মাজালিসে ইতিকাফ
দুআ-মুনাজাত : কিছু উসূল-আদব
হামদ ও সালাতের পর...
দুআ মুমিনের সবসময়ের আমল। রমযানে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَاِنِّيْ قَرِيْبٌ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَ لْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ.
(হে নবী!) আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন (আপনি তাদের বলুন,) আমি এত নিকটবর্তী যে, কেউ যখন আমাকে ডাকে, আমি তার ডাক শুনি। সুতরাং তারাও আমার কথা অন্তর দিয়ে গ্রহণ করুক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৬
দুআর রয়েছে কিছু আদব এবং দুআ কবুলের আছে কিছু শর্ত। আমাদেরকে সে আদবগুলো রক্ষা করতে হবে এবং শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।
প্রসিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হল, দুআকারীর পানাহার হালাল হওয়া। অন্যভাবে বলা যায়, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান হালাল হওয়া।
আরেকটি শর্ত, সমাজে ‘আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী আনিল মুনকার’-এর চর্চা অব্যাহত থাকা। সমাজে ব্যাপকভাবে ‘আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী আনিল মুনকার’ বন্ধ হয়ে গেলে তখনো দুআ কবুল হয় না।
দুআর কিছু আদব
দুআর একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হল, দিল খুলে দুআ করা। দুআর মধ্যে আন্তরিকতা থাকা। দিল আল্লাহর দরবারে হাজির থাকা।
যে বিষয়ে আমি দুআ করছি এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, সেই বিষয়ের প্রতিও আন্তরিক থাকা। কারণ গাফলতের সাথে কৃত দুআ কবুল হয় না।
আমি যা চাচ্ছি, তার প্রতি যদি আমার আগ্রহ, মহব্বত ও আন্তরিকতা না থাকে, তাহলে দুআ কবুল হবে কীভাবে? মুখে আমি বলছি- আল্লাহ, আপনি আমাকে গোনাহ থেকে বাঁচান, কিন্তু নিজে গোনাহ থেকে বাঁচতে চাই না, তাহলে তো হবে না।
গাফলতের সাথে যে দুআ করা হয়, সেই দুআ কবুল হওয়ার ওয়াদা নেই। আল্লাহ তাআলা চাইলে কবুল করতে পারেন, কিন্তু ওয়াদা নেই।
দুআতে আমি যে জিনিস চাচ্ছি, বাস্তবেই যদি তার প্রতি আমি আগ্রহী হই, তাহলে আমার দুআ আর আমল কাছাকাছি হবে। দুআ একদিকে আর আমল আরেক দিকে- তার মানে হল আমি দিল খুলে চাচ্ছি না। দুআ ও আমল একমুখী হতে হয়।
হাদীসের কিতাব ‘মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা’য় একটা শিরোনাম আছে-
الدُّعَاءُ بِلَا نِيَّةٍ ولا عملٍ
‘নিয়ত ও আমলবিহীন দুআ।’
দুআ করছি, আল্লাহ আমাকে জামাতের সাথে নামায আদায়ের তাওফীক দান করুন; কিন্তু নামাযের সময় হলে আমার জামাতে নামায পড়ার চিন্তা থাকে না; নিজের ধান্ধায় ব্যস্ত থাকি। তাহলে এটা হল না। হাঁ, কিছু বেশকম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়তো হয়ে যেতে পারে, কিন্তু দুইটা একেবারে দুইদিকেÑ এমনটা হতে পারে না।
বলা যায়, দুআর শর্তই হল, দিল থেকে হওয়া। যা চাচ্ছি তার প্রতি আমার দিলে আগ্রহ, মহব্বত ও ভালবাসা থাকা। সত্যিই আমি আল্লাহর নিকট চাই, এমন একটা ভাব আমার কাজ-কর্ম ও আচার-আচরণে প্রকাশ পাওয়া।
দুআকে ব্যাপক করার চেষ্টা করা
আজ মূলত এই কথাগুলো বলার ইচ্ছা ছিল না। তবে এগুলোও জরুরি কথা। আজকে যা বলতে চাচ্ছি তা হল, দুআকে ব্যাপক করার চেষ্টা করা। দুআ ব্যাপক করার বিভিন্ন দিক রয়েছে।
একটি দিক
একটি দিক হল, সকল মুমিন মুসলিম নর-নারীর জন্য দুআ করা। পৃথিবীর যে গোত্রেরই হোক, যে ভাষারই হোক, যে অঞ্চলেরই হোক, কোনো মুমিন-মুসলিমই যেন আমার দুআ থেকে বাদ না যায়। হাঁ, অমুসলিমদের জন্যও তাদের হেদায়েতের দুআ হতে পারে। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত দান করেন, ঈমান নসীব করেন, অন্যের ওপর জুলুম করা থেকে আল্লাহ তাদের বিরত থাকার তাওফীক দান করেন- তাদের জন্য এসব দুআ করা যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন কোনো মুসলমান আমার দুআ থেকে ছুটে না যায়, সে বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা। কুরআনে এধরনের একাধিক দুআ আছে। যেমন-
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَ لِوَالِدَيَّ وَ لِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَّ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ.
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং প্রত্যেক এমন ব্যক্তিকেও, যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে; আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও। -সূরা নূহ (৭১) : ২৮
رَبِّ اجْعَلْنِيْ مُقِيْمَ الصَّلٰوةِ وَ مِنْ ذُرِّيَّتِيْ رَبَّنَا وَ تَقَبَّلْ دُعَآءِ، رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَ لِوَالِدَيَّ وَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ.
হে আমার রব! আপনি আমাকে নামায কায়েমকারী বানিয়ে দিন এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমাদের রব! আমার দুআ কবুল করে নিন। হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৪০-৪১
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِيْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ.
হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের সেই ভাইদেরও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে। আর আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু। -সূরা হাশর (৫৯) : ১০
আমরা যে দেশের জন্য দুআ করি- আল্লাহ, বাংলাদেশের সকল মুসলমানকে আপনি হেফাযত করুন। এটা বলতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের আনাচে-কানাচের সকল মুমিন-মুসলিমের জন্যই দুআ করা চাই। আল্লাহর জমিনে যত কালেমা পাঠকারী, কালেমায় বিশ্বাসী আছে, যে যেখানে আছে, সবাই যেন আমার দুআতে শামিল হয়, সে চেষ্টা করা। সর্বোপরি এটা নিজের ফায়দা ও কল্যাণের জন্যই করা।
হাফেজ্জী হুজুর রাহ.-কে থানভী রাহ. শিখিয়েছিলেন-
اَللّٰهُمَّ كُلَّ خَيْرٍ لِكُلِّ مُسْلِمٍ.
আল্লাহ, সকল কল্যাণ আপনি সকল মুসলিম নর-নারীর জন্য দান করুন।
আচ্ছা আলাদা করে সবার জন্য যদি দুআ করি, ক’জনের জন্য করা যাবে? কতক্ষণ করা যাবে?
একবার উমরার সফরে মদীনা মুনাওয়ারা থেকে যে চালক আমাদের মক্কা মুর্কারমায় দিয়ে গেলেন, তিনি তার জন্য দুআ চেয়েছেন এবং বলেছেন- ‘লাইসা আলমুমিনীন ওয়াল মুমিনাত...’!
অর্থাৎ ‘মুমিন-মুমিনাত’ বলে ব্যাপকভাবে আমাকে শামিল করে নিলে চলবে না, বরং আমার জন্য আলাদা করে দুআ করতে হবে।
আসলে এগুলো মানুষের আবেগ। কিন্তু আল্লাহর কাছে সবই সমান। আমরা যেহেতু মানুষ, আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক। তাই আদম আলাইহিস সালাম থেকে আজ পর্যন্ত সবাইকে একসাথে আয়ত্ব করা আমাদের জন্য সম্ভবই নয়। সবাইকে একসাথে আমরা চিন্তাও করতে পারি না। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে এটা একেবারে বর্তমানের মতো। আলমুমিনীন ওয়াল মুমিনাত... বলে আপনি যত কোটি বোঝাচ্ছেন, সবই আল্লাহর সামনে পরিপূর্ণ উপস্থিত, যেমন আমরা এখানে একজন আরেক জনের সামনে উপস্থিত। তার পরও যেহেতু মানুষের একটা আবেগ ও তাকাযা থাকে, তাই নাম ধরে দুআ করার বিষয়টাও আছে। কিন্তু ওভাবে তো আপনি দুআয় সবার নাম নিতে পারছেন না? কতক্ষণ বলবেন, কত জনের নাম বলবেন? একপর্যায়ে তো আপনাকে ব্যাপক শব্দের সাহায্য নিতেই হবে।
যাহোক সবার জন্য দুআ করা দুআকে ব্যাপক করার একটা দিক।
দ্বিতীয় দিক
দুআ ব্যাপক করার আরেক দিক হল, কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত যেসব ব্যাপক অর্থবহ দুআ রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে দুআ করা।
মানুষের নিজস্ব ভাষার শব্দগুলোর মধ্যেও ব্যাপকতা থাকতে পারে; কিন্তু কুরআন-হাদীসের শব্দগুলোতে ব্যাপকতা আরো বেশি।
যেমন একটি ব্যাপক অর্থবহ দুআ এই-
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِي الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ.
হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন। আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। -সূরা বাকারা (২) : ২০১
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এধরনের ব্যাপক অর্থবহ দুআর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-কে বললেন-
عَلَيْكِ بِالْجَوَامِعِ الْكَوَامِلِ.
‘তুমি ব্যাপক অর্থবহ পূর্ণাঙ্গ দুআ কর।’
উম্মুল মুমিনীন এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তুমি বল-
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّه ٖ، عَاجِلِه ٖ وَآجِلِه ٖ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ، وَمَا لَمْ أَعْلَمْ.
وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهٖ، عَاجِلِهٖ وَآجِلِه ٖ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ، وَمَا لَمْ أَعْلَمْ.
وَأَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ.
وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ.
وَأَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
وَأَسْتَعِيْذُكَ مِمَّا اسْتَعَاذَكَ مِنْهُ عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
وَأَسْأَلُكَ مَا قَضَيْتَ لِيْ مِنْ أَمْرٍ أَنْ تَجْعَلَ عَاقِبَتَهٗ رَشَدًا.
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই সমস্ত কল্যাণ- বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের; যা আমি জানি এবং যা আমি জানি না।
আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি সমস্ত অকল্যাণ থেকে- বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের; যা আমি জানি এবং যা আমি জানি না।
আমি আপনার কাছে চাই জান্নাত এবং এমন কথা ও কাজ, যা আমাকে তার নিকটবর্তী করে দেয়।
আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি জাহান্নাম থেকে এবং এমন কথা ও কাজ থেকে, যা আমাকে তার নিকটবর্তী করে দেয়।
আমি আপনার কাছে সেসব কল্যাণ চাই, যেসব কল্যাণ আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে চেয়েছেন।
আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি সেসব বিষয় থেকে, যেগুলো থেকে আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
আপনার কাছে প্রার্থনা করছি- আপনি আমার জন্য যে ফায়সালাই করবেন, তার পরিণাম যেন ভালো হয়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৫১৩৭-২৫১৩৮
তৃতীয় দিক
দুআ ব্যাপক করার আরেকটা দিক আছে। ওই ব্যাপকতার প্রতিও একটু মনোনিবেশ করা। যেহেনটাকে একটু সেদিকে নেওয়ার চেষ্টা করা। একটি হাদীস থেকেও বিষয়টার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ তাআলার একটি নাম হল- ‘হাদী’ বা হেদায়েত দানকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি বলবে-
يَا هَادِيُ!
(হে হেদায়েত দানকারী!)
তার মূল অর্থ তো হবে, নিজের ঈমান-আমলের জন্য দুআ। গোনাহ থেকে বাঁচা এবং দ্বীনের সহীহ বুঝ পাওয়ার দুআ। কিন্তু বলা হচ্ছে, যদিও এটি দুআর মূল অর্থ এবং তুমি এর জন্যই দুআ করছ, কিন্তু সাথে এই নিয়তটাও করে নিতে পার, আমি যেন চলার পথে রাস্তা হারিয়ে না ফেলি। রাস্তা ভুলে না যাই! কোথাও যাওয়ার সময় রাস্তা যেন যথাযথ পেয়ে যাই! তেমনিভাবে-
اَللّٰهُمَّ سَدِّدْنِيِ.
এই দুআর মূল অর্থ, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সঠিক কথা ও কাজের তাওফীক দান করুন, যাতে আমার আমল ঠিক হয়ে যায়। আমার যবান ঠিক হয়ে যায়। আমার অঙ্গগুলো ঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আপনার অসন্তুষ্টি বা কোনো গোনাহের কাজে যেন আমার অঙ্গগুলো ব্যবহৃত না হয়।
এ হল, ‘সাদ্দিদনী’-এর মূল অর্থ। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি এর সাথে এই দুআও করো, তোমার তীর যেন নিশানা ও লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে লাগে।
চতুর্থ দিক
দুআকে অর্থ ও মর্মের দিক থেকে ব্যাপক করার আরেকটা দিকও আছে। যেমন আমি হাদীসের শেখানো দুআ পড়লাম-
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُّتَقَبَّلًا.
আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি উপকারী ইল্ম, হালাল রিযিক ও মাকবুল আমল।
আমি আল্লাহ তাআলার কাছে এসব বিষয় চাচ্ছি; তবে কার জন্য চাচ্ছি, সেটা কিন্তু দুআয় নির্দিষ্ট করা নেই। বাহ্যত যদিও বোঝা যায়, নিজের জন্যই চাচ্ছি, কিন্তু এটাকে সীমাবদ্ধ না করেও বলতে পরি। অর্থাৎ এভাবে নিয়ত করতে পারি- হে আল্লাহ! এসব বিষয় আমি যেমনি নিজের জন্য চাই, তেমনি আমার সন্তান-সন্ততি, আমার বন্ধু-বান্ধব, আমার মুরব্বি এবং সকল মুমিন-মুসলিমের জন্যও চাই।
কারণ শব্দের মধ্যে যদিও স্পষ্ট নেই, কিন্তু অর্থের মধ্যে এগুলোরও অবকাশ আছে। কাজেই নিয়ত করতে কোনো সমস্যা নেই।
এভাবে দুআর শব্দগুলোর মধ্যে যত ব্যাপকতা আনা যায় ততই উত্তম। যত দুআ করতে পারি, নিজেরই লাভ। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন।
(২১ রমযান দিবাগত রাত, ১৪৪৪ হিজরী)
পত্রস্থকরণ : মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম