সফর-১৪৩৩   ||   জানুয়ারি-২০১২

একটি আহত হৃদয়ের ভাবনা

বিনতে আহমদ

সফলতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, ব্যর্থতাও। পৃথিবীর প্রত্যেকটি বিষয় আল্লাহর ফয়সালায় হয় এবং মানুষের জন্য আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়াই কল্যাণকর। এই বিশ্বাসেই আছে প্রত্যেক মুমিন বান্দার বেদনার উপশম। আসলে এভাবে লেখা শুরু করার উদ্দেশ্য হল, নিজের সান্ত্বনা লাভ। একই সাথে অন্য কোনো হৃদয়ও যদি কিছু সান্ত্বনা লাভ করে তবে তা হয়ত আমার জন্য হবে আল্লাহর রহমত লাভের অসিলা।

আমি একজন মেডিক্যাল ভর্তিচ্ছু স্টুডেন্ট ছিলাম। আড়াই মাসের প্রস্ত্ততি নিয়ে হাজার হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে বিজয়ী হওয়া ছিল অসম্ভব বিষয়। কিন্তু মানুষের আশা তো সম্ভব-অসম্ভব বিচার করে না। তাই আমিও আশায় বুক বেঁধেছিলাম। হয়ত চান্স পেয়েও যেতে পারি। কিন্তু তা-ই হল, যা হওয়ার ছিল। বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা লাভের চেষ্টা করছি। কিন্তু বারবার অস্থির হয়ে পড়ছি। আসলে প্রস্ত্ততির সময় অল্প হলেও পরিশ্রম করেছি প্রচুর। তাই অবুঝ হৃদয় বারবার বিচলিত হয়ে উঠছে।

আমি তো শূন্য যোগ্যতার একজন মানুষ। পৃথিবীতে আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ করছি। তাই আমারও কর্তব্য, আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর বান্দাদের খিদমতে নিয়োজিত হওয়া। মেডিক্যাল সাইন্সে পড়ার উদ্দেশ্য ছিল, হয়ত এর দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমতের একটা সুযোগ আসবে। কিন্তু এসব তো আমার চিন্তা ও ধারণা। ভবিষ্যতের গর্ভে কী লুকিয়ে আছে তা তো আমার জানা নেই। তা জানেন একমাত্র সর্বজ্ঞানী আল্লাহ।

আর তিনি যে তার বান্দার প্রতি অতি মেহেরবান-এতেও তো কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং তাঁর ফয়সালাই আমি মেনে নিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি এতেই আমার কল্যাণ।

***

আমরা মুসলিমরা আজ চতুর্দিক হতে আক্রান্ত, ক্ষত-বিক্ষত। চারদিকে বাতিলের জয়জয়কার, মিথ্যা-অসত্যের দাপট। ভবিষ্যতের দিকে যদি তাকাই তাহলে আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য দেখতে পাই না কোনো আলোকবিন্দু। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত আছে মুসলমানের ভবিষ্যত প্রজন্ম। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। আর এর বিনিময়ে চিড় ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের ঈমান ও বিশ্বাসে। তাদেরকে বানানো হচ্ছে বস্ত্তবাদের একনিষ্ঠ পূজারী। তাদেরকে অনুশীলন করানো হচ্ছে আধুনিকতার নামে অশালীন সংস্কৃতির। ফলে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও তারা লিপ্ত হচ্ছে নানা ধরনের জঘণ্য অপকর্মে। ব্যর্থ হলে নিমজ্জিত হচ্ছে হতাশায়। এমনকি সমাধান হিসেবে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। এভাবে মৌলিক শিক্ষার অভাবে অসংখ্য প্রাণ ও মেধা আমরা হারিয়ে ফেলছি প্রতিনিয়ত।

কোনো সন্দেহ নেই, নিজ নিজ অবস্থানে আমরা তীব্র বেদনা অনুভব করি। কিন্তু আমাদের ঈমানের দাবি এর চেয়েও অনেক বেশি। আমাদের নেমে আসতে হবে কর্মের ময়দানে। অল্প সময়ের জন্য আমরা সেই গরীব কাঠুরিয়ার গল্পে ফিরে যেতে পারি। গল্পটি আমরা সবাই জানি। অধিক বর্ণনার কারণে যদিও তা আমাদের কাছে সাধারণ মনে হয়, কিন্তু এর তাৎপর্য অনেক গভীর। সেই গল্পে আমরা দেখতে পাই, সেই গরীব লোকটিকে শুধু ভিক্ষার অসম্মান বুঝিয়ে দায়িত্ব শেষ করা হয়নি। তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি কুঠার। ব্যস, এতটুকুই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বিপর্যস্ত উম্মতের জন্য এই ব্যবস্থাটাই এখন প্রয়োজন। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধকে কোনোভাবেই নিরুৎসাহিত করা যায় না। তবে এর পাশাপাশি অতি জরুরি উম্মতের জন্য একটি আদর্শ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করা।

বাতিলগোষ্ঠী ভোগের দুনিয়ার রঙিন ঝলকানি দিয়ে এ উম্মতকে পথভ্রষ্ট করছে। এর বিপরীতে আমরা এমন কিছু আবিষ্কারের চিন্তা করতে পারি, যা উম্মতকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সত্য ও সুন্দরের একনিষ্ঠ অনুসারী করবে। স্বচ্ছ ও দৃঢ় বিশ্বাসের বাহক বানাবে। আমরা চাই প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের পথ-নির্দেশনা-কী আমরা আবিষ্কার করব, কীভাবে তা পৌঁছবে সারা দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের কাছে।

আমরা যদি সম্মিলিতভাবে চিন্তা করি তাহলে আল্লাহর পক্ষ হতে নুসরত হবে। পথ আল্লাহ তাআলা দেখাবেন। পাথেয়ও তিনিই দান করবেন। তবে প্রয়োজন আমাদের আগ্রহ ও আত্মনিবেদন।

আল্লাহ রাববুল আলামীন তো সম্মিলিত প্রার্থনা অনেক বেশি পছন্দ করেন। সুতরাং অনেকগুলো হৃদয়ের সম্মিলিত প্রার্থনা যখন আল্লাহর দরবারে উপস্থাপিত হবে তখন তা কবুলিয়্যাতের পাল্লায় থাকার আশা করতে পারি। আসলে এগুলো একটি আহত হৃদয়ের বিক্ষিপ্ত কিছু ভাবনা।

আল্লাহর দরবারে অযোগ্য বান্দার আকুল মিনতি-ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে দান কর এমন সিপাহসালার, এ উম্মতের জন্য যার প্রাণ কাঁদবে, অশ্রু ঝরবে এবং উম্মাহর তরুণ-যুবকদের যিনি দেখাবেন মুক্তির রাজপথ। আমীন। 

 

 

advertisement