প্রসঙ্গ ফিলিস্তিন : জাতীয় কনফারেন্স পাকিস্তান
`মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর এখন জিহাদ ফরয হয়ে গিয়েছে`
[`মজলিসে ইত্তেহাদে উম্মত পাকিস্তান`-এর আয়োজনে গত ১১ শাওয়াল ১৪৪৬ হি./ ১০ এপ্রিল ২০২৫ বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদের পাক-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে `ফিলিস্তিন ও উম্মতে মুসলিমার করণীয়` শীর্ষক একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে শায়খুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম একটি সারগর্ভ হৃদয়স্পর্শী আলোচনা পেশ করেন।
আলকাউসারের পাঠকদের খেদমতে সে আলোচনার অনুবাদ পেশ করা হল।
অনুবাদ করেছেন : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর]
হযরত উলামায়ে কেরাম, জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং সম্মানিত সুধী!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আল্লাহ তাআলার ফযল ও করমে আমরা আজ পুনরায় ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে ইসলামাবাদে একত্রিত হয়েছি। আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে সকল দলমতের আলেমগণ, ধর্মীয় সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং সচেতন নাগরিক সমাজ আবার ইসলামাবাদে আপনাদের সম্মুখে ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন।
আজ আমি অত্যন্ত লজ্জিত– এক বছর হয়ে গেল, কনভেনশন সেন্টারে আমরা এমনই একটি সম্মেলন করেছিলাম। সেখানেও আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আমরা তখন ঘোষণা করেছিলাম– আমরা ফিলিস্তিনবাসীর সাথে রয়েছি। আমরা আরও বলেছিলাম– এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের সেই ঘোষণার দাবি তো এই ছিল যে, আজ আমরা এখানে একত্র হওয়ার পরিবর্তে গাজার ভূমিতে একত্র থাকতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা পুনরায় কেবল একটি কনফারেন্সের আয়োজন করতে পারছি। সেসকল মুজাহিদীনের সহযোগিতায়, বাইতুল মাকদিসের সুরক্ষায়, উম্মতে মুসলিমার হেফাজতে এবং ইসলামী গায়রতের স্বার্থে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি।
গত এক বছর পূর্বে যখন আমরা একত্র হয়েছিলাম, তখন কেবল জিহাদের সূচনা ছিল। মাঝে পরিস্থিতি তৈরি হল, মিত্রদের চক্করে পড়ে যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের চুক্তি হল। এ চুক্তির কারণে গাজার আকাশ থেকে অবিরাম গোলা বর্ষণের ধারা সাময়িকের জন্য স্থগিত হল। কিন্তু এরা এমন এক সম্প্রদায়, এদের না রয়েছে কোনো নীতি-নৈতিকতা আর না রয়েছে কোনো সভ্যতা ও শিষ্টাচার। প্রতিশ্রুতির কোনো তোয়াক্কাই নেই তাদের অনুভূতিতে। পুরো পৃথিবীর সামনে বিদেশীদের মধ্যস্থতায় কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তারা আবার শিশুদের ওপর, নারীদের ওপর, বৃদ্ধদের ওপর, মসজিদের ওপর, হাসপাতালের ওপর বোম্বিং করে সেগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে। আরে এরা তো (সেই খাসলতের লোক,) কুরআন যাদের ব্যাপারে বলেছে–
وَاِنْ نَّكَثُوْۤا اَیْمَانَهُمْ مِّنْۢ بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَ طَعَنُوْا فِیْ دِیْنِكُمْ فَقَاتِلُوْۤا اَىِٕمَّةَ الْكُفْرِ اِنَّهُمْ لَاۤ اَیْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ یَنْتَهُوْنَ.
তারা যদি চুক্তি সম্পন্ন করার পর নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দ্বীনের নিন্দা করে, তবে কুফরের এসকল নেতৃবর্গের সঙ্গে যুদ্ধ কর। বস্তুত এরা এমন লোক, যাদের প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই। –সূরা তাওবা (০৯) : ১২
এরা তো (সেই খাসলতের লোক,) যাদের ব্যাপারে কুরআন বলেছে, অঙ্গীকার করার পরও এরা যদি তা থেকে সরে আসে–
فَقَاتِلُوْۤا اَىِٕمَّةَ الْكُفْرِ.
(তখন সেই কুফরের নেতাদের বিরুদ্ধে কিতাল কর।)
সরাসরি কিতাল তথা যুদ্ধের কথা এসেছে–
فَقَاتِلُوْۤا اَىِٕمَّةَ الْكُفْرِ اِنَّهُمْ لَاۤ اَیْمَانَ لَهُمْ.
(...তবে কুফরের এসকল নেতৃবর্গের সঙ্গে যুদ্ধ কর। বস্তুত এরা এমন লোক, যাদের প্রতিশ্রুতির কোনো মূল্য নেই।)
কিন্তু আজকের অবস্থা হচ্ছে, মরক্কো থেকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত মুসলিম বিশ্ব এবং তাদের শাসকবর্গ এ চিত্রগুলো স্বচক্ষে দেখে যাচ্ছে। তামাশা দেখছে। গুটিকয়েক রাষ্ট্র নিন্দা-বিবৃতি দিয়েছে। নতুবা অধিকাংশের অবস্থা হচ্ছে, নিজেদের শিশুদের মরদেহ দেখার পরও, রক্তে রঞ্জিত ফুটেজ দেখার পরও তাদের পৌরুষ জাগে না। তাদের অনুভূতিকে সেগুলো স্পর্শ করে না। অধিকাংশের অবস্থা এমন হলেও আমাদের রাষ্ট্র তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। মৌখিকভাবে হলেও আমাদের দেশ নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু নিন্দাজ্ঞাপনই শেষ কথা নয়। কথা হচ্ছে, আজ গাজা দখল করার জন্য, নিছক দখল নয়, গাজাকে মুসলমানদের কবরস্থান বানানোর জন্য এবং মুসলিম জাতিকে জবাই করার লক্ষ্যে নির্বিচার গণহত্যা চালানো হচ্ছে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, গাজাকে আমরা ফিলিস্তিনীদের থেকে মুক্ত করব। সেসকল ফিলিস্তিনীদেরকে উৎখাত করব, যারা শত শত বছর ধরে এখানে আছেন। তাদের সরিয়ে গাজাকে বিনোদনকেন্দ্র বানাব। এ কথা বলতে তার এতটুকু লজ্জা হয়নি। এরা তো তারা, যারা নারী-শিশুর মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলে, মুসলমানদের প্রতি আপত্তির আঙুল তোলে। নারীদের শিক্ষার নামে যারা অশ্লীলতা ও অসভ্যতার বিস্তার ঘটায়; কিন্তু সেসকল নারীরা তাদের দৃষ্টিতে পড়ে না, যাদের দুধের শিশুগুলোকে কোল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যাদের চোখের সামনে সন্তানের রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। হাজার হাজার নিরস্ত্র নিরপরাধ মানুষকে বোমার নির্মম টার্গেটে পরিণত করা হয়েছে... তাদের বেলায় আর অধিকার থাকে না। মনে হচ্ছে, তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে মনে করছেন, `গোটা পৃথিবীজুড়ে তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।` ফলে কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, পানামা, গাজা, ফিলিস্তিনসহ সব জায়গায় নিজের কর্তৃত্বের কথা ভাবছেন।
জনাব ট্রাম্প! একদিন আপনাকেও মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আপনার কাছে কোনো প্রভুত্ব নেই। এটা আল্লাহর যমীন।
إِنَّ الْأَرْضَ لِلهِ يُورِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ.
বিশ্বাস রাখ, যমীন আল্লাহর। তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যাকে চান এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন। –সূরা আ`রাফ (০৭) : ১২৮
আজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান কোনো গোপন কিছু নয়। মুসলমানদের প্রতি আপনার ঘৃণা ক্ষোভ ও বিদ্বেষ রয়েছে। মুসলমানদের জান মাল ও ইজ্জত আব্রুকে কোনোভাবেই আপনি মূল্যায়ন করেন না। আপনার বিবেচনায় তার জীবনটাই গুরুত্বপূর্ণ, যে শ্বেত বর্ণধারী। যে কেবল ইউরোপ-আমেরিকার বাসিন্দা। যে শ্বেতাঙ্গ নয়, আপনার দৃষ্টিতে তার কোনো মূল্য নেই। তার সাথে আপনি ভৃত্যের ন্যায় আচরণ করেন। কিন্তু মনে রাখবেন, প্রকৃত শক্তিধর আল্লাহ। তিনি যখন তাঁর কোনো মনোনীত বান্দাকে শক্তি দান করেন, তখন বড় বড় ফেরাউনের তখত-তাউসও উল্টে যায়।
আজ আল্লাহর মেহেরবানীতে হামাসের জানবাজ মুজাহিদগণ যে বীরত্ব ও সাহসিকতার নাজরানা পেশ করছেন, তা পৃথিবীর সামনে ইতিহাস হয়ে থাকবে। নিশ্চয় পঞ্চান্ন হাজারের অধিক মুসলমান শহীদ হয়েছেন। নিঃসন্দেহে শহীদানের বিশাল কাফেলায় নারী-শিশু রয়েছেন অসংখ্য। কিন্তু হামাসের নেতৃবৃন্দকে দেখুন– তারা তাদের আদর্শ থেকে এক ইঞ্চিও পিছপা হতে প্রস্তুত নয়। তাদের চোখের সামনে মৃত্যু নৃত্য করছে। তবুও তারা বিন্দুমাত্র নড়ছেন না।
আপনাদের হয়তো জানা আছে, এবার ওরা (ইসরাইল) কীভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করল– চুক্তি হয়েছিল; পুরো পৃথিবীর সামনে চুক্তি হয়েছিল। অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি হবে বন্দি বিনিময়ের শর্তে। কীভাবে বন্দি বিনিময় হবে, সব চূড়ান্ত হয়েছে। এখন হঠাৎ করে বলে বসল, চুক্তির বাইরে আমাদের পঞ্চাশজন বন্দিকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় আমরা তোমাদের বাসিন্দাদের ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করব। ব্যস, যে কথা সে কাজ। চুক্তি ভঙ্গ করে গাজাকে তছনছ করে দিচ্ছে। বোমায় বোমায় শহরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর গোটা বিশ্ব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে মরোক্ক পর্যন্ত আমরা যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলি, আমরা বসে বসে এ তামাশা দেখছি।
আজকের সম্মেলনে শুরুতেই আমি লজ্জা প্রকাশ করেছি। এতদিন আমরা যতটুকু করেছি, তা কেবলই কিছু আর্থিক সহযোগিতা এবং বিভিন্ন জরুরি কিছু সামগ্রী সরবরাহ পর্যন্ত ক্ষান্ত ছিল। কিন্তু আমরা আমাদের সরকারের নিকট এখন পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে এ দাবি জানাইনি, আপনাদের ওপর এখন জিহাদ ফরয হয়ে গিয়েছে। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী সকল মুসলিম শাসকের ওপর জিহাদ ফরয হয়ে গিয়েছে। মৌখিক কিছু বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে আমরা আল্লাহর কাছে কোনো জবাব দিতে পারব না। এখন মৌখিকভাবে নিন্দা জানিয়ে আমরা দায়মুক্ত হতে পারব না। পর্যায়ক্রমে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর এ জিহাদ ফরয। চোখের সামনে পঞ্চান্ন হাজারের অধিক কালেমাওয়ালার রক্ত প্রবাহিত হওয়ার পরও যদি জিহাদ ফরয না হয়, তাহলে এসকল অস্ত্রভাণ্ডার কোন্ কাজের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে! তবে সামরিক বাহিনী কী কাজের জন্য, যদি মুসলিম ভাই-বোনদেরকে জুলুম থেকে মুক্ত করতে না পারে!!
এখানে একটি বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়, খুব জোরে শোরেই এ বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়ে থাকে। আর তা হচ্ছে– কুরআন বলে–
وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلَّا عَلَى قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ.
হাঁ, দ্বীনের কারণে তারা তোমাদের সাহায্য চাইলে (তাদেরকে) সাহায্য করা তোমাদের অবশ্য-কর্তব্য, অবশ্য (সে সাহায্য) যদি এমন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হয়, যাদের সঙ্গে তোমাদের কোনো চুক্তি আছে, (তবে নয়)। –সূরা আনফাল (০৮) : ৭২
যখন কেউ দ্বীনী কোনো কারণে তোমাদের নিকট সাহায্য চায়, তখন তাদের সাহায্য করা তোমাদের ওপর ফরয। কুরআন বলে–
فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ.
(তাদেরকে) সাহায্য করা তোমাদের অবশ্য-কর্তব্য।
কিন্তু কুরআন সাথে সাথে এ-ও বলে–
إِلَّا عَلَى قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ.
অবশ্য (সে সাহায্য) যদি এমন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হয়, যাদের সঙ্গে তোমাদের কোনো চুক্তি আছে, (তবে নয়)।
অর্থাৎ যদি এই সহযোগিতা এমন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যায়, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে, তখন মজলুম মুসলমানদের আর সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারবে না।
এটা একটি চক্রান্ত। খুব মনে রাখবেন, এই আয়াত মূলত ওই সময় নাযিল হয়েছিল, যখন নবী কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক মক্কার মুসলমানদের ওপর মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরত ফরয করে দিয়েছিলেন। তখন সেই হিজরত থেকে পিছিয়ে থাকার ব্যাপারে কুরআন কারীমে অনেক হুঁশিয়ারির কথা এসেছে। বলা হয়েছিল, যে হিজরত করছে না, সে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করছে। যে মুসলমানগণ এখনো মক্কায় অবস্থান করছেন, যার ফলে তাদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চলছে, তারা যদি হিজরত না করে, তবে তারা অপরাধী সাব্যস্ত হবে।
এই অপরাধী মুসলমানদের ব্যাপারে কুরআন বলছে, হে মুসলমানগণ, এ অপরাধীরা যদি তোমাদের নিকট সহযোগিতা চায়, তাহলে তোমাদের ওপর সহযোগিতা করা ফরয। অর্থাৎ তাদের ওপর যদি এমন কেউ জুলুম করে, যাদের সাথে তোমাদের কোনো সন্ধিচুক্তি নেই, তাহলে তোমাদের ওপর ওইসকল মুসলমানের সাহায্য করা ফরয। আর যদি তারা এমন কারও বিরুদ্ধে তোমাদের সাহায্য প্রার্থনা করে, যাদের সাথে তোমাদের কোনো পূর্বচুক্তি রয়েছে, তখন তাদের সাহায্য করা হবে না। কুরআন এই কথা বলে।
কেউ কেউ এই বিশেষ কথাকে অজুহাত বানিয়ে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, যেহেতু মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সন্ধিচুক্তি রয়েছে, তাই তারা মুসলমানদের ওপর জুলুম করলেও তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে মুসলমানদের সহযোগিতা করার প্রয়োজন নেই।
খুব মনে রাখবেন, এ কেবলই এক প্রতারণা। প্রথমত ইসরাইলের সাথে আমাদের কোনো প্রকারের কোনো চুক্তি নেই। পাকিস্তানসহ অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে ইসরাইলের কোনো চুক্তি নেই। আমরা তো ইসরাইলকে মানতেই অস্বীকৃতি জানিয়েছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ইসরাইলকে `অবৈধ সন্তান` আখ্যা দিয়েছেন। অদ্যাবধি আমরা সেই দর্শনই লালন করে আসছি। ইসরাইল যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের সংগ্রহে যত অস্ত্রই থাকুক না কেন, আমেরিকা তাদের যতই পৃষ্ঠপোষকতা করুক না কেন; আমাদের এ অবস্থান পরিবর্তন হবে না, হবে না, হবে না। কাজেই প্রথমত ইসরাইলের সাথে আমাদের কোনো চুক্তিই নেই। তাছাড়া সকল চুক্তি লঙ্ঘন করে তারা আমাদের শিশুদের হত্যা করছে। পরিকল্পিতভাবে প্রজন্ম নিধন করছে। গণহত্যা চালাচ্ছে। আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, আপনারা ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, অথচ তারা হাজার হাজার মানুষ হত্যার অপরাধী।
উত্তরে সে বলে, তারা সকল মুসলমান মেরে ফেললেও আমরা তাদের ত্যাগ করব না। সে প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দেয়।
ধিক্কার এ ঘোষণার প্রতি। অভিশাপ এই ঘোষণার ওপর!
তারা বলে, আমরা ইসরাইলের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারব না।
আমরা বলি, আমরা ফিলিস্তিনীদের সঙ্গ ছাড়ব না। আমাদের জান যায় যাক, ঘর পোড়ে পুড়ুক, তবুও আমরা ফিলিস্তিনী ভাইদের সঙ্গ ত্যাগ করব না। আর যখন ওদের সাথে আমাদের কোনো চুক্তি নেই, ফলে কুরআনের এ বিধানই আমাদের ওপর ফরয–
وَإِنِ اسْتَنْصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ.
[হাঁ, দ্বীনের কারণে তারা তোমাদের সাহায্য চাইলে (তাদেরকে) সাহায্য করা তোমাদের অবশ্য-কর্তব্য]
আর যদি জাতিসংঘের কথা বল, তাহলে কোন্ জাতিসংঘ? সেই জাতি সংঘের কথা বলছ, যা তোমাদের হাতের পুতুল মাত্র। সেই জাতিসংঘ, যা কেবল নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তোমরা প্রস্তুত করেছ। যে তোমাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করতে জানে না। এই জাতিসংঘের কথাই কি বলছ?!
এই জাতিসংঘই তো ১৯৬৭ সনে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ করল– ইসরাইল যে বাইতুল মাকদিস কব্জা করেছে আর সেখানে ইহুদী বসতি স্থাপন করতে যে কার্যক্রম চালাচ্ছে– সেগুলো অবৈধ। এই ঘোষণা তো তোমাদের তৈরি করা জাতিসংঘের প্রস্তাব– অর্থাৎ তারা দখলদার, অন্যায়কারী এবং বাইতুল মাকদিসে তাদের আধিপত্য বৈধ নয়।
কাজেই তাদের সাথে আমাদের কোনো চুক্তি আর অবশিষ্ট নেই। এক্ষেত্রে আমেরিকা সবকিছু দেখা সত্ত্বেও এবং আন্তর্জাতিক আদালতের রায় শোনার পরও, যারা বলে, আমরা সর্বদা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাব, তাদের যা হয় আমাদেরও তাই হবে। যারা এভাবে বলে তারা নিজেরাই চুক্তি ভঙ্গকারী। চুক্তি ভঙ্গ করার কারণে তারা নিজেরাই অপরাধী সাব্যস্ত হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে কুরআন কারীমের আয়াত–
إِلَّا عَلَى قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ.
[অবশ্য (সে সাহায্য) যদি এমন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হয়, যাদের সঙ্গে তোমাদের কোনো চুক্তি আছে, (তবে নয়)।]
–আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আচরণেও তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে; উচ্চারণেও তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। কাজেই এখন আর কোনো চুক্তি অবশিষ্ট নেই। তাই আজ মুসলিম শাসকবর্গের কর্তব্য হচ্ছে, সাধ্য অনুযায়ী ফিলিস্তিনীদের রক্ষা করা আর ইসরাইলকে মোকাবেলা করা।
আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন তো, ইসরাইল কীসের নাম? পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট্ট একটি উপত্যকা। যেন বত্রিশ দাঁতের মাঝে একটি জিভ। চতুর্দিকে মুসলিম রাষ্ট্র। কিন্তু আমেরিকার আর্থিক ও সামরিক সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় তারা সকল মুসলমানের ওপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। এছাড়া আর কী বলবেন, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গিয়েছেন–
এমন এক যামানা আসবে, যখন বিভিন্ন সম্প্রদায় পরস্পর ডাকাডাকি করবে আর তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, যেমন ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্যসম্ভারের ওপর?
সাহাবায়ে কেরাম রা. জিজ্ঞাসা করলেন, সেদিন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকব? (যার কারণে জিহাদের শক্তি পাব না!)
নবীজী বললেন, না। তোমরা সেদিন সংখ্যায় অনেক হবে। কিন্তু তোমাদের অবস্থা হবে–
غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ.
বানে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মতো।
অর্থাৎ মুসলিমরা সংখ্যায় ভারি হওয়া সত্ত্বেও স্রোতের গতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখবে না।
সাহাবায়ে কেরাম রা. জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কীভাবে সম্ভব? সাহাবায়ে কেরাম ভাবতে পারছিলেন না, কেউ মুসলিম দাবি করবে, কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুুল্লাহ মানবে, তবুও জিহাদ করবে না! জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কেন হবে? কীভাবে এটা সম্ভব?
নবীজী বললেন–
حُبُّ الدُّنْيَا، وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ.
দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুর ভয়।
অর্থাৎ দুটি জিনিস যখন চলে আসবে– দুনিয়ার ভালবাসা আর মৃত্যুর ভয়, তখন মুসলমান জিহাদ ছেড়ে দেবে। জিহাদ ছেড়ে দেওয়ার ফলে তাদের সংখ্যা যত অধিকই হোক না কেন, স্রোতে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মতোই হবে তাদের অবস্থা। (দ্রষ্টব্য : সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২৯৭)
আজ এ দৃশ্যই আমরা স্বচক্ষে দেখছি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন, তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।
ভাইয়েরা আমার! আমি কেবল হতাশার কথা বলছি না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে হতাশ হওয়ার শিক্ষা দেননি। নবীজী আমাদের আশান্বিত করেছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছেন। এ প্রতিশ্রুতি নবীজীর প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে এমন একটি সময় আসবে, যখন পূর্ববর্তী খাইরুল কুরূনের অবস্থা বিরাজ করবে।
مَثَلُ أُمَّتِي مَثَلُ الْمَطَرِ.
আমার উম্মতের উদাহরণ বৃষ্টির ন্যায়।
لَا يُدْرى أَوَّلُه خَيْرٌ أَمْ آخِرُه.
বলা যায় না, তার প্রথম ভাগ বেশি কল্যাণকর, নাকি শেষ ভাগ। (দ্রষ্টব্য : মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৩২৭)
সে সময় অবশ্যই অসবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওয়াদা। সে সময় অবশ্যই ফিরে আসবে, যখন খাইরুল কুরূনের আবহ বিরাজ করবে। তখন গোটা বিশ্বে কেবল ইসলামের বিজয় কেতন উড়বে।
هُوَ الَّذِیْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰی وَ دِیْنِ الْحَقِّ لِیُظْهِرَهٗ عَلَی الدِّیْنِ كُلِّهٖ وَ لَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ.
তিনিই তো নিজ রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, তাকে সকল দ্বীনের ওপর বিজয়ী করার জন্য, তা মুশরিকদের জন্য যতই অপ্রীতিকর হোক। –সূরা ছফ (৬১) : ০৯
যে যাই বলুক, যার কাছে যতই অপ্রীতিকর মনে হোক, সে সময় অত্যাসন্ন। আমরা সে সময়ের সন্ধিক্ষণে রয়েছি। নিঃসন্দেহে আমরা ঘনঘটা অন্ধকার রাত অতিক্রম করছি। শুনে রাখুন, আলোকোজ্জ্বল প্রভাত অত্যাসন্ন। কিন্তু অন্ধকার রজনিতে যে বাতি জ্বালবে, নিজের সাধ্য অনুযায়ী আলো জ্বালতে এগিয়ে আসবে, সে ওই কাফেলায় শামিল হয়ে যাবে, যারা শেষ যামানায় এসেও খাইরুল কুরূনের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেবে।
যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে আরোপিত যিম্মাদারী পুরা করতে থাকি, আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাতি, ক্ষুদ্রভাবেই আমরা আলো জ্বালব। এভাবেই একসময় প্রভাত প্রস্ফুটিত হবে। আমরা বলতে পারব–
ہمیں خوشی ہے کہ ہم ہیں چراغ آخر شب
ہمارے بعد اندھیرا نہیں اجالا ہے
আমরা আনন্দিত, আমরা ছিলাম শেষ রজনির বাতি। আমাদের পরে নেই তো আঁধার, কেবলই প্রভাত-রশ্মি।
কাজেই নিজেকে দুর্বল ভাববেন না–
وَ لَا تَهِنُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَنْتُمُ الْاَعْلَوْنَ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ.
অর্থাৎ যদি সত্যিই তুমি মুমিন হও, তবে তোমার শির উন্নত হবেই। [দ্র. সূরা আলে ইমরান (০৩) : ১৩৯]
আজকের ঘোষণাপত্রে হযরত মাওলানা মুফতী মুনীবুর রহমান ছাহেব যা পাঠ করে শোনালেন, তাতে সুস্পষ্ট কর্মনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম শাসকদের বলা হয়েছে, আজ আপনার কাঁধে এই দায়িত্ব চলে এসেছে। আগে বোঝেন বা না বোঝেন, এখন অবশ্যই বোধোদয় ঘটতে হবে। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। রাষ্ট্রের কাছে কার্যকরী অসংখ্য পথ রয়েছে। আমি বলছি না, এখনই আপনারা বোমা হামলা শুরু করে দিন। কিন্তু একথা হৃদয়ে বদ্ধমূল থাকতে হবে, জিহাদ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আমাদের সামরিক বাহিনীর Motto (মূলমন্ত্র) মূলত তিনটি– ঈমান, তাকওয়া ও জিহাদ। যখন আপনার মূল চালিকাশক্তিতেই জিহাদ রয়েছে, তখন আপনার কর্তব্য হচ্ছে– যারা জিহাদের ফতোয়া দিচ্ছেন, তাদের জিজ্ঞাসা করুন, এখন জিহাদের সময় এসেছে কি না। যদি সময় হয়ে থাকে আর আপনার বিবেক তাতে জাগ্রত হয়, তখন আপনার নিকট জিহাদে অংশগ্রহণের অজস্র পথ রয়েছে। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনারা সে পথ অবলম্বন করেছেন। বসনিয়ায় করেছেন, আরও অন্যান্য ক্ষেত্রে করেছেন। আপনাদের নিকট এখনো পথ আছে। আমার চেয়ে আপনারা তা ভালো জানেন– কী কী পথ অবলম্বন করা যেতে পারে। সেগুলোকে ব্যবহার করাই হচ্ছে আপনাদের দায়িত্ব। গোটা জাতি আজ আপনাদের দিকে চেয়ে আছে। জাতি দেখতে চায়– আপনারা কীভাবে সে দায়িত্ব আঞ্জাম দেন।
বিশ্বের অপরাপর মুসলিম শাসকদেরকে আজকের এই সম্মেলন বার্তা দিচ্ছে– আপনারাও নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ হোন। সেই মৃত্যুপথের শিশুদের ব্যাপারে শঙ্কিত হোন। মজলুম মায়ের আহাজারির ব্যাপারে শঙ্কিত হোন। অসহায় নারীর আর্তচিৎকার সম্পর্কে সজাগ হোন। শঙ্কিত হোন ওই বার্তার ব্যাপারে, একজন চিকিৎসক যা পাঠিয়েছেন; তিনি বলেছেন–
`গাজা তার শেষ নিঃশ্বাসটুকু ত্যাগ করতে যাচ্ছে। আমরা তোমাদের খুব অপেক্ষা করছিলাম। তোমরা আসোনি। আল্লাহ হাফেয।`
এই বার্তা একজন ডাক্তার পাঠিয়েছেন। আমার কাছে আছে।
আর কত আমরা আত্মমর্যাদাহীন জীবন অতিবাহিত করব। আল্লাহ আমাদের দ্বীনী-ঈমানী গায়রত নসীব করুন। আজ যে ঘোষণা আসল, গোটা জাতির প্রতি নিবেদন– এ চেতনা স্তিমিত হতে দেবেন না। এটাকে জিইয়ে রাখতে হবে। আর তা জিইয়ে রাখতে ইসরাইলী পণ্য পূর্ণ বয়কট করুন। শুধু তাই নয়, তাদের আর্থিক সহযোগিতাকারী কোম্পানিগুলোও বয়কট করুন। যেসকল দোকানে এদের পণ্য পাওয়া যায়, সেগুলোও বয়কট করুন।
খুব মনে রাখবেন, ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ দ্বীন। উত্তেজিত হয়ে জ্বালাও পোড়াও করার নাম ইসলাম নয়। নিজের আবেগে কাউকে ক্ষতি করার কথা ইসলাম বলে না। কাজেই ভাঙচুর করা, কারও জান-মালের ক্ষতি করা শরীয়তে হারাম। অতএব বিক্ষোভ করুন, বয়কট করুন; কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে করুন। তাতে কোনো বিশৃঙ্খলা চলবে না। আর আমি যে বলছি, প্রশাসনকে জাগ্রত করুন। তাদের দায়িত্ব পালনে তাদেরকে সতর্ক করুন; এটাও অহিংসভাবে হওয়া চাই। যারা এ অজুহাতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে অস্ত্র হাতে তুলে নেন, এটা কোনো গ্রহণযোগ্য নীতি হতে পারে না। আমরা বারবার এ ব্যাপারে বলে এসেছি। যাই করুন শান্তিপূর্ণভাবে করুন। নতুবা গাজাতে তো যা হওয়ার হচ্ছেই, পুরো মুসলিম বিশ্বে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে মুসলমান ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। কাজেই এসকল হাঙ্গামা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভাইয়েরা আমার! আমার আলোচনা হয়তো কিছুটা দীর্ঘ হয়ে গেল। কিন্তু কথা হল, মনটা অস্থির হয়ে আছে; ছটফট করছে। আমি তো এ ব্যাপারে কিছু খোঁজখবর রাখি, ফলে আমার অস্থির হওয়াটা...; কিন্তু নিতান্ত সাধারণ মানুষগুলোও আমার কাছে এসে জানাচ্ছে– `হযরত! রাতে আর ঘুম আসে না, যখন গাজার চিত্র দেখি।`
সাধারণ মুমিনের দিলেরও এই আকুতি...! এই অনুভূতি...!! তাই এমন একটি সম্মেলনের আয়োজন অপরিহার্য মনে হয়েছে। সাথে সাথে ঘোষণাপত্রটিও আসা দরকার ছিল। (ঘোষণাপত্রটি `জাতীয় কনফারেন্স পাকিস্তান : ফিলিস্তিন ও মুসলিম উম্মাহর করণীয়...` শিরোনামে ৩৬ পৃষ্ঠায় এসেছে, আগ্রহী পাঠক তা দেখে নিতে পারেন।)
আশা করি, ইনশাআল্লাহ, এ আওয়াজ বৃথা যাবে না। এ ধ্বনি ছড়িয়ে পড়বে। পুরা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। ঘোষণাটি আরবী, উর্দু, ইংরেজিসহ বহু ভাষায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। আপনারা এর প্রচার প্রচারণায় আমাদের সঙ্গে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.