পাক-ভারত যুদ্ধ : ভারত ও বাংলাদেশী মিডিয়া
অপারেশন ‘বুনইয়ানুন মারসূস’, তারিখ ১১ যিলকদ ১৪৪৬ হিজরী, ১০ মে ২০২৫, সময় : বাদ ফজর, ঘোষণাকারী ও সিপাহসালার : জেনারেল সায়্যেদ আসেম মুনীর।
হাঁ, ‘বুনইয়ানুন মারসূস’ শব্দ তো বেশ পরিচিতই। কুরআনুল কারীমের সূরা সফ-এ বহুবার পড়া হয়েছে এবং নামাযে ইমাম সাহেবদের কণ্ঠে শোনাও হয়েছে অসংখ্যবার।
اِنَّ اللّٰہَ يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِہٖ صَفًّا کَاَنَّہُمْ بُنْيَانٌ مَّرْصُوْصٌ.
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে এভাবে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা সিসাঢালা প্রাচীর। –সূরা সফ (৬৩) : ০৪
কিন্তু কার্যকরভাবে বুনইয়ানুন মারসূস-এর ব্যবহার তো প্রথম দেখা হল। কালামে পাকের আয়াত পড়ে ফজরের পর আল্লাহর দরবারে দীর্ঘ মুনাজাত করে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া এবং দুশমন ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই লন্ডভন্ড করে দেওয়া– অহংকারী জালেমদের তো এটাই পাওনা ছিল, যারা শুধু নিজ দেশের কোটি মুসলমানের ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপরই নির্যাতনের স্টিমরোলার চালায় না; বরং অযথা অজুহাত দাঁড় করিয়ে হামলা করে প্রতিবেশী দেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর, ধ্বংস করে মানুষের ঘর-বাড়ি, এমনকি মসজিদও।
যারা নিজেদেরকে এ অঞ্চলের ইসরাইল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। হাঁ, ইসরাইলের অস্ত্র এবং তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে অহংকারী জালেমরা পুরো অঞ্চলে, পুরো উপমহাদেশে বছর বছর ধরে মোড়লগিরি চালিয়ে যাচ্ছিল; যারা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের ওপর জুলুম চালিয়ে রাখতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিয়ে আসছিল। অবশেষে মজলুম জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যখন ফ্যাসিবাদের হোতারা পালাতে বাধ্য হয়, তখন আবার তারাই এদেরকে বউ-জামাই আদরে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে।
শুধু কি এ দুটি দেশ? এ অঞ্চলের ছোট ছোট দেশগুলোতেও যারা হরেক রকম আধিপত্য ও আগ্রাসন চালিয়ে যায় নিয়মিত, সে অহংকারীদের অবস্থা ১০ মে’তে ছিল দেখার মতো। নিজ দেশের শত শত মিডিয়া হাউসকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে একতরফা মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার পরও ১০ মে দুপুর থেকে আর সত্য চেপে রাখা যায়নি। একদিকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ভারতীয় বিভিন্ন যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর, অনেকগুলো এয়ারবেজ (সামরিক বিমানঘাঁটি) ধ্বংস করে দেওয়া এবং এস-৪০০ রাডার সিস্টেম ধ্বংস করে দেওয়ার খবর আসতে থাকে, অন্যদিকে অল্প কিছু ভারতীয় মিডিয়ায়ও তাদের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা সামনে আসতে থাকে। ফলে ব্যাপক চাপে পড়ে যায় অহংকারী চরম সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। সঙ্গে সঙ্গে ভারতজুড়ে বিজেপি শিবিরে মাতম পরিস্থিতি তৈরি হয়। ভারতীয় সরকারের সামরিক-বেসামরিক কর্তারা মুখে যাই বলুন না কেন, তাদের শরীরের ভাষা কিন্তু ভিন্ন কিছুই জানান দিচ্ছিল। ততক্ষণে তারা বুঝে গিয়েছে, মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর হামলা করে বসা তাদের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। এর আগে কিন্তু দুই-তিন দিন থেকে ভারতীয় মিডিয়া ব্যাপকভাবে প্রচার করে আসছিল, পুরো পাকিস্তানকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। লাহোর, করাচি, ইসলামাবাদ ধ্বংস করে ফেলেছে ইত্যাদি।
যদিও এ তিনটি শহরে তাদের কোনো অস্ত্রই পৌঁছেনি। তাদের মিডিয়া তো লাহোর বন্দরও ধ্বংস করে ফেলার খবর প্রচার করেছে। যদিও পৃথিবীর মানুষ জানে, লাহোরে কোনো বন্দর নেই। এ মিথ্যা, এ অহংকার ও ভণ্ডামির মধ্যেই তাদের জন্য ১০ মে’র সকালে সারপ্রাইজ হয়ে আসে অপারেশন ‘বুনইয়ানুন মারসূস’–সিসাঢালা প্রাচীর অপারেশন। এ আপারেশন নামে ও কামে আশ্চর্যজনক মিল রেখেছে। এ অপারেশন মনে করিয়ে দিয়েছে, ১৯৬৫ সালের আরেকটি পাক-ভারত যুদ্ধের কথা। যাতে বাহাদুর বিমানসেনা এমএম আলম এক মিনিটে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার অসাধারণ নজির স্থাপন করেছিলেন। সে এমএম আলম কিন্তু ছিলেন আমাদের এ অঞ্চলেরই এক কৃতী সন্তান। এবার ২০২৫ সালে একজন সৈনিক কর্তৃক পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস না হলেও কয়েক ঘণ্টায় ভারতের সামরিক ক্ষয়ক্ষতি ১৯৬৫ সনকেই মনে করিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশী মিডিয়ার হাল-হাকীকত
অনেকেই ভেবেছিলেন, দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদ পালিয়ে যাওয়ার পর এদেশের গণমাধ্যমে ভারতের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ হয়তো সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে। কিন্তু যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই কলাকৌশল খাটিয়ে সেটিকে অনেকটা আগের অবস্থায়ই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। যেমনিভাবে কিছু গোষ্ঠী ও মিডিয়ার অনেকে কোনো না কোনোভাবে পতিত ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারায় ব্যস্ত, তেমনিভাবে গণমাধ্যমের অনেকেই ভারতের দালালি এবং এদেশে ভারতের স্বার্থ রক্ষায় আগের মতোই মাঠে নেমেছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার, এদেশের ব্যবসায়ী সামাজ এবং সাধারণ জনগণের সাথে ভারত কর্তৃক যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বৈরী আচরণ অব্যাহত রয়েছে, তা নিয়ে এদেশের মিডিয়ায় কোনো উচ্চবাচ্য নেই। তারা বরং ব্যস্ত থাকে তাদের প্রভু রাষ্ট্রটির বড় বড় খবর প্রকাশে, সত্যমিথ্যা যাই হোক এবং কখনো স্পষ্ট মিথ্যা জেনেও তারা ভারতের পক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকে। এবারের কয়েক দিনের পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যেও অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবেই এদেশের চিহ্নিত কিছু মিডিয়া অন্যায় ও মিথ্যা প্রচারণায় ব্যস্ত ছিল। পেহেলগামের পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর থেকে (যা খোদ ভারতীয় অনেক রাজনীতিকের মতেই বিহারের নির্বাচন জেতার জন্য ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক কৌশল ও সাজানো নাটক বৈ কিছু নয়।) নরেন্দ্র মোদি সরকার যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে চরম উত্তেজনা পরিস্থিতি ও যুদ্ধাবস্থা তৈরি করছিল, তখন এদেশের চিহ্নিত পত্রিকাগুলো এমনভাবে খবর ও বিশ্লেষণ প্রচার করেছে, যেন আগের থেকে জানা না থাকলে সাধারণ পাঠক বুঝেই উঠবে না– এটা কি ভারতীয় পত্রিকা না বাংলাদেশী। একটি পত্রিকা শশী থারুরসহ একাধিক ভারতীয় লেখকের কলামের অনুবাদও প্রকাশ করে ফেলে। যাতে সুস্পষ্টভাবেই ভারত কর্তৃক পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ করার তথাকথিত বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করানো হয়েছে। এরপর যখন বাস্তবেই ভারত হামলা করে বসে এবং পাকিস্তান তাদের বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও অসংখ্য ইসরাইলী ড্রোন ভূপাতিত করে, তখন সে খবরগুলোও এড়িয়ে যাচ্ছিল নিজেদেরকে প্রগতিশীল ও নিরপেক্ষ বলে প্রচার করা পত্রিকাটি। এরপর যখন ১০ মে’র অপারেশন ‘বুনইয়ানুন মারসূস’ সংঘটিত হয়ে গেল, তখন তাদের দিলের কষ্ট তো দিলেই চাপা দিতে হল, কিন্তু মুখ ঢাকার জন্য হরেক রকমের ফন্দি শুরু করল। বিভিন্ন দেশের কলামিস্টদের যুদ্ধ নিয়ে বিশ্লেষণমূলক লেখার অনুবাদ, আলজাজিরার বিশ্লেষণ প্রকাশসহ এমন কিছু ভান ধরল, যেন তারা সত্যিই নিরপেক্ষ। অথচ এরাই ৭ মে ভারত কর্তৃক বেসামরিক এলাকায় হামলা করে সাধারণ জনগণকে হত্যা ও একাধিক মসজিদ ধ্বংসের পর স্পষ্ট মিথ্যা সংবাদ চালিয়েছিল যে, ভারত হামলা করেছে মাসুদ আযহারের পরিবারের ওপর। যারা কি না তাদের দৃষ্টিতে বড় সন্ত্রাসী বা আতঙ্কবাদী।
বাস্তবে খবরটি ছিল সম্পূর্ণই মিথ্যা। সাংবাদিকরা সে এলাকায় গিয়ে দেখেছে, সেখানে কোনো ‘আতঙ্কবাদী’র বাড়িঘর নেই। আরও কিছু মিডিয়া ঢাকা বসেই পাকিস্তানী সেনাপ্রধানকে বন্দি করে ফেলেছিল। তারা প্রচার করেছে, জেনারেল আসেম মুনীরকে বন্দি করা হয়েছে।
মোটকথা, এদেশে বিগত দুই-আড়াই দশকে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে ভারতীয় আগ্রাসী নীতি ও আধিপত্যবাদকে সমর্থন ও প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে একদল গণমাধ্যম কাজ করেছে, তাদের অনেকেই এখনো সুকৌশলে সে পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। দেশের শান্তিকামী জনগণের এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
বর্তমান হাল-হাকীকত
আলকাউসারের অনেক পাঠক ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ ও বর্তমান হাল-হাকীকত সম্পর্কে লেখার ফরমায়েশ করেছেন। আমরা এ বিষয়ে নিজেদের থেকে কিছু বলতে চাই না। আমরা পাঠকদের জন্য দুজন এমন সাংবাদিকের কয়েকটি কলামের অনুবাদ প্রকাশ করছি, যারা আন্তর্জাতিকভাবেই পেশাগত দক্ষতা ও সত্যবাদিতার জন্য প্রসিদ্ধ। এদেশের বড় বড় পত্রিকাগুলোও মাঝেমধ্যে তাদের লেখা ছেপে থাকে। সাংবাদিক ও বিশ্লেষক হামেদ মীর ও আরেকজন খ্যাতনামা সাংবাদিক জাভেদ চৌধুরির লেখাগুলো পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন– মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আব্দুল জলীল।
শেষ কথা
১০ মে অপারেশ ‘বুনইয়ানুন মারসূস’-এর সফলতার পর পাকিস্তানে ‘ইয়াউম তাশাক্কুর’ বা কৃতজ্ঞতা দিবস পালন করা হয়েছে। খবরে জানা গেছে, তারা এ দিবসের আলোচনা ও প্রোগ্রামে হঠকারিতা ও অহংকারের বদলে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া প্রকাশ করেছে বেশি। তাদের কথা– যুদ্ধ তো তারা শুরু করেনি, তারা শুধু আত্মরক্ষার জন্য সমুচিত জবাব দিয়েছে। তাতে আল্লাহর রহমতে তারা সফলতাও পেয়েছে।
মুসলিম শাসকদের, মুসলিম সৈন্যবাহিনীর মধ্যে চিন্তা, বিশ্বাস ও চেতনা যখনই জাগ্রত হয়ে উঠবে এবং শত্রুর বিপক্ষে কুরআনী নির্দেশ অনুযায়ী যখন তারা পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে অগ্রসর হবে, তখন আল্লাহর সাহায্য তো আসবেই। পাকিস্তানীদের বুঝতে হবে, তারা বিগত দিনে কম ভুল করেনি। ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি দেশে তাদের রাজনৈতিক, সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব, ইসলাম, ইনসাফ কোনো কিছুই ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। যার দরুন ১৯৭১ সালে তাদেরকে জঘন্যভাবে পরাস্ত হতে হয়েছে। হাতছাড়া হয়েছে দেশের একটি প্রধান অঙ্গ। এখনো যদি তারা ইসলামের পথে ফিরে আসে, তাহলে শুধু পাকিস্তানের জন্যই নয়, বিশ্ব মুসলিমের জন্য সেটি অবশ্যই খুশি ও স্বস্তির বিষয় হবে। মুসলিম শাসকরা যখন মুসলিম সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দুশমনের মোকাবেলায় সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমে পড়ে ইসলামী ভূখণ্ড ও মজলুমদের রক্ষার্থে, তখন সেটিই তো হয় প্রকৃত জিহাদ।
فضائے بدر پيدا کر فرشتے تيري نصرت کو
اتر سکتے ہيں گردوں سے قطار اندر قطار اب بھي
অখণ্ড ভারত এবং আমেরিকা
হামেদ মীর
সংখ্যা ও পরিসংখ্যান বিস্ময়কর। অঞ্চল, জনসংখ্যা ও অর্থনীতিকে সামনে রাখলে ভারতের তুলনায় পাকিস্তান একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। তবে সামরিক সক্ষমতায় এ ছোট দেশটি ভারতের সমান। কিছু বিশেষজ্ঞের মত হল, আধুনিক পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা এবং পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাম্প্রতিক পারফরমেন্স ও কর্মক্ষমতার কারণে পাকিস্তান ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। এই আধিপত্য ভারতের বর্তমান শাসকদলদের কাছে অসহনীয়, যারা অখণ্ড ভারতের ধারণায় বিশ্বাসী। এই আধিপত্যের প্রভাব মুছে ফেলার জন্য তারা প্রোপাগান্ডাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এই অস্ত্র ভারতের ভেতরে কাজ করলেও ভারতের বাইরে অকার্যকর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তান সম্মেলনের এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। ভারতীয় মিডিয়া এখনো এই সম্মেলনের কারণে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করছে।
এই কনফারেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মিত্তাল ইনস্টিটিউট অফ সাউথ এশিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ২০১৭ সালে একজন ভারতীয় বিজনেস টাইকুন লক্ষ্মী মিত্তালের দেওয়া ২৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাথে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ছাত্র-ছাত্রীরা উপকৃত হবে এবং এখানে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে গবেষণা হবে। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক হিতেশ হাতিও ভারতীয়। সেজন্য এখানে প্রতি বছর ভারত সম্মেলনের আয়োজন করা শুরু হয়। এবার সম্মেলনটি ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। ভারত সম্মেলন আয়োজনের পরে পাকিস্তানী ছাত্র-ছাত্রীরা দাবি জানায়, তাদেরকে পাকিস্তান সম্মেলন আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হোক। পাকিস্তান সম্মেলন আয়োজনের দাবি বেশি গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়নি। কারণ সম্প্রতি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিসহ আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা সাকুল্যে ১০ হাজার ৯৮৮। সে তুলনায় ভারতীয় ছাত্রদের সংখ্যা ৩ লাখ ৩১ হাজার ৬০২, বাংলাদেশের ১৭ হাজার ৯৯ এবং নেপালের ১৬ হাজার ৭৪২। মিত্তাল ইনস্টিটিউট অনুমান করতে পারেনি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির পাকিস্তানী ছাত্র-ছাত্রীরা ভারত সম্মেলনের বিপরীতে একটি সম্মেলন করতে পারবে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি ও শর্তাবলি পূরণ করায় কর্তৃপক্ষ সম্মেলন আয়োজনের অনুমতি দেয়। পাকিস্তানী ছাত্র-ছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এই সম্মেলনকে পাকিস্তান সরকার ও বিরোধী দলের প্রোপাগাণ্ডার প্ল্যাটফর্ম বানানোর পরিবর্তে পাকিস্তানের সমস্যা সমাধান খুঁজে বের করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবে।
মিত্তাল ইনস্টিটিউট ২৭ এপ্রিল রবিবার সম্মেলনের তারিখ দেয়। উদ্দেশ্য পরিষ্কার ছিল, রবিবারে কমসংখ্যক লোক সম্মেলনে যোগ দেবে। তবে আয়োজকরা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলফার সেন্টারের পরিচালক ড. মেগান ও’সুলিভানের সহায়তায় কেবলমাত্র আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণই নয়; বরং খ্যাতিমান কূটনীতিকদেরও দাওয়াত করে নিয়ে আসে। পাকিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনায় আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানের ইতিহাস সম্পর্কে আমেরিকার টাফট্স (TUFTS) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট গবেষক ড. আয়েশা জালালের আলোচনা ছিল হিতেশ হাতির সঙ্গে। এই সম্মেলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেশন ছিল পাকিস্তানের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে। যেখানে পাকিস্তান তাহরীকে ইনসাফ (PTI)-এর সাধারণ সম্পাদক সালমান আকরাম রাজার দ্ব্যর্থহীন বক্তব্যে সম্মেলন হল বারবার করতালিতে গুঞ্জরিত হয়েছিল। এই সেশন শেষ হতেই পুরো হল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এবং দীর্ঘ সময় ধরে পাকিস্তানের সংবিধান ও আইনের শাসনের পক্ষে উত্থাপিত কণ্ঠের সাথে সংহতি প্রকাশ করে করতালি দিয়েছিল।
যারা দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের প্রতিনিধিরাও ছিলেন, যাদের দাঁড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
যখন আমি পাকিস্তানী দূতাবাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলাম, পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি মামলার আসামি সালমান আকরাম রাজার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিপুল সমাদরে আপনার কী অনুভূতি?
পাকিস্তানী কূটনীতিক বুকে হাত রেখে বললেন, পাকিস্তানের রাজনীতি পাকিস্তানে থাকতে দিন। এখানে রাজা সাহেব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর সম্মান পাকিস্তানেরই সম্মান।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সফল পাকিস্তান সম্মেলন ভারতের জন্য একটি বিস্ফোরণের মতো ছিল। কারণ আমেরিকার সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিন লিন রাফেল পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তান জড়িত থাকার ভারতীয় দাবির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ভারতীয় মিডিয়া প্রথমে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা করে। এখন লক্ষ্মী মিত্তালের কাছে দাবি করা হচ্ছে, মিত্তাল ইনস্টিটিউট অফ সাউথ এশিয়ার নাম পরিবর্তন করে মিত্তাল ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া রাখা হোক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপক আমাকে বলেন, মিত্তাল ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব আগেও এসেছে। কারণ ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্ব আসলে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে গ্রেটার ইন্ডিয়া অর্থাৎ অখণ্ড ভারতই মনে করে। এই মার্কিন অধ্যাপক আমাকে জিজ্ঞেস করেন, পাকিস্তানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো অখণ্ড ভারত বিষয়ে কোনো সম্মেলন হয়েছে?
আমি বললাম, পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমার যাওয়া হয়। সেখানে কাশ্মীর নিয়ে তো অনেক সম্মেলন হয়, কিন্তু অখণ্ড ভারত নিয়ে কখনো কোনো সম্মেলন হয়নি।
মার্কিন অধ্যাপক বললেন, হার্ভার্ডসহ আমেরিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুরসংখ্যক ভারতীয় শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ আছেন। এই ভারতীয় লবি ইসরাইলী লবির সাহায্য পায়। তারা ধীরে ধীরে এই তত্ত্বটি চালু করছে, চীনের বাড়তে থাকা প্রভাবের মোকাবেলা কেবল শক্তিশালী ভারতের মাধ্যমে সম্ভব এবং ভারতের শক্তিশালী হওয়ার পথ অখণ্ড ভারত তত্ত্বের মধ্যে নিহিত রয়েছে।
একথা শুনে আমি ইংরেজিতে জোরে বললাম, Unbelievable–অবিশ্বাস্য।
তখন যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক বললেন, তিন বছর আগে যখন একজন ভারতীয় কূটনীতিক আমাকে বলেছিলেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বার্মা ও আফগানিস্তান মূলত ভারতের অংশ ছিল, কিন্তু ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো ভারতকে টুকরো টুকরো করেছে, তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে গবেষণা করেছি।
গবেষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক বুঝতে পারলেন, গ্রেটার ইন্ডিয়া অর্থাৎ অখণ্ড ভারতের তত্ত্ব কোনো ঐতিহাসিক সত্য নয়; বরং এটি কেবল কল্পকাহিনী।
পাকিস্তানে ফেরার আগে আমাকে নিউইয়র্কে একটি আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্কে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। আলোচনা অফ দ্য রেকর্ড ছিল। এখানেও বারবার অখণ্ড ভারত সংক্রান্ত আলোচনা আসছিল। আমেরিকার কূটনৈতিক চক্রগুলোতে ধীরে ধীরে এই উপলব্ধি জেগে উঠছে, চীন ও আমেরিকার মুখোমুখি অবস্থানের সুবিধা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে অখণ্ড ভারত তত্ত্ব আমেরিকায় প্রচার করা হচ্ছে। এই মতবাদটি শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। বর্তমানে আমেরিকায় এই মতবাদ কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। তবে পাকিস্তানের উচিত– এই মতবাদের লক্ষ্যবস্তু দেশগুলোর সঙ্গে মিলে একটি যৌথ কৌশল প্রণয়ন করা। এই মতবাদটি পৃথিবীকে একটি পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
[দৈনিক জঙ্গ, ৫ মে ২০২৫]
লাভের বদলে মোদির ক্ষতিই হয়ে গেল
হামেদ মীর
৬ ও ৭ মে’র মধ্যবর্তী রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের ওপর নয়, নিজের ওপরই হামলা করেছেন। হামলার পরপরই ভারত সরকার এক বিবৃতিতে দাবি করে, তারা পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে সন্ত্রাসী আস্তানায় হামলা করেছে। ২০১৯ সালে মোদি সরকার বালাকোটের একটি পাহাড়ি অঞ্চলে হামলা করে দাবি করেছিল, একটি সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করা হয়েছে। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর আমি যখন ঘটনাস্থলে যাই, দেখি, সেখানে কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। ২০১৯ সালে ভারত যে ধরনের মিথ্যা বলেছিল, ২০২৫ সালেও একই ধরনের মিথ্যা বলছে। এবারও পাকিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে শিশুসহ আট জন নিরীহ পাকিস্তানীকে শহীদ করেছে। আহত ৩৫ জনের মধ্যে নারীও রয়েছেন। ভারত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। ৬ ও ৭ মে’র মধ্যবর্তী রাতে পাকিস্তানে নিষ্পাপ শিশু ও নারীদের শহীদ করে ভারত নিজের বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ রেখে গেছে। পাকিস্তান দ্রুত এই আক্রমণের পাল্টা জবাব দেয়। ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের শাহীনগুলো (সাহসী বীরযোদ্ধারা) ডগ ফাইটে (আকাশযুদ্ধে) ভারতীয় চারটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। দুইটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা নিক্ষেপিত এইচকিউ-৯ মিসাইলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। ৭ মে সকালে দিনের আলো ফুটতেই ভারতীয় মিডিয়া তাদের এয়ারফোর্সের ক্ষয়ক্ষতি দেখানো শুরু করে। নরেন্দ্র মোদি লাভের বদলে ক্ষতির শিকার হয়।
পাকিস্তান শুধু ভারতের যুদ্ধবিমানগুলো লক্ষ্যবস্তু করেনি; বরং লাইন অফ কন্ট্রোলের চারপাশে অনেক ভারতীয় চেকপোস্ট ও বাংকারও ধ্বংস করে দেয়। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া নরেন্দ্র মোদির জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। তাঁর ধারণা ছিল, কিছু বেসামরিক অঞ্চলে মিসাইল নিক্ষেপ করে বিজয় উদ্যাপন করবে। কিন্তু ৭ মে ভারতীয় মিডিয়ায় আলোচনা ছিল, এক রাতে তাদের এয়ারফোর্সের এত ক্ষতি কীভাবে হল? পাকিস্তান এয়ারফোর্স ২০১৯ সালেও ভারতীয় এয়ারফোর্সের ওপর তাদের আধিপত্য প্রমাণ করেছিল। এখন ২০২৫ সালে আবারও ভারতীয় এয়ারফোর্সের ওপর তাদের আধিপত্য প্রমাণ করেছে। পরিষ্কারভাবেই ভারতীয় এয়ারফোর্সের অহংকার আরেকবার মাটিতে মিশে গেছে। এটি কেবল ভারতীয় বিমানবাহিনীর ক্ষতি নয়; বরং নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ক্ষতিও। তিনি এখন এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করবেন। পাকিস্তান প্রথমে আক্রমণ করেনি। পাকিস্তান শুধু প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এখন ভারত আবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালালে এর চেয়ে বেশি কঠোর জবাব পাবে।
অনেক বিশ্বনেতা পাকিস্তান ও ভারতকে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। কিন্তু যুদ্ধের শুরু তো পাকিস্তান করেনি। পানি আগ্রাসনের সূচনা ভারতই করেছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দিয়ে সাধারণ জনগণকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর সূচনাও ভারত করেছে। এটি হতে পারে না যে, ভারত যখন ইচ্ছা আক্রমণ করবে, যখন ইচ্ছা যুদ্ধবিরতি করবে। পাকিস্তানের উচিত যুদ্ধবিরতির জন্য সিন্ধু-তাস চুক্তি পুনর্বহালের শর্ত করা। সিন্ধু-তাস চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা সত্যিকারেই যুদ্ধের সূচনা ছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘও এই দিকটি উপেক্ষা করতে পারে না যে, সিন্ধু-তাস চুক্তি স্থগিত করার পরে ভারত পাকিস্তানের নদীর পানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল না করলে পাকিস্তান শিমলা চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিতে পারে। শিমলা চুক্তি ১৯৪৮ সালের সিজ ফায়ার লাইনকে লাইন অফ কন্ট্রোলে (এলওসি) পরিবর্তন করে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যখন দুটি দেশ একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে লাইন অফ কন্ট্রোলের বিষয়ে সম্মত হয়, তখন তা রক্ষা করা উভয় দেশের দায়িত্ব হয়। কিন্তু এই লাইন অফ কন্ট্রোল শেষ হয়ে গেলে কাশ্মিরীদের ওপার থেকে এপার আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া যাবে না। কাশ্মিরীরা এই লাইন অফ কন্ট্রোলকে কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি। অতীতে জিকেএলএফসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন এই লাইন অফ কন্ট্রোল ভঙ্গের ঘোষণা করে এবং পাকিস্তানকে শক্তি প্রয়োগ করে লাইন অফ কন্ট্রোল রক্ষা করতে হয়েছে। শিমলা চুক্তি স্থগিত হয়ে গেলে লাইন অফ কন্ট্রোলও স্থগিত হয়ে যাবে।
পাকিস্তানের কাছে শিমলা চুক্তি স্থগিত করার একটি মজবুত যুক্তি রয়েছে। ভারত ১৯৮৪ সালে সিয়াচেনের চূড়াগুলো দখল করে শিমলা চুক্তি লঙ্ঘন করে। ৫ আগস্ট ২০১৯ ভারত অবৈধভাবে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে আবারও শিমলা চুক্তি লঙ্ঘন করে। সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরে নির্মিত বাধের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের দিকে আসা পানি বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে এসব অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের পানি-যুদ্ধ কেবলমাত্র পাকিস্তানের জন্যই নয়; বরং অধিকৃত কাশ্মীরের জনগণের জন্যও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তাই এই পানিযুদ্ধ থামানোর জন্য শিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা কোনো আগ্রাসন নয়, বরং একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া বলা হবে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, অক্টোবর ১৯৪৭ সালে ভারতীয় সরকার ব্রিটেনের সহায়তায় শ্রীনগর সামরিক কায়দায় দখল করেছিল, যার ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই যুদ্ধ বন্ধে পাকিস্তান নয়; বরং ভারত জাতিসংঘের দ্বারস্থ হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস করে এবং গণভোটকে কাশ্মীরের সমস্যার সমাধান হিসেবে ঘোষণা করে। ভারত এই প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করে। কাশ্মীর নিয়ে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হয়। তারপর ১৯৭১-এর যুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ হয়। এখন আবার একটি স্থায়ী যুদ্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। এই যুদ্ধে ভারত আগ্রাসী ভূমিকায় আর পাকিস্তান আত্মরক্ষা করছে। পাকিস্তান যদি তার কার্ড ঠিকমতো খেলতে পারে এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে পারে, তাহলে এই সময় কাশ্মিরীদের জন্য অনেক শান্তি নিয়ে আসতে পারে।
[দৈনিক জঙ্গ, ৮ মে ২০২৫]
নরেন্দ্র মোদির ওপর কেন আস্থা রাখা যায় না
হামেদ মীর
৯ই মে রাত। রাত ১২টার পর অনেক ভারতীয় টিভি চ্যানেল ব্রেকিং নিউজ প্রচার করতে শুরু করে, ভারতীয় সেনাবাহিনী আযাদ কাশ্মীর দখল করে নিয়েছে। পরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো আযাদ কাশ্মীর ছাড়িয়ে করাচি এবং লাহোরও দখল করে নেয়। রাত একটার পর কিছু ভারতীয় সাংবাদিক আমাকে ফোন করতে শুরু করেন। আমি ফোন কলগুলো উপেক্ষা করি। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে একজন সিনিয়র ভারতীয় সাংবাদিকের মেসেজ আসে। তিনি ইন্ডিয়া টুডের একজন মহিলা সাংবাদিক। প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে যুক্ত। তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক এডিটর ও কলাম লেখকের। কয়েক বছর ধরে তাঁর ম্যাগাজিনের জন্য কলাম লিখি। কারণ তিনি একজন পেশাদার এডিটর হিসেবে আমার লেখা না সেন্সর করেন, না এর অর্থ পরিবর্তনের চেষ্টা করেন।
তিনি সে রাতে হোয়াটসঅ্যাপে শুধু এটুকু জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি ভালো আছেন তো?’
আমি বলি, ‘আমি পুরোপুরি ভালো আছি।’
আমি বুঝতে পারি, জি নিউজসহ আরও অনেক ভারতীয় টিভি চ্যানেল করাচি ও লাহোরসহ পাকিস্তানের পাঁচটি শহর বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলেছে। ইসলামাবাদের ওপরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলও সমাপ্ত করিয়ে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী হাউসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে নিখোঁজ ঘোষণা করেছে। আমার সম্পাদিকা সাহেবার বিশ্বাস হচ্ছিল না; ফলে তিনি শুধু আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে সংবাদগুলোর সত্যতা বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ‘সবকিছু ঠিক আছে?’
আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ‘লাইন অফ কন্ট্রোলে উত্তেজনা চলছে। তবে ইসলামাবাদ পুরোপুরি ঠিক আছে।’
এরপর আমাদের মধ্যে অনেক কথাবার্তা হয়। তিনি আমার বিরুদ্ধে অর্ণব গোস্বামীর কটূক্তি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।
আমি শোয়ার চেষ্টা করছিলাম; কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া যে মিথ্যার ঝড় তুলেছে তা আমেরিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী পাকিস্তানীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। জি নিউজের একজন উপস্থাপক ঘোষণা করেছিল, আজকের রাত পাকিস্তানের শেষ রাত। কাল থেকে পাকিস্তান মূলত অখণ্ড ভারতের অংশ হয়ে যাবে। অখণ্ড ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করছিল। ভোর চারটার দিকে ফজর নামায পড়ে আমি শোয়ার চেষ্টা করি; কিন্তু সারা দুনিয়ার সাংবাদিক বন্ধুরা যেন আমার কাছে ভারতীয় মিডিয়ার দাবির সত্যতা জানতে চাইছিল। ব্যাখ্যা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দিলাম। পাঁচটায় ঘুমিয়ে পড়লাম। আটটায় আবার উঠলাম। বাংলাদেশ থেকে একজন সাংবাদিক বন্ধুর ফোন এল। ৮ই মে দৈনিক জংয়ে আমার কলামের অনুবাদ একটি বাংলাদেশী পত্রিকা প্রকাশ করেছিল। বাঙালি সাংবাদিক জিজ্ঞেস করছিলেন, আপনি লিখেছেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের অহংকার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। এখন ভারত আবার আগ্রাসন চালাবে। এমন হলে কি পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাবে?
আমি ওই বন্ধুকে বললাম, ভারত এখনো ধারণা করে, প্রথাগত অস্ত্রে তারা পাকিস্তানের চেয়ে সেরা। তাই সে প্রথাগত অস্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানকে নীচু দেখানোর চেষ্টা করবে এবং ছোটলোকির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
আমার বাঙালি বন্ধু আন্তরিকতার সাথে পাকিস্তানের সাফল্য ও সুরক্ষার জন্য দুআ করলেন।
১০ মে রাতে ভারত পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর মিসাইল নিক্ষেপ করে যুদ্ধের সূচনা করে। পাকিস্তান এই মিসাইল হামলার জবাব আরও শক্তভাবে দেয়। ভারত আমাদের ৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করে। যার মধ্যে রহীম ইয়ার খানের শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ছিল। পাকিস্তান জবাবে ভারতের ২৬টি স্থাপনায় হামলা করে। ভারতের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় জালন্ধর এবং হুশিয়ারপুরের মধ্যবর্তী স্থান আদমপুর বিমানবন্দরে স্থাপিত এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে। এই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ২০১৮ সালে দেড় বিলিয়ন ডলার মূল্যে রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছিল।
৭ মে পাকিস্তান এয়ারফোর্স ফ্রান্সের রাফায়েল বিমানের গৌরবগাঁথার জানাযা পড়েছিল। ১০ মে রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একই পরিণতিতে পৌঁছে। পাকিস্তান এয়ারফোর্স কেবলমাত্র আকাশ পথেই ভারতকে নাকানি-চুবানি খাওয়ায়নি; বরং মিসাইলের দ্বারা ভারতীয় ব্রহ্মোস মিসাইলগুলোও ধ্বংস করে পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। ভারতের কাছে একদিকে ফরাসী যুদ্ধবিমান, রাশিয়ান মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ছিল এবং অন্যদিকে ছিল ইসরাইলী ড্রোন। পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৭৮টির বেশি ইসরাইলী ড্রোন ধ্বংস করে যুদ্ধের এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। স্থলযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের কামানগুলো ধ্বংস করে দেয় এবং নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনারা বিভিন্ন স্থানে সাদা পতাকা তুলে জীবন রক্ষার আবেদন করে।
ভারতের ধারণা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ তার পক্ষে দাঁড়াবে। কিন্তু ইসরাইল ছাড়া আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশ ভারতের সমর্থনে এগিয়ে আসেনি। অপরদিকে চীন, তুরস্ক ও আজারবাইজান প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়। ভারতীয় মিডিয়া ইরানের বিরুদ্ধে গালাগালি চালিয়ে যায়। যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করে, তখন ভারতীয় মিডিয়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চিৎকার শুরু করে। এই যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রিটেন, সৌদি আরব ও তুরস্কও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যে ভারত সব সময় কোনো তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতা অস্বীকার করে আসছে, এবার আমেরিকাকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মেনে আরও বেশি লজ্জা থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। যুদ্ধ ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের বেদনাদায়ক পরাজয় এই পুরো অঞ্চলের ভবিষ্যতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভারত যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে, কিন্তু সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি পুনর্বহাল করেনি। যে পাকিস্তানকে ভারত সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেছিল, এখন সেই পাকিস্তানের সঙ্গে মৈত্রী আলোচনা করতে হবে। যুদ্ধবিরতির পর ভারতীয় মিডিয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।
এই যুদ্ধবিরতির ফলে অর্থপূর্ণ আলোচনা শুরুর সমর্থক আমি কিন্তু নরেন্দ্র মোদির রাজনীতিতে পাকিস্তানের সাথে অর্থপূর্ণ আলোচনা করার কোনোই সুযোগ দেখি না। নরেন্দ্র মোদি ২৪ মার্চ ২০১২ সালে আহমেদাবাদে খোলামেলা অখণ্ড ভারতের পক্ষে সমর্থন প্রদান করেছিলেন। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশকে ভারতের সাথে একীভূত করার খাহেশ জাহির করেছিলেন। মোদি সবসময় বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করে এসেছেন; কিন্তু অখণ্ড ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বাধীন বেলুচিস্তান অথবা স্বায়ত্তশাসিত আফগানিস্তানের কোনো সুযোগ নেই। মোদি মূলত পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, তিব্বত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভূটান ও মালদ্বীপকে অখণ্ড ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। এ কারণেই অখণ্ড ভারতের মানচিত্র ভারতীয় সংসদে টাঙানো হয়েছে। ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি তো করিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু ভারতে মোদির পতন শুরু হয়ে গেছে। মোদি নিজের রাজনীতি রক্ষার জন্য যুদ্ধবিরতি থেকে পালানোর চেষ্টা করবেন। আমরা ভারতের সঙ্গে শত্রুতা চাই না; কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত অখণ্ড ভারতের মানচিত্র ভারতীয় সংসদে ঝুলছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মোদি সরকারের ওপর আস্থা রাখা যায় না।
[দৈনিক জঙ্গ, ১২ মে ২০২৫]
কর্নেল সোফিয়া কুরেশী আউট সাইডে কেন?
হামেদ মীর
কর্নেল সোফিয়া কুরেশী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের সদস্য। ভারতের গুজরাটে জন্মগ্রহণকারী কর্নেল সোফিয়া কুরেশী ৭ মে ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার বামিকা সিংয়ের সাথে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিঁদুর ঘোষণা করে হঠাৎ খ্যাতি অর্জন করেন। দুজন মহিলাকে মুখপাত্র করে ভারতীয় সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কর্নেল সোফিয়া কুরেশী মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়ায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই বার্তা দেওয়া হয়েছিল, ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো বৈষম্য নেই। কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর বাবাও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং তার স্বামী কর্নেল তাজউদ্দিনও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশী কি অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে সত্য বলেছেন, না মিথ্যা বলেছেন? অপারেশন সিঁদুর কি সত্যিই জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো টার্গেট করেছিল, নাকি নিরীহ নারী ও শিশুদের রক্তে স্নান করিয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর শক্ত প্রমাণসহ বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের নিরীহ বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা চালায় এবং মসজিদে মিসাইল নিক্ষেপ করে। ভাওয়ালপুর, মুরিদকে ও মুজাফফরাবাদের মসজিদগুলো ধ্বংস করে একজন মুসলিম সেনা অফিসারের মাধ্যমে এই ঘোষণা করানো হয়েছিল, আমরা জঙ্গিদের ওপর হামলা করেছি, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ওপর নয়।
কয়েকদিন ধরে তো কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর ভারতীয় মিডিয়ায় অনেক প্রশংসা হয়েছিল; কিন্তু যখন ভারত পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করে, তখন পাকিস্তানের পাল্টা হামলা ভারতীয় সরকারের হুঁশ উড়িয়ে দেয়। পাকিস্তান এয়ারফোর্স, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মিলে ভারতের অহংকারকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। ভারত আমেরিকাকে মধ্যস্থতার জন্য অনুরোধ করে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধবিরতি শুধুই ভারতীয় মিডিয়ার জন্য নয়, ভারতীয় শাসকদল বিজেপির জন্যও মানসিক আঘাতের চেয়ে কম ছিল না। কারণ তাদের বলা হয়েছিল, অপারেশন সিঁদুরের ফলে পাকিস্তানের ইতি ঘটবে। অপারেশন সিঁদুরের পরে পাকিস্তান আরও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে উঠে এসেছে এবং ভারতের সুনাম বিশ্বব্যাপী কলঙ্কিত হয়েছে। যে ভারত সবসময় কাশ্মীর সমস্যায় আমেরিকাসহ তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করে আসছে, সেই ভারতই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণে অপমানিত হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করছিলেন, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে; কিন্তু ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি তিনি করিয়েছেন; বরং সৌদি আরব সফরের সময় তিনি এ কথাও বলেছেন, আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শীঘ্রই পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ডিনারে একত্র করার চেষ্টা করবেন। ট্রাম্পের মন্তব্য মোদিকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে। তাই বিজেপি ও আরএসএস প্রথমে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির বিরুদ্ধে গালিগালাজের ঝড় তোলে। তাদের পরবর্তী টার্গেটে পরিণত হয়েছেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশী। যে নারী সামরিক কর্মকর্তা অপারেশন সিঁদুরের সফলতার ঘোষণা করেছিলেন, সে নারী কর্মকর্তাকে বিজেপির নেতৃত্ব সন্ত্রাসীদের বোন হিসেবে ঘোষণা করে। কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে নিন্দনীয় বক্তব্য দিয়েছেন মধ্য প্রদেশের মন্ত্রী কুমার বিজয় শাহ। তিনি সোমবার ইন্দোরে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় নরেন্দ্র মোদির দর্শনের খুব প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘মোদিজি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সফল অপারেশনের ঘোষণা তাদেরই এক বোনের মাধ্যমে দিয়েছেন, যিনি পুরো বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরা সন্ত্রাসীদের তাদের ঘরে গিয়ে মেরে এসেছি।’ কুমার বিজয় শাহ আট বার মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে গণ্য।
তার এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রথম আপত্তি করেন ভারতীয় সাংবাদিক রাজদীপ সারদেসাই। এর পর কংগ্রেস দাবি করে, কুমার বিজয় শাহকে মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হোক। ভারতীয় মিডিয়ায় এই প্রশ্নও তোলা হয়েছে, কর্নেল সোফিয়া কুরেশীকে এক-দুইটি ব্রিফিংয়ের পর দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ব্রিফিংয়ে ভারতের তিনটি সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল প্রধানরা সূক্ষ্মভাবে তাদের ক্ষতি মেনে নিয়েছেন, সেখানে তো কর্নেল সোফিয়া কুরেশী ছিলেনই না। তাহলে এই মুসলিম নারী কর্মকর্তাকে ধর্মীয় বৈষম্যের লক্ষ্যবস্তু কেন করা হল?
যাইহোক, কুমার বিজয় শাহ এতটাই সমালোচিত হলেন যে, মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর কাছে শুধু ক্ষমাই চাননি, বরং এই বক্তব্যও দিলেন, আমি বোন সোফিয়াকে সালাম জানাই!
এই ক্ষমা চেয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর পাশাপাশি তার এক যমজ বোনেরও ট্রল করা হচ্ছে, যিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। কুমার বিজয় শাহ্র বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বিজেপির মুসলিম বিরোধী অবস্থানের পক্ষে আরেকটি প্রমাণ হাজির করেছে। বিজেপি ও আরএসএসের পাকিস্তানের প্রতি শত্রুতার মূল কারণ এটি নয় যে, পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি রয়েছে। পাকিস্তান তো ১৯৪৭ সালে বিশ্বের মানচিত্রে উদ্ভাসিত হয়েছে, কিন্তু বিজেপি ও আরএসএস যে অখণ্ড ভারত ধারণার ওপর বিশ্বাস রাখে, এটি ১৯৩৭ সালে হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকার প্রস্তাব করেছিলেন, যাতে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ‘আউটসাইডার’ বলে বিবেচনা করা হয়। সাভারকারের অখণ্ড ভারতে শান্তির একমাত্র গ্যারান্টি হল, মুসলিম ও খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু হয়ে যাবে। স্পষ্টতই, এই ধারণার অনুসারীরা শুধু পাকিস্তানেরই নয়; বরং ভারতের প্রতিটি মুসলিম ও খ্রিস্টানেরও শত্রু। তাই কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর মতো মুসলিমরা ভারত রাষ্ট্রের যতই সেবা করুন না কেন, বিজয় শাহের মতো দেশভক্তরা তাদেরকে সন্ত্রাসী বলেই ডাকবে।
ভারতের সব হিন্দু কুমার বিজয় শাহের মতো দলান্ধ ও মুখোশধারী নয়; কিন্তু নরেন্দ্র মোদি মুসলিমদের যারা শত্রু তাদের নেতা। অপারেশন সিঁদুরের মাস্টারমাইন্ড না কর্নেল সোফিয়া কুরেশী ছিলেন, না বিক্রম মিশ্রি। মাস্টারমাইন্ড তো ছিলেন মোদি। এই অপারেশনের ব্যর্থতার দায়ও মোদির। একটি মিথ্যার ওপর অপারেশনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। পেহেলগাম হামলার এখনো তদন্ত সম্পূর্ণ হয়নি; কিন্তু মোদি এই আক্রমণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে অপারেশন সিঁদুর ঘোষণা করেন। এই অপারেশন ব্যর্থ হলে মোদি ট্রাম্পের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি করিয়ে নেন; কিন্তু এখন তিনি আবার হুমকি-ধমকির দিকে যাচ্ছেন। মোদির কাছে আগেও আমাদের ভালোর আশা ছিল না, ভবিষ্যতেও কোনো ভালোর আশা নেই। আমরা ভারতের সাথে শান্তি চাই; কিন্তু মোদির মতো ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। মোদির মতো লোকেরা কেবলমাত্র পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং ভারতের প্রতিটি মুসলমান ও খ্রিস্টানের জন্য হুমকি। কারণ তারা এই দুই ধর্মের অনুসারীদের ‘আউটসাইডার’ মনে করে। কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর মতো ভারতীয় মুসলমানরাও সহানুভূতি পাওয়ার মতো। বিজেপি ও আরএসএস তাদের চরমপন্থি চিন্তা পরিবর্তন না করলে কর্নেল সোফিয়া কুরেশী ভারতে একজন আউটসাইডার হিসেবেই থাকবেন।
[দৈনিক জঙ্গ, ১৫ মে ২০২৫]
যুদ্ধবিরতি ও পানিবোমা
হামেদ মীর
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ মে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে দক্ষিণ এশিয়াকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি থেকে রক্ষা করেছেন। যুদ্ধবিরতির এ ঘোষণাকে পাকিস্তান স্বাগত জানিয়েছে। তবে ভারত যুদ্ধবিরতিকে বিজয় হিসেবে তুলে ধরার জন্য এ মিথ্যাচার করে যাচ্ছে, এটি ট্রাম্পের উদ্যোগে নয়; বরং পাকিস্তানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার যুদ্ধবিরতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের মুনাফেকীর পর্দা সরিয়ে দিয়েছেন। তবে পাকিস্তানীদের বড় একটা অংশ ট্রাম্পকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না। ট্রাম্পকে ইসরাইলের সহযোগী হিসেবে দেখা হয় এবং ইসরাইলই একমাত্র দেশ, যারা সাম্প্রতিক যুদ্ধে প্রকাশ্যে ভারতের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে।
এই তিন দিনের যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত ইসরাইলী ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহার করেছে। নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ পরিকল্পনায় ইসরাইলী বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং তারা সশরীরে ভারতে উপস্থিত ছিল। পাকিস্তানের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের মতে, সাম্প্রতিক যুদ্ধে পাকিস্তান মূলত ভারতের মোকাবেলা করেনি; বরং ইসরাইলের সমর বিশেষজ্ঞদের মোকাবেলা করেছে। পাকিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক উত্তেজনায় ভারত নিজের মস্তিষ্ক দিয়ে নয়; বরং ইসরাইলের মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করেছে। ভারত বিশ্বাস করে, যেভাবে ইসরাইল গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, তেমনই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে ইসরাইলের পথ অনুসরণ করতে হবে। আজও পাকিস্তানীদের বড় একটা অংশ একে অপরকে জিজ্ঞেস করছে, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি তো ঘোষণা করেছে, কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি কি টিকবে? ভারত কি আবার পাকিস্তানে আক্রমণ করবে?
২২ এপ্রিলের পেহেলগাম হামলার পর থেকে ভারতীয় সরকারের কৌশল বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট হয়, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসলে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পথ অনুসরণ করছেন। নেতানিয়াহু আমেরিকার মিত্র এবং ট্রাম্পের বন্ধু; কিন্তু জাতিসংঘ ও আমেরিকা যখনই তাকে নির্যাতিত ফিলিস্তিনী শিশু ও নারীদের হত্যা করতে বাধা দিয়েছে, তখনই তিনি তাদের কথা উপেক্ষা করেছেন। যখনই পাকিস্তান প্রস্তাব দিয়েছে, পেহেলগাম হামলা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তদন্ত করা হোক, ভারত সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, ভারত যেকোনো মূল্যে পাকিস্তানে আক্রমণ করতে চায়। তারপর পাকিস্তানে আক্রমণ করে ভারত নিজেই নিজের অপমানের কারণ হয়েছে। এখন একদিকে পাকিস্তানের হাতে অপমান, আরেকদিকে মহত্বের দম্ভ। ইসরাইলের মতো ভারতেরও অপমানের পরওয়া নেই। সে শুধু নিজের মহত্বের দম্ভে আচ্ছন্ন। কেবলমাত্র পাকিস্তানকে নীচু করতে চায় না; বরং পাকিস্তানকে গাজা বানাতে চায়। ইসরাইলও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণার আগুনে পুড়ছে। একদিকে পাকিস্তান ইসরাইলের ড্রোন প্রযুক্তি ধ্বংস করে দিয়েছে, অন্যদিকে ইসরাইল পাকিস্তানের সাথে কিছু পুরোনো হিসাব-নিকাশ চুকাতে চায়।
ইসরাইল ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের কাছে আবেদন করেছিল যে, তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তীতে ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে পাকিস্তান এয়ারফোর্স ইসরাইলের এয়ারফোর্সকে চরম শিক্ষা দেয়। এই দুই যুদ্ধে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে বেশ কাজে লাগে। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বিমান চালকরা ইসরাইলী পাইলটদের বার্তা শোনার চেষ্টা করলে তারা পরস্পরের মধ্যে পাঞ্জাবি কথা বলতে শোনেন। যাতে সন্দেহ হয়, ইসরাইল ভারতীয় বিমানবাহিনীর নীরব সাহায্য পাচ্ছে।
১৯ এপ্রিল ১৯৭৪ সনে পাকিস্তানী পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবদুস সাত্তারের (পরবর্তীতে এয়ার কমোডর) দুইটি ইসরাইলী যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে ডগ ফাইট হয়। ইসরাইলী মিরাজ বিমানগুলো পাকিস্তানী পাইলটের রেডিও সিস্টেম জ্যাম করে দেয়। কিন্তু পাকিস্তানী পাইলট পিছপা হওয়ার পরিবর্তে মোকাবেলা করেন এবং ইসরাইলী বিমান দামেশকের আকাশে ভূপাতিত করেন। ইসরাইলী বিমান ভূপাতিত করার জন্য এয়ার কমোডর আবদুস সাত্তারকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার ‘সিতারায়ে জুরআত’ প্রদান করে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের নায়ক এমএম আলম সিরিয়ায় একজন ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেন। এমএম আলমের আসল নাম মুহাম্মাদ মাহমুদ আলম। তার পিতা মুহাম্মাদ মাসুদ আলম মাহমুদ গজনবীর নামে এ নাম রাখেন। কারও পছন্দ হোক বা না হোক, স্কোয়াড্রন লিডার যাহেদ ইয়াকুব আমেরের বই ‘এয়ার কমোডর এমএম আলম’ পড়ে জানা যায়, ২০২৫ সালে পাকিস্তান এয়ারফোর্স সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেছে, যা ১৯৬৫ সালে এমএম আলম লিখেছিলেন। পার্থক্য হল এই, এমএম আলম এফ-৮৬ আমেরিকান স্যাবার-এর সাহায্যে এক মিনিটে পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেন আর ২০২৫ সালে পাকিস্তানী পাইলটরা চীনের তৈরি বিমানের মাধ্যমে দুনিয়ার অত্যাধুনিক ফ্রেঞ্চ রাফায়েল বিমানের রেডিও ও রাডার সিস্টেম জ্যাম করে এর শান-শওকত ধুলোয় মিশিয়ে দেন।
লাহোরের এমএম আলম রোড এবং মিয়ানওয়ালির পিএএফ এমএম আলম বেজ আমাদের সেই বীরের কথা মনে করিয়ে দেয়, যিনি ১৯৬৫ সালে আদমপুর এয়ারবেজ ধ্বংস করেছিলেন। ২০২৫ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী পুনরায় আদমপুর এয়ারবেজে স্থাপিত এস-৪০০ রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল নূর খান নিজে বিমান চালিয়ে পাকিস্তানের আকাশসীমা রক্ষা করেন এবং ২০২৫ সালে এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমদ বাবর সিধু আকাশযুদ্ধে নিজে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
আমাদের সংশয়ে থাকা উচিত নয় যে, ভারত মূলত ইসরাইলের চিন্তাধারায় কাজ করছে। ইসরাইল সবসময় আরবদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পটভূমিতেও আপনি জর্ডান নদী এবং হুলা হ্রদের পানি নিয়ে বিরোধ দেখতে পাবেন। ২০২৩ সালে হামাসের ইসরাইলের ওপর হামলার পেছনেও আপনি ফিলিস্তিনের পানি ব্যবস্থার ওপর ইসরাইলের বারবার হামলা দেখতে পাবেন। ২০২২ সালে ইসরাইল গাজা ও জর্ডান নদীর পশ্চিম কিনারে ফিলিস্তিনীদের পিপাসায় মারার জন্য তাদের কূপগুলোতে বিষ ঢেলে দেয় এবং পানির পাইপলাইনগুলো ধ্বংস করে দেয়। পানিকে ‘ওয়াটার বম্ব’ হিসেবে ব্যবহারের কৌশল ভারত ইসরাইল থেকে শিখেছে। সিন্ধ-তাসচুক্তি স্থগিত করা এবং পাকিস্তানী নদীগুলোর পানি বন্ধ করা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এজন্য আমার মতে যুদ্ধবিরতি কেবল পাকিস্তানই করেছে, ভারত করেনি। পাকিস্তানের ওপর ভারতের হামলা চলমান আছে। কূটনৈতিক অঙ্গনে ভারতের পানি সন্ত্রাসকে তুলে ধরতে হবে। পাকিস্তান এখনো পর্যন্ত শুধু নিজেদের প্রতিরক্ষা করেছে, কোনো আগ্রাসন চালায়নি। ভারত চেন্নাব ও ঝিলাম নদীর পানি বন্ধ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে এসব নদীর ওপর নির্মিত ভারতীয় বাঁধগুলো ধ্বংস করা আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি হবে না। আমরা ভারতকে দেখিয়ে দিয়েছি, পাকিস্তান ও গাজার হিসাব ভিন্ন; ভবিষ্যতেও এসব বিষয় জানাতে ও দেখাতে হবে।
[দৈনিক জঙ্গ, ১৯ মে ২০২৫]
১০ মে ২০২৫
জাভেদ চৌধুরি
ফ্রান্সের রাফায়েল বিমান সাড়ে চার প্রজন্মের ফাইটার জেট। এটি ১৯৮৬ সালে নির্মিত হয়। আজ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে ধ্বংস হয়নি। পাকিস্তান বিমানবাহিনী ৭ই মে সকালে তিনটি রেকর্ড করে–
বিশ্বের প্রথম রাফায়েল; বরং একসাথে তিনটি রাফায়েল ধ্বংস করে, যার ফলে রাফায়েল বিমানের শেয়ার পড়ে যায় এবং এর মার্কেট ভ্যালু খতম হয়ে যায়।
দ্বিতীয় রেকর্ড ছিল, চীনা বিমান জে টেন সি দিয়ে রাফায়েল ধ্বংস করা। চীন ২০০৩ সালে জে টেন সি তৈরি করে। এটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে ব্যবহার হয়নি। এটি কোনো প্রতিপক্ষের বিমান ধ্বংস করেনি। পাকিস্তান ৭ মে যুদ্ধে জে টেন সি ব্যবহার করে এবং প্রথম বিমানটি ধ্বংস করে। তাও ছিল বিশ্বসেরা ফাইটার জেট রাফায়েল।
তৃতীয় রেকর্ড হল, পাকিস্তান প্রথমবারের মতো চীনা মিসাইল পিএল-১৫ ব্যবহার করেছে। এটি ২০১২ সালে তৈরি হয়। আজ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে এটির পরীক্ষা করা হয়নি। পাকিস্তান এ পরীক্ষাও করেছে এবং অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। পাকিস্তানের রাফায়েল বিমান ছিল না; কিন্তু তারা খুব ভালো করেই তা চিনত। ফ্রান্স ২০১৯ সালে কাতারকেও রাফায়েল বিমান দিয়েছিল।
জানুয়ারি ২০২৪-এ পাকিস্তান-কাতার যৌথ মহড়া করেছিল। পাকিস্তানী প্রকৌশলী ও পাইলটরা এই মহড়ায় রাফায়েলকে ভালোভাবে বুঝে নেন। আমরা জানতে পারি, রাফায়েল কোনো অন্য গ্রাউন্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম সম্পূর্ণ সাপোর্ট করে না। ভারতের কাছে ফরাসি রাডার ও কমিউনিকেশন সিস্টেম নেই। পাকিস্তান ভারতের এই দুর্বলতার কথা বুঝতে পেরেছিল এবং ৭ই মে এটি পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করেছিল। ভারত আজ পর্যন্ত সাতটি বিমান (তিনটি রাফায়েল, এসইউ-৩০, মিগ-২৯, মিরাজ এবং মিসাইল বহনকারী হেরন ড্রোন) বিধ্বস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেনি।
পুরো বিশ্ব পাকিস্তানী পাইলটদের দক্ষতা স্বীকার করছে; কিন্তু ভারতীয় মুখপাত্ররা এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তবুও এ কথা চূড়ান্ত হয়ে গেছে, পাকিস্তান আকাশের রাজা এবং ভারত এই ময়দানে তাকে পরাজিত করতে পারবে না। ভারতীয় হামলার পর পাকিস্তান নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকে ঘোষণা দেয়, ‘ভারত গত রাত ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, মুজাফফরাবাদ, কোটলি এবং সিয়ালকোটে বেসামরিক বসতিতে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। যার ফলে ৩১ জন নিরীহ নাগরিক শহীদ হয়েছে এবং পাঁচটি মসজিদ ও বেসামরিক ভবন ধ্বংস হয়েছে।
আমরা ভারতের পাঁচটি বিমান ধ্বংস করেছি; কিন্তু আমাদের জবাব এখনো বাকি আছে। আমরা আমাদের সময় ও পছন্দ অনুযায়ী ভারতের হামলার জবাব দেব। এখন প্রশ্ন জাগে, পাকিস্তান কেন তাৎক্ষণিক জবাব দেয়নি?
এর দুটি কারণ ছিল, পাকিস্তানের আইএমএফের সাথে আলোচনা চলছিল। আমাদের আশঙ্কা ছিল, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়বে। আমাদের জন্য বাজেট তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে।
দ্বিতীয়ত আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আস্থায় আনতে চাচ্ছিলাম। আমি এখানে ইসহাক ডার (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সাহেবের প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করি। এই ব্যক্তি সত্যিই কূটনৈতিক স্তরে চমৎকার কাজ করেছেন। ইসহাক ডার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৬৩টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদেরকে ভারতের আগ্রাসন সম্পর্কে অবহিত করেন। তাঁদের কাছে পরামর্শ চান, আমাদের এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত? বিশ্বের প্রতিটি দেশই পরামর্শ দিয়েছে, আপনাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। ইসহাক ডারের পরবর্তী প্রশ্ন ছিল, যদি ভারত তাও না মানে, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
স্পষ্টত তাদের উত্তর ছিল, তখন আপনারা আত্মরক্ষার অধিকার রাখেন। আমরা বিশ্বনেতাদের কাছে ঠিক এটাই শুনতে চেয়েছিলাম। এই সময় ৯ মে মার্কিন উপ-প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ফক্স নিউজকে বলেন, ‘এটি আমাদের বিষয় নয়।’ এ বক্তব্য পাকিস্তানের পক্ষে যায়। আমরা এখন আমাদের প্রতিশোধ নিলে আমেরিকা কোনো আপত্তি করতে পারবে না।
সুতরাং ৯ মে আইএমএফ পাকিস্তানের পরবর্তী কিস্তির অনুমোদন দেয়। আমরা সেই রাতে উত্তর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই। অন্যদিকে রাফায়েল এবং বিমানবাহিনীর ব্যর্থতার পর ভারত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ শুরু করে। ৮ ও ৯ মে ভারত থেকে ৯০টি হারোপ ড্রোন পাকিস্তানে আসে। হারোপ একটি সফল ড্রোন, যা ইসরায়েলের তৈরি আত্মঘাতী (কমিকাজি) ড্রোন। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পর ধ্বংস হয়ে যায়। হারোপ পাকিস্তানে ভীতি ছড়ানো এবং গোপন তথ্যসংগ্রহের জন্য এসেছিল।
সামনে অগ্রসর হওয়ার আগে আমি আপনাকে জানিয়ে রাখতে চাই, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এর হামলার পর পাকিস্তানী বিমানবাহিনী যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন বুঝে গিয়েছিল। আমরা জেনে গিয়েছিলাম, আগামীর লড়াইগুলো হবে অনেকটা আকাশ কেন্দ্রিক। তাই পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর সে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। আমরা একদিকে জে-১০ ক্রয় করি, জে-এফ ১৭ থান্ডার আরও উন্নত করি। তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনি। অন্যদিকে তিনটি সিস্টেম উদ্ভাবন করি। পাকিস্তানের কাছে বিভিন্ন দেশের বিমান ও রাডার সিস্টেম ছিল। সবগুলোকে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংযুক্ত করা কঠিন ছিল।
পাকিস্তানের প্রকৌশলীরা চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানি এবং চেক প্রজাতন্ত্রের রাডার সিস্টেম এবং বিভিন্ন বিমানকে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংযুক্ত করে অসাধারণ কাজ করে। এই ব্যবস্থা ‘ভিশন লিঙ্ক’ নামে পরিচিত।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান শত্রুর রাডার সিস্টেম এবং বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা জ্যাম করার প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। আমরা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রাফায়েলের মতো বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থাও জ্যাম করতে সক্ষম হই। একই ইউনিট হারোপ ড্রোনগুলোও জ্যাম করে। তারপর মানুষ তাদের সাধারণ রাইফেল দিয়ে ড্রোনগুলো শিকার করতে শুরু করে।
তৃতীয়ত, পাক বিমানবাহিনী চার বছরে ভারতের সমস্ত সিস্টেম হ্যাক করে ফেলেছিল।
এই কাজটি করেন এক হিন্দু পাকিস্তানী তরুণ। তিনি একজন জিনিয়াস আইটি এক্সপার্ট। পাক বিমানবাহিনী তার তত্ত্বাবধানে পুরো একটি হ্যাকিং ইউনিট গঠন করে। এই ছেলেরা কামাল করে দেয়। তারা পুরো ভারতের সিস্টেম হ্যাক করে চুপচাপ বসে ছিল। ভারতের খবরও হয়নি। আমরা পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ভারতের পরবর্তী মূর্খতার অপেক্ষা করতে থাকি। ভারত ৯ ও ১০ মে রাতে সেই মূর্খতা শুরু করে। তারা পাকিস্তানের ওপর ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। ব্রহ্মোস ভারতের সবচেয়ে দ্রুত ও বড় ক্ষেপণাস্ত্র। প্রথম হামলা রাওয়ালপিন্ডির নূর খান এয়ারবেসে হয়। এটি জিএইচকিউ-এর কাছাকাছি অবস্থিত। পাকিস্তানের বেশির ভাগ সম্পদ এর আশেপাশে অবস্থিত। পাকিস্তানের অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেম ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে আকাশে ধ্বংস করে দেয়।
এর পরেও ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে এবং পুরো রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদ জেগে ওঠে। কিন্তু পাকিস্তানী বিমানবাহিনীর হ্যাকাররা জনগণের জেগে ওঠার পূর্বেই ব্রহ্মোস মিসাইল হ্যাক করে ফেলে এবং সেগুলো ভারতেই ফেলে দেয়। আপনি ৯ মে রাতটি মনে করুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে বিস্ফোরণ, মিসাইল ও ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়ে থাকবেন। এই বিস্ফোরণগুলো আমাদের হ্যাকারদের কৃতিত্ব। তারা ভারতের ড্রোন ও মিসাইলের গতি ভারতের দিকেই ঘুরিয়ে দিয়েছিল এবং এই বিস্ফোরণগুলো এরই ফসল ছিল।
ভারত সারা দুনিয়ায় পাকিস্তানী আক্রমণ নিয়ে হইচই করছিল; কিন্তু প্রমাণ করতে পারছিল না। কেননা পাকিস্তানের সীমানা থেকে কোনো মিসাইল বা ড্রোন ফায়ার হয়নি। ভারতের মিসাইলগুলো ভারতেই পড়ে যাচ্ছিল। তাই আপত্তি কীভাবে করবে? ভারতের একটি ব্রহ্মোস মিসাইল আফগানিস্তানে চলে গিয়েছিল। কীভাবে? আপনি বুদ্ধিমান। নিজেই অনুমান করতে পারেন।
জেনারেল আসেম মুনীর এবং এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবর দুই দিন ধরে রাত জাগছিলেন। ব্রহ্মোস মিসাইলের আক্রমণের পর জেনারেল আসেম মুনীর ফজর নামাযে ইমামতি করেন। দীর্ঘ দুআ করেন এবং আক্রমণের নির্দেশ দেন। পাকিস্তান তারপর ভারতের ওপর আলফাতাহ মিসাইলের বৃষ্টি শুরু করে। আমরা তিন দিনের মিসাইল এক ঘণ্টায় ছুড়ি। ৩২টি ভারতীয় বিমানঘাঁটি এবং ব্রিগেড সদর দপ্তর পাকিস্তানের লক্ষ্যবস্তু ছিল। ভারত বিমানগুলো ওড়ানোর চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তাদের যোগাযোগব্যবস্থা হ্যাক হয়ে গিয়েছিল।
ভারত তৎক্ষণাৎ তাদের বিমানগুলো সীমান্ত থেকে তিন শ কিলোমিটার দূরে নিয়ে পার্ক করে রেখে দেয়। পাকিস্তান এ সময় ৫০০ কিলোমিটার গতির মিসাইল নিক্ষেপ করে এস-৪০০ অ্যান্টি ব্যালাস্টিক মিসাইল সিস্টেমের রাডার ধ্বংস করে দেয়। পাকিস্তানী হ্যাকাররা বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা হ্যাক করে ভারতের ওই অঞ্চলের ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এরপর পাকিস্তানী বিমান ও ড্রোন উড়াল দেয়। এমন এমন জায়গায় তাদের গোলাবারুদ ফেলে, যেখানে ভারত কল্পনাও করতে পারেনি। ভারত ভীত হয়ে পড়ে। তাই যুদ্ধবিরতির জন্য আমেরিকা, ব্রিটেন, সৌদি আরব এমনকি চীন পর্যন্ত যোগাযোগ করে।
পাকিস্তানের কেবলমাত্র দুটি শর্ত ছিল, কাশ্মীর সমস্যা এবং সিন্ধু-তাস পানি বণ্টন চুক্তি। এই প্রক্রিয়া সন্ধ্যা সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলতে থাকে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মারকো রুবিও সাড়ে চারটা নাগাদ পাকিস্তানকে জানায়, ভারত কাশ্মীর সমস্যা, সিন্ধু-তাসের পানি চুক্তি এবং ব্যবসা– তিন বিষয়েই আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত ছিল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করবেন, তারপর ভারত করবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পাঁচটা তিন মিনিটে টুইট করে। সাথে সাথে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিও দিল্লিতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন।
ঘোষণা করার সময় বিক্রম মিশ্রির শরীরের ভাষা হেরে যাওয়া জুয়াড়ির মতো ছিল। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানে উৎসব এবং ভারতে মাতম শুরু হয়। নরেন্দ্র মোদি দুই দিন স্তব্ধ ছিলেন; কিন্তু তারপর ১২ মে তার ভেতরে থাকা মোদি জেগে ওঠে এবং ‘আমরা জিতেছি’র ঢোল পেটাতে শুরু করেন। এখন আরএসএস, বিজেপি ও মোদি তিনজনই জয়ের দাবি করছে। কিন্তু পুরো বিশ্ব তাদের দাবি নিয়ে হাসাহাসি করছে।
এখন প্রশ্ন ওঠে, যুদ্ধের ঝুঁকি কি সবসময়ের জন্য দূর হয়ে গেছে? এটি এক বিরাট প্রশ্ন। এর উত্তর সামনে কখনো দেব।
[এক্সপ্রেস নিউজ, ১৮ মে ২০২৫]