রবিউল আউয়াল ১৪৪৫   ||   অক্টোবর ২০২৩

প্রশ্নোত্তর

[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তর এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]

 

প্রশ্ন ৮৪. আমি একজন সাধারণ শিক্ষিত মানুষ, আপনাদের পত্রিকা নিয়মিত পড়ি। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমি একটি বিষয় জানতে চাচ্ছি, আপনাদের পত্রিকায় বিভিন্ন উদ্ধৃতির পরে লেখা হয় তাফসীরে তবারী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে ইবনে কাসীর ইত্যাদি। এগুলো কি তাফসীরের কিতাবের নাম? আমি এ কিতাবগুলোর পরিচয় জানতে চাই।

উত্তর : হাঁ, এগুলো তাফসীরগ্রন্থ। তবে এগুলো কিতাবের মূল নাম নয়।

তাফসীরে তবারীর নামÑ

جامع البيان في تأويل القرآن

জামিউল বয়ান ফী তাওয়ীলিল কুরআন।

এ কিতাবের লেখক আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনে জারীর রাহ. (জন্ম : ২২৪ হি., মৃত্যু : ৩১০ হি.)। তিনি ইরানের তবারিস্তানের মানুষ ছিলেন, তাই তাকে তবারী বলা হয়। আর তার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে তার তাফসীরগ্রন্থকে বলা হয় তাফসীরে তবারী।

তাফসীরে কুরতুবীর নামÑ

الجامع لأحكام القرآن

আলজামিউ লিআহকামিল কুরআন। এ কিতাবের লেখক শামসুদ্দীন আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমদ রাহ. (মৃত্যু : ৬৭১ হি.)। তিনি ছিলেন স্পেনের কর্ডোভার মানুষ, তাই তাকে আরবীতে কুরতুবী বলা হয়। আর তার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে তার তাফসীরগ্রন্থকে বলা হয় তাফসীরে কুরতুবী।

তাফসীরে ইবনে কাসীরের নামÑ

تفسير القرآن العظيم

তাফসীরুল কুরআনিল আযীম।

এ কিতাবের লেখক ইমাদুদ্দীন আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে উমর ইবনে কাসীর রাহ. (জন্ম : ৭০২ হি., মৃত্যু : ৭৭৪ হি.)। লেখক ইমাদুদ্দীন রহ.-কে তার দাদার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে ইবনে কাসীর বলা হয় এবং তার তাফসীরগ্রন্থকে তাফসীরে ইবনে কাসীর বলা হয়।

এগুলো ছাড়া আরো অনেক তাফসীরগ্রন্থের নামের ক্ষেত্রে সহজে বোঝানোর সুবিধার্থে কিতাবের পুরো নাম উল্লেখ না করে লেখকের নাম বা তার এলাকার নামের সাথে যুক্ত করে এভাবে বলা হয়ে থাকে।

 

প্রশ্ন ৮৫. সূরা হিজরের ৯০-৯১ আয়াতে বর্ণিত হয়েছেÑ

كَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلَی الْمُقْتَسِمِیْنَ، الَّذِیْنَ جَعَلُوا الْقُرْاٰنَ عِضِیْنَ.

যেমন নাযিল করেছিলাম সেই বিভক্তকারীদের প্রতিÑ যারা পাঠ্য কিতাবকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছিল।

আয়াত দুটিতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : এখানে  الْمُقْتَسِمِیْنَ  অর্থ বিভক্তকারী এবং শপথকারী। ইহুদী-খ্রিস্টানরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে এবং তাওরাত ইঞ্জিলের বিধান মানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছিল। অন্যদিকে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছিল, কেউ বলত তিনি জাদুকর, কেউ বলত গণক, কেউ বলত পাগল।

আবার কুরাইশরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মক্কার বিভিন্ন পথে বসে থাকত, যেন কেউ নবীজীর কাছে এসে তার প্রতি ঈমান আনতে না পারে। তাছাড়া প্রত্যেক শপথকারীই এর অন্তর্র্ভুক্ত, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান না আনার শপথ করেছিল।

দ্বিতীয়ত  الْقُرْاٰنَ  দ্বারা উদ্দেশ্য পূর্ববর্তীদের ওপর নাযিলকৃত কিতাব অথবা কুরআন কারীম। ইহুদী-খ্রিস্টানরা তাদের ওপর নাযিলকৃত কিতাবকে এভাবে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলেছিল যে, তাওরাত-ইঞ্জিলের যে বিধান তাদের মনমতো হত তা মানত এবং যে বিধান মনমতো না হত, তা অমান্য করত। অর্থাৎ কিছু অংশের প্রতি ঈমান আনত, কিছু অংশের প্রতি ঈমান আনত না। অন্যদিকে কুরাইশরা কুরআন কারীমকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে নিজেদের মধ্যে এভাবে ভাগ করত যে, একজন আরেকজনকে বলত, আমি কুরআনের এতটুকু নিলাম, তুমি অতটুকু নাও ইত্যাদি।

আর নাযিল করেছিলামবলে সতর্কবাণী নাযিল অথবা শাস্তি দেওয়া উদ্দেশ্য। তাদের সকলের প্রতিই সতর্কবাণী নাযিল করা হয়েছিল। আর ভবিষ্যতে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে এবং তা অবশ্যম্ভাবী বলে নাযিল করেছিলামবলা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সংশ্লিষ্ট আয়াত, তাফসীরে তবারী, যাদুল মাসীর, তাফসীরে উসমানী)  

 

প্রশ্ন ৮৬.  رَبُّ الشِّعْرٰی  মানে কী?

উত্তর :  الشِّعْرٰی  (শিরা) একটি নক্ষত্রের নাম। যাকে ইংরেজিতে বলে সিরিয়াস (Serious) আর বাংলায় বলে লুব্ধক। শিরা বা লুব্ধক হল, আকাশের অতি উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। জাহেলী যুগে আরবের একদল লোক সে নক্ষত্রের পূজা করত। তারা বিশ্বাস করত, বিশ্বজগতে এ নক্ষত্রটির বিশেষ ক্ষমতা আছে এবং এটি তাদের কোনো উপকার করে। যারা এর পূজা করত না, তাদের কাছেও এ তারকার বিশেষ মর্যাদা ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদের সে ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করে বলছেনÑ  وَ اَنَّهٗ هُوَ رَبُّ الشِّعْرٰی  আল্লাহ তাআলাই শিরা নক্ষত্রের প্রতিপালকযে নক্ষত্র নিজেই একটি সৃষ্টি, সেটি কীভাবে পূজনীয় হতে পারে? (তাফসীরে তবারী, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নাজম, আয়াত : ৪৯-এর তাফসীর দ্রষ্টব্য) 

 

 

advertisement