরসী সেনাবাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর লক্ষ-লক্ষ মানুষ এর প্রতিবাদে নেমে পড়ে রাজপথে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় প্রফেসর এবং সমাজের উচ্চস্তরের লোকজনও এতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। সেনাবাহিনী তাদের অনুগত গণমাধ্যমগুলো ছাড়া অন্য সকল চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েও যখন আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয় তখন আন্দোলনরত জনতার শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ গুড়িয়ে দেয় বোলডোজার ও আকাশ থেকে হেলিকপ্টার দ্বারা আক্রমণ চালিয়ে। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার মানুষকে (হাজারের বেশি মারার কথা স্বীকার করেছে সেনা সরকার নিজেই)।

এ ব্যাপক গণহত্যা চালানো হয় এমন মানুষের উপর যারা ছিল নিরস্ত্র ও নিরীহ। যারা বিক্ষোভ করছিল শান্তিপূর্ণভাবে। তারা জড়ো হয়েছিল তাদের ভোটেই নির্বাচিত দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতিকে তার পদে ফিরিয়ে আনার দাবি নিয়ে। সে লোকগুলোকে দমন করা হল বুলডোজার দিয়ে। খালি করা হল অসংখ্য মায়ের বুক, মা-বাবা দুজনকেই হত্যা করে এতিম করা হল অসংখ্য ছেলে- মেয়েকে। এই গণহত্যা থেকে বাদ পড়েনি শিক্ষাবিদ, অশিক্ষিত, বৃদ্ধ, নারী, শিশু এমনকি দেশি-বিদেশী সাংবাদিকও। পুরো পৃথিবী নিরবে দেখে গেল এ সবকিছু। গণতন্ত্রের মশালবাহী বিদেশী ক্ষমতাবানরা প্রকাশ্যে সমর্থন জানাল সেনাবাহিনীকে। এরপর গণহত্যাকে রাখঢাক করার জন্য হঠাৎ আবিস্কার করা হল পুরোনো একটি শব্দ সন্ত্রাসবাদ। বলা হল অন্দোলনরত লোকেরা সন্ত্রাসী এবং সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমরাও এ দেশের নিরপেক্ষ (!) নামকরা সংবাদপত্রগুলোতে বড় বড় নিবন্ধ পড়লাম মিশর লড়ছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এ সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসবাদের প্রচারের মধ্যেই গণহত্যা ঢাকা পড়ে গেল। বিশ্বাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হল মিশরে গণতন্ত্রপন্থিদের মারা হয়নি বরং যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সন্ত্রাসী, এবং যথা নিয়মে আমাদের দেশসহ পুরো পৃথিবীতে তাদের এজেন্ট মিডিয়াগুলো একই সুরে গানটি বাজাতে থাকল। বিশ্ববাসী দেখল, শুনল এবং অনেকে হয়ত বিশ্বাসও করল। হায়, আমরা কিন্তু নিজের অজান্তেই নির্জলা মিথ্যাকে সত্য মনে করে ফেলি, প্রতারিত হয়ে যাই সহজেই!

আমাদের বাঙ্গালীদেরকে অনেকেই বাঁকা কথা বলে থাকে। আমরা নাকি শুধু অন্যের অনুকরণ করে থাকি। শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি কোনো কিছুতেই নাকি আমাদের স্বকীয়তা নেই। আজ যদি আমরা এমন কিছু খুঁজে পাই যা অন্যেরা আমাদের থেকে নিয়েছে বলে ধারণা করতে পারি তাহলে কেমন লাগবে বিষয়টি?

চলতি সনের ৫ই মে ঢাকা হত্যাকান্ডের (কী বলতে কী বলে ফেললাম। ঐ গণহত্যার অংশবিশেষ প্রকাশ করার দায়ে তো এখন তাদের লাইনের মানবাধিকার নেতাও জেলের ভাত খাচ্ছেন) বা ঢাকা-ঘটনার পর এক নিবন্ধকার সেটির মিল খুঁজেছিলেন ইতিহাসের আরেকটি হত্যাকান্ড বালাকোটের সাথে। সেটিও সংগঠিত হয়েছিল মে মাসেই। অনেক দিক থেকেই তিনি বালাকোট ও ঢাকা হত্যাকান্ডকে এক করে দেখিয়েছিলেন।

এখন মনে হচ্ছে ইতিহাস ভিন্ন আঙ্গিকে লেখার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো ইতিহাসবিদ ও গবেষক চাইলেই লিখে ফেলতে পারবেন মিশর ও ঢাকার মিল-অমিল নিয়ে নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ-নিবন্ধ। বলতে পারবেন মিশরের মতো ঐতিহ্যবাহী দেশও আমাদেরকে অনুকরণ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। লিখতে পারবেন, ২০১৩ সালের মে মাসে ঘটেছিল ঢাকা-কান্ড এবং একই সনের জুলাই-আগস্টে ঘটে গেছে মিশর-কান্ড। ঢাকাতে জড়ো হয়েছিল কয়েক লাখ নিরীহ-নিরস্ত্র বনী আদম। মিশরেও তাই হয়েছিল। ঢাকার লোকেরা একত্র হয়েছিল তাদের ঈমান রক্ষার দাবি নিয়ে। পক্ষান্তরে মিশরবাসী জড়ো হয়েছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে। উভয় সমাবেশকেই পন্ড করা হয়েছে হাজার হাজার সশস্ত্র বিভিন্ন

বাহিনী দিয়ে। অমিলটি হচ্ছে ঢাকার লোকদের উপর আক্রমণ হয়েছে রাতের আঁধারে আলো-বাতি নিভিয়ে দিয়ে। আর মিশর বাহিনী তা করেছে প্রকাশ্যে, এমনকি হেলিকপ্টার থেকে আক্রমণ করেও। পরিণতি এক। ঢাকায় হতাহতের শিকার ঈমানের দাবি নিয়ে আন্দোলনকারীরা আখ্যা পেয়েছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী এমনকি ধর্ম-অবমাননাকারীর খেতাব। মিশরের বিক্ষোভকারীগণও একই সন্ত্রাসী উপাধি অর্জন করেছে সহজেই। আরেকটি মিল হচ্ছে উভয় সমাবেশের লোকজনই ছিল বিশ্বাসী ও ধর্মপ্রাণ। সুতরাং ভবিষ্যত বাঙ্গালী জাতির কেউ এ নিয়ে গর্ব করলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কেউ চাইলে বুক ফুলিয়েই বলতে পারবে, নিরীহ-নিরস্ত্র লোকদের কীভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী বানাতে হয় কীভাবে তাদের দমন করতে হয় তা মিশরের মতো দেশও শিখেছে বাংলাদেশ থেকে।

এমনিভাবে আরো অনেক কিছুই হয়ত এদেশ থেকে রপ্তানি হবে। যেমন নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী কন্যা কর্তৃক মা-বাবাকে কফির সাথে ঔষধ খাইয়ে অজ্ঞান করার পর কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা এবং এক সময়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ, ইয়াবা ও ইয়াবা-ওয়ালাদের প্রেমিকা সে মেয়েটিই হঠাৎ বনে গেল অবুঝ শিশু। দাবি উঠল তার বিচার বন্ধের এবং তাকে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রেরণের। শুধু তাই নয় তার গর্ভধারিনী নিহত মা বেচারি জান দিয়েও রক্ষা পেল না। দাঁড়াতে হল অপরাধীর কাঠগড়ায়। মহিলাটির অপরাধ সে মেয়েকে যথাযথ আদর করেনি। তাকে ইয়াবা সেবন করতে বেশি রাতে বাইরে থাকতে এবং তার ইয়াবা বন্ধুদের

সাথে মিশতে বাধা দিয়েছে। এ আবার কেমন মা।

মিডিয়ার এমন সংবাদ ও বক্তব্য শুনে এক ভদ্রলোক তৎক্ষণাৎ বলে উঠলেন, এখান থেকেই বুঝা যায় এদেশে ইয়াবা ও মাদকের বড় পৃষ্ঠপোষক ও ব্যবসায়ী কারা। মা দুঃখিনীর প্রতি নিজ কন্যার এমন আচরণ দেখে নিজের বিবেকের কাছে দংশিত হচ্ছিলাম বারবার। তাই তো গতকাল দেশকে মায়ের মতো ভালবাসার নসীহত পত্রিকায় পড়ে আঁতকে উঠলাম। কারণ আমি যদি হই ঐশী নামের কেউ তবে তো দেশকে নিঃশেষ করেও আমার ভালবাসার শেষ হবে না; বরং এর পরও আমার কাছে দেশকে হয়ে থাকতে হবে মায়ের আদর-যত্ন ঠিকমতো না দেয়ার অপরাধে দায়ী।

পাঠকমন্ডলী! দেশ-বিদেশে আসছে আরো বহু চমক। শত ইঁদুর নিধনের পর বিড়ালকে হজ্বে পাঠানোর মতো এখন লক্ষাধিক নাগরিককে নিধনকারী সিরিয়ার বাশারের বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে বিশ্বশক্তি। কিন্তু এ আক্রমণের মূল টার্গেট কি বাশার নাকি বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেখানে বাশারের অবিশষ্ট কাজ সমাপ্ত করা এবং বাদ বাকি ধর্মপ্রাণ লোকদেরকে মহাজঙ্গি বানিয়ে শায়েস্তা করার প্রাথমিক ধাপ। এ প্রশ্নের জবাবের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হলেও চোখ ফিরিয়ে দেখুন ইরাক-আফগানিস্তানে।

স্বদেশেও খেল চলেছে বহু রকমের। সাড়ে চার, পৌনে পাঁচ বছরে  জঙ্গি  না পাওয়া গেলেও এখন কিন্তু রাতারাতি ধরা পড়ে যাচ্ছে অনেক জঙ্গি, বেরিয়ে আসছে হরেক রকমের জঙ্গি সংগঠনের পাকা-পাকা, সত্য সত্য তথ্য উপাত্ত। আবার মুরববী দেশের এখানকার প্রতিনিধি নসীহত করেছেন জঙ্গী অর্থায়নের উৎস বন্ধ করতে। সে উৎস এদেশের হাজার হাজার মসজিদ মাদরাসায় দান-খয়রাতকারী ধর্মপ্রাণ বিদ্যোৎসাহী লোকজন নয়তো?

এবার একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। সম্ভবত কালকের সংবাদপত্রে পড়লাম জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাদেরকে এই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা উপাধি দেওয়া হয়েছে। এ খেতাব পাওয়ার পর তাদের কেউ কিন্তু কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। কেউ এ কথা বলেনি যে, এ খেতাবটি তো কয়েক মাস আগে একটি বিশেষ মঞ্চের লোকজন অর্জন করে ফেলেছেন, আমাদের বরং ভবিষ্যত প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা বলে খেতাব দিন। এমন প্রশ্নও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কোনো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী উঠায়নি যে, আমরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কী হবে, চাকুরির ক্ষেত্রে আমাদের মেধাবীদের অধিকার রয়েছে মাত্র ৪৩%। বাকি ৫৭% তো তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়স্বজন এবং আরো কিছু বিশেষ শ্রেণীর জন্য বরাদ্দ!

ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। কথা হচ্ছিল এ যুগের গণতন্ত্র ও মিডিয়ার স্বরূপ নিয়ে। এ দু যুগের চাকচিক্যময় মিথ্যা ও প্রতারণার শিকার এখন দেশ-বিদেশের লক্ষ কোটি মুসলিম জনতা। আরো বেশি আক্রান্ত ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজ। আর কত দিন আমরা প্রতারিত হব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু বহু শয়তান সৃষ্টি করেছি-কতক মানুষ আর কতক জিন। যাদের কতিপয় অপর কতিপয়কে চমকপ্রদ বাক্য দ্বারা কুমন্ত্রণা দিত; প্রতারণার উদ্দেশ্যে; আর যদি আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করতেন তবে তারা এরূপ কাজ করত না। অতএব আপনি তাদেরকে এবং তারা যে মিথ্যা রটনা করে তা বর্জন করুন।-সূরা আনআম : ১১২

সত্যিকারের মুমিন যেমন কারো সাথে প্রতারণা করে না তেমনি সে প্রতারিতও হয় না। সে যেমন মিথ্যা বলে না তেমনি যে কোনো কিছু শুনলেই বিনা বাক্যে, বিনা যাচাইয়ে মেনেও নেয় না। কিন্তু আমাদের অনেকের অবস্থা, হয়তো আরবী সাহিত্যের পড়া একটি গল্পের মনভোলা লোকটির মত। মানুষটি একদল শিশুকে দুষ্টুমি করতে দেখে সে বলে উঠল, আরে! সর্দারজী খেজুর বিলাচ্ছেন আর তোমরা এখানে বসে আছ? শুনেই শিশুরা খেজুরের উদ্দেশ্যে দৌড়াল। একটু পর ঐ মনভোলা লোকটিও এ বলে তাদের পিছু নিল লাআল্লাহু ইয়াকুনু হাক্কান আরে আমার কথা তো সত্যও হতে পারে। আমরা শুধু অন্যদের কাছেই নয় নিজেদের কাছেও প্রতারিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি আমরা খুঁজছি। নির্বাচনের আগে মনে হয় আরো চমক আসবে। আরো জঙ্গি আবিষ্কৃত হবে। কওমী ওয়ালাদের জন্য নতুন নতুন টোপও আসতে পারে (?)

 

 

advertisement