মাওলানা সা`দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে
আকাবির উলামায়ে বাংলাদেশের ফতোয়া
[ভূমিকা : আলহামদু লিল্লাহ! আল্লাহর বড় মেহেরবানী, আহলে হক প্রকাশনী বাংলাদেশ থেকে রমযানুল মুবারকের শেষ দশকে প্রকাশিত হয়েছে `মাওলানা সাদ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে আকাবির উলামায়ে বাংলাদেশের ফতোয়া`। আমাদের দেশে তাবলীগ জামাতের চলমান যে পরিস্থিতি ও সংকট, সে হিসেবে এমন একটি রাহবরি, কোনো সন্দেহ নেই, তা ছিল সময়ের একান্ত দাবি।
ফতেয়াটি বই আকারে প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও কিস্তি আকারে মাসিক আলকাউসারের পাঠকদের খেদমতে পেশ করা জরুরি মনে হল। কারণ বই অনেকের হাতেই না পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক ডকুমেন্টও বটে, যা সংরক্ষণ করা আমানতের অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অনুমতিক্রমে ফতোয়াটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হল। ফতোয়াটি বই আকারে প্রকাশের সময় মশওয়ারা অনুযায়ী শুরুতে মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা (পেশ লফয) লেখেন। এ সংখ্যায় শুধু ভূমিকাটি প্রকাশিত হল। –সম্পাদক]
পেশ লফয
الحمد لله، وسلام على عباده الذين اصطفى، وأشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدا عبده ورسوله، وآخر أنبيائه ورسله، صلى الله عليه وعلى آله وصحبه أجمعين، وسلم تسليما كثيرا كثيرا. أما بعد!
উলামায়ে কেরাম হলেন ইলমে ওহীর ধারক ও বাহক, তাদের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে দ্বীন ও শরীয়তের হেফাযত এবং উম্মতে মুসলিমার রাহবরি সংক্রান্ত অনেক যিম্মাদারী আরোপিত হয়েছে। সেসব যিম্মাদারীর মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি যিম্মাদারী সামনের এই হাদীসে বর্ণিত হয়েছে–
يَحْمِلُ هذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهٗ، يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ، وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ، وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلِينَ.
অর্থাৎ প্রত্যেক প্রজন্মে এই ইলমের (অর্থাৎ ইলমে ওহীর আসল) ধারক-বাহক কেবল নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিরাই হবে। তারা ইলমে ওহী থেকে বাড়াবাড়িকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থিদের পক্ষ থেকে নিজেদের হক হওয়ার মিথ্যা দাবি এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা দূর করতে থাকবে। –আততামহীদ, ইবনু আবদিল বার ১/৫৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১০/২০৯
হক্কানী উলামায়ে কেরাম গুরুত্বের সাথে তাদের এসব যিম্মাদারী সর্বদা আঞ্জাম দিয়ে আসছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা–
لَا يَخَافُوْنَ فِي اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ.
(আল্লাহর বিষয়ে তারা কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না)
–এই বৈশিষ্ট্যের ওপর অবিচল আছেন এবং হককে তারা সবসময় অন্য সব সম্পর্কের ওপর প্রাধান্য দেন।
এটি আসলে কোনো বই নয়; বরং একটি শরয়ী ফতোয়া। এতে বাংলাদেশের আকাবির মুফতী ও মুরব্বী আলেমগণ মাওলানা সা`দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে দশটি প্রশ্ন সম্বলিত একটি ইস্তেফতার জবাব দিয়েছেন। এই ফতোয়াটি কেবল উপরোল্লিখিত দ্বীনী যিম্মাদারি আদায়ের জন্যই লিখতে হয়েছে। নতুবা মাওলানা সা`দ সাহেবের সঙ্গে কোনো আলেমের কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই; আর ব্যক্তিগত শত্রুতার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
মাওলানা সা`দ সাহেবের গোমারাহী ও ভ্রান্তিগুলো সম্পর্কে সাধারণ সাথিদেরকে সতর্ক করার প্রয়োজন হয়েছে বিভিন্ন কারণে। যেমন–
১. তিনি তার গোমরাহীপূর্ণ চিন্তা-ফিকিরগুলো প্রকাশ্যে বড় বড় সমাবেশে বারবার প্রচার করতে থাকেন।
২. এসব গোমরাহীপূর্ণ চিন্তাধারা প্রমাণের জন্য তিনি অনেক আয়াত-হাদীসে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সাহাবায়ে কেরামের অনেক ঘটনার মধ্যে বিকৃতি ঘটাতে থাকেন। তেমনিভাবে শরীয়তের অনেক পরিভাষা ও বিধিবিধানের মধ্যেও বিকৃতি ঘটাতে থাকেন।
৩. তিনি নবীগণের বিষয়ে সমালোচনা করেন।
৪. তার অধিকাংশ বয়ানের দ্বারা সাধারণ সাথিদের ওপর এই প্রভাব পড়ে যে, তারা উলামায়ে কেরাম ও তাদের দ্বীনী খেদমতসমূহের বিষয়ে বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে থাকে এবং তারা মাদরাসা ও খানকাহসমূহ থেকে বিমুখ হয়ে যায়।
৫. পুরো দুনিয়ায় তার অন্ধ অনুসারীরা এবং অন্যায়-পক্ষপাতে লিপ্ত ব্যক্তিরা তার গোমরাহীগুলোকে নিজেরাও গ্রহণ করে এবং অন্যদের মধ্যেও সেগুলো প্রচার করে।
৬. কিছু মৌলভী সাহেব আছেন, যাদের মিশনই হল সা`দ সাহেবের গোমরাহীগুলোকে হক ও হেদায়েত প্রমাণ করা। তারা অন্যান্য গোমরাহ দলের মতো নিজেদের দল-প্রধান (অর্থাৎ সা`দ সাহেব)-এর অন্যায়-সমর্থন করে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। আর এই সবকিছুর ক্ষেত্রে তাদের ভিত্তি হল, ভুল তথ্যদান, রেফারেন্সে কাটছাঁট এবং নস ও বক্তব্যের মধ্যে মর্মগত বিকৃতিসাধন। অথচ যাদের জানা নেই, তারা এগুলোকে সঠিক মনে করে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
৭. এর চেয়েও বড় আফসোসের বিষয় হল, মাওলানা সা`দ সাহেবের গোমরাহীগুলোকে হক প্রমাণের উদ্দেশ্যে লেগে থাকা এই ব্যক্তিরা বিভিন্ন লেখকের নানা ভুল-ভ্রান্তিকে, তেমনিভাবে বুঝে বা না বুঝে কোনো ব্যক্তি থেকে হয়ে যাওয়া শুযূয ও বিচ্ছিন্নতাকে সা`দ সাহেবের সমর্থনে দলীল হিসেবে ব্যবহার করেন। ইলমের আমানত ও শরীয়তের দলীলসমূহের ওপর এটা যে কত বড় জুলুম এবং আলাদাভাবেও এটা যে কত বড় অপরাধ– সেটা কেবল আহলে হক মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামই বুঝবেন।
৮. যারা হক-বাতিল চেনার শরয়ী মানদণ্ড সম্পর্কে উদাসীন তারা `মাওলানা সা`দ সাহেব উঁচু খান্দানের মানুষ এবং তিনি একটি কেন্দ্রীয় জায়গার দখলদারিত্ব নিয়ে আছেন`– এগুলোকে তারা সা`দ সাহেবের হক হওয়ার দলীল মনে করেন। অথচ শরীয়ত কোনো খান্দানকে কিংবা কোনো বরকতপূর্ণ বিশেষ জায়গার দখলদার হওয়াকে হক-বাতিলের মাপকাঠি বানায়নি।
৯. দলীল নয় এমন বিষয়কে দলীল বানিয়ে নিজেদের দলপ্রধানকে হক প্রমাণের চেষ্টা করা– এটা মাওলানা সা`দ সাহেবের বাংলাদেশী অনুসারীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বিশেষ খান্দান, মারকায, স্বপ্ন, ইস্তেখারা– জানা নেই এ ধরনের আরও কত বেদআতী দলীল এবং আরও কত দলীলবিহীন ও দলীল-বিরোধী মাসআলা তারা আবিষ্কার করে রেখেছেন সা`দ সাহেবকে হক প্রমাণের জন্য।
১০. মাওলানা সা`দ সাহেবের কোনো কোনো অনুসারী কোনো কোনো আলেমের বক্তব্যের আগের ও পরের মূল কথা বাদ দিয়ে অডিও বানিয়ে তাদের নামে প্রচার করে যাচ্ছে এবং মানুষকে ভুল বোঝাবুঝিতে ফেলছে। খোদ আমার সঙ্গেও দুইবার এমনটা হয়েছে। ঢাকার মিরপুরে পল্লবী জামে মসজিদে (মোল্লা মসজিদ) বান্দা একবার দীর্ঘ বয়ান করেছিলাম, যাতে মাওলানা সা`দ সাহেবের বিভিন্ন গোমরাহীর বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছিল। এই বয়ানের শুরু ও শেষের কিছু কথা নিয়ে একটি অডিও বানানো হয়েছে এবং এই কথা প্রচার করা হয়েছে যে, মাওলানা সা`দ সাহেব কোনো ভুল করেছেন– এটাই নাকি আমি স্বীকার করি না! এই কাজটা ওই লোকেরা একবার ২০১৯ সালে করেছিল; কয়েক মাস আগে ওই কাজটাই তারা দ্বিতীয়বার করল এবং কোনো রাখঢাক ছাড়াই প্রকাশ্যে এই মিথ্যাচার করল যে, বায়তুল মোকাররমের খতীব সা`দপন্থি হয়ে গেছেন!!
ভারত ও পাকিস্তানের আলেমদের বিভিন্ন বয়ান ও কথাকে কাটছাঁট করে এভাবেই তারা মিথ্যাচার করেছে এবং করে যাচ্ছে।
১১. মাওলানা সা`দ সাহেবের অনেক অনুসারীর অবস্থা হল, তারা কোনো বুযুর্গের বক্তব্যকে তার ওযাহাত ও উদ্দেশ্যের খেলাফ ব্যবহার করে গলত প্রোপাগান্ডা ছড়ায় এবং মাওলানা সা`দ সাহেবকে হক প্রমাণের অপচেষ্টা করে।
হযরত মাওলানা সায়্যেদ আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুমের অবস্থান
উদাহরণস্বরূপ গত এক বছর আগে ঢাকায় হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুমকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল সংবাদ শুনিয়ে কেউ এই প্রশ্ন করেছে যে, বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ফাসেক, মিথ্যাবাদী আখ্যা দেয়; এমনকি কেউ কেউ কাফেরও আখ্যা দেয়।
অথচ আমাদের জানামতে কেউ-ই তাবলীগ জামাতের কোনো পক্ষকে কাফের আখ্যা দেয় না। হযরত যেহেতু বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন না, সেহেতু প্রশ্নটাকে বাস্তব প্রশ্ন ধরে নিয়ে তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন। আর যেহেতু প্রশ্নটা কাফের বলা নিয়ে ছিল, তাই হযরত প্রতিবাদটাও জোরালো ভাষায় করেছেন এবং উভয় পক্ষ হকের ওপর আছে বলে দিয়েছেন। স্পষ্ট যে, কুফরের মোকাবেলায় উভয় পক্ষ মুসলিম হওয়ার দিক থেকে হকের ওপর আছে। কিন্তু এর দ্বারা এটা বৈধ হয়ে যায় না যে, গলত আকীদা, চিন্তাগত বিপথগামিতা, দ্বীনের মধ্যে বেদআত সৃষ্টি, বিকৃতিসাধন, তাফসীর বির রায় তথা মনগড়া তাফসীর করাসহ অনেক গোমরাহীতে লিপ্ত ব্যক্তিকে কেবল মুসলিম হওয়ার কারণে এই অর্থে তাকে হক বলা হবে যে, তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতি ও আদর্শের ওপর আছেন এবং শরয়ীভাবে তাকে কোনো দ্বীনী বিষয়ে দ্বীনী রাহবার ও অনুসরণীয় ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করা যাবে। হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুমের কথার উদ্দেশ্য এটা ছিল না। কিন্তু ব্যস, তাঁর কথার বাহ্যিক অংশকে অবলম্বন করে এর ভিত্তিতে মাওলানা সা`দ সাহেবের অনুসারীরা সা`দ সাহেবকে হক প্রমাণের চেষ্টা করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন।
কথা প্রসঙ্গে এই মজলিসে হযরত মাদানী হাফিযাহুল্লাহ এটাও বলেছেন যে, `যিনি ভুল করেছিলেন এবং যার ব্যাপারে ফতোয়া এসেছিল, তিনি রুজু করেছেন। সুতরাং কথা শেষ।` বাস্তবতা পরিপন্থি এই কথাটি তাঁর থেকে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। নতুবা কে না জানে, মাওলানা সা`দ সাহেবের রুজু তো কেবল নামের রুজু ছিল। শুধু একটা গোমরাহীর কথা ছাড়া বাকি সবগুলো গোমরাহীপূর্ণ কথা তিনি রুজুর পরও বলেছেন এবং এখনো বলে যাচ্ছেন। মাওলানা সা`দ সাহেবের রুজুর দ্বারা কথা শেষ হয়নি এবং কেন শেষ হয়নি, এর বিস্তারিত বিবরণ খোদ দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ৩১-০১-২০১৮ ঈসায়ী তারিখে স্বয়ং হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুমের দস্তখতসহ প্রকাশিত হয়েছে। ০৭-০৫-২০১৮ ঈসায়ী তারিখে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে আরেকটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, দারুল উলূম দেওবন্দের সকল উস্তায সা`দ সাহেবের বিষয়ে পূর্বের সিদ্ধান্তের ওপর অটল আছেন। সেখানেও হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী হাফিযাহুল্লাহর দস্তখত রয়েছে। সেজন্য কেউ যখন তাকে ফোনে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল, তিনি স্পষ্ট বললেন, `সা`দ সাহেব রুজু তো করেছিলেন; (কিন্তু) পরবর্তীতে আবার এ ধরনের কথাবার্তা আসে। রুজু কবুল হয়ে গিয়েছিল; এরপর আবার এ ধরনের বিষয় আসে। তার নিজের যবানের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত এবং নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।`
এটা ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এর কথা। দুনিয়া সাক্ষী, মাওলানা সা`দ সাহেব নিজের যবানকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন তো দূরের কথা, বরং তিনি তার গোমরাহীপূর্ণ চিন্তা-ফিকিরগুলো আগের তুলনায় আরও শক্তভাবে প্রচার করে যাচ্ছেন।
মোটকথা, হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুম তাঁর উক্ত কথা সংশোধন করে নিয়েছেন এবং স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রুজুর পরও মাওলানা সা`দ সাহেব এ ধরনের কথা (যেগুলোর কারণে তার বিরুদ্ধে ফতোয়া এসেছিল) বলে যাচ্ছেন।
এই ফোনালাপে হযরত মাদানী হাফিযাহুল্লাহ এ বিষয়টাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ঢাকায় তাঁর উক্ত কথার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল মূলত তাকফীর তথা কাফের আখ্যা দেওয়ার বিষয়টি রদ করা। কারণ তারা তো কাফের নয়। (এই ফোনালাপ সোশ্যাল মিডিয়াতেও আছে এবং আমাদের কাছেও সংরক্ষিত আছে।)
দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম হযরত মাওলানা মুফতী আবুল কাসেম নুমানী দামাত বারাকাতুহুমের স্পষ্ট বক্তব্য
এই বিষয়টাও সবারই জানা যে, হযরত মাদানী হাফিযাহুল্লাহর উক্ত বক্তব্যের একদিন পরেই ঢাকা থেকে দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম হযরত মাওলানা মুফতী আবুল কাসেম নুমানী দামাত বারাকাতুহুমকে হযরত মাদানী হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্যের খোলাসা উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করা হল যে, মাওলানা সা`দ সাহেবের বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না? উত্তরে হযরত মুহতামিম সাহেব দামাত বারাকাতুহুম বললেন–
ہمیں سن کر بہت حیرت ہوئی، اس لیے کہ مولانا سعد صاحب نہ دارالعلوم میں آئے ہیں، نہ ہم لوگوں میں سے کسی سے ملاقات ہوئی، ذاتی طور پر مولانا ارشد صاحب کے یہاں وہ آئے ہیں، اور ان لوگوں میں کیا گفتگو ہوئی وہ ہم نے نہیں سنا ہے۔
نہ وہ دارالعلوم میں آئے، نہ کسی مسئلہ سے ہمارے سامنے انہوں نے رجوع کیا ہے، نہ اپنے پہلے بیانات سے انہوں نے رجوع کا کوئی اعلان کیا ہے۔
جہاں تک بیانات کا تعلق ہے،تو میرے ذاتی علم میں یہ بات ہے کہ ان کے بیانات اسی طریقے سے جاری ہیں، جنوری کے آخری ہفتہ میں ارشادات اکابر کے نام سے جو ان کے بیانات کا مجموعہ شائع ہوا ہے، وہ میرے سامنے موجود ہے،اس میں بھی وہی ساری باتیں ہیں انحراف کی،جو وہ پہلے کہا کرتے تھے۔
اس لیے مولانا ارشد صاحب دامت برکاتہم نے جو کچھ کہا ہے وہ ان کی ذاتی رائے ہو سکتی ہے، دار العلوم دیوبند کا نہ موقف میں کوئی تبدیلی ہوئی ہے،نہ اس کی طرف سے کوئی اعلان ہوا ہے۔
`হযরত মাওলানা সায়্যেদ আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুমের বক্তব্য শুনে আমরা খুব অবাক হয়েছি। কারণ মাওলানা সা`দ সাহেব না দারুল উলূমে এসেছেন, না আমাদের কারও সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে মাওলানা আরশাদ সাহেবের কাছে এসেছেন। আর তাদের মাঝে কী কথাবার্তা হয়েছে, আমরা তা শুনিনি।
মাওলানা সা`দ সাহেব না দারুল উলূমে এসেছেন, না আমাদের সামনে কোনো বিষয় থেকে রুজু করেছেন, না তার পূর্বের বয়ানগুলো থেকে রুজুর কোনো ঘোষণা দিয়েছেন।
তার বয়ানগুলোর বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার জানা আছে, সেগুলো আগে যেমন ছিল সেভাবেই এখনো চলছে। জানুয়ারি (২০২৪ ঈ.)-এর শেষ সপ্তাহে ইরশাদাতে আকাবির নামে তার যে বয়ান সংকলন ছেপেছে, সেটা আমার সামনে আছে। তাতেও ঐসব হকপরিপন্থি কথাবার্তা আছে, যা পূর্বে তিনি বলতেন।
তাই মাওলানা আরশাদ সাহেব দামাত বারাকাতুহুম যা কিছু বলেছেন তা তার ব্যক্তিগত মত হতে পারে; দারুল উলূম দেওবন্দের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হয়নি। দারুল উলূম দেওবন্দের পক্ষ থেকে এমন কোনো ঘোষণাও দেওয়া হয়নি।`
দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম হযরত মুফতী আবুল কাসেম নুমানী দামাত বারাকাতুহুমের এই দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য সামনে আসার পর হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী হাফিযাহুল্লাহকে ঢাকা ও দিল্লিতে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যে কথা হযরত মুহতামিম সাহেব বলেছেন সেটা আমারও মত। এরপর এক-দুদিনের মধ্যে আবদুল মাজিদ নামে এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে হযরত মাদানী দামাত বারাকাতুহুম নিজেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রুজুর পরও (সা`দ সাহেবের বয়ানসমূহে) এ ধরনের কথাবার্তা আসতে থাকে। তার নিজের যবানের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত এবং নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
এই সবকিছু সত্ত্বেও এখনো মাওলানা সা`দ সাহেবের অনুসারীরা হযরত আরশাদ মাদানী দামাত বারাকাতুহুমের উক্ত বক্তব্য প্রচার করে যাচ্ছেন এবং দাবি করছেন, সা`দ সাহেবের মাসআলা সমাধান হয়ে গেছে!!
অথচ মাসআলা হল সা`দ সাহেবের গোমরাহীপূর্ণ চিন্তাধারা নিয়ে। অতএব যতক্ষণ তিনি তার গোমরাহীপূর্ণ চিন্তাধারার ওপর অটল থাকবেন এবং গোমরাহীপূর্ণ বয়ান চালিয়ে যাবেন, ততক্ষণ মাসআলা কীভাবে শেষ হবে?
সম্প্রতি (২০-০২-২০২৫ ঈ. তারিখে) মাওলানা সা`দ সাহেব দারুল উলূম দেওবন্দে এসেছেন; এতেই তার অনুসারীরা এই প্রোপাগান্ডা শুরু করেছেন যে, ব্যস সব মাসআলা সমাধান হয়ে গেছে। তখন বাস্তবতা জানার জন্য এক ব্যক্তি দরুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম হযরত মাওলানা মুফতী আবুল কাসেম নুমানী দামাত বারাকাতুহুমকে ফোন করেন। তার প্রশ্নের খোলাসা ছিল, মাওলানা সা`দ সাহেব যে দারুল উলূম দেওবন্দে এসেছিলেন, এ ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে যে, সা`দ সাহেবের চিন্তা-ফিকির সম্পর্কে ইতিপূর্বে দারুল উলূমের যে অবস্থান ছিল, তা খতম হয়ে গেছে, সব রফা-দফা হয়ে গেছে। এই কথা কি সঠিক?
উত্তরে হযরত মুহতামিম সাহেব অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন–
یکدم صریح جھوٹ ہے، انہوں نے کوئی بات نہیں کی اپنی نظریات کے سلسلے میں، وہ صرف ملاقات کے لیے آئے تھے۔
`একদম স্পষ্ট মিথ্যা। তিনি (মাওলানা সা`দ সাহেব) নিজের চিন্তা-ফিকির সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি। তিনি কেবল সাক্ষাতের জন্য এসেছিলেন।`
نہ مجھ سے کوئی ملاقات ہوئی ہے، نہ مجھ سے کوئی بات ہوئی ہے، صرف ملاقات کے لیے وہ گئے تھے، مولانا ارشد صاحب کے یہاں گئے تھے، دارالافتاء میں گئے تھے، صرف مفتی محمود صاحب کے پاس تھوڑی دیر بیٹھے رہے، لیکن ان کے نظریات اور ان کے خیالات کے سلسلے میں نہ کوئی گفتگو ہوئی، نہ انہوں نے کسی چیز سے رجوع کیا ہے۔
`আমার সঙ্গে কোনো সাক্ষাৎও হয়নি, কোনো কথাও হয়নি। তিনি কেবল সাক্ষাতের জন্য মাওলানা আরশাদ সাহেবের ওখানে গিয়েছিলেন। দারুল ইফতায় গিয়ে শুধু মুফতী মাহমুদ সাহেবের কাছে কিছুক্ষণ বসে থাকেন। কিন্তু তার চিন্তা-ফিকির ও ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে কোনো কথাও হয়নি এবং তিনি কোনো কিছু থেকে রুজুও করেননি।`
হযরত মুহতামিম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, দারুল উলূমের মাওকিফ কি এখনো আপন জায়গায় বহাল আছে? উত্তরে তিনি বললেন–
بالکل برقرار ہے، بالکل برقرار ہے، اس لیے کہ روزانہ ان کی نئی نئی باتیں پہلے سے زیادہ سخت آرہی ہیں، چیلنج کر رہے ہیں وہ علماء کو، فتوی چھوڑ دینے کی بات کر رہے ہیں، فتوی مت دیکھو، دل کی بات مانو، اس طرح کی باتیں کر رہے ہیں، کسی چیز سے انہوں نے رجوع نہیں کیا ہے۔
`পুরোপুরি বহাল আছে। পুরোপুরি বহাল আছে। কারণ প্রতিদিন তার নতুন নতুন কথা পূর্বের চেয়ে আরও শক্তভাবে আসছে। আলেমদের তিনি চ্যালেঞ্জ করছেন। ফতোয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন– `ফতোয়া দেখো না। দিলের কথা মানো`– এ ধরনের কথা বলছেন। কোনো কিছু থেকে রুজু করেননি।` (এই ফোনালাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় আছে এবং আমাদের কাছেও সংরক্ষিত আছে।)
হযরত মুহতামিম সাহেব সম্প্রতি ১৪/০৭/১৪৪৬ হিজরী মোতাবেক ১৫/০১/২০২৫ ঈসাব্দ তারিখে হযরত মাওলানা খলীলুর রহমান সাজ্জাদ নুমানী সাহেবের প্রতি প্রেরিত এক পত্রে (মাওলানা সা`দ সাহেবের ব্যাপারে) উল্লেখ করেন–
یہ حقیقت بھی آنجناب پر مخفی نہ ہوگی کہ تبلیغی جماعت کا وہ طبقہ جو بنگلہ والی مسجد سے وابستہ ہے وہ تمام تر فرد واحد کے افکار و نظریات کا نہ صرف پابند ہے؛ بلکہ انھیں کا داعی اور مناد ہے۔
اور یہ بات بھی اب پوشیدہ نہیں رہ گئی ہے کہ امیر محترم آیات قرآنی احادیث مبارکہ اور سیرت صحابہ کی تشریح اپنے مخصوص نظریہ کی روشنی میں کرتے ہیں جن میں تحریف کی حد تک فکری انحراف پایا جاتا ہے۔ دارالعلوم کی طرف سے ہر طرح کی کوشش اور تفہیم کے باوجود ان کے طرز عمل میں اب تک کوئی تبدیلی نہیں آئی ہے اور اس اندازکے بیانات برابر
موصول ہو رہے ہیں ۔ دار العلوم کا ان کے ساتھ اصل اختلاف اس مسئلہ میں ہے۔
`জনাবের নিকট এ বাস্তবতাও অস্পষ্ট নয় যে, বাংলাওয়ালী মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত তাবলীগ জামাতের সদস্যবৃন্দ এক ব্যক্তির চিন্তা ও দর্শনের কেবল অনুসারীই নয়; বরং সেগুলোর দাঈ ও প্রচারকও বটে।
এই ব্যাপারটিও এখন গোপন কিছু নয় যে, আমীর মহোদয় পবিত্র কুরআনের আয়াত, হাদীস শরীফ এবং সীরাতে সাহাবার ব্যাখ্যা নিজস্ব বিশেষ দর্শনের আলোকে করে থাকেন; যাতে তাহরীফ তথা বিকৃতি পর্যায়ের চিন্তাগত বিপথগামিতা পাওয়া যায়। দারুল উলূমের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রচেষ্টা এবং বোঝানোর উদ্যোগ গ্রহণ করার পরও এখনো তার নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। উপরন্তু সেই ধরনের আলোচনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তার সাথে দারুল উলূমের এখতেলাফ মূলত এই জায়গাতেই।`
এতসব স্পষ্ট বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও মাওলানা সা`দ সাহেবের অনুসারীরা এখনো গলত প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েই যাচ্ছে। কখনো হযরত মাদানীর নামে, কখনো সরাসরি দারুল উলূম দেওবন্দের নামে।
শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের অবস্থান
এমনিভাবে এরা শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের নামেরও ভুল ব্যবহার করে।
বেশ কয়েক বছর ধরে হযরত শায়খুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের মাধ্যমে মাওলানা সা`দ সাহেবের ইসলাহের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত আকারে ইসলাহ ও সতর্কীকরণমূলক অনেক চিঠি তিনি সা`দ সাহেবকে লিখেছেন। কয়েক মাস পূর্বেও তিনি তাকে ছয় পৃষ্ঠা সম্বলিত একটি চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিতে তো তিনি সুনির্দিষ্টভাবে সা`দ সাহেবের একটি (গোমরাহীপূর্ণ) সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তবে বয়ানে যে কোনো সীমালঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকার জন্য আবারো নসীহত করেছেন। এই চিঠির শেষে হযরত এটাও বলেছেন যে, পূর্বের রীতির খেলাফ এই চিঠি তিনি কেন কেবল মাওলানা সা`দ সাহেব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং এই চিঠি তিনি তাকেও প্রেরণ করেছেন, যিনি হযরতকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।
আফসোসের বিষয় হল, মাওলানা সা`দ সাহেব হযরতের উক্ত চিঠিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী নিজের ইসলাহ করবেন তো দূরের কথা, উল্টো হযরতকে এমন জবাব লিখে পাঠিয়েছেন, যার সারকথা এই দাঁড়ায়– সা`দ সাহেব কোনো ভুল করেননি। হযরত তাকে যে ভুল বক্তব্যের বিষয়ে সতর্ক করেছেন, সে ভুল তিনি করেনইনি; বরং আলোচিত মাসআলায় হযরত শায়খুল ইসলাম যে মত পোষণ করেন, তিনি সেই মতই পোষণ করেন!
হযরতের এই চিঠি ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ঈ. তারিখের ছিল। মাওলানা সা`দ সাহেব এর জবাব লেখেন ১৪ মে ২০২৪ ঈ. তারিখে। ১৪ মে ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অনেক বয়ানে তিনি ওই ভুল ও বিভ্রান্তিকর কথাগুলোই বলে গেছেন, যেগুলোর বিষয়ে হযরত শায়খুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম তাকে সতর্ক করেছিলেন!
৬ অক্টোবর ২০২৪ ঈ. তারিখে হযরত শায়খুল ইসলাম মদীনা মুনাওয়ারায় ছিলেন। মাওলানা সা`দ সাহেব সেখানে হযরতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বিভিন্ন কারগুজারি শোনাতে থাকেন। অর্থাৎ একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছেন; সে বিষয়ে ওযরখাহি করবেন তো দূরের কথা, উল্টো কারগুজারি শোনাচ্ছেন! হযরত শায়খুল ইসলাম নিজের বে-নযীর শারাফাত অনুযায়ী শুনেই যাচ্ছিলেন। শেষে তিনি কিছু নসীহত করেন। সেগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নসীহত এই ছিল–
کام علم صحیح کے ساتھ ہو، اور یہ کہ کچھ تجاوزات ہیں ان کی اصلاح کی ضرورت ہے، اور اصلاح کھلے دل سے ہو، کوئی شخص کسی بات کی نشاندہی کرتا ہے اس کو سمجھو کہ میرا محسن ہے، اس کو اپنا مخالف نہ سمجھو۔
`কাজ সহীহ ইলমের সঙ্গে হতে হবে। আর কিছু `তাজাউযাত` (সীমালঙ্ঘন) আছে, সেগুলো ইসলাহ করতে হবে। ইসলাহ খোলা দিলে হতে হবে; কেউ কোনো কিছু চিহ্নিত করে দিলে তাকে নিজের মুহসিন মনে করবেন; তাকে নিজের প্রতিপক্ষ মনে করবেন না।`
বাস্তবতা সাক্ষী, মাওলানা সা`দ সাহেবের বয়ানসমূহের অবস্থা এই নসীহতের আগে যেমন ছিল, নসীহতের পরও একই অবস্থায় আছে। তাতে সহীহ ইলম নয়, বরং বিকৃতি ও ফিকরী বেদআতের প্রাবল্য। আর যে বিষয়টাকে হযরত শায়খুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম নিজের স্বভাবসুলভ মৃদুভাষিতার কারণে کچھ تجاوزات (কিছু সীমালঙ্ঘন) শব্দে ব্যক্ত করেছেন, সেটা তো সংখ্যার দিক থেকে অসংখ্য আর তাতে সীমালঙ্ঘনের বিষয়টি এত ভয়াবহ ও মারাত্মক যে, ফরয নয়– এমন বিষয়কে সা`দ সাহেব ফরয বলছেন এবং হারাম নয়– এমন জিনিসকে তিনি হারাম বলছেন। আর সতর্ককারী মুফতী সাঈদ আহমাদ পালনপুরী রাহ. হোন বা মুফতী আবুল কাসেম নুমানী হোন, কিংবা শায়খুল ইসলাম উসমানী হোন অথবা হযরত আরশাদ মাদানী হোন; ইসলাহের কোনো নামনিশানাও নেই।
মোটকথা, এসমস্ত নসীহতের ওপর আমল করার কোনো আলামতই সা`দ সাহেবের মধ্যে নেই; বরং তিনি এসবের স্পষ্ট বিরোধিতা করে চলেছেন।
ওই মজলিসে হযরত শায়খুল ইসলাম একটি বিশেষ নসীহত এটিও করেছিলেন–
آپس میں لڑائی جھگڑے سے پرہیز کریں، بدگمانیاں اور بدزبانیاں اس سے پرہیز کریں، جھگڑا ختم کریں۔
`নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকুন। কুধারণা ও কটু ভাষা পরিহার করুন। ঝগড়া খতম করুন।`
হযরতের উদ্দেশ্য ছিল, যেহেতু তাবলীগ জামাত দুই দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, সেহেতু (আসল কর্তব্য তো এই ছিল যে, হকের ভিত্তিতে উভয় দল এক হয়ে যাবে; নতুবা কমপক্ষে) এটুকু তো জরুরি যে, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করবে না এবং কুধারণা ও কটু ভাষা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে।
এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নসীহত। কিন্তু যার অনুসারী ও ভক্তরা টঙ্গী ময়দানে অন্য পক্ষের সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে, মাথা ফাটিয়ে দেয়, হাত-পা ভেঙে ফেলে এবং কাউকে কাউকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলে, অথচ উক্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ ও সতর্কবাণী আসে না –না ডিসেম্বর ২০১৮-এর হামলার সময় আর না ডিসেম্বর ২০২৪-এর হামলার সময়– এমন লোকদের কাছে ঝগড়া-বিবাদ, কুধারণা ও কটূক্তি তো কোনো বিষয়ই নয়। এরা হযরত শায়খুল ইসলামের এই মূল্যবান নসীহতের কদর কীভাবে করবে?
যাইহোক, এখন আমি যে বিষয়টি বলতে চাচ্ছি, হযরত শায়খুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম এই নসীহতের সময় دو مسلک (দুই মাসলাক) শব্দ ব্যবহার করেছেন। বলেছেন–
اب دو قسمیں ہوگئیں جماعت، یہ سمجھو دو مسلک ہو گئے، تو یہ سب اعتراف کر لو اس بات کا کہ دو مسلک۔
`এখন জামাত দুই ভাগ হয়ে গেছে। এটা মনে করুন যে, দুই মাসলাক হয়ে গেছে। সবাই এটা স্বীকার করে নিন যে, দুই মাসলাক।`
অর্থাৎ উভয় পক্ষ নিজেদের মতো করে কাজ করুন; ঝগড়া-বিবাদ করবেন না। কুধারণা ও কটু ভাষা ব্যবহার করবেন না। মজলিসের শেষে ঝগড়া খতম করার বিষয়ে আরও জোর দিতে গিয়ে বলেছেন–
یہ سمجھو چلو دو مسلک ہو گئے، ایک حنفی، ایک شافعی، ایک مالکی، ایک حنبلی، چار ہو گئے نا (یہ کہکر حضرت ہنس پڑے، پھر فرمایا) دو ہو گئے چلو، دو مسلک ہو گئے۔
`এটা মনে করে নিন যে, দুই মাসলাক হয়ে গেছে। এক হানাফী, এক শাফেয়ী, এক মালেকী, এক হাম্বলী– চার হয়ে গিয়েছে না! (এটা বলে হযরত হেসে দিয়েছেন; এরপর বলেছেন,) দুইটা হয়ে গিয়েছে চলুন; দুই মাসলাক হয়ে গিয়েছে।`
আলোচনার পূর্বাপর এবং কথাটি বলার সময় হযরতের আন্দায থেকে বোঝা যায়, শব্দচয়নের ক্ষেত্রে হযরতের সতর্কতা অবলম্বনের সাধারণ যে নিয়ম, তা এখানে পরিলক্ষিত হয়নি। হযরতের মূল উদ্দেশ্য হল, উভয় পক্ষকে ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা। সেটার জন্য মাযহাবের প্রসঙ্গ টানার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আর তাবলীগ জামাতের বর্তমান দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে এই উদাহরণটি সামঞ্জস্যশীলও নয়। উভয় পক্ষকে ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকার বিষয়ে হযরত যে নসীহত করেছেন, সেটা কিন্তু দুই ফেরকার ব্যাপারেও প্রযোজ্য। চার মাযহাবের ইখতিলাফের জায়গাগুলোতে কেউ বিভেদ-বিবাদে লিপ্ত হবে– এটার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না; এমনকি কোনো দল যদি সরল রাস্তা পরিত্যাগ করে ফেরকায় পরিণত হয় এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাসলাক থেকে সরে যায়, তাহলে এভাবে ফেরকায় পরিণত হয়ে যাওয়া তো অন্যায়; তদুপরি এই অবস্থাতেও জরুরি হল, উভয় দল ইসলামী হকসমূহ ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করে চলবে। একদল আরেক দলের প্রতি আক্রমণাত্মক হবে না, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করবে না। কুধারণা, কটূক্তি ও বিবাদে লিপ্ত হবে না। আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে হককে হক এবং বাতিলকে বাতিল হিসেবে অবশ্যই স্পষ্ট করবে; তবে বিবাদ-বিসংবাদ থেকে বেঁচে থাকবে। মূলত এটাই হযরতের কথার উদ্দেশ্য ছিল। তাবলীগ জামাতের এই বর্তমান বিভক্তিকে চার মাযহাবের সঙ্গে মিলানো হযরতের মোটেই উদ্দেশ্য ছিল না। সা`দ সাহেবের কোনো সীমালঙ্ঘন এবং তার সৃষ্ট কোনো বেদআত ও বিকৃতির তরফদারি বা সাফাই পেশ করা এবং সেটাকে মাযহাবী ইখতিলাফের সঙ্গে মেলানো– এটা হযরতের কথার উদ্দেশ্য হতেই পারে না।
সূত্র অনুযায়ী খোদ হযরত শায়খুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম কোনো এক প্রসঙ্গে বলেছেন–
میری مراد دو مسلک کی طرح رہنے سے یہ ہے کہ جھگڑا نہ کریں، اس سے مراد سعد صاحب کی غلط باتوں کی تصدیق مراد نہیں۔
`দুই মাসলাকের মতো থাকার দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল যেন ঝগড়া না করে। এর দ্বারা সা`দ সাহেবের গলত কথাগুলোকে সত্যায়ন করা উদ্দেশ্য নয়।`
এই সবকিছু সত্ত্বেও সা`দ-অনুসারীরা নিজেদের সমর্থন ও মাওলানা সা`দ সাহেবকে হক প্রমাণের উদ্দেশ্যে খামোখা হযরত শায়খুল ইসলামের নাম ব্যবহার করে।
ইদানীং তো ৯ অক্টোবর ২০২৪ ঈ. তারিখের একটা অডিও ভাইরাল করা হচ্ছে, যাতে হযরত কোনো এক ব্যক্তির সাথে এ বিষয়ে আর আলোচনা করবেন না বলছিলেন। উক্ত ব্যক্তি প্রশ্ন করার আদব রক্ষা করেনি এবং তার কথা থেকে মনে হয়, বনী ইসরাঈলের গোমরাহ হওয়ার যে দায় মাওলানা সা`দ সাহেব হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ওপর চাপিয়েছিলেন, সা`দ সাহেব সেটা থেকেও রুজু করেননি। অথচ কেবল এই একটা বিষয়ে সা`দ সাহেব প্রকাশ্যে রুজু করেছেন বলে প্রমাণিত আছে। একেবারে ইজতেমার ময়দানে না হলেও নেযামুদ্দীনে হায়াতুস সাহাবার তালীমে এবং কাকরাইল মসজিদে তিনি উক্ত কথা থেকে রুজু করেছেন এবং আমাদের জানামতে উক্ত কথা তিনি আর কোথাও পুনরাবৃত্তি করেননি। কিন্তু ওই ব্যক্তির কথা থেকে মনে হয়, ওই ব্যক্তি যেন এই এক ঘটনার ক্ষেত্রেও সা`দ সাহেবের রুজু স্বীকার করতে চাইছে না। এটার ক্ষেত্রেই হযরত বলছেন যে, এটাকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু কেবল এই একটা বিষয়ের দ্বারা সা`দ সাহেবের হক হওয়া প্রমাণিত হয় না আর এটা হযরতের উদ্দেশ্যও নয়। কারণ এটা ছাড়াও মাওলানা সা`দ সাহেব তার বয়ানসমূহে নবীগণের বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের অশোভন শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং অনেক ভ্রান্ত মত ও চিন্তা, নতুন নতুন ফিকরী বেদআত ও বিকৃতিগুলো বারবার পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং করছেন।
বলার উদ্দেশ্য হল, হযরত নির্দিষ্ট এক প্রশ্নকারীকে এ বিষয়ে হযরতের সঙ্গে কথা বলতে বারণ করছিলেন। ব্যস, এখান থেকে এই লোকেরা প্রচার করা শুরু করেছে যে, হযরতের দৃষ্টিতে সা`দ সাহেবের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। হযরত প্রশ্নকারীকে বলছিলেন, ব্যস এখন ঝগড়া খতম করুন। কিন্তু এই ব্যক্তিরা ঝগড়া খতম করার এই অর্থ বের করেছে যে, হযরতের মতে মাওলানা সা`দ সাহেব হকের ওপর আছেন; তার বিষয়ে সবার চুপ থাকা উচিত। মাওলানা সা`দ সাহেবের অনুসারীরা এভাবেই স্পষ্ট হওয়ার পরও অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং বড়দের নামের অসদ্ব্যবহার করে।
ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, গত ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ঈ. তারিখে হযরত শায়খুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম মাওলানা সা`দ সাহেবের উদ্দেশে একটি সকর্তকীকরণমূলক চিঠি লিখেছিলেন। অতঃপর মাওলানা সা`দ সাহেব ১৪ মে ২০২৪ ঈ. তারিখে এক পৃষ্ঠার একটি জবাবি চিঠি লিখে হযরতের কাছে পাঠান, যার বিবরণ বাস্তবসম্মতও ছিল না এবং আদবসম্মতও ছিল না। সেই চিঠির ব্যাপারে বান্দা একটি পর্যালোচনামূলক লেখা প্রস্তুত করি, যেখানে মাওলানা সা`দ সাহেবের বয়ানসমূহের উদ্ধৃতিতে তার বিভিন্ন সীমালঙ্ঘন ও বিভ্রান্তিকর মতবাদসমূহ তুলে ধরা হয়েছে, সংক্ষেপে তার সৃষ্ট ফিকরী বিভিন্ন বেদআত ও বিকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং নবীগণের বিষয়ে তিনি যে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন সেদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেই পর্যালোচনা ছাপার আগে বান্দা সেটি হযরতের কাছে প্রেরণ করি। তখন হযরত সেই পর্যালোচনার ওপর লেখেন–
بندہ کی طرف سے اجازت ہے
محمد تقی
২২-৪-১৪৪৬ ھ
`বান্দার পক্ষ থেকে (ছাপার) ইজাযত আছে।
মুহাম্মাদ তাকী
২২-৪-১৪৪৬ হি.`
সেদিন ঈসায়ী তারিখ ছিল ২৫ অক্টোবর ২০২৪। এর মানে ৯ অক্টোবরের ১৬ দিন পরে এবং ৬ অক্টোবরের ১৯ দিন পরে হযরত বান্দার এই লেখাটি সত্যায়ন করেছেন। যে কেউ চাইলে ওই লেখাটি পড়তে পারেন। লেখাটির শিরোনাম–
شیخ الاسلام حضرت مولانا مفتی محمد تقی عثمانی دامت برکاتہم کے نام جوابی خط پر مختصر تبصرہ
এই লেখাটি পড়ে আল্লাহকে হাযির-নাযির জেনে ফয়সালা করুন, মাওলানা সা`দ সাহেবের গোমরাহীপূর্ণ চিন্তা-ফিকির এবং তার সৃষ্ট বিভিন্ন ফিকরী বেদআত ও বিকৃতিসমূহকে আড়াল করার জন্য হযরত শায়খুল ইসলামের নাম ব্যবহার করা কত বড় অন্যায়?
কথা দীর্ঘ হয়ে গেল। বান্দা আরয করতে চাচ্ছি, কোনো বেদআতী দল বা কোনো বাতিলপন্থি ফেরকার গোমরাহীপূর্ণ মতবাদ এবং তাদের সৃষ্ট বেদআত ও বিকৃতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা উলামায়ে কেরামের জন্য যতটা জরুরি, এর চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হল, ওই লোকদের গোমরাহী, বেদআত ও বিকৃতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, যারা নিজেদের বুযুর্গদের কোনো জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে বা তার নেতৃত্ব দেয়; অথচ আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-ফিকিরের দিক থেকে তারা বুযুর্গদের রাস্তা থেকে সরে গেছে এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতি ও আদর্শ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। কারণ বুযুর্গদের নিসবতের কারণে সাধারণ মানুষ ওইসব লোকের গোমরাহী, বেদআত ও বিকৃতিকে দ্বীন ও ঈমান এবং সুন্নত ও শরীয়ত মনে করে।
কেন এই ফতোয়া?
এই দৃষ্টিকোণ থেকে এবং উপরোল্লিখিত বিভিন্ন কারণে উলামায়ে কেরাম মাওলানা সা`দ সাহেবের গোমরাহীপূর্ণ চিন্তা-ফিকির এবং তার ফিকরী বেদআত ও বিকৃতি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা জরুরি মনে করেন। আলহামদু লিল্লাহ বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম শুরু থেকেই এ দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।
ইদানীং মাওলানা সা`দ সাহেবের বিষয়ে অন্যায় পক্ষপাত এবং তার নাজায়েয সমর্থনে মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম মুনাসিব মনে করেছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের কাছে মাওলানা সা`দ সাহেব ও তার অনুসারীদের বিষয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তবে সারগর্ভ জবাব সামনে আসা উচিত। সেজন্য উত্তরের জন্য একটি বিস্তারিত ইস্তেফতা বাছাই করা হয়েছে এবং তাতে উল্লেখিত ১০ টি প্রশ্নের উত্তর লেখা হয়েছে।
প্রথম দুই প্রশ্ন সরাসরি মাওলানা সা`দ সাহেব সম্পর্কে। এই দুই প্রশ্নের উত্তর দালীলিকভাবে উপস্থাপনের জন্য জরুরি ছিল, মাওলানা সা`দ সাহেবের বয়ানসমূহ সবিস্তারে যাচাই করে দেখা। তাই এমনটাই করা হয়েছে। তবে সেই বিস্তারিত যাচাই-বাছাইয়ের সামান্য নির্যাস এই ফতোয়ায় পেশ করা সম্ভব হয়েছে। নতুবা এটি ফতোয়ার পরিবর্তে বিশদ কলেবরের বই হয়ে যেত।
যারা মাওলানা সা`দ সাহেবের বয়ানসমূহ গভীরভাবে ও বিস্তারিতভাবে যাচাই করার সুযোগ পেয়েছেন, যেমনটি বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম করেছেন এবং যারা এখানকার সা`দ-অনুসারীদের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, অন্যায় পক্ষপাত, অন্ধ অনুসরণ এবং কেবল হকের খাতিরে সা`দ সাহেবের সাথে মতভেদ রাখা ব্যক্তিদের প্রতি তাদের জুলুম-নির্যাতনের ব্যাপারে অবগত, তারা অবশ্যই বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের এই পদক্ষেপ ও অবস্থানের সাথে পরিপূর্ণভাবে একমত হবেন।
এমনিতে মাওলানা সা`দ সাহেবের ফিকরী বেদআত, চিন্তাগত বিপথগামিতা, বিকৃতিসাধন ও একাধিক নবী-রাসূলের সমালোচনার বিষয়টি এখন এত স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সত্যসন্ধানী কারও পক্ষেই মাওলানা সা`দ সাহেবকে উক্ত সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত প্রমাণ করা সম্ভব নয়।
স্পষ্ট যে, এটি একটি পুরোনো ইস্তেফতা। তাই এতে ডিসেম্বর ২০২৪-এর টঙ্গী ময়দানের হামলার কথা আসেনি। অথচ সা`দ-অনুসারীদের এই হামলা তাদের ডিসেম্বর ২০১৮-এর হামলার চেয়ে আরও বেশি ভয়াবহ ছিল।
ইস্তেফতার জবাব সম্বলিত এই ফতোয়াটি যদিও সত্যায়নকারী উলামায়ে কেরামের দস্তখত লাভের পর্যায়ে এইমাত্র (শাবান ১৪৪৬ হি.) পৌঁছেছে, তবে এর খসড়া এক বছর আগেই প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। সেজন্য এতে মাওলানা সা`দ সাহেবের একেবারে কাছাকাছি সময়ের বয়ানগুলোর উদ্ধৃতি আসেনি। অথচ বাড়াবাড়ি ও গোমরাহীর দিক থেকে সেগুলো আগের বয়ানসমূহের তুলনায় আরও মারাত্মক ও আরও গোমরাহীপূর্ণ।
আল্লাহ তাআলার শোকর, এখন এই ফতোয়া ছাপতে চলেছে। আলহামদু লিল্লাহ, এর উর্দু অনুবাদও প্রস্তুত, যেটা অচিরেই প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। আশা আছে, ভবিষ্যতে কোনো সময় এর আরবী ও ইংরেজি অনুবাদও প্রস্তুত হয়ে পাঠকের সামনে চলে আসবে ইনশাআল্লাহ।
আফসোসের বিষয় হল, মুসলিম উম্মাহর ওপর বহিঃশত্রুদের ভয়ানক হামলা অনবরত হয়েই চলেছে। শিশু, নারী, বৃদ্ধ নির্বিচারে গণহত্যা চলছে। তা সত্ত্বেও ফেতনাসৃষ্টিকারী লোকদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ হচ্ছে না যে, অন্ততপক্ষে এই অবস্থায় মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা ছড়ানো এবং তাদেরকে সঠিক রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে বিচ্ছিন্নতার রাস্তায় নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকি।
আল্লাহ তাআলা তাঁর ফযল ও করমে আমাদের সমস্ত হালত ঠিক করে দিন। উম্মতে মুসলিমাকে ভেতর-বাহির উভয় প্রকারের জালেমের জুলুম থেকে হেফাজত করুন– আমীন।
ফতোয়াটি থেকে সবাই উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করি
আমরা শাখসী নেযাম ও শুরায়ী নেযাম– উভয় পক্ষের সকল স্তরের সাথিদের খেদমতে অনুরোধ করছি, সবাই ফতোয়াটি (সংক্ষিপ্ত অংশ ও বিস্তারিত অংশ) আদ্যোপান্ত পড়ার চেষ্টা করি।
শাখসী নেযামের ভাইয়েরা সব ধরনের তাআস্সুব (অন্যায় পক্ষপাত) ও অন্ধ ভক্তি থেকে দূরে সরে ফতোয়াটি পড়ার চেষ্টা করি এবং বোঝার চেষ্টা করি, কেন উলামায়ে কেরাম মাওলানা সা`দ সাহেবের আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের বিষয়ে সতর্ক করা জরুরি মনে করেন। আরও বোঝার চেষ্টা করি, নবী-রাসূলের মর্যাদা, সুন্নত ও শরীয়তের অবস্থান এবং এসব বিষয়ের প্রতি আমার ভক্তি ও ভালবাসা আমার আমীরের ভক্তি ও ভালবাসা থেকে বেশি থাকা জরুরি। হককে যে কোনো সম্পর্কের ওপর প্রাধান্য দেওয়াটাই তো ঈমানের দাবি এবং এটাই শরীয়ত ও সুন্নতের শিক্ষা। তাই এই ভ্রান্তিগুলো সা`দ সাহেব থেকে প্রকাশিত হয়েছে– এ কারণে এগুলোকে হক মনে করতে হবে, এমন চিন্তা ঈমানের দাবি পরিপন্থি; এমনকি মাওলানা সা`দ সাহেবের কল্যাণকামিতার পরিপন্থিও বটে। তাই এই ভ্রান্তিগুলোকে গোমরাহী মনে করা জরুরি।
শুরায়ী নেযামের সাথিদেরকেও ফতোয়াটি আদ্যোপান্ত পড়ার অনুরোধ করছি। যাতে তারাও স্পষ্টভাবে ও দালীলিকভাবে বুঝতে পারেন, মাওলানা সা`দ সাহেবের আপত্তিকর বিষয়গুলোর ব্যাপারে সতর্ক করাকে উলামায়ে কেরাম কেন জরুরি মনে করেন। তাছাড়া অন্য কারও মধ্যেও যদি এ ধরনের কোনো ভ্রান্ত চিন্তা থেকে থাকে, তা যেন সংশোধন করে নিতে পারে।
শুরায়ী নেযামের সাথিদের খেদমতে আমাদের আরও আহ্বান, আমরা হকের ওপর মজবুত থাকি। গলত প্রোপাগান্ডার কারণে প্রভাবিত না হই। অন্যের বে-ইকরামির জবাব ইকরামের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করি। আর কারও বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্যায় কিছু না বলি, না করি। এবং এমন কোনো কাজ একেবারেই না করি, যেটা প্রশাসনের কাজ; জনগণের কাজ নয়।
শাখসী নেযামের সাথিদের প্রতি আহ্বান, আমরা মাওলানা সা`দ সাহেবের ভ্রান্ত চিন্তাসমূহ থেকে সম্পর্কহীন হয়ে সহীহ রাস্তায় ফিরে আসার হিম্মত করি। কমপক্ষে অন্যায় পক্ষপাত এবং গলত প্রোপাগান্ডা থেকে বিরত থাকি। উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে কুধারণা ও কটূক্তি করে নিজের আখেরাত বরবাদ না করি।
উভয় পক্ষের সাথিদের প্রতি আমরা জোর আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে পরস্পরের চালচলন ও আচার-উচ্চারণ মার্জিত হয় এবং ইকরামপূর্ণ হয়। সবাই যেন ঝগড়া-বিবাদ, গীবত-শেকায়েত, কুধারণা ও কটূক্তি থেকে বেঁচে থাকে। আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।
هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم على سيدنا ومولانا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
আরজগুযার
বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
খাদেম, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
১৮ রমযানুল মুবারক ১৪৪৬ হি.
(চলবে ইনশাআল্লাহ)