যিলকদ ১৪৪৬   ||   মে ২০২৫

মার্চ ফর গাজা
কারগুযারী, ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা

হাতে ফিলিস্তিনের চাররঙা পতাকা মুখে `ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন` স্লোগান বুকে ক্ষোভ, খেদ ও প্রতিবাদের দীপ্ত স্পৃহা হৃদয়ে বিগলিত মুনাজাত ও কান্না এভাবে দশ লক্ষাধিক মানুষ শ্রেণি-পেশা ও দল-মত নির্বিশেষে এক কাতারে জমায়েত হয়েছে গত ১২ এপ্রিল, শনিবার মূল প্রোগ্রাম ছিল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ৩টা তাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, ঢাকার আশাপাশ ও দূর দূরান্তের জেলা থেকেও ছুটে এসেছে অসংখ্য মানুষ সবার এক দাবি ফিলিস্তিনের গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং জালেম ইসরাইলের বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক আদালতে প্রোগ্রামটির আয়োজক ছিল `প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ` নামের একটি প্ল্যাটফর্ম

কেন এই সমাবেশ

দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর যাবৎ দখলদার ইসরাইলের নৃশংসতম আগ্রাসন ও গণহত্যায় ফিলিস্তিনের `গাজা` উপত্যকা এখন আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে খাদ্য, চিকিৎসাসহ সব ধরনের পরিষেবা বন্ধ করে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে জায়নবাদী ইসরাইল মূলত ১৯৪৮ সাল থেকেই ফিলিস্তিনবাসীদের উচ্ছেদ করার জন্য হত্যা, বন্দিসহ মানবতাবিরোধী অসংখ্য অপরাধ করে আসছে দখলদার এই রাষ্ট্রটি বর্তমানে তাদের সে নির্যাতন গণহত্যার রূপ নিয়েছে বরং বাস্তবতা হল, একে গণহত্যা বললেও কম বলা হবে যেখানে এবার প্রায় ৫৫ হাজার মানুষকে শহীদ করা হয়েছে পুরো শহরটিকে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই রেহাই পায়নি তাদের এই বর্বরোচিত গণহত্যা থেকে এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করা এবং এই গণহত্যা বন্ধের দাবিতে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয় `প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ` তাদের প্রথম কর্মসূচিটিই ছিল এই `মার্চ ফর গাজা`

সমাবেশস্থল ও তার আশপাশ

বেলা তিনটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষ জড়ো হতে থাকে সকাল থেকেই দলে দলে, ছোট বড় মিছিল নিয়ে, বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে, ফিলিস্তিনী পতাকা আর বার্তাবহ বহু ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে উদ্যানের দিকে আসতে থাকে তারা তাদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ঢাকা শহর বেলা গড়ানোর সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে জমায়েত মানুষের ঢল জনস্রোতে পরিণত হয় ফলে আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই পুরো সোহরাওয়ার্র্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মঞ্চ ও তার আশপাশের নিরাপত্তাবেষ্টিত অঞ্চল এবং গাছগাছালি ও লেকের জলীয় অংশটুকু ছাড়া অন্য কোথাও কোনো খালি জায়গা ছিল না ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ উদ্যানের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাস্তা, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল, মৎস ভবন, প্রেস ক্লাব, দোয়েল চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও রমনা পার্কে অবস্থান করে এভাবে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে সুবিশাল এক জনসমুদ্র তৈরি হয়

বাদ যোহর উদ্যানের কাছাকাছি বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মিছিল, র‌্যালি ও পদযাত্রা শুরু হয় যার সম্মুখ সারিতে থাকেন দেশবরেণ্য আলেম, প্রসিদ্ধ ইসলামী আলোচক ও বক্তা, বিভিন্নশ্রেণির জনপ্রিয় ব্যক্তি এবং জাতীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দুআ, শোক, বেদনা, অনুতাপ ও প্রতিবাদ নিয়ে তারা হেঁটে হেঁটে আসেন উদ্যান অভিমুখে এবং বাস্তবিক অর্থেই সীমাহীন কষ্ট করে মঞ্চে পৌঁছেন

মূল অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কুরআনুল কারীম তিলাওয়াতের মাধ্যমে এরপর স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয় গাজার গণহত্যা বিষয়ক একটি তথ্যচিত্র সংক্ষিপ্ত এ তথ্যচিত্র দেখেই অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন অনেকে হৃদয় ও বিবেকের কাছে অগণিত প্রশ্ন এসে ভিড় করে

তথ্যচিত্র শেষ হতেই মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিশেষ অতিথিদেরকে প্রথমেই মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের সভাপতি, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতীব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম তারপর দেশের শীর্ষস্থানীয় ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ একে একে এসে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যান সে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত উপস্থিত সকলে এ মুহূর্তটিকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন খুব স্পষ্টই বোঝা যায় স্বপ্নজাগানিয়া স্বপ্নিল এ দৃশ্যটি ছিল সবারই একান্ত আকাক্সক্ষার 

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও স্লোগান সংযোগের দায়িত্ব পালন করেন বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় বক্তা ও ইসলামী আলোচক তন্মধ্যে ছিলেন শায়েখ আহমাদুল্লাহ, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা রেজাউল করীম আবরার, মাওলানা আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ ও মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ তাদের সঞ্চালনা ও সংক্ষিপ্ত দুকথার মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠানের মূল পর্বটি শুরু হয়

উল্লেখ্য, মূল অনুষ্ঠানের আগে বায়তুল মোকাররমে একটি সংক্ষিপ্ত প্রস্তুতি মজলিস অনুষ্ঠিত হয় সেখানে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, আয়োজক, পরামর্শক ও পরিচালকবৃন্দসহ শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন সেখানে সিদ্ধান্ত হয় আজকের অনুষ্ঠানে পৃথকভাবে কারও কোনো বয়ান আলোচনার পর্ব থাকবে না স্ক্রিপ্ট আকারে প্রস্তুতকৃত `ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা`-ই আজকে সবার সম্মিলিত আলোচনা সেজন্য অনুষ্ঠান শুরুর পরপরই মাইকের সামনে আসেন মজলুম সাংবাদিক ও কলমযোদ্ধা `দৈনিক আমার দেশ` পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান ভরাটকণ্ঠে তিনি পাঠ করেন অনুষ্ঠানের `ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা` তার আবেগ, উচ্চারণ ও পাঠপ্রবাহে বাক্যগুলো আরও বেশি শক্তি নিয়ে হৃদয়ে আছড়ে পড়ে প্রাসঙ্গিকতা ও তাৎপর্য বিবেচনায় ঘোষিত পুরো `পত্র`টি এখানে তুলে ধরা হল

 

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা

March for Gaza ঢাকা ২০২৫

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী, যিনি মজলুমের পাশে থাকেন আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা যারা জুলুমের ইতিহাস জানি, প্রতিবাদের চেতনা ধারণ করি সমবেত হয়েছি গাজার মৃত্যুভয়হীন জনগণের পাশে দাঁড়াতে

আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়, এটি ইতিহাসের সামনে দেওয়া আমাদের জবাব একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ

এই পদযাত্রা ও গণজমায়েত থেকে আজ আমরা চারটি স্তরে আমাদের দাবিসমূহ উপস্থাপন করব

আমাদের প্রথম দাবিগুলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি

যেহেতু জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সকল জাতির অধিকার রক্ষার, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা রোধের সংকল্প প্রকাশ করে;

এবং আমরা দেখেছি, গাজায় প্রতিদিন যে রক্তপাত, যে ধ্বংস চলছে, তা কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়; বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার ফল;

এবং এই ব্যর্থতা শুধু নীরবতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদার ইজরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে;

এবং এই বিশ্বব্যবস্থা দখলদার ইজরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে; সেহেতু আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো দাবি জানাচ্ছি

জায়নবাদী ইজরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে

যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে

১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে

পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে

ফিলিস্তিনীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে

কারণ, এই মুহূর্তে বিশ্বব্যবস্থা যে ন্যায়ের মুখোশ পরে আছে, গাজার ধ্বংসস্তূপে সেই মুখোশ খসে পড়েছে

আমাদের দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের প্রতি

যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ;

এবং গাজা এখন কেবল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি;

এবং উম্মাহর প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি রাষ্ট্র এবং প্রতিটি নেতৃত্বের ওপর অর্পিত সেই আমানত, যা আল্লাহ প্রদত্ত ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্বের সূত্রে আবদ্ধ;

এবং ইজরায়েল একটি অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্র, যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা এবং একটি পুরো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে;

এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে;

এবং ভারতে সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা;

সেহেতু আমরা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও `ওআইসি`র মতো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর নিকট দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই

ইজরায়েলের সাথে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সকল সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে

জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে

গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইজরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে

জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে `ওআইসি` ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে

কারণ, গাজার রক্তপ্রবাহে লজ্জিত হওয়ার আগে গাজার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহর জন্য সম্মানের একমাত্র পথ

এবং যে নেতৃত্ব আজ নীরব, কাল তারা ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে

আমাদের তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি

যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তিতেই নিহিত রয়েছে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা

এবং আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে বাংলাদেশ কেবল মানবতার নয়, ঈমানের পক্ষেও এক ঐতিহাসিক অবস্থানে আছে;

এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সরকারের দায়িত্ব, জনগণের ঈমানী ও নৈতিক আকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রাখা;

এবং বাংলাদেশের জনগণ গাজার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে, তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীরবতা এই জনআকাক্সক্ষার প্রতি অবজ্ঞার শামিল;

সেহেতু আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাই

বাংলাদেশী পাসপোর্টে ঊীপবঢ়ঃ ওংৎধবষ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে

সরকারের ইজরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে

রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে

সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে

জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়; বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর

পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে

কারণ, রাষ্ট্র কেবল সীমানা নয়, রাষ্ট্র এক আমানত আর এই আমানত রক্ষা করতে না পারলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না

আমাদের সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রতি, যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা

যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, আল-কুদস কেবল একটি শহর নয়; এটি ঈমানের অংশ;

এবং আমরা জানি, বাইতুল মাকদিসের মুক্তি অন্য কারও হাতে নয়, আমাদেরই কোনো প্রজন্মের হাতে তা লেখা হবে;

এবং আমরা বুঝি, জায়নবাদের প্রতিষ্ঠা মূলত আমাদের নিজেদের আত্মবিস্মৃতির ফল;

এবং আজ যদি আমরা প্রস্তুত না হই, তাহলে আল্লাহ না করুন কাল আমাদের সন্তানেরা হয়ত এমন এক বাংলাদেশ পাবে, যেখানে হিন্দুত্ববাদ ও জায়নবাদ একত্রে নতুন গাজা তৈরি করবে;

এবং গাজা আমাদের জন্য এক আয়না যেখানে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে বিশ্বাসী হওয়া মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, সংগ্রামে দৃঢ় থাকা;

সেহেতু আমরা এই মাটির মানুষ, এই মুসলিম ভূখণ্ডের নাগরিক, এই কওমের সন্তান এবং সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহর সদস্য একটি অঙ্গীকার করছি

আমরা সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করব প্রত্যেক সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে, যারা ইজরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে

আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করব; যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সকল প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে, ইনশাআল্লাহ

আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব, যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে

আমরা বিভাজিত হব না কারণ, আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না

আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়

আমরা শুরু করব নিজেদের ঘর থেকে ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজ, সবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে

আমরা মনে রাখব

গাজার শহীদরা কেবল আমাদের দুআ চান না; তাঁরা আমাদের প্রস্তুতি চান

শেষকথা

শান্তি বর্ষিত হোক গাজার সম্মানিত অধিবাসীদের ওপর তাঁদের ওপর, যাঁরা নজিরবিহীন সবর করেছেন, যাঁরা অবিচল ঈমানের প্রমাণ দিয়েছেন

যাঁরা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলে রেখেছেন এবং বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছেন

শান্তি বর্ষিত হোক তাদের ওপর, যাঁরা নাম রেখে গেছেন ইজ্জতের খতিয়ানে

শান্তি বর্ষিত হোক হিন্দ রজব, রীম এবং ফাদি আবু সালেহসহ সকল শহীদের ওপর, যাঁদের রক্ত দ্বারা গাজার পবিত্রভূমি আরও পবিত্র হয়েছে, যাঁদের চোখে ছিল প্রতিরোধের অগ্নিশিখা

শান্তি বর্ষিত হোক বাইতুল মাকদিসের গর্বিত অধিবাসীদের ওপর, যাঁদের হৃদয়ে এখনো ধ্বনিত হয় `আলকুদসু লানা`আলকুদস আমাদের!

গাজার জনগণকে অভিনন্দন!

আপনারা ঈমান, সবর আর কুরবানীর মহাকাব্য রচনা করেছেন দুনিয়াকে দেখিয়েছেন ঈমান আর তাওয়াক্কুলের শক্তি

আমরা বাংলাদেশের মানুষ শাহ জালাল আর শরীয়াতুল্লাহর ভূমি থেকে দাঁড়িয়ে, আপনাদের সালাম জানাই, আপনাদের শহীদদের প্রতি ভালবাসা ও শুভেচ্ছা জানাই

আর আমাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় এই দুআ

হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাথর বানিয়ে দাও, যার ওপর গিয়ে ভেঙে পড়বে জায়োনিস্টদের সব ষড়যন্ত্র

বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে,

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ

 

এই ঘোষণাপত্র পাঠশেষে মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতীব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম

মুনাজাতে তিনি উপস্থিত, অনুপস্থিত, পুরো দেশ ও পুরো মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে ইসরাইলী গণহত্যার প্রতিবাদ জানান সেইসাথে আমরা যে আমাদের মুসলিম ভাইদের জন্য কিছুই করতে পারছি না, সেজন্য অনুতপ্ত ভাষায় লজ্জা প্রকাশ করেন তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হতে পারে আমাদের কোনো গোনাহের কারণেও ফিলিস্তিনী মুসলমানদের আজ এই অবস্থা তাই আমাদের সকলেরই তওবা ও ইস্তিগফার করা উচিত

মুনাজাতের শেষদিকে তিনি কিছুটা অসুস্থতা বোধ করায় খুব সংক্ষেপে মুনাজাত সমাপ্ত করেন

মুনাজাতে অসংখ্য মানুষ মজলুম মুসলমানদের কথা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাতরকণ্ঠে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান জালেমের শাস্তি ও মজলুম ভাইবোনদের জন্য গায়েবী নুসরত প্রার্থনা করেন

অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দল ও ব্যক্তি

প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল `মার্চ ফর গাজা` কর্মসূচিটি পালিত হবে রাজধানীর শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত র‌্যালি ও পদযাত্রার মাধ্যমে র‌্যালি শেষে সকলে সমবেত হবে জাতীয় সংসদের সম্মুখস্থ সড়কে সেখানে হবে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ পরে `বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫`-এ আগত অতিথিদের চলাচল-সুবিধার্থে সমাবেশস্থল নির্ধারণ করা হয় ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

৯ এপ্রিল ২০২৫, সংক্ষিপ্ত একটি অডিও বার্তা পাঠান অনুষ্ঠানের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম সেখানে তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলকে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তাঁর পুরো বার্তাটি এখানে তুলে ধরা হল

بسم الله الرحمن الرحيم

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد!

প্রিয় দেশবাসী

জায়নবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মানুষের ওপর, বিশেষ করে নারী-শিশুর ওপর যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, একে গণহত্যা বললেও কম বলা হবে বলার অপেক্ষা রাখে না, এর দ্বারা তারা গোটা মানবতার শত্রুতে পরিণত হয়েছে

এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করার লক্ষ্যে এবং এই বর্বরোচিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধন বন্ধের দাবিতে আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে `মার্চ ফর গাজা`র ডাক দেওয়া হয়েছে

দলমত নির্বিশেষে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি আল্লাহ তাআলা এই প্রচেষ্টা সফল করুন এবং কবুল করুন আমীন 

বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা

খতীব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ঢাকা

১০-১০-১৪৪৬ হিজরী

৯-৪-২০২৫ ঈসাব্দ

এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে দেশের সর্বশ্রেণির বিখ্যাত ও বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ অডিও ও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করেন পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে তাতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তাদের অনেকে এমন, যারা রাজনীতি বা রাজনীতিঘেঁষা কোনো কার্যক্রমের সাথে একেবারেই যুক্ত নন এমনকি কোনো মিছিল-মিটিং বা র‌্যালি-পদযাত্রাতেও তাদেরকে সচরাচর দেখা যায় না যেমন হযরত মাওলানা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব, হাটহাজারী মাদরাসার মুফতী মুহাম্মাদ কিফায়াতুল্লাহ সাহেব, মসজিদুল আকবারের মুফতী দিলাওয়ার হুসাইন সাহেব, `আহলে হাদীছ আন্দোলন`-এর ড. আসাদুল্লাহ আল-গালিব সাহেব, ফুরফুরার পীর মাওলানা আবু বকর আবদুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী সাহেব, নেসারাবাদের পীর মাওলানা খলীলুর রহমান সাহেব, দারুন নাজাত কামিল মাদরাসার আ. খ. ম. আবু বকর সিদ্দীক সাহেব, আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের ড. শেখ মহিউদ্দীন সাহেব, বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. জাহাঙ্গীর কবীর ও ড. মোহাম্মদ সারওয়ার হোসেন প্রমুখ  তাদের প্রায় সবগুলো ভিডিও ও অডিও বার্তা Palestine Solidarity Movement, Bangladesh -এর ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয় এভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কর্মসূচিটি ঘিরে ব্যাপক সাড়া পড়ে

নির্ধারিত দিন যেসব দল ও সংগঠন সরাসরি সমাবেশে অংশগ্রহণ করে তন্মধ্যে রয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস-ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, গণ-অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিসহ রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বহু দল ও সংগঠন এছাড়াও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার, অভিনেতা, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন অঙ্গনের বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবী ও বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন দেশবরেণ্য বহু আলেম, ফকীহ, মাদরাসা-স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও অসংখ্য শিক্ষার্থী

তাদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত হন জাতীয় মসজিদের খতীব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুল ইসলাম, বরেণ্য আলেমেদ্বীন মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা ফয়জুল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আব্দুল কাদেরনিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান জনাব ইলিয়াস কাঞ্চন, নেছারাবাদের পীর সাহেব মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, বিশিষ্ট কবি মাওলানা মুহিব খান, কারী আহমাদ বিন ইউসুফ, মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব, মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জনাব মাহমুদুল হাসান সোহাগ, জনাব লতিফুল ইসলাম শিবলী, জনাব ফাহিম আবদুল্লাহ, অধ্যাপক মোখতার আহমাদ, রাশেদ প্রধান, সাবিত রায়হান, উসামা খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী, জামায়াতে ইসলামীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন মাহমুদ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রনেতা সাদিক কায়েম, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নেতৃবর্গ

নিরাপত্তা ও স্বেচ্ছাসেবা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন শ্রেণির কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সমাজসেবামূলক ছোট বড় বহু সংস্থা নিজেদের লোকবল নিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পানি, জুস, শরবত, মাঠা, কেক, বিস্কুট ও নানা শুকনো খাবার বিতরণ করে ব্যক্তিগত পর্যায়েও বহু মানুষ এজাতীয় কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করে ফলে রাস্তায় রাস্তায় ট্রাক পিকআপভরা পানি খাবারের সাথে সাথে ছোট ছোট টেবিল বেঞ্চেও দেখা যায় পানি ও খাবারের নিবেদিত আয়োজন

বিভিন্ন মানুষকে দেখা যায় ফিলিস্তিনের পতাকা বিতরণ করছে ছোট ছোট পতাকা যেন সবার হাতে হাতে থাকে এই পতাকাই যেন সকলের হৃদয়ের কথা বলে পতাকার মাধ্যমেই যেন ফুটে ওঠে প্রতিবাদ ফুটে উঠে ফিলিস্তিনীদের প্রতি গভীর ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের সজীব প্রকাশ

ব্যানার ফেস্টুনে কী লেখা ছিল

পুরো সমাবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল কেবল উপস্থিতি, সংক্ষিপ্ত পদযাত্রা, নির্ধারিত কিছু স্লোগান ও দুআ এবং সম্মিলিত একটি ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে মাজলুম ফিলিস্তিনীদের সাথে সংহতি প্রকাশ এবং দাবি ও প্রতিবাদ জানানো সেজন্য অন্য অনেক সমাবেশের চেয়ে এটি ছিল ভিন্ন এবং যথেষ্ট ব্যতিক্রম

আয়োজকদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক প্রতীকবিহীন সৃজনশীল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড এবং শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয় ফলে কোথাও কোথাও ব্যাতিক্রম পতাকা উড়তে দেখা গেলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে তা নামিয়ে ফেলা হয় যেন নির্দিষ্ট কোনো দল বা গোষ্ঠী এ সমাবেশের বিষয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে

ব্যানার প্ল্যাকার্ডে যে লেখাগুলো ছিল তার কিছু নমুনা এখানে উল্লেখ করা যায় তাতে ছিল

`মার্চ ফর গাজা`, `সেভ গাজা`, `সেভ ফিলিস্তিন`, `সেভ হিউম্যানিটি`, `স্ট্যান্ড উইথ গাজা, উই আর গাজা`, `টু স্ট্যান্ড উইথ প্যালেস্টাইন, ইজ টু স্ট্যান্ড উইথ হিউম্যানিটি`, `স্টপ বোম্বিং, স্টার্ট হিউম্যানিটি`, `ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি`, `স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা`, `স্টপ জায়োনিস্ট টেরর`, `বয়কট ইসরাইল` ইত্যাদি

অনেকের পরনে ছিলে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান-সংবলিত টি-শার্ট কারও মাথায় ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা কপালে বাঁধা ছিল কালিমা লেখা সাদা ব্যজ কেউ কেউ বহন করে সাদা কাপড়ে মোড়ানো ফিলিস্তিনী শিশুর প্রতীকী রক্তাক্ত লাশ

স্লোগান ছিল `ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন` `স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন, স্বাধীন হবে ফিলিস্তিন`, `তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন` `ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই`, দুনিয়ার মুসলিম, এক হও এক হও`, `ইসরাইলী পণ্য, বয়কট বয়কট` ইত্যাদি

প্রাপ্ত-বয়স্কদের পাশাপাশি শিশু কিশোরদেরও দেখা যায় র‌্যালিতে এমনকি ঢাকা ইউনিভার্সিটির রোকেয়া হলের সামনে, টিএসসিতে এবং বিভিন্ন জায়গায় নারীদেরকেও দেখা যায় একই পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন বহন করতে সবমিলিয়ে স্মরণকালের বৃহত্তর একটি সামাবেশে রূপ নেয় `মার্চ ফর গাজা` কর্মসূচি যার রিপোর্ট প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক বহু প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় বিশ্ববিখ্যাত বহু মনীষী এ সমাবেশ সম্পর্কে নিজেদের মতামত ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন

আল্লাহ তাআলা `মার্চ ফর গাজা` কর্মসূচিকে কবুল করুন সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষের এ সমাবেশকে দেশ, জাতি এবং প্রধানত ফিলিস্তিনী মুসলমানদের প্রকৃত স্বাধীনতা, মুক্তি, শান্তি ও কল্যাণের জন্য ওসিলা হিসেবে গ্রহণ করুন পুরো দুনিয়ার মুসলিম ভাইবোনদেরকে সর্বপ্রকার ধোঁকা, প্রতারণা, গাফলত ও অকল্যাণ থেকে রক্ষা করুন নবীদের পুণ্যভূমি এই গাজা, ফিলিস্তিন ও মসজিদুল আকসাকে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের হাতে ফিরিয়ে দিন সকল জালেমকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে শায়েস্তা করুন

اَللّٰهُمَّ انْصُرِ الْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَان. اَللّٰهُمََّ اجْعَلْ لَهُمْ مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا وَّاجْعَلْ لَهُمْ مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْراً.

 

[প্রতিবেদন : মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব]

 

 

advertisement