মুহাররম ১৪৪৫   ||   আগস্ট ২০২৩

রাজনীতি : সংঘাত নয় সমাধানের পথ খুঁজুন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল মুখোমুখি অবস্থানে। একবার এই দল কর্মসূচি দিচ্ছে, আরেকবার ওই দল কর্মসূচি দিচ্ছে। প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলগুলো আগামী নির্বাচন পদ্ধতি এবং কার অধীনে নির্বাচন হবে তা নিয়ে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মূল কথা, নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। অন্যদিকে সরকারি দল তাদের দলীয় প্রধানের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এসব নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। যতই দিন যাচ্ছে এসব কর্মসূচি হিংসাত্মক হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

যদিও মাসিক আলকউসার এবং এর মূল প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর ব্যক্তিবর্গ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং প্রচলিত রাজনীতি তাদের আগ্রহের জায়গাতে নেই গোড়া থেকেই। তবুও দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সকল পক্ষের কাছে সবিনয় আবেদন করতে চাই, রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের জান-মাল-ইজ্জতের প্রতি যেন লক্ষ রাখা হয়। কোনো নিরীহ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সবারই দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সংঘাতের পথ অবশ্যই পরিহার করা উচিত। সমাধানের পথ খেঁাজা উচিত।

একটি রাষ্ট্র নিজেই নিজের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে। আমরা দেখছি, এসব বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও তাদের রাষ্ট্রদূতেরা মন্তব্য করছেন। অনেকেই ছুটে আসছেন এদেশে। অতীতের মতো বর্তমান ক্ষমতাসীনেরাও বিদেশীদের সমালোচনা করছেন যে, বিদেশীরা কেন এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। আমরা যদি আমাদের অতীত-বর্তমান দেখি, আমাদের অবস্থা এবং বিদেশ-নির্ভরতা দেখি, তাহলে অনেক কিছুই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে আসে। আমাদেরকে কোনো দেশ ভিসা না দেওয়ার হুমকি দিলে আমরা ঘাবড়ে যাই, কাকুতি-মিনতি শুরু করি। আবার কোনো দেশকে বন্ধু বানিয়ে নিয়ে তাদের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতার শেকড় মজবুত করতে চাই। এভাবেই তো বিদেশীদেরকে আমাদের বিষয়ে নাক গলাতে আমরা সুযোগ করে দিই।

আমাদের মূল মাথাব্যথার কারণ তো এটা হওয়া উচিত ছিল, কেন অন্যরা আমাদের বিষয়ে নাক গলায়? এই সুযোগটা বিদেশীরা পায় কী করে? আমরা কি পারি, তাদের রাজনীতি নিয়ে ওখানে নাক গলাতে? ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে কি আমরা বলে আসতে পারি, আপনারা এভাবে চলেন, এভাবে করেন, ওভাবে করেন; এটা আমরা বলতে পারি না। তারা কেন পারে? এর জবাব আমাদের সকলেরই জানা। আমরা পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি। আমাদের বিষয় আমরা একসাথে বসে সমাধান করি না। বিদেশীদের সাথে বসতে পারলেও, তাদের কাছে নতজানু হয়ে সুবিধাদি আদায়ে সচেষ্ট হলেও আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা একত্রে বসতে নারাজ। একে-অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করতে অভ্যস্ত।

সুতরাং আমরা সবিনয়ে সকলের প্রতি নিবেদন করতে চাই, সংঘাতের পথ ছেড়ে আলোচনায় বসা হোক। আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান বের হোক। গুণীজন ও নিরপেক্ষ লোকেরা বলছেন, আলোচনার উদ্যোগ ক্ষমতাসীন দল ও সরকারেরই নেওয়া উচিত। কারণ দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সবকিছুর দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। তাই দেশকে নিয়ে ভাবে এমন গুণীজনদের নিয়ে সরকার আলোচনার উদ্যোগ নিলে, বড় বড় দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসলে, সবাইকে এক টেবিলে নিয়ে আসলে অবশ্যই সংঘাত এড়ানো যাবে। আল্লাহ তাআলা বাংলাদেশের প্রতি রহম ও করম করুন। আমাদেরকে যে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করুন।

আমাদের রাজনীতিবিদ ও ক্ষমতাসীনদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক এটাই জনগণের প্রত্যাশা। 

 

 

advertisement