সফর ১৪৩৪   ||   জানুয়ারি ২০১৩

মারকাযের দিনরাত

 

২০/১/৩৪ হি., ৫/১২/১২ ঈ., বুধবার  

প্রত্যেক ইংরেজী মাসের প্রথম বুধবার আসর থেকে এশা পর্যন্ত মারকাযুদ দাওয়ার প্রধান দফতর ৩০/১২ পল্লবীতে ‘দ্বীনী মাহফিল’ অনুষ্ঠিত হয়। আজকের মাহফিলে আসরের পর আলোচনা করেছেন মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী। তিনি ‘ফযীলতপূর্ণ দিবস-রজনী’ বিষয়ে সঠিক ধারণা লাভ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। তারপর সংক্ষেপে সমাজে প্রচলিত দিবস-রজনীর কোন্টা ঠিক কোন্টা ভুল তা আলোচনা করেন।  

বাদ মাগরিব প্রথমে আলোচনা করেছেন মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ছাহেব। তিনি ‘একজন মুসলিমের জীবনে হিজরী সনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে দুধরনের বর্ষগণনা হয়, সৌরবর্ষ, চান্দ্রবর্ষ। হিজরী সন গণনা হয় চান্দ্রবর্ষ হিসেবে। মনে করা হয়, রমযান ও দুই ঈদের জন্যই চান্দ্রবর্ষের গণনার প্রয়োজন। অথচ মুসলিমের জীবনের বহু বিষয় নির্ভর করে চান্দ্রবর্ষের গণনার উপর।  

সন্তানের দুধ পানের বছর গণনা,যাকাতের বর্ষ গণনা,আলামত দ্বারা সন্তানের বালেগ হওয়া বোঝা না গেলে বছর গণনার মাধ্যমে তার বালেগ হওয়ার বিষয়টি ঠিক করতে হয়। আর এক্ষেত্রে বছর গণনা হবে চান্দ্রবর্ষ হিসেবে। সৌরবর্ষ হিসেবে গণনা করলে বছরে ১১দিন বেশি হয়। এ ধরণের আরো অনেক মাসআলা উল্লেখ করে তিনি চান্দ্রবর্ষের হিসাব রাখা ও হিজরী সনের চর্চা রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।   

তারপর মাহফিলের শেষ পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে মারকাযুদ দাওয়ার মুহতারাম মুদীর, দারুল ইফতার প্রধান হযরত মাওলানা মুফতী আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ দামাত বারাকাতুহুম উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাব দেন।  

শুরুতে তিনি সম্মানিত উপস্থিতিকে একটি সুসংবাদ দেন। তিনি বলেন, আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, আমাদের এ মজলিস হাদীস-সুন্নাহ ডটকম নামে (www.hadith-sunnah.com) আমাদের একটি ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। এ সাইটের নির্মাতা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জনাব সাইদ আহমাদ এখানে  উপস্থিত আছেন। আল্লাহ তাকে দুনিয়া-আখেরাতে উত্তম বিনিময় দান করুন। এর মাধ্যমে ঘরের মা-বোনেরা এবং দেশে ও দেশের বাইরে যারা এ মজলিসে উপস্থিত হতে পারছেন না তারাও আলোচনা শুনতে পারবেন।

এরপর তিনি শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। উপস্থিত শ্রোতাদের একজন এল সি-এর উপর মাসিক আলকাউসারে লেখার আহবান জানালে তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ, এ বিষয়ের মোটা মোটা কথা কোনো এক সংখ্যায় লিখতে চেষ্টা করব। যাদের এল সি করার প্রয়োজন হবে তারা নিজ নিজ বিষয়ের বিস্তারিত ধারণা দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে জেনে নিলে ভালো হয়।

 ২১/১/৩৪ হি.,  ৬/১২/১২ ঈ., বৃহস্পতিবার

প্রতি ইংরেজী মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার আসর থেকে মারকাযুদ দাওয়ায় তালাবা-মুদাররিসীনের জন্য মাসিক মুহাযারা অনুষ্ঠিত হয়। মারকাযুদ দাওয়ার আমীনুত তালীম মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম এ মাসের মুহাযারা পেশ করেন। বিষয় ছিল ‘তাওহীদ’।  এর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক নিয়ে পূর্বের মুহাযারায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আযকের মুহাযারায় হাকীমুল উম্মত থানবী রহ. এর ‘খুতুবাতুল আহকাম’ ও ‘তালীমুদ্দীন’ কিতাবদ্বয়ে তাওহীদের যে ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে তার উপর আলোচনা করা হয়েছে। এবং প্রসঙ্গক্রমে পরিভাষা ও পরিভাষাগত তাকসিমের হাকীকত এবং এর শরয়ী ও ফন্নী হাইছিয়াতের উপরও সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। এ মজলিসেই ঘোষণা করা হয়, আগামী মাসের মুহাযারা ৩ জানুয়ারী ২০১২ বৃহস্পতিবার এ  বিষয়েই হবে ইনশাআল্লাহ।

 ২৭/১/৩৪ হি., ১২/১২/১২ ঈ., বুধবার

আজ জোহরের পর মারকাযের হযরতপুর প্রাঙ্গণে মারকাযুদ দাওয়ার মসজিদে আমিনুত তালীম ছাহেব সংক্ষিপ্ত বয়ান রাখেন। তিনি বলেন,অধিকাংশ আকাবির হযরত বিদায় নিয়েছেন। অনেকে বার্ধক্যের সাথে সাথে অসুস্থও, কেউ কেউ শয্যাশায়ী। তিনি বিদায়গ্রহণকারী মুরববীদের জন্য মাগফিরাত ও দারাজাত বুলন্দীর দোয়া  ও ঈসালে সাওয়াব করার তাকিদ করেছেন এবং দেশ ও দেশের বাইরের জীবিত উলামা-মাশায়েখদের  জন্য সুস্থতা ও দীর্ঘ নেক হায়াতের দোয়ার এহতেমাম করতে বলেছেন। বিশেষ করে হযরত মাওলানা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম এবং হযরত মাওলানা কারী বেলায়েত হোসাইন ছাহেব (নূরানী পদ্ধতীর প্রতিষ্ঠাতা) দামাত বারাকাতুহুম। তাঁরা উভয়েই ভীষণ অসুস্থ এবং দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, বুজুর্গদের উপস্থিতি রহমত স্বরূপ।

হযরত মাওলানা মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ. এর ইন্তেকালের আলোচনা করতে গিয়ে  হাদীসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়তে থাকেন এবং বিশেষ বিশেষ শব্দের ব্যাখ্যা করতে থাকেন। মুফতী আমিনী রাহ. এর গুণাবলী ,  অবদান ও তাঁর ইলমী বৈশিষ্ট্যের আলোচনা করেন। মজলিসে উপস্থিত সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, শায়খুল হাদীস রহ. এর জানাযায় মুফতী আমিনী রহ. আগত মুসল্লীদের বলেছিলেন, ‘‘আপনারা সবাই শায়েখ রহ. এর জন্য ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কমসে কম এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করবেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ইতিমধ্যে শায়েখ রহ. এর জন্য এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করেছি।’’ আমিনুত তালীম দামাত বারাকাতুহুম বলেন, আমাদেরও তাঁর জন্য এমনটিই করা দরকার।

 ২৮/১/৩৪ হি., ১৩/১২/১২ ঈ. বৃহস্পতিবার

আজ সন্ধ্যায় জনাব মুদীর সাহেব দামাত বারাকাতুহুম মারকাযের হযরতপুর প্রাঙ্গণে তাশরিফ আনেন। মাগরিবের পর জুমার রাতে আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে মারকাযের বর্তমান মসজিদসংলগ্ন সামনের জমি বায়না করেন। আল্লাহ তায়ালা তার হিম্মতকে আরো বাড়িয়ে দিন। তাঁকে সুস্থ, সক্ষম ও নিরাপদ রাখুন এবং পদে পদে তাঁর মদদ ও নুসরত করুন। আমীন।

এই জমিটি মসজিদের সম্প্রসারণের জন্য খুবই জরুরী ছিল। আল্লাহ তায়ালার শোকর জমিটির বায়না হয়ে গেল। জমি এবং রেজিস্ট্রি খরচই ৭০ (সত্তর) লাখের কাছাকাছি। বায়নার সময় ১০ (দশ) লাখ দেয়া হয়েছে, যার আট লাখই  ঋণ করতে হয়েছে। পাঠকদের প্রতি দরখাস্ত, তারা যেন দয়া করে শেষ রাতের দুআয় খাছভাবে এবং অন্যান্য সময়ের দুআয় আমভাবে মারকাযুদ দাওয়াহ ও সকল দ্বীনী এদারার কবুলিয়াত ও মাকবুলিয়াতের জন্য দুআর এহতেমাম করেন। আল্লাহ তায়ালা যেন উল্লিখিত প্রয়োজনের সাথে সাথে  ছোট বড় অন্যান্য সকল প্রয়োজন স্বীয় ফজল ও করমে পুরা করে দেন। আমীন।-বিভাগীয় সম্পাদক

 

 

 

advertisement