আল্লাহর স্মরণ : ব্যথিত বিপর্যস্ত প্রাণের উপশম
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন মাজীদে বলছেন–
فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ وَاشۡکُرُوۡا لِیۡ وَلَا تَکۡفُرُوۡنِ٠
তোমরা আমাকে স্মরণ করো; আমিও তোমাদের স্মরণ করব। –সূরা বাকারা (০২) : ১৫২
এই মহাবিশ্বের মালিক আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে লক্ষ করে বলছেন– (তরজমা) `তোমরা আমাকে স্মরণ করো; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।`
এ কথার গভীরতা বোঝা উচিত। আল্লাহ তাআলা, যিনি এই সারা কায়েনাত, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, এর মালিক, এর পরিচালক ও প্রতিপালক। এই মহাবিশ্ব কত বড়! তা তো আমাদের পক্ষে অনুমান করাই সম্ভব না। এই মহাজগতের যিনি মালিক, সেই মহান আল্লাহ কত বড়! তাঁর শক্তি কত বড়! তিনি আমাদেরকে বলছেন, `তোমরা আমাকে স্মরণ করো; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।`
দুনিয়ার বিচারে ক্ষমতাধর কারও পিয়ন যদি কাউকে ফোন করে বলে, `আপনাকে অমুক নেতা স্মরণ করেছেন`; তাহলে যাকে ফোন করা হয়, তার বুকটা গর্বে-আনন্দে ফুলে কী অবস্থা হয়ে যায়!
আর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আমাদের বলছেন–
فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ ٠
তোমরা আমাকে স্মরণ করো।
اَذۡکُرۡکُمۡ٠
আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।
আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা আল্লাহর কাছে কতটা মর্যাদার! ক্ষুদ্র এক বান্দা যদি আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ এর কতটা মূল্য দেন! মহান আল্লাহর এক নাম হল–
الشَّكُوْر [গুণগ্রাহী]
তিনি মানুষের ছোট্ট ছোট্ট কাজেরও মূল্য দিয়ে থাকেন। এতই মূল্য দেন যে, বান্দা যদি আল্লাহকে স্মরণ করে একবার বলে, আল্লাহ! তাহলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব আসে–
لَبَّيْكَ يَا عَبْدِي!
ও বান্দা আমি হাজির। কী চাও?
এই মহাবিশ্বে যত মানুষ আছে, প্রত্যেকে যদি হাজার-লক্ষবার স্মরণ করে, আল্লাহ তাআলাও ততবার তাকে স্মরণ করবেন। সবাইকে স্মরণ করবেন এবং কে কে স্মরণ করেছে তা জানতে আল্লাহর কোনো বেগ পেতে হয় না।
সুতরাং যখন যে আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ্ও তাকে স্মরণ করেন।
হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বান্দা সম্পর্কে বলেন–
وَأَنَا مَعَه إِذَا ذَكَرَنِي٠
যখন সে আমাকে স্মরণ করে, আমি তো তখন তার সঙ্গেই থাকি।
إِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِه، ذَكَرْتُه فِي نَفْسِي٠
বান্দা যদি মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও মনে মনে তাকে স্মরণ করি।
وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَإٍ، ذَكَرْتُه فِي مَلَإٍ هُمْ خَيْرٌ مِنْهُمْ٠
যদি সে লোক সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, আমিও এমন সমাবেশে তাকে স্মরণ করি, যা তার সমাবেশের চেয়ে উৎকৃষ্ট। –সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৭৫
বলা বাহুল্য, আল্লাহ যাকে স্মরণ করবেন, তার কোনো ক্ষেত্রেই কোনো পেরেশানী থাকতে পারে না। আল্লাহ যাকে স্মরণে রাখবেন, তাকে তিনি পেরেশানীতে ফেলে রাখবেন– তা কিছুতেই হতে পারে না। আল্লাহ নিজেই তার সব পেরেশানী দূর করে দেবেন। তার মন-মানস শান্তি-প্রশান্তিতে ভরে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন–
اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ٠
স্মরণ রেখ, কেবল আল্লাহর যিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। –সূরা রা`দ (১৩) : ২৮
আমি আল্লাহ তাআলাকে ডাকলে আমার মতো ক্ষুদ্র বান্দাকেও যদি আল্লাহ স্মরণ করেন, তাহলে আমার আর কীসের দুঃখ থাকতে পারে! কীসের কষ্ট থাকতে পারে! আমার আর কী পেরেশানী থাকতে পারে!
যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী কাউকে স্মরণ করে, তখন সে মনে করে, আমার আর কোনো ভয় নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাকে আর কতটা রক্ষা করতে পারে! যার নিজেকে রক্ষার ক্ষমতাই তার নিজের নেই, সে অন্যকে কতটা রক্ষা করতে পারে!
আল্লাহ যদি আমাকে স্মরণ করেন, তাহলে আমার আর কী পেরেশানী থাকতে পারে!
اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ٠
শোন হে! যদি কেউ আল্লাহকে যিকির করে, সে জেনে রাখুক, আল্লাহর যিকির দ্বারা অন্তর প্রশান্ত হয়, মন শান্তি পায়। মনের সব দুঃখ-কষ্ট ঘুচে যায়।
সব পেরেশানীর ওষুধ, সব দুঃখ-কষ্টের ওষুধ– আল্লাহকে স্মরণ করা। বিপদে পড়ে, কষ্টে পড়ে যদি আল্লাহকে স্মরণ করা যায়– আল্লাহ!
رَبِّ اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَاَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ٠
আল্লাহ! আমাকে তো কষ্ট স্পর্শ করেছে, আমি কষ্টে পড়ে গেছি।
হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম এটা বলেছিলেন। যে কোনো ব্যক্তিই যদি কোনো কষ্টে পড়ে যায়, আর সে ডাকে– `আল্লাহ!` সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাড়া দিয়ে দেন। আল্লাহ বলেন–
اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ فَلْیَسْتَجِیْبُوْا لِیْ وَ لْیُؤْمِنُوْا بِیْ لَعَلَّهُمْ یَرْشُدُوْنَ٠
কেউ যখন আমাকে ডাকে, আমি তার ডাক শুনি, সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়। –সূরা বাকারা (০২) : ১৮৬
কাজেই কোনো দুঃখ-কষ্টে কেউ যদি আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ অবশ্যই সাড়া দেন আর তার মনের দুঃখ-কষ্ট সব দূর করে দেন।
আল্লাহ কিন্তু এটা বলেননি যে, আল্লাহর স্মরণে শরীর শান্তি পায়। শরীরের কষ্ট দূর হয়; বরং বলেছেন, অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।
শরীরের সম্পর্ক তো এই দৃশ্যমান প্রাকৃতিক জগতের সঙ্গে। এ প্রাকৃতিক জগতে পাপী-পুণ্যবান মানুষ-পশুপাখি সবারই দুঃখ-কষ্ট দেখা দেয়।
এ প্রাকৃতিক গতিবিধির প্রভাব সবকিছুর ওপরই পড়ে। তাই বিড়ালেরও অসুখ হয়। যেমন মানুষের হয়।
কেউ কেউ অনেক সময় বলে, এ অবোধ পশু কী পাপ করেছে! তার এই কষ্ট কেন?! এই শাস্তি কেন? এটা পাপের বিষয় নয়। আল্লাহ তাআলা জগৎকে সৃষ্টিই করেছেন এমনভাবে। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই সবাইকেই প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলতে হয়। সেই নিয়মের অধীনে মানুষের যেমন দুঃখ-কষ্ট হয়, অসুখ-ব্যাধি হয়, তেমনি পশুপাখিরও রোগব্যাধি হয়।
শরীরের কষ্ট এক জিনিস আর মনের প্রশান্তি আরেক জিনিস। যদি আল্লাহকে বান্দা স্মরণ করে, তাহলে শরীরে জ্বর আসতে পারে বটে, কিন্তু সেই জ্বরের কারণে মনের মধ্যে পেরেশানী আসবে না। সে এটা বলবে না, এমন কী পাপ করলাম যে, আমার জ্বর হল! বরং বলবে, আল্লাহ! এ জ্বর তুমিই দিয়েছ, ভালো তুমিই করতে পারো। আল্লাহ এই জ্বরের মধ্যে যদি কোনো খায়ের থাকে, আমি তাতে খুশি। তবে আল্লাহ! আমি তো দুর্বল বান্দা। সইতে পারি না। আমার শরীর দুর্বল, আল্লাহ তুমিই ভালো করতে পারো, আমাকে তুমি সুস্থ করে দাও।
সে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তাআলার অভিমুখী হবে। তার মন অশান্ত অস্থির হবে না।
মানুষের পেরেশানী নানা রকম; রোগব্যাধির পেরেশানী, আয়-রোজগারের পেরেশানী, মামলার পেরেশানী, মানুষের দুর্ব্যবহারের পেরেশানী, সন্তান অবাধ্য হলে সেই পেরেশানী। আল্লাহ অভিমুখী হলে, আল্লাহর যিকির করলে এ সকল পেরেশানীই দূর হয়ে যাবে।
আবার অনেক সময় পেরেশানী দেখা দেয় আকীদা-বিশ্বাসেও। আল্লাহ-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস টলে যায়। ঈমান যদি মজবুত না হয়, তুচ্ছ তুচ্ছ কারণে বিশ্বাস-ঈমান টলে যায়।
আল্লাহর যিকিরে যেমন মন স্বস্তি পায়, মন স্থির হয়, তেমনি ঈমানও মজবুত হয়। যে অন্তরে আল্লাহর যিকির নেই, সে অন্তর পেরেশান হয়, অস্থির হয়। আবার অন্তরে আল্লাহর যিকির না থাকলে ঈমানও দুর্বল হয়ে যায়। শয়তান সহজেই ওয়াসওয়াসা দিতে পারে।
কুরআন তিলাওয়াতও যিকির; বরং সবচেয়ে বড় যিকির। যে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করে না। `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ`-এর যিকির করে না, `আল্লাহ` `আল্লাহ`-এর যিকির করে না, `সুবহানাল্লাহ` `আলহামদু লিল্লাহ` পড়ে না, এর যিকির করে না, তার মন তো পেরেশান হবেই।
যে ব্যক্তি নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করে, তা যতটুকুই হোক, দুই পৃষ্ঠা হোক, এক পৃষ্ঠা হোক; কিন্তু ৩০ দিনের কোনোদিন বাদ যায় না। মোটকথা আপন সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত যে কুরআন তিলাওয়াত করে, সে কখনো ঈমানের দুর্বলতার শিকার হবে না।
আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন–
اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ٠
আল্লাহর যিকিরে মন মুতমাইন হয়ে যায়; শান্ত ও স্থির হয়ে যায়। কোনো সন্দেহ, কোনো খটকা মনে ঢুকতে পারে না। কুরআন তিলাওয়াতের দ্বারা অশান্ত-অস্থির মনে শান্তি ও স্থিরতা এসে যায়। মন প্রশান্ত হয়ে যায়। কোনো নাস্তিক্যবাদী কথাবার্তায় মন টলে যায় না। শয়তান ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে বিপথগামী করতে পারে না। এটা মহৌষধ। কুরআন মাজীদ সম্পর্কে বলা হয়েছে–
شِفَآءٌ لِّمَا فِی الصُّدُوۡرِ٠
অন্তরের রোগ-ব্যাধির উপশম। –সূরা ইউনুস (১০) : ৫৭
কুরআন হল অন্তরের শিফা। এটা আরোগ্য, অন্তরের নিরাময়। মনে যে-কোনো সন্দেহ দেখা দেবে, কুরআন দ্বারা তার নিরাময় হয়ে যাবে, খটকা দূর হয়ে যাবে।
কাজেই কুরআনের প্রতি উদাসীন থাকা কোনো মুমিনের জন্য কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়। এর পরিণাম বড় ভয়াবহ। সে বেঈমানীর শিকার হয়ে যেতে পারে। আর তার পরকালও হতে পারে ভয়ানক। কারণ কুরআন ত্যাগকারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সামনে ফরিয়াদী হবেন। আল্লাহ বলেন–
وَقَالَ الرَّسُوۡلُ یٰرَبِّ اِنَّ قَوۡمِی اتَّخَذُوۡا ہٰذَا الۡقُرۡاٰنَ مَہۡجُوۡرًا٠
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামতের দিন বলবেন, আল্লাহ! আমার কওম কুরআনকে পরিত্যক্ত করে রেখেছিল। –সূরা ফুরকান (২৫) : ৩০
সুতরাং আমরা আল্লাহর সব রকম যিকিরে সব সময় রত থাকব ইনশাআল্লাহ।
এক যিকির তো হল, `আল্লাহ` `আল্লাহ` `সুবহানাল্লাহ` `আলহামদু লিল্লাহ` `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু` `আল্লাহু আকবার` পড়া। এমন যিকিরও করব।
আবার মসনূন দুআ পড়ব। এটাও গুরুত্বপূর্ণ যিকির। যে কোনো কাজের আগে-পরে যে দুআগুলো আছে, ঘুমের আগের দুআ, পরের দুআ, ঘরে প্রবেশের দুআ, বের হওয়ার দুআ, প্রত্যেক কাজের আগে-পরের দুআ, যেমন– `বিসমিল্লাহ` বলে খাওয়া, শেষ করে `আলহামদু লিল্লাহ` পড়া– এই দুআগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ যিকির। তাই সব কাজের আগে-পরের দুআগুলোও আমরা পড়ব।
এছাড়া যত ইবাদত-বন্দেগি আছে– নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ও কুরআন তিলাওয়াত– এ সবই আল্লাহর যিকির।
নামায সম্পর্কে এসেছে–
اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْہٰي عَنِ الْفَحْشَآءِ وَالْمُنْکَرِ وَلَذِکْرُ اللّٰہِ اَکْبَرُ٠
নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর যিকিরই তো সর্বাপেক্ষা বড় জিনিস। –সূরা আনকাবূত (২৯) : ৪৫
এ নামাযের সারবস্তু হল, আল্লাহর যিকির। শুরুই হয় `আল্লাহু আকবার` বলে। এরপর এর ভেতরে যা আছে, সবই যিকির। প্রথমে সানা, সূরা ফাতেহা, এরপর তিলাওয়াত, রুকু-সিজদা সব আল্লাহর যিকির।
আল্লাহর যিকির যেমন মুখে হয়, ঠিক তেমনি কাজের দ্বারাও হয়। এ রুকু করাটা, সিজদা করাটা, এর ভেতরে যদি তাসবীহ-দুআ না-ও পড়ে, তাও এটা আল্লাহর যিকির।
আল্লাহর হুকুম মানাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ যিকির। সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ. বলেছেন, `যে-ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে, কিন্তু আল্লাহর হুকুম মানে না, সে সত্যিকারের যাকির নয়। সত্যিকার যিকিরওয়ালা নয়। তা সে যতই তাসবীহ পাঠ করুক না কেন।` [দ্র. তাফসীরে কুরতুবী, সূরা বাকারার ১৫২নং আয়াতের তাফসীর]
অতএব আল্লাহর হুকুম মানাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যিকির। এমনিভাবে কুরআন তিলাওয়াত, এ তো খুবই মহান যিকির। সব রকমের যিকির আমরা করব।
দুনিয়া ফিতনা-ফ্যাসাদে ভরে গেছে। দ্বীনের নামে ইসলামের নামে নানান লোক চারদিক থেকে ডাকে। ওই তথাকথিত আহলে কুরআন, যে হাদীস মানে না, সেও ইসলামের নামে তাদের দিকে ডাকে। ওই বেঈমান কাদিয়ানী নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষনবী বলে স্বীকার করে না, সে-ও ইসলামের নামে তার দিকে ডাকে। এমনকি খ্রিস্টান মিশনারি, তারাও ইসলামের নামে তাদের দিকে ডাকে।
সব ভণ্ড-বিদআতী-বেঈমান তারা ইসলামের নাম নিয়ে নিয়ে মানুষকে ডাকছে। কেউ কেউ পেরেশান– সবাই ইসলামের কথা বলে, কার কথা শুনব! এই পেরেশানী দেখা দেবে না। হাজারজন ডাকুক, তবুও পেরেশানী দেখা দেবে না। যে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে হেফাযত করবেন।
আল্লাহ বলছেন, যদি এ হাজারো রকমের ফিতনা তোমাকে পেরেশান করে, তাহলে আমার যিকির করো, আমি তোমাকে সমস্ত ফিতনা থেকে তুলে আনব। আমি তোমার হেফাযত করব। আমার বান্দা পেরেশান, সবাই তাকে ডাকে, সে কোন্ দিকে যাবে? কী করবে?
আল্লাহ বলছেন–
فَاذْکُرُوْنِيْۤ ٠
আমাকে স্মরণ করো, ডাকো।
اَذْکُرْکُمْ٠
আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব, হাজারো রকমের ফিতনা থেকে হেফাযত করব।
কাজেই আমরা সংকল্প করে নিই, আমি আল্লাহর যিকিরের মধ্যেই থাকব। নিজেকে আল্লাহর বানিয়ে নেব।
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُکِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰہِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ٠
বলে দাও, নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার ইবাদত ও আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। –সূরা আনআম (০৬) : ১৬২
আল্লাহর যিকির করে করে আমি নিজেকে আল্লাহর বানিয়ে নেব। তাহলে আল্লাহ সবক্ষেত্রে আমাকে হেফাযত করবেন। তাঁর কুদরতি হাত দ্বারা আমাকে ধরে রাখবেন। ফলে আমি বিপথগামী হব না ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকেই তাঁর যিকিরের মধ্যে থাকার তাওফীক দান করুন– আমীন।