যিলকদ-যিলহজ্ব ১৪২৮   ||   ডিসেম্বর ২০০৭

মাসায়েলে কুরবানী

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হাদীস শরীফে এ ইবাদতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এক হাদীস এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমা রা.কে তাঁর কুরবানীর নিকট উপস্থিত থাকতে বলেন এবং ইরশাদ করেন, এই কুরবানীর প্রথম রক্তবিন্দু প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা তোমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটা কি শুধু আহলে বায়তের জন্য, নাকি সকল মুসলিমের জন্য? তিনি উত্তরে বললেন, এই ফযীলত সকল মুসলিমের জন্য। -মুসনাদে বাযযার-আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৪

অপরদিকে যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এই ইবাদত পালন করে না তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। -মুস্তাদরাকে হাকেম-আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রেরণা। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কুরবানীর জরুরি কিছু মাসায়েল উপস্থাপিত হল। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় মাসায়েল অনুযায়ী এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আদায় করার তাওফীক দিন।

 

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : ১. ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন নর-নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকবে তার কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপার অলঙ্কার, ব্যবসায়িক পণ্য, অপ্রয়োজনীয় আসবাব-পত্র এসব কিছুর মূল্য কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। -সুনানে ইবনে মাজা ২২৬, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১২, আলমগীরী ৫/২৯২

নেসাবের মেয়াদ

মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর দিনগুলোতে থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

নাবালেগের কুরবানী

মাসআলা : ৩. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন নয়) নেসাবের মালিক হলেও ওদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

মুসাফিরের জন্য কুরবানী

মাসআলা : ৪. মুসাফিরের (যে ৪৮ মাইল দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৫. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; কাযীখান ৩/৩৪৫

গরীবের কুরবানীর হুকুম

মাসআলা : ৬. গরীব ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

কুরবানীর পূর্ণ সময়

মাসআলা : ৭. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ তারিখ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, আলমগীরী ৫/২৯৫

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোয় ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে পরে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, কাযীখান ৩/৩৪৫

প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও তাদের কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

পরবর্তী দিনগুলোতে কুরবানী করা

মাসআলা : ১০.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়মতো কুরবানী করা না হলে

মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে। অবশ্য ওই পশু সদকা করা বা পশুর মূল্য সদকা করা দুটোরই ইখতেয়ার রয়েছে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ১২.  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

নর ও মাদা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮

সাত শরীকের

মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এক্ষেত্রে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তাকে অংশীদার বানালে কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার শরীক হতে পারবে। -তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরা বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে। -কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

উত্তম কুরবানীর পশু

মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। -মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

খোড়া পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে যে কারণে

মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান এক তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

অন্ধ পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট বা এক চোখের দৃষ্টিশক্তি একতৃতীয়াংশ বা তারও অধিক নষ্ট হয়ে গেছে সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে

মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭

গর্ভবতী পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০

পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে

মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রট্টটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা

মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫

বন্ধ্যা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

নিজের কুরবানী নিজে জবাই করা

মাসআলা : ৩৪. কুরবানীদাতা নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪

জবাইয়ে অন্য কেউ শরীক হলে

মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার পড়তে হবে। যদি দ্বিতীয় ব্যক্তি না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪

কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া

মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা দ্বারা উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হাল-চাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হাল-চাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা

মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে

মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানী পশুর বাচ্চা হলে

মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে। -কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২

কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা

মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০

কুরবানীর গোশত বণ্টন

মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১

মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া

মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

জবাইয়ের অস্ত্র

মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা

মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

অন্য পশুর সামনে জবাই করা

মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।

কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া

মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয। -ইলাউস সুনান ১৭/২৮৩, আলমগীরী ৫/৩০০

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী যদি স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে স্ত্রীর কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। কেননা স্ত্রীর কুরবানী স্বামীর দিয়ে দেওয়াটা সমাজে প্রচলন রয়েছে। তাই অনুমতি না নিলেও চলবে। তবে অনুমতি নিয়ে নিলেই ভালো।

কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে

মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর তা ওয়াজিব হয় তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব  হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

পাগল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২

নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া

মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪

ঋণ করে কুরবানী করা

মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও টাকা দিয়ে কুরবানী করলে তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।

হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী

মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে

মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯

কোন দিন কুরবানী করা উত্তম

মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী

মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩

জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী

মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির ইসালে সওয়াবের জন্য তার নামে নফল কুরবানী করা জায়েয এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা

মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি যে এলাকায় আছে সেখানের চেয়ে কম খরচ হলেও কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে। তবে নিজ জায়গায় কুরবানী করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে এর চেয়ে কম না হওয়া উচিত।

কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে

মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর চামড়া বিক্রিত অর্থ সাদকা করা

মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত

মাসআলা : ৬২. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করতে চাইলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়ত করা জরুরি। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করে তা বিক্রি করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪

কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম

মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯

এক গরুতে বিগত বছরের কাযা ও চলতি বছরের কুরবানীর নিয়ত করলে

মাসআলা : ৬৪. এক গরুর এক ভাগ চলতি বছরের কুরবানীর নিয়ত করল আর বিগত বছরের কাযা কুরবানীর জন্য বাকী ছয় ভাগ নিজে দিল বা অন্য কেউ তাহলে চলতি বছরের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। কাযার নিয়তকারীদের কাযা আদায় হবে না। আর এ গরুর পুরো গোশত সদকা করে দেওয়া জরুরি। এমনকি চলতি বছরের কুরবানীদাতাও নিজের অংশ ভক্ষণ করতে পারবে না। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬

কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া

মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। অবশ্য কুরবানীর পশুতে আকীকার জন্য শরীক না নেওয়া ভালো। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯

কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা

মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি 

মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ৬৮.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রট্টটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে। এ ক্ষেত্রে কেউ পারিশ্রমিকের নিয়ত করে থাকে না। -আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

মোরগ কুরবানী করা  

মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি নাজায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০

 

 

advertisement