শাওয়াল-যিলকদ ১৪২৮   ||   নভেম্বর ২০০৭

আশহুরে হজ্বের সূচনা
আমাদের প্রস্তুতির কি সূচনা হয়েছে?

শাওয়াল, যিলকদ ও যিলহজ্বের একাংশ- এই দিনগুলোকে বলা হয় আশহুরে হজ্ব অর্থাৎ হজ্ব-মাহিনা। সূরা বাকারার ১৯৭ নং আয়াতে এসেছে- হজ্ব হয় সুবিদিত মাসসমূহে।...

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও অন্যান্য সাহাবী থেকে সুবিদিত মাসসমূহের ব্যাখ্যায় উপরোক্ত তিন মাসের কথা উল্লেখিত হয়েছে।

আশহুরে হজ্বের সূচনা আযানে ইবরাহীমীর বারতা নিয়ে আসে। বাইতুল্লাহর নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আ.কে আদেশ দিলেন, মানবজাতিকে হজ্বের জন্য আহ্বান করুন। তাহলে তারা সকল দূরবর্তী প্রান্ত থেকে পায়ে হেঁটে, বাহনে সওয়ার হয়ে এখানে এসে পৌঁছবে। ইবরাহীম আ. আযান দিলেন। শুরু হল বাইতুল্লাহর পানে আল্লাহর বান্দাদের অবিরাম ছুটে চলা। বছরের পর বছর। কাফেলার পর কফেলা। সমুদ্র তরঙ্গের মতো অনিঃশেষ, অবিরাম।

বছর ঘুরে যখন আশহুরে হজ্বের আগমন হয়, তখন যেন নতুনভাবে ধ্বনিত হয় আযানে ইবরাহীমী- হজ্বের ওয়াক্ত হয়েছে। এস, বাইতুল্লাহর সান্নিধ্যে এস।

এ আযান-ধ্বনি মুমিন-হৃদয়ে সৃষ্টি করে লাব্বাইক আল্লাহুম্মার প্রেরণা। পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে তারা ছুটে আসে হজ্ব আদায়ের জন্য।

সামর্থ্যবানদের জন্য হজ্বে বাইতুল্লাহ ফরজ করা হয়েছে। হজ্বের ব্যয় নির্বাহ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি যার রয়েছে এমন প্রত্যেক সুস্থ ও বালিগ মুসলমানের জন্য হজ্ব আদায় করা ফরজ। সূরা আলে ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্ব করা তার অবশ্য কর্তব্য। এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্ব জগতের মুখাপেক্ষী নন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরজ করেছেন অতএব তোমরা হজ্ব আদায় কর।

বিনা ওযরে হজ্ব আদায়ে গাফিলতি করা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। হযরত আবু উমামা রা. সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো অপরিহার্য প্রয়োজন, অচলকারী অসুস্থতা কিংবা অত্যাচারী শাসকের কারণে হজ্ব আদায়ে যে অপারগ নয়, তবুও সে হজ্ব করে না সে ইচ্ছা হলে ইয়াহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করুক, ইচ্ছা হলে নাসরানী হয়!

তাই হজ্বের সামর্থ্য হওয়ামাত্র হজ্ব আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করা কর্তব্য।

হজ্বের প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে হজ্বের মাসাইল, আদাব ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা, তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে গুনাহর সিয়াহী থেকে পরিষ্কার হওয়া এবং নিয়ত ও আমলের পরিশুদ্ধি সম্পর্কে সচেষ্ট হওয়া। যতদূর সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করেই আল্লাহর ঘরের যিয়ারতে যাওয়া কর্তব্য।

বান্দার পক্ষ থেকে যখন আন্তরিক প্রয়াস গৃহীত হয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে তখন আসে পূর্ণতা। বান্দা যদি সকল প্রকার গোনাহ ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে মুক্ত থেকে ইখলাসের সঙ্গে হজ্ব আদায় করতে সক্ষম হয় তবে সে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। এ যেন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ণতার ঘোষণা। তবে এ পূর্ণতাপ্রাপ্তির যে শর্ত সঙ্গে উল্লেখিত হল তা পূরণ করা কেবল তখনই সম্ভব হতে পারে যদি পূর্ব থেকে এ জন্য বান্দার আন্তরিক প্রয়াসের সূচনা হয়ে যায়।

তাই আশহুরে হজ্বের এই দিনগুলোতে আমাদের প্রয়াস হোক পবিত্রতা অর্জনের, প্রয়াস হোক লাব্বাইক আল্লাহুম্মা বলার প্রস্তুতি গ্রহণের।

 

* * *

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গত শাবান-রমযান ১৪২৮ হি.-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ০৭ ঈ. -এর দুমাসের সংখ্যাটি একসঙ্গে প্রকাশিত হওয়ার পর এ মাস থেকে যথারীতি প্রতি মাসে আলকাউসার প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। আগামী ডিসেম্বর ০৭ ঈ. সংখ্যায় অপরাপর আকর্ষণীয় আয়োজনসমূহের সঙ্গে থাকছে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র নামের সম্মান করাও ঈমানের অঙ্গ এ বিষয়ে মাসিক আলকাউসারের মুহতারাম তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক ছাহেবের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ।

 

 

advertisement