যিলকদ ১৪৪৬   ||   মে ২০২৫

ওয়াকফ আইন ২০২৫ (ভারত)
এ ওয়াকফ আইন কেন গ্রহণযোগ্য নয়!

হযরত মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানী

আপনারা হয়তো অবগত আছেন, শুধু মুসলমানই নয়; বরং দেশের সকল ইনসাফ-পছন্দ ও সেক্যুলার মহলের বিরোধিতা স্বত্ত্বেও ক্ষমতার নেশায় মত্ত, ঘৃণার সওদাকারী প্রশাসন `ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪`-এর অনুমোদন দিয়েছে আর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি আইনে পরিণত হয়েছে এমনিতে গোটা আইনটিই মুসলিম স্বার্থ-বিরোধী ও সংবিধান পরিপন্থি এবং সম্পূর্ণ অন্যায় ও ইনসাফ বহির্ভূত তবুও এর কয়েকটি স্পষ্ট অন্যায় ও ইনসাফ বহির্ভূত দিক সম্পর্কে জানা থাকা দরকার

ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা

১. ওয়াকফ সম্পত্তির দখল ও সরকারের মদদে তা ধ্বংস করাই আইনটির উদ্দেশ্য এজন্য কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে যথা :

ক. ওয়াকফ অ্যাক্ট ১৯৯৫-এ উল্লেখ আছে, কোনো জমি দীর্ঘ সময় ধরে মসজিদ, দরগাহ কিংবা কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার হলে এবং সম্পূর্ণ ধর্মীয় ও সেবামূলক হলে তা ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে 

এটি ব্যবহারকারী বা ভোগ-দখলভিত্তিক ওয়াকফ (Waqf by User) হিসেবে অভিহিত হবে বর্তমান সরকার কর্তৃক উপস্থাপিত বিলে ধারাটিকে বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু মুসলমানদের দাবির প্রেক্ষিতে এনডিএর কোনো কোনো মিত্রের পরামর্শে তা সংশোধন করা হয় তাতে বলা হয়, ভবিষ্যতে যেসব সম্পত্তি ওয়াকফ করা হবে, তার জন্য এই ধারা প্রযোজ্য হবে আর আগ থেকেই যে ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, তাতে ব্যবহারভিত্তিক ওয়াকফ গ্রহণযোগ্য হবে তবে এতদুভয়ের মাঝে যদি কোনো বিরোধ দেখা দেয়, কিংবা তা সরকারি সম্পত্তি হয়, তাহলে শুধু ব্যবহারের কারণে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না এটিও মূলত পূর্বেকার ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের এক পরোক্ষ অপচেষ্টা সাধারণত মানুষ কোনো জমি বা সম্পত্তি দ্বীনী অথবা সেবামূলক কাজে ওয়াকফ করলে তা মূলত আল্লাহর জন্যই ওয়াকফ করেন এবং তা থেকে নিজেকে পুরোপুরি সম্পর্কহীন করে রাখেন এমনকি প্রশাসনের জরিপ করার সময়ও কোনো দাবিদার সামনে আসেন না ফলে এসব সম্পত্তি সরকারের অধিকারভুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয় গ্রামে-গঞ্জে ও ছোট শহরগুলোতে এজাতীয় ওয়াকফের অনেক সম্পত্তি আছে সরকারি সম্পত্তি আখ্যা দিয়ে এসব সম্পত্তি দখলে নেওয়ারও চেষ্টা করা যায়

এছাড়া আমাদের দেশের উগ্র ও কট্টরপন্থি হিন্দু লোকেরা যে কোনো মসজিদ, দরগাহ, ঈদগাহ ইত্যাদিকে দলীল-প্রমাণ ছাড়াই নিজেদের ধর্মীয় স্থাপনা হওয়ার দাবি করে আসছে এর শুরুটা হয়েছিল অযোধ্যা থেকে রাতের অন্ধকারে অতি গোপনে একটি মূর্তি এনে দাবি তোলা হয় যে, এখানে রামজী আবির্ভূত হয়েছেন এ ধরনের দাবি এখন দেশের বিভিন্ন স্থানেই তোলা হচ্ছে সম্প্রতি জ্ঞানবাপী মসজিদের (Gyanvapi Mosque)  ওযুখানার ফোয়ারাকে শিবলিঙ্গ দাবি করা হয়েছে আর ভিএইচপি প্রায় সাড়ে তিন হাজার মসজিদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে রেখেছে; যেগুলোর মন্দির হওয়ার দাবি তোলা হচ্ছে তালিকাটিও দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে দরগাহগুলোতে গেরুয়া পতাকা স্থাপন করা হচ্ছে কবরস্থানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে আর দলীল-প্রমাণ ছাড়া শুধু দাবির ভিত্তিতেই সরকার এগুলোকে বিরোধপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে তাহলে দেখা যাচ্ছে, সরকার একদিকে নিজ মিত্রদের কথা রাখতে গিয়ে আগের ওয়াকফ সম্পত্তিকে ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করছেঅন্যদিকে সুকৌশলে তা অধিগ্রহণ ও হিন্দু উগ্রবাদীদের দখলের পথ সুগম করে দিয়েছে

খ. ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে (ধারা : ১০৭) ওয়াকফের সম্পত্তিকে `লিমিটেশন অ্যাক্ট` থেকে ব্যতিক্রম সাব্যস্ত করা হয়েছে লিমিটেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, কোনো সম্পত্তির ওপর কারও বারো বছর কিংবা তদূর্ধ্ব সময়ের দখলকে মালিকানা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আর দখলদারকে সম্পত্তির মালিক গণ্য করা হয়েছে তবে ওয়াকফ সম্পত্তি এই আইনের বাইরে ছিল যার ফায়েদা হল, এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর কারও দীর্ঘদিনের অন্যায় দখল বাতিল করা যেত কিন্তু বর্তমান আইনে লিমিটেশন অ্যাক্ট থেকে ওয়াকফ সম্পত্তিকে ব্যতিক্রম গণ্য করা হয়নি; বরং এ ধরনের দীর্ঘদিনের অন্যায় দখলকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে

গ. হিন্দুস্তানের অনেক মুসলিম রাজা-বাদশাহ, নবাব ও জমিদার অমুসলিমদের জন্যও ওয়াকফ করেছেন তেমনি অনেক অমুসলিম রাজা-বাদশাহও মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন জমি-ইমারত দান করেছেন এখনকার সময়েও অনেক অমুসলিম তার মুসলিম বন্ধুদের সেবামূলক কাজে জমি দিয়ে থাকেন আর মুসলিমরাও মাতৃভূমির ভ্রাতৃত্বের দাবিতে অমুসলিমদের জমি হাদিয়া দিয়ে থাকেন কিন্তু বর্তমান আইন অমুসলিমের ওয়াকফকৃত সম্পত্তি, যা মসজিদ, কবরস্তান, মুসাফিরখানা ইত্যাদি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তার ওয়াকফ বাতিল করে দিয়েছে ফলে অমুসলিমদের এসকল দান-অনুদান ওয়াকফ বহির্ভূত সাব্যস্ত হবে আর অনেক ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপেরও আশঙ্কা আছে

২. এটি সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক আইন

ক. ভোগ-দখল ও ব্যবহারভিত্তিক ওয়াকফ-মালিকানা নীতিটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী, শিখ, বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মানুসারীদের জন্য এখনো স্বীকৃত; কিন্তু মুসলিম ওয়াকফের ক্ষেত্রে এটি বিলুপ্ত করার পাঁয়তারা চলছে যা স্পষ্টতই মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক একটি আইন

খ. লিমিটেশন অ্যাক্ট থেকে ব্যতিক্রম হওয়ার বিধানটি হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও বিদ্যমান অথচ এই আইনটিই মুসলমানদেরকে নিজেদের ওয়াকফ সম্পত্তির সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত করে রাখছে

গ. হিন্দুদের এন্ডোমেন্ট (Endowment) বা দেবোত্তর সম্পত্তি মূলত মুসলিম ওয়াকফেরই অনুরূপ অথচ এর সকল সদস্যের হিন্দু হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে উত্তর প্রদেশ, কেরালা, কর্ণাটক ও তামিল নাড়ু ইত্যাদি প্রদেশে এ আইন কার্যকর রয়েছে আইন অনুযায়ী, হিন্দু সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা শুধু হিন্দুই করতে পারে বিহার এন্ডোমেন্টের অধীনে তিনটি বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যথা : হিন্দু এন্ডোমেন্ট বোর্ড, সেতাম্বর জৈন এন্ডোমেন্ট বোর্ড ও দিগম্বর জৈন এন্ডোমেন্ট বোর্ড এসব বোর্ডের সদস্যদের অবশ্যই হিন্দু হওয়া বাধ্যতামূলক গুরুদারা প্রবন্ধক কমিটির সদস্যদেরও শিখ হওয়া আবশ্যক

অথচ বর্তমান ওয়াকফ আইনে ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ন্যূনতম দুজন অমুসলিম প্রতিনিধি থাকা আবশ্যক করা হয়েছে আর মুসলিম প্রতিনিধির সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে আগে ওয়াকফ বোর্ডের চিফ এক্সিকিউটিভের মুসলিম হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল; এখন তা রহিত করা হয়েছে আগে ওয়াকফ বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতেই চিফ এক্সিকিউটিভ নির্বাচিত হত এখন সরকার নিজেই তা নির্ধারণ করে দেয় আগে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিলে একজন অমুসলিম সদস্য থাকতে পারত এখন সদস্য ও পদাধিকারবলে অমুসলিমের সংখ্যা ১৩ জনও হতে পারে যাদের দুজনের অমুসলিম হওয়া বাধ্যতামূলক সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডে আগে শুধু একজন অমুসলিম চেয়ারপারসন হতে পারত আর অন্য সকল সদস্য মুসলিমই হত আর সে-ও মনোনীত হত নির্বাচনের মাধ্যমে কিন্তু এখন বোর্ডের ৭ জন সদস্য অমুসলিম হতে পারে; যাদের দুজনের অমুসলিম হওয়া বাধ্যতামূলক এছাড়া ওয়াকফ বোর্ড চাইলেই তার সদস্য নির্বাচন করতে পারে না; বরং প্রশাসন নিজেই তাদের নাম নির্ধারণ করে দেয়

ওয়াকফের প্রতিবন্ধকতা তৈরি

আইনটির মাধ্যমে নতুন ওয়াকফের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে কেননা আগেই বলা হয়েছে, কোনো অমুসলিম ওয়াকফ করতে পারে না আইন অনুযায়ী, কেউ ন্যূনতম পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালন করলে সে-ই শুধু ওয়াকফ করতে পারে এটি সম্পূর্ণ ইসলাম ও শরীয়তপরিপন্থি ইসলামের দৃষ্টিতে, আজকের ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তিও পাঁচ বছর আগে থেকে ইসলাম পালনকারী মুসলমানের মতোই সুতরাং এটি মূলত একজন মুসলিমকে ৫ বছর তার ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার নামান্তর এভাবে ওয়াকফকে কঠিন করা হয়েছে তাছাড়া ওয়াকফকারীর ৫ বছর ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধান মেনে চলার বিষয়টি প্রমাণ করাও অনেক জটিল

ইসলামের ওয়াকফ নীতিমালার পরিপন্থী

ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পদের মালিক তার সম্পদে যে কোনো বৈধ হস্তক্ষেপের পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন আর শরীয়তে সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সদাচরণও সওয়াবের কাজ এমনকি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, স্ত্রীর মুখে অন্ন তুলে দেওয়াও সওয়াবের কাজ এ কারণে ইসলামে সন্তানের জন্য ওয়াকফের বিধান রয়েছে আর এটি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর রা., উমর রা., আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবীর আমল দ্বারাও প্রমাণিত অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি চাইলে নিজের জমি কিংবা সম্পত্তি সন্তানদের জন্য ওয়াকফ করতে পারেন এক্ষেত্রে ওয়াকফকারীর শর্ত মোতাবেক তার বংশধরগণ উক্ত জমি বা সম্পত্তি ভোগ-দখলের অধিকারী হবে; তবে তারা তা বিক্রি করতে পারবে না 

বর্তমান ওয়াকফ আইনে এতেও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে আগের আইনে, কোনো ওয়াকফ কার্যকর হওয়ার জন্য প্রকৃত ওয়ারিশদের কারও অধিকার খর্ব না হওয়া শর্ত ছিল যদিও এ শর্তটি অগ্রহণযোগ্য কারণ ওয়ারিশরা তো মীরাস বণ্টনের মাধ্যমেই নিজেদের অধিকার বুঝে নিয়েছেন এবং এই অধিকার মালিকের মৃত্যুর পরই প্রতিষ্ঠিত হয়

বর্তমান আইনে যে ১৪টি পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে, সন্তানদের জন্য এমনভাবে ওয়াকফ করতে হবে, যেন এর দ্বারা কারও আইনী অধিকার খর্ব না হয় এটি অনেক ব্যাপক অর্থবহ এবং শরীয়তের নীতিমালায় অন্যায় হস্তক্ষেপের শামিল

আইনটি দুর্বল করার অপচেষ্টা

ওয়াকফ আইন দুর্বল করার আরেকটি অপচেষ্টা এই যে, আগের ওয়াকফ আইনকে `ওভার রাইটিং অ্যাক্ট` হিসেবে বিবেচনা করা হত অর্থাৎ কোনো আইনের সাথে ওয়াকফ আইনের বিরোধ দেখা দিলে ওয়াকফ আইনই বলবৎ থাকত; কিন্তু বর্তমান আইনে এটিও বিলুপ্ত হয়েছে বাস্তবে ওয়াকফ অ্যাক্ট হল একটি বিশেষ আইন আর আইনী নীতিমালা এবং সুপ্রীম কোর্টের রায় অনুযায়ী সাধারণ আইনের সাথে যে কোনো বিশেষ আইনের বিরোধ দেখা দিলে বিশেষ আইন অগ্রাধিকার পায় এটি শুধু ওয়াকফ অ্যাক্টের জন্যই নয়; বরং যেকোনো বিশেষ আইনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য অথচ ওয়াকফকে এই নীতি থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে

মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ

পরিতাপের বিষয় হল, প্রশাসনের বর্তমান দায়িত্বশীলরা মিথ্যার এক ঘৃণ্য নজির স্থাপন করেছে মিথ্যা বলা ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির জন্য কোনো অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হলে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই হত এর সর্বোচ্চ হকদার ওয়াকফ নিয়ে তারা কিছু মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে যা দেশের অনেক নাগরিকের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নিম্নে তাদের কয়েকটি মিথ্যাচার তুলে ধরা হল

১. যে কোনো সম্পত্তিকে ওয়াকফ দাবি করার অধিকার ওয়াকফ বোর্ডের আছে আর এ কারণেই সারা দেশে তাদের বর্তমান ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লক্ষ একর যা দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্পত্তির মালিক

একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব বিষয়টির সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন তিনি লিখেছেন, সাচার কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির সর্বমোট পরিমাণ ৬ লক্ষ একর হিন্দু এন্ডোমেন্টের জমির সাথে তুলনা করলে তামিল নাড়ু ও অন্ধ্র প্রদেশে এন্ডোমেন্টের জমির পরিমাণ যথাক্রমে ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার একর ও ৪ লক্ষ ৬৮ হাজার একর অর্থাৎ শুধু দুটি প্রদেশেই হিন্দু এন্ডোমেন্টের জমির পরিমাণ ৯ লক্ষ ৪০ হাজার একর অথচ গোটা ভারতে সর্বমোট ওয়াকফ সম্পত্তি মাত্র ৬ লক্ষ একর

বলাবাহুল্য, জমি ওয়াকফ করা কোনো গোপন বিষয় নয় তাছাড়া এর বিস্তারিত নীতিমালা ও প্রক্রিয়াও ওয়াকফ অ্যাক্ট-এ উল্লেখ আছে কোনো সম্পত্তির প্রকৃত মালিকই তার জমি ওয়াকফ করতে পারেন এবং সম্পত্তির মালিকানা লাভের বিস্তারিত কাগজপত্র/নথিপত্র ওয়াকফ বোর্ডে দাখিল করতে হয় এরপর ওয়াকফকৃত সম্পত্তির বিষয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা উত্থাপনের জন্য নোটিশ জারি করা হয় আর প্রশাসন একজন সার্ভে কমিশনার নিযুক্ত করে, যে জমির যাচাই-বাছাই ও ওয়াকফযোগ্য হওয়ার সত্যায়ন করে এরপর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে প্রকাশ করা হয়  তবে ১ বছরের মধ্যে ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালে এই নোটিফিকেশনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকে

ভারতে ৭ লক্ষ ৭০ হাজার গ্রাম আছে এসবের অর্ধেক গ্রামে কম-বেশি মুসলমান বাস করেন এমনটি ধরা হলেও এমন গ্রামের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার আর মুসলমানরা কোথাও বসবাস করলে সেখানে তাদের কমপক্ষে একটি কবরস্থান, ঈদগাহ ও নামায আদায়ের জন্য মসজিদ থাকে যদি কবরস্থান ও ঈদগাহের জন্য এক একর করে আর মসজিদের জন্য আধা একর জমি ধরা হয় অর্থাৎ প্রতিটি বসতিতে যদি গড়ে আড়াই একর জমি ধরা হয় তবুও এর পরিমাণ ৯ লক্ষ ৬২ হাজার ৫ শত একর হওয়া উচিত যেমনটি হিন্দুদের মন্দির, মঠ, শ্মশানঘাট ইত্যাদি হয়ে থাকে তো উপরের হিসাব অনুযায়ী গোটা ভারতে ৬ লক্ষ একর জমি অনেক বেশি পরিমাণ নয় আর এটি সরকারের দেওয়া দানও নয়; বরং এটি মুসলমানদের নিজস্ব সম্পত্তি

২. এমন অপপ্রচারও করা হচ্ছে যে, ওয়াকফ ট্রাইব্যুনাল ওয়াকফ সম্পত্তির একতরফা ফয়সালা করতে পারে এবং যে কোনো সম্পত্তি নিজের দখলে নিতে পারে অথচ বাস্তবতা হল, ওয়াকফ ট্রাইব্যুনাল একটি সিভিল আদালত জেলা জজ যার প্রধান হয়ে থাকেন ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রশাসন অন্যায় হস্তক্ষেপ করলে এ নিয়ে মামলা হয় উভয় পক্ষ নিজেদের দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করে আর উত্থাপিত দলীল-প্রমাণের আলোকেই ট্রাইব্যুনাল রায় প্রদান করে থাকে ট্রাইব্যুনালের রায়ে কোনো পক্ষ সন্তুষ্ট না হলে হাইকোর্টে আপিল করার সুযোগ থাকে হাইকোর্টের রায়ও সন্তোষজনক না হলে সুপ্রীম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করতে পারে

সুতরাং ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের যোগসাজশে ওয়াকফ বোর্ড কোনো সম্পত্তির ওয়াকফ ঘোষণা করে এমন দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচার

৩. সমালোচনাকারীরা বারবার এ কথা বলে যে, আগের ওয়াকফ আইনে `ওয়াকফ বোর্ড`-এর যে কোনো জমির ওপর ওয়াকফ দাবি করার সুযোগ আছে এটিও একটি ধোঁকা ও নির্জলা মিথ্যা

প্রশ্ন হল, ওয়াকফ বোর্ড কি দলীল-প্রমাণ ছাড়াই কোনো দাবি করতে পারে? আর ওয়াকফ বোর্ডের শুধু দাবির ভিত্তিতেই কি রায় দেওয়া হয়?

বাস্তবতা তো এই যে, একজন মানুষ তার কোন্ জমির বিষয়ে দাবি করতে পারবে আর কোন্ জমির দাবি করতে পারবে না এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই তবে কেউ কোনো দাবি করলে গ্রহণযোগ্য দলীল-প্রমাণ ছাড়া তা গৃহীত হয় না এমনকি মোকদ্দমা গৃহীত হওয়ার পরও দলীল-প্রমাণ দ্বারা কোনো দাবি প্রমাণিত না হলে সে অনুযায়ী রায় দেওয়া হয় না এবং তা কার্যকরও হয় না সুতরাং এটি একটি প্রোপাগান্ডাই বটে

আল্লাহ তা`আলার কাছে দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই জুলুমের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর তাওফীক দান করুন এবং ওয়াকফ সম্পত্তি হরণের উদ্দেশ্যে প্রণীত এই আইনটি খুব দ্রুত বিলুপ্তির ফয়সালা করুন আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন!

[ভাষান্তর : মাওলানা আবদুল্লাহ ফাহাদ]

 

 

advertisement