শাওয়াল ১৪৪৪   ||   মে ২০২৩

একটি নিষ্পাপ মৃত্যু

ডা. ইউসুফ আলী

মুহাম্মাদ ত্রিপুরা ভাইয়ের স্মৃতি আমাকে খুবই আন্দোলিত করে। একবার বেদনাহত হই তো আবার খুশিতে আবেগাপ্লুত হই। তিনি চলে গেছেন আমাদেরকে ছেড়ে পরম প্রভুর সান্নিধ্যে। এসেছিলেন আমাদের কাছে মৃত্যুর বছর দেড়েক আগে। বয়স সত্তরোর্ধ। হাফেজ সালামাতুল্লাহর কাছে কালেমা পড়েন। এরপর আসেন আমার কাছে। এফিডেবিট করেন। মাওলানা জালাল আহমেদ ভাইয়ের কাছে দ্বীন শেখার জন্য পাঠিয়ে দেই।

তিনি হিন্দু ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পুরা বংশই খ্রিস্টান হয়ে যায়। বাইবেল সম্বন্ধে তাঁর ছিল ভালো জানাশোনা। তিনি আমার চেম্বারে হাসতে হাসতে বলেন, বাইবেল পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি, যীশু নিজেই মুসলিম ছিলেন।

কয়েক মাস সেখানেই কাটিয়ে দেন। অতঃপর চিল্লায় যান শাহপরীর দ্বীপে। জামাতে হাফেজ সালামাতুল্লাহ ও মাওলানা নাজমুল হাসান ভাই ছিলেন পর্যায়ক্রমে জিম্মাদার।

নুসরাতে যাই মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা ইমরান হাবিবিসহ কয়েকজন। সেদিন মাসজিদ পরিবর্তনের সময় দুআ পরিচালনা করেন মুহাম্মাদ ত্রিপুরা রাহ.। ভাঙা ভাঙা বাংলায় হৃদয়স্পশীর্ দুআ করেন। সবার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে।

ফিরে এসে বাড়িতে যান। শান্তিবাহিনীর হুমকি সত্ত্বেও দমে যাননি। নতুন ঘর তোলেন কচ্চপতলিতে। মসজিদের অদূরে। নিয়মিত নামায আদায় করতে থাকেন।

এক দাঈ ফোন দেন, মুহাম্মাদ ভাই অসুস্থ।

নিয়ে আসতে বলি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। এক্সরে ফিল্ম দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়। বুঝতে পারি, রব্বে কারীমের ডাক চলে এসেছে। হয়তো নিষ্পাপ অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কাছে নিয়ে যেতে চান। ডায়াগনোসিস হয় লাং ক্যান্সার।

তিনি বাড়ি চলে যান। কয়েকদিন পর রাতে হঠাৎ ফোন পাই, মুহাম্মদ ভাই খুবই অসুস্থ। সকালে খবর পাই তিনি আর নেই।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

শুরু হয় আরেক সংগ্রাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরীকায় চির বিদায় জানানো নিয়ে। আত্মীয়-সন্তান সবাই খ্রিস্টান। সবাই চাচ্ছিল খ্রিস্টান রীতি অনুযায়ী দাফন করতে। কিন্তু সেখানে আমাদের প্রথম মুসলিমের মৃত্যু। কাজেই সুন্নত মোতাবেক দাফন করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয়, তারা সম্মত হয় মুসলিম রীতিতে দাফন করতে।

আলহামদু লিল্লাহ! গোসল হয়, কাফন পরানো হয়, নামাযে জানাযা হয়, দাফন হয়। শোকাবহ পরিবেশে এক পবিত্র ও স্নিগ্ধ দৃশ্য। এলাকায় যে দৃশ্য কখনও তারা দেখেনি। সুন্নত মোতাবেক দাফনের মাধ্যমেও এক বড় দাওয়াত হয়ে যায়।

তিনি সৌভাগ্যের অধিকারী বলে বিশ্বাস করি। পাপের বয়স যখন প্রায় শেষ তখনই শিরক ও কুফর থেকে তাওবার সৌভাগ্য হয়। তারপর জ্ঞানার্জনের জন্য মাদরাসায় গমন ও অবস্থান এবং দাওয়াত শেখার নিয়তে তাবলীগে যাওয়া এ সবই পরম সৌভাগ্য।

আল্লাহ! মুহাম্মাদ ত্রিপুরা রাহ. ভাইকে জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন আমীন।

 

 

advertisement