শাবান-রমজান ১৪৩০   ||   আগষ্ট-সেপ্টেম্বর ২০০৯

সালিশ, হদ, তা’যীর, ফতোয়া বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ
মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ

[ফতোয়া, হদ, তাযীর, তাদীব, গ্রাম্য সালিশ ও বিচার ইত্যাদি বিষয়ে ‘মাসিক আলকাউসারে’র পক্ষ হতে মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর আমীনুত তা’লীম মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেবের একটি মূল্যবান সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সামপ্রতিক সময়ে গ্রাম্য সালিশে দোররা মারাকে কেন্দ্র করে ফতোয়া বিরোধী অপপ্রচার, দারুল ইফতা ও ফতোয়ার কার্যপরিধি, হদ, তাযীর, তাদীব, নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে তিনি খোলামেলা ও কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক প্রামাণিক আলোচনা করেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন-মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ ও মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ।]

প্রশ্ন : গত মাসখানেক যাবত দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে ফতোয়া প্রদান ও দোররা মারার ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে তোলপাড় হচ্ছে। এজন্য ফতোয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। ফতোয়া আসলে কী? ফতোয়া কি নারী নির্যাতনের একটি হাতিয়ার?

উত্তর : মিডিয়ায় যে ঘটনাগুলো আসছে এবং যেভাবে পরিবেশিত হচ্ছে তা কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ এটা একটা প্রশ্ন। কোনো কোনো ঘটনায় যে তিলকে তাল বানানো হয়েছে তা-ও তো মিডিয়ার দ্বারাই জানা যাচ্ছে। তবে বাস্তবতা যাই হোক, যেহেতু একশ্রেণীর মানুষ এর সঙ্গে ‘ফতোয়া’কে জড়িয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ ইসলামী পরিভাষাকে অশ্রদ্ধার বিষয়ে পরিণত করছে তাই এ বিষয়ে সচেতনতা অর্জন করা দরকার। এজন্য আপনার প্রশ্নের এই অংশটা যুক্তিসঙ্গত যে, ফতোয়া কাকে বলে। আর ফতোয়া কি নারী নির্যাতনের হাতিয়ার? এই প্রশ্নটি এসেছে মিডিয়ার কারণে। ফতোয়া নারী নির্যাতনের হাতিয়ার নয়, ফতোয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ ইলমী পরিভাষা, নারী-প্রসঙ্গে সীমাবদ্ধ কোনো বিষয় নয়। এটি ব্যাপক একটি বিষয় এবং নারী-পুরুষ সবার কল্যাণের জন্যই ফতোয়া। এই বিষয়টা বোঝার জন্য প্রথমেই বুঝতে হবে, ফতোয়া কাকে বলে।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীতে বসবাস করতে দিয়েছেন, কিন্তু এটাই মানুষের একমাত্র জীবন নয়। আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন এবং সেটাই মুমিনের ওয়াতন। আখিরাতে আল্লাহ তাআলার সন'ষ্টি ও নৈকট্যের যে অংশ তার নাম জান্নাত। আমাদেরকে সেখানে যেতে হবে। জান্নাতের অধিবাসী হতে হবে। জান্নাতের অধিকারী হতে হলে দুনিয়ার জীবন সেভাবেই অতিবাহিত করতে হবে যেভাবে আল্লাহ তাআলা বলেছেন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত ছোট বড় সকল বিষয়ে আল্লাহর অনুগত থাকতে হবে। এই বিধান যেমন আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য তেমনি তাঁর বিদ্রোহী বান্দাদের জন্যও। তারা মানছে না তা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু তারাও এই বিধানের অধীন।

মোটকথা, আমাদেরকে দুনিয়ায় থাকতে হবে এবং আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকতে হবে। অতএব আমাদেরকে দুনিয়ার বিষয়ে যেমন জানতে হবে তেমনি আল্লাহর বিধানও জানতে হবে।

আল্লাহ তাআলার মেহেরবানী যে, দু’ ধরনের জ্ঞানই আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন। নিছক বৈষয়িক বিষয়গুলো, যা মানুষ জ্ঞান, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার দ্বারা সমাধান করতে পারে তা-ও আল্লাহ তাআলা প্রথমে নবীদের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়েছেন। মৌলিক জ্ঞান অর্জনের পর মানুষ যখন এই উপযুক্ত হয়েছে যে, চিন্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সে সামনে অগ্রসর হতে পারে তখন এই বিষয়গুলো মানুষের চিন্তা শক্তির উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নবীদের মাধ্যমে তা জানানোর প্রয়োজন থাকেনি। আর আল্লাহর বিধান ও আখিরাতের জ্ঞান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে দান করেছেন ওহীর মাধ্যমে । কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে তা সংরক্ষিত আছে। আমরা পার্থিব সমস্যার সমাধানের জন্য চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞদের কাছে যেতে পারি, কিন্তু কুরআন-সুন্নাহর বিষয়ে জানতে হলে আমরা কোথায় যাব? দুনিয়ার বিষয়ে আমাকে জানতে হবে প্রয়োজন পরিমাণ, কিন্তু আখিরাত তো আমার মাকসাদে হায়াত জীবনের পরম লক্ষ্য। এই বিষয়ে আমি জানব কোত্থেকে? অন্যভাষায় বলি, আমার দেহ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যাই, কিন্তু আত্মা অসুস্থ হলে, অন্তরের পরিচর্যা প্রয়োজন হলে কার কাছে যাব? তো এটা স্বীকৃত কথা যে, সমস্যা যে বিষয়ের সে বিষয়ের যিনি পারদর্শী আমাকে তারই শরণাপন্ন হতে হবে। অতএব আমি যদি দ্বীন সম্পর্কে, দ্বীনের আহকাম সম্পর্কে, আল্লাহর বন্দেগী সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে আমাকে তার কাছেই যেতে হবে যিনি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। আল্লাহর বিধান নিতে হবে কুরআন মজীদ থেকে, যা আল্লাহর কালাম; হাদীস ও সুন্নাহ থেকে, যা কালামুল্লাহর ব্যাখ্যা এবং ইজমা ও কিয়াস থেকে, যা কুরআন ও সুন্নাহর দ্বারা দলীল হিসেবে প্রমাণিত। সেজন্য যারা কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তের অন্যান্য দলীলের পারদর্শী তাদের শরণাপন্ন হতে হবে। যিনি সমাধান জানার জন্য শরণাপন্ন হলেন তিনি হলেন ‘মুছতাফতী’ (অর্থাৎ ফতোয়া প্রার্থানাকারী), যে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলেন তিনি ‘মুফতী’ অর্থাৎ ফতোয়া প্রদানকারী, কুরআন-সুন্নাহ ও শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে সমাধান দেওয়ার যে কাজ মুফতী করেন তা হচ্ছে ‘ইফতা’ এবং সমাধানটিকে বলা হয় ‘ফতোয়া’। এই হচ্ছে ফতোয়া বিষয়ক বিভিন্ন পরিভাষা।

তাহলে ফতোয়া হচ্ছে কেউ যখন দ্বীন সম্পর্কে, আখিরাত সম্পর্কে কিংবা দুনিয়ার কোনো বিষয়ে আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে জানার জন্য ফকীহর কাছে যায় তখন তিনি কুরআন-সুন্নাহ ও শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত দেন তা-ই ‘ফতোয়া’। এই পরিভাষাগুলো নতুন কিছু নয়। কুরআন সুন্নাহয় এগুলো রয়েছে। কুরআন মজীদে আছে তারা আপনার নিকটে ফতোয়া চায়, বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন। ফতোয়ার সমার্থক আরেকটি শব্দ হচ্ছে ‘সুওয়াল’। কুরআন মজীদে বিভিন্ন জায়গায় এসেছে, ‘তারা আপনাকে প্রশ্ন করে।’ এরপর আল্লাহ তাআলা সে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। হাদীস শরীফেও বিভিন্ন জায়গায় ‘সুওয়াল’ ও ‘ইস্তিফতা’ শব্দ এসেছে।

মোটকথা, কুরআন-হাদীসের বহু জায়গায় এইসব পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে এবং সে অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে যা এক্ষণ বলা হল। এই হচ্ছে ফতোয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

প্রশ্ন : আপনি বলেছেন যে, ফতোয়ার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। এ বিষয়ে আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে বলবেন কি?

উত্তর : দেখুন, ফতোয়া আকাইদ সম্পর্কে হয়, ইবাদাত যেমন নামায-রোযা, তাসবীহ-তেলাওয়াত ইত্যাদি সম্পর্কে হয়; মুআমালাত অর্থাৎ বেচাকেনা, লেনদেন, আয়-ব্যয় ইত্যাদি বিষয়ে হয়, মুআশারাত তথা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের অধিকার ও আদব-কায়েদা সম্পর্কে হয়। পিতামাতার সাথে, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির সাথে, পাড়া-পড়শীর সাথে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে, সমাজের পরিচিত ও অপরিচিত লোকদের সাথে এমনকি গাড়িতে যিনি পাশের সিটে বসেছেন তার সাথেও আচার-আচরণ কেমন হবে, তাদের হক ও অধিকার কী-এ সম্পর্কেও ফতোয়া হয়। তদ্রূপ অন্তর্জগতের পরিশুদ্ধি ও পরিচ্ছন্নতা, কী কী দোষ থেকে অন্তরকে পবিত্র করতে হবে এবং কী কী গুণ দ্বারা তা সজ্জিত করতে হবে তাও ফতোয়ার বিষয়। কিবর, হাসাদ, কীনা-বুগয থেকে অন্তরকে পবিত্র করতে হবে। তাওয়াজূ, সবর, তাওয়াক্কুল, রিযা বিলকাযা বসাতে হবে। এটা ফতোয়া বলে দিবে।এভাবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ফতোয়ার দিক-নির্দেশনা রয়েছে।

ইসলামের বৈশিষ্ট্যই এই যে, দ্বীন ও দুনিয়ার সকল বিষয় ইসলামে অন্তর্ভুক্ত। ইসলামের অনুসারীদেরকে দুনিয়া ছাড়তেও হবে না কিংবা দুনিয়ার বিষয়ে অন্যদের নীতি নির্দেশনার মুখাপেক্ষীও হতে হবে না। আল্লাহ তাআলা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে ইবাদতের বিধান যেমন দান করেছেন তদ্রূপ দুনিয়ার জীবনের সকল ক্ষেত্রের নীতি ও বিধান দান করেছেন। তাই কুরআন-সুন্নাহ্য় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকল বিষয়ের সমাধান রয়েছে। পৃথিবীর অবস্থা যতই পরিবর্তিত হোক, সময় কখনো ইসলামকে অতিক্রম করতে পারবে না। সর্ব যুগে সে সময়ের করণীয় শরীয়তের দলীলের আলোকে জেনে নেওয়া সম্ভব। ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত যদি কেউ ইসলাম মোতাবেক চলতে চায় তবে তার পথ-নির্দেশ কুরআন-সুন্নাহ্য় এবং কুরআন-সুন্নাহর সারনির্যাস ‘আলফিকহুল ইসলাম’ থেকে গ্রহণ করা সম্ভব।

এখানে একটি কথা বলা দরকার যে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন, ‘মুকান্নিনাহ’, আইন প্রণয়নকারী বিভাগ, ‘মুনাযযিমা’ বা প্রশাসন কিংবা ‘আদলিয়্যাহ’ বা বিচারবিভাগ ইত্যাদি সকল প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাগত যে কাঠামো তার সবই যে আধুনিক যুগের অবদান তা নয়, ব্যবস্থাপনাগত বহু বিষয় এমন রয়েছে, যা আমাদের পূর্বসূরীরা অর্থাৎ সাহাবা-তাবেয়ীন উদ্ভাবন ও অনুসরণ করেছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এই সব বিষয় যতটা আমরা মুসলমানরা গ্রহণ করেছি তার চেয়ে অনেক বেশি গ্রহণ করেছে অমুসলিমরা। আর আমরা তাদের মাধ্যমে ওই বিষয়গুলো গ্রহণ করে কৃতার্থ হয়ে যাচ্ছি! অথচ এগুলো ছিল আমাদেরই উত্তরাধিকার। যাই হোক, এটা মূল বিষয় নয়। ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ে পরিবর্তন হতে থাকে, তাই এগুলো মুখ্য বিষয় নয়, রাষ্ট্র-পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতিগত যে দিক সেটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। তাহযীব ও শরীয়তের ক্ষেত্রে ইসলাম আমাদেরকে অন্যদের মুখাপেক্ষী করে রাখেনি। এসব বিষয়ে মুখাপেক্ষিতা তখনই আসবে যখন কুরআন ও সুন্নাহকে পরিত্যাগ করা হবে, যা এখন হচ্ছে। ইসলামের পূর্ণতা, ব্যাপকতা, গভীরতা এবং সকল দ্বীন ও তাহযীবের উপর তার অবদান সম্পর্কে জানা না থাকার কারণেই মুসলমানদের মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে চর্চার অভাব এর মূল কারণ।

এখন আমি যা বলতে চাচ্ছি তা এই যে, একটি রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে প্রশাসন ও বিচার বিভাগ কীভাবে পরিচালিত হবে-এইসব বিষয়ের নীতি ও বিধানও ইসলামে রয়েছে।

প্রশ্ন : আমরা যদি ইসলামের ব্যাপকতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করতে চাই তাহলে এর সহজ উপায় কী?

উত্তর : আপনি কুরআন মজীদের ১১৪ টি সূরা, ৬২৩৬টি আয়াত, সূরা ফাতিহা থেকে নাস পর্যন্ত পড়ুন, সেখানে যেমন পাবেন আকীমুস সালাহ, আ-তুয যাকাহ, কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম তদ্রূপ পাবেন, ওয়াবিলওয়ালিদাইনি ইহসানা, ওয়া আহাল্লাল্লাহুল বাইআ ওয়া হাররামার রিবা, আরো পাবেন আককালূনা লিসসুহতি, (ঘুষ সম্পর্কে)। রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ধির বিধান যেমন পাবেন তেমনি যুদ্ধের বিধানও পাবেন। মোটকথা, আকীদা ও ইবাদত সংক্রান্ত নীতি ও বিধানের পাশাপাশি লেনদেন, সামাজিকতা, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন-বিচার, যুদ্ধ ও শান্তি ইত্যাদি সকল বিষয়ে দিক নির্দেশনা পাবেন। এভাবে হাদীস শরীফেও দেখুন। বিষয়ভিত্তিকভাবে সংকলিত হাদীসের যেকোনো কিতাব হাতে নিন। তাতে যেমন আকাইদ ও ইবাদাত বিষয়ক অধ্যায় রয়েছে তেমনি মুআমালাত-মুআশারাত-আখলাক বিষয়ক অধ্যায় রয়েছে। সেইসব অধ্যায়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস ও সুন্নাহ সংরক্ষিত আছে।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাহাবায়ে কেরাম যেভাবে উম্মতকে পরিচালনা করেছেন, বিভিন্ন বিষয়ে তাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তাকে বলা হয় ‘আছারে সাহাবা’। যেসব গ্রন্থে তা সংকলিত হয়েছে, যেমন মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ইত্যাদি যদি খোলেন তাহলে উপরোক্ত সকল অধ্যায় তাতেও দেখতে পাবেন। এরপর কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহ, আছারে খোলাফা ও আছারে সাহাবার আলোকে যে ‘আলফিকহুল ইসলামী’ নামক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার তৈরি হয়েছে তাতেও আপনি উপরোক্ত সকল প্রসঙ্গ পাবেন। একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি : এই নিকট অতীতে বড়জোর তিনশ, সাড়ে তিনশ বছর আগে বাদশাহ আলমগীর রাহ.-এর আমলে ‘আলফাতাওয়াল হিন্দিয়া’ নামে যে গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে, যাকে আলফাতাওয়াল আলমগীরিয়্যাহও বলা হয়, দুই শত ফকীহ বাদশাহ আলমগীর রাহ.-এর তত্ত্বাবধানে তা প্রস্তুত করেছেন। বাদশাহ আলমগীর নিজেও ফকীহ ছিলেন। মোল্লা নিযামুদ্দীন রাহ., শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ.-এর পিতা শাহ আবদুর রহীম রাহ.ও তাঁদের অন্যতম ছিলেন। এই গ্রন্থে শুধু মাসআলা সংকলিত হয়েছে, দলীল উল্লেখ করা হয়নি, যদিও সব মাসআলারই দলীল আছে। বড় পৃষ্ঠায় ছোট ছোট অক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে। তার এক পৃষ্ঠা এখন কম্পিউটারে কম্পোজ করা হলে আড়াই পৃষ্ঠা বা তারও বেশি হবে। বৈরূত থেকে ছয় খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি খণ্ডের পৃষ্ঠাসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ বা তারও বেশি হতে পারে। এই ফতোয়ায়ে আলমগীরীর ইবাদত বিষয়ক অধ্যায়-সালাত, যাকাত, সওম, হজ্ব ইত্যাদিতে ব্যয় হয়েছে এক খণ্ডেরও কম। অবশিষ্ট পাঁচ খণ্ডেরও বেশি পরিসরে রয়েছে ইবাদাত ছাড়া অন্যান্য প্রসঙ্গ। এ থেকে ফতোয়ার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু অনুমান করা যায়। তাই এই ধারণা করা যে, ফতোয়া হচ্ছে নারীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়-এটা এক ধরনের, কী বলব, ভদ্র ভাষায় বললেও ‘জাহালাত’ (মূর্খতা) বলতে হয়।

মোটকথা, দ্বীন ও শরীয়ত এবং ইসলামী তাহযীব যত ব্যাপক ও বিস্তৃত ফতোয়াও ঠিক ততটাই বিস্তৃত। কেননা, ফতোয়া তো হচ্ছে দ্বীন ও শরীয়তেরই উপস্থাপন। এটি ইসলামের একটি মুকাদ্দাস, মুয়াককার (পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ) পরিভাষা, একটি মুকাদ্দাস ও মুয়াককার দ্বীনী কাজ। আল্লাহর নবী হযরত আদম আ. থেকে এর সূচনা এবং আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শরীয়ত অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত তা বিদ্যমান থাকবে। আর যখনই তা বন্ধ হবে তখনই কিয়ামত সংঘটিত হবে।

প্রশ্ন : তাহলে আমরা বলতে পারি যে, দেশের প্রশাসন ও আইন ব্যবস্থা ফতোয়া থেকে সহযোগিতা পেতে পারে?

উত্তর : অবশ্যই; বরং এটাই তাদের দায়িত্ব। কেননা, যাদেরকেই আল্লাহ তাআলা ক্ষমতা দিয়েছেন তাদের কর্তব্য, আল্লাহর হুকুম মোতাবেক হুকুমত পরিচালনা করা। এজন্য আল্লাহর পক্ষ হতে তারা আদিষ্ট। এখন হুকুমত যাদের হাতে তারা নিজেরা যদি সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকে আল্লাহর বিধান আহরণ করতে না পারেন তাহলে তাদেরকে অবশ্যই যারা জানেন তাদের শরণাপন্ন হতে হবে। এটাই তো ফতোয়া থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করা। আর এটা যখন তারা বাস্তবায়ন করবেন তো কোনো ক্ষেত্রে তা ‘কাযা’ হবে, কোনো ক্ষেত্রে ‘হুকুম’ হবে। তাদেরকে যদি আল্লাহর রেযামন্দী মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়, সুনীতি, সুবিচার ও জনগণের সেবার ব্যাপারে তারা যদি আন্তরিক হন তবে অবশ্যই তাদেরকে ফতোয়ার সহযোগিতা নিতে হবে।

প্রশ্ন : তাহলে ফতোয়া ও প্রশাসন কিংবা ফতোয়া ও বিচার দু’টো সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় নয়?

উত্তর : মোটেই নয়; বরং একটি অপরটির সহযোগী ও পরিপূরক।

প্রশ্ন : আপনার কথায় দু’টি শব্দ এসেছে। ‘কাযা’ ও ‘হুকুম'। এই দু’টি পরিভাষার সংজ্ঞা এবং এদের সঙ্গে ফতোয়ার পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।

উত্তর : ‘ফতোয়া’ হচ্ছে শরীয়তের আলোকে কোনো বিষয়ের সমাধান। আর ‘কাযা’ হল যে মোকদ্দমা কাযীর নিকট উত্থাপিত হয়েছে তার নিষ্পত্তি। ফতোয়া ও কাযার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে তবে যেভাবে বলা হল এভাবেই তা বোঝা সহজ। কাযীর সামনে যখন কোনো মোকদ্দমা উপস্থাপিত হয় তখন প্রথমে তাকে মোকদ্দমাটা বুঝতে হবে, এরপর তা নিষ্পত্তি করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন বিধান অনুযায়ী তিনি তা নিষ্পত্তি করবেন। তিনি যদি নিজেকে আল্লাহর খলীফা বলে মনে করেন তাহলে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করবেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী। সেক্ষেত্রে তাকে আল্লাহর বিধান জানতে হবে। নিছক ব্যবস্থাপনাগত কোনো বিষয় হলে সে বিষয়ে যে আইন আছে সে অনুযায়ী ফায়সালা করবেন। কিন্তু যেখানেই মাসআলার বিষয় আসবে সেখানেই তাকে জানতে হবে, শরীয়তের বিধান এ প্রসঙ্গে কী।

আমাদের দেশের বিচারপতিদেরকে কোন আইন অনুযায়ী ফয়সালা করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। সেই আইনও এমন নয় যে, সব বিষয়েই তা কুরআন-হাদীসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে এটা ঠিক যে, আমাদের দেশে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ ও ফিকহে ইসলামীকে দস্তুর হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। কিন্তু যদি সে চিন্তা করা হয় তাহলে ‘ফতোয়া’ই হবে তাদের জন্য মূল্যবান সূত্র ও পথনির্দেশক।

প্রশ্ন : তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, ফতোয়ার সঙ্গে যখন বিচারপতির ফয়সালা যুক্ত হয় তখনই তা ‘কাযা’। এর আগ পর্যন্ত তা ‘কাযা’ নয়?

উত্তর : ঠিক বলেছেন। ২০০১ সালে ফতোয়া বিরোধী হাইকোর্টের যে রায়টি এসেছিল তাতে বলা হয়েছিল যে, ‘আইনানুগ ব্যক্তির আইনানুগ মতামতকে ফতোয়া বলে।’ তখন তার সমালোচনা ও প্রতিবাদও হয়েছিল। তবে আমার জানামতে সে সময় গোড়ার কথাটা যিনি বলেছিলেন তিনি শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আযীযুল হক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম। তিনি তখন এই প্রসঙ্গটি তুলে বলেছিলেন যে, ফতোয়া একটি ইসলামী পরিভাষা। কোনো ইসলামী পরিভাষার ব্যাখ্যা দেওয়ার অধিকার আদালতের আছে কি না আমার জানা নেই। ফতোয়া একটি আরবী শব্দ। অতএব আরবী অভিধান থেকে এর ব্যাখ্যা নিতে হবে। এটি একটি ইসলামী পরিভাষা। অতএব পরিভাষা বিষয়ে যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে তা থেকে এর ব্যাখ্যা নিতে হবে। তখন তিনি অষ্টম শতাব্দীর একজন বিখ্যাত মনীষী মাজদুদ্দিন ফাইরোযাবাদী রাহ.কে উদ্ধৃত করেছিলেন, যিনি ফকীহও ছিলেন, কাযীও ছিলেন, মুহাদ্দিসও ছিলেন, লুগাতেরও ইমাম ছিলেন। তিনি ‘কামুছ’ গ্রন্থে, যাকে শুধু রেফারেন্স বুক বললে সঠিক বলা হয় না; বরং আরবী ভাষার একটি আকর গ্রন্থ বলা চলে। সে গ্রন্থে তিনি ফতোয়ার সংজ্ঞায় বলেছেন, ‘মা আফতা বিহিল ফকীহ’। অর্থাৎ দ্বীনী বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তরে কুরআন-সুন্নাহর পারদর্শী ব্যক্তি যে তথ্য ও সমাধান প্রদান করে থাকেন তার নাম ‘ফতোয়া’। অতএব এর সঙ্গে কাযার কোনো সম্পর্ক নেই। মোকদ্দমা দায়েরের পর কাযী যে ফয়সালা করেন তাকে বলে ‘কাযা’। ফতোয়া যদি ‘কাযা’ হত তাহলে সংজ্ঞা দেওয়া হত ‘মা হাকামা বিহিল ‘কাযী’। অর্থাৎ উত্থাপিত মাসআলায় কাযীর প্রদত্ত ফয়সালা। ফতোয়া যদি আইনানুগ ব্যক্তির আইনানুগ রায় হত তাহলে উপরোক্ত সংজ্ঞা করা হত। কিন্তু বিষয়টা এমন নয়।

দেখুন ফতোয়ার সংজ্ঞায় ‘ফকীহ’ শব্দ বলা হয়েছে। ‘ফকীহ’ অর্থ কুরআন-সুন্নাহর পারদর্শী ব্যক্তি। ফকীহ আইনানুগ ব্যক্তি নন। আইনানুগ ব্যক্তি হচ্ছেন ‘কাযী’। মাজদুদ্দীন ফায়রোযাবাদী রাহ. যা বলেছেন ফতোয়ার পরিভাষাগত অর্থও তাই এবং আভিধানিক অর্থও তাই। ফতোয়া শব্দের মূল ধাতু ‘ফা-তা-ওয়া’। একে যদি আপনি পিষেও ফেলেন তবুও তা থেকে ‘কাযা’ ও ‘হুকম’-এর কোনো অর্থ বের হবে না।

প্রশ্ন : বিভিন্ন সালিশী রায়ের উপর ‘ফতোয়া’ শব্দের যে প্রয়োগ হচ্ছে এটা কি সঠিক?

উত্তর : জ্বী না। ঠিক নয়। এটা একটা ভিন্ন প্রসঙ্গ যে, সালিশী করার অধিকার কে রাখে এবং কাকে সালিশ বানানো যায়। কিন্তু সালিশী করার অধিকার রাখে, এমন কোনো ব্যক্তিকে যদি সঠিক পন্থায় সালিশ বানানো হয় এবং তিনি সঠিক পন্থায় সালিশীর দায়িত্ব পালন করেন তবুও তার রায়কে ‘ফতোয়া’ বলা হবে না।

প্রশ্ন : একে কি ‘কাযা’ বলা হবে?

উত্তর : না একে ‘কাযা’ও বলা হবে না। একে বলা হবে ‘হুকম’। এটা ‘হুকমের’ একটি প্রকার।

প্রশ্ন : গ্রাম্য সালিশগুলোতে আলিমদের উপস্থিতি নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করা হয় ...?

উত্তর : একজন আলিম তিনি গ্রামেরও একজন সদস্য। গ্রামের সদস্য হিসেবে তাকে ডাকা হয়েছে। একজন আলিম হিসেবে তাকে ডাকা হয়নি এবং তিনিও আলিম হিসেবে অংশগ্রহণও করেননি এবং আলিম হিসেবে কোনো ভুমিকা রাখেননি। কাজেই একে কোনো আলিমের সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়। তারপরও যদি বলা হয় যে, এখানে ফতোয়ার ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে তাহলে তা মিথ্যা প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এখানে প্রথম দায়িত্ব হল সরকারের যে, সমাজে যেসব অশ্লীল কাজ ঘটে তা রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া। জনগণকে ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, ইসলামী আদর্শের প্রচার-প্রসার করতে হবে, মানুষের মাঝে আল্লাহর ভয়, আখিরাতের ভয় সৃষ্টি করতে হবে, নৈতিকতা ও চারিত্রিক পবিত্রতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নিতে হবে। সব ধরনের অশ্লীলতা বন্ধ করতে হবে। রেডিও, টিভি ও অন্যান্য প্রচার-মাধ্যমগুলোতে সকল অশ্লীল প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হবে। নগ্নতা, বেহায়াপনা বন্ধ করতে হবে। পর্দার বিধান বাস্তবায়িত করতে হবে। এগুলো সরকারের দায়িত্ব। এটা তাদেরকে করতে হবে। আলিমরা এসব বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করবেন।

প্রশ্ন : এরপরও যদি অনুচিত কিছু ঘটে যায় তাহলে কী করতে হবে?

উত্তর : এরপরও যদি অন্যায় কিছু ঘটে তাহলে সরকারের দায়িত্ব সে বিষয়ে শরীয়তের বিধান জেনে বাস্তবায়ন করা। সরকার যদি এ বিষয়ে উদাসীন হয় তাহলে আলিমদের ও সমাজের অন্যান্য লোকদের দায়িত্ব সরকারকে সচেতন করা। এরপরও যদি সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেয় তাহলে গ্রামের দায়িত্বশীলগণ যদি গ্রামের লোকদের নিয়ে বসেন সেখানেও তাদের দায়িত্ব প্রথমে শরীয়তের বিধান জেনে নেওয়া। আর তারা তা জানবেন নির্ভরযোগ্য কোনো দারুল ইফতা থেকে।

আজকাল প্রবণতা হয়ে গেছে যে, কারো গায়ে লম্বা জামা দেখলে, মাথায় টুপি-পাগড়ি দেখলে মনে করে যে, আলেম, মুফতী। এটা বোঝা উচিত যে, যারা দাড়ি রাখেন, লম্বা জামা পরেন তারা সবাই মাদরাসা-পড়ুয়া নন, তদ্রূপ সকল মাদরাসা-পড়ুয়া আলিম নন এবং সকল আলিম মুফতী নন। এই বিষয়টা স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে। মুফতী হলেন ওই আলিম যিনি একটি বিশেষ পর্যায়ের পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে, আছারে সাহাবা সম্পর্কে, ফিকহ ও ফতোয়ার নীতি সম্পকের্, ফিকহ ও উসূলে ফিকহ সম্পর্কে যিনি পারদর্শিতা ও বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি হলেন মুফতী। এ ধরনের মুফতী যে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তার নাম ‘দারুল ইফতা’। এই ধরনের নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতায় গিয়ে, নির্ভরযোগ্য মুফতী, যিনি ফকীহগণের সোহবতে থেকে ফতোয়ার অনুশীলন করেছেন তার নিকট থেকে সমাধান নিয়ে সে অনুযায়ী ফয়সালা করতে হবে। এটা তাদের দায়িত্ব। তবে এক্ষেত্রে তারা এমন কোনো কাজ করবে না, যার জন্য সরকারী অনুমোদন অপরিহার্য।

প্রশ্ন : এখানে অশ্লীলতা আর শিল্পের একটা তর্ক সৃষ্টি করা হয়। কোনটা অশ্লীল আর কোনটা শিল্প এ নিয়েও তর্ক উঠানো হয়। এ বিষয়ে কী করণীয়?

উত্তর : অশ্লীলতাকে শিল্প বললেই তো তা ‘শ্লীল’ হয়ে যাবে না। সঠিক বিবেচনা ও শরীয়তের সিদ্ধান্ত থেকে সাহায্য নিতে হবে। শরীয়তকে যদি সিদ্ধান্তদাতা হিসেবে গ্রহণ করা হয় তাহলে সুস্থ বুদ্ধি ও রুচির বিচারেও এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা সম্ভব। এখানে এটাও তো দেখতে হবে যে, শব্দ দুটি দু’ রকম কেন? অশ্লীলতা আর শিল্প। দুটি শব্দের অর্থও তো দু’রকম। এরপরও যারা পার্থক্যটা ধরতে পারে না, সন্দেহ নেই তারা বিকৃত রুচি ও বুদ্ধির অধিকারী।

প্রশ্ন : ফতোয়া সম্পর্কে ধর্মবিরোধী বুদ্ধিজীবী সমাজের ক্রোধ ও বিরাগের কারণ কী বলে মনে করেন?

উত্তর : ফতোয়া হচ্ছে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম বা পন্থা। এ সেক্যুলার লোকেরা কীভাবে সহ্য করতে পারে ইকামাতে দ্বীনের কোনো কাজ। রাষ্ট্র বা সরকারের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষ ছাড়া নীরবভাবে সাধারণ মানুষেরা ফতোয়ার মাধ্যমে দ্বীন শেখার সুযোগ লাভ করে, মাদরাসায় সময় দিতে না পারলেও, দ্বীন শেখার জন্য দীর্ঘ সময় না দিতে পারলেও ফতোয়ার মাধ্যমে অতি সহজে দ্বীন সম্পর্কে জানতে পারেন। দ্বীন জানা ও শেখার সবচেয়ে সহজ ও ব্যাপক তরীকা হওয়ার কারণে ফতোয়া ধর্মবিদ্বেষী শ্রেণীর মিশনের মুখে বড় বাধা। যারা ধর্মহীনতার চর্চা করে তারা এজন্যই ফতোয়ার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে। আমি একথা আগেও বলেছি যে, আমরা মনে করি না প্রত্যেক লম্বা জামা ও দাড়ি টুপি ওয়ালা লোকই মাদরাসা পড়ুয়া, আর প্রত্যেক মাদরাসা পড়ুয়াই আলেম এবং প্রত্যেক আলেমই মুফতী। সুতরাং অযোগ্য কাউকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করলে আর সে তার উত্তর দিলে এবং সেটা ভুল হলে তা নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বিতর্ক নেই, অবশ্যই এটা ভুল। নেতৃত্বশীল ও বিজ্ঞ আলিমদের জিম্মাদারী, এদেরকে নিবৃত্ত করা এবং মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া যে, এরা এ বিষয়ে যোগ্য নন। ফতোয়া জানার জন্য যোগ্য লোকের কাছে যান। কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের ফতোয়ার বিরুদ্ধে কথা বলা এই ত্রুটির কারণে নয়। এই ত্রুটির কারণে বললে তো সেই ত্রুটির সংশোধনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করাতো। তারা পুরা বিষয়টি নিয়ে কাঁদা ছুড়াছুড়ি করছে।

প্রশ্ন : ফতোয়ার অপপ্রয়োগ, ফতোয়াবাজি কিংবা ভুল ফতোয়া কি ঘটতে পারে?

উত্তর : ফতোয়ার অপপ্রয়োগ তো ফতোয়া আসার পরে হতে পারে। অর্থাৎমুফতী কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে ফতোয়া দিলেন, এখন কেউ যদি তা অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে তাহলে এর দায় তো মুফতীর উপর বর্তাবে না।

আপনার প্রশ্নে একটি শব্দ আছে ‘ফতোয়াবাজি’। এই শব্দটা খুবই আপত্তিকর। আফসোসের বিষয় এই যে, কোনো কোনো দ্বীনদার মানুষকেও এই শব্দটা ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই শব্দটা তো তাদেরই আবিষ্কার, যারা কুরআন-সুন্নাহ এবং দ্বীন ও শরীয়তের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। এটা হচ্ছে একটি মর্যাদাপূর্ণ ইসলামী পরিভাষার গাম্ভীর্য বিনষ্ট করে তাকে তাচ্ছিল্যের বিষয়ে পরিণত করার অত্যন্ত সুচিন্তিত অপপ্রয়াস। ইসলামের বিভিন্ন পরিভাষা এবং ঐতিহাসিক বহু শব্দের এমন অপপ্রয়োগ লক্ষ করলেই দেখতে পাবেন।

দেখুন সমাজে কত ভুল চিকিৎসা হয়, আনাড়ি লোকেরা চিকিৎসক সেজে বসে থাকে, এমনকি ডিগ্রীধারী চিকিৎসকদেরও ভুল বা অবহেলায় কত রোগীর অঙ্গহানী ঘটে, মৃত্যু ঘটে, ঔষধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে দুর্নীতি, ভেজাল ইত্যাদির কত প্রমাণ পাওযা যায় কিন্তু কেউ তো ‘চিকিৎসাবাজি’ বা ‘ডাক্তারবাজি’ শব্দ ব্যবহার করে না। কোনো পেশা বা শাস্ত্রে যদি অযোগ্য লোকের অনুপ্রবেশ ঘটে তাহলে তাদের কবল থেকে ওই পেশা বা শাস্ত্রকে রক্ষা করতে হবে। অযোগ্য লোকদের অনধিকার চর্চা বন্ধ করতে হবে, কিন্তু তা না করে ওই শাস্ত্র বা পেশাকেই যদি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাহলে বুঝতে হবে উদ্দেশ্য সৎ নয়। ওই বিষয়ের প্রতিই তার অন্তরে বিদ্বেষ রয়েছে। ফতোয়া যেহেতু কুরআন ও সুন্নাহরই সিদ্ধান্ত তাই কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে যাদের মনে বিদ্বেষ রয়েছে তারাই এই শব্দ ব্যবহার করতে পারে।

আপনার তৃতীয় শব্দটি ছিল ভুল ফতোয়া। এটা ঠিক আছে। এ ব্যাপারটি দুই ভাবে হতে পারে :

১. যে ব্যক্তি ফতোয়া প্রদানের যোগ্য নয় সে ফতোয়া প্রদানের চেষ্টা করলে। এক্ষেত্রে আলিম-ওলামার দায়িত্ব হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া যেন তারা ওই ব্যক্তির কাছে মাসআলা, জিজ্ঞাসা না করেন এবং সে ব্যক্তি যদি কোনো ভুল মাসআলা প্রচার করে থাকেন তাহলে তা চিহ্নিত করে সঠিক বিষয় মানুষকে জানিয়ে দেওয়া।

২. ফতোয়ার বিষয়ে যিনি যোগ্য যেহেতু তিনি ভুলত্রুটির উর্দ্ধে নন তাই তারও ভুল হতে পারে। তবে শরীয়ত এটা ক্ষমা করেছে। ফতোয়া প্রদানকারী এবং ফতোয়া গ্রহণকারী দু’জনকেই ক্ষমা করেছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ভুল প্রমাণিত হওয়ার পরও তা আঁকড়ে ধরে রাখবে; বরং তার কর্তব্য সে সিদ্ধান্ত পরিহার করা। কিন্তু যে পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়নি, মুফতী সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন কিন্তু ভুল হয়ে গেছে তো এটা তার জন্যও মাফ, যে তার কাছ থেকে সমাধান নিয়েছে তার জন্যও মাফ। কিন্তু অবহেলার কারণে যদি হয় অর্থাৎ যেমন তাহকীক করা প্রয়োজন ছিল তেমন তাহকীক না করেই ফতোয়া দিয়েছেন তাহলে দুই গোনাহ মুফতীর উপরে আসবে। ভুল ফতোয়া প্রদানের গুনাহ এবং তার ফতোয়া অনুযায়ী যে ভুল পথে চলল তার গুনাহ। এটাই হাদীস শরীফে এসেছে যে, অর্থাৎ যাকে ভুল ফতোয়া দেওয়া হল তার বিপথগামিতার গুনাহ যে ফতোয়া দিল তার উপর আসবে। মোটকথা, ভুল ফতোয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। সেটা যদি ব্যক্তির অযোগ্যতার কারণে হয় তাহলে করণীয় হচ্ছে অযোগ্য লোককে অনধিকার চর্চা থেকে বিরত রাখতে হবে। আর যোগ্য লোকের ভুল হলে করণীয় হচ্ছে সে বিষয়ের পারদর্শী ব্যক্তিরা তা সংশোধন করে দিবেন। কিন্তু ভুলের কারণে ওই শাস্ত্র সম্পর্কেই মানুষকে আস্থাহীন করার প্রয়াস-এটা হচ্ছে, এককথায় শরীয়তবিদ্বেষ’।

প্রশ্ন : আমাদের দেশে শত শত মাদরাসায় দারুল ইফতা আছে। কিন্তু এসব দারুল ইফতার ব্যাপারে কখনো এ অভিযোগ উঠেনি যে, এ প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো দোররা মেরেছে কিংবা বিচারিক কাজ করেছে। তারপরও ... ?

উত্তর : এটাই তো সবচেয়ে বড় দলীল যে, দারুল ইফতা কখনো তার কার্যক্ষেত্র অতিক্রম করেনি। যদি অতিক্রম করতো তাহলে দারুল ইফতার ব্যাপারে এ ধরনের অভিযোগ উঠত। দারুল ইফতা তার দায়িত্বের ভেতরের কাজগুলো করে যাচ্ছে। যার এক্তিয়ার শরীয়ত তাকে দেয়নি, দারুল ইফতা তাতে হস্তক্ষেপ করছে না। গ্রাম্য সালিশগুলোতে যা ঘটছে, যদি ফতোয়ার বিষয় হত তাহলে দারুল ইফতাই তো সেটা করত। সেগুলো দারুল ইফতা করছে না।

প্রশ্ন : এখন যেহেতু মিডিয়া ও বাক স্বাধীনতার সময়, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করছেন। সেগুলো সাধারণভাবে আলেম-ওলামাদের মতামতের সঙ্গে মিলছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? এগুলোকে কি ফতোয়া হিসেবে গ্রহণ করব কি?

উত্তর : এটা তো জাহালাত বা মুর্খতা যে, অযোগ্য লোক যখন ইলেক্ট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে তখন গ্রহণ করে নেওয়া হয়। একসময় লোকে মনে করত, ছাপার অক্ষরে যা আসে তাতে ভুল থাকে না। এখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ক্ষেত্রে তাই মনে করা হচ্ছে। মিডিয়াতে আসলেই হল, শুদ্ধ-গলদ আর যাচাই করা হয় না। দেখবেন, কথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীও এদের ব্যাপারে কম ক্ষিপ্ত। এটা আসলে একটি আক্ষেপজনক মুর্খতা ও উদাসীনতা যে, মানুষ দুনিয়ার বিষয়গুলোতে কে ভালো ডাক্তার, কে যোগ্য আইনজীবী, কে ভালো ইঞ্জিনিয়ার তাকে খুঁজে বের করে। এ ব্যাপারে কোনো গাফলতি করে না। কিন্তু দ্বীনের বিষয়ে গভীর ইলম, তাকওয়া, খোদভীতি, বিশুদ্ধ আকীদা ইত্যাদি বিচার করে মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে যায় না। এটা সহীহ সমঝ ও ইনসাফের কাজ নয়। মিডিয়ায় গলদ-সহীহ বলে দিলেই হল, লুফে নেওয়া হয়। এ মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। এ বিষয়ে অনেক বেশি সতর্কতা কাম্য।

প্রশ্ন : শাসনের অধিকার তো প্রত্যেক দায়িত্বশীলের রয়েছে যেমন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ক্ষেত্রে ইত্যাদি। কিন্তু সামাজিক ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করবে কে? গ্রাম্য সালিশগুলো কি এটা করতে পারে?

উত্তর : না, হদ ও তাযীরের মাধ্যমে যে তাদীব তা প্রশাসনের দায়িত্ব। এছাড়া অন্য ধরনের যে তাদীব সেটা প্রত্যেকে তার নিজ অধীনন্থদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে।

প্রশ্ন : ‘হদ’ ও ‘তাযীর’ কাকে বলে? এ সম্পর্কে কিছু বলুন।

উত্তর : কুরআন-হাদীসে বহু অপরাধের উপর শাস্তির কথা আছে। এগুলোর মধ্যে যেসব শাস্তির পরিমাণ ও পদ্ধতিও কুরআন-হাদীসে সুনির্ধারিত তা ‘হদ’। আর যেসব ক্ষেত্রে শাস্তির কথা আছে, কিন্তু পরিমাণ ও পদ্ধতি সুনির্দিষ্টভাবে কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত হয়নি; বরং পরিবেশ-পরিস্থিতি ও উপযোগিতা অনুযায়ী শাসককে তা নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে তাকে বলা হয় ‘তা’যীর’।

প্রশ্ন : সামাজিকভাবে ‘হদ’ ও ‘তাযীরে’র বাইরে তাদীবের কোন পদ্ধতি থাকতে পারে কি?

উত্তর : সামাজিকভাবে সালিশগুলোকে সরকার যতটুকু ক্ষমতা দিয়েছে, সেটাই তাযীর। হদ তো শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত। ওটার দায়িত্ব উর্ধ্বতন প্রশাসনের। তারা সে দায়িত্ব গ্রাম্য সালিশগুলোকে না দিলে তারা তা করতে পারবে না। তাদের দায়িত্বের মধ্যে ছোটখাটো শাস্তির ক্ষমতা দেওয়া থাকলে আর সেটা তারা প্রয়োগ করলে তাও তাযীরেরই একটি প্রকার হবে।

প্রশ্ন্ : তাহলে ‘হদ’ ও ‘তাযীরে’র পর সাধারণ তাদীব শুধু ব্যক্তিগত। পারিবারিক ইত্যাদি পর্যায়ের বিষয়।

উত্তর : হ্যা, তাই। হাদীস : কুল্লুকুম রায়িন ওয়াকুল্লুকুম মাসউলুন আন রাইয়্যাতিহী’। এই হাদীসের উপর আমল হিসাবে যা কিছু করা হবে তাই হবে তাদীব। তা’লীম ও তরবিয়তের অতিরিক্ত যেটা করতে হয় সেটাই তাদীব। এটি একটি স্তর। তাদীবের ব্যাপক অর্থ হিসাবে তো তা’লীম ও তরবিয়তও তাদীবের একটি অংশ। তবে এটিকে শেষ ধাপ বা স্তর বলা যায়। যা পবিত্র কুরআনে এভাবে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন : মিডিয়ায় ‘দোররা’ শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু ...

উত্তর : দোররা শব্দটি আরবী থেকে এসেছে। আরবীতে শব্দটির উচ্চারণ দোররা নয়, ‘দিররা;। শরীয়ত যেসব ক্ষেত্রে দোররা দ্বারা শাস্তির বিধান দেয়নি সেসব ক্ষেত্রে যদি কেউ তা প্রয়োগ করে তবে তা হবে ওই ব্যক্তির প্রতি জুলুম। আর যেসব ক্ষেত্রে শরীয়তে এর বিধান রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের তা প্রয়োগ না করা গোটা জাতির প্রতি জুলুম।

প্রশ্ন : ফতোয়াকে অন্যায়ভাবে শুধুমাত্র মহিলাদের অধিকার লঙ্ঘনের একটি হাতিয়ার হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতক্ষণের আলোচনায় এটা চলে আসলে যে, বিষয়টা মোটেই এরকম নয়। এখন আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, ফতোয়ার মাধ্যমে নারী, দুর্বল শ্রেণী, অমুসলিম-এদের অধিকার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা হতে পারে কি না?

উত্তর : হ্যা, নারীদের বিষয়ে বিজ্ঞ মুফতীদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া যায়। যেসব সমস্যা নারীদেরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সামনে চলে আসে সেগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞ মুফতী কিংবা নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতা থেকে সমাধান জেনে নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করা যায়। মিডিয়া এগুলো প্রচার করার ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রাখতে পারে। ফতোয়ার মাধ্যমে শরীয়তের বিধান জানা ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তো নারীদের যথার্থ অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তা না হলে নারীদেরকে প্রতারণার মধ্যে ফেলে তাদের সম্ভ্রম ও মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করে নারী উন্নয়নের শ্লোগানই কেবল দেওয়া হতে থাকবে।

প্রশ্ন : ফতোয়ার বিরুদ্ধে, দ্বীনী তা’লীমের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা চলছে-এ ধরনের পরিস্থিতিতে আলেম-তালিবে ইলম, দ্বীনদার সাধারণ মানুষ এবং সহজে প্রচারণার প্রভাব গ্রহণ করে এমন সাদা মনের সাধারণ মানুষের প্রতি আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?

উত্তর : প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাধ্য অনুযায়ী ভুমিকা রাখবে, ফিকির করবে। আলেমদের দায়িত্ব হল, সচেতনতা রক্ষা করা, কীভাবে দ্বীনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হয় সে সম্পর্কে তাদের সচেতন থাকতে হবে। চলমান ফিৎনা, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। আর ইসলামী হুকুমত থাকলে কী সিদ্ধান্ত হত, ইসলামী হুকুমত নেই অথচ একটি মুসলিম রাষ্ট্র যেখানে সরকার আছে সেখানে কী করতে হয়-এ বিষয়েও পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সচেতনতা থাকতে হবে। তালিবে ইলমদেরও এ বিষয়ে উস্তাদদের নেগরানিতে পর্যাপ্ত মুতালাআয় নিমগ্ন হতে হবে। অর্থাৎ ইসলামী হুকুমত থাকলে কী বিধান-না থাকলে কী বিধান, পরিস্থিতি হিসাবে কী মাসআলা হয়-উভয় বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সাধারণ মুসলমানদের উচিত হবে হকপন্থী বিজ্ঞ আলিমদের পরামর্শ ও রাহনুমায়ী নিয়ে পথচলা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত অনুযায়ী চললে, নিয়ত সহীহ থাকলে ইনশাআল্লাহ সব ফিতনা থেকে বাঁচা সম্ভব হবে এবং কামিয়াবী আসবে।

---- : দীর্ঘক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

--- : আমীন। এবং আল্লাহ তাআলা আপনাদেরও উত্তম প্রতিদান দান করুন। এসব বিষয়ে সাক্ষাৎকারের সীমিত পরিসরে পুরোপুরি আলোচনা করা সম্ভব নয়।

ইনশাআল্লাহ এসব বিষয়ে ‘মাসিক আলকাউসারে’ স্বতন্ত্র প্রবন্ধ রচনার ইচ্ছা আছে। আপাতত চলমান বিষয়গুলোতে একটি প্রাথমিক ধারণার জন্য কথাগুলো তুলে ধরা হল। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন।

 

advertisement