মাওলানা সা‘দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে আকাবির উলামায়ে বাংলাদেশের ফতোয়া
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
জিজ্ঞাসা
بسم الله الرحمن الرحيم
বরাবর
হযরত মুফতিয়ানে কেরাম ও আকাবির উলামা, বাংলাদেশ
বিষয় : মাওলানা সা‘দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে শরয়ী হুকুম এবং তাদের সঙ্গে তাবলীগী কাজ করার বিধান।
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
বাদ সালামে মাসনূন হযরত মুফতিয়ানে কেরামের নিকট আরয হল– আমরা সবাই জানি, প্রচলিত তাবলীগ জামাতের মেহনত (যা মাশাআল্লাহ অনেক মুবারক ও উপকারী মেহনত)-এর একজন বড় যিম্মাদার মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে এবং তিনি কাজের উসূল ও নাহ্জ তথা নীতি ও পদ্ধতিতে নিজের পক্ষ থেকে যেসব পরিবর্তন ঘটিয়েছেন সেগুলোর কারণে, কাজের মধ্যে চরম পর্যায়ের বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এটা সকলেরই মর্মপীড়া ও দুশ্চিন্তার কারণ। এর জন্য যত আফসোসই করা হোক, কম হবে।
এ কাজের প্রবীণ মুরব্বীগণ, বিশেষত হযরত মাওলানা ইয়াকুব সাহারানপুরী সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাওলানা ইবরাহীম দেওলা সাহেব দামাত বারাকাতুহুম ও হযরত মাওলানা আহমাদ লাট সাহেব দামাত বারাকাতুহুম, তাঁরা মাওলানা সা‘দ সাহেবের গোমরাহীপূর্ণ কথাবার্তা ও বিভ্রান্তিকর কর্মপদ্ধতি থেকে নিজেদের সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করেছেন এবং তার থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। বিভিন্ন চিঠিপত্রে তাঁরা মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিষয়ে তাঁদের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। সেসব চিঠিপত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, মাওলানা সা‘দ সাহেব থেকে তাঁদের পৃথক হয়ে যাওয়াটা কেবল দ্বীনের স্বার্থে ছিল; ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থে বা দুনিয়াবী কোনো উদ্দেশ্যে ছিল না। সে চিঠিপত্রগুলো ‘مجموعہ خطوط’ নামে প্রকাশিত হয়েছে।
রবিউল আউয়াল ১৪৩৮ হিজরী মোতাবেক ডিসেম্বর ২০১৬ ঈসায়ীতে মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে একটি ফতোয়াও প্রকাশিত হয়, যার সারকথা হল– মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ানসমূহে নবীগণের শানে যেসব বেয়াদবি এবং যেসব চিন্তাগত বিপথগামিতা, তাফসীর বির রায় ও হাদীস-আসারের মনগড়া ব্যাখ্যা রয়েছে, সেসবের সঙ্গে হক্কানী উলামায়ে কেরাম কখনো একমত হতে পারেন না।
ফতোয়ায় এ কথাও বলা হয়েছে, মাওলানা সা‘দ সাহেব জুমহুর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছেন, যা নিঃসন্দেহে গোমরাহীর রাস্তা।
এরপর ৩১/০১/২০১৮ ঈসায়ী তারিখে প্রকাশিত ‘জরুরি ওয়াযাহাত’-এ দারুল উলূম দেওবন্দ স্পষ্ট ঘোষণা করেছে– ‘এ অবস্থায় পরিষ্কার হওয়া আবশ্যক যে, তার (মাওলানা সা‘দ সাহেবের) রুজুকে এই এক ঘটনার ক্ষেত্রে (অর্থাৎ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রদত্ত আপত্তিকর বক্তব্যের ক্ষেত্রে) ইতমিনানযোগ্য বলা গেলেও, দারুল উলূম দেওবন্দের মাওকিফে মূলত মাওলানার (সা‘দ সাহেবের) চিন্তাগত যে বিপথগামিতার ব্যাপারে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছিল, তা উপেক্ষা করা যায় না। কারণ, কয়েকবার রুজু করার পরও বিভিন্ন সময় তার এমন সব নতুন নতুন বয়ান পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে তার সেই মুজতাহিদসুলভ ভঙ্গি, দলীল-প্রমাণের ভুল ব্যবহার এবং দাওয়াত সম্পর্কে তার নিজস্ব বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণের জন্য শরয়ী নুসূসের অপপ্রয়োগের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে। এর কারণে শুধু দারুল উলূমের যিম্মাদারগণই নন, অন্যান্য হক্কানী উলামায়ে কেরামেরও মাওলানার (সা‘দ সাহেবের) সামগ্রিক ফিকিরের বিষয়ে কঠিন ধরনের অনাস্থা রয়েছে।’
এমন যার হালত, তার রাহবরীতে দ্বীনের কাজ কি আদৌ সম্ভব?
এরপর যিলকদ ১৪৪৪ হিজরী মোতাবেক জুন ২০২৩ ঈসায়ীতে মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে আরেকটি তফসীলী (বিশদ) ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিচ্ছিন্ন ও আপত্তিকর কথাবার্তা এবং বিভ্রান্তিপূর্ণ চিন্তাধারা ক্রমাগতভাবে প্রকাশ পেয়েই চলেছে!’
ফতোয়ায় আরও বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনী বিষয়ে বিপথগামিতার শিকার– হিকমত ও প্রজ্ঞা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তার গলত চিন্তাধারা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা উলামায়ে কেরামের বড় যিম্মাদারী।’ সেজন্য উলামায়ে কেরাম আরও আগেই মাওলানা সা‘দ সাহেবের গোমারাহীগুলো সাধারণ মানুষের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন এবং তাদের করণীয় কী– সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
উপমহাদেশের কেন্দ্রীয় দ্বীনী ও ইলমী প্রতিষ্ঠানের দিকনির্দেশনামূলক একাধিক ফতোয়া এবং উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে বিস্তারিতভাবে মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভ্রান্তিগুলো চিহ্নিত করে দেওয়া সত্ত্বেও সা‘দপন্থি ভাইদের বক্তব্য হল–
১. ‘মাওলানা সা‘দ সাহেব হকের ওপরে আছেন। তার ইলমী মাকাম অনেক উঁচু। আলেমরা তার কথা বোঝেন না; এজন্য আপত্তি করেন।’
২. ‘আলেমরা তাবলীগের কী বোঝেন? তাবলীগের বিষয়ে তাদের কথার কী মূল্য?’
৩. ‘নেযামুদ্দীন আমাদের বিশ্ব মারকায এবং মাওলানা সা‘দ সাহেব আমাদের বিশ্ব আমীর। আমাদেরকে তাবলীগের কাজ তারই এতাআতে করতে হবে।’
৪. তাদের কেউ কেউ আমরণ মাওলানা সা‘দ সাহেবের এতাআত করবে– এ মর্মে এফিডেভিটও করেছেন! কারো কারো বাড়াবাড়ি এ পর্যন্ত পৌঁছেছে যে, তারা বলেছেন, ‘মাওলানা সা‘দ সাহেব জাহান্নামে গেলে আমরাও জাহান্নামে যাব।’ কেউ বলেছেন, ‘ধরে নাও, আমরা মাইজভাণ্ডারীর মতোই বাতিল ফেরকা!!’
সবচেয়ে বড় কথা হল, তারা মাওলানা সা‘দ সাহেবকে কেবল ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ে আলমী আমীর মানেন– এমন নয়; বরং দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়েও তারা তাকে নিজেদের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় মনে করেন। তার সমস্ত বয়ান ও কথা –চাই সেটা সহীহ হোক কিংবা গলত, হক হোক কিংবা বাতিল, হেদায়েত হোক কিংবা গোমরাহী– তারা সেটা প্রচার করতে থাকেন এবং আগে চালাতে থাকেন!
দারুল উলূম দেওবন্দের আকাবির উলামা এবং এ দেশের উলামায়ে কেরাম মাওলানা সা‘দ সাহেবের গোমরাহীপূর্ণ যেসব কথা চিহ্নিত করে দেন, তারা সেগুলোকে সহীহ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগে যান। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য ও লিখিত বইপুস্তকের সংখ্যা অনেক। ইস্তিফতার সঙ্গে আমরা তাদের বিভিন্ন বইপত্র, পত্রিকা, সংশ্লিষ্ট কাগজ ও নথিপত্র এবং তাদের বক্তব্যসমূহের একাধিক লিংক ও অডিও রেকর্ডও পেশ করে দিয়েছি।
মাওলানা সা‘দ সাহেবকে হক প্রমাণের জন্য তারা দারুল উলূম দেওবন্দের নামে একাধিকবার প্রোপাগান্ডা চালিয়েছেন। দাবি করেছেন, মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিষয়ে দারুল উলূমের ইতমিনান হয়ে গেছে। এমনকি একবার দারুল উলূমের নামে ভুয়া লেটার প্যাডও চালিয়ে দিয়েছেন এবং অবাস্তব বিভিন্ন ফতোয়াকে দারুল উলূমের দিকে সম্বন্ধ করেছেন। মাওলানা সা‘দ সাহেবের গোমরাহীর বিষয়ে দারুল উলূমের ফতোয়া প্রকাশিত হওয়ার আগে শুধু তাবলীগের সমর্থনে দারুল উলূমের যেসব ফতোয়া ছিল, সেগুলোকে তারা দারুল উলূমের নতুন ফতোয়া হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের এক আলেমের কোনো বয়ানের আগ-পর কেটে মধ্যখানের এক-দুই বাক্য নিয়ে সেটাকে সা‘দ সাহেবের সমর্থন হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
এমনকি তাদের কেউ কেউ নিজে নিজে মুফতী বনে যান এবং দেওবন্দের ফতোয়ার খেলাফ মাওলানা সা‘দ সাহেবের সমর্থনে ফতোয়া লেখেন বা ফতোয়া দেন!
এমনিভাবে মাওলানা সা‘দ সাহেবকে হক প্রমাণের জন্য এমন অনেক আলেমের নামও প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেন, যাদের সম্পর্কে চিন্তাও করা যায় না যে, তারা চিন্তাগত বিপথগামিতার শিকার কোনো ব্যক্তিকে সমর্থন করবেন। সেজন্য এটা স্পষ্ট যে, নিঃসন্দেহে তারা সে আলেমগণের কথা বুঝতে কোথাও ভুল করেছেন অথবা জেনেশুনে তাদের দিকে অবাস্তব কথা সম্বন্ধ করেছেন।
কখনো তারা বলেন, এসব আপত্তিকর বক্তব্য সা‘দ সাহেব থেকে প্রমাণিত নয়। আবার কখনো বলেন, তিনি এসব থেকে রুজু করে ফেলেছেন। আবার কখনো বলেন, তার এসব বক্তব্য সঠিক এবং এগুলোর দলীলও আছে। এ ধরনের বিপরীতমুখী কথা অনেক সময় সা‘দপন্থি একই ব্যক্তির মুখে শোনা যায়।
মাওলানা সা‘দ সাহেবকে হক প্রমাণের জন্য তারা এমন অনেক বিষয়কে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন, যেগুলো শরীয়তের দৃষ্টিতে দলীল নয়। যেমন :
ক. স্বপ্নের ভিত্তিতে হক-বাতিল নির্ণয় করা।
খ. ইস্তেখারার ভিত্তিতে হক-বাতিলে পার্থক্য করা।
গ. সাধারণ জনতার সমর্থন ও বাইআতকে হকের দলীল বানানো। (অপরদিকে তারা জুমহুর আহলে ইলমের বিরুদ্ধাচরণ করেন।)
ঘ. সুন্দর আচরণকে হকের দলীল বানানো।
ঙ. কেউ উঁচু ও সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান, এ ভিত্তিতে তাকে হক বলা।
চ. কেউ মারকায বা ফযীলতপূর্ণ জায়গায় আছে, এ ভিত্তিতে তাকে হক বলা।
ছ. কোনো আলেম বা কোনো বুযুর্গের ভুল বা পদস্খলনকে দলীল বানিয়ে ভুলকে সঠিক এবং গোমরাহীকে হক প্রমাণের চেষ্টা করা।
কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, এমনকি মাদরাসার নেযামটাকেই রেওয়াজ ও সুন্নাহ বহির্ভূত আখ্যা দেওয়া, উলামায়ে কেরামকে গালিগালাজ এবং সাধারণ মানুষকে উলামায়ে কেরাম ও কওমী মাদরাসার প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলা– এগুলো যেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অনেক জায়গায় তাবলীগী সফরগুলোতেও সাথিদের যেহেন এভাবে বিগড়াতে থাকেন।
তাদের অনেকে এটাও বলেন, ‘যার মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে, সে-ই আলেম। আমাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে, সেজন্য আমরাও আলেম!’ কখনো বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম কি আলেম ছিলেন? তারা কোন্ মাদরাসায় পড়েছেন?’ কেউ বলেছেন, ‘সন্তানদেরকে মাদরাসায় দিয়ে আমরা অনেক ভুল করেছি। কেউ যেন তার সন্তানকে কখনো মাদরাসায় না দেয়।’
বড় পরিতাপের বিষয় হল, তারা দেশের সকল উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধাচরণ ও তাদের বিপরীতে দাঁড়ানোকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, কিন্তু সা‘দ সাহেবের গোমরাহীপূর্ণ কথাবার্তা, তার নবআবিষ্কৃত ফিকরী বেদআতসমূহ এবং তার বানানো দলীলবিহীন বরং দলীলবিরুদ্ধ বিধিবিধান থেকে নিজেদের মুক্ত করতে তারা রাজি নন।
আরেকটা বাস্তবতা হল, আমাদের দেশে তাবলীগ জামাতের বিভক্তিটা প্রথমে সা‘দপন্থি ভাইয়েরা শুরু করেছেন।
২০১৭ সনের ইজতিমার পর কাকরাইলের মুকাম্মাল শূরার সঙ্গে উলামায়ে কেরামের একাধিক বৈঠক হয়। এক বৈঠক (২৯/১০/২০১৭ ঈ.) প্রশাসনের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতেও হয়। সে বৈঠকে মুকাম্মাল শূরার সম্মতিতে আহলে শূরার মধ্যে সমঝোতার জন্য পাঁচজন আলেমের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির প্রথম বৈঠকে (১৬/১১/২০১৭ ঈ.) কাকরাইলের আহলে শূরা (অর্থাৎ ওয়াসিফুল ইসলাম সাহেব ও নাসিম সাহেবের দলসহ) সবাই এই পাঁচজন আলেমকে স্পষ্ট ভাষায় নিজেদের পৃষ্ঠপোষক ও উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করেন। সবাই এ মর্মে ওয়াদাবদ্ধ হন যে, যখনই প্রয়োজন অনুভূত হবে অথবা উলামায়ে কেরাম প্রয়োজন মনে করবেন, তখন জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ এই উলামা কমিটির সামনে পেশ করা হবে এবং তারা যে ফয়সালা দেবেন সেটা আহলে শূরার সবাই মেনে নেবেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সা‘দপন্থিদের যিম্মাদারগণ কমিটির ফয়সালা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ১৭/০১/২০১৮ ঈ. তারিখে প্রশাসনকে চিঠি লিখে এই কমিটি বিলুপ্ত করে দিতে বলেন।
২০১৮ সালের ইজতিমার প্রস্তুতির লক্ষ্যে নভেম্বর ২০১৭-তে যে জোড় হয়েছিল তাতে কাকরাইলের অধিকাংশ আহলে শূরা, উলামায়ে কেরাম ও প্রশাসনের সর্বসম্মত ফয়সালা অমান্য করে যখন তারা (ওয়াসিফুল ইসলাম সাহেব ও নাসিম সাহেব) নিজেদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যর্থ হন, অর্থাৎ মশওয়ারা ছাড়া সা‘দপন্থি যে মেহমানদের জোড়ে নিয়ে আসা হয়েছিল, তাদেরকে স্টেজে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন, তখন তারা জোড় বয়কট করেন এবং ফোন করে বিভিন্ন সাথিকে ময়দান থেকে বের হয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।
এমনিভাবে ২০১৮ সালের ইজতিমাতেও তারা গোপনে মাওলানা সা‘দ সাহেবকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং ইজতিমার সময় সা‘দ সাহেবের সঙ্গে কাকরাইলেই অবস্থান করেন।
শুধু তা-ই নয়। ১ ডিসেম্বর ২০১৮ ঈ. তারিখে টঙ্গী ময়দানে তারা উলামা-তলাবা ও সাধারণ সাথিদের ওপর হামলা করে শত শতজনকে নির্মমভাবে আহত করেছেন, মাথা ফাটিয়েছেন, হাত-পা ভেঙেছেন এবং তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছেন। এরপর অন্যান্য জেলায় ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মারকায ও মসজিদগুলোতে তারা যে বিভক্তি ও জুলুম-অত্যাচার করেছেন, সেটাও একদম স্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ। আশ্চর্যের বিষয় হল, এতসব জুলুম-নির্যাতনের পরও তাদের কোনো আফসোস নেই, বরং এ নিয়ে তারা গর্ব করেন!
এইসব সত্ত্বেও তাদের দাবি– তারা তাবলীগের মূলধারার ওপর আছেন। কতক আওয়াম ও সাধারণ মানুষের ধারণা, সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা তো তাবলীগ-ই করছেন, ছয় নম্বরের দাওয়াত-ই তো দিচ্ছেন। অতএব তাদের সঙ্গে কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই।
প্রশাসনের ব্যক্তিরাও তাদেরকে তাবলীগ জামাতের একটা অংশ ভেবে তাদের সহযোগিতা করেন। কাকরাইল মসজিদে তাদেরকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্য অনেক মারকাযেও তাদেরকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। টঙ্গী ময়দানে তাদেরকে ইজতিমা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
মোটকথা, তাদের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ এবং অনেক বেদনাদায়ক। এতসব কিছু পেশ করার একটা উদ্দেশ্য এটাও যে, এ বিভেদ ও বিভক্তির কারণে ইজতিমা ও জোড়ের সময়ে বাইরের মেহমানরা অনেক পেরেশান হন। তারা হয়তো যেতে চান শূরায়ী নেযামের সাথিদের সঙ্গে, কিন্তু সা‘দপন্থিরা তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে যান অথবা গলত তাশকীল করে তাদের পেরেশান করেন।
এমনিভাবে শূরায়ী নেযামের সাথিরা কাউকে তাশকীল করে প্রস্তুত করেন, কিন্তু খুরূজের সময় সা‘দপন্থিরা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে কিংবা লোভ দেখিয়ে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে যান।
গীবত, মিথ্যাচার এবং মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভুল ও বিচ্ছিন্ন চিন্তাধারার প্রচারণা– এগুলো তো তারা বন্ধ করেন-ই না, উল্টো উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, তারা মাওলানা সা‘দ সাহেবের গীবত করেন।
মোটকথা, বর্তমানে এ দেশে তাবলীগী জামাতের বিভক্তির সুরতহাল হল, একদল (সা‘দপন্থিরা) মাওলানা সা‘দ সাহেব ও মারকায নিযামুদ্দীনের ইতাআতের ওপর গোঁ ধরে আছেন। তাবলীগ জামাতের প্রবীণ মুরব্বীদেরও তাদের কাছে কার্যত কোনো মূল্য নেই। বরং কাজকে সীরাতের ওপর নিয়ে আসার নাম করে সা‘দ সাহেব কাজের মধ্যে যত পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটাচ্ছেন, তারা সেগুলোকে ‘তাজদীদ’ নাম দেন। তাদের কাছে মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের দলীলসমৃদ্ধ ফতোয়াও গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাবলীগের বিষয়ে উলামায়ে কেরামের রাহবরী তো তারা স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তো উলামায়ে কেরামকেই তারা দোষী ও অযোগ্য আখ্যা দেন।
আরেক দল (শূরায়ী নেযামের সাথিগণ)-এর বক্তব্য হল, আমরা দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া মান্য করি এবং তাবলীগ জামাতের পূর্ববর্তী তিন হযরতজী কাজের যে নাহ্জ ও পদ্ধতি রেখে গেছেন সেটাই আমাদের নিকট মূল। সেইসঙ্গে আমরা বর্তমান আহলে হক উলামায়ে কেরামের রাহবরী ও সমর্থনের মুখাপেক্ষী।
এ অবস্থায় আমরা উলামায়ে কেরামের নিকট কয়েকটি বিষয় জানতে চাই–
১. মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিভিন্ন বয়ানের ওপর ভিত্তি করে দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়াসমূহে যা কিছু লেখা হয়েছে তার আলোকে এবং মাওলানা সা‘দ সাহেবের অন্যান্য যেসব বয়ান সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের জানা আছে সেগুলোর ভিত্তিতে, দ্বীনী দিক থেকে মাওলানা সা‘দ সাহেবের অবস্থান কী? তাকে কি কোনো দ্বীনী জামাতের যিম্মাদার বানানো যাবে? তাবলীগ জামাতের মতো এমন আলমী দ্বীনী জামাতের আমীর হওয়ার জন্য যেসব শরয়ী সিফত (যোগ্যতা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য) জরুরি, তার মধ্যে কি সেসব সিফাত আছে? সাধারণ মানুষ, যারা সহীহ-গলত পার্থক্য করতে পারে না, তাদের জন্য কি মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ান শোনা জায়েয আছে?
২. সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা বলেন, মাওলানা সা‘দ সাহেব একাধিকবার তার ভুল থেকে রুজু করেছেন। জানার বিষয় হল, তিনি যদি রুজু করে থাকেন, তাহলে এর পরও কি তার ওপর কোনো আপত্তি বাকি থাকে? তিনি রুজু করা সত্ত্বেও দারুল উলূম দেওবন্দ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম তার খেলাফ কেন?
৩. মাওলানা সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা (অন্য শব্দে সা‘দপন্থি জামাত কিংবা শাখসী নেযামের জামাত), যাদের কিছু হালত ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হল, তাদের সঙ্গে কি তাবলীগের কাজ করা এবং জামাতে বের হওয়া যাবে?
৪. সা‘দপন্থিদের জোড় ও ইজতিমায় শরীক হওয়া যাবে কি না?
৫. তারা মসজিদে জামাত নিয়ে এলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও মুসল্লীদের করণীয় কী?
৬. বিভিন্ন এলাকায় মারকায ও মসজিদে সা‘দপন্থিদেরকে কাজের সুযোগ দানের জন্য মসজিদ-মারকাযকে উভয় দল, অর্থাৎ শূরায়ী নেযামওয়ালা ও সা‘দপন্থিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে যে, তারা পালাক্রমে কাজ করবে। এই ভাগের শরয়ী বিধান কী?
৭. যারা মাওলানা সা‘দ সাহেবের কাছে বাইআত হয়েছেন বা হচ্ছেন, মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভ্রান্তি ও গোমরাহীসমূহ সামনে আসার পর তাদের জন্য এই বাইআতের ওপর বাকি থাকা জায়েয কি না এবং এই বাইআতের অজুহাত দিয়ে তার অনুসরণ করা জায়েয কি না?
৮. ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দান ও নেযামুদ্দীন মারকাযের অজুহাত পেশ করে সা‘দপন্থিরা সা‘দ সাহেবের অনুসরণ করাকে জরুরি মনে করেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এই চিন্তা সঠিক কি না?
৯. তাবলীগ জামাতের এ বিভক্তি দূর করা জরুরি কি না আর জরুরি হলে তা দূর করার উপায় কী?
১০. তাবলীগ জামাতের এই চলমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ওপর শরীয়তের দৃষ্টিতে কী কী দায়িত্ব আরোপিত হয়?
নিবেদক
মাওলানা আব্দুল্লাহ শামীম
মুহাম্মাদ মোস্তফা কামাল মৃধা
টঙ্গী ময়দান শবগুজারি মসজিদ
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
الجواب ومن الله نستمد الصواب
الحمد لله، وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله، وحده لا شريك له، وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، وخاتم أنبيائه ورسله، صلى الله عليه وعلى آله وبارك وسلم، ورضي الله عن صحابته الكرام أجمعين، أما بعد:
মাওলানা সা‘দ সাহেব ও সা‘দ-অনুসারীদের বিষয়ে আপনাদের প্রশ্নপত্রটি আমরা পড়েছি। প্রশ্নপত্রের সঙ্গে প্রদত্ত মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ানসমূহের অডিও এবং সা‘দ-অনুসারীদের বিভিন্ন কথাবার্তা ও কাজকর্ম সংক্রান্ত তথ্যাদি ও ডকুমেন্টস আমরা গভীরভাবে নিরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখেছি।
দারুল উলূম দেওবন্দের নতুন-পুরোনো ফতোয়াগুলোও দেখেছি। মাওলানা সা‘দ সাহেবের নতুন-পুরোনো অনেক বয়ান আমরা শুনেছি। এসব বয়ানে তিনি শরীয়ত ও সুন্নতের খেলাফ কী কী কথা বলেছেন এবং কীভাবে শরীয়তের বিভিন্ন দলীল, পরিভাষা ও বিধানের তাহরীফ ও বিকৃতি ঘটিয়েছেন, সেগুলোও আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি।
এসব হালত ও তাহকীক সামনে রেখে প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত ১০ টি প্রশ্নের উত্তর ধারাবাহিকভাবে লেখা হচ্ছে–
প্রশ্ন ১ : মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিভিন্ন বয়ানের ওপর ভিত্তি করে দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়াসমূহে যা কিছু লেখা হয়েছে তার আলোকে এবং মাওলানা সা‘দ সাহেবের অন্যান্য যেসব বয়ান সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের জানা আছে সেগুলোর ভিত্তিতে, দ্বীনী দিক থেকে মাওলানা সা‘দ সাহেবের অবস্থান কী? তাকে কি কোনো দ্বীনী জামাতের যিম্মাদার বানানো যাবে? তাবলীগ জামাতের মতো এমন আলমী দ্বীনী জামাতের আমীর হওয়ার জন্য যেসব শরয়ী সিফাত (যোগ্যতা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য) জরুরি, তার মধ্যে কি সেসব সিফাত আছে? সাধারণ মানুষ, যারা সহীহ-গলত পার্থক্য করতে পারে না, তাদের জন্য কি মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ান শোনা জায়েয আছে?
উত্তর : মাওলানা সা‘দ সাহেবের পুরোনো ও নতুন বয়ান, রুজুর আগের ও পরের বয়ান, বিভিন্ন ইজতিমা ও জোড়ের বয়ান, নেযামুদ্দীনের বয়ান, হায়াতুস সাহাবার তালীমে প্রদত্ত বয়ান –যেগুলোর আলোচনা দারুল উলূম দেওবন্দের পুরোনো বা সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন ফতোয়ায় এসেছে বা আসেনি (বিশেষত ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অনেক বয়ান)– এই সব বয়ানের মাধ্যমে এ কথা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে,
ক. মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ানে নবীগণের শানে বেয়াদবি পাওয়া যায়। তিনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ও হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর ভঙ্গিতে সমালোচনা করেছেন। এমনকি সায়্যিদুল মুরসালীন খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কেও অসুন্দর ভঙ্গিতে মন্তব্য করেছেন।
আর এ তো সবারই জানা যে, নবীগণের সমালোচনা করা মারাত্মক গোমরাহী।
খ. মাওলানা সা‘দ সাহেব দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকে সীরাতের ওপর ওঠানোর নামে দাওয়াত ও তাবলীগ সংক্রান্ত অনেক শরয়ী উসূল ও শরয়ী আহকামে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এবং দলীলবিহীন অনেক নতুন বিধান বানিয়েছেন। এধরনের কাজকে বলা হয় تغيير شريعت (শরীয়তের বিধান পরিবর্তন) এবং إحداث في الدين (দ্বীনের মধ্যে বেদআত সৃষ্টি)। আর এ দুটো যে গোমরাহী, তা কুরআন কারীম ও হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
গ. এটা স্পষ্ট যে, উসূল ও আহকামে পরিবর্তন শরয়ী দলীলে বিকৃতি ঘটানো ব্যতীত সম্ভব নয়। সেজন্য মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ানসমূহে বিভিন্ন আয়াতের গলত তাফসীর ও ‘তাফসীর বির রায়’ হতেই থাকে। বিভিন্ন হাদীসে এবং সীরাতে নাবাবিয়া ও সীরাতে সাহাবার বিভিন্ন ঘটনায় নিজের পক্ষ থেকে সংযোজন ও সেগুলোর মনগড়া ব্যাখ্যা হতেই থাকে। এটাকে শরীয়তের পরিভাষায় তাহরীফ (বিকৃতি) এবং তাবীলুল জাহিলীন (মূর্খতাপ্রসূত অপব্যাখ্যা) বলা হয়, যা বাতিলপন্থি ও গোমরাহ লোকদের বৈশিষ্ট্য।
মাওলানা সা‘দ সাহেবের এ ধরনের গোমরাহী এক-দুটি নয়, বরং দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়ার ভাষ্য অনুযায়ী–
معاملہ صلاح کے بجائے غلط اجتہادات، دين وشريعت ميں تحريفات، اور خود ساختہ نظريات پر اصرار کي طرف بڑھتا ہي جارہا ہے۔
‘তার আচরণ সংশোধনমুখিতার পরিবর্তে গলত ইজতিহাদ, দ্বীন-শরীয়তের বিষয়ে অপব্যাখ্যা এবং নিজের মনগড়া মতাদর্শের ওপর অনড় অবস্থানের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।’
معاملہ جزوي غلط بياني کا نہيں، بلکہ کج فکري، کم علمي اور اہليت نہ ہونے کے باوجود اجتہاد و استنباط پر جسارت کا ہے، جس کي وجہ سے تحريفات کا ايک مستقل سلسلہ جاري ہے۔
‘তার বিষয়টা এক্কা দোক্কা ভুলের নয়; বরং চিন্তার বক্রতা, ইলমের কমতি এবং যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ইজতিহাদ ও ইসতিম্বাতের ধৃষ্টতার, যে কারণে তাহরীফ ও বিকৃতির একটা স্বতন্ত্র ধারা চলমান।’
দারুল উলূম দেওবন্দ স্পষ্ট লিখেছে–
‘ইসলামের ইতিহাসে বক্রতা ও ভ্রষ্টতার শিকার যেসব মানুষ আছে, তাদের বিষয়ে চিন্তা করলে দেখা যায়, এটাই ছিল তাদের বিপথগামিতার কারণ। অর্থাৎ ইজতিহাদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তারা মুজতাহিদ ইমাম, সালাফে সালেহীন ও সমকালীন আহলে হক উলামায়ে কেরামের ওপর আস্থা রাখার পরিবর্তে খোদরায়ী ও খোদরবী করে (তথা নিজস্ব মত ও পথকে চূড়ান্ত এবং একমাত্র মত ও পথ মনে করে) নিজেদের জন্য আলাদা রাস্তা বানিয়ে নিয়েছে।
সুতরাং ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সনে জারিকৃত ‘জরুরি ওয়াযাহাত’-এ দারুল উলূম দেওবন্দ যে বিষয়ে সতর্ক করেছে, তা ছিল বিলকুল বাস্তবসম্মত। আলোচ্য ব্যক্তি ইলমী কমতি ও বেপরোয়া মনোভাবের কারণে কুরআন-হাদীস ও সীরাতে সাহাবার মধ্যে মুজতাহিদসুলভ ভঙ্গিতে না-হক ইজতিহাদ করার পেছনে পড়ে আছেন। ফলে শায-মুনকার কথাবার্তা এবং ভ্রষ্টতা ও বিভ্রান্তিপূর্ণ চিন্তাধারা ক্রমাগতভাবে প্রকাশ পেয়েই চলেছে।’
অতএব যেহেতু মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ানসমূহে বিচ্ছিন্ন ও আপত্তিকর কথাবার্তা এবং ভুল ও গোমরাহীপূর্ণ চিন্তাধারা বিদ্যমান, সেহেতু এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ অবস্থায় তাকে কোনো দ্বীনী জামাতের যিম্মাদার বানানো এবং তাকে কোনো দ্বীনী বিষয়ে মুকতাদা বা অনুসরণীয় হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
তাবলীগ জামাতের মতো একটি বড় দ্বীনী জামাতের কেন্দ্রীয় আমীর বা যিম্মাদার হওয়ার জন্য যেসব শরয়ী সিফাত (যোগ্যতা ও গুণ-বৈশিষ্ট্য) জরুরি, মাওলানা সা‘দ সাহেবের মধ্যে সেসব সিফাত নেই। কারণ এ ধরনের আমীর ও যিম্মাদারের জন্য শরয়ী যেসব সিফাত জরুরি, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিফাত হল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শুযূয (বিচ্ছিন্নতা) ও ইহদাস ফিদ দ্বীন (দ্বীনের মধ্যে বেদআত সৃষ্টি) থেকে বেঁচে থাকা। ফিকরী গোমরাহী (চিন্তাগত বিপথগামিতা)-এর শিকার না হওয়া এবং গোমরাহীপূর্ণ চিন্তাধারা থেকে দূরে থাকা। অথচ মাওলানা সা‘দ সাহেব এগুলো থেকে মুক্ত নন।
সেজন্য আওয়াম হোক কিংবা সাধারণ শিক্ষিত, যাদের মধ্যে সহীহ-গলত ও হক-বাতিলে পার্থক্য করার মতো ইলম ও যোগ্যতা নেই, তাদের জন্য মাওলানা সা‘দ সাহেবের বয়ান শোনা জায়েয নয়।
প্রশ্ন ২ : সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা বলেন, মাওলানা সা‘দ সাহেব একাধিক বার তার ভুল থেকে রুজু করেছেন। জানার বিষয় হল, তিনি যদি রুজু করে থাকেন, তাহলে এর পরও কি তার ওপর কোনো আপত্তি বাকি থাকে? তিনি রুজু করা সত্ত্বেও দারুল উলূম দেওবন্দ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম তার খেলাফ কেন?
উত্তর : মাওলানা সা‘দ সাহেব রুজু তো করেছিলেন, কিন্তু রুজুর পরেও (অর্থাৎ ভুল বক্তব্য প্রত্যাহারের পরেও) রুজুর আগের কথাগুলো বলা বন্ধ করেননি। যেসব আপত্তিকর কথা থেকে তিনি রুজু করেছিলেন, সেগুলো তিনি বারবার দোহরাতে থাকেন। বিশেষত ২০২২ ঈসায়ী সনের ভূপাল ইজতিমা ও মালয়েশিয়ার ইজতিমায় তো আগে যেসব বিষয় থেকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় লিখিত রুজু করেছিলেন, সেগুলোকে তিনি আরও জোর দিয়ে এবং আরও আপত্তিকর ভঙ্গিতে বয়ান করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ তিনি ১০ রবিউল আখির ১৪৩৮ হি. মোতাবেক ৯ জানুয়ারি ২০১৭ ঈ. তারিখের রুজুনামায় লিখেছিলেন–
لہذا بندے کا کوئي بھي ايسا بيان جس سے تبليغ کے علاوہ دين کے دوسرے شعبوں کي ناقدري سمجھ ميں آتي ہو، يا جس سے تبليغ کے شرعي حکم کو کسي ايک خاص طريقے کے ساتھ محدود قرار دينا لازم آتا ہو بندہ اس سے رجوع اور براءت کا واضح اعلان کرتا ہے۔
‘এজন্য বান্দার এমন যে কোনো বয়ান, যার দ্বারা তাবলীগের বাইরে দ্বীনের অন্যান্য শাখার অবমূল্যায়ন বোঝা যায় কিংবা যার দ্বারা তাবলীগের শরয়ী বিধানকে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতির সঙ্গে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে, বান্দা তা থেকে রুজু করছি এবং সেটা থেকে নিজের বিযুক্ততা ও সম্পর্কহীনতার স্পষ্ট ঘোষণা করছি।’
অথচ উল্লেখিত তারিখের পর তার বহু বয়ান এমন আছে, যেগুলোতে তিনি দাওয়াতকে নকল-হরকতের সঙ্গে খাস করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ তাআলার নুসরতকে দাওয়াতের সঙ্গে খাস করে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে দাওয়াত ও তাবলীগের অন্যান্য খেদমতকে খেলাফে সুন্নত, প্রভাবশূন্য, সওয়াবহীন ও রেওয়াজি আখ্যা দিয়েছেন।
ওপরে ইশারাকৃত বয়ানসমূহ, বিশেষত ২০২২ ঈ. সনের মালয়েশিয়া ইজতিমার বয়ান এবং ২০২৩ ও ২০২৪-এর বিভিন্ন বয়ান শুনলে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না।
হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তিনি যে মারাত্মক সমালোচনা করেছিলেন, সেটা থেকে তিনি রুজু করেছেন বা ফিরে এসেছেন– এ মর্মে তিনি এখনো কোনো ঘোষণা করেননি। উপরন্তু খাতামুন্নাবিয়্যীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি ঘটনার বিষয়েও তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। পরবর্তীতে হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের বিষয়েও অত্যন্ত আপত্তিকর ভঙ্গিতে সমালোচনা করেছেন।
মোটকথা, মাওলানা সা‘দ সাহেবের রুজুর মূল্য না তার নিজের কাছে আছে আর না তার অনুসারীদের কাছে। কারণ সা‘দ সাহেব যেসব বিষয় থেকে রুজু করেছেন, তার অনুসারীরা সেগুলোকেও সহীহ প্রমাণের জন্য ব্যস্ত হয়ে আছেন।
মাওলানা সা‘দ সাহেব হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যা কিছু বলেছিলেন, সেগুলো থেকে তিনি তার চতুর্থ রুজুনামায় শর্তহীনভাবে রুজু করেছেন। মৌখিকভাবে রুজু করেছেন ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নেযামুদ্দীনে এবং জানুয়ারি ২০১৮ সালে কাকরাইলে। কিন্তু তার অনুসারীরা তার এসব মারাত্মক গোমরাহীপূর্ণ কথাকে সহীহ প্রমাণ করার জন্য এ পর্যন্ত অনেক কিছু লিখেছেন এবং বলেছেন। আর সা‘দ সাহেব নিজেই ২০২৩-এর ভূপাল ইজতিমায় হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে অন্য আরেক বিষয়ে আবার আপত্তিকর কথা বলেছেন।
এককথায় মাওলানা সা‘দ সাহেবের রুজুর বাস্তব প্রকাশ তার বয়ানে পাওয়া যায়নি। সেজন্য দারুল উলূম দেওবন্দ ৩১/০১/২০১৮ ঈ. তারিখে প্রকাশিত–
مولانا محمد سعد صاحب کے رجوع کے سلسلے ميں ضروري وضاحت
-এর মধ্যে এ কথা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, ‘তার রুজুকে এই এক ঘটনার ক্ষেত্রে (অর্থাৎ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রদত্ত আপত্তিকর বক্তব্যের ক্ষেত্রে) ইতমিনানযোগ্য বলা গেলেও দারুল উলূম দেওবন্দের ‘মাওকিফে’ মূলত মাওলানার যে চিন্তাগত বিপথগামিতার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল তা উপেক্ষা করা যায় না। কারণ কয়েকবার রুজু করার পরও বিভিন্ন সময় মাওলানার এমন সব নতুন নতুন বয়ান পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে তার সেই মুজতাহিদসুলভ ভঙ্গি, দলীল-প্রমাণের ভুল ব্যবহার এবং দাওয়াত সম্পর্কে তার নিজস্ব বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর শরয়ী নুসূসের অপপ্রয়োগের বিষয়গুলো একদম স্পষ্ট। যার কারণে শুধু দারুল উলূমের যিম্মাদারগণই নন, অন্যান্য হক্কানী উলামায়ে কেরামেরও মাওলানার সামগ্রিক ফিকিরের ব্যাপারে কঠিন ধরনের অনাস্থা রয়েছে।’
আর রুজুর পর যেহেতু মাওলানা সা‘দ সাহেব আগের চেয়ে আরও বেশি বেপরোয়া ও খোলামেলাভাবে নিজের পূর্ব-গোমরাহীগুলোকে পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছেন সেহেতু যিলকদ ১৪৪৪ হি. মোতাবেক জুন ২০২৩ ঈ.-তে দারুল উলূম দেওবন্দের পক্ষ থেকে তার বিষয়ে আরও তফসীলী (বিশদ) ফতোয়া লিখতে হয়েছে, যা বাংলা ভাষায়ও প্রকাশিত হয়েছে।*
সুতরাং যে ব্যক্তি রুজু করার পরেও আগের আপত্তিকর ও গোমরাহীপূর্ণ কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করতে থাকে, সেইসঙ্গে নতুন নতুন আরও গোমরাহীপূর্ণ কথা বলতে থাকে, শরয়ী দৃষ্টিতে তার এ রুজুর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। সেজন্য রুজুর ঘোষণার আগে মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিষয়ে শরয়ী যে সিদ্ধান্ত ছিল, এখনো সে সিদ্ধান্তই বহাল আছে। অর্থাৎ নবীগণের সমালোচনা, শরীয়তের বিধিবিধানে হস্তক্ষেপ, ইহ্দাস ফিদ দ্বীন (দ্বীনের মধ্যে বেদআত সৃষ্টি) এবং শরীয়তের অনেক নসের স্বীকৃত ও অনুসৃত মর্মের বিকৃতি এবং শরীয়তের বিভিন্ন পরিভাষার বিকৃতি– এসব অপরাধের কারণে মাওলানা সা‘দ সাহেব গোমরাহীর রাস্তায় আছেন। সেজন্য তাকে দ্বীনী জামাতের দ্বীনী যিম্মাদার বানানো এবং দ্বীনী বিষয়ে তাকে অনুসরণীয় হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয নয়। সাধারণ মানুষ, যারা সহীহ-গলত ও হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না, তাদের জন্য তার বয়ান শোনা জায়েয নয়।
প্রশ্ন ৩ : মাওলানা সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা (অন্য শব্দে সা‘দপন্থি জামাত কিংবা শাখসী নেযামের জামাত), যাদের কিছু হালত ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হল, তাদের সঙ্গে কি তাবলীগের কাজ করা এবং জামাতে বের হওয়া যাবে?
উত্তর : মাওলানা সা‘দ সাহেবের অনুসারীদের, বিশেষত বাংলাদেশের সা‘দ-অনুসারীদের অবস্থা তো সা‘দ সাহেবের চেয়েও ভয়াবহ। কারণ তারা সা‘দ সাহেবের ভুল ও গোমরাহীপূর্ণ কথাবার্তাকে সমর্থন করেন; উপরন্তু তারা তার পক্ষে তাআস্সুব তথা অন্যায় পক্ষপাতে লিপ্ত হয়ে উলামা-মাশায়েখ, মাদরাসা এবং শূরায়ী নেযামের মুরব্বী ও সাথিদের অপমান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যাচ্ছেন।
এমনকি জুমহুর উলামা, যারা মাওলানা সা‘দ সাহেবের বিষয়ে সঠিক কথা উম্মতের সামনে পেশ করেছেন, তাদেরকে তারা উলামায়ে সূ আখ্যা দেন। ইলমী অঙ্গনের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি শব্দ ‘জুমহুর’; এটাকে তারা উপহাসের বিষয় বানিয়েছেন। মাওলানা সা‘দ সাহেবের মারাত্মক ভুল ও গোমরাহীগুলোকে সমর্থন করতে গিয়ে মুনকার রেওয়ায়েত, বিচ্ছিন্ন মত ও চিন্তা এবং বিভিন্ন লেখকের ভুল-ভ্রান্তিকে দলীল বানিয়ে পেশ করে যাচ্ছেন। সা‘দ সাহেবের আমীরত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে নতুন নতুন মাসআলা সৃষ্টি করেছেন এবং তার ছোট-বড় সমস্ত গোমরাহীকে হেদায়েত প্রমাণের জন্য লেগে আছেন। উদাহরণস্বরূপ–
ক. হযরত মূসা আলাইহিস সালামের শানে বেয়াদবি। এ ব্যাপারে মাওলানা সা‘দ সাহেব তো নিজের ভুল স্বীকার করেছেন, কিন্তু তার অনুসারীরা সেটাকে সঠিক প্রমাণের জন্য লেগে আছেন।
খ. হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের শানে বেয়াদবি।
গ. খাতামুন নাবিয়্যীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মর্যাদা পরিপন্থি মন্তব্য।
ঘ. হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের শানে বেয়াদবি।
সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা এসব বিষয়ে সা‘দ সাহেবের বক্তব্যকেই সঠিক মনে করেন।
এমনিভাবে মাওলানা সা‘দ সাহেব সীরাতের নামে শরয়ী উসূল ও আহকামে যত পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এবং দলীলবিহীন যত আহকাম বানিয়েছেন, তারা এই সবকিছুর তরফদারি করেন। যেমন–
তাবলীগের প্রচলিত খুরূজে (অর্থাৎ তাবলীগে সময় লাগানোর জন্য বের হওয়ার ক্ষেত্রে) বিলম্ব করাকে কবীরা গোনাহ বলা– এটা সা‘দ সাহেবের পক্ষ থেকে শরীয়তে স্পষ্ট দখলদারি এবং স্পষ্ট ইহ্দাস ফিদ দ্বীন (দ্বীনের মধ্যে নবসৃষ্টি)। অথচ তার অনুসারীরা এই বাতিল ও গোমরাহীপূর্ণ কথা ২০২৩ সালের টঙ্গী ইজতিমায়ও বয়ান করেছেন।
মোটকথা, তাদের অবস্থা শুধু এই নয় যে, তারা সা‘দ সাহেবের আপত্তিকর ও গোমরাহীপূর্ণ কথাগুলো বিশ্বাস করেন, বরং তারা এগুলোকে শরীয়ত ও সুন্নত বানানোর অপচেষ্টাও করেন।
অতএব যারা কোনো গোমরাহীর শিকার ব্যক্তিকে নিজেদের অনুসরণীয় বানায়, তাকে অন্যায় সমর্থন করে এবং তার ভুল, মূর্খতাপূর্ণ ও গোমরাহীপূর্ণ কথাগুলোকে হক ও হেদায়েত মনে করে, তাদের সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কী তা স্পষ্ট। আর তা হল– তাদের জন্য আবশ্যক, তারা খালেস দিলে তওবা করে গোমরাহীর রাস্তা অবলম্বনকারী ব্যক্তির অনুসরণ থেকে ফিরে আসবে এবং হেদায়েতের রাস্তা গ্রহণ করবে। যদি তারা এমনটা না করে, তাহলে তারাও গোমরাহীর রাস্তায় আছে। তাদের তাবলীগী কাজে সহযোগিতা করা কিংবা তাদের সঙ্গে তাবলীগে সময় লাগানো নাজায়েয।
তাবলীগী খুরূজ (অর্থাৎ তাবলীগে সময় লাগানোর জন্য বের হওয়া) একটি দ্বীনী কাজ। এর উদ্দেশ্য দ্বীন-ঈমান শেখা এবং হেদায়েতের রাস্তা গ্রহণ করা। সেজন্য এ কাজ চিন্তাগত বিপথগামিতার শিকার মানুষদের সঙ্গে করা নাজায়েয। নতুবা সেখানে গিয়ে দ্বীনের সঙ্গে বে-দ্বীনী এবং হেদায়েতের সঙ্গে গোমরাহীর কথা শিখবে। বিশেষত যখন এসব মানুষের আসল মিশনই থাকে সাথিদেরকে মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভক্ত বানানো এবং তার গোমরাহীগুলোকে সাথিদের মন-মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া।
এসব কারণে মাওলানা সা‘দ সাহেবের অনুসারীদের ব্যাপারে এ কথা স্পষ্ট যে, তারা হকের ওপর নেই। তারা গোমরাহীর রাস্তায় আছেন।
প্রশ্ন ৪ : সা‘দপন্থিদের জোড় ও ইজতিমায় শরীক হওয়া যাবে কি না?
উত্তর : এটা যখন নির্ধারিত যে, মাওলানা সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা গোমরাহীর রাস্তায় আছেন, তখন তাদের জোড় ও ইজতিমায় শরীক হওয়াও জায়েয নয়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে–
مَنْ كثَّر سوادَ قوم فهو منهم.
অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোনো দলকে ভারি করবে, সে তাদের একজন বলে গণ্য হবে। –মুসনাদে আবু ইয়ালা; নাসবুর রায়াহ ৪ : ৩৪৬
প্রশ্ন ৫ : তারা মসজিদে জামাত নিয়ে এলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও মুসল্লীদের করণীয় কী?
উত্তর : মাওলানা সা‘দ সাহেবের অনুসারীরা যদি মসজিদে জামাত নিয়ে চলে আসেন, তাহলে মসজিদ কমিটি ও সচেতন মুসল্লীদের কর্তব্য– তারা তাদের বোঝাবেন যে, মসজিদ নামায ও আল্লাহর যিকিরের ক্ষেত্রে সকল মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত, কিন্তু মসজিদে কোনো গোমরাহীর কথা বলা বা গোমরাহ ব্যক্তির মতবাদের দিকে দাওয়াত দেওয়া কোনোভাবেই জায়েয নয়। সেজন্য যদি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে হয়, তাহলে তার জন্য শরীয়তের বিধান হল, সেটা সহীহভাবে করতে হবে এবং শরীয়তের বিধান মোতাবেক করতে হবে। ভুল ও গোমরাহীপূর্ণ চিন্তাধারার ব্যক্তি ও তার অনুসারীদের দাওয়াত দ্বারা তো গোমরাহী বা চিন্তাগত বিপথগামিতাই ছড়াবে। অতএব আপনাদের উদ্দেশ্য যদি দাওয়াত হয়, তাহলে দাওয়াতের কাজ তো মহল্লায় আছে। আর যদি আপনারা বিশেষ ব্যক্তি, যিনি চিন্তাগত বিপথগামিতার শিকার, তার এতাআতওয়ালা কাজ চান, তাহলে এই ভ্রান্ত কাজ আমরা আমাদের মহল্লায় চাই না।
মোটকথা, ইকরাম ও মহব্বতের সঙ্গে তাদেরকে নিষেধ করে দেওয়াটাই মসজিদ কমিটি ও মুসল্লীদের কর্তব্য। এটাই মসজিদের শরয়ী আহকাম ও আদবের ফয়সালা।
তবে এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন হালত আসতে পারে। তখন সে হালত অনুযায়ী হিকমতপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন ৬ : বিভিন্ন এলাকায় মারকায ও মসজিদে সা‘দপন্থিদেরকে কাজের সুযোগদানের জন্য মসজিদ-মারকাযকে উভয় দল, অর্থাৎ শূরায়ী নেযামওয়ালা ও সা‘দপন্থিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, তারা পালাক্রমে কাজ করবে। এই ভাগের শরয়ী বিধান কী?
উত্তর : মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখানে শুধু হকের কথাই হবে। এখানে না-হক কিছু বলা বা করার মোটেই সুযোগ নেই। তাই কোনো মসজিদকে দাওয়াতের কাজের জন্য উভয় দলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া ভুল। যে দল গোমরাহীর শিকার ব্যক্তির অনুসরণ করে এবং তারা নিজেরাও অনেক চিন্তাগত গোমরাহীর শিকার, তাদের দাওয়াতের কাজ করার অধিকার নেই। কারণ তাদের দাওয়াতে যারা আসবে, তারাও গোমরাহীর শিকার হবে। এজন্যই যে দল বা যে লোকেরা গোমরাহীর রাস্তায় আছে, তাদেরকে মসজিদে দাওয়াতী কাজের অংশীদার বানানো বা তাদের কাজের অংশীদার হওয়া নাজায়েয। কোথাও যদি তারা জোরপূর্বক অংশীদার হতে চায়, তাহলে তারা দ্বিগুণ গোনাহগার হবে।
প্রশ্ন ৭ : যারা মাওলানা সা‘দ সাহেবের কাছে বাইআত হয়েছেন বা হচ্ছেন, মাওলানা সা‘দ সাহেবের ভ্রান্তি ও গোমরাহীসমূহ সামনে আসার পর তাদের জন্য এই বাইআতের ওপর বাকি থাকা জায়েয কি না এবং এই বাইআতের অজুহাত দিয়ে তার অনুসরণ করা জায়েয কি না?
উত্তর : এটা স্পষ্ট যে, গোমরাহীর শিকার কারো হাতে যদি কেউ বাইআত হয়েও যায়, তবু শরীয়তের দৃষ্টিতে এ বাইআতের কোনো মূল্য নেই। বাইআত তো হয় হকের ওপর চলার জন্য; গোমরাহীর রাস্তা গ্রহণ করার জন্য নয়। সেজন্য এ ধরনের বাইআত ছেড়ে সঠিক রাস্তায় ফিরে আসা জরুরি। গোনাহের কসম কিংবা নেককাজ থেকে বিরত থাকার কসম করলে যেমনিভাবে তা ভাঙা জরুরি, তেমনিভাবে গলত বাইআত থেকে বের হয়ে আসাটাও জরুরি। তাই এমন বাইআতকে অজুহাত বানিয়ে গোমরাহীর শিকার ব্যক্তির অনুসরণ করা বা তার দলভুক্ত থাকা জায়েয নয়।
প্রশ্ন ৮ : ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দান ও নেযামুদ্দীন মারকাযের অজুহাত পেশ করে সা‘দপন্থিরা সা‘দ সাহেবের অনুসরণ করাকে জরুরি মনে করেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এই চিন্তা সঠিক কি না?
উত্তর : শরীয়তের দৃষ্টিতে এই চিন্তা ভিত্তিহীন ও গোমরাহী। কারণ শরীয়ত কোনো বিশেষ খান্দান বা কোনো বিশেষ জায়গাকে হক-বাতিলের মানদণ্ড হিসেবে নির্ধারণ করেনি। হক-বাতিল পার্থক্য করার মানদণ্ড হল শরীয়ত। তাই সা‘দ সাহেব হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দানের হয়ে থাকলেও, যেহেতু তিনি গোমরাহীর শিকার হয়ে গেছেন আর তার সমস্ত গোমরাহী মারকায নেযামুদ্দীন থেকে প্রচারিত হয়, সেহেতু ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দান ও মারকায নেযামুদ্দীনের অজুহাত দাঁড় করিয়ে মাওলানা সা‘দ সাহেবের অনুসরণ করা এবং তার জামাতের সঙ্গ দেওয়া জায়েয হবে না।
প্রশ্ন ৯ : তাবলীগ জামাতের এ বিভক্তি দূর করা জরুরি কি না আর জরুরি হলে তা দূর করার উপায় কী?
উত্তর : যেহেতু বিভক্তিটা হক-নাহকের এবং তা এজন্য হয়েছে যে, কিছু লোক গোমরাহীর শিকার জনৈক ব্যক্তির অনুসরণ করে হক থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে, সেহেতু এ বিভক্তি দূর করা জরুরি। আর এর একমাত্র পন্থা হল, যারা গলত ইতাআত করে গলত রাস্তায় চলে গেছে, তারা নিজেদের সংশোধন করে সঠিক রাস্তায় ফিরে আসবে এবং আগের মতো মিলেমিশে কাজ করবে। নিজেদের চিন্তা-চেতনা ও আকীদা-বিশ্বাস সংশোধন করে সঠিক পথে ফিরে আসা ছাড়া এবং শরয়ী বিধান মান্য করা ছাড়া ঐক্যের কোনো সুযোগ নেই। আর দ্বীনী বিষয়ে এমনটা করা জায়েযও নয়। কারণ তা হবে বাতিলের সাথে আপোষ।
প্রশ্ন ১০ : তাবলীগ জামাতের এই চলমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ওপর শরীয়তের দৃষ্টিতে কী কী দায়িত্ব আরোপিত হয়?
উত্তর : এ বিষয়ে প্রথম কথা হল, প্রশাসনের সামনে এ বিভক্তির ধরন ও কারণ স্পষ্ট হওয়া। এই বিভক্তি না অর্থ-সম্পদ নিয়ে বিরোধের কারণে হয়েছে আর না পদ-পদবি নিয়ে ঝগড়ার কারণে হয়েছে; বরং এজন্য হয়েছে যে, একটি দল তাবলীগের বিষয়ে শরীয়তের উসূল ও বিধান মান্য করতে প্রস্তুত নয় এবং আরেকটি দল তা মান্য করতে প্রস্তুত। একটি দল গোমরাহীর শিকার যিম্মাদারের ইতাআত করতে গোঁ ধরে আছে, আরেকটি দল তা করতে রাজি নয়; বরং তারা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজটিকে সহীহ উসূল ও নাহ্জ (তথা সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি) অনুযায়ী আহলে হক উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে আঞ্জাম দিতে চায়।
যেহেতু যে কোনো কাজই শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে করা জরুরি, বিশেষত তা যদি হয় দাওয়াত ও তাবলীগের মতো একটি খালেস দ্বীনী কাজ, তাহলে তা তো শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে হওয়া আরও বেশি জরুরি। তাই তাবলীগ জামাতের যেসকল লোক শরয়ী বিধানকে উপেক্ষা করে গোমরাহীর শিকার ব্যক্তির অনুসরণ করে, কোনো সন্দেহ নেই– তারা ভুল রাস্তায় আছে এবং তারা গোমরাহীর শিকার। অতএব তাদের সহযোগিতা করা কোনোভাবেই জায়েয নয়।
কুরআন কারীমের আদেশ–
وَتَعَاوَنُوْا عَلَي الْبِرِّ وَ التَّقْوٰي وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَي الْاِثْمِ وَالْعُدْوَانِ.
তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করো। গোনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। –সূরা মায়েদা (৫) : ২
সুতরাং প্রশাসনের দায়িত্ব হল, এ সম্পর্কে আহলে হক উলামায়ে কেরামের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা এবং যে জামাত তাবলীগের সঠিক ধারায় আছে, তাদের সহযোগিতা করা। যারা গোমরাহীর পথে আছে, তাদের সহযোগিতা না করা।
والله تعالى أعلم بالصواب.
এখান থেকে ইমেজ আপলোড হবে
টীকা
১. ‘রুজু’ (رجوع) হল, নিজের ভুল স্বীকার করে তা থেকে ফিরে আসা এবং সহীহ কথা মেনে নেওয়া। মাওলানা সা‘দ সাহেব তার লিখিত রুজুনামায় নিজের ভুল স্বীকার তো করেছেন, কিন্তু তার বয়ানসমূহে এর কোনো প্রভাব প্রকাশ পায়নি। এর মানে তিনি ভুল তো স্বীকার করলেন, কিন্তু হকের দিকে ফিরে আসেননি। কারণ এখন পর্যন্ত তিনি তার গোমরাহীপূর্ণ বক্তব্যগুলো পুনরাবৃত্তি করেই চলেছেন। বরং আরও নতুন নতুন গোমরাহীপূর্ণ কথা বলেই যাচ্ছেন। তাই তার এই রুজু রুজু হিসেবে গণ্য নয়। কারণ তার আচরণ এর সম্পূর্ণ খেলাফ।
* দেখুন : মাসিক আলকাউসার, মুহাররম ১৪৪৫/আগস্ট ২০২৩ সংখ্যা : ‘মাওলানা সা‘দ -হাফিযাহুল্লাহ- ও তার বিভ্রান্তি সম্পর্কে দারুল উলূম দেওবন্দের সর্বশেষ তফসিলি ফতোয়া’ –সম্পাদক
২. গোনাহ সব জায়গাতেই গোনাহ। না-হক সব জায়গাতেই না-হক। কিন্তু তা যদি মসজিদে হয়, তাহলে সেটা আরও মারাত্মক গোনাহ।
(মাওলানা সা‘দ সাহেব স¤পর্কে তথ্য-প্রমাণনির্ভর দলীলসহ বিস্তারিত আলোচনা মাসিক আলকাউসারের আগামী সংখ্যাগুলো দ্রষ্টব্য।)
মুফতিয়ানে কেরাম ও আকাবির উলামার পক্ষে–
আরশাদ রাহমানী
মুফতী ও মুহতামিম
মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ বসুন্ধরা, ঢাকা
দিলাওয়ার হোসাইন
মুফতী ও মুহতামিম
জামি‘আ ইসলামিয়া দারুল উলূম ঢাকা
মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা
কেফায়েতুল্লাহ
মুফতী ও মুহাদ্দিস
দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ
মুফতী ও মুদীর
মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
আমীনুত তালীম
মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
ফতোয়া সমর্থনকারী মুফতিয়ানে কেরাম ও আকাবির উলামার দস্তখত
মাওলানা মুফতী খলিল আহমাদ
মুহতামিম, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী
মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী
মহাপরিচালক, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর, চট্টগ্রাম
মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ জসিমুদ্দীন
উসতাযুল হাদীস ওয়াল ফিকহ, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
মাওলানা মুহাম্মাদ শুআইব
উসতাযুল হাদীস, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী
মহাপরিচালক, জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর
মুফতী আহমদুল্লাহ
প্রধান মুফতী ও শায়খুল হাদীস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মুফতী আবু তাহের কাসেমী নদভী
প্রধান পরিচালক, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম
মাওলানা মুহাম্মাদ খোবাইব বিন তৈয়ব
প্রধান পরিচালক, আল-জামেয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি
মাওলানা মুফতী ইদ্রিস
মুফতী, আল-জামেয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি
মাওলানা মুফতী ইয়াহইয়া
প্রধান মুফতী, জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ
মাওলানা মুহাম্মাদ সাজিদুর রহমান
কো চেয়ারম্যান, আল-হাইআতুল উলয়া;
সিনিয়র সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল কুদ্দুছ
মুহতামিম, জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা
মুফতী আবদুস সালাম
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা
মুফতী মনসূরুল হক
প্রধান মুফতী, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া
মাওলানা মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ
মুহতামিম, শায়খ যাকারিয়া রিসার্চ সেন্টার কুড়িল
মুফতী এনামুল হক কাসেমী
মুফতী, মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ বসুন্ধরা, ঢাকা
মাওলানা মুহাম্মাদ মাহফুজুল হক
মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
মাওলানা মুফতী হিফজুর রহমান
মুফতী, জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া
মাওলানা মুফতী জিয়াউর রহমান
মুফতী, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া
মাওলানা মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ ফারুক
শাইখুল হাদীস, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা
মাওলানা মুহাম্মাদ বাহাউদ্দিন যাকারিয়া
মুহতামিম, জামেয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ
মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস
নাযেমে তালিমাত, জামেয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ
মুফতী জাফর আহমাদ
মুহতামিম, মাদরাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর ঢাকা
মুফতী মাহমুদুল হাসান
মুফতী ও মুহতামিম, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা
মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম
খতীব, ঢাকা পলিটেকনিক জামে মসজিদ
মুফতী মুহাম্মাদ হারুন
মুফতী, জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা
মাওলানা মুহাম্মাদ সালমান
মুহতামিম, মাদরাসা দারুর রাশাদ
মুফতী আব্দুল হালীম
নায়েবে মুহতামিম, মাদরাসা দারুর রাশাদ
মাওলানা মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
শায়খুল হাদীস, মাদরাসা দারুর রাশাদ
মাওলানা লিয়াকত আলী
শিক্ষাসচিব ও সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ
মাওলানা মুহাম্মাদ শাহরিয়ার মাহমুদ
মুহতামিম, দারুল উলুম হামিদিয়া মাদরাসা
উসতায, মাদরাসা দারুর রাশাদ মিরপুর
মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ আলী
মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, আফতাবনগর মাদরাসা
মুফতী মাসউদুল করীম
মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, টঙ্গী দারুল উলূম মাদরাসা
মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী
মুহতামিম, জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর, মাদারীপুর
মুফতী মহিউদ্দিন মাসুম
মুহতামিম, জামেয়া সুবহানিয়া মাহমুদনগর তুরাগ
মাওলানা আবুল বাশার নোমানী
মুহতামিম, জামেউল উলুম মিরপুর
মাওলানা মুহাম্মাদ নাজমুল হাসান
মুহতামিম, জামিয়াতুন নূর আল-কাসেমিয়া উত্তরা
মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ কেফায়েতুল্লাহ আযহারী
মুহতামিম, জামিয়াতুল মানহাল উত্তরা
মুফতী আব্দুল হাকীম
শায়খুল হাদীস, দারুস সালাম ফুরফুরা
মাওলানা মুহাম্মাদ লোকমান মাযহারী
মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, মাযহারুল উলুম মাদরাসা মিরপুর
মুফতী সাঈদ আহমাদ
নায়েবে মুফতী, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া
মুফতী রিজওয়ানুর রহমান
উস্তাযুল হাদীস, জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া
মাওলানা আব্দুল বছীর
মহাসচিব, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ
মাওলানা মকবুল হোসাইন
শায়খুল হাদীস, জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদরাসা, সিলেট
মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ
সভাপতি, জমইয়্যাতুল মাদারিসিল ক্বাওমিয়্যাহ, নোয়াখালী-লক্ষীপুর
মাওলানা মুহাম্মদ আজীজুল্লাহ (নওয়াব)
সেক্রেটারী জেনারেল, জমইয়্যাতুল মাদারিসিল ক্বাওমিয়্যাহ, নোয়াখালী-লক্ষীপুর
মাওলানা সিদ্দীক আহমদ নোমান
মুহতামিম, জামেয়া মাদানিয়া নোয়াখালী, দত্তেরহাট, সদর, নোয়াখালী
মুফতী মাহমুদউল্লাহ মাহমুদ
মুফতী, আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাইজদী, নোয়াখালী
মাওলানা মুহাম্মদ জামাল উদ্দীন
শিক্ষাসচিব, আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাইজদী, নোয়াখালী
মুফতী মাওলানা ইমদাদুল্লাহ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামেয়া ইসলামিয়া আহলিয়া আমানতপুর, নোয়াখালী
মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন
খতীব, নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ
মাওলানা হেফজুর রহমান
প্রধান মুফতী, জামেয়া মুহাম্মাদিয়া মাদরাসা হাজিরহাট, সদর, নোয়াখালী
মুফতী এনায়েতুল্লাহ রহমানী
শরীয়াহ সম্পাদক, জাতীয় উলামা মাশায়েখ পরিষদ নোয়াখালী
মাওলানা আব্দুল হক
মুহতামিম, জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ. বড় মসজিদ, ময়মনসিংহ
মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী
শায়খুল হাদীস, মাদরাসা ছাওতুল হেরা মাইজবাড়ী, ময়মনসিংহ
মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী
মুহতামিম, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলুম, ময়মনসিংহ
মাওলানা দেলাওয়ার হোসেইন
মুহতামিম, জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম, মাসকান্দা, ময়মনসিংহ
মুফতী আহমদ আলী
শায়খুল হাদীস ও প্রধান মুফতী, জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম, মাসকান্দা, ময়মনসিংহ
মুফতী রঈসুল ইসলাম
প্রধান মুফতী, জামিয়া ফয়জুর রহমান রহ. বড় মসজিদ, ময়মনসিংহ
মাওলানা জাকারিয়া
নাযেমে তালিমাত, জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম, মাসকান্দা, ময়মনসিংহ
মাওলানা মুহাম্মাদ আমিনুল হক
মুহতামিম, ফজলুল হক মারকাজুল উলূম মাদরাসা, ময়মনসিংহ
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ
মুহতামিম, রাহাতুল জান্নাত মহিলা মাদরাসা, খাগডগহর, ময়মনসিংহ
মুফতী ওমর আহমদ
প্রধান মুফতী, আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ
মাওলানা ইউনুস আহমাদ
নায়েবে মুহতামিম, জুম্মাপাড়া মাদরাসা রংপুর
মুফতী গোলামুর রহমান
মুহতামিম, ইমদাদুল উলূম রশিদিয়া মাদরাসা, খুলনা
মাওলানা মুশতাক আহমাদ
মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম, খুলনা
মাওলানা মুফতী মুজিবুর রহমান
মুহতামিম ও প্রধান মুফতী, জামিয়া ইসলামিয়া দড়টানা মাদরাসা, যশোর
মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব
মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া, বরিশাল
মুফতী নূরুল্লাহ
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, বরিশাল বহুমুখী ইসলামী মাদরাসা ও দারুল ইফতা, গণপাড়া, কাশিপুর চৌমাথা, বরিশাল
মাওলানা আনাছ
মুহতামিম, আল মাদরাসাতুল কাসেমিয়া মদীনাতুল উলূম,
চরফ্যাশন, ভোলা
মুফতী আবদুল বারী সন্দ্বীপী
মুফতী ও মুহাদ্দিস, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানীনগর ঢাকা
মুফতী মুহাম্মাদ আসেম
শায়খুল হাদীস, জামিয়া ওসমানিয়া, চাটখিল, নোয়াখালী
সভাপতি, জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, নোয়াখালী
(চলবে ইনশাআল্লাহ)