শাবান-রমযান-১৪৩৩   ||   জুলাই-আগস্ট-২০১২

স মা জ : দ্বীন অনুশীলনের বিকল্প নেই

খসরূ খান

 

 

সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের একটি গভীর আশঙ্কার কথা প্রকাশ হয়েছে পত্রিকার পাতায়। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা মাঝে মাঝে বিভিন্ন সম্ভাবনা ও শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন। একদিক থেকে এটাকে তাদের রুটিন কাজ বলা যায়। কিন্তু বিষয় ও বাস্তবতার কারণে এ আশঙ্কার কথাটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

২১ মে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় তাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, দেশে ভয়াবহ ব্যাধির মতো দানা বাঁধছে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়। নীতি নির্ধারক মহলের অবহেলা আর নজরদারির অভাবে সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার ব্যক্তিদের প্রাণহানির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এখনই এ পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরা না গেলে আগামী ১০ বছরে ভয়াবহ রূপ নেবে সামাজিক অপরাধ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেছেন, সমাজে বর্তমানে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এর সঙ্গে পরিবারগুলো তাল মিলাতে পারছে না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাজ করছে অসম প্রতিযোগিতা। ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর একটি শ্রেণী সামাজিক মূল্যবোধ হারাচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে তীব্র অস্থিরতা।

বিশ্লেষকরা তাদের আশঙ্কার কারণ হিসেবে বেশ কিছু সামাজিক অবক্ষয়কে চিহ্নিত করেছেন। ভবিষ্যতের শঙ্কা এ কারণগুলোর ভিত্তিতেই তারা ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান অবক্ষয় ও ভবিষ্যতের ভয়াবহ সম্ভাব্য বিপর্যয়ের পেছনে যে কারণগুলো তারা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে-(ক) অর্থের বিষয়ে শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে সব মানুষের অসম প্রতিযোগিতা (খ) নৈতিক মূল্যবোধের অভাব (গ) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা (ঘ) অন্য দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা (ঙ) দাম্পত্য কলহ ও স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা (চ) স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার চেষ্টা (ছ) সামাজিক উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া ও রাষ্ট্রের উদাসীনতা (জ) বিষন্নতা ও মাদকাসক্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশের যুব সমাজের ওপর আচরণগত বেইজ লাইন সার্ভে শীর্ষক এক গবেষণায় সামাজিক অবক্ষয়ের এ কারণ ও উপলক্ষগুলো বেরিয়ে এসেছে। গবেষণার বিশেষ একটি ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়েছে, শহর ও গ্রামাঞ্চলে ষাটের দশকের তুলনায় বিবাহবহির্ভূত ও বিবাহপূর্ব  অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার হার তিনগুণ বেশি। বর্তমানে প্রতি ১০ জনে তিনজন অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে করে পারিবারিক বিশ্বাসে ফাটল ধরছে।

নৈতিক অবক্ষয়ের আজকের চিত্রটি বড়ই ভয়াবহ। প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় পিলে চমকানো খবর বের হচ্ছে। বাবা কিংবা মা হত্যা করছে তার নবজাতককে। দাম্পত্য কলহের জের ধরে হত্যার শিকার হচ্ছে স্ত্রী-সন্তান। পরকীয়া রূপ নিচ্ছে বিষবৃক্ষে। টাকার জন্য মাদাকাসক্ত খুন করছে প্রিয়জনকে। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রী খুন করছে একে অপরকে। কেবল পেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতেই নয়, পরিবারের আপনজনদের কাছেও মানুষ নিরাপদ থাকছে না। এসব সামাজিক অপরাধ ও নৈতিক অবক্ষয় বর্তমান পরিস্থিতির একটি ভয়াবহ চেহারা সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা অনুযায়ী দশ বছর পর যদি এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ও তীব্র রূপ ধারণ করে তাহলে কেমন হবে সামাজিক পরিবেশ! ভাবলেই বুক কেঁপে ওঠে।

সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা তাদের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাদের পুরো বিশ্লেষণ ছিল পার্থিব ও ইহজাগতিক লাভ-ক্ষতি কেন্দ্রিক। তাদের আশংকা বাস্তবে পরিণত হলে সমাজ যে আর বসবাসের যোগ্য থাকবে না-তারা সেটাই বোঝাতে চেষ্টা করেছেন। অনন্ত পরকালের কঠিন-কঠোর পরিস্থিতির কথা তারা বলেননি। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার সময় দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানেরই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথা আমাদের চিন্তা করা উচিত। তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারব, অবক্ষয়ের পথে কোথাও শান্তির জীবন নেই। নগদ ইহকালেও নেই, অনন্ত পরকালেও নেই। বিশ্লেষকদের গবেষণাজাত আশংকার দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো, দ্বীন ও দ্বীনী নৈতিকতাকে আপন করে নেওয়া ছাড়া মানুষ কোথাও মুক্তি পেতে পারে না। অবক্ষয়ের যেসব উপলক্ষ ও কারণের কথা তারা বলেছেন, তাতেও  দেখা যাচ্ছে, দ্বীনের অনুশীলন থেকে দূরে সরে যাওয়ায় সমূহ বিপর্যয় নেমে আসছে। অদূর ভবিষ্যতেই এ বিপর্যয়ের চেহারা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে দুনিয়াতে বাঁচতে হলেও ইসলামের অনুশীলন ছাড়া কোনো মুক্তি নেই। অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতি ও মাদকাসক্তি এবং অর্থকড়ির উদগ্র লোভের পেছনে ছোটার কারণ হচ্ছে আখিরাত বিসর্জন দিয়ে কেবল দুনিয়ায় ভোগ ও সুখের সন্ধান। কিন্তু এ পথে তো সেই দুনিয়ার সুখেরও কোনো পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো ভয়াবহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে সমাজ। আরও তীব্র বিপদের আশঙ্কার কথা ধ্বনিত হচ্ছে। সুতরাং সত্য এটিই যে, আখিরাতের কল্যাণের কথা বাদ দিলে দুনিয়ার কোনো কল্যাণের পথ খোলা থাকে না। এ সত্যটা যত দ্রুত আমরা বুঝতে পারব এবং আমাদের নীতি নির্ধারকরা গ্রহণ করতে পারবে ততই কল্যাণ।

 

 

 

 

advertisement