জুমাদাল উলা ১৪৩০   ||   মে ২০০৯

ত র ল খা দ্য :অকৃত্রিম আয়োজনে সর্বনাশা থাবা

খলদুন

অদ্ভুত নীতি ও পদক্ষেপের কারণে দেশের দুগ্ধশিল্প এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। খামারিরা দুধের দাম পাচ্ছেন না। খামারিদের কাছ থেকে দুধ কিনে বিভিন্ন কোম্পানিতে যারা বিক্রি করেন তারাও চোখে অন্ধকার দেখছেন। এজন্য দেশের বিভিন্ন হাটে প্রকৃত দুধের খামারিরা নদী কিংবা ড্রেনে দুধ ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ করছেন। এ পরিস্থিতির পেছনের কারণ হচ্ছে, দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানই খামারিদের কাছ থেকে সাধারণ মাত্রার চেয়ে অর্ধেকেরও কম পরিমাণ দুধ কিনছে। হঠাৎ করে কোম্পানিগুলো এমন আচরণ করার কারণ দুধ আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেওয়া। বিদেশ থেকে এখন কম দামে দুধ আসছে। অনেক ক্ষেত্রে চোরাই পথে ভারত থেকে আসা গুঁড়ো দুধ নিয়ে তরল দুধ তৈরির অভিযোগও উঠেছে।

এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, গত দেড় মাস যাবত গরুপালক কৃষক ও খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছে  দুধ প্রক্রিয়াজাত-প্যাকেটজাত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা আগে দুধ কিনত লিটার প্রতি ২৬/২৭ টাকা করে। আর বিক্রি করত ৪৮/৪৭ টাকায়। এছাড়াও সে দুধ থেকে ননি তুলে রেখে ঘি-মাখন বানাত। এতে তাদের লাভের পরিমাণ থাকত দ্বিগুণ। কেনা দুধ তরল অবস্থায় বিক্রি করত প্রায় অর্ধেক। আর বাকি অর্ধেক দিয়ে বানাত গুঁড়ো দুধ। পরে সেটা বাজারে ছাড়ত। ইদানীং ভারত থেকে কম মূল্যে গুঁড়ো দুধ দেশের ভেতরে প্রবেশ করায় দুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছে।

 

এ পরিস্থিতিতে গরু পালক প্রকৃত খামারিদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে এবং দেশীয় দুগ্ধশিল্প ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অদ্ভুত নীতির কারণে দেশের দরকারি একটি শিল্প যদি এভাবে মার খায় তাতে কেবল যে, দেশের চাহিদাপূর্ণ একটি  খাদ্য বা পুষ্টিসমৃদ্ধ পানীয়ের সংকট তৈরি হবে এমন নয়; বরং এতে এ শিল্পের   বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে যুক্ত কয়েক লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাবে। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পর্যায় থেকে করা হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পানিতে ভেসে যাবে। এদিকে তাই সরকারী উঁচু মহলের আশু সুনজর দেওয়া কর্তব্য।

প্যাকেটজাত তরল খাদ্য নিয়ে নানা সংশয়-বিতর্কের কথা সচেতন দেশবাসী সবাই কমবেশি জানেন। ফ্লেভার ও ক্যামিকেল দিয়ে ফলের রসের প্যাকেট, দুধের ননি থেকে ক্যামিকেল দিয়ে দুধ বানিয়ে বাজারে ছাড়া, প্যাকেটজাত দুধে পচন ঠেকাতে ফরমালিন মেশানো এবং গুঁড়ো দুধ থেকে তরল দুধের প্যাকেট তৈরির অভিযোগ বেশ পুরনো। মানুষ অকৃত্রিম দুধ ও ফলের রস খাওয়ার দিকে মাত্র ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এমন সময়ই দুধের প্রকৃত খামারিদের, দুধের মূল উৎপাদকদের পথে বসানোর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশী-বিদেশী কোনো গভীর ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র জড়িয়ে আছে কি না তাও খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নিতে পারেন দায়িত্বশীলরা। তা না হলে অন্য বহু সেক্টরের মতো এ সেক্টরেও আগাগোড়া পরনির্ভরতার সর্বনাশ নেমে আসতে পারে। 

 

 

advertisement