শাবান-রমযান ১৪২৮   ||   সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০০৭

তরবিয়ত
পর্যবেক্ষণ ও উৎসাহ প্রদান

আবিদা

নানাজীর প্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল মনস্তত্ত্ব। মানুষের মন ও তার গতি-প্রকৃতি, বিভিন্ন অবস্থায় মানুষের অনুভব ও অনুভূতি ইত্যাদি বিষয়ে তার বিস্তর পড়াশোনা ছিল। এরপর কর্মজীবনে অধ্যাপক ও বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার অধ্যয়নলব্ধ জ্ঞান আরও শাণিত হয়েছিল এবং তা তাঁর স্বভাব-নৈপুণ্যে পরিণত হয়েছিল। কারো সঙ্গে কয়েক মিনিটের সাক্ষাতেই তার ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা তিনি বিশ্লেষণ করতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী তার সঙ্গে আচরণ করতেন। বলা বাহুল্য হবে না যে, অধ্যয়ন ও অনুসন্ধানই হল তরবিয়তের প্রথম শর্ত।

এই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সত্ত্বেও নানাজী সর্বদা আমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন। কীভাবে আমরা সময় কাটাই? কীসে আমাদের ঝোঁক ও চাহিদা? আমাদের যোগ্যতা ও প্রতিভা কীভাবে আমরা কাজে লাগাই? ছোট ও বড়দের সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন? মোটকথা, তিনি আমাদের মন-মানসিকতা ও আচার-আচরণের ভালো-মন্দ দুই দিকই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন।

প্রিয় পাঠক! তরবিয়তের জন্য এটা হল দ্বিতীয় শর্ত। আপনি আপনার সন্তানকে অধ্যয়ন করুন এবং তাকে ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন।

নানাজী আমাদের ভালো কাজের প্রশংসা করতেন এবং কখনো কখনো এর জন্য পুরস্কৃত করতেন। তাঁর এ ব্যবহার আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করেছিল। আমরা অনুভব করলাম, আমাদের ভালো ও সুন্দর আচরণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তারা এতে সন্তুষ্ট ও আনন্দিত হন।

প্রিয় পাঠক, এটা হল তরবিয়তের তৃতীয় পর্যায়।

আমাদের প্রতি নানাজীর এই মনোযোগ আমাদেরকে যেমন আত্মবিশ্বাসী করেছিল তেমনি সৃষ্টি করেছিল তাঁর প্রতি আমাদের অনুরাগ ও ভালোবাসা। ফলে আমাদের তালীম-তরবিয়ত তার জন্য সহজ হয়েছিল। আমরা যেমন তার প্রশংসা গ্রহণ করেছি, তেমনি তার সমালোচনাও গ্রহণ করেছি। কোনো বিষয়ে তিনি আমাদের তাম্বীহ করলে আমরা অনুগত চিত্তে তা সংশোধনে সচেষ্ট হয়েছি। কেননা, আমাদের মনে এই আস্থা ছিল যে, এর কারণে আমরা আল্লাহর কাছে তো ছওয়াব লাভ করবই নানাজীর প্রশংসা ও পুরষ্কারও আমরা লাভ করব।

 

 

advertisement