জুমাদাল উলা-জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৫   ||   ডিসেম্বর ২০২৩

দুআয়ে মাগফিরাতের আবেদন
হযরত পাহাড়পুরী রাহ.-এর আহলিয়া মুহতারামার ইন্তেকাল

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

আজ থেকে সাত বছর আগে (২৫ যিলকদ ১৪৩৭ হি./২৯ আগস্ট ২০১৬ ঈ.) হযরত পাহাড়পুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ইন্তেকাল হলে মনের অজান্তেই আমার যবানে এই আরবী কবিতাটি উচ্চারিত হয়েছিলÑ

وما كان قيس هُلكه هُلك واحد

ولكنه بنيان قوم تَهَدَّما.

কায়েসের যেদিন মৃত্যু হয়েছিল, শুধু কায়েসের মৃত্যু হয়নি; বরং ধসে পড়েছে গোটা একটি জাতির ইমারত।

তাঁর বিদায়ে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল অপূরণীয়। তার পরও অবচেতন মনের একটি সান্ত্বনা ছিল যে, আলহামদু লিল্লাহ, হযরতের আহলিয়া মুহতারামা তো এখনো হায়াতে আছেন। আশরাফ, আবরার, মাহমুদ ও তাদের বোনদের জন্য একটি আশ্রয় এবং এক খণ্ড ছায়া এখনো বাকি আছে। এদের মাধ্যমে আমরা লাভ করতে পারব সে ছায়ার শীতলতা। উপকৃত হব তাঁর নসীহত থেকে, পাব নেক দুআ। মাসতুরাতের যে জামাত এই ঘর থেকে দ্বীনী ফায়েদা হাসিল করত, তাদের দরজা তো খোলা আছেই, আলহামদু লিল্লাহ... কিন্তু গত সোমবার (৫ জুমাদাল উলা ১৪৪৫ হি./ ২০ নভেম্বর ২০২৩ ঈ.) আসরের আগে আল্লাহর এই বান্দীও আখেরাতের মুসাফির হয়ে গেলেন, যিনি ছিলেন হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সর্বকনিষ্ঠ কন্যা। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

إن لله ما أخذ، وله ما أعطى، وكل شيء عنده بمقدار.

বান্দা যখন মাদরাসা আরাবিয়া খেড়িহরে তালিবুল ইলম, সেসময় সর্বপ্রথম হযরত পাহাড়পুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নাম শুনি। আমাদের উস্তায হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ ছাহেব (লক্ষ্মীপুরের হুযূর) নূরিয়া মাদরাসা (আশরাফাবাদ, ঢাকা)-এ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহমাতুল্লাহি আলাইহির খাছ খাদেম এবং হযরত পাহাড়পুরীর শাগরিদ ছিলেন। তার কাছেই পাহাড়পুরী হযরতের নাম শুনেছিলাম।

হযরতের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ তো হয়েছিল জামিয়া মুহাম্মাদিয়ায়, আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর আগে। তখন থেকেই তাঁর ঘরের হালত সম্পর্কে, তাঁর সহধর্মিনী সম্পর্কে কিছু কিছু জানার সুযোগ হয়।

মারহুমার ফাযায়েল ও কামালাত, সদগুণ ও সুন্দর বৈশিষ্ট্যগুলো সর্ম্পকে ইনশাআল্লাহ তাঁর সন্তানেরা আলোচনা করবেন। তাঁর জীবনের শিক্ষণীয় ঘটনাগুলোও আমরা জানতে পারব তাদের কাছ থেকে। তাঁর কন্যাগণও সে আলোকে যার যার পরিমণ্ডলে দাওয়াত ও তরবিয়তের কাজে অগ্রসর হবেন।

আমি তো শুধু এটুকুই আরয করব যে, বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির শিকার হয়ে যে সীমাহীন কষ্ট তিনি সহ্য করেছেন এবং তথাপি সবর ও শোকরের সাথে জীবন যাপন করেছেনÑ স্বয়ং এটাও তাঁর দারাজাত বুলন্দির এক বিরাট যখিরা।

বাইশ-তেইশ বছর আগের ঘটনা তো আমাদের চোখের সামনে। হযরত পাহাড়পুরী প্রতিদিন রাহমানিয়া  ও লালমাটিয়ায় সবক পড়িয়ে সোজা আলমারকাযুল ইসলামী মোহাম্মাদপুর হাসপাতালে চলে যেতেন। ঐ সময় সম্ভবত লাগাতার দুই-তিন মাস তাঁকে হাসপাতালে পার করতে হয়েছে। সেজন্য ঐসময় পাহাড়পুরী হুযূর রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে সাক্ষাৎ ও তাঁর মশওয়ারা নেওয়ার জন্য সবাই আলমারকাযুল ইসলামীতে চলে যেতেন। আমরাও গিয়েছি কয়েকবার।

আল্লাহ তাআলা মারহুমাকে ভরপুর মাগফিরাত করেন। তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে জায়গা দেন। তাঁকে তাঁর সম্মানিত পিতা ও মুহতারাম স্বামীর কাফেলায় (আমাদের আশা, তাঁরা শান্তিতে আছেন, নিরাপদ আছেন) মিলিত করেনÑ আমীন।

মারহুমার জানাযা হয়েছে এশার পর, রাত নয়টায়, নূরিয়া মাদরাসার ময়দানে। জানাযা পড়িয়েছেন তাঁর বড় ছেলে হাফেয মাওলানা আশরাফুজ্জমান। জানাযার আগে মেজো ছেলে মাওলানা আবরারুজ্জামান এক-দুই মিনিট সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলেছেন। তিনি উপস্থিত সবার কাছে একটি মূল্যবান দস্তরখাস্ত পেশ করেছেন যে, ‘আপনারা দুআ করুন, আমরা যেন হাদীসে বর্ণিত সেই أو ولد صالح يدعو له  (কিংবা এমন নেক সন্তান, যে তাঁর জন্য দুআ করে)-এর মধ্যে গণ্য হতে পারি। আমরা যেন নেক হই এবং মা-বাবার জন্য দুআও করতে পারি।

ব্যস, যে বাবা-মা এমন সন্তান পেয়েছেন, তারা সত্যিই কামিয়াব।

হযরত পাহাড়পুরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির জানাযায় আদীব হুযূর দামাত বারাকাতুহুমকে দেখেছি, অসুস্থতা ও দুর্বলতা সত্ত্বেও জানাযায় তাশরীফ নিয়ে এসেছেন। এবার তো স্বাস্থ্যের অবস্থা এত নাযুক যে, সম্ভবত হাযির হতে পারেননি। আল্লাহ তাআলা হযরত পাহাড়পুরী এবং অন্য অনেক আকাবিরের এই নিশানীকে আফিয়াত ও সালামাত, সিহহত ও কুওয়তের সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করেন। তাঁর এবং তাঁর যত আকাবির ও রূহানী পূর্বপুরুষ, তাঁদের সকল স্বপ্ন ও পরিকল্পনা সুন্দরভাবে এবং উত্তমভাবে পূর্ণতা দান করেন। আল্লাহ তাঁকে সাচ্চা ওয়ারিস ও যোগ্য জানেশীনের নিআমতে মালামাল করেনÑ আমীন।

أمطر الله على جَدَثِها شآبيب الرحمة و الرضوان، وأكرم نزلها في غرف الجنان، وألْهَمَ مَنْ بعدها الصبر والسلوان

 

 

advertisement