রজব-১৪৩৩   ||   জুন-২০১২

একটি তর্কের ছবি

আবু তাশরীফ

আলোচনা হঠাৎ করেই চলে গেল অন্যদিকে। আন্তঃধর্ম বিয়ে বা বিশেষ বিয়ে আইনের বিষয়টি সামনে চলে এলো। এ আইনে নারী-পুরুষ ভিন্ন ধর্মের হলেও তাদের বিয়ে দেওয়া যাবে। সম্প্রতি এরকম একটি আইনের অনুমোদন নিয়ে তোড়জোড় চলছে। সরকারি কাজকর্মের উচ্চকণ্ঠ সমর্থক একজন বলে বসলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তো হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। আন্তঃধর্ম বিয়ের ব্যাপারটাতো নতুন নয়। এটা নিয়ে আইন করলে এত ক্ষেপে যাওয়ার তো কিছু নেই।

তখন অপর একজন বললেন, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের কাছে সম্মানীয়। তাকে আমরা সম্মান করি তার কবিতার ভাবসম্পদের জন্য। তার ব্যক্তিজীবন আর ধর্মীয় জীবন

আমাদের সামনে কোনো আদর্শ নয়। ধর্মতত্ত্ব তার বিষয় ছিল না। ওই অঙ্গনে তিনি একজন অথরিটি- এটা কেউ দাবিও করে না। কবি-সাহিত্যিকদের সাফল্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি বিবেচনা করা হয় তার কাব্য-সাহিত্যের পারঙ্গমতা আর ভাবসম্পদের প্রাচুর্য দিয়ে। তার ব্যক্তিজীবনের আদর্শ দিয়ে নয়।

দুজনের তর্কে আমরা কজন ছিলাম নীরব শ্রোতা। উপভোগ করছিলাম আলোচনা। প্রথমজন আবার বললেন, তাহলে সফল কবি-সাহিত্যিকদের জীবন থেকে আমাদের নেওয়ার মতো কি কিছুই নেই? এভাবে নাকচ করে দিলে তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাটা

থাকলো কোথায়?

দ্বিতীয়জন এবার বললেন, যেসব কবি-সহিত্যিকের ব্যক্তিজীবনে আদর্শের অনুশীলন রয়েছে তাদের জীবন থেকে অবশ্যই নেয়ার অনেক কিছুই আছে। তা না হলে তাদের কাব্য-সাহিত্যের ভাবসম্পদ থেকে কিছু

আহরণ করেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অবশ্য যাদের লেখায় শাব্দিক কারুকাজের বাইরে কোনো সুন্দর দ্যুতি নেই তাদের ভাবসম্পদও

গ্রহণ করা যাবে না। কেবল শব্দের মাধুর্য চেখে থেমে যেতে হবে। তাদের লেখার প্রতি মুগ্ধতাই তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। তারা এতটুকুই চান। এরচেয়ে  বেশি তারা চানও না।

প্রথমজন বললেন, কেন-দেশবরেণ্য কোনো লেখকের জীবনের ব্যতিক্রমী একটি বিষয়কে কি আমরা অনুসরণ করতে পারি না?

দ্বিতীয়জন বললেন, ইসলামের নীতির সাথে না মিললে পারি না। কারণ, মুসলমানের বিশ্বাস ও ভাবনা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনগুলোতে ইসলামী অনুশাসন ও

আদর্শের বাইরে অন্য কোনো কিছুই তুলনীয় নয়। কোনো কবি-সাহিত্যিকের জীবন বা রচনাও নয়, কোনো দার্শনিক কিংবা রাষ্ট্রনায়কের বাণী বা নির্দেশনাও নয়।

প্রথমজন আবার কিছু বলতে চাইলে দ্বিতীয়জন বললেন, এদেশের একজন প্রবীন সব্যসাচী লেখক আছেন। তার লেখার নামডাক সব মহলে। কিন্তু তার চরিত্র হচ্ছে খোলা হাট। এক বিতর্কিত নারী ওই সব্যসাচী লেখকের নানান চারিত্রিক কর্মকান্ড নিয়ে তার একটি বইয়ে (ক) কিছু পৃষ্ঠা খরচ করেছে। এতে ওই সব্যসাচী

কোর্টকাচারি মাড়িয়ে পরে চুপচাপ হয়ে গেছেন। এখন কি আপনি বলবেন- তাকেও তার ব্যক্তিজীবনের জন্য আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হবে? আসলে যার যেখানে সম্মান প্রাপ্য তাকে সেখানেই সম্মান করতে হবে। সে সম্মানের জায়গাটিকে টেনে

আরও দশ জায়গায় নেওয়ার মানে হলো তাকেই খাটো করার চেষ্টা করা। এটা করা উচিত নয়।

প্রথমজন হার মানার মানুষ নন। তিনি অন্য একটি যুক্তি তুলে ধরতে যাচ্ছেন। তর্কটা জমে উঠছে।

কিন্তু দুজনের সে তর্কে আমাদের আর বসে থাকা সম্ভব হয়নি। সেদিনের মতো আমরা উঠে পড়ি। তা না হলে বাসের সিটটাই কেবল হারাতে হবে না, বাসায় ফেরার বাস পাওয়াই মুশকিল হয়ে যাবে। 

 

 

advertisement