যিলহজ্ব ১৪৪৪   ||   জুলাই ২০২৩

ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য

হযরত মাওলানা আব্দুল হাই পাহাড়পুরী

الحمد لله، الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد: فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم، بسم الله الرحمن الرحيم.

سُبْحٰنَكَ لَا عِلْمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا  اِنَّكَ اَنْتَ الْعَلِیْمُ الْحَكِیْمُ.

صدق الله مولانا العظيم.

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ায় অসংখ্য মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টির যখন ইচ্ছা করলেনফিরিশতাদের সঙ্গে আলোচনা করলেন। বললেন, আমি পৃথিবীতে খলীফা সৃষ্টি করব। আদম ও বনী আদম সৃষ্টি করব। ফিরিশতারা বলল, হে আল্লাহ! আপনি পৃথিবীতে এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে ফাসাদ করবে, অনাচার করবে, রক্তপাত ঘটাবে, খুনখারাবী করবে-

وَ نَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَ نُقَدِّسُ لَكَ.

(আমরাই তো আপনার প্রশংসা করছি, তাসবীহ পাঠ করছি, আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি।)

অর্থাৎ ফিরিশতাদের বুঝে আসছিল না- আল্লাহ তাআলার হেকমত ও রহস্য। কেন আল্লাহ বনী আদম সৃষ্টি করছেন? কেন আল্লাহ পৃথিবীতে মানব জাতিকে প্রেরণ করছেন? হেকমত ও রহস্য তো অবশ্যই আছে। কিন্তু কী সেই হেকমত, ফিরিশতাদের তা বুঝে আসছিল না। আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন-

اِنِّیْۤ اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ.

(আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।)

অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টি করলে কী হবে- এ বিষয়ে ফিরিশতারা ততটুকু জানে না, যতটুকু আল্লাহ জানেন।

মানুষের মতো মানুষ

আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَ لَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِیْۤ اٰدَمَ.

আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৭০

অর্থাৎ বনী আদমকে আশরাফুল মাখলুকাত বানিয়েছি। সমস্ত মাখলুকাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, সৃষ্টির সেরা হল মানুষ। মানুষকে আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এখন মানুষ মানুষ হতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে মানুষ হিসেবে পয়দা করলেন। কত মহব্বত করে পয়দা করলেন। ফিরিশতাদের প্রশ্নের উপর আল্লাহ পাক বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না

কী সেই জিনিস, যা আল্লাহ জানেন, ফিরিশতারা জানে না। মানুষের মধ্যে এমন কী জিনিস আছে, যা আল্লাহ তাআলাই শুধু জানেন, আল্লাহর নৈকট্যশীল ফিরিশতারাও জানে না। সেগুলো হল কিছু আখলাক, কিছু আত্মিক গুণ, যেগুলো একজন মানুষকে ফিরিশতাদের থেকেও উপরে নিয়ে যায়। মানুষ শুধু রক্তমাংসের মানুষ হওয়ার কারণেই আশরাফুল মাখলুকাত না; মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তখনই, যখন তার মধ্যে এ সিফাতগুলো বিদ্যমান থাকবে।

আমরা এখানে যারা সমবেত হয়েছি, আমরা সবাই তালিবুল ইলম। সেই জিনিসগুলো অর্জন করার জন্যই আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। মাদরাসায় জমা হয়েছি। মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্যই আমরা মাদরাসায় সমবেত হয়েছি।

স্বভাব ও তবিয়তের দিক থেকে মানুষ দুই প্রকার

মানুষের মধ্যে জানোয়ারের স্বভাবও আছে, ফিরিশতার স্বভাবও আছে। আমাদের মধ্যে মালায়িকা অর্থাৎ ফিরিশতাদের অংশও আছে, বাহায়েম অর্থাৎ চতুষ্পদ জন্তুর অংশও আছে। ফিরিশতাদের আখলাকও আছে, জানোয়ারের চরিত্রও আছে। জীবজন্তু- এরা খায়, আমরাও খাই, এদিক দিয়ে জীবজন্তুর সাথে আমাদের সম্পর্ক। এদিক দিয়ে আমাদের সম্পর্ক ফিরিশতাদের সাথে না, জানোয়ারের সাথে। এ হিসাবে জানোয়ারের আখলাক আমাদের মধ্যে আছে।

ফিরিশতারা আল্লাহর যিকির করে। যিকিরের মধ্যে সবসময় মশগুল থাকে। মানুষও আল্লাহর যিকির করে। এদিক থেকে ফিরিশতাদের সাথেও মানুষের সম্পর্ক আছে। ফিরিশতাদের সাথেও মানুষের মিল আছে। ফিরিশতাদের আখলাক মানুষের মধ্যে আছে। যে মানুষ যত বেশি আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে, তত বেশি তার মধ্যে ফিরিশতাদের সিফাত বিদ্যমান। সে তত বড় ফিরিশতাসিফাত ইনসানআর যিকির-আযকার বাদ দিয়ে শুধুই খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যে মানুষ ব্যস্ত, সে হল হায়াওয়ানসিফাত ইনসানপশুর স্বভাব তার মধ্যে বেশি।

প্রকৃত মানুষের অবস্থা

প্রকৃত মানুষ যারা, তাদের অবস্থা হল-

يَذْكُرُ اللهَ فِي كُلِّ أَحْيَانِهِ.

(সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে।)

এটি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিফাত। নবীজী সম্পর্কে হাদীসে এসেছে-

يَذْكُرُ اللهَ فِي كُلِّ أَحْيَانِهِ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় আল্লাহর যিকিরের মধ্যে থাকতেন। -মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস ৪৯৩৭

নবীর যারা প্রকৃত আশেক, তাদেরও একই হাল, একই অবস্থা। এমনই একজন মানুষ ছিলেন হযরত হাফেজ্জী হুযূর রাহ.। তিনি ছিলেন নবীর সাচ্চা আশেক। পুরোপুরি ফিরিশতাসিফাত ইনসান। হাফেজ্জী হুযূর সবসময় আল্লাহর যিকির করতেন।

ফিরিশতারা সবসময় আল্লাহর যিকির করে। মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; তিনিও সবসময় আল্লাহর যিকির করতেন। তো মানুষের মতো মানুষ যারা, তাদেরও অবস্থা এমনই হওয়া চাই যে, তারাও সবসময় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকবে। এটাই হল প্রকৃত মানুষের অবস্থা। আর আল্লাহর যিকির থেকে গাফেল থাকা মানে হল, জানোয়ারের স্বভাব নিয়ে বেঁচে থাকা। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন।

মুজাহাদা : মানুষের আসল কাজ

একজন মানুষের মধ্যে যেহেতু ফিরিশতাদের সিফাতও আছে, আবার জানোয়ারের সিফাতও আছে, তো এ অবস্থায় তার করণীয় কী? এ যিন্দেগীতে সে কী করবে?

তার কাজ একটাই, জানোয়ারের স্বভাব দমন করে ফিরিশতার স্বভাব অর্জন করা। এর জন্য প্রয়োজন মুজাহাদার। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর সাধনার। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে খাওয়ার আদেশ করেছেন। বলেছেন, كُلُوْا وَاشْرَبُوْا  খাও, পান কর। কিন্তু জানোয়ারের মত শুধু খেতেই বলেননি, বলে দিয়েছেন, وَلَا تُسْرِفُوْا খাওয়া দাওয়া কর; কিন্তু প্রয়োজনের বেশি যেন না হয়, ইসরাফ যেন না হয়তো এর নাম হল মুজাহাদা। মুজাহাদা ছাড়া মানুষ মানুষ হয় না। সাধনা ছাড়া মানুষের মতো মানুষ হওয়া যায় না।

এজমালী মুজাহাদা (সংক্ষিপ্ত সাধনা)

এক হল মুজাহাদায়ে এজমালী-সংক্ষিপ্ত মুজাহাদা। আরেক হল মুজাহাদায়ে তাফসীলী-বিস্তারিত মুজাহাদা। মুজাহাদায়ে এজমালী হল চারটি কাজ :

১. قلة الطعام (কম খাওয়া)

২. قلة الكلام (কথা কম বলা)

৩. قلة المنام (কম ঘুমানো)

৪. قلة الاختلاط مع الأنام (মানুষের সাথে মেলামেশা কম করা)

মুজাহাদা ছাড়া আল্লাহকে পাওয়া যায় না

সাধনা ছাড়া আল্লাহকে পাওয়া যায় না। আল্লাহকে পেতে হলে মুজাহাদা করতেই হবে, সাধনা করতেই হবে। এ চারটি বিষয়ের প্রতি খুব খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে কথাকথা কমিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে এমন প্রতিজ্ঞা করতে হবে, সারাদিন একটা গায়রে জরুরি কথা বলব না। ফজরের পর আযম বিল জযম করতে হবে- হে আল্লাহ! রাতে ঘুমানো পর্যন্ত যা আমি মুখে বলব, জরুরি কথাই বলব, গায়রে জরুরি একটা কথাও আমি বলব না।

হাফেজ্জী হুযুর রাহ.-এর মুজাহাদা

হাফেজ্জী হুযুর রাহ. ছিলেন কথা কম বলার নমুনা। সবসময় আল্লাহর যিকিরের মধ্যেই থাকতেন, ঠেঁাট নড়তেই থাকত। আমার এক ছোট বাচ্চা, সুযোগ পেলেই হযরতের কোলে গিয়ে বসত। হযরত যখনই কামরাঙ্গীরচরে আসতেন, বাচ্চাটা অপেক্ষায় থাকত, নানা কখন আসেন, কখন কামরায় বসেন। হযরত এলেই বাচ্চাটা হযরতের দরজার সামনে গিয়ে বলত, নানা! আমার পায়ের নিচে মাটি নেইঅর্থাৎ তার পা পরিষ্কার। সে হযরতের কামরায় প্রবেশ করতে চায়। হযরতের কোলে বসতে চায়। হযরত বুঝতেন। মুচকি হাসতেন। তারপর বলতেন, বোন! আসো, আসো, আমার কোলে বসো, আমার কোলে বসো

তো বাচ্চাটা কোলে গিয়ে বসেই মাথাটা উপর দিকে উঠাত এবং হযরতের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকত। বাচ্চাটা অবাক হত যে, নানার ঠোঁট সবসময় এমন নড়তে থাকে কেন? একদিন আমি বসা ছিলাম সেখানে, বাচ্চাটা হযরতের কোলে বসা, হযরতের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। হযরত বললেন, বোন! তুমি উপর দিকে তাকিয়ে কী দেখ? নানার ঠোঁট নড়ে কেন এটা দেখ? হাঁ, বোন! আমি সবসময় আল্লাহর নাম নিই, আমি আল্লাহর নাম নিই, আমি আল্লাহর নাম নিই।

ইলমের উদ্দেশ্য আল্লাহকে পাওয়া

একটা শের হযরত হাফেজ্জী হুযূর পড়তেন-

جز یاد دوست ہرچہ کنی عمر ضائع استجز سر عشق ہرچہ بگوئی بطالت است

سعدیؔ بشولوح دِل از نقش غیر حقعلمے کہ راہ حق ننماید جہالت است

আল্লাহর যিকির ছাড়া যত কিছুই তুমি কর, তোমার জীবন বৃথা/ আল্লাহর ইশক ছাড়া যত কিছুই তুমি অর্জন কর, সবই বেকার/ সাদী! হৃদয় থেকে মুছে ফেল গায়রুল্লাহর নাম/ যে ইলম আল্লাহর পথ না দেখায়, সে ইলম জাহালত ছাড়া কিছুই না।

হাফেজ্জী হুযুর রাহ.-এর সাথে হজ্বের সফরে

১৯৭৫ সনে হযরতের সঙ্গে হজ্বে গেলাম। জেদ্দা থেকে মক্কা যাওয়ার সময় হযরতের ঠিক পেছনের আসনে আমি বসলাম। দেখলাম, জেদ্দা থেকে মক্কা পর্যন্ত পুরোটা পথ হযরত কাঁদছেন, দুচোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরছে। পরে জিজ্ঞেস করেছি, হযরত আপনি এত কাঁদলেন কেন? জেদ্দা থেকে মক্কায় আসতে এত চোখের পানি ফেললেন কেন?

হযরত যেন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জানতে চাইলেন, তুমি দেখেছ নাকি আমি কাঁদছি?

আমি বললাম, জ্বী হযরত! আমার দৃষ্টি তো সবসময় আপনার দিকেই ছিল। সারা পথ আপনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।

হযরত বললেন, গাড়িতে বসে রাস্তার দুপাশে পাহাড়গুলো যখন আমি দেখছিলাম, আমার মনে হচ্ছিল, এই তো সেই পর্বতমালা, আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টি এ পাহাড়গুলোর উপরই পড়েছিল। যে জিনিস মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেছেন, সেই একই জিনিসের উপর দেড় হাজার বছর পর আমি মুহাম্মাদুল্লাহ্র দৃষ্টি পড়ছে! সেই একই জিনিস আমিও দেখছি! এ কথাটাই আমার বারবার মনে পড়ছিল আর কান্না আসছিল।

حمامة جرعى حومة الجندل اسجعي ... فأنت بمرأى من سعاد ومسمع.

মুখতাসারুল মাআনীর একটা শের মনে পড়ে গেল। যাক, সেদিকে না যাই। তো হযরত হাফেজ্জী হুযূরের হাল এমনই ছিল। সবসময় হযরতের ধ্যান ও খেয়ালের মধ্যে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই থাকতেন।

হযরত হাফেজ্জী হুযূরের কথা আর কী বলব! হযরতের কথা মনে পড়লে হযরতের স্মৃতিগুলো, হযরতের ঘটনাগুলো আমার মধ্যে ঢেউয়ের মতো জাগ্রত হতে থাকে।

শ্রেষ্ঠতম ইবাদত

হাদীসের মধ্যে এসেছে-

أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ.

শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হল কুরআন তিলাওয়াত। -মুজামুস সাহাবা, ইবনে কানে ১/৫৬; ফাযাইলুল কুরআন ওয়া তিলাওয়াতুহু, আবদুর রহমান রাযী, হাদীস ৮১

যারা হাফেযে কুরআন, তারা এর উপর আমল করতে পার। হযরত হাফেজ্জী হুযূর রাহ.-এর যিকির ছিল কুরআন তিলাওয়াত। হাঁটা-চলায় সবসময় কুরআন তিলাওয়াত করতেন। হাফেজ্জী হুযূর কুরআনের পাক্কা হাফেজ ছিলেন। হিফযখানায় যারা পড়, পড়ার মতো পড়ো। মনে রেখো, আল্লাহর কালাম তোমাদের সীনায় দাখেল হচ্ছে। আল্লাহর কালাম! কার কালাম? আল্লাহর কালাম। আল্লাহর কালাম। আল্লাহু আকবার! চোখ দিয়ে দেখছ, যবান দিয়ে পড়ছ, সীনায় অঙ্কিত হচ্ছে। কী? আল্লাহর কালাম। আল্লাহর কথা। গভীরভাবে যদি চিন্তা কর, স্থির থাকতে পারবে না। সঠিকভাবে কল্পনা করলে দিলটা ফেটে যাওয়ার কথা। আল্লাহর কালাম আমরা পড়ছি! আমার মতো গুনাহগার আল্লাহর কালাম পড়ছে! একথা মনে করে দুনিয়ার সব সুখশান্তি ভুলে যাওয়া দরকার যে, আমি আল্লাহর কালাম পড়ছি, আমার মুখে আল্লাহর কালাম উচ্চারিত হচ্ছে!

তো একটি হাদীসে কুরআন তিলাওয়াতকে বলা হয়েছে শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। যারা হাফেযে কুরআন, তারা এই হাদীসের উপর আমল করতে পার। আরেকটা হাদীস আছে-

أَفْضَلُ الذِّكْرِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ.

শ্রেষ্ঠতম যিকির হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহযারা হাফেয না, তাদের জন্য আল্লাহর নবী সুন্দর ব্যবস্থা দিয়ে গেছেন। তারা এই হাদীসের উপর আমল করবে। যারা হাফেয না, সবসময় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তেই থাকবে। যারা হাফেয, হাঁটাচলায় তারা কুরআন শরীফ পড়তেই থাকবে।

হাফেজ্জী হুযূরের কুরআন তিলাওয়াত

হাফেজ্জী হুযূর রাহ. মাগরিবের পর আওয়াবীনের নামায পড়তেন। ঐ আওয়াবীনে তিন পারা কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তাহাজ্জুদে তিলাওয়াত করতেন তিন পারা। এ হল ছয় পারা। এ ছাড়া হাঁটাচলায় পড়তেন আরও তিন পারা। চব্বিশ ঘণ্টায় এই নয় পারা তিনি তিলাওয়াত করতেন। এটি ছিল হযরতের নিয়মিত আমল।

আল্লাহর যিকির সবসময় করতে হয়

তিলাওয়াতের আমল ছাড়াও হাফেজ্জী হুযূর রাহ. সবসময় আল্লাহর যিকির করতেই থাকতেন। আর মাঝে মাঝে এ শেরটা পড়তেন-

جز یاد دوست ہرچہ کنی عمر ضائع است

অর্থাৎ, ও আল্লাহর বান্দা! আল্লাহর যিকির ছাড়া যা-ই তুমি কর, সবকিছুই তোমার জীবনকে বরবাদ করে দেবে। এমন কত কিছুই না আমরা করি, যা করার জিনিস না। এমন কত জিনিসই না আমরা ধরি, যা ধরার জিনিস না। ধরার জিনিস থাকলে আল্লাহ আছেন, আল্লাহকে ধরতে হবে। আল্লাহকে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর নাম সবসময় নিতে হবে।

سعدیؔ بشولوح دِل از نقش غیر حقعلمے کہ راہ حق ننماید جہالت است

শেখ সাদী নিজেকেই বলছেন, সাদী! দিলের মধ্য থেকে গায়রুল্লাহর নকশা ধুয়ে ফেল। যে ইলম তুমি হাসিল করছ, সে ইলম যদি তোমাকে আল্লাহর রাস্তা না দেখায়, আল্লাহ পর্যন্ত না পেঁৗছায়, তাহলে কীসের ইলম সেটা, সেটা তো মূর্খতা ছাড়া কিছুই না

তো আমার প্রিয় তালেবে ইলম! খেয়াল করে শোন, আমরা যে ইলম শিখছি, আমরা কি আসলে আলেম হচ্ছি, না জাহেল হচ্ছি? শেখ সাদী বলছেন, যদি আমি ইলম শিখে আল্লাহকে না পেলাম, তাহলে আমি আলেম না, আমি জাহেল; বরং জাহেল থেকেও বদতর।

হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরীদপুরী রাহ. বলতেন, তুমি দুনিয়ার সবকিছু পেয়েছ, কিন্তু আল্লাহকে পাওনি, তবে তুমি কিছুই পাওনিঅর্থাৎ তাহলে তুমি একজন নিরীহ ফকীর, তোমার মতো মিসকীন দুনিয়াতে আর নেই। আর তুমি দুনিয়ার কিছু পাওনি কিন্তু আল্লাহকে পেয়ে গেছ, তবে তুমি সবকিছু পেয়ে গেছতোমার মতো ধনী দুনিয়াতে কেউ নেই।

শুধু আলেম হয়ো না, আল্লাহওয়ালা আলেম হও। আল্লাহওয়ালা আলেম হল দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী। কেননা সে আল্লাহকে পেয়ে গেছে। আর যে আল্লাহকেই পেয়ে যায়, তার চেয়ে বড় ধনী আর কে আছে।

হাফেজ্জী হুযূর রাহ. সম্পর্কে হাকীম ইফহামুল্লাহ রাহ.-এর অভিমত

আল্লাহওয়ালাদের কথা উঠলে তাঁদের হাজারো স্মৃতি আমার মাথায় ভীড় করে। মনের মধ্যে তাদের কথার ঢেউ খেলতে থাকে। বাংলাদেশ সফরে হযরত আবরারুল হক ছাহেব রাহ.-এর অন্যতম সফরসঙ্গী ছিলেন তাঁরই বেয়াই হযরত হাকীম ইফহামুল্লাহ ছাহেব রাহ.। হিন্দুস্তান ফিরে যাওয়ার পর তিনি একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠি দীর্ঘদিন আমার কাছে সংরক্ষিত ছিল। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর কোথায় যে হারিয়ে গেছে; সেই চিঠিতে হাকীম ছাহেব হাফেজ্জী হুযূর রাহ. সম্পর্কে লেখেন-

تاریخ کے اوراق میں ہم نے ہمارے اکابر کی  جو زندگی پڑھی الحمدللہ بنگلہ دیش مںل جا کر حضرت حافظ جی حضور کو اپنی آنکھوں سے دیکھا تو سمجھا ہمارے اکابرین ایسے تھے۔

আমাদের আকাবির বুযুর্গগণ কেমন ছিলেন- আমরা ইতিহাসের পাতায় পড়েছি। আলহামদু লিল্লাহ, বাংলাদেশে গিয়ে হযরত হাফেজ্জী হুযূর রাহ.-কে স্বচক্ষে দেখে বুঝতে পেরেছি- আমাদের আকাবির বুযুর্গগণ এমন ছিলেন।

কাসেম নানূতবী কেমন ছিলেন, রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী কেমন ছিলেন, দেওবন্দের আকাবিরীন কেমন ছিলেন- দেখতে চাইলে বাংলাদেশে গিয়ে হাফেজ্জী হুযূরকে দেখে আস। ঠিক আকাবির-আসলাফের বাস্তব নমুনা!

প্রতিদিন ফজরের পরে একটি অঙ্গিকার

কোনো অতিরিক্ত কথা না বলা চাই। ফজরের পর প্রতিদিন একটা অঙ্গীকার করা, নিজের সাথে নিজে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া যে, আজকে সারাদিন একটিও অতিরিক্ত কথা আমি বলব না, বলবই না। মানুষ তো কত রকম ওয়াদা করে, তো আমি এ ওয়াদা করলাম যে, আমি সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একটি গুনাহ করব না, একটি বেহুদা কথা বলব না।

অতিভোজন রূহানী শক্তিকে দুর্বল করে দেয়

খাওয়া দাওয়ায় নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার। আল্লাহ বলেছেন, খাও পান কর, কিন্তু ইসরাফ কর না। সীমাতিরিক্ত ভোজনও একপ্রকার ইসরাফ। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমলের জন্য ক্ষতিকর। রূহের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং এটিও ইসরাফ। এর দ্বারা ঈমানী, আমলী ও রূহানী কুওয়াত কমে যায়।

خداوند گفت کُلُوْ اوَاشْرَبُوْ اولیکن نہ گفت کلو تا گلو

আল্লাহ বলেছেন খাও পান কর। বলেননি যে, গলা পর্যন্ত খাও।

মানুষের সাথে সম্পর্কে সতর্কতা কাম্য

মানুষের সাথে বেশি মেলামেশা না করা উচিত। তোমাদের তালিবে ইলমদের জন্য একথা অনেক বেশি প্রযোজ্য। তালিবুল ইলম কোনোদিন গল্পগুজব করতে পারে না। যারা সত্যিকার তালিবুল ইলম, যারা আল্লাহকে পেতে চায়, তারা কোনোদিন গল্প করে ও মানুষের সাথে ইখতিলাত করে সময় নষ্ট করতে পারে না।

অতি নিদ্রাও ইলম হাসিলের পথে বাধা

ঘুমের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। খুব বেশি ঘুমানো যাবে না। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। ইলম হাসিলের ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর।

দুনিয়ার লোভ ছাড়তে হবে

ভেতর থেকে লোভ বের করে ফেলতে হবে। দুনিয়ার লোভ অন্তরে রাখা যাবে না। দুনিয়ার লোভ আর ইলম একসঙ্গে জমা হয় না। মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-পরার লোভ আছে, বাড়ি-গাড়ির লালসা আছে। কিন্তু একজন তালিবুল ইলমকে এসব লোভ ও লালসা থেকে পবিত্র থাকতে হবে। তালিবুল ইলমকে মুত্তাকী হতে হবে। ফিরিশতাদের মধ্যে লোভ নেই। এজন্য তাদেরকে মুত্তাকী বলা হয় না। যার মধ্যে যে জিনিসের লোভ আছে, সে জিনিস যদি সে ছাড়তে পারে, তাহলে তাকে মুত্তাকী বলা হয়।

তাকওয়া ছাড়া ইলম অর্জন হয় না

প্রত্যেক তালিবে ইলমকে মুত্তাকী হতে হবে। মুত্তাকী যদি না হই, ইলম আল্লাহ তাআলা দেবেন না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَتَّقُوا اللهَ یَجْعَلْ لَّكُمْ فُرْقَانًا وَّ یُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ وَ اللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِیْمِ.

হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর সঙ্গে তাকওয়ার নীতি অবলম্বন কর, তবে তিনি তোমাদেরকে (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহের মালিক। -সূরা আনফাল (৮) : ২৯

সত্য-মিথ্যা ও ভুল-শুদ্ধের মধ্যে পার্থক্য করার যোগ্যতা ইলমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিফাত। আর এই সিফাত আল্লাহ তাআলা দান করবেন কেবল তাদেরকে, যারা তাকওয়ার নীতি আঁকড়ে ধরেছে। সে জন্য ইলম হাসিলের প্রধান শর্তগুলোর একটি হল তাকওয়া অবলম্বন করা।

সুতরাং আল্লাহর কাছ থেকে যদি ইলম পেতে হয়, আমাদেরকে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ্কে ভয় করে চলতে হবে। গুনাহ থেকে, আল্লাহর নাফরমানী থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকতে হবে। তাকওয়া অর্জন করা আমাদের কাজ। আর ইলম দেওয়া আল্লাহর কাজ।

প্রত্যেক তালিবে ইলমের জেবে (পকেটে) মিসওয়াক থাকতে হবে। ওযু করার সময় সবাইকে মিসওয়াক করতে হবে। আর সময়মত চুল কেটে পরিষ্কার করে ফেললে ভালো।

আমরা তো ইলম শেখার জন্যই মাদরাসায় এসেছি। বহু তালিবে ইলম ইলম থেকে মাহরূম হচ্ছে। কেনতাকওয়া না থাকার কারণে। তালিবুল ইলম হয়েও তারা ইলম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কেন? একটাই কারণ, তারা তালিবুল ইলম হয়েছে; কিন্তু মুত্তাকী হতে পারেনি।

উস্তাযগণকে দেখে দেখে শিখতে হবে

তালেবে ইলমদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল, তারা তাদের উস্তাযগণকে দেখে দেখে শিখবে। উস্তাযরা কীভাবে চলেন, কীভাবে বলেন, কখন কী কাজ করেন, কখন কোন্ আমল করেন, কোন্ পরিস্থিতিতে কোন্ দুআ পড়েন- এগুলো লক্ষ করতে হবে আর শিখতে হবে। কোন্ উস্তায কীভাবে নামায পড়েন, কীভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন, কীভাবে কামরায় প্রবেশ করেন, কামরা থেকে বের হন, এসব দেখে দেখেও তো আমরা অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারি। উস্তাযকে দেখে দেখে শিখতে হয়। কোন্ কাজটা কীভাবে করতে হবে, কোন্ কথাটা কীভাবে বলতে হবে, উপরে উঠতে কী পড়তে হবে, নিচে নামতে কী পড়তে হবে, এই স-ব কিছু উস্তাযদেরকে দেখে দেখে শিখে নিতে হবে।

মাসনূন দুআগুলো মুখস্থ কর এবং মর্ম অনুবাধন করে আমল কর

প্রত্যেকটি মাসনূন দুআর গভীরে আজীব মর্ম লুকানো আছে। উপরে ওঠার সময় যখন বলি- আল্লাহু আকবার; এর হিকমত ও রহস্য হল, এই কথার স্বীকারোক্তি দেওয়া যে, আমি তো উপরে উঠছি, কিন্তু আমি বড় না, বড় হলেন আল্লাহ। তো একথা বলতে বলতে আমি উঠি, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়আবার নিচে নামার সময় বলছি- সুবহানাল্লাহ; এ অনুভূতি নিয়ে নিচে নামছি যে, সকল নীচুতা থেকে আমার আল্লাহ পবিত্র, আমার আল্লাহ পবিত্র।

এভাবে প্রত্যেকটি মাসনূন দুআ মুখস্থ কর এবং এর গভীর মর্ম অনুধাবন করে করে আমল কর। মসজিদে প্রবেশের আগে এর সুন্নতগুলো খেয়াল করে আদায় কর এবং দুআ পড়। বিসমিল্লাহ পড়, তারপর দরূদ শরীফ পড়, এরপর পড়-

اللهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.

এবং নফল ইতিকাফের নিয়ত কর।

প্রতিটি কাজে সুন্নতের ইহতিমাম কর

প্রত্যেক কাজে সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দী কর। সুন্নতের পাবন্দী করলে কী হবে? আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ.

অর্থাৎ (হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে মাহবূব বানাতে চাও, আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে মাহবূব বানিয়ে নেবেন।

আল্লাহু আকবার! কত বড় কথা! আমি আল্লাহকে আমার মাহবূব ও প্রেমাষ্পদ বানাতে চেয়েছি আর তাঁর নবীর সুন্নতের অনুসরণ করেছি, এর কত বড় পুরস্কার আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন! আল্লাহ আমার মাহবূব তো হবেনই, শুধু এতটুকুই না, আল্লাহ আমাকেও তাঁর মাহবূব ও প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেবেন।

আমলের দ্বারাই জীবন গঠন হয়

এতক্ষণ যা কিছু বলা হল, যদি এর মধ্যে আমলের কিছু পাও, তো আমল কর।

عمل سے زندگی بنتی ہے جنت بھی جہنم بھییہ خاکی اپنی فطرت مں نہ نوری ہے نہ ناری ہے

আমল করতেই হবে। আমলের বিকল্প নাই। আমলের দ্বারাই জীবন তৈরি হয়। জীবন গঠন হয়। এ ব্যাপারে কোনো ছাড়ের সুযোগ নেই। কোনো গাফলতের অবকাশ নেই। সুসতী ও অলসতার কোনো স্থান নেই। বারবার একথা ভাবতে হবে, আমাকে আমলের দ্বারাই তৈরি হতে হবে। আমার জন্য আমলের কোনো বিকল্প নেই।

তোমার চেহারায় যেন ফুটে থাকে- তুমি তালিবুল ইলম

তালিবুল ইলমের চেহারা দেখলেই যেন বুঝে আসে যে, সে তালিবুল ইলম। ইলমের সে তালেব। ইলম শেখার জন্যই সে এসেছে। চলাফেরা ওঠাবসা সর্ব হালতে তাকে দেখলেই যেন বুঝে আসে, সে ইলম তালাশ করছে, ইলম হাসিল করার জন্য বেচাইন হয়ে আছে। তালিবুল ইলমের একটা মিনিট সময় ইলমের তলব ছাড়া অন্য কোনো কাজে খরচ হতে পারে না। ইলম অথবা ইলম পাওয়ার জন্য যা কিছু লাগে, যেমন, যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও দুআ-মুনাজাত, এগুলো ছাড়া বেহুদা একটা কাজও একজন তালিবে ইলম করতে পারে না। বেহুদা কাজে তার একটা মিনিটও নষ্ট হতে পারে না।

ইলমেদ্বীন শেখার উদ্দেশ্য সার্টিফিকেট হতে পারে না

নতুন এক মরয (রোগ) দেখা দিয়েছে অনেক তালিবুল ইলমের মধ্যে, তারা আলিয়ায় পরীক্ষা দেয়। কেন ভাই! তুমি আলিয়ায় পরীক্ষা দিয়েছ কেন? বলে যে, সার্টিফিকেটের জন্য, চাকরির জন্য। লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। তুমি কার চাকরি করবে? ইলম শিখে তুমি কার গোলামী করবে?

এটি একটি রোগ। এ রোগে যারা আক্রান্ত হয়ে গেছ, খেয়াল করে শুনে রাখ, এটি দুনিয়া। এটি খালেস নিয়ত না। ইলম তো এমন এক জিনিস, যা শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই শিখতে হয়।

জুমার খুতবায় এ হাদীসটি পড়া হয়-

مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَتَعَلَّمُهُ إِلَّا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يَعْنِي رِيحَهَا.

যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অর্জনীয় ইলম শুধু এজন্য অর্জন করে যে, এর দ্বারা দুনিয়ার কিছু বিষয় অর্জন করবে, সে জান্নাতের খোশবুও পাবে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৬৪

তুমি তোমার উস্তাযের নাজাতের যরীআ হও

আমাদের আকাবির-আসলাফের মধ্যে অনেকের থেকেই এমন কথা বর্ণিত আছে। হাশরের ময়দানে আল্লাহর আদালতে ধরা পড়ে গেলে তারা তাদের অমুক অমুক তালিবে ইলমকে দেখিয়ে দিয়ে বলবেন যে, আল্লাহ! আমার কোনো আমল নেই। আমি কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। আমি আমার এই তালিবে ইলমকে তৈয়ার করে এনেছি। এটাই আমার আমল। এ ছাড়া পেশ করার মতো আমার কিছুই নেই।

আমি তোমাদের বলি, তোমরাও চেষ্টা কর, তোমাদের উস্তাযগণের জন্য এমন তালিবে ইলম হওয়ার। তোমাদের উস্তাযগণও যেন তোমাদেরকে তাদের নাজাতের যরীআ হিসেবে আল্লাহর কাছে পেশ করতে পারেন। এমন তালিবে ইলম হয়ো না যে, তোমাদের কারণে তোমাদের উস্তাযরা লজ্জিত হন। আল্লাহ তোমাদেরকে কবুল করুন- আমীন।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মাদরাসায় এনেছেন ভাগ্যবান বানানোর জন্য; দুর্ভাগা বানানোর জন্য নয়সুতরাং আমাদের কাজ হল, এ নিআমতের কদর করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যতটুকু ভাগ্যবান বানাতে চাচ্ছেন, আমরা যেন সেই পরিমাণ ভাগ্যবান হতে পারি, সেভাবে আমরা দুআ করব, মেহনত করব।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন- আমীন।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

[প্রস্তুতকরণ : মাওলানা আবরারুরয যামান পাহাড়পুরী]

 

 

advertisement